যাদের সমাদর করা উচিত, তাদের সমাদর করুন
“যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, তাঁহার প্রতি ও মেষশাবকের প্রতি ধন্যবাদ ও সমাদর ও গৌরব ও কর্ত্তৃত্ব যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে বর্ত্তুক।”—প্রকা. ৫:১৩.
১. কেন কেউ কেউ হয়তো সমাদর পাওয়ার যোগ্য এবং এই প্রবন্ধে আমরা কী শিখব?
কীভাবে আমরা লোকেদের সমাদর করি? তাদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিয়ে এবং তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। সাধারণত, আমরা সেই ব্যক্তিদের সমাদর করি, যারা সমাদর পাওয়ার মতো কিছু করে থাকে কিংবা যাদের এক গুরুত্বপূর্ণ কার্যভার বা পদ রয়েছে। এই প্রবন্ধে আমরা শিখব যে, কাদের সমাদর করা উচিত এবং কেন।
২, ৩. (ক) কেন বিশেষভাবে যিহোবা আমাদের সমাদর পাওয়ার যোগ্য? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।) (খ) প্রকাশিত বাক্য ৫:১৩ পদে উল্লেখিত মেষশাবক কে এবং কেন আমাদের তাঁকে সমাদর করা উচিত?
২ প্রকাশিত বাক্য ৫:১৩ পদ বলে, “যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন,” তিনি এবং ‘মেষশাবক’ সমাদর পাওয়ার যোগ্য। “সিংহাসনে বসিয়া” থাকা ব্যক্তি যিহোবাকে নির্দেশ করে। প্রকাশিত বাক্য ৪ অধ্যায়ে স্বর্গের আত্মিক প্রাণীরা একটা কারণ তুলে ধরে, যেজন্য যিহোবা “যিনি যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে জীবন্ত,” আমাদের সমাদর পাওয়ার যোগ্য। তারা বলে: “হে আমাদের প্রভু ও আমাদের ঈশ্বর, তুমিই প্রতাপ ও সমাদর ও পরাক্রম গ্রহণের যোগ্য; কেননা তুমিই সকলের সৃষ্টি করিয়াছ, এবং তোমার ইচ্ছাহেতু সকলই অস্তিত্বপ্রাপ্ত ও সৃষ্ট হইয়াছে।”—প্রকা. ৪:৯-১১.
৩ প্রকাশিত বাক্য ৫:১৩ পদে উল্লেখিত ‘মেষশাবক’ হলেন যিশু খ্রিস্ট। কীভাবে আমরা তা বলতে পারি? যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তাঁর সম্বন্ধে এভাবে বলা হয়েছিল, “ঈশ্বরের মেষশাবক, যিনি জগতের পাপভার লইয়া যান।” (যোহন ১:২৯) অন্য কোনো রাজা কি কখনো তার প্রজাদের জন্য মুক্তির মূল্য হিসেবে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করেছেন? এটা নিশ্চিতভাবেই তাঁকে সমাদর করার এক উত্তম কারণ। যিশু সমাদর পাওয়ার যোগ্য কারণ তিনি “রাজত্বকারীদের রাজা ও প্রভুত্বকারীদের প্রভু।” (১ তীম. ৬:১৪-১৬) আপনার অনুভূতিও হয়তো স্বর্গের সেই আত্মিক প্রাণীদের মতো, যারা গেয়েছিল: “মেষশাবক, যিনি হত হইয়াছিলেন, তিনিই পরাক্রম ও ধন ও জ্ঞান ও শক্তি ও সমাদর ও গৌরব ও ধন্যবাদ, এই সকল গ্রহণ করিবার যোগ্য।”—প্রকা. ৫:১২.
৪. যিহোবা এবং খ্রিস্টকে সমাদর করা কেন আমাদের জন্য বিজ্ঞতার কাজ?
৪ যোহন ৫:২২, ২৩ পদ বলে, যিহোবা খ্রিস্টকে সমস্ত মানুষের উপর বিচারকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। এটাই হল প্রধান কারণ, যেজন্য যিশুকে আমাদের সমাদর করা উচিত। আর আমরা যখন তা করি, তখন আমরা যিহোবাকেও সমাদর করি। আমরা যখন যিশুকে এবং তাঁর পিতাকে সমাদর ও সম্মান করা বেছে নিই, তখন আমরা অনন্তজীবন পাওয়ার সুযোগ লাভ করি।—পড়ুন, গীতসংহিতা ২:১১, ১২. a
৫. কেন সমস্ত লোক সমাদর ও সম্মান পাওয়ার যোগ্য?
৫ মানুষকে ‘ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তিতে’ সৃষ্টি করা হয়েছে। (আদি. ১:২৭) এর অর্থ হল, বেশিরভাগ মানুষেরই ঈশ্বরের মতো একই গুণাবলি প্রদর্শন করার ক্ষমতা রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, মানুষ প্রেম, দয়া ও সমবেদনার মতো গুণ প্রদর্শন করতে পারে। এ ছাড়া, মানুষকে এক সংবেদ বা বিবেক দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে, যেটার মাধ্যমে তারা কোনটা সঠিক অথবা ভুল, সৎ অথবা অসৎ, উপযুক্ত অথবা অনুপযুক্ত, তা বুঝতে পারে। (রোমীয় ২:১৪, ১৫) বেশিরভাগ লোকই পরিষ্কার ও সুন্দর বিষয় পছন্দ করে এবং অন্যদের সঙ্গে শান্তিতে বাস করতে চায়। এটা অবাক হওয়ার মতো কোনো বিষয় নয় কারণ যিহোবা হলেন শৃঙ্খলার ও শান্তির ঈশ্বর। স্পষ্টতই, সমস্ত মানুষকেই এমন ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে, যাতে তারা কোনো-না-কোনো উপায়ে যিহোবাকে অনুকরণ করতে পারে। এই কারণে তারা আমাদের সমাদর ও সম্মান পাওয়ার যোগ্য।—গীত. ৮:৫.
সঠিক উপায়ে সমাদর করুন
৬, ৭. অন্যদের সমাদর করার বিষয়ে যিহোবার সাক্ষিরা কীভাবে অনেকের থেকে আলাদা?
৬ আমরা জানি, সমস্ত মানুষকে আমাদের সমাদর করা উচিত কিন্তু কীভাবে তাদের সমাদর করব এবং কতটা সমাদর করব, সেটা নির্ণয় করা কঠিন হতে পারে। এর কারণ হল, অধিকাংশ অসিদ্ধ মানুষের উপরই শয়তানের জগতের মন্দ মনোভাবের জোরালো প্রভাব রয়েছে। অনেকে বিভিন্ন নারী ও পুরুষকে তাদের দেবতা বলে মনে করে। কীভাবে? যিহোবা যেমনটা চান, সেই অনুযায়ী সমাদর করার ও সম্মান দেখানোর পরিবর্তে, লোকেরা অন্য মানুষদের অতিরিক্ত সমাদর করে থাকে আর এভাবে তাদের দেবতা হিসেবে তুলে ধরে। তারা হয়তো রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতা, ক্রীড়াবিদ, সিনেমার তারকা এবং অন্যান্য জনপ্রিয় ব্যক্তিদের পোশাক-আশাক ও আচার-আচরণ অনুকরণ করে।
৭ সত্য খ্রিস্টানরা জানে, মানুষকে এতটা সমাদর করা সঠিক নয়। সর্বকালের সমস্ত মানুষের মধ্যে একমাত্র যিশুই আমাদের অনুকরণের জন্য এক নিখুঁত উদাহরণ স্থাপন করেছেন। (১ পিতর ২:২১) আমাদের মনে রাখতে হবে, “সকলেই পাপ করিয়াছে এবং ঈশ্বরের গৌরব-বিহীন হইয়াছে।” (রোমীয় ৩:২৩) কোনো মানুষই উপাসনা পাওয়ার যোগ্য নয়। আমরা যখন মানুষকে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত সমাদর করি, তখন আমরা যিহোবাকে অসন্তুষ্ট করি।
৮, ৯. (ক) যিহোবার সাক্ষিরা সরকারি কর্মকর্তাদের কীভাবে দেখে থাকে? (খ) কখন আমরা সরকারি কর্মকর্তাদের বাধ্য হব না?
৮ কেউ কেউ তাদের পদমর্যাদার জন্য আমাদের কাছ থেকে সমাদর পাওয়ার যোগ্য। উদাহরণ স্বরূপ, সরকারি কর্মকর্তাদের সম্বন্ধে এবং তারা আমাদের জন্য যা করে থাকে, সেই সম্বন্ধে চিন্তা করুন। তারা এলাকার লোকেদের সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে এবং নাগরিকদের প্রয়োজনগুলোর যত্ন নিয়ে থাকে। তাদের কাজের মাধ্যমে আমরা প্রচুর উপকার লাভ করি। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন, এই সরকারি কর্তৃপক্ষদের আমাদের ‘প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষ’ হিসেবে দেখা উচিত। তিনি এও বলেছিলেন, আমাদের তাদের আইন মেনে চলা উচিত: “যাহার যাহা প্রাপ্য, তাহাকে তাহা দেও। যাঁহাকে কর দিতে হয়, কর দেও” এবং “যাঁহাকে সমাদর করিতে হয়, সমাদর কর।”—রোমীয় ১৩:১, ৭.
৯ যিহোবার সাক্ষি হিসেবে আমরা সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য যথাসাধ্য করে থাকি। অবশ্য, প্রত্যেক দেশে ভিন্ন ভিন্ন রীতিনীতি রয়েছে, তাই একেক জায়গার সরকারি কর্মকর্তা হয়তো আমাদের কাছে একেকরকম বিষয় আশা করে। তা সত্ত্বেও, তাদের কাজের ব্যাপারে আমরা সহযোগিতা করি। কিন্তু, তারা যদি আমাদের এমন কিছু করতে বলে, যেটার জন্য আমাদের যিহোবার অবাধ্য হতে হবে, তা হলে আমরা তা করতে পারি না। সেই ক্ষেত্রগুলোতে আমাদের মানুষের নয় বরং যিহোবার বাধ্য হতে হবে এবং তাঁকে সমাদর করতে হবে।—পড়ুন, ১ পিতর ২:১৩-১৭.
১০. কীভাবে যিহোবার অতীতের দাসেরা বর্তমানে আমাদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন?
১০ আমরা যিহোবার অতীতের সেই দাসদের কাছ থেকে শিখতে পারি, যারা সরকার এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সমাদর করেছিলেন। এক্ষেত্রে, যোষেফ ও মরিয়ম হলেন এক উত্তম উদাহরণ। একবার রোমীয়রা যখন তাদের সাম্রাজ্যে লোকগণনা করতে চেয়েছিল, তখন যোষেফ ও মরিয়ম তাদের নাম লেখানোর জন্য অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে বৈৎলেহমে গিয়েছিলেন, যদিও সেই সময় মরিয়মের সন্তান প্রসবের সময় ঘনিয়ে এসেছিল। (লূক ২:১-৫) আরেকজন উদাহরণ হলেন প্রেরিত পৌল, যিনি মানবশাসকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে যখন মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছিল, তখন তিনি রাজা আগ্রিপ্প এবং রোমীয় প্রদেশ যিহূদিয়ার দেশাধ্যক্ষ ফীষ্টের সামনে সম্মানের সঙ্গে নিজের পক্ষসমর্থন করেছিলেন।—প্রেরিত ২৫:১-১২; ২৬:১-৩.
১১, ১২. (ক) কেন আমরা ধর্মীয় নেতাদের বিশেষ সমাদর করি না? (খ) অস্ট্রিয়ার একজন সাক্ষি যখন একজন রাজনীতিবিদের প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন, তখন এর ফল কী হয়েছিল?
১১ ধর্মীয় নেতাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? তাদের কি আমাদের বিশেষ সমাদর করতে হবে? অন্য যেকোনো লোককে আমরা যেভাবে সমাদর করি, তাদেরও সেভাবে সমাদর করতে হবে। কিন্তু, তাদের বিশেষ সমাদর করা সঠিক হবে না, এমনকী তারা যদি তা আশাও করে থাকে। কেন? কারণ মিথ্যা ধর্ম ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল এবং ঈশ্বর সম্বন্ধে সত্য শিক্ষা দেয় না। যিশু মিথ্যা ধর্মের শিক্ষকদের নিন্দা করেছিলেন এবং তাদের কপটী ও মন্দ নেতা বলে উল্লেখ করেছিলেন। (মথি ২৩:২৩, ২৪) অন্যদিকে, সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি বিশেষ সম্মান দেখানো এবং তাদের সমাদর করা ভুল হবে না। এইরকম আচরণের ফলে তারা কখনো কখনো আমাদের সাহায্য করেছে।
১২ এইরকম একজন কর্মকর্তা ছিলেন অস্ট্রিয়ার একজন রাজনীতিবিদ ড. হেনরিখ গ্লিসনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাতসিরা তাকে গ্রেপ্তার করে। তাকে ট্রেনে করে একটা কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার সময়, লেওপল্ট ইঙ্গলাইটনা নামে অস্ট্রিয়ার একজন উদ্যোগী সাক্ষির সঙ্গে তার দেখা হয়। ভাই ইঙ্গলাইটনা ড. গ্লিসনাকে সম্মানের সঙ্গে তার বিশ্বাস সম্বন্ধে জানান আর তিনি সেটা মন দিয়ে শোনেন। যখন যুদ্ধ শেষ হয়, তখন ড. গ্লিসনা অস্ট্রিয়ার সাক্ষিদের সাহায্য করার জন্য বেশ কয়েক বার নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করেন। খ্রিস্টানরা সরকারি কর্মকর্তাদের সম্মান দেখানোর কারণে যে-উত্তম ফল পাওয়া গিয়েছে, সেই সম্বন্ধে আপনি হয়তো আরও অন্যান্য উদাহরণ জানেন।
অন্যদের সমাদর করুন
১৩. বিশেষভাবে কারা আমাদের সমাদর ও সম্মান পাওয়ার যোগ্য এবং কেন?
১৩ আমাদের ভাই ও বোনেরা আমাদের সমাদর ও সম্মান পাওয়ার যোগ্য। এটা বিশেষভাবে সেই ভাইদের ক্ষেত্রে সত্য, যারা নেতৃত্ব নিয়ে থাকেন, যেমন প্রাচীন, সীমা অধ্যক্ষ, শাখা কমিটির সদস্য এবং পরিচালকগোষ্ঠীর সদস্য। (পড়ুন, ১ তীমথিয় ৫:১৭.) তারা প্রত্যেকেই ঈশ্বরের লোকেদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর যত্ন নিয়ে থাকেন এবং বাইবেল এই দাসদের ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’ বা দানরূপ মানুষ হিসেবে নির্দেশ করে। (ইফি. ৪:৮) তাই, উপযুক্তভাবেই আমাদের তাদের সমাদর করতে এবং তাদের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে, তা তাদের জাতীয়তা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, সামাজিক পদমর্যাদা অথবা আর্থিক অবস্থা যা-ই হোক না কেন। প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা আমাদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছে। তারা নেতৃত্বদানকারী পুরুষদের সমাদর করেছিল আর বর্তমানে আমরাও তা-ই করে থাকি। আমরা যখন এই পুরুষদের সঙ্গে থাকি, তখন আমরা তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করি না, যেন তারা স্বর্গদূত। কিন্তু, আমরা তাদের কঠোর পরিশ্রম ও নম্রতার জন্য তাদের সম্মান ও সমাদর করে থাকি।—পড়ুন, ২ করিন্থীয় ১:২৪; প্রকাশিত বাক্য ১৯:১০.
১৪, ১৫. কীভাবে খ্রিস্টান প্রাচীনরা অনেক ধর্মীয় নেতাদের থেকে আলাদা?
১৪ এই প্রাচীনরা হলেন নম্র মেষপালকদের মতো। তারা জনপ্রিয় ব্যক্তিদের মতো আচরণ আশা করেন না। তাই, তারা বর্তমান দিনের অনেক ধর্মীয় নেতা এবং যিশুর দিনের ধর্মীয় নেতাদের থেকে একেবারে আলাদা। যিশু সেই নেতাদের সম্বন্ধে বলেছিলেন: “[তাহারা] ভোজে প্রধান স্থান, সমাজগৃহে প্রধান প্রধান আসন, হাটে বাজারে মঙ্গলবাদ, . . . এ সকল ভালবাসে।”—মথি ২৩:৬, ৭.
১৫ খ্রিস্টান প্রাচীনরা যিশুর এই কথাগুলোর বাধ্য হন: “তোমরা ‘রব্বি’ বলিয়া সম্ভাষিত হইও না, কারণ তোমাদের গুরু এক জন, এবং তোমরা সকলে ভ্রাতা। আর পৃথিবীতে কাহাকেও ‘পিতা’ বলিয়া সম্বোধন করিও না, কারণ তোমাদের পিতা এক জন, তিনি সেই স্বর্গীয়। তোমরা ‘আচার্য্য’ বলিয়া সম্ভাষিত হইও না, কারণ তোমাদের আচার্য্য এক জন, তিনি খ্রীষ্ট। কিন্তু তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ, সে তোমাদের পরিচারক হইবে। আর যে কেহ আপনাকে উচ্চ করে, তাহাকে নত করা যাইবে; আর যে কেহ আপনাকে নত করে, তাহাকে উচ্চ করা যাইবে।” (মথি ২৩:৮-১২) পৃথিবীব্যাপী মণ্ডলীর প্রাচীনরা যখন নম্রতা দেখান এবং যিশুর কথাগুলোর বাধ্য হন, তখন তারা ভাই ও বোনদের কাছ থেকে প্রেম, সম্মান ও সমাদর লাভ করেন।
১৬. সমাদর করার বিষয়ে কেন আমাদের ক্রমাগত প্রচেষ্টা করা উচিত?
১৬ অন্যদের কীভাবে সমাদর করতে হয়, সেই বিষয়টা শেখার জন্য আমাদের হয়তো সময়ের প্রয়োজন। প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের বেলায়ও এটা সত্য ছিল। (প্রেরিত ১০:২২-২৬; ৩ যোহন ৯, ১০) কিন্তু, শেখার ব্যাপারে আমাদের প্রচেষ্টা সার্থক হবে। আমরা যখন যিহোবা যেভাবে চান, সেভাবে অন্যদের সমাদর করব, তখন আমরা প্রচুর উপকার লাভ করব।
সমাদর করার বিভিন্ন উপকার
১৭. যারা কর্তৃত্বে রয়েছে, তাদের সমাদর করার কিছু উপকার কী?
১৭ আমাদের সমাজে যারা কর্তৃত্বে রয়েছে, তাদের যখন আমরা সমাদর ও সম্মান করি, তখন তারা সহজেই আমাদের প্রচার করার অধিকারের বিষয়টাকে সমর্থন করে থাকে। তারা হয়তো এমনকী আমাদের প্রচার কাজের প্রতি এক ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলে। বেশ কয়েক বছর আগে জার্মানিতে ঠিক এইরকম একটা ঘটনা ঘটে, যখন বির্গিট নামে একজন অগ্রগামী বোন তার মেয়ের প্রাথমিক স্কুলের রেজাল্ট বের হওয়ার সময় তার স্কুলে যান। শিক্ষিকারা বির্গিটকে বলেন, ক্লাসের মধ্যে সাক্ষি ছেলে-মেয়ে থাকা সত্যিই আনন্দের বিষয়। কারণ তারা মনে করে, সাক্ষি ছেলে-মেয়েরা স্কুলের পরিবেশকে আরও উত্তম করে তোলায় অবদান রাখে। বোন বির্গিট তাদের বলেন, “আমরা আমাদের সন্তানদের ঈশ্বরের মান অনুযায়ী আচরণ করার জন্য শিক্ষা দিয়ে থাকি আর এর অন্তর্ভুক্ত হল, শিক্ষকদের সম্মান ও সমাদর করা।” একজন শিক্ষিকা বলেন যে, সমস্ত ছেলে-মেয়ে যদি সাক্ষিদের মতো হতো, তা হলে শিক্ষা দেওয়ার বিষয়টা আরও সহজ হয়ে উঠত। সাক্ষি ছেলে-মেয়েদের সম্বন্ধে তাদের এমন ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে যে, কয়েক সপ্তাহ পর একজন শিক্ষিকা একটা সম্মেলনে যোগ দেন।
১৮, ১৯. প্রাচীনদের সমাদর করার সময় কোন বিষয়টা আমাদের মনে রাখা উচিত?
১৮ ঈশ্বরের বাক্যে পাওয়া নীতিগুলো আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, কীভাবে আমরা মণ্ডলীর প্রাচীনদের সমাদর করতে পারি। (পড়ুন, ইব্রীয় ১৩:৭, ১৭.) তাদের কঠোর পরিশ্রমের জন্য আমরা তাদের প্রশংসা করতে পারি এবং আমাদের তা করা উচিত। আমরা যখন তাদের দেওয়া নির্দেশনা পালন করি, তখন প্রাচীনদের জন্য আনন্দের সঙ্গে সেবা করা সহজ হয়ে ওঠে। এ ছাড়া বাইবেল বলে যে, আমাদের তাদের বিশ্বাসের অনুকারী হওয়া উচিত। কিন্তু, এর অর্থ এই নয় যে, আমরা কোনো ‘উল্লেখযোগ্য’ প্রাচীনের পোশাক-আশাক এবং কথা বলার ও শিক্ষা দেওয়ার ধরণ একেবারে হুবহু অনুকরণ করব। আমরা যদি এমনটা করি, তা হলে মনে হবে, আমরা খ্রিস্টকে নয় বরং মানুষকে অনুসরণ করছি। আমাদের কখনোই ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, প্রাচীনরাও আমাদের মতো অসিদ্ধ।
১৯ আমরা যখন প্রাচীনদের সমাদর ও সম্মান করি এবং তাদের সঙ্গে জনপ্রিয় ব্যক্তির মতো আচরণ করা এড়িয়ে চলি, তখন এটা তাদের সাহায্য করে। কীভাবে? তাদের জন্য নম্রতা বজায় রাখা এবং এইরকম চিন্তাধারা এড়িয়ে চলা আরও সহজ হবে যে, তারা অন্যদের চেয়ে উত্তম অথবা তাদের কাজ সবসময় সঠিক।
২০. আমরা যখন অন্যদের সমাদর করি, তখন আমরা কোন কোন উপকার লাভ করি?
২০ অন্যদের সমাদর করা আমাদের স্বার্থপর মনোভাব এড়িয়ে চলতে এবং আমাদের প্রতি যখন বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়, তখন নম্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া, এটা আমাদের জন্য এক সুরক্ষা হিসেবেও কাজ করে। কীভাবে? যে-ব্যক্তিদের আমরা সম্মান করি, তাদের মধ্যে কেউ যদি এমন কোনো কাজ করে, যা দেখে আমরা হতাশ হই, তা হলে এটা আমাদের বিঘ্ন না পেতে সাহায্য করে। আরেকটা উপকার হল, এটা আমাদের যিহোবার সংগঠনের সঙ্গে একতাবদ্ধ থাকতে সাহায্য করে। যিহোবার সংগঠন কোনো মানুষকে অতিরিক্ত সমাদর করে না, তা তিনি সাক্ষি বা ন-সাক্ষি যে-ই হোন না কেন।
২১. অন্যদের সমাদর করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকার কী?
২১ অন্যদের সমাদর করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকার হল, এর মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরকে খুশি করি। আমরা তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করি এবং তাঁর প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখি। এর ফলে, যিহোবা শয়তানকে উত্তর দিতে পারেন, যে বলেছিল, কোনো মানুষই বিশ্বস্ত থাকতে পারবে না। (হিতো. ২৭:১১) এই জগতের বেশিরভাগ লোকই জানে না যে, কীভাবে অন্যদের সঠিক উপায়ে সমাদর করতে হয়। কিন্তু, আমরা খুবই কৃতজ্ঞ যে, সেটা জানার সুযোগ যিহোবা আমাদের দিয়েছেন!
a গীতসংহিতা ২:১১, ১২ (বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন): “ভক্তির সংগে তোমরা সদাপ্রভুর সেবা কর, ভয়-ভরা অন্তরে আনন্দ কর। তোমরা সেই পুত্রকে সম্মান দেখিয়ে চুম্বন কর, যাতে তিনি তোমাদের উপর অসন্তুষ্ট না হন আর চলার পথেই তোমরা ধ্বংস হয়ে না যাও; কারণ চোখের নিমেষেই তাঁর ক্রোধ জ্বলে উঠতে পারে। ধন্য তারা, যারা তাঁর মধ্যে আশ্রয় নেয়।”