পরিবারের জন্য সাহায্য | বিয়ে
বিবাহিত জীবনে মদের অপব্যবহার
আপনার বিবাহিত সাথি কি আপনার মদ খাওয়ার অভ্যাস নিয়ে চিন্তিত আর সেটা নিয়ে সে কি আপনাকে কিছু বলেছে? যদি তাই হয়, তা হলে কিছু বিষয় নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে।
এই প্রবন্ধে রয়েছে
মদের অপব্যবহার এবং বিবাহিত জীবন—একসঙ্গে থাকাটা ক্ষতিকর
অতিরিক্ত মদ খেলে বিভিন্ন ধরনের রোগ, যেমন হার্টের সমস্যা, লিভার সিরোসিস এবং ক্যান্সার সহ নানারকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। শুধু তাই নয়, মদের অপব্যবহারের কারণে বিবাহিত জীবনেও অনেক ক্ষতি হয়; যেমন ঘরোয়া অত্যাচার, টাকা পয়সার সমস্যা, অবিশ্বস্ততা আর বিবাহবিচ্ছেদের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
বাইবেল বলে যে, যখন মদের অপব্যবহার করা হয়, তখন “সেটা সাপের মতো ছোবল মারে আর বিষধর সাপের মতো বিষ ঢেলে দেয়।” (হিতোপদেশ ২৩:৩২) আপনার মদের প্রতি আসক্তি রয়েছে কি না, আপনি কীভাবে বুঝবেন?
আপনি কি মদের প্রতি আসক্ত?
আপনি মদের প্রতি আসক্ত কি না, তা বুঝতে নীচে দেওয়া প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করুন:
মদ খাওয়া কমাতে কি আপনার সমস্যা হচ্ছে?
আপনি কি প্রায়ই চিন্তা করেন, কখন আবার মদ খাবেন?
মদ খাওয়ার কারণে আপনার জীবনে, এমনকী পরিবারের মধ্যেও যখন সমস্যা দেখা যায়, তখনও কি আপনি সেই অভ্যাস ছাড়তে পারছেন না?
আপনি যখন মদ খাওয়া ছাড়ার চেষ্টা করেন, তখন কি আপনার শরীর খারাপ করে বা অস্থির লাগে?
আপনি কতটা মদ খাচ্ছেন, তা নিয়ে কি আপনার সাথির সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি বা অশান্তি হয়?
আপনি আগে যে-পরিমাণে মদ খেতেন, এখন তার চেয়ে বেশি পরিমাণে খেয়েও কি আপনার কোনো সমস্যা হচ্ছে না?
আপনি কি লুকিয়ে লুকিয়ে মদ খান আর ঘরে কিংবা কাজের জায়গায় কি মদ লুকিয়ে রাখেন?
এই প্রশ্নগুলোর মধ্যে কোনো একটার উত্তরও যদি হ্যাঁ হয়, তা হলে ধরে নেওয়া যায় যে, মদ ছাড়া আপনার চলে না। হতে পারে, আপনি মদের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছেন।
যদি অজুহাত দিচ্ছেন, তা হলে সতর্ক হোন
আপনার স্ত্রী কি আপনার মদ খাওয়ার ব্যাপারে চিন্তিত হয়ে কিছু বলেছে? তখন আপনি হয়তো তার কথাগুলো খুব হালকা করে দেখেছেন বা কোনো অজুহাত দিয়ে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। এ ছাড়া, আপনি হয়তো অন্যদের উপর দোষ চাপিয়ে দিয়েছেন আর এমনকী স্ত্রীকেও দোষারোপ করতে ছাড়েননি। তাকে হয়তো বলেছেন:
“তুমি যদি আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে, তা হলে আমাকে মদ খেতে হত না।”
“এত চাপ নিয়ে চাকরি করতে হলে, তোমাকেও মদ খেতে হত।”
“এমন অনেক লোককে আমি চিনি, যারা আমার চেয়েও বেশি মদ খায়।”
আপনি যদি এভাবে অজুহাত দিতে থাকেন, তা হলে সেটা দেখাবে যে, আপনার বিবাহিত জীবনে সুখী হওয়ার চেয়ে মদ খাওয়াকে আপনি বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। আপনার কাছে কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত?
বাইবেলের নীতি: “বিবাহিত পুরুষ এই ... বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করে, কারণ সে তার স্ত্রীকে খুশি করতে চায়।”—১ করিন্থীয় ৭:৩৩.
আপনি যা করতে পারেন
স্ত্রী যে-বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তিত, সেগুলোর প্রতি বেশি মনোযোগ দিন। আপনার যদি মনে হয়, আপনার মদ খাওয়ার ব্যাপারে, আপনার স্ত্রী একটু বেশিই চিন্তা করছে, তারপরও মদ খাওয়া কমানোর ব্যাপারে আপনি কিছু করুন। যদি আপনি তা না করতে পারেন আর স্ত্রীর দুশ্চিন্তা থাকা সত্ত্বেও মদ খাওয়া চালিয়ে যান, তা হলে এটা বুঝতে হবে যে, মদ খাওয়ার বিষয়টা ইতিমধ্যেই একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাইবেলের নীতি: “প্রত্যেকে কেবল নিজের উপকারের জন্য চেষ্টা না করুক, কিন্তু অন্যের উপকারের জন্য চেষ্টা করুক।”—১ করিন্থীয় ১০:২৪.
কিছু কৌশল সম্বন্ধে জানুন। যুদ্ধে জয়ী হতে হলে, একজন সৈনিককে জানতে হয় যে, শত্রুপক্ষ কোন কোন উপায়ে আক্রমণ করতে পারে। একইভাবে, মদের অভ্যাস ছাড়তে হলে, আপনাকে জানতে হবে যে, মদে আসক্ত হয়ে পড়লে একজন ব্যক্তির মধ্যে কোন কোন বৈশিষ্ট্য দেখা যায় আর কীভাবে এটা একজনকে ফাঁদে ফেলতে পারে। এ ছাড়াও, মদ ছাড়তে, সেটার উপর নির্ভরশীল না হতে এবং ভবিষ্যতে যাতে এটার প্রতি আর আসক্তি না থাকে, সেই ব্যাপারে আপনাকে কার্যকরী কৌশলগুলো শিখতে হবে।
বাইবেলের নীতি: “তোমরা সেই মাংসিক আকাঙ্ক্ষাগুলো থেকে দূরে থাকো, যেগুলো তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।”—১ পিতর ২:১১.
অন্যের কাছ থেকে সাহায্য নিন। এমন অনেক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, হাসপাতাল ও মেডিক্যাল প্রোগ্রাম আছে, যেখানে মদ খাওয়ার ফলে বিভিন্ন সমস্যা এবং নেশা ছাড়তে সাহায্য করা হয়। এ ছাড়া, মদের উপর আপনার নির্ভরশীল হয়ে পড়ার পিছনে আর কোন কোন কারণ থাকতে পারে, তা বোঝার জন্য আপনার কোনো পরিপক্ব বন্ধুকেও জিজ্ঞেস করতে পারেন। আর যখনই আপনার মদ খাওয়ার এই পুরোনো অভ্যাস জেগে উঠবে, তখনই আপনি সেই বন্ধুকে বলতে পারেন।
বাইবেলের নীতি: “প্রকৃত বন্ধু সবসময় ভালোবাসা দেখায় আর সে বিপদের সময়ে নিজের ভাই বলে প্রমাণিত হয়।”—হিতোপদেশ ১৭:১৭.
মদের অপব্যবহার একটা জটিল সমস্যা। আর শুধুমাত্র এই প্রবন্ধটা পড়ে কিংবা “আমি এখন থেকে কম মদ খাওয়ার চেষ্টা করব,” শুধু এটা বলেই এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না। আপনাকে এই বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে যে, মদের অভ্যাস ছাড়তে আপনি যা-কিছু করেন, তার ফলে শুধুমাত্র যে আপনার স্বাস্থ্যই প্রভাবিত হয় তা নয়, এর সঙ্গে সঙ্গে আপনার বিবাহিত জীবনের উপরও অনেক প্রভাব পড়ে।
আরও তথ্য জানার জন্য: অনেকে মদের অভ্যাস ছাড়ার জন্য যেভাবে প্রচেষ্টা করেছে তা জানতে, নীচের প্রবন্ধগুলো পড়ুন।
“I No Longer Feel Ashamed of Myself”
এ ছাড়া, ‘আমি আমার জীবনযাত্রা নিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিলাম’ এই ভিডিওটাও দেখুন