অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১৭
যিহোবা সত্যিই আপনাকে ভালোবাসেন!
“সদাপ্রভু আপন প্রজাদিগকে প্রেম করেন।”—২ বংশা. ২:১১.
গান সংখ্যা ১৮ ঈশ্বরের অনুগত প্রেম
সারাংশ *
১. যিহোবা আমাদের মধ্যে কী লক্ষ করেন?
যিহোবা ঈশ্বর “আপন প্রজাদিগকে প্রেম করেন।” (২ বংশা. ২:১১) এই বিষয়টা জেনে আমরা কতই-না আনন্দিত হই! যিহোবা আমাদের মধ্যে ভালো বিষয়গুলো লক্ষ করেন। তিনি এটাও দেখেন যে, পরবর্তী সময় আমরা হয়তো একজন ভালো ব্যক্তি হয়ে উঠতে পারি। তাই, তিনি আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন। আমরা যদি তাঁর প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখি, তা হলে তিনি চিরকাল আমাদের বন্ধু হয়ে থাকবেন।—যোহন ৬:৪৪.
২. কেন কেউ কেউ মনে করে, যিহোবা তাদের ভালোবাসেন না?
২ কিছু ভাই-বোন হয়তো বলতে পারে, ‘আমি জানি, যিহোবা একটা দল হিসেবে তাঁর লোকদের ভালোবাসেন। কিন্তু, আমি কীভাবে নিশ্চিত হতে পারি, যিহোবা ব্যক্তিগতভাবে আমাকে ভালোবাসেন?’ কেন তারা এভাবে চিন্তা করে থাকে? হতে পারে, ছোটোবেলায় তাদের সঙ্গে খুবই খারাপ কিছু ঘটেছিল। অদিতি * নামে একজন বোনের উদাহরণ বিবেচনা করে দেখুন। তিনি বলেন: “আমি যখন বাপ্তিস্ম নিয়েছিলাম, তখন আমি অনেক খুশি হয়েছিলাম। পরে, আমি অগ্রগামীর কাজ শুরু করি। কিন্তু, ১৫ বছর পর ছোটোবেলার এক যন্ত্রণাদায়ক স্মৃতির কারণে আমি একেবারে ভেঙে পড়ি। আর সন্দেহ করতে শুরু করি, যিহোবা কখনোই আমাকে ভালোবাসতে পারেন না।” রুবি নামে একজন অগ্রগামী বোনও বলেন: “আমি যিহোবাকে খুশি করতে চাইতাম, তাই আমি বাপ্তিস্ম নিই। কিন্তু, মনে মনে আমি চিন্তা করতাম, যিহোবা আমাকে কখনোই ভালোবাসবেন না।”
৩. এই প্রবন্ধে আমরা কোন প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করব?
৩ আমরা এই মাত্র যে-বোনদের বিষয়ে দেখলাম, তাদের মতো আপনারও সন্দেহ হতে পারে যে, আপনি হৃদয় দিয়ে যিহোবাকে ভালোবাসেন, কিন্তু তিনি আপনাকে ভালোবাসেন না। এই প্রবন্ধে আমরা এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করব: কেন আপনি নিশ্চিত হতে পারেন, যিহোবা সত্যিই আপনাকে ভালোবাসেন? আপনার যদি
মনে হয়, তিনি আপনাকে ভালোবাসেন না, তা হলে আপনার কী করা উচিত?যিহোবার ভালোবাসা সম্বন্ধে সন্দেহ করার কিছু বিপদ
৪. যিহোবার ভালোবাসা সম্বন্ধে সন্দেহ করার কিছু বিপদ কী?
৪ আমরা যদি পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত থাকি, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন, তা হলে জীবনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকা সত্ত্বেও আমরা মনপ্রাণ দিয়ে যিহোবার সেবা করে যেতে পারব। কিন্তু, আমরা যদি হতাশ হয়ে পড়ি আর সন্দেহ করতে শুরু করি, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন না, তা হলে আমাদের “শক্তি সঙ্কুচিত” হয়ে যাবে। (হিতো. ২৪:১০) আর আমরা শয়তানের আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারব না।—ইফি. ৬:১৬.
৫. কিছু ভাই-বোনের কথা থেকে কীভাবে বোঝা যায় যে, যিহোবার ভালোবাসা সম্বন্ধে সন্দেহ করা বিপদজনক?
৫ বর্তমানে, কিছু ভাই-বোন সন্দেহ করে যে, যিহোবা তাদের ভালোবাসেন না আর এমনকী যত্নও নেন না। এই কারণেই তাদের বিশ্বাস দুর্বল হয়ে পড়েছে। জেমস নামে একজন প্রাচীন বলেন: “আমি বেথেলে সেবা করতাম এবং অন্য ভাষার মণ্ডলীতে যোগ দিতাম। প্রচার করতে আমার খুব ভালো লাগত। কিন্তু, আমি সন্দেহ করতে শুরু করি, যিহোবার জন্য আমি যা-কিছু করছিলাম, তাতে তিনি খুশি কি না। একবার, এমনও মনে হয়েছিল, যিহোবা যেন আমার প্রার্থনা শুনছেন না।” ইভা, যিনি পূর্ণসময়ের সেবা করেন, বলেন: “আমি দেখেছি যে, আমরা যখন যিহোবার ভালোবাসা সম্বন্ধে সন্দেহ করতে শুরু করি, তখন সেটা আমাদের উপাসনার উপর খুবই খারাপ প্রভাব ফেলে। সেই সময়ে যিহোবার সেবা করতে আমাদের ভালো লাগে না এবং মনের শান্তিও নষ্ট হয়ে যায়।” মাইকেল, যিনি এখন একজন প্রাচীন ও নিয়মিত অগ্রগামী, বলেন: “আমরা যদি বিশ্বাস না করি, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন, তা হলে আমরা ধীরে ধীরে তাঁর কাছ থেকে দূরে সরে যাব।”
৬. আপনি যদি যিহোবার ভালোবাসা সম্বন্ধে সন্দেহ করতে শুরু করেন, তা হলে আপনার কী করা উচিত?
৬ ভাই-বোনদের কথা থেকে বুঝতে পারি, আমরা যদি যিহোবার ভালোবাসা সম্বন্ধে সন্দেহ করতে শুরু করি, তা হলে এটা আমাদের জন্য বিপদজনক হতে পারে। আপনার মনে যদি এইরকম চিন্তা আসে, তা হলে আপনার কী করা উচিত? এইরকম চিন্তা আসলে সঙ্গেসঙ্গে তা সরিয়ে দিন! যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন, যেন তিনি উদ্বিগ্ন করে তোলে এমন চিন্তাভাবনাকে মন থেকে দূর করে দেন। এর ফলে, ‘ঈশ্বরের শান্তি [আপনার] হৃদয় ও মনকে রক্ষা করবে।’ (গীত. ১৩৯:২৩; ফিলি. ৪:৬, ৭) মনে রাখবেন, এই লড়াইয়ে আপনি একা নন। আপনার মতো অনেক ভাই-বোন রয়েছে আর এমনকী অতীতে যিহোবার কিছু বিশ্বস্ত দাসকেও এইরকম চিন্তাভাবনার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছিল। আসুন, প্রেরিত পৌলের উদাহরণ বিবেচনা করে দেখি।
পৌলের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
৭. পৌলকে কোন কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল?
৭ আপনার উপর কি অনেক দায়িত্ব রয়েছে আর আপনি কি এই ভেবে দুশ্চিন্তা করেন, সেই দায়িত্বগুলো ঠিকভাবে পালন করতে পারবেন কি না? পৌলেরও এমনটা মনে হয়েছিল। তিনি একটা মণ্ডলীর নয় বরং “সমস্ত মণ্ডলীর জন্য” উদ্বিগ্ন ছিলেন। (২ করি. ১১:২৩-২৮) আপনি কি অনেক দিন ধরে অসুস্থ আর এটা কি আপনার আনন্দ কেড়ে নিচ্ছে? পৌলের শরীরেও “মাংসের একটা কাঁটা” ছিল। হতে পারে, তার কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা ছিল আর তিনি সেটা থেকে মুক্ত হতে চেয়েছিলেন। (২ করি. ১২:৭-১০) আপনি কি নিজের দুর্বলতার কারণে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন? পৌলও নিজেকে “অসহায় মানুষ” বলে মনে করেছিলেন কারণ সঠিক কাজ করার জন্য তাকে অনেক লড়াই করতে হত।—রোমীয় ৭:২১-২৪.
৮. পৌলের নিজের সমস্যা থাকা সত্ত্বেও, কেন তিনি যিহোবার সেবা করে যেতে পেরেছিলেন?
৮ বিভিন্ন পরীক্ষা ও নিরুৎসাহিতা সত্ত্বেও, পৌল যিহোবার সেবা করে যেতে পেরেছিলেন। কেন তিনি তা করে যেতে পেরেছিলেন? কারণ মুক্তির মূল্যের উপর তার সম্পূর্ণ বিশ্বাস ছিল। তিনি জানতেন, যিশু প্রতিজ্ঞা করেছেন, “যে-কেউ [যিশুর] উপর বিশ্বাস করে, সে . . . অনন্তজীবন পায়।” (যোহন ৩:১৬; রোমীয় ৬:২৩) পৌল নিশ্চিত ছিলেন যে, যারা গুরুতর পাপ করেছে, তারা যদি অনুতপ্ত হয়, তা হলে মুক্তির মূল্যের উপর ভিত্তি করে যিহোবা তাদের ক্ষমা করবেন।—গীত. ৮৬:৫.
৯. গালাতীয় ২:২০ পদে লেখা পৌলের কথাগুলো থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
৯ পৌল এই বিষয়েও নিশ্চিত ছিলেন, যিহোবা তাকে ভালোবাসেন কারণ তিনি তার জন্য যিশুকে মুক্তির মূল্য হিসেবে দান করেছিলেন। (পড়ুন, গালাতীয় ২:২০.) লক্ষ করুন, এই শাস্ত্রপদের শেষে কী লেখা আছে: ‘ঈশ্বরের সেই পুত্র আমাকে ভালোবাসেন এবং আমার জন্য তাঁর জীবন দান করেছেন।’ পৌল এইরকম চিন্তা করেননি, ‘যিহোবা অন্য ভাই-বোনদের ভালোবাসতে পারেন, কিন্তু আমাকে ভালোবাসতে পারেন না কারণ আগে আমি একজন খারাপ ব্যক্তি ছিলাম।’ তাই, পৌল রোমীয় খ্রিস্টানদের উদ্দেশে লিখেছিলেন: “আমরা যখন পাপী ছিলাম, তখন খ্রিস্ট আমাদের জন্য মৃত্যুবরণ করেছিলেন।” (রোমীয় ৫:৮) সত্যিই, আমাদের জন্য ঈশ্বরের প্রেমের কোনো সীমা নেই!
১০. রোমীয় ৮:৩৮, ৩৯ পদ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১০ রোমীয় ৮:৩৮, ৩৯ পদ পড়ুন। পৌল পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত ছিলেন, ঈশ্বরের প্রেমের অনেক ক্ষমতা রয়েছে আর এর কারণে “কোনো কিছুই ঈশ্বরের প্রেম থেকে আমাদের আলাদা করতে পারবে না।” পৌল জানতেন, যিহোবা ইজরায়েলীয়দের প্রতি কত ধৈর্য ধরেছিলেন এবং কীভাবে যিহোবা ব্যক্তিগতভাবে তার প্রতি করুণা দেখিয়েছিলেন। তিনি হয়তো এইরকম চিন্তা করেছিলেন, ‘যেহেতু যিহোবা তাঁর পুত্রকে আমার জন্য মৃত্যুবরণ করতে দিয়েছিলেন, তাই তিনি যে আমাকে ভালোবাসেন, এই বিষয় আমার কোনো সন্দেহ করা উচিত নয়।’—রোমীয় ৮:৩২.
১১. (ক) পৌল অতীতে কোন ভুল কাজ করেছিলেন? (খ) ১ তীমথিয় ১:১২-১৫ পদ অনুযায়ী পৌল কেন নিশ্চিত ছিলেন যে, যিহোবা তাকে ভালোবাসেন?
প্রথম তীমথিয় ১:১২-১৫ পদ পড়ুন। পৌল অতীতে অনেক ভুল কাজ করেছিলেন। আর যখনই তিনি সেই বিষয়ে চিন্তা করতেন, তখনই হয়তো অনেক দুঃখ পেতেন। সত্য শেখার আগে, পৌল অনেক খ্রিস্টানকে ধরে কারাগারে ঢোকাতেন এবং তাদের হত্যা করার সময় সম্মতি জানাতেন। (প্রেরিত ২৬:১০, ১১) তাই, তিনি নিজেকে “সর্বপ্রধান” পাপী হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। একটু কল্পনা করে দেখুন, পৌল যখন কোনো অল্পবয়সি খ্রিস্টানের সঙ্গে দেখা করতেন, যার বাবা-মাকে তিনি হত্যা করিয়েছিলেন, তখন তিনি কেমন অনুভব করতেন। পৌল নিশ্চয়ই অনেক অনুশোচনা করতেন। কিন্তু, পৌল জানতেন, অতীতে করা ভুলগুলো তিনি আর ঠিক করতে পারবেন না। তিনি এই বিষয়ের উপর বিশ্বাস করেছিলেন, যিশু খ্রিস্ট তার জন্য মারা গিয়েছিলেন। তাই, তিনি লিখেছিলেন: “ঈশ্বরের মহাদয়ার কারণে আমি একজন প্রেরিত হয়েছি।” (১ করি. ১৫:৩, ১০) পৌলের কাছ থেকে আপনি কী শিখতে পারেন? এই বিষয়ে নিশ্চিত হোন, যিশু আপনার জন্য মারা গিয়েছেন এবং এর ফলে আপনি যিহোবার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পেরেছেন। (প্রেরিত ৩:১৯) আমরা অতীতে কী ভুল করেছিলাম আর সেই সময় একজন যিহোবার সাক্ষি ছিলাম কি না, সেটা নয় বরং এখন আমরা কী করছি আর ভবিষ্যতে কী করব, সেটা হল যিহোবার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।—যিশা. ১:১৮.
১১১২. আপনার যদি নিজেকে অযোগ্য বলে মনে হয়, তা হলে ১ যোহন ৩:১৯, ২০ পদের কথাগুলো কীভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারে?
১২ আপনি যখন চিন্তা করেন, যিশু আপনার জন্য মারা গিয়েছেন, তখন আপনার মনে হতে পারে, ‘আমি এই মূল্যবান উপহার লাভ করার যোগ্য নই।’ কেন আপনার এমনটা মনে হতে পারে? কারণ হৃদয় প্রতারিত করে। এটা আপনাকে এইরকম চিন্তা করতে পরিচালিত করতে পারে, আপনি কারো কাছ থেকে ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নন। (পড়ুন, ১ যোহন ৩:১৯, ২০.) কিন্তু, মনে রাখবেন, “ঈশ্বর আমাদের হৃদয়ের চেয়ে মহান।” নিজেকে আশ্বস্ত করুন যে, যিহোবা আপনাকে অনেক ভালোবাসেন আর তিনি আপনাকে ক্ষমা করতে চান। আর আপনার আশ্বাস বৃদ্ধি করার জন্য প্রতিদিন বাইবেল অধ্যয়ন করুন, অবিরত যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন এবং অনুগত বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান। আসুন দেখি, কীভাবে এগুলো আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
কীভাবে বাইবেল অধ্যয়ন, প্রার্থনা এবং অনুগত বন্ধুরা সাহায্য করতে পারে?
১৩. কীভাবে বাইবেল অধ্যয়ন আপনাকে সাহায্য করতে পারে? (এ ছাড়া, “ যেভাবে বাইবেল তাদের সাহায্য করেছিল” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)
১৩ প্রতিদিন ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করুন। আপনি যত বেশি অধ্যয়ন করবেন, তত বেশি যিহোবার গুণাবলি সম্বন্ধে জানতে পারবেন। আপনি বুঝতে পারবেন, তিনি আপনাকে কতটা ভালোবাসেন। অধ্যয়ন করার পর ধ্যান করুন। এটা আপনার মন ও হৃদয় থেকে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা দূর করতে এবং নিজেকে ‘সংশোধন’ করতে সাহায্য করবে। (২ তীম. ৩:১৬) কেভিন নামে একজন প্রাচীনের কথা বিবেচনা করে দেখুন, যিনি নিজেকে মূল্যহীন বলে মনে করতেন। তিনি বলেন: “আমি ১০৩ গীত নিয়ে অধ্যয়ন করি এবং তা নিয়ে ধ্যান করি। ফলে, আমি আমার চিন্তাভাবনা সংশোধন করি আর বুঝতে পারি, যিহোবা আমার সম্বন্ধে কেমন অনুভব করেন।” আগে উল্লেখিত ইভা বলেন: “দিনের শেষে আমি ধ্যান করি যে, যিহোবা আমার সম্বন্ধে কেমন অনুভব করেন। এটা আমাকে মনের শান্তি বজায় রাখতে এবং আমার বিশ্বাসকে মজবুত করতে সাহায্য করে।”
১৪. কীভাবে প্রার্থনা আপনাকে সাহায্য করতে পারে?
১৪ অবিরত প্রার্থনা করুন। (১ থিষল. ৫:১৭) কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব করার জন্য আমরা প্রায়ই তার সঙ্গে কথা বলি এবং মনের কথাও জানিয়ে থাকি। যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব ঠিক একইরকম। আপনি যখন আপনার সমস্ত চিন্তাভাবনা, অনুভূতি এবং মনের কথা তাঁর কাছে খুলে বলেন, তখন তা থেকে বোঝা যায় যে, আপনার তাঁর উপর আস্থা রয়েছে আর আপনি নিশ্চিত, তিনি আপনাকে ভালোবাসেন। (গীত. ৯৪:১৭-১৯; ১ যোহন ৫:১৪, ১৫) আগে উল্লেখিত রুবি বলেন: “আমি যখন যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি, তখন সারা দিনে কী কী ঘটেছে, শুধুমাত্র সেগুলো নয় বরং আমার অনুভূতি, চিন্তাভাবনা এবং মনের কথা তাঁর কাছে খুলে বলি। আর ধীরে ধীরে আমি বুঝতে পারি, যিহোবা কোনো কোম্পানির মালিক নন, যাঁকে আমার সারা দিনের রিপোর্ট দিতে হবে বরং তিনি একজন প্রেমময় পিতার মতো, যিনি তাঁর সন্তানদের ভালোবাসেন।”—“ আপনি কি এটা পড়েছেন?” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।
১৫. যিহোবা আর কোন উপায়ে আপনাকে সাহায্য প্রদান করে থাকেন?
১৫ অনুগত বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান। এই বন্ধুরা হল যিহোবার দেওয়া একটা দান। (যাকোব ১:১৭) যিহোবা মণ্ডলীতে এমন ভাই-বোনদের দিয়েছেন, যারা আমাদের “সর্ব্বসময়ে প্রেম করে।” (হিতো. ১৭:১৭) এটা থেকে বোঝা যায়, যিহোবা আমাদের জন্য কত চিন্তা করেন। কলসীয়দের প্রতি চিঠি লেখার সময়ে, পৌল কিছু খ্রিস্টানের বিষয় উল্লেখ করেছিলেন, যারা তাকে “অনেক সান্ত্বনা প্রদান” করেছিল। (কল. ৪:১০, ১১) যিশুরও বন্ধুদের প্রয়োজন ছিল। আর যখন শিষ্যেরা এবং স্বর্গদূতেরা তাঁকে সমর্থন জুগিয়েছিল, তখন তিনি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন।—লূক ২২:২৮, ৪৩.
১৬. কীভাবে এই অনুগত বন্ধুরা যিহোবার নিকটবর্তী হতে আপনাকে সাহায্য করতে পারে?
১৬ আপনি কি আপনার বন্ধুদের কাছ থেকে সাহায্য নেন?
কোনো বন্ধুকে নিজের অনুভূতি ও সমস্যার বিষয়ে বলার অর্থ এই নয়, আপনার বিশ্বাস দুর্বল হয়ে পড়েছে বরং এটা আপনার বিশ্বাসকে রক্ষা করতে পারে। আগে উল্লেখিত জেমসের কথা বিবেচনা করে দেখুন। তিনি বলেন: “প্রকৃত বন্ধুদের কাছ থেকে আমি অনেক সাহায্য লাভ করেছি। আমার যখন মনে হয়, আমি কারো কাছ থেকে ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নই, তখন তারা আমার কথা মন দিয়ে শোনে এবং আমাকে আশ্বস্ত করে যে, তারা আমাকে ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা দেখে আমি বুঝতে পারি, যিহোবাও আমাকে কতটা ভালোবাসেন।” সত্যিই, মণ্ডলীর ভাই-বোনদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা কতই-না গুরুত্বপূর্ণ!সবসময় যিহোবার ভালোবাসার পাত্র হিসেবে থাকুন
১৭-১৮. আমাদের অবশ্যই কার কথা শুনতে হবে এবং কেন?
১৭ শয়তান চায়, আপনি যেন হাল ছেড়ে দেন। সে বিশ্বাস করাতে চায়, আপনি খুবই খারাপ ব্যক্তি এবং যিহোবা আপনাকে ভালোবাসেন না আর তিনি আপনাকে কখনো রক্ষা করবেন না। কিন্তু, আমরা যেমন এই প্রবন্ধে দেখলাম, এই বিষয়গুলো আসলে সত্য নয়।
১৮ যিহোবা সত্যিই আপনাকে ভালোবাসেন। যিহোবার দৃষ্টিতে আপনি অনেক মূল্যবান। আপনি যদি তাঁর বাধ্য থাকেন, তা হলে আপনিও যিশুর মতো “সবসময় তাঁর ভালোবাসার পাত্র হিসেবে” থাকবেন। (যোহন ১৫:১০) শয়তানের কথা কিংবা নিজের মনের কথা শুনবেন না, যেটা আপনাকে বিশ্বাস করতে পরিচালিত করে যে, আপনি একজন ভালো ব্যক্তি নন। এর পরিবর্তে, যিহোবার কথা শুনুন, যিনি আপনার মধ্যে ভালো বিষয়গুলো লক্ষ করেন। আর নিশ্চিত থাকুন, তিনি “আপন প্রজাদিগকে প্রেম করেন,” যার মধ্যে আপনিও রয়েছেন।
গান সংখ্যা ১ যিহোবার গুণাবলি
^ অনু. 5 কিছু ভাই ও বোন মনে করে যে, যিহোবা কখনোই তাদের ভালোবাসতে পারেন না। এই প্রবন্ধে আলোচনা করব, কেন আমরা নিশ্চিত হতে পারি, যিহোবা আমাদের প্রত্যেককে ভালোবাসেন। এ ছাড়া, পরীক্ষা করে দেখব যে, আমাদের যদি মনে হয়, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন না, তা হলে আমরা কী করতে পারি।
^ অনু. 2 কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
^ অনু. 67 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: সত্য শেখার আগে, পৌল অনেক খ্রিস্টানকে ধরে কারাগারে ঢোকাতেন। কিন্তু, তিনি যখন বিশ্বাস করেন, যিশু তার জন্য মারা গিয়েছেন, তখন তিনি পরিবর্তিত হন। এখন, তিনি এমন ভাই-বোনদের উৎসাহিত করছেন, যাদের আত্মীয়স্বজনকে তিনি তাড়না করেছিলেন।