অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২১
আপনি কি ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া উপহারগুলোর প্রতি উপলব্ধি দেখাচ্ছেন?
“সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, তুমিই বাহুল্যরূপে সাধন করিয়াছ আমাদের পক্ষে তোমার আশ্চর্য্য কার্য্য সকল ও তোমার সঙ্কল্প সকল।”—গীত. ৪০:৫.
গান সংখ্যা ১৫ সৃষ্টি যিহোবার গৌরব করে
সারাংশ *
১-২. গীতসংহিতা ৪০:৫ পদ অনুযায়ী যিহোবা আমাদের কোন কোন উপহার দিয়েছেন এবং কেন আমরা সেগুলো নিয়ে বিবেচনা করব?
যিহোবা হলেন একজন উদার ঈশ্বর। তিনি আমাদের যে-উপহারগুলো দিয়েছেন, সেগুলোর মধ্যে কয়েকটা নিয়ে চিন্তা করুন: সুন্দর ও অদ্বিতীয় গৃহ হিসেবে এই পৃথিবী দিয়েছেন, সুপরিকল্পিতভাবে সৃষ্ট মস্তিষ্ক দিয়েছেন এবং তাঁর মূল্যবান বাক্য অর্থাৎ বাইবেল দিয়েছেন। যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া এই তিনটে উপহারের কারণে আমাদের কাছে থাকার জায়গা রয়েছে, চিন্তা করার এবং অন্যদের সঙ্গে ভাববিনিময় করার ক্ষমতা রয়েছে আর সেইসঙ্গে আমাদের কাছে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর উত্তর রয়েছে।—পড়ুন, গীতসংহিতা ৪০:৫.
২ এই প্রবন্ধে আমরা এই তিনটে উপহার সম্বন্ধে সংক্ষেপে বিবেচনা করব। আমরা সেগুলো নিয়ে যতবেশি ধ্যান করব, সেগুলোর প্রতি আমাদের উপলব্ধিবোধ ততবেশি বৃদ্ধি পাবে এবং আমাদের প্রেমময় সৃষ্টিকর্তা যিহোবা ঈশ্বরকে খুশি করার আকাঙ্ক্ষা আরও বেশি দৃঢ় হবে। (প্রকা. ৪:১১) এ ছাড়া, আমরা সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে আরও কার্যকারীভাবে যুক্তি করতে পারব, যারা বিবর্তনবাদের মিথ্যা মতবাদের দ্বারা প্রতারিত হয়েছে।
আমাদের অদ্বিতীয় গ্রহ
৩. কেন পৃথিবী অদ্বিতীয়?
৩ ঈশ্বর আমাদের গৃহ অর্থাৎ পৃথিবীকে যেভাবে সংস্থাপন বা নির্মাণ করেছেন, সেটার মধ্যে আমরা তাঁর প্রজ্ঞার স্পষ্ট প্রমাণ দেখতে পাই। (রোমীয় ১:২০; ইব্রীয় ৩:৪) সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে এমন অনেক গ্রহ রয়েছে কিন্তু সেগুলোর মধ্যে পৃথিবী হল অদ্বিতীয় কারণ এতে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সমস্ত সঠিক বিষয় রয়েছে।
৪. কেন আমরা কোনো নৌকার চেয়ে পৃথিবীকে ভালো বলতে পারি?
৪ আমরা মহাকাশে থাকা পৃথিবীকে মহাসাগরে ভেসে থাকা একটা নৌকার সঙ্গে তুলনা করতে পারি। তবে, লোক ভরতি নৌকা ও আমাদের পৃথিবীর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, একটা নৌকায় থাকা লোকেদের
যদি তাদের নিজেদের জন্য অক্সিজেন, খাবার ও জলের ব্যবস্থা করতে হয় আর সেইসঙ্গে তারা যদি কোনো বর্জ্য পদার্থ নৌকার বাইরে ফেলতে না পারে, তা হলে তারা কত দিন বেঁচে থাকতে পারবে? নৌকায় থাকা লোকেরা শীঘ্রই মারা যাবে। এর বিপরীতে, পৃথিবী লক্ষ লক্ষ জীবিত প্রাণীকে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো প্রদান করতে পারে। এটা আমাদের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন, খাবার ও জল প্রদান করে আর তা পর্যাপ্ত পরিমাণে। এতে যে-বর্জ্য পদার্থগুলো তৈরি হয়, সেগুলো মহাকাশে ফেলতে হয় না; তারপরও পৃথিবী সুন্দর ও বসবাসযোগ্য অবস্থায় থাকে। কীভাবে তা সম্ভব হয়েছে? যিহোবা এই পৃথিবীকে এমন ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন যেন এর মধ্যে থাকা বর্জ্য পদার্থগুলো নিজে থেকেই পরিবর্তিত হয়ে ভালো কিছুতে পরিণত হয়, যাতে সেগুলো পুনরায় ব্যবহার করা যেতে পারে। আমরা সংক্ষেপে এমন দুটো বিষয় নিয়ে বিবেচনা করব, যেগুলো যিহোবার প্রজ্ঞার পরিচয় দেয়। যেমন, অক্সিজেনচক্র ও জলচক্র।৫. অক্সিজেনচক্র কী এবং আমরা কোন বিষয়ে একমত?
৫ অক্সিজেন হল এক জীবনরক্ষাকারী গ্যাস, যেটা মানুষ ও পশুদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন। আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী জীবিত প্রাণীরা এক বছরে দশ হাজার কোটি টন অক্সিজেন গ্রহণ করে। আর এই প্রাণীরাই কার্বন ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করে। কিন্তু তারপরও, বাতাসে সবসময় পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন থাকে। আর বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ কখনোই অতিরিক্ত মাত্রায় বৃদ্ধি পায় না। কীভাবে এটা সম্ভব হয়েছে? কারণ যিহোবা বিভিন্ন আকারের উদ্ভিদেরও সৃষ্টি করেছেন, যারা কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে। যেহেতু আমরা এই চক্রের দ্বারা উপকৃত হই, তাই আমরা প্রেরিত ১৭:২৪, ২৫ পদে লিখিত কথাগুলোর সঙ্গে একমত, যেটা বলে: “ঈশ্বর . . . সকলকে জীবন ও শ্বাস . . . দিতেছেন।”
৬. জলচক্র কী এবং এটা কী প্রমাণ করে? (এ ছাড়া, “ জলচক্র হল যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া এক উপহার” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)
৬ পৃথিবীতে জল তরল অবস্থায় পাওয়া যায় কারণ আমাদের গ্রহ সূর্য থেকে একেবারে সঠিক দূরত্বে অবস্থিত। এই দূরত্ব একটু কম হলে পৃথিবীর জল বাষ্প হয়ে উবে যেত এবং পৃথিবী গরম ও শুষ্ক হয়ে যেত আর এর ফলে এখানে জীবনের কোনো অস্তিত্ব থাকত না। আবার এই দূরত্ব একটু বেশি হয়ে গেলে পৃথিবীর সমস্ত জল জমে যেত এবং পৃথিবী একটা বড়ো বরফের গোলায় পরিণত হয়ে যেত। যিহোবা যেহেতু পৃথিবীকে একেবারে সঠিক অবস্থানে রেখেছেন, তাই জলচক্র সম্ভবপর হয়েছে আর এর ফলে এখানে জীবনের অস্তিত্ব রয়েছে। সূর্যের উত্তাপে সমুদ্র ও ভূপৃষ্ঠের জল গরম হয়। আর এর ফলে যে-বাষ্প উৎপন্ন হয়, তা মেঘ তৈরি করে। পৃথিবীর সমস্ত হ্রদে যত জল রয়েছে, প্রতি বছর তার চেয়েও বেশি জল সূর্যের উত্তাপের কারণে বাষ্প হয়ে উবে যায়। এই জল প্রায় দশ দিন ধরে বাতাসে থাকে আর তারপর তা বৃষ্টি ও তুষারের আকারে নীচে নেমে আসে। পরিশেষে এই জল প্রবাহিত হয়ে সমুদ্রে অথবা অন্য কোনো জলাশয়ে গিয়ে মেশে আর এভাবে জলচক্র চলতে থাকে। যিহোবা এই চক্র তৈরি করেছেন, যাতে পৃথিবীতে সবসময় জল থাকে। এটা প্রমাণ করে যে, যিহোবা হলেন বিজ্ঞ ও শক্তিশালী ঈশ্বর।—ইয়োব ৩৬:২৭, ২৮; উপ. ১:৭.
৭. কোন কোন উপায়ে আমরা গীতসংহিতা ১১৫:১৬ পদে বর্ণিত উপহারের জন্য উপলব্ধি দেখাতে পারি?
৭ কীভাবে আমরা আমাদের চমৎকার গ্রহ এবং এর মধ্যে থাকা সমস্ত উত্তম বিষয়ের প্রতি উপলব্ধিবোধ গড়ে তুলতে পারি? (পড়ুন, গীতসংহিতা ১১৫:১৬.) এর একটা উপায় হল যিহোবার সৃষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে ধ্যান করা। যিহোবা আমাদের যে-উত্তম বিষয়গুলো প্রদান করেন, সেগুলোর জন্য আমরা প্রতিদিন তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে অনুপ্রাণিত হই। আর আমরা যেখানে বাস করি, সেই জায়গা যতটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার মাধ্যমে পৃথিবীর জন্য উপলব্ধি দেখাই।
আমাদের অদ্বিতীয় মস্তিষ্ক
৮. কেন আমরা বলতে পারি, আমাদের মস্তিষ্ক সুপরিকল্পিতভাবে সৃষ্ট?
৮ মানুষের মস্তিষ্ক সুপরিকল্পিতভাবে সৃষ্ট। আপনি যখন আপনার মায়ের গর্ভে ছিলেন, তখন আপনার মস্তিষ্ক এটার নকশা অনুযায়ী গঠিত হতে শুরু করেছিল এবং মস্তিষ্কে প্রতি মিনিটে হাজার হাজার নতুন কোষ তৈরি হতে শুরু করেছিল! গবেষকদের আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির মস্তিষ্কে প্রায় ১০ হাজার কোটি স্নায়ুকোষ থাকে। এই কোষগুলো মিলে আমাদের মস্তিষ্ক গঠিত হয়, যেটার ওজন প্রায় ১.৫ কেজি (৩.৩ পাউন্ড)। মস্তিষ্কের কয়েকটা বিস্ময়কর ক্ষমতা নিয়ে বিবেচনা করুন।
৯. কী প্রমাণ করে যে, আমাদের কথা বলার ক্ষমতা হল যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া একটা উপহার?
যাত্রা. ৪:১১.
৯ আমাদের কথা বলার ক্ষমতা হল এক আশ্চর্যজনক বিষয়। আমরা যখন কথা বলি, তখন কী কী হয়, সেই বিষয়ে একটু চিন্তা করুন। প্রতি বার আপনি যখন কোনো শব্দ উচ্চারণ করেন, তখন আপনার মস্তিষ্ক আপনার জিহ্বা, গলা, ঠোঁট, চোয়াল ও বুকের প্রায় ১০০টা পেশির গতিবিধিকে নিয়ন্ত্রণ করে। স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করার জন্য এই পেশিগুলোকে একটা নির্দিষ্ট ক্রমে কাজ করতে হয়। কথা বলার ক্ষমতার বিষয়ে ২০১৯ সালে প্রকাশিত একটা প্রবন্ধ দেখিয়েছিল যে, নবজাত শিশুরা প্রতিটা শব্দ শনাক্ত করতে এবং সেই অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। এই প্রবন্ধ অনেক গবেষকের এই বিশ্বাসকে সমর্থন করে, আমরা ভাষা চেনা ও শেখার ক্ষমতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করি। নিশ্চিতভাবেই, আমাদের কথা বলার ক্ষমতা হল যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া একটা উপহার।—১০. কীভাবে আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া কথা বলার উপহারের প্রতি উপলব্ধি দেখাতে পারি?
১০ একটা যে-উপায়ে আমরা কথা বলার উপহারের প্রতি উপলব্ধি দেখাতে পারি, সেটা হল বিবর্তনবাদে বিশ্বাসী ব্যক্তিদের কাছে এই বিষয়টা ব্যাখ্যা করা যে, কেন আমরা এটা বিশ্বাস করি, ঈশ্বর সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন। (গীত. ৯:১; ১ পিতর ৩:১৫) যারা বিবর্তনবাদের মতবাদে বিশ্বাস করে, তারা হয়তো আমাদের এটা বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করতে পারে যে, পৃথিবী এবং এর মধ্যে থাকা জীবিত সমস্ত কিছু সুপরিকল্পিতভাবে সৃষ্ট হয়নি। বাইবেল এবং এই প্রবন্ধে আলোচিত কয়েকটা বিষয় নিয়ে আমরা এমন ব্যক্তিদের কাছে আমাদের স্বর্গীয় পিতার অস্তিত্ব নিয়ে যুক্তি করতে এবং ব্যাখ্যা করতে পারি, যারা এই বিষয়ে আমাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে শুনতে আগ্রহী। আমরা তাদের বলতে পারি, কেন আমরা নিশ্চিত যে, যিহোবা আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন।—গীত. ১০২:২৫; যিশা. ৪০:২৫, ২৬.
১১. একটা কোন কারণে আমরা আমাদের মস্তিষ্ককে বিস্ময়কর বলতে পারি?
১১ আমাদের স্মরণে রাখার ক্ষমতা হল এক বিস্ময়কর বিষয়। অতীতের একজন লেখকের আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী ২ কোটি বড়ো বড়ো বইয়ের তথ্য স্মরণে রাখার ক্ষমতা আমাদের মস্তিষ্কের রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে এমনটা মনে করা হয় যে, আমাদের মস্তিষ্কের সেটার চেয়েও বেশি ক্ষমতা রয়েছে। আমাদের এই স্মৃতিশক্তির কারণে কোন অদ্বিতীয় বিষয় সম্ভবপর হয়েছে?
১২. আমাদের মধ্যে যে নৈতিক শিক্ষা লাভ করার ক্ষমতা রয়েছে, সেটা কীভাবে পশুদের থেকে আমাদের পৃথক করে?
১২ পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর মধ্যে একমাত্র মানুষেরই অতীতের বিষয়গুলো স্মরণ করার এবং সেগুলো নিয়ে বিবেচনা করার মাধ্যমে নৈতিক শিক্ষা লাভ করার ক্ষমতা রয়েছে। এর ফলে, আমরা আরও ভালো মানগুলোকে গ্রহণ করতে পারি। এ ছাড়া, আমরা যেভাবে চিন্তা করি এবং জীবনযাপন করি, তাতে পরিবর্তন করতে পারি। (১ করি. ৬:৯-১১; কল. ৩:৯, ১০) সত্যি বলতে কী, আমরা সদসৎ অর্থাৎ সঠিক ও ভুলের মধ্যে থাকা পার্থক্য নির্ণয় করার জন্য আমাদের বিবেককে প্রশিক্ষিত করতে পারি। (ইব্রীয় ৫:১৪) আমরা প্রেম, সমবেদনা ও করুণা দেখাতে আর সেইসঙ্গে যিহোবার দেখানো ন্যায়বিচারকে অনুকরণ করতে শিখি।
১৩. গীতসংহিতা ৭৭:১১, ১২ পদ অনুযায়ী স্মৃতিশক্তির উপহারকে আমাদের কীভাবে ব্যবহার করা উচিত?
১৩ একটা যে-উপায়ে আমরা স্মৃতিশক্তির উপহারের প্রতি উপলব্ধি দেখাতে পারি, সেটা হল অতীতের সেইসমস্ত সময়ের কথা স্মরণ করার চেষ্টা করা, যখন যিহোবা আমাদের সাহায্য করেছিলেন এবং সান্ত্বনা প্রদান করেছিলেন। গীতসংহিতা ৭৭:১১, ১২; ৭৮:৪, ৭.) স্মৃতিশক্তির উপহারের প্রতি উপলব্ধি দেখানোর আরেকটা উপায় হল অন্যেরা আমাদের জন্য যে-ভালো কাজগুলো করেছে, সেগুলো স্মরণ করা এবং সেগুলোর জন্য কৃতজ্ঞ হওয়া। গবেষকরা দেখেছে, কৃতজ্ঞ ব্যক্তিরা খুব সম্ভবত সুখী হয়। এ ছাড়া, যিহোবাকে অনুকরণ করে কিছু বিষয় ভুলে যাওয়াও আমাদের জন্য ভালো হবে। উদাহরণ স্বরূপ, যিহোবার এক নিখুঁত স্মৃতিশক্তি রয়েছে কিন্তু আমরা যদি কোনো ভুল করার পর অনুতপ্ত হই, তা হলে তিনি আমাদের ভুল ক্ষমা করেন এবং সেই ভুলকে স্মরণে রাখেন না। (গীত. ২৫:৭; ১৩০:৩, ৪) আর তিনি আমাদের কাছ থেকে আশা করেন যেন আমরাও অন্যদের প্রতি এমনটা করি, যখন অন্যেরা আমাদের বিরুদ্ধে কোনো ভুল করার পর হৃদয় থেকে অনুতপ্ত হয়।—মথি ৬:১৪; লূক ১৭:৩, ৪.
এমনটা করার ফলে যিহোবার উপর আমাদের এই আস্থা বৃদ্ধি পাবে যে, তিনি ভবিষ্যতেও আমাদের সাহায্য করবেন। (পড়ুন,১৪. কীভাবে আমরা চমৎকার উপহার হিসেবে পাওয়া মস্তিষ্কের প্রতি উপলব্ধি দেখাতে পারি?
১৪ যিনি আমাদের এক চমৎকার উপহার হিসেবে মস্তিষ্ক দিয়েছেন, তাঁর গৌরব করার জন্য এটাকে ব্যবহার করার মাধ্যমে আমরা এই উপহারের প্রতি উপলব্ধি দেখাতে পারি। কোনো কোনো ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থপর উদ্দেশ্যকে চরিতার্থ করার জন্য তাদের মস্তিষ্ককে ব্যবহার করে থাকে। যেমন, তারা সঠিক ও ভুল সম্বন্ধে নিজেরাই মান নির্ধারণ করে থাকে। কিন্তু, যিহোবা যেহেতু আমাদের সৃষ্টি করেছেন, তাই এমনটা আশা করাই যুক্তিসংগত যে, তাঁর নির্ধারিত মানগুলো মানুষের তৈরি যেকোনো মানের চেয়ে উত্তম হবে। (রোমীয় ১২:১, ২) আমরা যখন তাঁর মান অনুযায়ী জীবনযাপন করা বেছে নিই, তখন আমাদের জীবন শান্তিপূর্ণ হয়ে ওঠে। (যিশা. ৪৮:১৭, ১৮) আর আমরা জীবনের এক প্রকৃত উদ্দেশ্য লাভ করি অর্থাৎ আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তা ও পিতার গৌরব করি এবং তাঁকে খুশি করি।—হিতো. ২৭:১১.
বাইবেল—এক অদ্বিতীয় উপহার
১৫. যিহোবার কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া বাইবেল কীভাবে মানবজাতির প্রতি তাঁর ভালোবাসাকে প্রকাশ করে?
১৫ বাইবেল হল ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া এক প্রেমময় উপহার। আমাদের স্বর্গস্থ পিতা মানুষদের এটি লেখার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন কারণ তিনি তাঁর পার্থিব সন্তানদের খুবই ভালোবাসেন। বাইবেলের মাধ্যমে যিহোবা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রদান করেন, যেমন: আমরা কোথা থেকে এসেছি? জীবনের উদ্দেশ্য কী? আর ভবিষ্যতে কী হতে চলেছে? যিহোবা চান যেন তাঁর সমস্ত আফ্রিকার বিভিন্ন ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করা” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।
সন্তান এই প্রশ্নগুলোর উত্তর লাভ করে আর তাই তিনি শত শত বছর ধরে অনেক ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করার জন্য লোকেদের পরিচালিত করেছেন। বর্তমানে, বাইবেল সম্পূর্ণ অথবা আংশিকভাবে ৩,০০০-রেরও বেশি ভাষায় পাওয়া যায়! বাইবেল হল ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি অনুবাদিত ও বিতরিত বই। লোকেরা যেখানেই থাকুক না কেন অথবা যে-ভাষাই কথা বলুক না কেন, বেশিরভাগ লোকের কাছে তাদের মাতৃভাষায় বাইবেলের বার্তা সম্বন্ধে শেখার সুযোগ রয়েছে।—“১৬. মথি ২৮:১৯, ২০ পদ অনুযায়ী কীভাবে আমরা বাইবেলের প্রতি আমাদের উপলব্ধিবোধের প্রমাণ দিই?
১৬ আমরা প্রতিদিন বাইবেল পড়ার, এটির শিক্ষাগুলো নিয়ে ধ্যান করার এবং আমরা যা শিখি, তা কাজে লাগানোর জন্য যথাসাধ্য করার মাধ্যমে প্রমাণ দিই যে, এটির প্রতি আমাদের উপলব্ধিবোধ রয়েছে। এর পাশাপাশি, আমরা যতবেশি লোককে সম্ভব বাইবেলের বার্তা জানানোর মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।—গীত. ১:১-৩; মথি ২৪:১৪; পড়ুন, মথি ২৮:১৯, ২০.
১৭. আমরা এই প্রবন্ধে কোন ধরনের উপহারগুলো নিয়ে বিবেচনা করেছি এবং পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?
১৭ এখনও পর্যন্ত আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া এই উপহারগুলো নিয়ে বিবেচনা করেছি যেমন, আমাদের গৃহ অর্থাৎ পৃথিবী, সুপরিকল্পিতভাবে সৃষ্ট আমাদের মস্তিষ্ক এবং ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য বাইবেল। কিন্তু, যিহোবা আমাদের এমন উপহার বা ধনগুলোও দিয়েছেন, যেগুলো অদৃশ্য। পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা সেই অদৃশ্য ধনগুলো নিয়ে আলোচনা করব।
গান সংখ্যা ২ ধন্যবাদ, যিহোবা
^ অনু. 5 এই প্রবন্ধ আমাদের যিহোবার প্রতি এবং তাঁর কাছ থেকে পাওয়া তিনটে উপহারের প্রতি উপলব্ধিবোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া, এই প্রবন্ধ আমাদের সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে যুক্তি করতে সাহায্য করবে, যারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ করে থাকে।
^ অনু. 64 ছবি সম্বন্ধে: একজন বোন অভিবাসীদের ঈশ্বরের বাক্যের সত্য শেখানোর জন্য একটা বিদেশি ভাষা শিখছেন।