অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১৭
“তোমাদিগকে আমি বন্ধু বলিয়াছি”
“তোমাদিগকে আমি বন্ধু বলিয়াছি, কারণ আমার পিতার নিকটে যাহা যাহা শুনিয়াছি, সকলই তোমাদিগকে জ্ঞাত করিয়াছি।”—যোহন ১৫:১৫.
গান সংখ্যা ৫ খ্রিস্ট, আমাদের আদর্শ
সারাংশ *
১. কীভাবে আপনি কোনো ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন?
কোনো ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে তোলার জন্য আপনাকে তার সঙ্গে সময় কাটাতে হবে। একে অপরের সঙ্গে কথা বলার সময়ে আপনারা যখন নিজেদের চিন্তাভাবনা ও অভিজ্ঞতাগুলো ভাগ করে নেবেন, তখন আপনারা বন্ধু হয়ে উঠবেন। তবে, যিশুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হয়। সেগুলোর মধ্যে কয়েকটা কী?
২. প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা কী, যেটার মুখোমুখি আমরা হই?
২ প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা হল আমরা যিশুকে দেখিনি। প্রথম শতাব্দীর অনেক খ্রিস্টান এই একই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েছিল। কিন্তু, প্রেরিত পিতর বলেছিলেন: “তোমরা তাঁহাকে না দেখিয়াও প্রেম করিতেছ; এখন দেখিতে পাইতেছ না, তথাপি তাঁহাতে বিশ্বাস . . . করিতেছ।” (১ পিতর ১:৮) তাই, যিশুকে সরাসরি না দেখলেও তাঁর সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে তোলা সম্ভব।
৩. দ্বিতীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা কী, যেটার মুখোমুখি আমরা হই?
৩ দ্বিতীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা হল আমরা যিশুর সঙ্গে কথা বলতে পারি না। আমরা যখন প্রার্থনা করি, তখন আমরা যিহোবার সঙ্গে কথা বলি। এটা ঠিক যে, আমরা যিশুর নামে প্রার্থনা করি, কিন্তু আমরা সরাসরি যিশুর সঙ্গে কথা বলি না। সত্যি বলতে কী, যিশু নিজেই চান না যে, আমরা তাঁর কাছে প্রার্থনা করি। কেন? কারণ প্রার্থনা হল উপাসনার একটা দিক আর একমাত্র প্রভু যিহোবারই উপাসনা করা উচিত। (মথি ৪:১০) কিন্তু তারপরও, আমরা যিশুর প্রতি আমাদের ভালোবাসা দেখাতে পারি।
৪. তৃতীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা কী এবং এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?
৪ তৃতীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা হল যিশু স্বর্গে বাস করেন আর তাই আমরা আক্ষরিকভাবে তাঁর সঙ্গে সময় কাটাতে পারি না। কিন্তু তারপরও, আমরা যিশু সম্বন্ধে অনেক
কিছু জানতে পারি। আমরা চারটে বিষয় নিয়ে বিবেচনা করব, যেগুলো করার মাধ্যমে আমরা তাঁর সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বকে আরও শক্তিশালী করতে পারি। প্রথমে আসুন, আমরা পরীক্ষা করে দেখি যে, খ্রিস্টের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে তোলা কেন গুরুত্বপূর্ণ।কেন আমাদের যিশুর বন্ধু হতে হবে?
৫. কেন আমাদের অবশ্যই যিশুর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে হবে? (এ ছাড়া “ যিশুর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুললে আমরা যিহোবার বন্ধু হয়ে উঠব” এবং “ যিশুর ভূমিকা সম্বন্ধে এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি” শিরোনামের বাক্সগুলো দেখুন।)
৫ আমরা যদি যিহোবার সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই, তা হলে আমাদের অবশ্যই যিশুর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে হবে। কেন? দুটো কারণ নিয়ে বিবেচনা করুন। প্রথমত, যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “পিতা আপনি তোমাদিগকে ভাল বাসেন, কেননা তোমরা আমাকে ভাল বাসিয়াছ।” (যোহন ১৬:২৭) তিনি আরও বলেছিলেন: “আমা দিয়া না আসিলে কেহ পিতার নিকটে আইসে না।” (যোহন ১৪:৬) যিশুর সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ বন্ধন গড়ে না তুলে যিহোবার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার চেষ্টা করা হল কোনো বাড়ির দরজা ব্যবহার না করে তাতে প্রবেশ করার মতো। যিশু একই রকমের দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেছিলেন, যখন তিনি নিজেকে “মেষদিগের দ্বার” হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। (যোহন ১০:৭) দ্বিতীয়ত, যিশু নিখুঁতভাবে তাঁর পিতার গুণাবলি প্রতিফলিত করেছিলেন। তিনি তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “যে আমাকে দেখিয়াছে, সে পিতাকে দেখিয়াছে।” (যোহন ১৪:৯) তাই, যিহোবাকে জানার একটা গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল যিশুর জীবনী সম্বন্ধে অধ্যয়ন করা। আমরা যিশু সম্বন্ধে যতবেশি জানব, ততবেশি তাঁকে ভালোবাসতে অনুপ্রাণিত হব। আর যিশুর সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব যতবেশি শক্তিশালী হবে, তাঁর পিতার প্রতি আমাদের ভালোবাসা ততবেশি গভীর হবে।
৬. আরেকটা কোন কারণে আমাদের অবশ্যই যিশুর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে? ব্যাখ্যা করুন।
৬ আমাদের প্রার্থনার উত্তর লাভ করার জন্য আমাদের অবশ্যই যিশুর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। এর অর্থ হল যোহন ১৪:১৩) যদিও যিহোবাই হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি আমাদের প্রার্থনা শোনেন এবং উত্তর দেন, তবে তিনি তাঁর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করার কর্তৃত্ব যিশুকে দিয়েছেন। (মথি ২৮:১৮) তাই, ঈশ্বর আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেওয়ার আগে এটা লক্ষ করেন যে, আমরা যিশুর পরামর্শ কাজে লাগিয়েছি কি না। উদাহরণ স্বরূপ যিশু বলেছিলেন: “তোমরা যদি লোকের অপরাধ ক্ষমা কর, তবে তোমাদের স্বর্গীয় পিতা তোমাদিগকেও ক্ষমা করিবেন। কিন্তু তোমরা যদি লোকদিগকে ক্ষমা না কর, তবে তোমাদের পিতা তোমাদেরও অপরাধ ক্ষমা করিবেন না।” (মথি ৬:১৪, ১৫) তাই, এটা কতই-না গুরুত্বপূর্ণ যেন আমরা অন্যদের সঙ্গে সেভাবেই আচরণ করি, যেভাবে যিহোবা ও যিশু আমাদের সঙ্গে আচরণ করেন!
“যিশুর নামে” প্রার্থনা শেষ করার চেয়ে আমাদের অবশ্যই আরও বেশি কিছু করতে হবে। আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেওয়ার জন্য যিহোবা যেভাবে যিশুকে ব্যবহার করেন, সেটা আমাদের অবশ্যই জানতে হবে। যিশু প্রেরিতদের বলেছিলেন: “তোমরা আমার নামে যাহা কিছু যাচ্ঞা করিবে, তাহা আমি সাধন করিব।” (৭. যিশুর দ্বারা জোগানো মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান থেকে কারা উপকৃত হবে?
৭ কেবলমাত্র সেই ব্যক্তিরাই যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান থেকে উপকার লাভ করবে, যাদের যিশুর সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। কীভাবে আমরা তা জানি? যিশু বলেছিলেন যে, তিনি “আপন বন্ধুদের নিমিত্ত নিজ প্রাণ সমর্পণ” করবেন। (যোহন ১৫:১৩) পৃথিবীতে যিশুর জন্মের আগে যে-বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা বেঁচে ছিল, তাদের যিশু সম্বন্ধে জানতে হবে এবং তাঁর প্রতি ভালোবাসা গড়ে তুলতে হবে। অব্রাহাম, সারা, মোশি ও রাহবের মতো পুরুষ ও মহিলারা পুনরুত্থিত হবেন। তবে, যিহোবার এই দাসদেরও যিশুর সঙ্গে এক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা অনন্তজীবন লাভ করতে পারেন।—যোহন ১৭:৩; প্রেরিত ২৪:১৫; ইব্রীয় ১১:৮-১২, ২৪-২৬, ৩১.
৮-৯. আমরা যদি যিশুর বন্ধু হই, তা হলে আমরা কী করতে পারব এবং যোহন ১৫:৪, ৫ পদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী কেন তা গুরুত্বপূর্ণ?
৮ আমরা রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার এবং শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে যিশুর সঙ্গে কাজ করার আনন্দ লাভ করি। যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তিনি একজন শিক্ষক ছিলেন। আর স্বর্গে ফিরে যাওয়ার পর থেকে যিশু মণ্ডলীর মস্তক হিসেবে ক্রমাগত প্রচার ও শিক্ষাদানের কাজে নির্দেশনা দিচ্ছেন। আপনি যতবেশি লোককে সম্ভব যিশু ও তাঁর পিতা সম্বন্ধে জানানোর জন্য যে-প্রচেষ্টা করেন, যিশু সেটাকে মূল্যবান হিসেবে দেখেন। সত্যি বলতে কী, যিহোবা ও যিশুর সাহায্যের মাধ্যমেই আমরা একমাত্র এই কাজ সম্পন্ন করতে পারি।—পড়ুন, যোহন ১৫:৪, ৫.
৯ ঈশ্বরের বাক্য স্পষ্টভাবে আমাদের শিক্ষা দেয় যে, যিহোবাকে খুশি করার জন্য আমাদের অবশ্যই যিশুর প্রতি ভালোবাসা গড়ে তুলতে এবং তা বজায় রাখতে হবে। তাই আসুন, যিশুর বন্ধু হয়ে ওঠার জন্য আমরা চারটে বিষয় নিয়ে বিবেচনা করি।
যেভাবে যিশুর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা যায়
১০. যিশুর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার প্রথম পদক্ষেপটা কী?
১০ (১) যিশুকে জানুন। আমরা বাইবেলের মথি, মার্ক, লূক ও যোহন বই পড়ার মাধ্যমে যিশুকে জানতে পারি। আমরা যখন যিশুর জীবন সম্বন্ধে বাইবেলের বিবরণগুলো নিয়ে ধ্যান করব, তখন আমরা যিশুকে ভালোবাসতে এবং তাঁর প্রতি সম্মান দেখাতে অনুপ্রাণিত হব কারণ তিনি সদয়ভাবে লোকেদের সঙ্গে আচরণ করেছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, যিশু যদিও তাঁর শিষ্যদের প্রভু ছিলেন, তারপরও তিনি তাদের সঙ্গে দাসের মতো আচরণ করেননি। এর পরিবর্তে, তিনি তাদের কাছে নিজের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন। (যোহন ১৫:১৫) যিশু তাদের দুঃখে দুঃখিত হয়েছিলেন আর তাদের সঙ্গে কেঁদেছিলেন। (যোহন ১১:৩২-৩৬) যিশুর শত্রুরাও এমনকী এটা লক্ষ করেছিল যে, যারা তাঁর বার্তা গ্রহণ করেছিল, তারা তাঁর বন্ধু হয়ে উঠেছিল। (মথি ১১:১৯) যিশু যেভাবে তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে আচরণ করেছিলেন, আমরা যখন তা অনুকরণ করব, তখন অন্যদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও ভালো হবে, আমরা সন্তুষ্ট ও সুখী হব এবং খ্রিস্টের প্রতি আমাদের উপলব্ধিবোধ বৃদ্ধি পাবে।
১১. যিশুর বন্ধু হয়ে ওঠার দ্বিতীয় পদক্ষেপটা কী এবং কেন এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ?
১ করি. ২:১৬) কীভাবে আমরা যিশুকে অনুকরণ করতে পারি? একটা উদাহরণ নিয়ে চিন্তা করুন। যিশু নিজেকে খুশি করার পরিবর্তে অন্যদের সাহায্য করার বিষয়ে বেশি চিন্তিত ছিলেন। (মথি ২০:২৮; রোমীয় ১৫:১-৩) যেহেতু তিনি এভাবে চিন্তা করেছিলেন, তাই তিনি আত্মত্যাগমূলক মনোভাব দেখাতে এবং ক্ষমা করতে পেরেছিলেন। লোকেরা তাঁর সম্বন্ধে যা বলত, সেই বিষয়ে তিনি সহজেই অসন্তুষ্ট হয়ে যেতেন না। (যোহন ১:৪৬, ৪৭) আর তিনি একজন ব্যক্তির অতীতের কোনো ভুল ধরে বসে থাকতেন না এবং এর দ্বারা নিজের চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত হতে দিতেন না। (১ তীম. ১:১২-১৪) যিশু বলেছিলেন: “তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে . . . সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।” (যোহন ১৩:৩৫) নিজেকে জিজ্ঞেস করুন না কেন, “আমি কি আমার ভাই-বোনদের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখার জন্য যথাসাধ্য করার মাধ্যমে যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করছি?”
১১ (২) যিশুর মতো চিন্তা ও কাজ করুন। আমরা যিশুর চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে যত ভালোভাবে জানতে পারব এবং তা অনুকরণ করব, তাঁর সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব তত ঘনিষ্ঠ হবে। (১২. যিশুর বন্ধু হয়ে ওঠার তৃতীয় পদক্ষেপটা কী এবং কীভাবে আমরা সেই পদক্ষেপ নিতে পারি?
১২ (৩) খ্রিস্টের ভাইদের সমর্থন করুন। আমরা যিশুর অভিষিক্ত ভাইদের জন্য যা-কিছু করি, সেগুলোকে তিনি এমনভাবে দেখেন যেন আমরা সেগুলো তাঁর প্রতিই করছি। (মথি ২৫:৩৪-৪০) যিশু তাঁর অনুসারীদের রাজ্যের বার্তা প্রচার করার এবং শিষ্য তৈরি করার যে-কার্যভার দিয়েছেন, সেই কাজে পূর্ণরূপে অংশ নেওয়া হল অভিষিক্ত ভাইদের সমর্থন করার প্রধান উপায়। (মথি ২৮:১৯, ২০; প্রেরিত ১০:৪২) একমাত্র ‘আরও মেষের’ সাহায্যেই খ্রিস্টের ভাইয়েরা বর্তমানে বিশ্বব্যাপী এই বৃহৎ প্রচার অভিযান সম্পন্ন করতে পারে। (যোহন ১০:১৬) আপনি যদি আরও মেষের অংশী হয়ে থাকেন, তা হলে প্রতি বার আপনি যখন পরিচর্যায় অংশ নেন, তখন আপনি কেবল খ্রিস্টের ভাইদের প্রতিই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে খ্রিস্টের প্রতিও ভালোবাসা দেখিয়ে থাকেন।
১৩. লূক ১৬:৯ পদে পাওয়া যিশুর পরামর্শ কীভাবে আমরা কাজে লাগাতে পারি?
১৩ আমরা রাজ্যের কাজে আর্থিক সমর্থন জোগানোর মাধ্যমেও যিহোবা ও যিশুর সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারি কারণ এই কাজে তাঁরা পরিচালনা দিচ্ছেন। (পড়ুন, লূক ১৬:৯.) উদাহরণ স্বরূপ, আমরা বিশ্বব্যাপী কাজের জন্য দান দিতে পারি। এই দান বিচ্ছিন্ন এলাকায় সুসমাচার প্রচার করার জন্য, উপাসনাস্থল নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য এবং যারা বিপর্যয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের বস্তুগত প্রয়োজনীয়তা মেটানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া, আমরা আমাদের মণ্ডলীকেও আর্থিকভাবে সমর্থন করতে পারি এবং সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে, এমন ভাই-বোনদের ব্যক্তিগতভাবে সাহায্য করতে পারি। (হিতো. ১৯:১৭) এই উপায়গুলোর মাধ্যমে আমরা খ্রিস্টের ভাইদের সমর্থন করতে পারি।
১৪. ইফিষীয় ৪:১৫, ১৬ পদ অনুযায়ী যিশুর বন্ধু হওয়ার চতুর্থ পদক্ষেপটা কী?
১৪ (৪) খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর ব্যবস্থাকে সমর্থন করুন। খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মস্তক হিসেবে যিশু আমাদের যত্ন নেওয়ার জন্য যে-ভাইদের নিযুক্ত করেছেন, তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করার মাধ্যমে আমরা যিশুর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করি। (পড়ুন, ইফিষীয় ৪:১৫, ১৬.) উদাহরণ স্বরূপ, আমরা আমাদের কিংডম হলকে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহার করার চেষ্টা করছি। আর তা করার জন্য কোনো কোনো মণ্ডলীকে অন্য মণ্ডলীর সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া, প্রচারের এলাকায় রদবদল করা হয়েছে। এই ব্যবস্থার ফলে সংগঠনের অনেক টাকা সাশ্রয় হয়েছে। তবে, এই রদবদলের কারণে কোনো কোনো প্রকাশককে নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হয়েছে। সেই বিশ্বস্ত প্রকাশকরা হয়তো কোনো মণ্ডলীতে বহু বছর ধরে সেবা করেছে আর এর ফলে ভাই-বোনদের সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ বন্ধন গড়ে উঠেছে। কিন্তু, এখন তাদের অন্য মণ্ডলীতে গিয়ে সেবা করতে বলা হয়েছে। যিশুর এই অনুগত শিষ্যরা যখন নতুন ব্যবস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করে, তখন তা দেখে যিশু কতই-না আনন্দিত হন!
যিশুর চিরকালের বন্ধুরা
১৫. কীভাবে যিশুর সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে?
১৫ পবিত্র আত্মার দ্বারা অভিষিক্ত ব্যক্তিদের যিশুর সঙ্গে চিরকাল থাকার এবং ঈশ্বরের রাজ্যে শাসন করার আশা রয়েছে। তারা তাঁকে দেখতে পাবে, তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারবে এবং তাঁর সঙ্গে সময় কাটাতে পারবে। (যোহন ১৪:২, ৩) যাদের পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আশা রয়েছে, তারাও যিশুর ভালোবাসা ও যত্ন লাভ করবে। যদিও তারা যিশুকে দেখতে পাবে না, তারপরও তাঁর সঙ্গে তাদের বন্ধন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে কারণ তারা যিহোবা ও যিশুর যত্নাধীনে জীবন উপভোগ করবে।—যিশা. ৯:৬, ৭.
১৬. যিশুর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে আমরা কোন কোন আশীর্বাদ লাভ করি?
১৬ যিশুর বন্ধু হওয়ার জন্য তাঁর আমন্ত্রণে সাড়া দেওয়ার মাধ্যমে আমরা অনেক আশীর্বাদ লাভ করি। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা এখনই তাঁর ভালোবাসা ও সমর্থনের দ্বারা উপকৃত হই। আমরা চিরকাল বেঁচে থাকার আশা লাভ করি। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যিশুর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে আমরা যিশুর পিতা যিহোবার সঙ্গে এক ব্যক্তিগত ও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তুলি, যেটা হল সবচেয়ে মূল্যবান এক সম্পদ। যিশুর বন্ধু হিসেবে পরিচিত হতে পারাটা কতই-না বিশেষ এক সুযোগ!
গান সংখ্যা ২৫ শিষ্যত্বের প্রমাণ
^ অনু. 5 কয়েক বছর ধরে প্রেরিতরা যিশুর সঙ্গে সময় কাটিয়ে ছিলেন। তারা যিশুর সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং কাজ করেছিলেন আর এভাবে তারা যিশুর ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন। যিশু চান যেন আমরাও তাঁর বন্ধু হয়ে উঠি কিন্তু সেই প্রেরিতদের জন্য তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা যতটা সহজ ছিল, আমাদের জন্য ততটা সহজ নয়। কীভাবে আমরা যিশুর সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং তা বজায় রাখতে পারি, সেই বিষয়ে এই প্রবন্ধে কিছু প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং কিছু পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করা হবে।
^ অনু. 55 ছবি সম্বন্ধে: (১) পারিবারিক উপাসনার সময়ে আমরা যিশুর জীবন ও পরিচর্যা নিয়ে অধ্যয়ন করতে পারি। (২) মণ্ডলীতে আমরা আমাদের ভাইদের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করতে পারি। (৩) পরিচর্যায় পূর্ণরূপে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে আমরা খ্রিস্টের ভাইদের সমর্থন করতে পারি। (৪) মণ্ডলীগুলোকে যখন সংযুক্ত করা হয়, তখন আমরা প্রাচীনদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহযোগিতা করতে পারি।