অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২১
‘এই জগতের প্রজ্ঞার’ দ্বারা প্রতারিত হবেন না
“এই জগতের যে জ্ঞান [“প্রজ্ঞা,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন], তাহা ঈশ্বরের নিকটে মূর্খতা।”—১ করি. ৩:১৯.
গান সংখ্যা ৩৭ শাস্ত্রলিপি—ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত
সারাংশ *
১. ঈশ্বরের বাক্য আমাদের কী প্রদান করে?
আমরা যেকোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি কারণ যিহোবার মতো আর কোনো শিক্ষক নেই। (ইয়োব ৩৬:২২) তাঁর বাক্য আমাদের প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু প্রদান করে, যাতে আমরা “পরিপক্ব” এবং “সমস্ত সৎকর্ম্মের জন্য সুসজ্জীভূত” হতে পারি। (২ তীম. ৩:১৭) আমরা যখন বাইবেলের শিক্ষা অনুযায়ী জীবনযাপন করি, তখন আমরা সেই ব্যক্তিদের চেয়ে বিজ্ঞ হয়ে উঠি, যারা ‘এই জগতের প্রজ্ঞা’ তুলে ধরে।—১ করি. ৩:১৯; গীত. ১১৯:৯৭-১০০.
২. এই প্রবন্ধে আমরা কী পরীক্ষা করে দেখব?
২ আমরা যেমন দেখব, জগতের প্রজ্ঞা প্রায়ই স্বার্থপর মাংসিক আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলে। তাই, জগতের লোকেদের মতো চিন্তা করা ও কাজ করাকে প্রতিরোধ করা আমাদের জন্য হয়তো কঠিন হতে পারে। এই কারণেই বাইবেল বলে: “দেখিও, দর্শনবিদ্যা ও অনর্থক প্রতারণা দ্বারা কেহ যেন তোমাদিগকে বন্দি করিয়া লইয়া না যায়; তাহা মনুষ্যদের পরম্পরাগত শিক্ষার অনুরূপ।” (কল. ২:৮) এই প্রবন্ধে আমরা পরীক্ষা করে দেখব যে, কীভাবে লোকেরা শয়তানের শেখানো দুটো মিথ্যাকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। প্রতিটা ক্ষেত্রে আমরা দেখব, কেন জগতের প্রজ্ঞা কাজে লাগানো আমাদের জন্য মূর্খতা এবং কীভাবে ঈশ্বরের বাক্যের প্রজ্ঞা জগতের দ্বারা প্রস্তাবিত যেকোনো কিছুর চেয়ে অনেক গুণ শ্রেষ্ঠ।
যৌন নৈতিকতা সম্বন্ধে লোকেদের দৃষ্টিভঙ্গি পালটে গিয়েছে
৩-৪. বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে নৈতিকতা সম্বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রে লোকেদের দৃষ্টিভঙ্গিতে কোন পরিবর্তনগুলো ঘটেছিল?
৩ বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে নৈতিকতা সম্বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রে লোকেদের দৃষ্টিভঙ্গিতে এক বিরাট পরিবর্তন লক্ষ করা গিয়েছিল। আগে লোকেরা মনে করত যে, কেবল বিবাহিত দম্পতিরাই
যৌন সম্পর্ক করতে পারে আর এই বিষয়ে সবার সামনে কথা বলা ঠিক নয়। কিন্তু, এই দৃষ্টিভঙ্গি ধীরে ধীরে পালটে যায় আর লোকেদের কাছে এগুলো এক স্বাভাবিক বিষয় হয়ে ওঠে।৪ বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশক এক বিরাট সামাজিক পরিবর্তনের জন্য পরিচিত হয়ে ওঠে। একজন অনুসন্ধানকারী বলেন, “সিনেমা, নাটক, গান, বই ও বিজ্ঞাপনগুলো যৌনতা সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে প্রচুর মাত্রায় দেখাতে শুরু করে।” সেই দশকে কোনো কোনো ব্যক্তি এমনভাবে নাচ করতে শুরু করে, যা লোকেদের যৌনতা সম্বন্ধে চিন্তা করতে পরিচালিত করে এবং পোশাক-আশাকের ধরণ ধীরে ধীরে অমার্জিত হতে থাকে। ঠিক যেমনটা শেষ কাল সম্বন্ধে বাইবেলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল, লোকেরা “বিলাসপ্রিয়” হবে।—২ তীম. ৩:৪.
৫. উনিশ-শো ষাটের দশক থেকে নৈতিক মান সম্বন্ধে লোকেদের দৃষ্টিভঙ্গি কীভাবে প্রভাবিত হয়েছে?
৫ উনিশ-শো ষাটের দশকে লোকেদের মধ্যে বিয়ে না করেই একসঙ্গে থাকা, সমকামিতা এবং বিবাহবিচ্ছেদ আরও বেশি স্বাভাবিক এক বিষয় হয়ে ওঠে। বিভিন্ন ধরনের আমোদপ্রমোদে যৌনতাকে আরও খোলাখুলিভাবে দেখাতে শুরু করে। এই সমস্ত কিছুর ফলে কী হয়েছে? একজন শিক্ষিত ব্যক্তি বলেছিলেন, লোকেরা যখন নৈতিক মান অনুসরণ করা বন্ধ করে দেয়, তখন সেটার পরিণতি অনেক খারাপ হয়। উদাহরণ স্বরূপ, পরিবারগুলো ভেঙে যায়, একক বাবা অথবা মায়েদের সন্তান মানুষ করতে হয়, লোকেদের আবেগগত কষ্ট ভোগ করতে হয় কিংবা লোকেরা পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। আরেকটা মন্দ পরিণতি হল অনেক লোক যৌনবাহিত রোগের দ্বারা যেমন এইডস-এর দ্বারা আক্রান্ত হয়। এই সমস্ত কিছু দেখায়, জগতের প্রজ্ঞা হল আসলে মূর্খতা।—২ পিতর ২:১৯.
৬. জগৎ যেভাবে যৌনতাকে দেখে থাকে, সেটা কীভাবে শয়তানের উদ্দেশ্যকে পরিপূর্ণ করে?
৬ জগৎ যেভাবে যৌনতাকে দেখে থাকে, সেটা শয়তানের উদ্দেশ্যকে পরিপূর্ণ করে। কোনো সন্দেহ নেই, লোকেরা যখন ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া যৌনতার উপহারের অপব্যবহার করে এবং বিয়ের উপহারের প্রতি সম্মান দেখায় না, তখন শয়তান খুবই খুশি হয়। (ইফি. ২:২) আর অনৈতিক লোকেরা ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া সন্তানের জন্ম দেওয়ার উপহারকে মূল্যবান হিসেবে দেখে না। এ ছাড়া, তারা হয়তো চিরকাল বেঁচে থাকতে পারবে না।—১ করি. ৬:৯, ১০.
যৌন নৈতিকতা সম্বন্ধে বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি
৭-৮. বাইবেল যৌনতা সম্বন্ধে কেমন দৃষ্টিভঙ্গি রাখার বিষয়ে শিক্ষা দেয় এবং কেন এটা জগতের দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে শ্রেষ্ঠ?
৭ যে-লোকেরা জগতের প্রজ্ঞাকে অনুসরণ করে, তারা বাইবেলের নৈতিক মানগুলো নিয়ে উপহাস করে আর দাবি করে যে, সেগুলো বাস্তবে মেনে চলা অসম্ভব। এই ধরনের লোকেরা হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারে, ‘কেন ঈশ্বর আমাদের যৌন আকাঙ্ক্ষা দিয়ে সৃষ্টি করার পর সেই আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কাজ করতে বারণ করেন?’ তারা এইরকম প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে কল. ৩:৫) এর পাশাপাশি যিহোবা বিয়ের ব্যবস্থা করেছেন, যাতে যৌন আকাঙ্ক্ষা উপযুক্তভাবে পূরণ করা যায়। (১ করি. ৭:৮, ৯) এই ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বামী ও স্ত্রী যৌনতাকে উপভোগ করতে পারে আর তা কোনোরকম অনুশোচনা ও দুশ্চিন্তা ছাড়াই, যেগুলো সাধারণত অনৈতিকভাবে জীবনযাপন করার ফলে দেখা যায়।
কারণ তারা ভুলভাবে চিন্তা করে যে, লোকেরা যদি কিছু করতে চায়, তা হলে তাদের সেটা করা উচিত। কিন্তু, বাইবেল আমাদের ভিন্ন কিছু বলে। বাইবেল বলে, আমাদের সমস্ত আকাঙ্ক্ষা যে পরিপূর্ণ করতেই হবে, এমন নয়। এর বিপরীতে, ভুল কাজ করার বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা আমাদের রয়েছে। (৮ জগতের প্রজ্ঞার বিপরীতে বাইবেল যৌনতা সম্বন্ধে এক সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি রাখার বিষয়ে শিক্ষা দেয়, যা কোনো ক্ষতি করে না। এটি স্বীকার করে, যৌনতা আনন্দের উৎস হতে পারে। (হিতো. ৫:১৮, ১৯) তবে বাইবেল এও বলে: “তোমাদের প্রত্যেক জন যেন, যাহারা ঈশ্বরকে জানে না, সেই পরজাতীয়দের ন্যায় কামাভিলাষে নয়, কিন্তু পবিত্রতায় ও সমাদরে নিজ নিজ পাত্র লাভ করিতে জানে।”—১ থিষল. ৪:৪, ৫.
৯. (ক) বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে ঈশ্বরের বাক্যের প্রজ্ঞাকে অনুসরণ করার জন্য কীভাবে যিহোবার লোকেদের উৎসাহিত করা হয়েছিল, যেটা জগতের প্রজ্ঞার চেয়ে অনেক গুণ শ্রেষ্ঠ? (খ) ১ যোহন ২:১৫, ১৬ পদে কোন বিজ্ঞ পরামর্শ রয়েছে? (গ) রোমীয় ১:২৪-২৭ পদে যেমন লেখা আছে, কোন অনৈতিক অভ্যাসগুলো আমাদের প্রতিরোধ করা উচিত?
৯ বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে, যিহোবার লোকেরা সেই ব্যক্তিদের দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা প্রতারিত হয়নি, যাদের বিবেক “অসাড় হইয়া” গিয়েছিল। (ইফি. ৪:১৯) তারা যিহোবার মানগুলো ভালোভাবে অনুসরণ করার চেষ্টা করেছিল। ১৯২৬ সালের ১৫ মে প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় বলা হয়েছিল, “একজন পুরুষ অথবা একজন মহিলাকে চিন্তাভাবনায় অথবা কাজে পবিত্র ও বিশুদ্ধ হতে হবে, বিশেষভাবে বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিদের সঙ্গে আচরণ করার ক্ষেত্রে।” সেই সময়ে বিশ্বব্যাপী ঘটে চলা বিষয়গুলো সত্ত্বেও যিহোবার লোকেরা ঈশ্বরের বাক্যের প্রজ্ঞা অনুযায়ী জীবনযাপন করেছিল, যেটা জগতের প্রজ্ঞার চেয়ে অনেক গুণ শ্রেষ্ঠ। (পড়ুন, ১ যোহন ২:১৫, ১৬.) ঈশ্বরের বাক্যের জন্য আমরা কতই-না কৃতজ্ঞ! এ ছাড়া, আমরা কৃতজ্ঞ যে, যিহোবা নৈতিকতার বিষয়ে জগতের প্রজ্ঞার দ্বারা প্রতারিত না হওয়ার জন্য উপযুক্ত সময়ে আধ্যাত্মিক খাদ্য প্রদান করেন। *—পড়ুন, রোমীয় ১:২৪-২৭.
নিজেকে ভালোবাসা সম্বন্ধে লোকেদের দৃষ্টিভঙ্গি পালটে গিয়েছে
১০-১১. শেষকালে কী ঘটবে বলে বাইবেল সতর্ক করেছে?
১০ বাইবেল সতর্ক করে, শেষ কালে লোকেরা “আত্মপ্রিয়” হয়ে উঠবে। (২ তীম. ৩:১, ২) তাই, আমরা যখন জগতের লোকেদের স্বার্থপর মনোভাব তুলে ধরতে দেখি, তখন অবাক হই না। একটা এনসাইক্লোপিডিয়া বলে, ১৯৭০-এর দশকে “এমন অনেক বই প্রকাশিত হয়েছিল, যেগুলোতে জীবনে সফল হওয়ার রহস্য সম্বন্ধে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।” কোনো কোনো বইয়ে বলা হয়েছিল যেন একজন ব্যক্তি নিজেকে পরিবর্তন না করে অথবা এমনটা মনে না করে যে, তার জীবনযাত্রায় কোনো ভুল রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, এই ধরনের একটা বইয়ে বলা হয়েছিল: “আপনি যদি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ও রোমাঞ্চকর ব্যক্তিকে ভালোবাসতে চান, তা হলে নিজেকে ভালোবাসুন।” সেই বইয়ে আরও বলা হয়েছিল, একজন ব্যক্তি কীভাবে আচরণ করবেন, সেই বিষয়ে তার নিজেরই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত এবং তিনি যেটাকে ভালো বলে মনে করেন আর সহজেই করতে পারেন, তার সেটাই করা উচিত।
১১ আপনি কি এই ধরনের কথা আগে কখনো শুনেছেন? শয়তান হবাকে এইরকমই কিছু করতে প্ররোচিত করেছিল। সে বলেছিল, হবা “ঈশ্বরের সদৃশ হইয়া সদসদ্-জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে।” (আদি. ৩:৫) আজ অনেকে নিজেদের এতটাই জ্ঞানী বলে মনে করে যে, তারা ভাবে তাদের কারো কাছ থেকেই ভালো-মন্দ সম্বন্ধে পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন নেই, এমনকী ঈশ্বরের কাছ থেকেও নয়। উদাহরণ স্বরূপ, এই মনোভাব বিশেষভাবে বিয়ে সম্বন্ধে লোকেদের দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রকাশ পেয়েছে।
১২. বিয়ে সম্বন্ধে জগৎ কোন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে?
১২ বাইবেল স্বামী ও স্ত্রীকে নির্দেশনা দেয় যেন তারা একে অপরের প্রতি এবং তাদের বিয়ের অঙ্গীকারের প্রতি সম্মান দেখান। এটি এই কথাগুলো বলার মাধ্যমে বিবাহসাথিদের আদি. ২:২৪) এর বিপরীতে, যারা জগতের প্রজ্ঞার দ্বারা প্রভাবিত হয়, তারা এক ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে। তারা বলে, প্রত্যেক সাথির নিজের প্রয়োজনের বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া উচিত। কোনো কোনো দেশে লোকেরা যখন বিয়ে করে, তখন তারা অন্যদের সামনে এই প্রতিজ্ঞা করে, ‘আমরা যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন এই বন্ধনে আবদ্ধ থাকব।’ অনেকে এই প্রতিজ্ঞার কথাগুলো পালটে দিয়েছে। তারা বলে থাকে, ‘আমরা যতদিন একে অপরকে ভালোবাসব, ততদিন এই বন্ধনে আবদ্ধ থাকব।’ যেহেতু লোকেরা বিয়েকে এক স্থায়ী বন্ধন হিসেবে দেখে না, তাই পরিবারগুলো ভেঙে যায় এবং অনেকে আবেগগতভাবে প্রচুর কষ্ট পায়। কোনো সন্দেহ নেই, বিয়ে সম্বন্ধে জগতের দৃষ্টিভঙ্গি আসলে মূর্খতা।
একসঙ্গে থাকার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়ার জন্য উৎসাহিত করে: “মনুষ্য আপন পিতা মাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, এবং তাহারা একাঙ্গ হইবে।” (১৩. একটা কোন কারণে যিহোবা গর্বিত ব্যক্তিদের ঘৃণা করেন?
১৩ বাইবেল বলে: “যে কেহ হৃদয়ে গর্ব্বিত, সে সদাপ্রভুর ঘৃণাস্পদ।” (হিতো. ১৬:৫) কেন যিহোবা গর্বিত ব্যক্তিদের ঘৃণা করেন? এর একটা কারণ হল যারা স্বার্থপরভাবে নিজেদের বেশি ভালোবাসতে শুরু করে এবং এই মনোভাবকে তুলে ধরে, তারা শয়তানের অহংকারী মনোভাবকে প্রতিফলিত করে। একটু কল্পনা করুন, শয়তান কতটা অহংকারী। সে ভেবেছিল, যিশু তার উপাসনা করবেন, যাঁকে ব্যবহার করে ঈশ্বর সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছিলেন! (মথি ৪:৮, ৯; কল. ১:১৫, ১৬) আত্মগৌরব লাভ করার বিষয়ে এই ধরনের স্বার্থপর মনোভাবের উদাহরণগুলো নিশ্চিত করে যে, জগতের প্রজ্ঞা ঈশ্বরের কাছে মূর্খতা।
আত্মগৌরব সম্বন্ধে বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি
১৪. কীভাবে রোমীয় ১২:৩ পদ আমাদের নিজেদের সম্বন্ধে এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে সাহায্য করে?
১৪ বাইবেল আমাদের নিজেদের সম্বন্ধে এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি বলে, আমাদের নিজেদের প্রতি কিছুটা পরিমাণ ভালোবাসা থাকা উপযুক্ত। যিশু বলেছিলেন: “তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিও,” যেটা ইঙ্গিত দেয়, আমাদের নিজেদের প্রয়োজনীয়তার উপর মনোযোগ দেওয়ার বিষয়ে ভারসাম্যপূর্ণ হওয়া উচিত। (মথি ১৯:১৯) তবে, বাইবেল আমাদের শিক্ষা দেয় যেন আমরা কখনো অন্যদের চেয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠ বলে মনে না করি। এর বিপরীতে, এটি বলে: “প্রতিযোগিতার কিম্বা অনর্থক দর্পের বশে কিছুই করিও না, বরং নম্রভাবে প্রত্যেক জন আপনা হইতে অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর।”—ফিলি. ২:৩; পড়ুন, রোমীয় ১২:৩.
১৫. কেন আপনি আত্মগৌরব সম্বন্ধে বাইবেলের পরামর্শকে ব্যাবহারিক বলে মনে করেন?
১৫ বর্তমানে, যাদের বিজ্ঞ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তারা বলে, আত্মগৌরব সম্বন্ধে বাইবেলের পরামর্শ অনুসরণ করা মূর্খতাপূর্ণ এক কাজ। তারা বলে, আপনি যদি অন্যদের নিজের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মনে করেন, তা হলে তারা আপনার সুযোগ নেবে। কিন্তু, শয়তানের জগতের দ্বারা তুলে ধরা এই মনোভাবের পরিণতি কী হয়েছে? আপনি কী লক্ষ করেছেন? স্বার্থপর লোকেরা কি সুখী? তারা কি এক সুখী পারিবারিক জীবন উপভোগ করে? তাদের কি ভালো বন্ধু আছে? ঈশ্বরের সঙ্গে কি তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব রয়েছে? আপনি যা লক্ষ করেছেন, সেই অনুযায়ী কোনটা উত্তম ফল নিয়ে আসে, জগতের প্রজ্ঞা অনুসরণ করা, না কি ঈশ্বরের বাক্যের প্রজ্ঞা অনুসরণ করা?
১৬-১৭. আমরা কীসের জন্য কৃতজ্ঞ হতে পারি এবং কেন?
১৬ যে-লোকেরা জগতের দৃষ্টিতে বিজ্ঞ ব্যক্তিদের পরামর্শ অনুসরণ করে, তাদের অবস্থা এমন একজন পর্যটকের মতো, যিনি পথ হারিয়ে আরেকজন সহপর্যটকের কাছে সাহায্য চাইছেন, যিনি নিজেও পথ হারিয়ে ফেলেছেন। যিশু তাঁর দিনে বিজ্ঞ লোক হিসেবে বিবেচিত ব্যক্তিদের উদ্দেশে বলেছিলেন: “উহারা অন্ধদের অন্ধ পথদর্শক; যদি অন্ধ অন্ধকে পথ দেখায়, উভয়েই গর্ত্তে পড়িবে।” (মথি ১৫:১৪) স্পষ্টতই, জগতের প্রজ্ঞা ঈশ্বরের কাছে মূর্খতা।
১৭ বাইবেলের বিজ্ঞ পরামর্শ সবসময় “শিক্ষার, অনুযোগের, সংশোধনের, ধার্ম্মিকতা সম্বন্ধীয় শাসনের নিমিত্ত উপকারী” বলে প্রমাণিত হয়েছে। (২ তীম. ৩:১৬) যিহোবা যে আমাদের তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে জগতের প্রজ্ঞা থেকে সুরক্ষিত রেখেছেন, সেটার জন্য আমরা কতই-না কৃতজ্ঞ! (ইফি. ৪:১৪) তাঁর জোগানো আধ্যাত্মিক খাদ্য আমাদের প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করে যেন আমরা তাঁর বাক্যে প্রাপ্ত মান অনুসরণ করতে পারি। বাইবেলে প্রাপ্ত নিখুঁত প্রজ্ঞার দ্বারা নির্দেশিত হওয়া কতই-না বিশেষ এক সুযোগ!
গান সংখ্যা ৩২ সুস্থির হও, নিশ্চল হও!
^ অনু. 5 এই প্রবন্ধ আমাদের আরও দৃঢ়প্রত্যয়ী হতে সাহায্য করবে যে, যিহোবা হলেন নির্দেশনার একমাত্র নির্ভরযোগ্য উৎস। এ ছাড়া, এটা এও দেখাবে, জগতের প্রজ্ঞা অনুসরণ করলে মারাত্মক পরিণতি ভোগ করতে হয় কিন্তু ঈশ্বরের বাক্যের প্রজ্ঞা কাজে লাগালে উত্তম ফলাফল লাভ করা যায়।
^ অনু. 50 ছবি সম্বন্ধে: ১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে ভাই ও বোন প্রচার কাজে অংশ নিচ্ছেন।
^ অনু. 52 ছবি সম্বন্ধে: ১৯৮০-র দশকে ভাই তার অসুস্থ স্ত্রীর যত্ন নিচ্ছেন আর তাদের মেয়ে তা দেখছে।
^ অনু. 54 ছবি সম্বন্ধে: বর্তমানে, সেই দম্পতি পুরোনো দিনের ছবিগুলো দেখে আনন্দের সঙ্গে সেই মুহূর্তগুলোর কথা স্মরণ করছেন, যেগুলো তারা যিহোবার সেবায় ব্যয় করেছিলেন। তাদের মেয়ে বড়ো হয়ে গিয়েছে এবং সে তার স্বামী ও সন্তানের সঙ্গে তাদের আনন্দের অংশী হচ্ছে।