সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৮

গান ১৩০ ক্ষমা করে যাও

যিহোবা আপনাকে ক্ষমা করেছেন—আপনিও কি অন্যদের ক্ষমা করবেন?

যিহোবা আপনাকে ক্ষমা করেছেন—আপনিও কি অন্যদের ক্ষমা করবেন?

“যিহোবা যেমন তোমাদের পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করেছেন, তেমনই তোমরাও ক্ষমা করো।”কল. ৩:১৩.

আমরা কী শিখব?

কেউ যখন আমাদের দুঃখ দেয়, তখন তাকে ক্ষমা করার জন্য আমরা কী করতে পারি, এই প্রবন্ধে তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।

১-২. (ক) বিশেষ করে কখন অন্যদের ক্ষমা করা আমাদের কঠিন বলে মনে হতে পারে? (খ) বোন ডেনিস ক্ষমা করার বিষয়ে কোন চমৎকার উদাহরণ রেখেছেন?

 অন্যদের ক্ষমা করা আপনার পক্ষে কি কঠিন বলে মনে হয়? আমাদের প্রত্যেকেরই এমনটা মনে হতে পারে, বিশেষ করে সেইসময় যখন কেউ আমাদের এমন কিছু বলে অথবা করে, যেটা আমাদের দুঃখ দেয়। এক্ষেত্রে আমরা রাগ পুষে না রেখে, অন্যদের কি ক্ষমা করতে পারি? অবশ্যই করতে পারি। বোন ডেনিসের a উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন, যিনি ক্ষমা করার বিষয়ে আমাদের জন্য এক চমৎকার উদাহরণ রেখেছেন। ২০১৭ সালে বোন তার পরিবারের সঙ্গে যিহোবার সাক্ষিদের নতুন বিশ্বপ্রধান কার্যালয় দেখার জন্য গিয়েছিলেন। ফেরার সময় একজন ব্যক্তি তার গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বোনের গাড়িকে ধাক্কা মারে। বোন অজ্ঞান হয়ে যান। জ্ঞান ফেরার পর বোন জানতে পারেন, তার সন্তানেরা গুরুতরভাবে আহত হয়েছে এবং তার স্বামী ব্রায়েন মারা গিয়েছে। সেই মুহূর্তের কথা চিন্তা করে বোন বলেন, “আমি যখন এটা শুনি, তখন পুরোপুরি ভেঙে পড়ি। আমি কী করব, কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।” পরে বোন জানতে পারেন, সেই ব্যক্তি নেশা করে অথবা অমনোযোগী হয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন না। এই পরিস্থিতিতে বোন যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার মাধ্যমে মনের শান্তি চান, যেন তিনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

যেহেতু, সেই দুর্ঘটনায় বোনের স্বামী মারা যায়, তাই সেই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতে তার বিচার চলে। যদি তার দোষ প্রমাণিত হয়, তা হলে তার জেল হতে পারে। বোনকে বলা হয়েছিল, সেই ব্যক্তি শাস্তি পাবে কি পাবে না, সেটা তার সাক্ষ্য দেওয়ার উপর নির্ভর করছে। বোন ডেনিস বলেন, “আমাকে আবারও একবার আমার বেদনাদায়ক পরিস্থিতির কথা মনে করতে হত। আমার মনে হয়েছিল, যেন আমার ক্ষত স্থান থেকে সেলাই খুলে সেখানে নুন ছেটানো হচ্ছে।” কিছু সপ্তাহ পর বোন আদালতে সেই ব্যক্তির সামনে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য উপস্থিত ছিলেন, যার কারণে তার পরিবার তছনছ হয়ে গিয়েছিল। সেই সময় বোন কী বলেছিলেন? বোন সেই বিচারককে অনুরোধ করেছিলেন, যেন সেই ব্যক্তির প্রতি দয়া দেখানো হয়। b এটা শুনে সেই বিচারক চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। তিনি বলেন, “আমি ২৫ বছর ধরে বিচারক রয়েছি, কিন্তু আমি কখনো এমন কোনো ব্যক্তিকে দেখিনি, যিনি অভিযুক্তের জন্য দয়া ভিক্ষা চাইছেন। একজন অভিযুক্তের প্রতি এতটা প্রেম আমি প্রথম বার দেখছি।”

৩. কেন বোন ডেনিস সেই ব্যক্তিকে ক্ষমা করতে পেরেছিলেন?

বোন ডেনিস সেই ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু, কেন? যিহোবা আমাদের কত দূর পর্যন্ত ক্ষমা করেছেন, এটা চিন্তা করার মাধ্যমে তিনি সেই ব্যক্তিকে ক্ষমা করতে পেরেছিলেন। (মীখা ৭:১৮) যখন আমরাও এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করব যে, যিহোবা আমাদের কত দূর পর্যন্ত ক্ষমা করেছেন, তখন তা অন্যদের ভুলগুলো ক্ষমা করতে আমাদের সাহায্য করবে।

৪. যিহোবা আমাদের কাছ থেকে কী চান? (ইফিষীয় ৪:৩২)

যিহোবা আমাদের পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করেছেন আর তিনি চান আমরাও যেন অন্যদের পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করি। (পড়ুন, ইফিষীয় ৪:৩২.) তিনি চান আমরা যেন সেই ব্যক্তিদেরও ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত থাকি, যারা আমাদের দুঃখ দেয়। (গীত. ৮৬:৫; লূক ১৭:৪) এই প্রবন্ধে আমরা তিনটে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলোর উপর মনোযোগ দিলে আমরা অন্যদের মন থেকে ক্ষমা করতে পারব।

নিজের কষ্টকে চেপে রাখবেন না

৫. হিতোপদেশ ১২:১৮ পদ অনুযায়ী যখন কেউ আমাদের কষ্ট দেয়, তখন আমাদের কেমন লাগে?

অনেকসময় অন্যদের কথা ও কাজের মাধ্যমে আমরা অনেক কষ্ট পাই। আর সেই ব্যক্তি যদি আমাদের কোনো বন্ধু অথবা পরিবারের সদস্য হয়, তা হলে আমরা আরও বেশি কষ্ট পাই। (গীত. ৫৫:১২-১৪) আর কখনো কখনো আমাদের এতটাই কষ্ট হয় যে মনে হয়, কেউ যেন আমাদের বুকে ছুরি গেঁথে দিয়েছে। (পড়ুন, হিতোপদেশ ১২:১৮.) আমরা যদি আমাদের কষ্ট চেপে রাখি এবং এইরকম মনে করি, আমাদের তো কিছুই হয়নি, তা হলে আমাদের কষ্ট কমে যাবে না। এটা এমন যেন যে-ছুরিটা আমাদের গেঁথে দেওয়া হয়েছে, সেটা আমরা বেরই করছি না। মনে রাখুন, কষ্ট চেপে রাখলে আপনার কষ্ট কমে যাবে না।

৬. যখন কেউ আমাদের মনে আঘাত দেয়, তখন কী হতে পারে?

যখন কেউ আমাদের মনে আঘাত দেয়, তখন আমরা হয়তো তার উপর রেগে যেতে পারি। বাইবেল বলে, আমাদের রাগ হতে পারে। কিন্তু, এটিতে এও বলা হয়েছে, আমরা যেন নিজেদের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করি। (গীত. ৪:৪; ইফি. ৪:২৬) কিন্তু কেন? কারণ আমরা যেরকমটা চিন্তা করি এবং অনুভব করি, প্রায়ই সেই অনুযায়ী কাজ করি। তাই, আমরা যদি মনে মনে রাগ পুষে রাখি, তা হলে এর পরিণতি খারাপ হতে পারে। (যাকোব ১:২০) মনে রাখুন, আমাদের রাগ হতে পারে, কিন্তু আমরা রাগ পুষে রাখব কি রাখব না, সেটা আমাদের উপর নির্ভর করছে।

আমরা রেগে যেতে পারি, কিন্তু আমরা রাগ পুষে রাখব কি না, সেটা আমাদের উপর নির্ভর করছে

৭. কেউ যখন আমাদের আঘাত দেয়, তখন আমরা কেমন অনুভব করি?

কেউ যখন আমাদের আঘাত দেয়, তখন আমরা কেমন অনুভব করি? এই উদাহরণগুলো নিয়ে একটু চিন্তা করুন। বোন অ্যান বলেন, “আমি যখন ছোটো ছিলাম, তখন আমার বাবা আমার মাকে ছেড়ে চলে যান এবং যিনি আমার দেখাশোনা করতেন, তাকে বিয়ে করেন। আমার নিজেকে খুব একা বলে মনে হত। আর যখন বাবার দ্বিতীয় পক্ষের সন্তান হয়েছিল, তখন আমার মনে হয়েছিল, তারা আমার জায়গা নিয়ে নিয়েছে। আমি চিন্তা করতে শুরু করি, আমাকে মনে হয় কারো প্রয়োজন নেই।” লক্ষ করুন, বোন জর্জেটের স্বামী যখন তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, তখন তার অনুভূতি কেমন হয়েছিল: “আমি এবং আমার স্বামী ছোটোবেলা থেকে বন্ধু ছিলাম আর আমরা দু-জনে একসঙ্গে অগ্রগামী সেবা করেছি। যখন ও এমনটা করেছিল, তখন আমি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিলাম।” আর বোন নাওমি বলেন, “আমি স্বপ্নেও ভাবিনি, আমার স্বামী আমাকে এতটা কষ্ট দেবে।” বোন আরও বলেন, “যখন আমার স্বামী আমাকে এসে বলে যে, ও লুকিয়ে লুকিয়ে পর্নোগ্রাফি দেখে, সেইসময় আমার মনে হয়েছিল যেন ও আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।”

৮. (ক) কেন আমাদের অন্যদের ক্ষমা করতে হবে? (খ) এর ফলে আমরা কোন উপকার পাব? (“ যখন কেউ আপনাকে অনেক আঘাত দেয়, তখন আপনি কী করবেন?” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)

অন্যেরা যা বলে এবং যা করে, সেটার উপর আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। কিন্তু, সেইসময় আমরা কী করব, সেটা আমাদের হাতে রয়েছে। সবচেয়ে ভালো হবে, আমরা যেন তাদের ক্ষমা করে দিই। কারণ আমরা যিহোবাকে ভালোবাসি আর তিনি চান যেন আমরা অন্যদের ক্ষমা করি। আমরা যদি রেগে থাকি আর অন্যদের ক্ষমা না করি, তা হলে আমরা মূর্খের মতো কাজ করে ফেলতে পারি এবং আমাদের স্বাস্থ্যও খারাপ হয়ে যেতে পারে। (হিতো. ১৪:১৭, ২৯, ৩০) বোন ক্রিস্টিনের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। বোন বলেন, “যখন আমি রেগে যাই অথবা কারো উপর রেগে থাকি, তখন আমি হাসতে ভুলে যাই। এ ছাড়া, আমি অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে ফেলি এবং শরীরের যত্ন নিই না। আমি ঠিক করে ঘুমাতে পারি না, ভেবে-চিন্তে কথা বলি না এবং কাজ করি না। এর ফলে, আমার স্বামী এবং অন্যদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়।”

৯. কেন আমাদের অসন্তুষ্টির মনোভাব রাখা উচিত নয়?

যারা আমাদের দুঃখ দেয়, তারা আমাদের কাছে ক্ষমা না-ও চাইতে পারে। এইরকম পরিস্থিতিতে আমরা কী করতে পারি? আমরা তাদের ক্ষমা করে দিতে পারি। আমরা যদি তা করি, তা হলে আমাদেরই উপকার হবে। আবারও বোন জর্জেটের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। তিনি বলেন, “যদিও বিবাহবিচ্ছেদের পরে আমি অসন্তুষ্টি ও রাগ পুষে রেখেছিলাম, কিন্তু পরে আমি হৃদয় থেকে এই অনুভূতি দূর করার চেষ্টা করি। আর এর ফলে আমি মনের শান্তি লাভ করি।” আমরা যদি অসন্তুষ্টির মনোভাব রাখি, তা হলে আমাদের হৃদয় তিক্ততায় ভরে যাবে আর এতে আমাদেরই ক্ষতি হবে। কিন্তু, যদি আমরা পুরোনো বিষয়গুলো ভুলে যাই, তা হলে আমরা জীবনে এগিয়ে যেতে পারব এবং আমাদের আনন্দ ফিরে পাব। (হিতো. ১১:১৭) এর পরও যদি আপনার পক্ষে অন্যদের ক্ষমা করা কঠিন বলে মনে হয়, তা হলে আপনি কী করতে পারেন?

রাগ পুষে রাখবেন না

১০. কাউকে মন থেকে ক্ষমা করার জন্য আমাদের কোন বিষয়টা বুঝতে হবে? (ছবিগুলোও দেখুন।)

১০ হতে পারে, কেউ আপনাকে অনেক দুঃখ দিয়েছে আর এই বিষয়টা আপনি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে আপনি কী করতে পারেন? মনে রাখুন, কাউকে মন থেকে ক্ষমা করতে সময় লাগতে পারে। যেমন, কোনো ব্যক্তি যদি গুরুতরভাবে আহত হন, তখন তার ক্ষত সেরে উঠতে বেশ কিছুটা সময় লাগতে পারে। একইভাবে, আমাদের মনে যে-আঘাত লাগে, সেটাও সেরে উঠতে সময় লাগতে পারে। আর এরপরই আমরা কাউকে ক্ষমা করতে পারি।—উপ. ৩:৩; ১ পিতর ১:২২.

আমাদের শরীরে কোনো ক্ষত সারতে যেমন যত্ন ও সময় লাগে, একইভাবে মনের ক্ষত সারতেও যত্ন ও সময় লাগে (১০ অনুচ্ছেদ দেখুন)


১১. অন্যদের ক্ষমা করার জন্য প্রার্থনা করা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

১১ ক্ষমা করার জন্য প্রার্থনা করাও গুরুত্বপূর্ণ। c আবারও বোন অ্যানের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। প্রার্থনা করা কীভাবে তাকে সাহায্য করেছিল, সেই বিষয়ে তিনি বলেন: “আমি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করে বলি, তিনি যেন আমাদের সবাইকে ক্ষমা করে দেন কারণ আমরা সবাই এমন কিছু বলেছিলাম অথবা করেছিলাম, যেগুলো সঠিক ছিল না। এরপর আমি আমার বাবা এবং তার স্ত্রীকে একটা চিঠি লিখি এবং সেই চিঠিতে জানাই, আমি তাদের ক্ষমা করে দিয়েছি।” বোন অ্যানের জন্য এমনটা করা সহজ ছিল না। তারপরও তিনি তাদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “যিহোবা আমাদের সবসময় ক্ষমা করেন। তাই, আমিও আমার বাবা এবং তার স্ত্রীকে ক্ষমা করে দিয়েছি। এর ফলে, তারা দু-জনেই হয়তো যিহোবা সম্বন্ধে শিখতে চাইবে।”

১২. নিজের চিন্তাভাবনার উপর নির্ভর করার পরিবর্তে কেন আমাদের যিহোবার উপর নির্ভর করতে হবে? (হিতোপদেশ ৩:৫, ৬)

১২ নিজের চিন্তাভাবনার উপর নয় বরং যিহোবার উপর নির্ভর করুন। (পড়ুন, হিতোপদেশ ৩:৫, ৬.) যিহোবা জানেন যে, কোন বিষয়টা আমাদের জন্য সবচেয়ে ভালো। (যিশা. ৫৫:৮, ৯) আর তিনি আমাদের এমন কিছু করতে বলবেন না, যেটার ফলে আমাদের ক্ষতি হবে। তাই, তিনি যখন আমাদের ক্ষমা করার জন্য বলেন, তখন আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত থাকতে পারি যে, এর ফলে আমাদেরই উপকার হবে। (গীত. ৪০:৪; যিশা. ৪৮:১৭, ১৮) কিন্তু, আমরা যদি নিজেদের চিন্তাভাবনা অনুযায়ী চলি, তা হলে আমরা কখনো অন্যদের ক্ষমা করতে পারব না। (হিতো. ১৪:১২; যির. ১৭:৯) বোন নাওমি যার বিষয়ে আমরা আগে দেখেছিলাম, তিনি বলেন, “প্রথমে আমি চিন্তা করি, আমি ওকে কখনো ক্ষমা করব না কারণ আমি যদি ওকে ক্ষমা করি, তা হলে ও কখনো শোধরাবে না। ও আবারও সেই একই ভুল করবে আর ভুলে যাবে যে, ও আমাকে কতটা কষ্ট দিয়েছিল। আমি চিন্তা করছিলাম, আমি যা করছি তা একদম সঠিক, কারণ যিহোবা তো আমার অনুভূতি বোঝেন। আমি বুঝতে পারি, যদিও যিহোবা আমার অনুভূতি বোঝেন, কিন্তু এর মানে এই নয় যে, তিনি সেটার সঙ্গে একমত হবেন। তিনি জানেন, আমি কোন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি এবং আমার ক্ষত সেরে উঠতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে। কিন্তু, তিনি এটাও চান যেন আমি আমার স্বামীকে ক্ষমা করে দিই।” d

নিজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করুন

১৩. রোমীয় ১২:১৮-২১ পদ অনুযায়ী আমাদের কী করতে হবে?

১৩ হতে পারে, যে-ব্যক্তি আমাদের অনেক দুঃখ দিয়েছে, আমরা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি এবং পরবর্তী সময় কখনো এই বিষয় নিয়ে কথা বলিনি। কিন্তু, শুধু এটা করাই যথেষ্ট নয়, আমরা যদি তাকে পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করে থাকি, তা হলে আমরা আরও কিছু করতে চাইব। আর সেই ব্যক্তি যদি আমাদের খ্রিস্টীয় ভাই অথবা বোন হয়ে থাকে, তা হলে তার সঙ্গে আমরা শান্তিস্থাপন করার আরও বেশি প্রচেষ্টা করব। (মথি ৫:২৩, ২৪) রাগ পুষে না রেখে আমরা তার প্রতি দয়া দেখাব এবং তাকে ক্ষমা করে দেব। (পড়ুন, রোমীয় ১২:১৮-২১; ১ পিতর ৩:৯) কিন্তু, এটা করতে কোন বিষয়টা আমাদের সাহায্য করবে?

১৪. আমাদের কী করার জন্য প্রচেষ্টা করতে হবে এবং কেন?

১৪ যিহোবা আমাদের মধ্যে ভালো বিষয়গুলো দেখেন। (২ বংশা. ১৬:৯; গীত. ১৩০:৩) আমাদেরও যিহোবার মতো হওয়ার চেষ্টা করতে হবে আর যে-ব্যক্তি আমাদের দুঃখ দিয়েছে, তার মধ্যে ভালো বিষয়গুলো দেখতে হবে। আমরা যদি কোনো ব্যক্তির মধ্যে ভালো বিষয়গুলো খুঁজি, তা হলে আমরা ভালো বিষয়গুলো দেখতে পাব আর আমরা যদি খারাপ বিষয়গুলো খুঁজি, তা হলে খারাপ বিষয়গুলো দেখতে পাব। তাই, আমরা যখন কোনো ব্যক্তির মধ্যে ভালো বিষয়গুলো খুঁজব, তখন তাকে ক্ষমা করা আমাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে। ভাই জেরড বলেন: “যখন কোনো ভাই আমাকে দুঃখ দেয়, তখন আমি তার সেই ভুলটার পরিবর্তে তার মধ্যে যে-ভালো বিষয়গুলো রয়েছে, সেগুলো খোঁজার চেষ্টা করি। তখন তাকে ক্ষমা করা আমার জন্য অনেক সহজ হয়ে যায়।”

১৫. আপনি যখন কাউকে ক্ষমা করে দেন, তখন এই বিষয়টা তাকে বলা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

১৫ যে-ভাই অথবা বোন আমাদের দুঃখ দিয়েছে, তার সঙ্গে আবারও শান্তিস্থাপন করার জন্য আমাদের আরও একটা কাজ করতে হবে। তাকে বলতে হবে যে, আমরা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। এটা করা কেন গুরুত্বপূর্ণ? লক্ষ করুন, বোন নাওমি কী করেছিলেন। তিনি বলেন: “যখন আমার স্বামী আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘তুমি কি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছ?’ তখন আমার মুখ থেকে একটা শব্দও বের হচ্ছিল না। আমি বুঝতে পারি, আমি তাকে পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করতে পারিনি। কিন্তু, কিছু সময় পর আমি তাকে মন থেকে বলতে পেরেছিলাম, ‘আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।’ এটা শুনে তার চোখ থেকে জল পড়তে শুরু করেছিল এবং তার মন থেকে একটা ভারী বোঝা নেমে গিয়েছিল। আমার মনও অনেক হালকা হয়ে গিয়েছিল। আমি আবারও তার উপর নির্ভর করতে শুরু করেছিলাম আর আমরা আবার ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছিলাম।”

১৬. অন্যদের ক্ষমা করার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

১৬ যিহোবা চান যেন আমরা অন্যদের ক্ষমা করি। (কল. ৩:১৩) কিন্তু, অনেকসময় এটা করা আমাদের জন্য সহজ না-ও হতে পারে। তারপরও আমরা অন্যদের ক্ষমা করতে পারি। কীভাবে? যখন কেউ আমাদের দুঃখ দেয়, তখন আমরা নিজের কষ্টকে চেপে রাখব না এবং সেই ব্যক্তির উপর রেগে থাকব না বরং তার প্রতি আমাদের যে-দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, তা পরিবর্তন করার চেষ্টা করব।—“ অন্যদের ক্ষমা করার তিনটে উপায়” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

অন্যদের ক্ষমা করার ফলে আমরা নিজেরাও উপকৃত হই

১৭. কেন আমাদের অন্যদের ক্ষমা করা উচিত?

১৭ অন্যদের ক্ষমা করার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এর মধ্যে কিছু বিষয়ের উপর মনোযোগ দিন। যখন আমরা অন্যদের ক্ষমা করি, তখন (১) আমরা আমাদের করুণাময় পিতা যিহোবার মতো হই এবং তাঁর হৃদয়কে আনন্দিত করি। (লূক ৬:৩৬) (২) আমরা দেখাই যে, যিহোবা আমাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে আমরা তাঁর প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ। (মথি ৬:১২) আর (৩) আমাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং অন্যদের সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক বজায় থাকে।

১৮-১৯. অন্যদের ক্ষমা করলে কোন ভালো ফলাফল আসে?

১৮ আমরা যখন অন্যদের ক্ষমা করি, তখন আমরা যা আশা করি, তার চেয়েও বেশি আশীর্বাদ লাভ করি। আসুন, আবারও আমরা বোন ডেনিসের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিই। যে-ব্যক্তি বোন ডেনিসের গাড়িতে ধাক্কা মেরেছিলেন, তিনি মামলা শেষ হওয়ার পর আত্মহত্যা করার কথা চিন্তা করেছিলেন। এই বিষয়টা বোন ডেনিস জানতেন না। কিন্তু, বোন যখন সেই ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, তখন এই বিষয়টা সেই ব্যক্তির হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিল এবং তিনি যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিলেন।

১৯ আমাদের হয়তো অন্যদের ক্ষমা করা কঠিন বলে মনে হতে পারে। কিন্তু, আমরা যদি এটা করি, তা হলে আমরা অনেক আশীর্বাদ লাভ করতে পারি। (মথি ৫:৭) তাই, আসুন আমরা আমাদের পিতা যিহোবার মতো হই এবং অন্যদের ক্ষমা করি।

গান ১২৫ খুশি যারা দয়াময়

a কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

b এইরকম পরিস্থিতিতে একজন ব্যক্তিকে ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তিনি কী করবেন।

c jw.org ওয়েবসাইটে দেওয়া এই ভিডিও গানগুলো দেখুন: “ক্ষমা করি,” “বন্ধু আবার পাশে।”

d পর্নোগ্রাফি দেখা এক গুরুতর পাপ। আর এর ফলে নির্দোষ সাথি অনেক আঘাত পায়। কিন্তু, বাইবেলের মান অনুযায়ী নির্দোষ সাথি এই কারণে বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারে না।