সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৩১

প্রার্থনা করার বিশেষ সুযোগকে মূল্যবান হিসেবে দেখুন

প্রার্থনা করার বিশেষ সুযোগকে মূল্যবান হিসেবে দেখুন

‘আমার প্রার্থনা তোমার সম্মুখে সুগন্ধি ধূপরূপে হউক।’—গীত. ১৪১:২.

গান ৫১ আমরা যিহোবাতে আসক্ত

সারাংশ *

১. যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার বিষয়ে আমাদের কেমন অনুভব করা উচিত?

 একটু কল্পনা করুন, আমরা পুরো নিখিলবিশ্বের মালিকের কাছে প্রার্থনা করতে পারি। এটা কতই-না বড়ো এক বিষয়! আমরা তাঁর সঙ্গে যেকোনো সময়ে আর যেকোনো ভাষায় মন খুলে কথা বলতে পারি। তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হয় না। আমরা যখন চাই, তখনই তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারি। আমরা হাসপাতালে অথবা জেলে যেখানেই থাকি না কেন, আমরা যিহোবার সঙ্গে কথা বলতে পারি আর নিশ্চিত থাকতে পারি, তিনি আমাদের প্রার্থনা শুনবেন। সত্যিই, যিহোবা আমাদের প্রার্থনা করার এক বিশেষ সুযোগ দিয়েছেন আর কখনোই এই বিষয়টাকে আমাদের হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়।

২. কেন আমরা বলতে পারি, দায়ূদের জন্য যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা অনেক বড়ো বিষয় ছিল?

রাজা দায়ূদের জন্যও যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা অনেক বড়ো বিষয় ছিল। এই কারণেই একবার তিনি যিহোবাকে বলেছিলেন, ‘আমার প্রার্থনা তোমার সম্মুখে সুগন্ধি ধূপের’ মতো। (গীত. ১৪১:১, ২) দায়ূদের দিনে উপাসনার সময় যাজক যিহোবার উদ্দেশে যে-ধূপ জ্বালাতেন, সেটা খুবই সতর্কতার সঙ্গে প্রস্তুত করা হত। (যাত্রা. ৩০:৩৪, ৩৫) তাই দায়ূদ যখন বলেছিলেন, তিনি চান যেন তার প্রার্থনাগুলো সুগন্ধি ধূপের মতো হয়, এটা থেকে বোঝা যায়, তিনিও প্রার্থনা করার আগে অনেক মনোযোগ সহকারে চিন্তা করতেন যে, তিনি যিহোবাকে কী বলবেন। দায়ূদের মতো আমরাও যদি চাই, যিহোবা আমাদের প্রার্থনাগুলো শুনে খুশি হোক, তা হলে আমাদের ভেবে-চিন্তে প্রার্থনা করা উচিত।

৩. কীভাবে যিহোবার কাছে আমাদের প্রার্থনা করা উচিত আর কেন?

প্রার্থনার করার সময় আমাদের মনে রাখা উচিত, আমরা কার সঙ্গে কথা বলছি। তাই, সম্মানের সঙ্গে আমাদের যিহোবার সঙ্গে কথা বলা উচিত। আমরা সেই চমৎকার দর্শনগুলো মনে রাখতে পারি, যেগুলো যিশাইয়, যিহিষ্কেল, দানিয়েল ও যোহনকে দেখানো হয়েছিল। সেই সমস্ত দর্শনে যিহোবাকে একজন মহান রাজা হিসেবে দেখানো হয়েছিল। যিশাইয় দর্শনে যিহোবাকে “এক উচ্চ ও উন্নত সিংহাসনে উপবিষ্ট” দেখেছিলেন। (যিশা. ৬:১-৩) যিহিষ্কেল দেখেছিলেন, যিহোবা একটা স্বর্গীয় রথের উপরে বসে আছেন আর “বৃষ্টির দিনে মেঘে উৎপন্ন ধনুকের যেমন আভা, তাঁহার চারিদিকের তেজের আভা সেইরূপ ছিল।” (যিহি. ১:২৬-২৮) দানিয়েল তার দর্শনে ‘অনেক দিনের বৃদ্ধকে’ দেখেছিলেন, যাঁর পোশাক তুষারের মতো সাদা আর যাঁর সিংহাসন থেকে আগুন বের হচ্ছিল। (দানি. ৭:৯, ১০) আর যোহন যিহোবাকে এক সিংহাসনে বসে থাকতে দেখেছিলেন, যেটার চারপাশে একটা রংধনু রয়েছে আর যেটা দেখতে সবুজ রঙের একটা মূল্যবান পাথরের মতো। (প্রকা. ৪:২-৪) আমরা যখন এই বিষয়ে মনে রাখব যে, যিহোবা কতটা মহান, তখন আমরা বুঝতে পারব, প্রার্থনা করা কতটা বড়ো বিষয়। তাই, আমাদের সম্মান সহকারে যিহোবার সঙ্গে কথা বলা উচিত। কিন্তু প্রশ্ন হল, কোন বিষয়গুলোর জন্য আমাদের প্রার্থনা করা উচিত?

“তোমরা এভাবে প্রার্থনা কোরো”

৪. প্রার্থনা করার বিষয়ে আমরা মথি ৬:৯, ১০ পদ থেকে কী শিখতে পারি?

মথি ৬:৯, ১০ পদ পড়ুন। পর্বতের উপরে দেওয়া উপদেশে যিশু তাঁর শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন, তাদের কীভাবে প্রার্থনা করা উচিত, যাতে যিহোবা খুশি হন। তিনি বলেছিলেন, “তোমরা এভাবে প্রার্থনা কোরো।” আর তারপর, তিনি সবচেয়ে প্রথমে সেই বিষয়গুলো উল্লেখ করেছিলেন, যেগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, ঈশ্বরের নাম পবিত্র হোক, তাঁর রাজ্য আসুক, যেটা তাঁর শত্রুদের চিরকালের জন্য ধ্বংস করে দেবে আর পৃথিবীর এবং মানুষের জন্য তাঁর আদি উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করবে। এই সমস্ত বিষয় ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আর আমরা যখন এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রার্থনা করব, তখন এটা থেকে বোঝা যাবে, আমাদের কাছে এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৫. আমরা কি নিজেদের জন্যও প্রার্থনা করতে পারি?

এরপর যিশু শিখিয়েছিলেন, আমরা নিজেদের জন্যও প্রার্থনা করতে পারি। আমরা যিহোবাকে বলতে পারি, তিনি যেন আমাদের প্রত্যেক দিনের খাবার জুগিয়ে দেন, আমাদের পাপ ক্ষমা করেন, পরীক্ষার সময় তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করেন এবং শয়তানের ফাঁদ থেকে আমাদের রক্ষা করেন। (মথি ৬:১১-১৩) এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রার্থনা করার মাধ্যমে আমরা দেখাই যে, আমরা যিহোবার উপর নির্ভর করি আর আমরা চাই, তিনি যেন আমাদের উপর খুশি হন।

একজন স্বামী তার স্ত্রীর সঙ্গে কোন বিষয়গুলো নিয়ে প্রার্থনা করতে পারেন? (৬ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৬. যিশু যে-বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন, আমাদের কি শুধু সেগুলো নিয়েই প্রার্থনা করা উচিত? ব্যাখ্যা করুন।

যিশু এটা চাননি যে, তাঁর শিষ্যেরা শুধু সেই বিষয়গুলো নিয়েই প্রার্থনা করুক, যেগুলোর বিষয়ে তিনি তাদের শিখিয়েছিলেন। কখনো কখনো যিশু অন্য বিষয়েও প্রার্থনা করেছিলেন, যেগুলো সেইসময় তাঁর মনে চলছিল। (মথি ২৬:৩৯, ৪২; যোহন ১৭:১-২৬) যিশুর মতো আমরাও যিহোবার কাছে নিজেদের চিন্তার বিষয়ে কথা বলতে পারি। যেমন, আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যিহোবার কাছে বুদ্ধি চাইতে পারি। (গীত. ১১৯:৩৩, ৩৪) অথবা যখন কোনো কাজ কিংবা দায়িত্ব পালন করা আমাদের পক্ষে কঠিন বলে মনে হয়, তখন আমরা যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে পারি, যাতে আমরা ভালোভাবে বুঝতে পারি, সেগুলো কীভাবে করতে হবে। (হিতো. ২:৬) বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের জন্য প্রার্থনা করতে পারে এবং সন্তানেরা তাদের বাবা-মায়ের জন্য প্রার্থনা করতে পারে। আমরা বাইবেল ছাত্র আর সেই লোকদের জন্যও প্রার্থনা করতে পারি, যাদের কাছে আমরা প্রচার করি। কিন্তু, প্রার্থনা করার সময় আমাদের সবসময় যিহোবার কাছ থেকে শুধু চাওয়াই উচিত নয়।

আমরা কোন বিষয়গুলোর জন্য যিহোবার প্রশংসা করতে এবং তাঁকে ধন্যবাদ দিতে পারি? (৭-৯ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৭. কেন আমাদের প্রার্থনা করার সময় যিহোবার প্রশংসা করা উচিত?

প্রার্থনা করার সময় আমাদের যিহোবার প্রশংসাও করা উচিত। তিনি “মঙ্গলময় ও ক্ষমাবান্‌” আর “স্নেহশীল ও কৃপাময় ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর এবং দয়াতে ও সত্যে মহান্‌।” (গীত. ৮৬:৫, ১৫) আমরা যখন যিহোবা এবং তিনি আমাদের জন্য যা-কিছু করেছেন, সেগুলো নিয়ে চিন্তা করব, তখন আমরা নিজেরাই হৃদয় থেকে তাঁর প্রশংসা করব। আর কেউই যিহোবার চেয়ে বেশি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য নয়!

৮. আমরা কোন বিষয়গুলোর জন্য যিহোবাকে ধন্যবাদ দিতে পারি? (গীতসংহিতা ১০৪:১২-১৫, ২৪)

যিহোবার প্রশংসা করা ছাড়া, তিনি আমাদের যা-কিছু দিয়েছেন, সেগুলোর জন্য তাঁকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। একটু কল্পনা করুন, যিহোবা আমাদের কত কিছু দিয়েছেন। তিনি অনেক রং-বেরঙের ফুল সৃষ্টি করেছেন, বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার জুগিয়েছেন আর এমন বন্ধুদের দিয়েছেন, যাদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে আমরা অনেক আনন্দ পাই। তিনি আমাদের জন্য আরও অনেক কিছু করেছেন কারণ তিনি শুধু এটুকুই চান যেন আমরা আনন্দে থাকি। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১০৪:১২-১৫, ২৪.) সবচেয়ে বড়ো বিষয় হল, যিহোবা আমাদের বাইবেল আর সেইসঙ্গে বিভিন্ন প্রকাশনা এবং ভবিষ্যতের জন্য এক অপূর্ব আশা দিয়েছেন। আমরা এগুলোর জন্যও যিহোবাকে ধন্যবাদ দিতে পারি।

৯. আমরা যদি যিহোবাকে ধন্যবাদ দিতে ভুলে যাই, তা হলে আমরা কী করতে পারি? (১ থিষলনীকীয় ৫:১৭, ১৮)

যিহোবা আমাদের জন্য অনেক কিছু করেন। কিন্তু, কখনো কখনো আমরা হয়তো তাঁকে ধন্যবাদ দিতে ভুলে যাই। আপনিও যদি ভুলে যান, তা হলে আপনি কী করতে পারেন? আপনি যিহোবার কাছে যে-বিষয়গুলোর জন্য প্রার্থনা করেন, সেগুলো লিখে রাখতে পারেন আর মাঝে মাঝে দেখতে পারেন, কীভাবে যিহোবা আপনার প্রার্থনাগুলোর উত্তর দিয়েছেন। তখন আপনি সেই বিষয়গুলোর জন্য যিহোবাকে ধন্যবাদ দিতে পারবেন। (পড়ুন, ১ থিষলনীকীয় ৫:১৭, ১৮.) আমরা যখন কারো জন্য কিছু করি আর সে এসে আমাদের ধন্যবাদ দেয়, তখন আমরা খুব খুশি হই। ঠিক একইভাবে, আমরা যখন যিহোবাকে আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ দিই, তখন তিনিও খুব খুশি হন। (কল. ৩:১৫) যিহোবাকে ধন্যবাদ দেওয়ার আমাদের কাছে আরেকটা বিশেষ কারণ রয়েছে। আসুন, তা লক্ষ করি।

তাঁর প্রিয় পুত্রকে পাঠানোর জন্য যিহোবাকে ধন্যবাদ দিন

১০. যিহোবা যিশুকে পাঠিয়েছেন বলে কেন আমাদের তাঁকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত? (১ পিতর ২:২১)

১০ প্রথম পিতর ২:২১ পদ পড়ুন। আমাদের যিহোবাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত কারণ তিনি আমাদের জন্য তাঁর প্রিয় পুত্রকে পাঠিয়েছেন, যাতে আমরা তাঁর কাছ থেকে শিখতে পারি। আমরা যখন বাইবেল থেকে যিশুর বিষয়ে পড়ি, তখন আমরা যিহোবার বিষয়ে অনেক কিছু জানতে পারি আর বুঝতে পারি, আমরা কীভাবে তাঁকে খুশি করতে পারি। এ ছাড়া, যিশুর মুক্তির মূল্যের উপর বিশ্বাস করার মাধ্যমে আমরা যিহোবার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পেরেছি এবং তাঁর সঙ্গে এক শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে পেরেছি।—রোমীয় ৫:১.

১১. কেন আমরা যিশুর নামে প্রার্থনা করি?

১১ আমাদের যিহোবাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত কারণ আমরা তাঁর পুত্রের মাধ্যমে তাঁর কাছে প্রার্থনা করতে পারি। আমরা যখন যিশুর নামে প্রার্থনা করি, তখন যিহোবা আমাদের প্রার্থনা শোনেন। আর আমরা তাঁর কাছে যা-কিছু অনুরোধ করি, যিহোবা যিশুর মাধ্যমে তা পূরণ করেন। যিশু বলেছিলেন: “তোমরা আমার নামে যা-কিছু চাইবে, আমি তা করব, যাতে পিতা পুত্রের মাধ্যমে গৌরবান্বিত হন।”—যোহন ১৪:১৩, ১৪.

১২. আমাদের আর কীসের জন্য যিহোবাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত?

১২ যিশুর মুক্তির মূল্যের উপর ভিত্তি করে যিহোবা আমাদের পাপগুলো ক্ষমা করেন। বাইবেলে বলা আছে, যিশু হলেন আমাদের ‘মহাযাজক, যিনি স্বর্গে মহান ঈশ্বরের সিংহাসনের ডান দিকে বসে আছেন।’ (ইব্রীয় ৮:১) বাইবেলে এও বলা আছে, যিশু হলেন আমাদের ‘সাহায্যকারী, যিনি পিতার সঙ্গে আছেন।’ (১ যোহন ২:১) যিশু জানেন, আমাদের মধ্যে কোন কোন দুর্বলতা রয়েছে। তিনি আমাদের প্রতি সহমর্মিতা দেখান আর যিহোবার কাছে “আমাদের জন্য বিনতিও” করেন! (রোমীয় ৮:৩৪; ইব্রীয় ৪:১৫) যিশু যদি আমাদের জন্য জীবন না দিতেন, তা হলে আমরা পাপী মানুষেরা কখনোই যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে পারতাম না। যিহোবা আমাদের জন্য তাঁর প্রিয় পুত্রকে দান করেছেন। সেটার জন্য আমরা তাঁকে যতই ধন্যবাদ দিই না কেন, তা কম পড়ে যাবে।

ভাই-বোনদের জন্য প্রার্থনা করুন

১৩. কোন বিষয়টা থেকে বোঝা যায়, যিশু তাঁর শিষ্যদের ভালোবাসতেন?

১৩ যিশু মারা যাওয়ার আগের রাতে তাঁর শিষ্যদের জন্য অনেক রাত পর্যন্ত প্রার্থনা করেছিলেন। তিনি তাঁর পিতার কাছে এই বলে অনুরোধ করেছিলেন: “তুমি তাদের শয়তানের হাত থেকে রক্ষা করো।” (যোহন ১৭:১৫) যিশু জানতেন, তাঁর প্রতি কী ঘটবে আর তাঁকে কী সহ্য করতে হবে। কিন্তু, এইরকম সময়েও তাঁর শিষ্যদের জন্য যিশুর চিন্তা হচ্ছিল। সত্যিই, যিশু তাঁর শিষ্যদের কতই-না ভালোবাসতেন!

ভাই-বোনদের জন্য প্রার্থনা করার সময় আমরা কোন বিষয়গুলো উল্লেখ করতে পারি? (১৪-১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১৪. আমরা যদি ভাই-বোনদের ভালোবাসি, তা হলে আমরা কী করব?

১৪ আমাদেরও যিশুর মতো হওয়া উচিত। শুধু নিজের জন্য প্রার্থনা করার পরিবর্তে আমাদের ভাই-বোনদের জন্যও প্রার্থনা করা উচিত। যিশু আমাদের আজ্ঞা দিয়েছিলেন, যেন আমরা একে অন্যকে ভালোবাসি। আমরা যখন ভাই-বোনদের জন্য প্রার্থনা করি, তখন আমরা এই আজ্ঞা পালন করি আর এভাবে যিহোবাও দেখতে পান যে, ভাই-বোনদের জন্য আমাদের কতটা চিন্তা রয়েছে। (যোহন ১৩:৩৪) কখনো কখনো আমাদের মনে হতে পারে, ‘ভাই-বোনদের জন্য প্রার্থনা করে সত্যিই কি কোনো লাভ আছে?’ কিন্তু, আমাদের একদমই এইরকম চিন্তা করা উচিত নয়। বাইবেলে লেখা আছে, “একজন ধার্মিক ব্যক্তির বিনতির জোরালো প্রভাব রয়েছে।”—যাকোব ৫:১৬.

১৫. কেন ভাই-বোনদের জন্য প্রার্থনা করা খুবই জরুরি?

১৫ আমাদের ভাই-বোনেরা অনেক কষ্টের মধ্যে আছে। তাই, তাদের জন্য প্রার্থনা করা খুবই জরুরি। আমাদের কিছু ভাই-বোন অসুস্থ রয়েছে, আবার কেউ কেউ প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়েছে, আবার কিছু ভাই-বোন এমন দেশে রয়েছে, যেখানে যুদ্ধ হচ্ছে আর কিছু ভাই-বোনের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে। আমরা যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে পারি, যাতে তারা ধৈর্য ধরতে পারে এবং সমস্ত কিছু সহ্য করতে পারে। আমরা সেই ভাই-বোনদের জন্যও প্রার্থনা করতে পারি, যারা কঠিন সময়ে অন্য ভাই-বোনদের সাহায্য করে। আপনি কি এমন কোনো ভাই কিংবা বোনকে জানেন, যিনি কষ্টের মধ্যে রয়েছেন? তাই, আপনি যখন একা প্রার্থনা করেন, তখন সেই ভাই কিংবা বোনের নাম নিয়ে প্রার্থনা করতে পারেন। এমনটা করার মাধ্যমে আমরা দেখাই যে, তাদের আমরা মন থেকে ভালোবাসি।

১৬. যারা নেতৃত্ব নেন, তাদের জন্য কেন আমাদের প্রার্থনা করা উচিত?

১৬ যে-ভাইয়েরা নেতৃত্ব নেন, তাদের জন্যও আমাদের প্রার্থনা করা উচিত। আমরা যখন সেই ভাইদের জন্য প্রার্থনা করি, তখন যিহোবা তাদের সাহায্য করেন, যাতে তারা নিজ নিজ দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করতে পারেন আর এই বিষয়টা সেই ভাইয়েরাও অনেক উপলব্ধি করেন। পৌলও চেয়েছিলেন যেন ভাই-বোনেরা তার জন্য প্রার্থনা করে। কেন? তিনি তার চিঠিতে লিখেছিলেন: “আমার জন্যও প্রার্থনা করো, যাতে আমাকে কথা বলার ক্ষমতা দেওয়া হয়, যেন আমি সেই সুসমাচারের পবিত্র রহস্য জানানোর সময় সাহসের সঙ্গে কথা বলতে পারি।” (ইফি. ৬:১৯) আজও যে-ভাইয়েরা নেতৃত্ব নেন, তারাও পৌলের মতো আমাদের জন্য অনেক কিছু করেন। আমরা তাদের ভালোবাসি, তাই যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি তাদের পরিশ্রমের উপর আশীর্বাদ করেন।

যখন আমাদের প্রার্থনা করতে বলা হয়

১৭-১৮. আমাদের কখন প্রার্থনা করতে বলা হতে পারে আর সেইসময় আমাদের কী মনে রাখা উচিত?

১৭ আমরা একা একা প্রার্থনা তো করি, কিন্তু কখনো কখনো আমাদের হয়তো লোকদের মাঝে প্রার্থনা করতে বলা হয়। যেমন হতে পারে, একজন বোন আরেকজন বোনকে তার বাইবেল অধ্যয়নে নিয়ে যান আর অধ্যয়ন শুরু করার আগে তাকে প্রার্থনা করতে বলেন। সেই বোন হয়তো ছাত্রীর বিষয়ে খুব ভালোভাবে জানেন না, তাই বলতে পারেন, তিনি অধ্যয়নের শেষে প্রার্থনা করবেন। এভাবে, তিনি ছাত্রীর প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো মাথায় রেখে তার জন্য প্রার্থনা করতে পারবেন।

১৮ একজন ভাইকে হয়তো ক্ষেত্রের পরিচর্যা সভা কিংবা মণ্ডলীতে প্রার্থনা করতে বলা হয়। এইরকম সময় তিনি কিছু বিষয় মনে রাখতে পারেন। যেমন, তিনি মনে রাখতে পারেন, এই সভা কেন রাখা হয়েছে। প্রার্থনা করার সময় তার ভাই-বোনদের উদ্দেশে না কোনো পরামর্শ দেওয়া উচিত, না কোনো ঘোষণা করা উচিত। সাধারণত, সভাগুলোর শুরুতে এবং শেষে গান ও প্রার্থনার জন্য পাঁচ মিনিট করে সময় দেওয়া থাকে। যে-ভাইকে প্রার্থনা করতে বলা হয়, তার এই বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত, তিনি যেন “অনেক কথা” না বলেন, বিশেষ করে যখন তাকে সভার শুরুর প্রার্থনা করতে বলা হয়।—মথি ৬:৭.

প্রার্থনা করার সুযোগকে গুরুত্বের সঙ্গে নিন

১৯. আমরা যদি যিহোবার বিচারদিনের জন্য প্রস্তুত থাকতে চাই, তা হলে আমাদের কী করতে হবে?

১৯ যিহোবার বিচারদিন খুবই কাছে, তাই আজ প্রার্থনা করা আগের চেয়ে আরও বেশি জরুরি। যিশুও বলেছিলেন: “সজাগ থেকো, সবসময় বিনতি কোরো, যেন এই যে সকল ঘটনা ঘটবে, সেগুলো থেকে রেহাই পেতে এবং মনুষ্যপুত্রের সামনে দাঁড়াতে পার।” (লূক ২১:৩৬) আমরা যদি ক্রমাগত যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি, তা হলে আমাদের বিশ্বাস বাড়বে আর যখন তাঁর বিচারদিন আসবে, তখন আমরা সেই দিনের জন্য প্রস্তুত থাকতে পারব।

২০. আমাদের প্রার্থনাগুলো যাতে সুগন্ধি ধূপের মতো হয়, সেটার জন্য আমাদের কী করা উচিত?

২০ এই প্রবন্ধ থেকে আমরা কী কী শিখেছি? যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা কত বড়ো বিষয়। আমাদের মনে রাখা উচিত, আমরা যেন সেই বিষয়গুলোর জন্য প্রার্থনা করতে ভুলে না যাই, যেগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ অর্থাৎ যে-বিষয়গুলো যিহোবার উদ্দেশ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আমাদের যিহোবাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত যে, তিনি তাঁর একজাত পুত্রকে আমাদের জন্য দান করেছেন আর খুব শীঘ্রই তিনি তাঁর রাজ্য নিয়ে আসবেন। আমাদের ভাই-বোনদের জন্যও প্রার্থনা করা উচিত। শুধু তা-ই নয়, আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পূরণ করার এবং আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার জন্যও তাঁর কাছে প্রার্থনা করা উচিত। আমরা যখন ভেবে-চিন্তে প্রার্থনা করব, তখন সেটা থেকে বোঝা যাবে যে, আমরা প্রার্থনা করার এই বিশেষ সুযোগকে মূল্যবান হিসেবে দেখি। তখন আমাদের প্রার্থনাগুলো সুগন্ধি ধূপের মতো হবে আর সেগুলো শুনে যিহোবা “খুশী” হবেন।—হিতো. ১৫:৮, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন।

গান ২২ “সদাপ্রভু আমার পালক”

^ আমরা যিহোবার প্রতি খুব কৃতজ্ঞ যে, তিনি আমাদের প্রার্থনা করার সুযোগ দিয়েছেন। আমরা সবাই চাই যেন আমাদের প্রার্থনাগুলো সুগন্ধি ধূপের মতো হয় আর তা যিহোবাকে খুশি করে। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, কোন বিষয়গুলোর জন্য আমরা প্রার্থনা করতে পারি। আমরা এও জানতে পারব, যখন কিছু লোকের মাঝে আমাদের প্রার্থনা করতে বলা হয়, তখন কোন বিষয়গুলো আমরা মনে রাখতে পারি।

^ ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন ভাই তার স্ত্রীর সঙ্গে প্রার্থনা করছেন যেন স্কুলে তাদের মেয়ে সুরক্ষিত থাকে, তার শ্বশুর অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করতে পারেন আর তার স্ত্রীর বাইবেল ছাত্রী ক্রমাগত উন্নতি করতে পারেন।

^ ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন যুবক ভাই যিশু খ্রিস্টের মুক্তির মূল্য, এই সুন্দর পৃথিবী এবং সুস্বাদু খাবারের জন্য যিহোবার কাছে প্রার্থনা করছেন।

^ ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন বোন যিহোবার কাছে প্রার্থনা করছেন যেন যিহোবা পরিচালকগোষ্ঠীর ভাইদের পবিত্র শক্তি দেন আর সেই ভাই-বোনদেরও সাহায্য করেন, যারা প্রাকৃতিক বিপর্যয় কিংবা অত্যাচারের কারণে কষ্টের মধ্যে রয়েছে।