অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৬
গান ১২ মহান যিহোবা
যিহোবার নামের প্রশংসা করুন
“হে সদাপ্রভুর দাসগণ, প্রশংসা কর, সদাপ্রভুর নামের প্রশংসা কর।” —গীত. ১১৩:১.
আমরা কী শিখব?
কী আমাদের যিহোবার নামকে পবিত্র করতে উৎসাহিত করে?
১-২. যিহোবার নামের উপর যখন নিন্দা নিয়ে আসা হয়েছিল, তখন তাঁর কেমন লেগেছিল?
চিন্তা করুন, আপনার কাছের কেউ আপনার উপর মিথ্যা দোষারোপ করে আর কিছু লোক সেটা বিশ্বাস করে নেয়। কিন্তু, বিষয়টা সেখানেই থেমে থাকে না। তারা অন্যদের তা বলে আর তারাও সেটা বিশ্বাস করে নেয়। এইসমস্ত কিছু দেখে আপনার কেমন লাগবে? আপনি যদি লোকদের ভালোবাসেন এবং অন্যেরা আপনার সম্বন্ধে কী মনে করবে, সেই বিষয়ে চিন্তিত থাকেন, তা হলে আপনার নিশ্চয়ই অনেক খারাপ লাগবে।—হিতো. ২২:১.
২ এই উদাহরণ থেকে আমরা বুঝতে পারি, যিহোবার নামের উপর যখন নিন্দা নিয়ে আসা হয়েছিল, তখন তাঁর কেমন লেগেছিল। স্বর্গে থাকা যিহোবার এক ছেলে প্রথম নারী হবার কাছে তাঁর বিষয়ে মিথ্যা কথা বলেছিল এবং তিনি তা বিশ্বাস করেছিলেন। এই কারণেই আমাদের প্রথম বাবা-মা আদম ও হবা যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন আর সমস্ত মানুষের মধ্যে পাপ ও মৃত্যু ঢুকে গিয়েছিল। (আদি. ৩:১-৬; রোমীয় ৫:১২) এদন উদ্যানে শয়তান যে-মিথ্যা কথা বলেছিল, সেটার কারণেই আজ সারা পৃথিবীতে লোকদের এত সমস্যা সহ্য করতে হচ্ছে। লোকেরা অনেক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে, যুদ্ধ হচ্ছে এবং অনেকে মারা যাচ্ছে। এই সমস্ত কিছু দেখে যিহোবা অনেক দুঃখ পাচ্ছেন। কিন্তু এর মানে কি এই যে, তিনি খুব রেগে আছেন? না! আসলে বাইবেল বলে, তিনি ‘সুখী ঈশ্বর।’—১ তীম. ১:১১.
৩. আমাদের কাছে কোন বিশেষ সুযোগ রয়েছে?
৩ আমাদের কাছে যিহোবার নামকে পবিত্র করার এক বিশেষ সুযোগ রয়েছে। কীভাবে? যিহোবার ‘নামের প্রশংসা করার’ মাধ্যমে। (গীত. ১১৩:১) আমরা যখন লোকদের বলি, যিহোবা কে এবং তিনি কেমন ঈশ্বর, তখন আমরা যিহোবার পবিত্র নামের প্রশংসা করি। আপনি কি তা করবেন? আসুন, আমরা তিনটে বিশেষ কারণের উপর মনোযোগ দিই, যেগুলো জেনে আমাদের আরও ইচ্ছে করবে যেন আমরা যিহোবার নামের প্রশংসা করি।
যিহোবার নামের প্রশংসা করলে তিনি খুশি হন
৪. উদাহরণের সাহায্যে বুঝিয়ে বলুন, আমরা যখন যিহোবার নামের প্রশংসা করি, তখন তিনি কেন খুশি হন। (ছবিও দেখুন।)
৪ আমরা যখন আমাদের স্বর্গীয় পিতার নামের প্রশংসা করি, তখন তিনি খুব খুশি হন। (গীত. ১১৯:১০৮) কিন্তু এর মানে এই নয়, মানুষের মতো তাঁর প্রশংসার প্রয়োজন। মানুষ হিসেবে আমাদের প্রশংসা অথবা উৎসাহের প্রয়োজন হয়। কিন্তু, আমরা যখন যিহোবার প্রশংসা করি, তখন তাঁর খুব ভালো লাগে। একটা উদাহরণ নিয়ে একটু চিন্তা করুন। একটা ছোটো মেয়ে দৌড়ে তার বাবার কাছে যায় এবং তাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুমি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো বাবা।” সেই বাবা এটা শুনে কতই-না খুশি হন। মেয়ের এই কথাটা তার হৃদয় স্পর্শ করে। কিন্তু এর মানে এই নয়, তিনি তার মেয়ের কাছ থেকে প্রশংসা অথবা উৎসাহ পেতে চেয়েছিলেন। এর পরিবর্তে, তিনি অনেক খুশি হন কারণ তিনি তার মেয়েকে অনেক ভালোবাসেন। তিনি জানেন, তার মেয়েও তাকে খুব ভালোবাসে, তাকে সম্মান করে এবং তার জন্য চিন্তা করে। তিনি এও জানেন, তার মেয়ের মধ্যে যে-ভালো গুণগুলো রয়েছে, সেগুলোর কারণে সে পরে গিয়ে আনন্দে থাকতে পারবে। এভাবে আমরা বুঝতে পারি, আমরা যখন আমাদের মহান পিতা যিহোবার প্রশংসা করি, তখন তিনি কেন খুশি হন।
৫. আমরা যখন যিহোবার নামের প্রশংসা করি, তখন আমরা শয়তানের কোন অভিযোগকে মিথ্যা প্রমাণ করি?
৫ আমরা যখন আমাদের স্বর্গীয় পিতা যিহোবার প্রশংসা করি, তখন আমরা শয়তানের একটা অভিযোগকে মিথ্যা প্রমাণ করি, যেটা সে আমাদের সবার উপর এনেছে। সে দাবি করেছে, কোনো মানুষই সবসময় ঈশ্বরের নামের পক্ষসমর্থন করবে না। সে বলেছে, একজন মানুষ যদি সমস্যায় পড়ে অথবা তার যদি মনে হয়, ঈশ্বরের কথা না শোনাই ভালো, তা হলে তিনি তাঁকে সেবা করা ছেড়ে দেবেন। (ইয়োব ১:৯-১১; ২:৪) কিন্তু, ঈশ্বরের একজন বিশ্বস্ত উপাসক ইয়োব শয়তানকে মিথ্যা প্রমাণ করেছিলেন। আপনিও কি তা করবেন? আমাদের প্রত্যেকের কাছে এই সুযোগ রয়েছে, আমরা যেন আমাদের পিতার নামের উপর কোনো নিন্দা না নিয়ে আসি এবং সবসময় বিশ্বস্তভাবে তাঁর সেবা করি, যাতে তিনি খুশি হন। (হিতো. ২৭:১১) সত্যিই, এটা আমাদের জন্য কতই-না বড়ো এক সুযোগ!
৬. কীভাবে আমরা রাজা দায়ূদ ও লেবীয়দের মতো হতে পারি? (নহিমিয় ৯:৫)
৬ যিহোবার বিশ্বস্ত সেবকেরা তাঁকে অনেক ভালোবাসে। তাই, তারা মনপ্রাণ দিয়ে তাঁর নামের প্রশংসা করে। রাজা দায়ূদ বলেছিলেন, “হে আমার প্রাণ, সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর; হে আমার অন্তরস্থ সকল, তাঁহার পবিত্র নামের ধন্যবাদ কর।” (গীত. ১০৩:১) দায়ূদ জানতেন, যিহোবার নামের প্রশংসা করার মানে হল তাঁর প্রশংসা করা। কারণ যিহোবার নাম শুনলে আমাদের মনে এমন একজন ব্যক্তির ছবি ভেসে ওঠে, যাঁর অনেক অপূর্ব গুণ রয়েছে এবং যিনি অসাধারণ কাজ করেছেন। এই কারণে দায়ূদ তার পিতার নামকে পবিত্র করতে এবং মনপ্রাণ দিয়ে তাঁর প্রশংসা করতে চেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন, তার “অন্তরস্থ সকল” যেন যিহোবার প্রশংসা করে। দায়ূদের মতো লেবীয়েরাও উদ্যোগের সঙ্গে যিহোবার প্রশংসা করেছিল। তারা নম্র হয়ে এটা স্বীকার করেছিল, যিহোবার পবিত্র নামের যতই প্রশংসা করা হোক না কেন, তা কম। (পড়ুন, নহিমিয় ৯:৫.) এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, লেবীয়েরা যখন মন থেকে যিহোবার প্রশংসা করেছিল, তখন তিনি খুশি হয়েছিলেন।
৭. প্রচার করার সময়ে এবং প্রতিদিন কাজ করার সময়ে কীভাবে আমরা যিহোবার প্রশংসা করতে পারি?
৭ বর্তমানে, কীভাবে আমরা যিহোবার হৃদয়কে খুশি করতে পারি? আমরা অন্যদের কাছে তাঁর সম্বন্ধে বলি, যেটা থেকে বোঝা যায় যে, আমরা তাঁকে অনেক ভালোবাসি এবং মন থেকে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। প্রচার করার সময়ে আমরা চেষ্টা করি যেন লোকেরা যিহোবা সম্বন্ধে জানে, তাঁকে ভালবাসে এবং তাঁর নিকটবর্তী হয়। (যাকোব ৪:৮) আমরা বাইবেল থেকে যিহোবার গুণগুলো বলতেও ভালোবাসি, যেমন প্রেম, প্রজ্ঞা, ন্যায়বিচার, শক্তি এবং এইরকম অন্যান্য গুণ। এভাবে, আমরা যিহোবার নামের প্রশংসা করি। এ ছাড়া, আমরা যখন যিহোবার মতো হওয়ার চেষ্টা করি, তখনও আমরা তাঁর নামের প্রশংসা করি এবং তাঁর হৃদয়কে খুশি করি। (ইফি. ৫:১) এগুলো করার সময়ে কেউ কেউ হয়তো লক্ষ করবে যে, আমরা জগতের লোকদের চেয়ে কতটা আলাদা। (মথি ৫:১৪-১৬) প্রতিদিন আমরা যখন বিভিন্ন কাজ করি, তখন আমরা লোকদের বলতে পারি, কেন আমরা জগতের লোকদের চেয়ে আলাদা। এভাবে, সৎহৃদয়ের ব্যক্তিরা তাঁর নিকটবর্তী হতে পারে। এইসমস্ত কিছু করে আমরা যখন যিহোবার প্রশংসা করি, তখন আমরা তাঁর হৃদয়কে খুশি করি।—১ তীম. ২:৩, ৪.
যিহোবার নামের প্রশংসা করলে যিশু খুশি হন
৮. কীভাবে যিশু উদ্যোগের সঙ্গে যিহোবার নামের প্রশংসা করেছিলেন?
৮ স্বর্গে স্বর্গদূতদের কিংবা পৃথিবীতে মানুষের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে যিশুর চেয়ে ভালো যিহোবাকে জানে। (মথি ১১:২৭) তিনি তাঁর পিতাকে খুব ভালোবাসেন, তাই তিনি উদ্যোগের সঙ্গে তাঁর নামের প্রশংসা করেছিলেন। (যোহন ১৪:৩১) মারা যাওয়ার আগে যিশু তাঁর পিতার কাছে প্রার্থনা করে বলেছিলেন, “আমি তোমার নাম [লোকদের] জানিয়েছি।” (যোহন ১৭:২৬) পৃথিবীতে সাড়ে তিন বছর সেবা করার সময়ে এটাই ছিল তাঁর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আসুন দেখি, তিনি কীভাবে এই কাজটা করেছিলেন।
৯. কীভাবে একটা দৃষ্টান্ত দিয়ে যিশু তাঁর পিতা সম্বন্ধে আরও ভালো করে বুঝিয়েছিলেন?
৯ যিশু লোকদের শুধুমাত্র এটা বলতেন না যে, ঈশ্বরের নাম যিহোবা। তিনি যে-যিহুদিদের শেখাতেন, তারা আগে থেকেই ঈশ্বরের নাম জানত। তারপরও, তিনি উদ্যোগের সঙ্গে তাদের কাছে ‘[তাঁর পিতাকে] প্রকাশ করেছিলেন।’ (যোহন ১:১৭, ১৮) যেমন, ইব্রীয় শাস্ত্রে বলা হয়েছে, যিহোবা স্নেহশীল ও কৃপাময় ঈশ্বর। (যাত্রা. ৩৪:৫-৭) তবে, এই বিষয়টা আরও ভালো করে বোঝানোর জন্য যিশু হারানো ছেলে এবং তার বাবার দৃষ্টান্ত দিয়েছিলেন। বাইবেলে আমরা পড়ি, ছেলে যখন অনুতপ্ত হয়, তখন সে ঘরে তার বাবার কাছে ফিরে আসে। তবে, ‘সে দূরে থাকতেই তার বাবা তাকে দেখতে পান’ এবং তিনি দৌড়ে গিয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরেন। তিনি মন থেকে তাকে ক্ষমা করে দেন। এখান থেকে আমরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি যে, যিহোবা কতটা করুণাময় ঈশ্বর এবং তাঁর হৃদয়ে কতটা সমবেদনা রয়েছে। (লূক ১৫:১১-৩২) সত্যিই, যিশু আমাদের তাঁর পিতার অবিকল প্রতিচ্ছবি দেখিয়েছেন।
১০. (ক) কীভাবে আমরা জানতে পারি, যিশু তাঁর পিতার নাম ব্যবহার করেছিলেন? (মার্ক ৫:১৯) (ছবিও দেখুন।) (খ) আজ যিশু আমাদের কাছ থেকে কী চান?
১০ যিশু চেয়েছিলেন, অন্যেরা যেন যিহোবাকে জানতে পারে এবং তাঁর নাম ব্যবহার করে। তাঁর সময়ের কিছু ধর্মগুরু হয়তো মনে করত, ঈশ্বরের নাম এতটাই পবিত্র যে, সেটা মুখে আনা উচিত নয়। কিন্তু, যিশু মানুষের তৈরি এই ধরনের রীতিনীতির উপর মনোযোগ দেননি বরং তাঁর পিতার গৌরব করে গিয়েছিলেন। একটা উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। একবার তিনি গেরাসেনীদের অঞ্চলে এমন একজন ব্যক্তিকে সুস্থ করেছিলেন, যার উপর মন্দ স্বর্গদূতেরা ভর করেছিল। এই ঘটনাটা দেখে লোকেরা এতটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিল যে, তারা যিশুকে সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য বিনতি করেছিল। (মার্ক ৫:১৬, ১৭) কিন্তু যিশু চেয়েছিলেন, সেখানকার লোকেরাও যেন যিহোবা সম্বন্ধে জানে। তাই, যাওয়ার আগে যিশু সেই ব্যক্তিকে ডেকে বলেছিলেন, তিনি যেন লোকদের বলেন, যিশু নয় বরং যিহোবা তার জন্য কী কী করেছেন। (পড়ুন, মার্ক ৫:১৯.) a আজও যিশু এটাই চান। তিনি চান যেন আমরা সারা পৃথিবীর লোকদের কাছে তাঁর পিতার নাম ঘোষণা করি। (মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০) আর আমরা যখন এই কাজে সাহায্য করি, তখন আমাদের রাজা যিশু খুব খুশি হন।
১১. (ক) যিশু তাঁর শিষ্যদের কোন প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন? (খ) কেন এই প্রার্থনা এতটা গুরুত্বপূর্ণ? (যিহিষ্কেল ৩৬:২৩)
১১ যিশু যিহোবার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে জানতেন। সেটা হল, তাঁর নামকে পবিত্র করা এবং সেই নামের উপর আসা নিন্দা দূর করা। তাই, আমাদের গুরু এভাবে প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন, “হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতা, তোমার নাম পবিত্র হোক।” (মথি ৬:৯) যিশু জানতেন যে, যিহোবার নামকে পবিত্র করা হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। (পড়ুন, যিহিষ্কেল ৩৬:২৩.) সেই নামকে পবিত্র করার জন্য তিনি যা-কিছু করেছিলেন, তা এই পুরো নিখিলবিশ্বে আর কেউ করেনি। তারপরও, যিশুকে গ্রেপ্তার করার পর তাঁর শত্রুরা তাঁর উপর কোন অভিযোগ এনেছিল? ঈশ্বরনিন্দার অভিযোগ। যিশু জানতেন, তাঁর পিতার পবিত্র নামের উপর নিন্দা নিয়ে আসা হল সবচেয়ে গুরুতর পাপ। তিনি এও জানতেন যে, তাঁর উপর এই অভিযোগ আনা হবে। হয়তো এই কারণেই গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে যিশু “মানসিকভাবে” অনেক “কষ্টের মধ্যে ছিলেন।”—লূক ২২:৪১-৪৪.
১২. কীভাবে যিশু সবচেয়ে কঠিন সময়েও তাঁর পিতার নামকে পবিত্র করেছিলেন?
১২ তাঁর পিতার নামকে পবিত্র করার জন্য যিশু সব ধরনের তাড়না ও অপমান সহ্য করেছিলেন। কিন্তু, তিনি লজ্জিত বোধ করেননি কারণ তিনি জানতেন, তিনি সবসময় তাঁর পিতার আজ্ঞা পালন করেছেন। (ইব্রীয় ১২:২) তিনি এও জানতেন, এই কঠিন সময়ে শয়তান তাঁকে সরাসরি আক্রমণ করছে। (লূক ২২:২-৪; ২৩:৩৩, ৩৪) শয়তান ভেবেছিল, যিশু যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকবেন না। কিন্তু, সে ভুল ছিল। যিশু প্রমাণ করেছিলেন, শয়তান নিষ্ঠুর ও মিথ্যাবাদী আর এই পৃথিবীতে এমন লোকেরা রয়েছে, যারা কঠিন সময়েও যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকে এবং তাঁর সেবা করে যায়।
১৩. আপনি আপনার রাজা যিশুকে খুশি করার জন্য কী করতে পারেন?
১৩ আপনি কি আপনার রাজা যিশুকে খুশি করতে চান? তা হলে, যিহোবার নামের প্রশংসা করে চলুন এবং অন্যদের বলে চলুন, তিনি আসলে কেমন ঈশ্বর। এমনটা করার মাধ্যমে আপনি দেখাবেন যে, আপনি যিশুর মতো হওয়ার চেষ্টা করছেন। (১ পিতর ২:২১) যিশুর মতো আপনিও যিহোবার হৃদয়কে খুশি করবেন এবং এটা প্রমাণ করবেন, তাঁর শত্রু শয়তান যে-অভিযোগ করেছে, সেটার কোনো ভিত্তি নেই!
যিহোবার নামের প্রশংসা করলে লোকদের জীবন রক্ষা পেতে পারে
১৪-১৫. আমরা যখন যিহোবা সম্বন্ধে অন্যদের সত্যটা বলি, তখন এর কোন কোন ভালো ফলাফল আসতে পারে?
১৪ আমরা যখন যিহোবার নামের প্রশংসা করি, তখন লোকদের জীবন রক্ষা পেতে পারে। কীভাবে? শয়তান ‘অবিশ্বাসীদের মনকে অন্ধ করে রেখেছে।’ (২ করি. ৪:৪) তাই, সে যে-মিথ্যা শিক্ষাগুলো ছড়ায়, সেগুলো লোকেরা বিশ্বাস করে নেয়। যেমন: ঈশ্বর নেই এবং থাকলেও মানুষের কাছ থেকে অনেক দূরে রয়েছেন, তিনি মানুষের জন্য একদমই চিন্তা করেন না, তিনি নিষ্ঠুর আর যারা পাপ করে, তাদের চিরকালের জন্য শাস্তি দেন। শয়তান এই মিথ্যাগুলো ছড়িয়েছে, যাতে যিহোবার নামের উপর নিন্দা আসে, তাঁর নাম মাটিতে মিশে যায় এবং লোকেরা যিহোবার কাছে যাওয়ার পরিবর্তে তাঁর কাছ থেকে দূরে চলে যায়। কিন্তু আমরা যখন প্রচার করি, তখন শয়তানের এই উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যায়। আমরা আমাদের পিতার বিষয়ে লোকদের সত্যটা বলি আর এভাবে তাঁর পবিত্র নামের প্রশংসা করি। এর আর কোন কোন ভালো ফলাফল আসতে পারে?
১৫ ঈশ্বরের বাক্যে অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে। আমরা যখন বাইবেল থেকে লোকদের যিহোবা সম্বন্ধে শেখাই এবং তাদের বলি যে, তিনি আসলে কেমন ঈশ্বর, তখন এর অনেক ভালো ফলাফল আসে। শয়তান লোকদের মিথ্যার যে-জালে জড়িয়ে রেখেছে, সেটা থেকে তারা মুক্ত হয় এবং আমাদের মতো তারাও যিহোবাকে ভালোবাসতে শুরু করে। তারা যখন জানতে পারে, যিহোবার কত শক্তি রয়েছে, তখন তারা অবাক হয়ে যায়। (যিশা. ৪০:২৬) তারা তাঁর ন্যায়বিচারের বিষয়ে জেনেও অনেক সান্ত্বনা পায়। (দ্বিতীয়. ৩২:৪) তারা যখন তাঁর প্রজ্ঞার বিষয়ে জানতে পারে, তখন তাদের যেন চোখ খুলে যায়। (যিশা. ৫৫:৯; রোমীয় ১১:৩৩) তারা যখন শেখে, বাইবেলে যিহোবাকে প্রেম বলা হয়েছে, তখন তারা অনেক স্বস্তি লাভ করে। (১ যোহন ৪:৮) তারা যিহোবার নিকটবর্তী হয়, তাঁর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠ হয় এবং তাদের এই আশা দৃঢ় হয় যে, তারা তাঁর সন্তান হিসেবে এই পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকবে। সত্যিই, যিহোবার নিকটবর্তী হওয়ার জন্য লোকদের সাহায্য করা কতই-না বড়ো এবং চমৎকার এক দায়িত্ব! আমরা যখন এই দায়িত্ব পালন করি, তখন যিহোবা আমাদের তাঁর “সহকর্মী” হিসেবে দেখেন।—১ করি. ৩:৫, ৯.
১৬. ঈশ্বরের নাম জেনে অনেক লোকের কেমন লেগেছে, তা উদাহরণের সাহায্যে বুঝিয়ে বলুন।
১৬ আমরা হয়তো লোকদের প্রথমে এটাই বলি যে, ঈশ্বরের নাম যিহোবা। এই ছোট্ট কথাও সৎহৃদয়ের ব্যক্তিদের মনে জায়গা করে নেয়। আলিয়া b নামে একজন অল্পবয়সি বোনের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। তিনি এমন এক পরিবারে বড়ো হয়ে উঠেছিলেন, যারা বাইবেলকে মানত না। তিনি তার ধর্মে খুশি ছিলেন না আর তিনি মনে করতেন, ঈশ্বর তার কাছ থেকে অনেক দূরে রয়েছেন। কিন্তু, তিনি যখন যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেন, তখন তার এই চিন্তাধারা পালটে যায়। তিনি বুঝতে পারেন, তিনি ঈশ্বরের বন্ধু হতে পারেন। তিনি এটা জেনে অবাক হয়ে যান যে, বাইবেলের অনেক অনুবাদ থেকে ঈশ্বরের নাম সরিয়ে দিয়ে প্রভু এবং এইরকমই অন্যান্য উপাধি ঢোকানো হয়েছে। প্রথম বার যিহোবার নাম জানতে পারা তার জন্য অনেক বিশেষ ছিল। তিনি আনন্দের সঙ্গে বলেন, “আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুর একটা নামও রয়েছে!” এই সত্যটা জেনে তার কেমন লেগেছিল? তিনি বলেন, “এখন আমি অনেক স্বস্তি পাই। আমি অনেক খুশি যে, আমি যিহোবার নাম জানার সুযোগ পেয়েছি।” এবার ভাই স্টিভের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন, যিনি আগে একজন মিউজিশিয়ান ছিলেন। তিনি এমন এক যিহুদি পরিবারে বড়ো হয়ে উঠেছিলেন, যারা অনেক গোঁড়া ছিল। কিন্তু, ধীরে ধীরে ধর্মের উপর থেকে তার মন উঠে যায় কারণ তিনি দেখতেন, ধর্মের লোকেরা বলে এক আর করে এক। তার মা যখন মারা যান, তখন তিনি অনেক কষ্ট পান। সেই কষ্টের সময়ে তিনি একটা বাইবেল অধ্যয়নে বসেন, যেটা একজন যিহোবার সাক্ষি পরিচালনা করছিলেন। তিনি যখন ঈশ্বরের নাম শোনেন, তখন তার খুব ভালো লাগে। তিনি বলেন, “আমি এর আগে কখনো ঈশ্বরের নাম শুনিনি।” তিনি আরও বলেন, “আমি প্রথম বার জানতে পেরেছি যে, ঈশ্বর সত্যিই আছেন এবং তাঁর মধ্যে আমাদের মতো অনুভূতি ও গুণ রয়েছে! আমি বুঝতে পেরেছি যে, আমি এক নতুন বন্ধু খুঁজে পেয়েছি।”
১৭. কেন আপনি সবসময় যিহোবার পবিত্র নামের প্রশংসা করতে চান? (ছবিও দেখুন।)
১৭ আপনি কি প্রচার করার সময়ে এবং লোকদের শেখানোর সময়ে বলেন, ঈশ্বরের নাম যিহোবা? আপনি কি তাদের এটা বোঝান, আমাদের ঈশ্বর আসলে কেমন? তা করলে, আপনি ঈশ্বরের নামের প্রশংসা করবেন। আমরা প্রার্থনা করি, আপনি যেন সবসময় ঈশ্বরের পবিত্র নামের প্রশংসা করেন এবং তাঁকে জানতে লোকদের সাহায্য করেন। এভাবে, আপনি আমাদের রাজা যিশু খ্রিস্টের মতো হওয়ার চেষ্টা করবেন এবং লোকদের জীবন রক্ষা করতে পারবেন। এর চেয়েও বড়ো বিষয় হল, আপনি যিহোবার হৃদয়কে খুশি করতে পারবেন, যিনি আমাদের অনেক ভালোবাসেন। তাই আসুন, আমরা চিরকাল তাঁর নামের প্রশংসা করে চলি!—গীত. ১৪৫:২.
যিহোবার নামের প্রশংসা করলে কীভাবে . . .
-
যিহোবা খুশি হন?
-
যিশু খুশি হন?
-
অন্যদের জীবন রক্ষা পায়?
গান ২ যিহোবা তোমার নাম