সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আত্মা আমাদের আত্মার সঙ্গে সাক্ষ্য দিচ্ছে

আত্মা আমাদের আত্মার সঙ্গে সাক্ষ্য দিচ্ছে

“আত্মা আপনিও আমাদের আত্মার সহিত সাক্ষ্য দিতেছেন যে, আমরা ঈশ্বরের সন্তান।”রোমীয় ৮:১৬.

গান সংখ্যা: ৫, ১৪

১-৩. কোন ঘটনাগুলো পঞ্চাশত্তমীর দিনকে এক বিশেষ দিন করে তুলেছিল আর কীভাবে এই ঘটনাগুলো শাস্ত্রের ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ করেছিল? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

সময়টা ছিল রবিবার সকাল। যিরূশালেমের লোকেদের জন্য এটা ছিল এক বিশেষ ও রোমাঞ্চকর দিন। লোকেরা পঞ্চাশত্তমীর দিন উদ্‌যাপন করছিল, যেটা ছিল গম কাটার শুরুতে এক পবিত্র উৎসব। মন্দিরে সেই দিন সকালে মহাযাজক নিয়মিত বলি উৎসর্গ করেছিলেন। এরপর, প্রায় নয়টার দিকে তিনি গমের অগ্রিমাংশ বা প্রথম ফল থেকে প্রস্তুতকৃত তাড়িযুক্ত দুটো রুটি উৎসর্গ করেছিলেন। যিহোবার উদ্দেশে উপস্থাপন করার জন্য মহাযাজক এগুলো একদিক থেকে অন্যদিকে দুলিয়েছিলেন। এসব ঘটনা ৩৩ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিন ঘটেছিল।—লেবীয়. ২৩:১৫-২০.

শত শত বছর ধরে, মহাযাজক প্রতি বছর এই দোলনীয় উপহার উৎসর্গ করেছিলেন। এটা এমন একটা ঘটনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল, যে-ঘটনাটা ৩৩ খ্রিস্টাব্দে পঞ্চাশত্তমীর দিন ঘটেছিল। আর এই ঘটনাটা সেই সময়ে ঘটেছিল, যখন যিশুর ১২০ জন শিষ্য যিরূশালেমের একটা উপরের কুঠরিতে একসঙ্গে প্রার্থনা করছিলেন। (প্রেরিত ১:১৩-১৫) আট-শো বছরের বেশি সময় আগে ভাববাদী যোয়েল এই ঘটনা সম্বন্ধে লিখেছিলেন। (যোয়েল ২:২৮-৩২; প্রেরিত ২:১৬-২১) কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল?

প্রেরিত ২:২-৪ পদ পড়ুন। ৩৩ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিন ঈশ্বর সেই খ্রিস্টানদের তাঁর পবিত্র আত্মা দান করেছিলেন এবং তারা অভিষিক্ত হয়েছিলেন। (প্রেরিত ১:৮) এরপর, তাদের চারপাশে লোকেরা জড়ো হতে শুরু করেছিল আর শিষ্যরা সবেমাত্র যা দেখেছেন ও শুনেছেন, সেইসমস্ত চমৎকার বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছিলেন। প্রেরিত পিতর সবেমাত্র ঘটে যাওয়া ঘটনা ও কেন এটা এত গুরুত্বপূর্ণ, সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা করেছিলেন। তারপর তিনি সেই জনতার উদ্দেশে বলেছিলেন: “মন ফিরাও, এবং তোমরা প্রত্যেক জন তোমাদের পাপমোচনের নিমিত্ত যীশু খ্রীষ্টের নামে বাপ্তাইজিত হও; তাহা হইলে পবিত্র আত্মারূপ দান প্রাপ্ত হইবে।” সেই দিন প্রায় ৩,০০০ লোক বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন এবং তারাও পবিত্র আত্মা লাভ করেছিলেন।—প্রেরিত ২:৩৭, ৩৮, ৪১.

৪. (ক) পঞ্চাশত্তমীর দিন যা ঘটেছিল, সেই বিষয়ে আমাদের কেন আগ্রহী হওয়া উচিত? (খ) অনেক বছর আগে সেই একই দিনে অন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল? (টীকা দেখুন।)

মহাযাজক কাকে চিত্রিত করেছিল? আর তিনি প্রতি বছর পঞ্চাশত্তমীর দিন যা উৎসর্গ করতেন, সেটা কোন বিষয়কে চিত্রিত করেছিল? মহাযাজক যিশুকে চিত্রিত করেছিল। রটিগুলো যিশুর অভিষিক্ত শিষ্যদের চিত্রিত করেছিল। সেই শিষ্যদেরকে পাপী মানুষদের মধ্য থেকে মনোনীত করা হয়েছে আর তাদের “অগ্রিমাংশ” বলা হয়। (যাকোব ১:১৮) ঈশ্বর এই ব্যক্তিদের তাঁর সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং ঈশ্বরের রাজ্যের অংশ হিসেবে স্বর্গে যিশুর সঙ্গে রাজা হিসেবে শাসন করার জন্য মনোনীত করেছেন। (১ পিতর ২:৯) যিহোবা সকল বাধ্য মানুষকে আশীর্বাদ করার জন্য তাঁর রাজ্যকে ব্যবহার করবেন। তাই, আমাদের গৃহ স্বর্গে যিশুর সঙ্গে অথবা পরমদেশ পৃথিবীতে, যেখানেই হোক না কেন, ৩৩ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিন আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। [1]

একজন ব্যক্তি যখন অভিষিক্ত হন, তখন কী ঘটে?

৫. সকল অভিষিক্ত ব্যক্তি যে একই উপায়ে অভিষিক্ত হননি, তা আমরা কীভাবে জানতে পারি?

উপরের কুঠরিতে যে-শিষ্যরা ছিল, তারা সেই দিনের ঘটনা কখনো ভুলে যাননি। তাদের মধ্যে প্রত্যেকে নিজের মাথার উপর অগ্নিশিখার মতো কিছু দেখতে পেয়েছিলেন। যিহোবা তাদের ভিন্ন ভাষায় কথা বলার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। তারা যে পবিত্র আত্মার দ্বারা অভিষিক্ত হয়েছেন, সেই ব্যাপারে তাদের কোনো সন্দেহই ছিল না। (প্রেরিত ২:৬-১২) কিন্তু, সকল অভিষিক্ত খ্রিস্টানের ক্ষেত্রেই এই অসাধারণ ঘটনাগুলো ঘটে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বাইবেল এটা বলে না, সেই একই দিনে যিরূশালেমে আরও যে-হাজার হাজার ব্যক্তি অভিষিক্ত হয়েছিলেন, তারা তাদের মাথার উপর অগ্নিশিখার মতো কিছু দেখতে পেয়েছিলেন। তারা যখন বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন, তখন তারা অভিষিক্ত হয়েছিলেন। (প্রেরিত ২:৩৮) এ ছাড়া, সকল খ্রিস্টানই বাপ্তাইজিত হওয়ার পর পরই অভিষিক্ত হয় না। শমরীয়রা বাপ্তাইজিত হওয়ার কিছুটা সময় পরে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। (প্রেরিত ৮:১৪-১৭) আর একটা অস্বাভাবিক ঘটনায়, কর্ণীলিয় ও তার পরিবারের লোকেরা বাপ্তাইজিত হওয়ার আগেই অভিষিক্ত হয়েছিলেন।—প্রেরিত ১০:৪৪-৪৮.

৬. সকল অভিষিক্ত খ্রিস্টান কী লাভ করেন আর এটা তাদের কীভাবে প্রভাবিত করে?

তাই এটা স্পষ্ট, সবাই একই উপায়ে অভিষিক্ত হন না। কেউ কেউ হয়তো যিহোবা যে তাদের অভিষিক্ত করেছেন, তা সঙ্গেসঙ্গেই বুঝতে পারেন। অন্যেরা আবার কিছুটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তা বুঝতে পারেন। কিন্তু, তাদের প্রত্যেকের প্রতি কী ঘটে, তা প্রেরিত পৌল ব্যাখ্যা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: ‘তোমরা বিশ্বাস করিয়া সেই অঙ্গীকৃত পবিত্র আত্মা দ্বারা মুদ্রাঙ্কিত হইয়াছ; সেই আত্মা আমাদের দায়াধিকারের বায়না।’ (ইফি. ১:১৩, ১৪) তাই, এই খ্রিস্টানদের যে স্বর্গে যাওয়ার জন্য মনোনীত করা হয়েছে, সেই বিষয়টা তাদের কাছে পুরোপুরি স্পষ্ট করার জন্য যিহোবা তাঁর পবিত্র আত্মা ব্যবহার করেন। এভাবে, পবিত্র আত্মা হল তাদের জন্য এই “বায়না” বা প্রমাণ যে, ভবিষ্যতে তারা এই পৃথিবীতে নয় বরং স্বর্গে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।—পড়ুন, ২ করিন্থীয় ১:২১, ২২; ৫:৫.

৭. প্রত্যেক অভিষিক্ত খ্রিস্টানকে স্বর্গে তার পুরস্কার লাভ করার জন্য কী করতে হবে?

একজন খ্রিস্টান যখন অভিষিক্ত হন, তখন তার অর্থ কি এই যে, তিনি নিশ্চিতভাবেই তার পুরস্কার লাভ করবেন? না। তিনি এই বিষয়ে নিশ্চিত, তাকে স্বর্গে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু, তিনি একমাত্র সেই সময়ই তার পুরস্কার লাভ করবেন, যদি তিনি যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকেন। পিতর এই বিষয়টা এভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন: “অতএব, হে ভ্রাতৃগণ, তোমরা যে আহূত ও মনোনীত, তাহা নিশ্চয় করিতে অধিক যত্ন কর, কেননা এ সকল করিলে” বা করে চললে “তোমরা কখনও উছোট খাইবে না; কারণ এইরূপে আমাদের প্রভু ও ত্রাণকর্ত্তা যীশু খ্রীষ্টের অনন্ত রাজ্যে প্রবেশ করিবার অধিকার প্রচুররূপে তোমাদিগকে দেওয়া যাইবে।” (২ পিতর ১:১০, ১১) তাই, প্রত্যেক অভিষিক্ত খ্রিস্টানকে প্রচেষ্টা করতে হবে, যেন কোনো কিছুই তাকে যিহোবার সেবা থেকে বিরত করতে না পারে। যদিও তাকে স্বর্গে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো বা আহ্বান করা হয়েছে, কিন্তু তিনি যদি বিশ্বস্ত না থাকেন, তা হলে তিনি তার পুরস্কার লাভ করবেন না।—ইব্রীয় ৩:১; প্রকা. ২:১০.

কীভাবে একজন ব্যক্তি জানতে পারেন?

৮, ৯. (ক) একজন ব্যক্তি যখন অভিষিক্ত হন, তখন কী ঘটে সেই বিষয়টা অধিকাংশ ব্যক্তির পক্ষে বোঝা কেন কঠিন? (খ) একজন ব্যক্তিকে যে স্বর্গে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তা তিনি কীভাবে জানতে পারেন?

ঈশ্বর যখন একজন ব্যক্তিকে অভিষিক্ত করেন, তখন কী ঘটে, সেই বিষয়টা ঈশ্বরের অধিকাংশ দাসের পক্ষে বর্তমানে বোঝা কঠিন মনে হতে পারে। এটা স্বাভাবিক কারণ তাদের অভিষিক্ত করা হয়নি। ঈশ্বর মানুষকে স্বর্গে নয় বরং পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার জন্য সৃষ্টি করেছিলেন। (আদি. ১:২৮; গীত. ৩৭:২৯) কিন্তু, যিহোবা কিছু ব্যক্তিকে স্বর্গে রাজা ও যাজক হওয়ার জন্য মনোনীত করেছেন। তাই, তিনি যখন তাদের অভিষিক্ত করেন, তখন তাদের প্রত্যাশা ও চিন্তাভাবনা পরিবর্তন হয়, যাতে তারা স্বর্গে জীবন লাভের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন।—পড়ুন, ইফিষীয় ১:১৮.

কিন্তু, একজন পুরুষ অথবা নারীকে যে স্বর্গে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তা তিনি কীভাবে জানতে পারেন? পৌল রোমের অভিষিক্ত ভাই-বোনদের, যারা “আহূত পবিত্র . . . লোক” ছিলেন, তাদের উদ্দেশে কী বলেছিলেন, তা লক্ষ করুন। তিনি তাদের বলেছিলেন: “তোমরা দাসত্বের আত্মা পাও নাই যে, আবার ভয় করিবে; কিন্তু দত্তকপুত্ত্রতার আত্মা পাইয়াছ, যে আত্মাতে আমরা আব্বা, পিতা, বলিয়া ডাকিয়া উঠি। আত্মা আপনিও আমাদের আত্মার সহিত সাক্ষ্য দিতেছেন যে, আমরা ঈশ্বরের সন্তান।” (রোমীয় ১:৭; ৮:১৫, ১৬) ঈশ্বর তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে একজন পুরুষ অথবা নারীকে এই বিষয়টা স্পষ্ট করে দেন, তাকে স্বর্গে যিশুর সঙ্গে রাজা হিসেবে শাসন করার জন্য মনোনীত করা হয়েছে।—১ থিষল. ২:১২.

১০. প্রথম যোহন ২:২৭ পদ যখন বলে, একজন অভিষিক্ত খ্রিস্টানের অন্য কারো কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন নেই, তখন এর অর্থ কী?

১০ ঈশ্বরের কাছ থেকে যারা এই আমন্ত্রণ পান, তাদের যে অভিষিক্ত করা হয়েছে, সেটা অন্য কেউ তাদের বলে দেয় না। যিহোবা তাদের এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে সাহায্য করেন। প্রেরিত যোহন অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের বলেন: “তোমরা সেই পবিত্রতম হইতে অভিষেক পাইয়াছ, ও সকলেই জ্ঞান পাইয়াছ।” তিনি এটাও বলেন: “তোমরা তাঁহা হইতে যে অভিষেক পাইয়াছ, তাহা তোমাদের অন্তরে রহিয়াছে এবং কেহ যে তোমাদিগকে শিক্ষা দেয়, ইহাতে তোমাদের প্রয়োজন নাই।” (১ যোহন ২:২০, ২৭) অন্য সকলের মতো অভিষিক্ত খ্রিস্টানদেরও যিহোবার কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু তারা যে অভিষিক্ত সেই বিষয়ে অন্য কোনো ব্যক্তির দ্বারা তাদের নিশ্চিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। যিহোবা সবচেয়ে পরাক্রমী শক্তি অর্থাৎ তাঁর পবিত্র আত্মা ব্যবহার করে তাদের কাছে এই বিষয়টা পুরোপুরি স্পষ্ট করেছেন!

তাদের “নূতন জন্ম” হয়

১১, ১২. একজন অভিষিক্ত খ্রিস্টান হয়তো কী ভাবতে পারেন কিন্তু কোন ব্যাপারে তার কোনো সন্দেহই থাকে না?

১১ খ্রিস্টানরা যখন পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত হন, তখন তাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন হয়। আসলে, যিশু বলেছিলেন, তাদের “নূতন জন্ম” হয় বা “উপর হইতে” জন্ম হয়। (যোহন ৩:৩, ৫; পাদটীকা) তিনি এরপর ব্যাখ্যা করেছিলেন: “আমি যে তোমাকে, তোমাদের বলিলাম, তোমাদের নূতন জন্ম হওয়া আবশ্যক, ইহাতে আশ্চর্য্য জ্ঞান করিও না। বায়ু যে দিকে ইচ্ছা করে, সেই দিকে বহে, এবং তুমি তাহার শব্দ শুনিতে পাও; কিন্তু কোথা হইতে আইসে, আর কোথায় চলিয়া যায়, তাহা জান না; আত্মা হইতে জাত প্রত্যেক জন সেইরূপ।” (যোহন ৩:৭, ৮) এটা স্পষ্ট, অভিষিক্ত নন এমন কোনো ব্যক্তির পক্ষে অভিষিক্ত হলে ঠিক কেমন অনুভূতি হয়, তা বোঝা অসম্ভব। [2]

১২ অভিষিক্ত হয়েছেন এমন কোনো ব্যক্তি হয়তো ভাবতে পারেন, ‘কেন ঈশ্বর অন্য কাউকে মনোনীত না করে আমাকেই মনোনীত করেছেন?’ এমনকী তিনি হয়তো নিজেকে এই দায়িত্বের জন্য যোগ্য বলে মনে না-ও করতে পারেন। কিন্তু যিহোবা যে তাকে মনোনীত করেছেন, সেই ব্যাপারে তার কোনো সন্দেহ থাকে না। এর পরিবর্তে, তিনি খুবই আনন্দিত হন এবং এই দানের জন্য অত্যন্ত কৃতজ্ঞ থাকেন। অভিষিক্ত ব্যক্তিরা পিতরের মতোই অনুভব করেন, যিনি বলেছিলেন: “ধন্য আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ঈশ্বর ও পিতা; তিনি নিজ বিপুল দয়ানুসারে মৃতগণের মধ্য হইতে যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থান দ্বারা, জীবন্ত প্রত্যাশার নিমিত্ত আমাদিগকে পুনর্জন্ম দিয়াছেন, অক্ষয় ও বিমল ও অজর দায়াধিকারের নিমিত্ত দিয়াছেন; সেই দায়াধিকার স্বর্গে তোমাদের নিমিত্ত সঞ্চিত রহিয়াছে।” (১ পিতর ১:৩, ৪) অভিষিক্ত ব্যক্তিরা যখন এই কথাগুলো পড়েন, তখন তাদের এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকে না, তাদের পিতা তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলছেন।

১৩. একজন ব্যক্তি যখন পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত হন, তখন তার চিন্তাভাবনায় কোন পরিবর্তন হয় আর কেন এই পরিবর্তন হয়?

১৩ যিহোবা এই খ্রিস্টানদের স্বর্গে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানোর আগে, এই ব্যক্তিরা পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার আশা করেছেন। তারা সেই সময়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ছিলেন, যখন যিহোবা এই পৃথিবীকে এক পরমদেশে পরিণত করবেন এবং সমস্ত দুষ্টতা দূর করে দেবেন। তারা হয়তো কল্পনায় নিজেদেরকে পরিবারের কোনো মৃত সদস্য অথবা কোনো বন্ধুকে পুনরুত্থানে স্বাগত জানাতে দেখেছিলেন। আর তারা বাড়ি তৈরি করে সেখানে থাকার অথবা গাছপালা রোপণ করে সেগুলোর ফল খাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ছিলেন। (যিশা. ৬৫:২১-২৩) কেন তারা ভিন্নভাবে চিন্তাভাবনা করতে শুরু করেছিলেন? তাদের চিন্তাভাবনা কি হতাশায় ভোগার কারণে অথবা অনেক কষ্ট ভোগ করার কারণে পরিবর্তন হয়েছিল? তারা কি হঠাৎ করেই এমন চিন্তা করতে শুরু করেছিলেন, পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকতে একঘেয়ে লাগবে আর তারা এখানে সুখী হতে পারবেন না? স্বর্গে জীবন কেমন হবে, তারা কি সেই অভিজ্ঞতা লাভ করতে চেয়েছিলেন? না। এর পরিবর্তে, ঈশ্বর তাদের জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি যখন তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তখন তিনি তাঁর পবিত্র আত্মা ব্যবহার করে তাদের চিন্তাভাবনার ধরন এবং তারা যে-পুরস্কার লাভের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ছিলেন, সেটা পরিবর্তন করেছেন।

১৪. অভিষিক্ত ব্যক্তিরা এই পৃথিবীতে তাদের জীবন সম্বন্ধে কেমন অনুভব করেন?

১৪ তার অর্থ কি এই, অভিষিক্ত ব্যক্তিরা মারা যেতে চান? অভিষিক্ত ব্যক্তিরা কেমন অনুভব করেন, তা পৌল বর্ণনা করেছিলেন। তিনি তাদের মানবদেহকে একটা ‘তাম্বুর’ সঙ্গে তুলনা করেছিলেন এবং বলেছিলেন: “বাস্তবিক এই তাম্বুতে থাকিয়া আমরা ভারাক্রান্ত হওয়াতে আর্ত্তস্বর করিতেছি; কেননা আমরা পরিচ্ছদ-বিহীন হইতে বাঞ্ছা করি না, কিন্তু ইহার উপরে পরিহিত হইতে বাঞ্ছা করি, যেন যাহা মর্ত্ত্য, তাহা জীবনের দ্বারা কবলিত হয়।” (২ করি. ৫:৪) এই খ্রিস্টানরা মারা যেতে চান না। তারা জীবন উপভোগ করেন এবং তাদের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে জীবনের প্রতিটা দিন যিহোবাকে সেবা করার জন্য ব্যবহার করতে চান। তারা যা-ই করুক না কেন, তাদের ভবিষ্যতের জন্য ঈশ্বর যা প্রতিজ্ঞা করেছেন, সেটা তারা মনে রাখেন।—১ করি. ১৫:৫৩; ২ পিতর ১:৪; ১ যোহন ৩:২, ৩; প্রকা. ২০:৬.

যিহোবা কি আপনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন?

১৫. একজন ব্যক্তি যে পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত হয়েছেন, সেটা প্রমাণ করার জন্য কোন বিষয়গুলো যথেষ্ট নয়?

১৫ আপনি হয়তো মনে করছেন, যিহোবা আপনাকে স্বর্গে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আপনার যদি এমনটা মনে হয়, ঈশ্বর আপনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তা হলে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করুন: আপনার কি মনে হয়, আপনি প্রচার কাজে বিশেষভাবে উদ্যোগ প্রকাশ করে থাকেন? আপনি কি বাইবেল পড়ে এবং ‘ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকল’ শিখতে পেরে সত্যিই আনন্দিত হন? (১ করি. ২:১০) আপনার কি মনে হয়, যিহোবা প্রচার কাজে আপনাকে চমৎকার ফলাফল পেতে সাহায্য করছেন? অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে যিহোবা যা চান, সেটা কি আপনি করতে চান? অন্যদের প্রতি আপনার কি গভীর প্রেম রয়েছে আর যিহোবাকে সেবা করার ক্ষেত্রে তাদেরকে সাহায্য করার জন্য আপনি কি দায়িত্ব অনুভব করেন? যিহোবা যে আপনার জীবনে আপনাকে সুনির্দিষ্ট উপায়ে সাহায্য করেছেন, সেটার প্রমাণ কি আপনি পেয়েছেন? সকল প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তা হলে সেটার অর্থ কি এই যে, আপনাকে স্বর্গে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে? না, তা নয়। কেন? কারণ ঈশ্বরের সকল দাসই এইরকম অনুভব করতে পারে, তা তারা অভিষিক্ত হোক বা না হোক। আর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে যিহোবা তাঁর যেকোনো দাসকে একই শক্তি দিতে পারেন, তা তাদের পুরস্কার যা-ই হোক না কেন। আসলে, আপনি স্বর্গে যাবেন কি না, সেই বিষয়টা নিয়ে যদি সন্দেহ করেন, তা হলে এর অর্থ হচ্ছে আপনাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। যিহোবার দ্বারা মনোনীত ব্যক্তিরা এই ব্যাপারে সন্দেহ করে না! তারা এই বিষয়ে নিশ্চিত!

১৬. ঈশ্বরের আত্মা পেয়েছেন এমন সকলকে যে স্বর্গে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, আমরা তা কীভাবে জানি?

১৬ বাইবেলে এমন অনেক বিশ্বস্ত ব্যক্তির উদাহরণ রয়েছে, যারা যিহোবার পবিত্র আত্মা পেয়েছিলেন, কিন্তু স্বর্গে যাননি। যোহন বাপ্তাইজক হলেন তাদের মধ্যে একজন। যিশু বলেছিলেন, যোহনের চেয়ে মহান কোনো ব্যক্তি ছিল না। কিন্তু এরপর তিনি বলেছিলেন, যোহন স্বর্গে রাজা হিসেবে শাসন করবেন না। (মথি ১১:১০, ১১) দায়ূদও পবিত্র আত্মা দ্বারা পরিচালিত হয়েছিলেন। (১ শমূ. ১৬:১৩) পবিত্র আত্মা তাকে যিহোবা সম্বন্ধে গভীর বিষয় বুঝতে সাহায্য করেছিল এবং বাইবেলের কিছু অংশ লিখতে অনুপ্রাণিত করেছিল। (মার্ক ১২:৩৬) তা সত্ত্বেও, প্রেরিত পিতর বলেছিলেন, দায়ূদ “স্বর্গারোহণ করেন নাই।” (প্রেরিত ২:৩৪) যিহোবা পবিত্র আত্মা ব্যবহার করে এই ব্যক্তিদের অসাধারণ কাজ করার জন্য শক্তি প্রদান করেছিলেন, তবে তিনি তাদের স্বর্গে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য তা ব্যবহার করেননি। তার মানে কি এই, তারা স্বর্গে শাসন করার জন্য যথেষ্ট বিশ্বস্ত অথবা যোগ্য ছিলেন না? না, তা নয়। এর অর্থ হচ্ছে যিহোবা তাদের পরমদেশ পৃথিবীতে জীবনে ফিরিয়ে আনবেন।—যোহন ৫:২৮, ২৯; প্রেরিত ২৪:১৫.

১৭, ১৮. (ক) বর্তমানে ঈশ্বরের দাসদের মধ্যে অধিকাংশ ব্যক্তি কোন পুরস্কার লাভের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে? (খ) পরের প্রবন্ধে আমরা কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?

১৭ বর্তমানে, ঈশ্বরের দাসদের মধ্যে অধিকাংশই স্বর্গে যাবে না। অব্রাহাম, দায়ূদ, যোহন বাপ্তাইজক ও বাইবেলের সময়ের আরও অনেক নারী-পুরুষের মতো, তারাও অধীর আগ্রহে সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করে আছে, যখন ঈশ্বরের রাজ্য তাদের উপর শাসন করবে। (ইব্রীয় ১১:১০) স্বর্গে যিশুর সঙ্গে ১,৪৪,০০০ ব্যক্তি শাসন করবেন। তবে বাইবেল বলে, এই শেষকালে পৃথিবীতে অভিষিক্ত ব্যক্তিদের ‘অবশিষ্ট লোক’ থাকবে। (প্রকা. ১২:১৭) তাই ১,৪৪,০০০ ব্যক্তির মধ্যে অধিকাংশই ইতিমধ্যে মারা গিয়েছেন এবং তারা স্বর্গে আছেন।

১৮ তবে, কেউ যদি বলেন তিনি অভিষিক্ত, তা হলে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আশা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত? আপনার মণ্ডলীর কেউ যদি স্মরণার্থ সভার সময়ে রুটি ও দ্রাক্ষারস খেতে শুরু করেন, তা হলে তার প্রতি আপনার কেমন আচরণ করা উচিত? আর নিজেদের অভিষিক্ত বলে মনে করেন এমন ব্যক্তিদের সংখ্যা যদি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে, তা হলে? আপনার কি সেই বিষয়টা নিয়ে উদ্‌বিগ্ন হওয়া উচিত? পরের প্রবন্ধে আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাব।

^ [১] (৪ অনুচ্ছেদ) পঞ্চাশত্তমীর উৎসব সম্ভবত বছরের সেই একই সময়ে উদ্‌যাপন করা হতো, যখন সীনয় পর্বতে মোশিকে ব্যবস্থা প্রদান করা হয়েছিল। (যাত্রা. ১৯:১) তাই, সম্ভবত মোশি সেই একই দিনে ইস্রায়েল জাতিকে ব্যবস্থার অধীনে নিয়ে এসেছিলেন, যে-দিন যিশু অভিষিক্ত ব্যক্তিদের নতুন চুক্তির অধীনে নিয়ে এসেছিলেন।

^ [২] (১১ অনুচ্ছেদ) আবার জন্ম নেওয়ার অর্থ কী, সেই বিষয়ে আরও ব্যাখ্যার জন্য ২০০৯ সালের ১ এপ্রিল প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ৩-১১ পৃষ্ঠা দেখুন।