নারীদের নিরাপত্তা—এই বিষয়ে বাইবেল যা বলে
সারা পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ মেয়ে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আপনিও কি তাদের মধ্যে একজন? কেন আপনার নিরাপত্তার বিষয়টা ঈশ্বরের কাছে গুরুত্বপূর্ণ আর তিনি নারীদের উপর করা এই অবিচার কীভাবে দূর করবেন, তা জানুন।
“ছোটোবেলায় আমার দাদা আমাকে প্রত্যেক দিন মারধর করত আর গালিগালাজ করত। বিয়ের পর আমার শ্বশুর-শাশুড়ি আমার উপর দিনের পর দিন অত্যাচার করত। তারা আমার সঙ্গে চাকরের মতো ব্যবহার করত। আমি ভেবেছিলাম, নিজেকে শেষ করে দেব।”—মধু, a ভারত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বীকার করে, “সারা পৃথিবীতেই নারীদের প্রতি অত্যাচার করা হয়।” এই সংস্থা পরিসংখ্যান করে দেখেছে, তিন জন মেয়ের মধ্যে প্রায় এক জন তাদের জীবনে কখনো-না-কখনো শারীরিক কিংবা যৌন অত্যাচারের শিকার হয়েছে।
আপনার প্রতি যদি এমনটা ঘটে থাকে, তা হলে আপনি হয়তো মনে করতে পারেন, ‘আমি যেখানেই যাই না কেন, আমার কোনো নিরাপত্তা নেই। কেউ না কেউ আমাকে গালিগালাজ কিংবা মারধর করতে পারে কিংবা যৌন নিপীড়ন করতে পারে।’ শুধুমাত্র আপনি একজন মেয়ে বলে আপনার প্রতি এই ধরনের অত্যাচার ও অবিচার হওয়ার কারণে আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, বেশিরভাগ লোকদের কাছে নারীদের কোনো গুরুত্বই নেই। কিন্তু কী মনে হয়, ঈশ্বরও কি নারীদের একই দৃষ্টিতে দেখেন?
ঈশ্বর নারীদের কোন দৃষ্টিতে দেখেন?
শাস্ত্রপদ: “ঈশ্বর … পুরুষ ও স্ত্রী করিয়া তাহাদিগকে সৃষ্টি করিলেন।”—আদিপুস্তক ১:২৭.
এর অর্থ: ঈশ্বর পুরুষ ও নারী সৃষ্টি করেছেন। তিনি তাদের উভয়কেই সম্মানের যোগ্য বলে মনে করেন। সেইসঙ্গে তিনি চান, যেন একজন স্বামী ‘নিজের স্ত্রীকে নিজের মতো ভালোবাসেন।’ তিনি যেন তাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা না করেন, তা সে কঠোর কথার মাধ্যমেই হোক কিংবা অত্যাচারের মাধ্যমেই হোক। (ইফিষীয় ৫:৩৩; কলসীয় ৩:১৯) তাই এই বিষয়টা স্পষ্ট যে, ঈশ্বর নারীদের নিরাপত্তার বিষয়কে গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন।
“আমি যখন শিশু ছিলাম, তখন আমার আত্মীয়স্বজন আমাকে যৌনভাবে নিপীড়ন করত। ১৭ বছর বয়সে আমার কাজের জায়গায় আমার বস আমাকে তার সঙ্গে যৌনসম্পর্ক করার জন্য চাপ দেন। তিনি আমাকে ভয় দেখান, তা না করলে তিনি আমাকে কাজ থেকে বরখাস্ত করবেন। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর আমার স্বামী, বাবা-মা এমনকী আমার প্রতিবেশীরাও আমাকে অসম্মান করতে থাকে। শেষপর্যন্ত আমি আমাদের সৃষ্টিকর্তা যিহোবার b বিষয় জানতে পারি। তিনি নারীদের সম্মানের দৃষ্টিতে দেখেন। এটা আমাকে আশ্বাস দেয় যে, তিনি আমাকে ভালোবাসেন এবং আমাকে মূল্যবান বলে মনে করেন।”—মারিয়া, আর্জেন্টিনা।
কীভাবে আপনি এই কষ্ট কাটিয়ে উঠতে পারেন?
শাস্ত্রপদ: ‘এমন বন্ধু রয়েছে, যে ভাইয়ের চেয়েও বেশি অনুগত।’—হিতোপদেশ ১৮:২৪.
এর অর্থ: একজন প্রকৃত বন্ধু আপনার পাশে এসে দাঁড়াবে এবং আপনাকে সাহায্য করবে। আপনার যদি এমনটা মনে হয়, তা হলে আপনি যাকে বিশ্বাস করেন, তাকে নিজের মনের কথা খুলে বলুন।
“আমি যে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলাম, সেই কথা আমি ২০ বছর ধরে কাউকে বলতে পারিনি। আর এর ফলে আমি কষ্ট পেতাম, উদ্বিগ্ন ও মনমরা হয়ে থাকতাম। কিন্তু আমি যখন এমন একজনের কাছে আমার সেই খারাপ অভিজ্ঞতার কথা বলি, যে আমার কথা শুনতে চেয়েছিল, তখন কী যে স্বস্তি অনুভব করেছিলাম, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না!”—ইলিফ, তুর্কি।
শাস্ত্রপদ: “তোমরা তোমাদের সমস্ত উদ্বিগ্নতার বোঝা [ঈশ্বরের] উপর ফেলে দাও, কারণ তিনি তোমাদের জন্য চিন্তা করেন।”—১ পিতর ৫:৭.
এর অর্থ: আপনি যখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন, তখন তিনি সত্যিই তা শোনেন। (গীতসংহিতা ৫৫:২২; ৬৫:২) যেহেতু তিনি আপনার জন্য চিন্তা করেন, তাই তিনি আপনাকে এটা বুঝতে সাহায্য করেন যে, তাঁর কাছে আপনি কতটা মূল্যবান!
“আমার মনে একটা গভীর ক্ষত ছিল। কিন্তু আমি যখন যিহোবা সম্বন্ধে শিখি, তখন ধীরে ধীরে সেই ক্ষত সেরে উঠতে থাকে। এখন আমি প্রার্থনায় ঈশ্বরকে আমার মনের কথা খুলে বলতে পারি। তিনি আমার এমন এক বন্ধু, যিনি প্রকৃতই আমার অনুভূতি বোঝেন।”—অ্যানা, বেলিজ।
ঈশ্বর কি কখনো নারীদের উপর করা এই অবিচার বন্ধ করবেন?
শাস্ত্রপদ: ‘যিহোবা … সেই ব্যক্তিদের প্রতি ন্যায়বিচার করবেন, যারা অনাথ এবং যাদের পিষে দেওয়া হয়েছে, যাতে পৃথিবীর মরণশীল মানুষেরা আর কখনো তাদের ভয় না দেখায়।’ —গীতসংহিতা ১০:১৭, ১৮.
এর অর্থ: ঈশ্বর খুব তাড়াতাড়ি সমস্ত ধরনের অবিচার দূর করবেন। এর মধ্যে রয়েছে, নারীদের প্রতি করা নিষ্ঠুরতা ও দৌরাত্ম্য।
“এটা জেনে আমি কতই-না স্বস্তি পাই যে, যিহোবা খুব তাড়াতাড়ি নারীদের প্রতি করা অবিচার দূর করবেন, তা তাদের বয়স যা-ই হোক না কেন। এটা আমাকে মনের শান্তি দেয়।”—রোবার্টা, মেক্সিকো।
কীভাবে বাইবেল এই বিষয়ে আশা দেয়, কেন আপনি বাইবেলের প্রতিজ্ঞার উপর আস্থা রাখতে পারেন আর কীভাবে যিহোবার সাক্ষিরা বাইবেল থেকে আপনাকে সাহায্য করতে পারে, সেই সম্বন্ধে আপনি কি আরও জানতে চান? তাহলে, তার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
a কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
b যিহোবা হল ঈশ্বরের ব্যক্তিগত নাম। (গীতসংহিতা ৮৩:১৮) “যিহোবা কে?” শিরোনামের প্রবন্ধটা পড়ুন।