সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

Albert Wright/iStock via Getty Images

এটা কি সুপরিকল্পিতভাবে সৃষ্ট?

মালি পাখির বাসা

মালি পাখির বাসা

 মালি পাখি অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ অঞ্চলে পাওয়া যায়। এই পাখি তার বাসার তাপমাত্রা মোটামুটি ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (৯৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট) কাছাকাছি রাখে। কীভাবে এই পাখি বছরজুড়ে তার বাসার তাপমাত্রা দিনে এবং রাতে একই রাখতে পারে?

 প্রত্যেক বছর শীত কালে এই পাখিরা এক মিটার (৩ ফুট) দীর্ঘ এবং তিন মিটার (১০ ফুট) প্রস্থের একটা গর্ত খোঁড়ে। এই গর্তে পুরুষ পাখিরা ঘাস, পাতা এবং অন্যান্য গাছপালা এনে জড়ো করে। শীত কালের শেষের দিকে যখন বৃষ্টি হয়, তখন গর্তের মধ্যে থাকা সেই ঘাস-পাতা ভিজে যায়। সেইসময় পুরুষ পাখি এর ভিতরে ডিম রাখার জন্য আরেকটা গর্ত তৈরি করে এবং পুরো গর্তকে বালিমাটি দিয়ে ভরতি করে দেয়। কিছুদিনের মধ্যেই এই ঘাস-পাতা পচতে শুরু করে এবং তাপ সৃষ্টি করে, আর সেটা ডিমে তা দেওয়ার জন্য প্রাকৃতিক ইনকিউবেটর হিসেবে কাজ করে।

ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার জন্য (ক), মালি পাখি সূর্যের তাপ আর সেইসঙ্গে ঘাস-পাতা পচনের ফলে উৎপন্ন তাপকে ব্যবহার করে (খ)। মাটির তাপমাত্রা ঠিক রাখার জন্য কতটা পরিমাণ মাটি দিতে হবে, তা নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে (গ), মালি পাখি অনেক মাস ধরে তার বাসার তাপমাত্রা প্রায় ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (৯৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট) কাছাকাছি রাখে। তা করার জন্য এই পাখিকে প্রচুর পরিমাণ মাটি এদিক-ওদিক করতে হয় (ঘ)

 প্রত্যেক বার যখন মেয়ে পাখির ডিম পাড়ার সময় আসে, তখন পুরুষ পাখি মাটি সরিয়ে দেয়, যাতে ডিম রাখার গর্তে মেয়ে পাখি ডিম পাড়তে পারে। ডিম পাড়া হয়ে গেলে সঙ্গেসঙ্গে পুরুষ পাখি মাটি দিয়ে সেই গর্ত বন্ধ করে দেয়। সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে একটা মেয়ে পাখি প্রায় ৩৫ টা ডিম পাড়তে পারে। a

 এই পাখিরা প্রায়ই বালিমাটির মধ্যে নিজেদের ঠোঁট ঢুকিয়ে দেখে নেয় যে, তাপমাত্রা ঠিকঠাক আছে কি না। এরপর কোন ঋতু চলছে, সেই ভিত্তিতে তারা মাটি রদবদল করে। কয়েকটা উদাহরণ বিবেচনা করুন:

  •   বসন্ত কালে যখন ঘাস-পাতা দ্রুতহারে পচতে শুরু করে, তখন পাখির বাসা খুব গরম হয়ে যায়। সেই সময় পুরুষ পাখি ডিম রাখার গর্তের উপরের মাটি আঁচড়ে সরিয়ে দেয়, যাতে ভিতরের তাপ বেরিয়ে যেতে পারে। পরে সে ঠাণ্ডা মাটি দিয়ে সেই অংশটা ভরতি করে দেয়।

  •   গরম কালে সূর্যের তাপ থেকে ডিমগুলো রক্ষা করার জন্য পুরুষ পাখি গর্তের উপর আরও কিছুটা মাটি রেখে দেয়। কিন্তু প্রত্যেক দিন ভোর বেলা তারা সেই মাটি আঁচড়ে সরিয়ে দেয়। পরবর্তী সময়ে যখন পাখির বাসা এবং বালি ঠাণ্ডা হয়, তখন সেই মাটি পুনরায় ভরতি করে দেয়।

  •   শরৎ কালে ঘাস-পাতা যখন সম্পূর্ণভাবে পচে যায়, তখন পুরুষ পাখি বাসার প্রায় সমস্ত মাটি আঁচড়ে বের করে দেয়। এর ফলে, দুপুরের রোদে ডিম এবং আঁচড়ানো মাটি খানিকটা গরম হয়। পরে, সে সেই গরম মাটি দিয়ে পুনরায় গর্ত চাপা দিয়ে দেয়, যাতে রাতের বেলা বাসা গরম থাকতে পারে।

 প্রত্যেক দিন প্রায় ৮৫০ কিলোগ্রাম (১৮৭৪ পাউন্ড) মাটি সরানোর জন্য একটা পুরুষ পাখিকে ৫ ঘণ্টারও বেশি কাজ করতে হয়। অনবরত মাটি সরানোর একটা ভালো দিক রয়েছে আর সেটা হল মাটি খুবই ঝুরঝুরে হয়ে ওঠে। যখন ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়, তখন মাটি ঝুরঝুরে থাকার জন্য সেই বাচ্চারা সহজে মাটির উপরে উঠে আসতে পারে।

 দেখুন, মালি পাখি তার বাসার উপরের মাটি আঁচড়ে সরিয়ে দিচ্ছে

 আপনি কী মনে করেন? মালি পাখির বাসার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার এই বিশেষ ক্ষমতা কি বিবর্তনের মাধ্যমে এসেছে না কি এটা সুপরিকল্পিতভাবে সৃষ্ট?

a ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে প্রায় সাত থেকে আট সপ্তাহ সময় লাগে। এর অর্থ হল, পুরুষ পাখিকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত মাটি ঠিকঠাক করার কাজ চালিয়ে যেতে হতে পারে।