সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১৪

উত্তর দিক থেকে আসা এক আক্রমণ!

উত্তর দিক থেকে আসা এক আক্রমণ!

“আমার দেশের বিরুদ্ধে এক জাতি উঠিয়া আসিয়াছে।”—যোয়েল ১:৬.

গান সংখ্যা ৪৩ জেগে থাকো, নিশ্চল হও, বলবান হও

সারাংশ *

১. ভাই রাসেল এবং তার সহযোগীরা কোন পদ্ধতিতে অধ্যয়ন করতেন এবং কেন তা কার্যকরী ছিল?

এক-শো বছরেরও বেশি সময় আগে ভাই সি. টি. রাসেল এবং তার সহযোগীরা এবং কয়েক জন ব্যক্তি একত্রিত হয়ে ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিলেন। তারা যিহোবা ঈশ্বর, যিশু খ্রিস্ট, মৃতদের অবস্থা এবং মুক্তির মূল্য সম্বন্ধে বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়, তা শিখতে চেয়েছিলেন। তাদের অধ্যয়ন করার পদ্ধতি খুব সরল ছিল। কেউ একজন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতেন আর তারপর তারা দলগতভাবে সেই প্রশ্নের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত প্রতিটা শাস্ত্রপদ নিয়ে পরীক্ষা করতেন। পরিশেষে, তারা যা খুঁজে পেতেন, তা লিখে রাখতেন। যিহোবা বাইবেলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সত্য সেই পুরুষদের বুঝতে সাহায্য করেছিলেন আর সেই সত্যগুলো আজও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

২. আমরা যখন বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণীর অর্থ বোঝার চেষ্টা করি, তখন কোন বিষয়টা হয়তো কখনো কখনো ভুল উপসংহারে পৌঁছাতে পরিচালিত করে?

সেই বাইবেল ছাত্ররা খুব শীঘ্রই এটা বুঝতে পেরেছিলেন যে, বাইবেলের মৌলিক শিক্ষা সম্বন্ধে বোঝার চেয়ে বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণীর অর্থ বোঝা অনেক বেশি কঠিন। কেন? এর একটা কারণ হল বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো পরিপূর্ণ হওয়ার সময়ে অথবা সেগুলো পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর আমরা সেগুলোর অর্থ সবচেয়ে ভালোভাবে বুঝতে পারি। তবে, আরেকটা কারণ রয়েছে। একটা ভবিষ্যদ্‌বাণীর সঠিক অর্থ বোঝার জন্য আমাদের সাধারণত সেটার প্রসঙ্গ নিয়ে বিবেচনা করতে হবে। আমরা যদি ভবিষ্যদ্‌বাণীর কেবল একটা দিকের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করি এবং বাকি দিকগুলো উপেক্ষা করি, তা হলে আমরা হয়তো ভুল উপসংহারে পৌঁছাতে পারি। যোয়েল বইয়ে পাওয়া একটা ভবিষ্যদ্‌বাণী বোঝার ক্ষেত্রে সম্ভবত এমনটাই ঘটেছিল। আসুন, আমরা সেই ভবিষ্যদ্‌বাণী নিয়ে পুনর্বিবেচনা করে দেখি এবং আলোচনা করি যে, কেন আমাদের বর্তমান বোধগম্যতায় রদবদল করার প্রয়োজন রয়েছে।

৩-৪. যোয়েল ২:৭-৯ পদে পাওয়া ভবিষ্যদ্‌বাণীকে এখনও পর্যন্ত আমরা কীভাবে প্রয়োগ করে এসেছি?

যোয়েল ২:৭-৯ পদ পড়ুন। যোয়েল ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন, এক ঝাঁক পঙ্গপাল ইস্রায়েলকে ধ্বংস করে দেবে। সিংহের দাঁত ও “কশের দন্তের [‘চোয়ালের,’ ইজি-টু-রিড ভারশন]” মতো লোভী পতঙ্গগুলো ইস্রায়েলের সমস্ত গাছপালা খেয়ে ফেলবে! (যোয়েল ১:৪, ৬) বহু বছর ধরে আমরা এটা বিশ্বাস করে এসেছি যে, এই ভবিষ্যদ্‌বাণী রূপকভাবে যিহোবার লোকেদের ক্রমাগত প্রচার করাকে চিত্রিত করে আর এটা অনেকটা পঙ্গপালের মতো, যেটাকে থামানো সম্ভব নয়। আমরা এটা বুঝতাম যে, এই কাজ সেই “দেশ” অথবা লোকেদের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে, যারা ধর্মীয় নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। *

আমরা যদি কেবল যোয়েল ২:৭-৯ পদ পড়ি, তা হলে আমাদের হয়তো এই ব্যাখ্যাকে সঠিক বলে মনে হতে পারে। কিন্তু, আমরা যদি এই ভবিষ্যদ্‌বাণীর প্রসঙ্গ নিয়ে বিবেচনা করি, তা হলে আমরা এটা বুঝতে পারব যে, এই ভবিষ্যদ্‌বাণী এক ভিন্ন অর্থ প্রদান করে। আসুন, আমরা এর পিছনে থাকা চারটে কারণ পরীক্ষা করে দেখি।

রদবদল করার চারটে কারণ

৫-৬. এই শাস্ত্রপদগুলো নিয়ে বিবেচনা করলে কোন প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হয়: (ক) যোয়েল ২:২০ পদ? (খ) যোয়েল ২:২৫ পদ?

প্রথমত, এক ঝাঁক পঙ্গপালের আক্রমণের বিষয়ে যিহোবার প্রতিজ্ঞাটা লক্ষ করুন: “আমি তোমাদের নিকট হইতে উত্তর দেশীয় [পঙ্গপাল] . . . দূর করিব।” (যোয়েল ২:২০) পঙ্গপাল যদি যিহোবার লোকেদের চিত্রিত করে, যারা প্রচার করার এবং শিষ্য করার বিষয়ে যিশুর আদেশের বাধ্য হয়, তা হলে কেন যিহোবা তাদের দূর করার বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন? (যিহি. ৩৩:৭-৯; মথি ২৮:১৯, ২০) স্পষ্টতই, যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের নয় বরং সেই বিষয় অথবা ব্যক্তিকে দূর করছেন, যার কারণে তাঁর লোকেরা বিরোধিতার মুখোমুখি হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, যোয়েল ২:২৫ পদে লেখা কথাগুলো বিবেচনা করুন। সেখানে যিহোবা বলেন: “পঙ্গপাল . . . যে যে বৎসরের শস্যাদি খাইয়াছে, আমি তাহা পরিশোধ করিয়া তোমাদিগকে দিব।” লক্ষ করুন, যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেন যে, তিনি পঙ্গপালের কারণে হওয়া ক্ষতি “পরিশোধ করিয়া” দেবেন। পঙ্গপাল যদি রাজ্যের প্রচারকদের চিত্রিত করে, তা হলে এর অর্থ হবে, তারা যে-বার্তা ঘোষণা করে, সেটা ক্ষতি নিয়ে আসবে। কিন্তু, রাজ্যের বার্তা জীবন রক্ষা করে এবং দুষ্ট লোকেদের অনুতপ্ত হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারে। (যিহি. ৩৩:৮, ১৯) দুষ্ট লোকেদের জন্য এটা কতই-না চমৎকার এক আশীর্বাদ হতে পারে!

৭. যোয়েল ২:২৮, ২৯ পদে উল্লেখিত “তৎপরে” শব্দটা আমাদের কী বুঝতে সাহায্য করে?

যোয়েল ২:২৮, ২৯ পদ পড়ুন। তৃতীয়ত, ভবিষ্যদ্‌বাণীতে উল্লেখিত ঘটনাগুলো কোনটার পর কোনটা ঘটবে, তা নিয়ে বিবেচনা করুন। আপনি কি লক্ষ করেছেন যে, যিহোবা বলেন: “তৎপরে . . . , আমি . . . আমার আত্মা সেচন করিব” অর্থাৎ পঙ্গপালেরা তাদের নির্ধারিত কাজ শেষ করার পর তিনি তা করবেন? পঙ্গপালেরা যদি ঈশ্বরের রাজ্যের প্রচারক হয়ে থাকে, তা হলে কেন যিহোবা তাদের প্রচার কাজ শেষ করার পর তাঁর পবিত্র আত্মা সেচন করবেন? বাস্তব বিষয়টা হল ঈশ্বরের শক্তিশালী পবিত্র আত্মার সাহায্য ছাড়া তারা কখনোই বিরোধিতা আর এমনকী নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দশকের পর দশক ধরে প্রচার কাজ চালিয়ে যেতে পারত না।

ভাই জে. এফ. রাদারফোর্ড এবং অন্য অভিষিক্ত দাসেরা, যারা নেতৃত্ব নিয়েছিলেন, তারা সাহসের সঙ্গে এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার বিরুদ্ধে ঈশ্বরের বিচার ঘোষণা করছেন (অনুচ্ছেদ ৮ দেখুন)

৮. প্রকাশিত বাক্য ৯:১-১১ পদে বর্ণিত পঙ্গপাল কাদের চিত্রিত করে? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

প্রকাশিত বাক্য ৯:১-১১ পদ পড়ুন। এখন আসুন, আমরা চতুর্থ কারণটা লক্ষ করি। আগে আমরা এটা বলতাম যে, যোয়েল যে-পঙ্গপালের ঝাঁকের বিষয়ে বর্ণনা করেছিলেন, সেটা আমাদের প্রচার কাজকে চিত্রিত করে কারণ প্রকাশিত বাক্য বইয়ে একই রকমের ভবিষ্যদ্‌বাণী পাওয়া যায়। এই ভবিষ্যদ্‌বাণী এক ঝাঁক পঙ্গপালের বিষয়ে বর্ণনা করে, যাদের মানুষের মুখ রয়েছে এবং যাদের মাথায় “যেন সুবর্ণের তুল্য মুকুট” রয়েছে। (প্রকা. ৯:৭) তারা ‘সেই মনুষ্যদের [ঈশ্বরের শত্রুদের]’ পাঁচ মাস ধরে অনেক কষ্ট দেবে, “যাহাদের ললাটে ঈশ্বরের মুদ্রাঙ্ক নাই।” পঙ্গপালের আয়ু সাধারণত পাঁচ মাস হয়ে থাকে। (প্রকা. ৯:৪, ৫) এমনটা মনে হয় প্রকাশিত বাক্যে উল্লেখিত পঙ্গপাল যিহোবার অভিষিক্ত দাসদের বিষয়ে বর্ণনা করে। তারা এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার বিরুদ্ধে সাহসের সঙ্গে ঈশ্বরের বিচার ঘোষণা করে আর এর ফলে যারা এই জগতের পক্ষ নেয়, তারা সবাই অসন্তুষ্ট হয়।

৯. যোয়েল যে-পঙ্গপাল দেখেছিলেন এবং যোহন যে-পঙ্গপালের বিষয়ে বর্ণনা করেছিলেন, সেগুলোর মধ্যে কোন কোন উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে?

এটা ঠিক যে, প্রকাশিত বাক্যে প্রাপ্ত এবং যোয়েলের দ্বারা লিখিত ভবিষ্যদ্‌বাণীতে কিছু মিল রয়েছে। তবে, সেগুলোর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য পার্থক্যও রয়েছে। বিবেচনা করে দেখুন: যোয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণীতে বলা হয়েছে, পঙ্গপাল গাছপালা ধ্বংস করবে। (যোয়েল ১:৪, ৬, ৭) তবে, যোহনের দর্শনে পঙ্গপালকে “বলা হইল, পৃথিবীস্থ তৃণের . . . হানি করিও না।” (প্রকা. ৯:৪) যোয়েল যে-পঙ্গপাল দেখেছিলেন, সেগুলো উত্তর দিক থেকে আসে। (যোয়েল ২:২০) তবে, যোহন যাদের দেখেছিলেন, তারা অগাধলোক থেকে আসে। (প্রকা. ৯:২, ৩) যোয়েলের দ্বারা বর্ণিত পঙ্গপালকে দূর করে দেওয়া হয়। প্রকাশিত বাক্যে বর্ণিত পঙ্গপালকে দূর করে দেওয়া হয় না কিন্তু তাদের কাজ সমাপ্ত করতে দেওয়া হয়। এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায় না যে, যিহোবা তাদের বিষয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না।—“ পঙ্গপাল সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্‌বাণী—একইরকম কিন্তু আলাদা” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

১০. যোয়েল ও যোহন যে-পঙ্গপাল সম্বন্ধে বর্ণনা করেছিলেন, সেগুলো যে ভিন্ন বিষয়কে চিত্রিত করে, সেই সম্বন্ধে একটা শাস্ত্রীয় উদাহরণ দিন।

১০ এই দুটো ভবিষ্যদ্‌বাণীর উল্লেখযোগ্য পার্থক্যগুলো আমাদের এই উপসংহারে আসতে সাহায্য করে যে, তাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। যোয়েল যে-পঙ্গপালের বিষয়ে বলেছিলেন এবং প্রকাশিত বাক্য বইয়ে যে-পঙ্গপালের বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে, সেগুলো ভিন্ন বিষয়কে চিত্রিত করে। বাইবেলে কখনো কখনো কোনো প্রতীকী যখন ভিন্ন উপায়ে ব্যবহৃত হয়, তখন তা ভিন্ন অর্থ প্রদান করে। উদাহরণ স্বরূপ, প্রকাশিত বাক্য ৫:৫ পদে যিশুকে “যিহূদাবংশীয় সিংহ” বলা হয়েছে কিন্তু ১ পিতর ৫:৮ পদে দিয়াবলকে ‘গর্জ্জনকারী সিংহ’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আমাদের বর্তমান বোধগম্যতা সম্বন্ধে যে-প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হয়েছে, সেগুলোর কথা মাথায় রেখে আমাদের এটা খুঁজতে হবে যে, যোয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণীর সঠিক অর্থ কী হতে পারে।

এর অর্থ কী?

১১. পঙ্গপালকে শনাক্ত করার জন্য যোয়েল ১:৬ পদ এবং ২:১, ৮, ১১ পদ আমাদের কোন কোন ইঙ্গিত প্রদান করে?

১১ আমরা যদি যোয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণীর প্রসঙ্গ নিয়ে ভালোভাবে বিবেচনা করি, তা হলে আমরা দেখব যে, ভাববাদী যোয়েল কোনো সেনাবাহিনীর আক্রমণের বিষয়ে অনুমান করছিলেন। (যোয়েল ১:৬; ২:১, ৮, ১১) যিহোবা বলেছিলেন, তিনি অবাধ্য ইস্রায়েলীয়দের শাস্তি দেওয়ার জন্য তাঁর “মহাসৈন্য” (বাবিলীয় সৈন্য) ব্যবহার করবেন। (যোয়েল ২:২৫) উপযুক্তভাবেই এই সৈন্যদের “উত্তর দেশীয়” বলা যায় কারণ বাবিলীয়রা উত্তর দিক থেকে ইস্রায়েলের উপর আক্রমণ করবে। (যোয়েল ২:২০) সেই সৈন্যরা হল সুসংগঠিত পঙ্গপালের মতো। তাদের বিষয়ে যোয়েল বলেছিলেন: ‘সকল [সৈন্য] আপন আপন মার্গে অগ্রসর হয়,’ “তাহারা নগরের উপর লম্ফ দেয়, প্রাচীরের উপরে দৌড়ে, গৃহমধ্যে উঠে, চোরের ন্যায় গবাক্ষ” বা জানালা “দিয়া প্রবেশ করে।” (যোয়েল ২:৮, ৯) আপনি কি দৃশ্যটা কল্পনা করতে পারেন? চারিদিকে সৈন্য রয়েছে। লুকোনোর কোনো জায়গা নেই। বাবিলীয় সৈন্যদের হাত থেকে কেউই রেহাই পাবে না!

১২. পঙ্গপালের বিষয়ে যোয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণী কীভাবে পরিপূর্ণ হয়েছিল?

১২ পঙ্গপালের মতো বাবিলীয়রা (অথবা কল্‌দীয়রা) খ্রিস্টপূর্ব ৬০৭ সালে যিরূশালেমের উপর আক্রমণ করেছিল। বাইবেল বলে: “কল্‌দীয়দের . . . রাজা যুবকগণকে . . . খড়্গ দ্বারা বধ করিলেন, আর যুবক কি যুবতী, বৃদ্ধ কি জরাজীর্ণ, কাহারও প্রতি দয়া করিলেন না; ঈশ্বর তাঁহার হস্তে সকলকে সমর্পণ করিলেন। আর তাঁহার লোকেরা ঈশ্বরের গৃহ পোড়াইয়া দিল, যিরূশালেমের প্রাচীর ভগ্ন করিল, এবং তথাকার অট্টালিকা সকল অগ্নিদ্বারা পোড়াইয়া দিল, তথাকার সমস্ত মনোরম পাত্র বিনষ্ট করিল।” (২ বংশা. ৩৬:১৭, ১৯) বাবিলীয়রা যিরূশালেমের উপর আক্রমণ করার এবং সেই দেশ ধ্বংস করার পর লোকেরা বলতে পেরেছিল: “ইহা নরশূন্য ও পশুশূন্য ধ্বংসস্থান হইয়াছে, কল্‌দীয়দের হস্তগত হইয়াছে।”—যির. ৩২:৪৩.

১৩. যিরমিয় ১৬:১৬, ১৮ পদের অর্থ ব্যাখ্যা করুন।

১৩ যোয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণীর প্রায় ২০০ বছর পর যিহোবা যিরমিয়কে ব্যবহার করে এই আক্রমণের বিষয়ে আরও কিছু ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আক্রমণকারীরা সেই ইস্রায়েলীয়দের খুঁজে বের করবে, যারা মন্দ কাজ করেছে আর তাদের সবাইকে বন্দি করবে। “সদাপ্রভু কহেন, দেখ, আমি অনেক ধীবর আনাইব, তাহারা মৎস্যের ন্যায় তাহাদিগকে ধরিবে; পরে আমি অনেক ব্যাধ আনাইব, তাহারা মৃগয়া করিয়া প্রত্যেক পর্ব্বত হইতে, প্রত্যেক উপপর্ব্বত হইতে ও শৈলের ছিদ্র সকল হইতে তাহাদিগকে আনিবে। আমি . . . তাহাদের অপরাধের ও তাহাদের পাপের দ্বিগুণ ফল দিব।” বাবিলীয় আক্রমণকারীদের হাত থেকে কোনো সমুদ্র অথবা বনজঙ্গল অনুতাপহীন ইস্রায়েলীয়দের রক্ষা করতে পারবে না।—যির. ১৬:১৬, ১৮.

পুনর্স্থাপন

১৪. যোয়েল ২:২৮, ২৯ পদের ভবিষ্যদ্‌বাণী কখন পরিপূর্ণ হয়েছিল?

১৪ ভাববাদী যোয়েল এক সুসমাচার জানিয়েছিলেন। সেই দেশ আবারও ফলপ্রসূ হবে। (যোয়েল ২:২৩-২৬) তারপর, ভবিষ্যতে কোনো এক সময়ে প্রচুর আধ্যাত্মিক খাদ্য পাওয়া যাবে। ‘আমি মর্ত্ত্যমাত্রের উপরে আমার আত্মা সেচন করিব, তাহাতে তোমাদের পুত্ত্রকন্যাগণ ভাববাণী বলিবে; আর আমি দাসদাসীদিগেরও উপরে আমার আত্মা সেচন করিব।’ (যোয়েল ২:২৮, ২৯) ইস্রায়েলীয়রা বাবিলের বন্দিত্ব থেকে নিজেদের দেশে ফিরে আসার সঙ্গেসঙ্গে এটা ঘটেনি। এর পরিবর্তে, এটা শত শত বছর পর ৩৩ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিনে ঘটেছিল। কীভাবে আমরা তা জানতে পারি?

১৫. প্রেরিত ২:১৬, ১৭ পদ অনুযায়ী প্রেরিত পিতর যোয়েল ২:২৮ পদের কথায় কোন রদবদল করেছিলেন এবং এটা কোন বিষয়ের ইঙ্গিত দেয়?

১৫ প্রেরিত পিতর পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় যোয়েল ২:২৮, ২৯ পদের কথাগুলো এক চমৎকার ঘটনার প্রতি প্রয়োগ করেছিলেন, যেটা পঞ্চাশত্তমীর দিনে ঘটেছিল। সকাল ৯টার দিকে ঈশ্বর তাঁর পবিত্র আত্মা সেচন করেছিলেন এবং যারা তা লাভ করেছিল, তারা “ঈশ্বরের মহৎ মহৎ কর্ম্মের” বিষয়ে বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতে শুরু করেছিল। (প্রেরিত ২:১১) পিতর ভাববাদী যোয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণী উদ্ধৃত করার সময়ে পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় সেটার কথায় একটু রদবদল করেছিলেন। আপনি কি তা লক্ষ করেছেন? (পড়ুন, প্রেরিত ২:১৬, ১৭.) “তৎপরে” শব্দটা ব্যবহার করে উদ্ধৃতি শুরু করার পরিবর্তে পিতর বলেছিলেন: “শেষ কালে এইরূপ হইবে,” যা এই প্রসঙ্গে যিরূশালেম এবং সেখানকার মন্দির ধ্বংস হওয়ার ঠিক আগের সময়কে নির্দেশ করে। সেই সময়ে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা “মর্ত্ত্যমাত্রের উপরে” সেচন করা হবে। এটা ইঙ্গিত দেয় যে, যোয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হওয়ার আগে অনেক সময় অতিবাহিত হয়ে গিয়েছিল।

১৬. প্রথম শতাব্দীতে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা প্রচার কাজের উপর কোন প্রভাব ফেলেছিল এবং আমাদের দিন সম্বন্ধে কী বলা যায়?

১৬ ঈশ্বর প্রথম শতাব্দীতে খ্রিস্টানদের উপর তাঁর পবিত্র আত্মা সেচন করার পর তারা প্রচার কাজ শুরু করেছিল, যা একসময়ে সমগ্র পৃথিবীতে করা হবে। প্রেরিত পৌল প্রায় ৬১ খ্রিস্টাব্দে কলসীয়দের উদ্দেশে চিঠি লেখার সময়ে এটা বলতে পেরেছিলেন, “আকাশমণ্ডলের অধঃস্থিত সমস্ত সৃষ্টির” কাছে প্রচার করা হয়েছে। (কল. ১:২৩) পৌল যখন “সমস্ত সৃষ্টির” কথা বলেছিলেন, তখন তিনি পৃথিবীর সেইসমস্ত জায়গাকে নির্দেশ করেছিলেন, যে-জায়গাগুলোতে তিনি ও অন্যেরা যেতে পেরেছিলেন। প্রভু যিহোবার শক্তিশালী পবিত্র আত্মার সাহায্যে আমাদের দিনে প্রচার কাজ আরও বেশি জায়গায় করা হয়েছে আর তা “পৃথিবীর সীমা পর্য্যন্ত”!—প্রেরিত ১৩:৪৭; “ আমি . . . আমার আত্মা সেচন করিব” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

কী পরিবর্তন হয়েছে?

১৭. পঙ্গপালের বিষয়ে যোয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণী সম্বন্ধে আমাদের বোধগম্যতায় কোন পরিবর্তন হয়েছে?

১৭ কী পরিবর্তন হয়েছে? আমরা এখন যোয়েল ২:৭-৯ পদে পাওয়া ভবিষ্যদ্‌বাণীকে আরও সঠিকভাবে বুঝতে পেরেছি। স্পষ্টতই, এই পদগুলো উদ্যোগের সঙ্গে করা আমাদের প্রচার কাজকে নয় বরং বাবিলীয় সৈন্যদের কার্যকলাপকে নির্দেশ করে, যারা খ্রিস্টপূর্ব ৬০৭ সালে যিরূশালেমের উপর আক্রমণ করেছিল।

১৮. যিহোবার লোকেদের সম্বন্ধে কী পরিবর্তন হয়নি?

১৮ তবে, কী পরিবর্তন হয়নি? যিহোবার লোকেরা সম্ভাব্য সমস্ত পদ্ধতি ব্যবহার করে সব জায়গায় সুসমাচার প্রচার করে চলেছে। (মথি ২৪:১৪) কোনো সরকারি সীমা আরোপ প্রচার করার আজ্ঞা পালন করা থেকে আমাদের বিরত করতে পারবে না। আর যিহোবার আশীর্বাদে আমরা অন্য যেকোনো সময়ে চেয়ে আরও বেশি সক্রিয়ভাবে এবং সাহসের সঙ্গে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করছি! আমরা বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণীর অর্থ বোঝার জন্য নম্রতার সঙ্গে ক্রমাগত যিহোবার উপর নির্ভর করি কারণ আমাদের এই আস্থা রয়েছে যে, তিনি উপযুক্ত সময়ে আমাদের ‘সমস্ত সত্য’ বুঝতে সাহায্য করবেন!—যোহন ১৬:১৩.

গান সংখ্যা ৪৮ প্রতিদিন যিহোবার সঙ্গে গমনাগমন করা

^ অনু. 5 বহু বছর ধরে আমরা এটা বিশ্বাস করে এসেছি যে, যোয়েল ১ ও অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ ভবিষ্যদ্‌বাণী আধুনিক দিনের প্রচার কাজকে চিত্রিত করে। তবে, যোয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণীর এই অংশের বিষয়ে আমাদের বোধগম্যতায় যে রদবদল করার প্রয়োজন রয়েছে, সেটার পিছনে চারটে উত্তম কারণ রয়েছে। সেগুলো কী?

^ অনু. 3 উদাহরণ স্বরূপ, ২০০৯ সালের ১৫ এপ্রিল প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দেওয়া “সৃষ্টির মধ্যে যিহোবার প্রজ্ঞা দেখা যায়” শিরোনামের প্রবন্ধের ১৪-১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন।