পাঠকদের কাছ থেকে প্রশ্ন
যিহিষ্কেলের দর্শনে বর্ণিত লেখকের মস্যাধার বহনকারী পুরুষ এবং হস্তে সংহারক অস্ত্র বহনকারী ছয় জন পুরুষ কাদেরকে চিত্রিত করে?
তারা স্বর্গীয় বাহিনীকে চিত্রিত করে, যে-বাহিনী অতীতে যিরূশালেম ধ্বংস করার সময় জড়িত ছিল এবং ভবিষ্যতে আরমাগিদোনে শয়তানের দুষ্ট বিধিব্যবস্থা ধ্বংস করার সময় জড়িত থাকবে। রদবদলকৃত এই বোধগম্যতা কেন যুক্তিসংগত?
খ্রিস্টপূর্ব ৬০৭ সালের আগে ধর্মভ্রষ্ট যিরূশালেমে যে-সমস্ত মন্দ কাজ করা হচ্ছিল, সেগুলো একটা দর্শনে যিহিষ্কেলকে দেখানো হয়েছিল। এরপর, তাকে এমন আরও ঘটনা দেখানো হয়েছিল, যা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। তিনি হস্তে সংহারক অস্ত্র বহনকারী ছয় জন পুরুষকে দেখতে পেয়েছিলেন। এ ছাড়া, তিনি তাদের সঙ্গে একজন পুরুষকে দেখেছিলেন, যিনি “মসীনা-বস্ত্র পরিহিত” ছিলেন এবং তার কাছে “লেখকের মস্যাধার” ছিল। (যিহি. ৮:৬-১২; ৯:২, ৩) সেই পুরুষকে বলা হয়েছিল: “তুমি নগরের মধ্য দিয়া . . . যাও, এবং তাহার মধ্যে কৃত সমস্ত ঘৃণার্হ কার্য্যের বিষয়ে যে সকল লোক দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করে ও কোঁকায়, তাহাদের প্রত্যেকের কপালে চিহ্ন দেও।” এরপর, হস্তে সংহারক অস্ত্র বহনকারী পুরুষদেরকে, সেই নগরে যে-সমস্ত ব্যক্তির কপালে চিহ্ন নেই, তাদের সকলকে হত্যা করতে বলা হয়েছিল। (যিহি. ৯:৪-৭) এই দর্শন আমাদের কী শিক্ষা দেয় আর লেখকের মস্যাধার বহনকারী পুরুষ কে?
এই ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৬১২ সালে আর এর প্রাথমিক পরিপূর্ণতা বাবিলীয় সেনাবাহিনীর দ্বারা যিরূশালেমের ধ্বংসকে নির্দেশ করে, যা মাত্র পাঁচ বছর পর ঘটেছিল। যদিও পৌত্তলিক বাবিলীয়দের মাধ্যমে এই ধ্বংস আনা হয়েছিল, কিন্তু তারা আসলে যিহোবার দণ্ডাজ্ঞা সাধনকারী হিসেবে কাজ করেছিল। (যির. ২৫:৯, ১৫-১৮) কারণ যিহোবা ধর্মভ্রষ্ট যিহুদিদের শাস্তি দেওয়ার জন্য তাদের ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু, এই ধ্বংস বাছবিচারহীনভাবে করা হয়নি। ধার্মিক ব্যক্তিরা দুষ্টদের সঙ্গে ধ্বংস হয়নি। যিহোবা প্রেমের সঙ্গে সেই যিহুদিদের রক্ষা করার ব্যবস্থা করেছিলেন, যারা নগরের মধ্যে যেসব ঘৃণার্হ কাজ চলছিল, সেগুলোতে রত হয়নি।
চিহ্ন দেওয়ার কাজ কিংবা ধ্বংস করার কাজ, এগুলোর কোনোটাতেই যিহিষ্কেল জড়িত ছিলেন না। এর পরিবর্তে, বিচার কার্যকর করার কাজ স্বর্গদূতেরা পরিচালনা করেছিলেন। তাই এই ভবিষ্যদ্বাণীর মাধ্যমে আমাদেরকে দৃশ্যের পিছনে, রূপকভাবে বললে, স্বর্গীয় রাজ্যের ঘটনা দেখার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যিহোবা স্বর্গদূতদের দায়িত্ব দিয়েছেন, যেন তারা দুষ্টদের ধ্বংস করার কাজ সংগঠিত করেন আর সেইসঙ্গে ধার্মিকদের রক্ষা করার জন্য তাদের পৃথক করেন। *
অতীতে আমরা এভাবে ব্যাখ্যা করেছিলাম, এই দর্শনের আধুনিক দিনের পরিপূর্ণতায় লেখকের মস্যাধার বহনকারী পুরুষ, পৃথিবীতে বেঁচে থাকা অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের চিত্রিত করে। এমনটা মনে করা হয়েছিল, এখন যে-বার্তা প্রচার করা হচ্ছে, সেই বার্তার প্রতি যারা অনুকূল সাড়া দেয়, তাদেরকে রক্ষা করার জন্য চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, এই ব্যাখ্যা রদবদল করা প্রয়োজন। মথি ২৫:৩১-৩৩ পদে যা বলা আছে, সেই অনুযায়ী যিশুই লোকেদের বিচার করেন। তিনি মহাক্লেশের সময়ে মেষতুল্য ব্যক্তি ও ছাগতুল্য ব্যক্তিদের পৃথক করার মাধ্যমে চূড়ান্ত বিচার সম্পাদন করবেন আর এরপর মেষতুল্য ব্যক্তিরা পরিত্রাণ লাভ করবে এবং ছাগতুল্য ব্যক্তিরা ধ্বংস হবে।
রদবদলকৃত এই বোধগম্যতার আলোকে, যিহিষ্কেলের দর্শন থেকে আমরা কী শিক্ষা লাভ করতে পারি? অন্ততপক্ষে পাঁচটা শিক্ষা লাভ করা যায়:
-
যিরূশালেমের ধ্বংস যখন আসন্ন ছিল, সেই সময়ে যিহিষ্কেল ও সেইসঙ্গে যিরমিয় প্রহরী হিসেবে সেবা করেছিলেন, ঠিক যেমনটা এর আগে যিশাইয়ও করেছিলেন। বর্তমানে, যিহোবা তাঁর লোকেদের খাদ্য দেওয়ার জন্য এবং মহাক্লেশ আরম্ভ হওয়ার আগে অন্যদের সতর্ক করার জন্য তাঁর অভিষিক্ত দাসদের একটা ছোটো দলকে ব্যবহার করছেন। এর ফলে খ্রিস্টের সমস্ত পরিজন সতর্কবাণী ঘোষণা করায় অংশ নিয়ে থাকে।—মথি ২৪:৪৫-৪৭.
-
পরিত্রাণ লাভ করবে এমন ব্যক্তিদের আক্ষরিক চিহ্ন দেওয়ার কাজে যিহিষ্কেল জড়িত ছিলেন না; বর্তমানে ঈশ্বরের দাসেরাও এই কাজে জড়িত হয় না। তারা স্বর্গদূতদের পরিচালনায় তাদের প্রচার কাজের অংশ হিসেবে শুধুমাত্র যিহোবার বার্তা লোকেদের জানিয়ে থাকে।—প্রকা. ১৪:৬.
-
মথি ২৫:৩৫-৪০) যারা এই কাজগুলো করবে, তারা আসন্ন মহাক্লেশের সময়ে রক্ষা পাওয়ার চিহ্ন লাভ করবে।
যিহিষ্কেলের দিনে কোনো ব্যক্তি নিজের কপালে আক্ষরিক চিহ্ন লাভ করেনি। বর্তমানেও কেউ তা লাভ করে না। রক্ষা পাওয়ার রূপক চিহ্ন লাভ করার জন্য লোকেদের কী করা প্রয়োজন? এখন যে-প্রচার কাজ করা হচ্ছে, সেটার প্রতি তাদেরকে অনুকূল সাড়া দিতে হবে, খ্রিস্টীয় ব্যক্তিত্ব পরিধান করতে হবে, যিহোবার কাছে নিজেদের উৎসর্গ করতে হবে এবং খ্রিস্টের ভাইদের অনুগতভাবে সমর্থন করতে হবে। ( -
আধুনিক দিনের পরিপূর্ণতায়, লেখকের মস্যাধার বহনকারী পুরুষ যিশু খ্রিস্টকে চিত্রিত করে, যিনি দৃশ্যের পিছনে থেকে সেই ব্যক্তিদের চিহ্নিত করেন, যারা রক্ষা পাবে। বিস্তর লোক মহাক্লেশের সময়ে মেষ হিসেবে বিচারিত হওয়ার পর সেই চিহ্ন লাভ করবে। এর ফলে তারা এই পৃথিবীতে অনন্তজীবন লাভ করবে।—মথি ২৫:৩৪, ৪৬. *
-
আধুনিক দিনের পরিপূর্ণতায়, হস্তে সংহারক অস্ত্র বহনকারী ছয় জন পুরুষ যিশুর স্বর্গীয় বাহিনীকে চিত্রিত করে, যে-বাহিনীর সেনাধ্যক্ষ হলেন স্বয়ং যিশু। তারা শীঘ্রই জাতিগণকে এবং সমস্ত দুষ্টতা ধ্বংস করে দেবেন।—যিহি. ৯:২, ৬, ৭; প্রকা. ১৯:১১-২১.
এই মূল্যবান শিক্ষাগুলো বোঝার মাধ্যমে, যিহোবা যে দুষ্টদের সঙ্গে ধার্মিকদের ধ্বংস করেন না, সেই বিষয়ে আমাদের আস্থা আরও দৃঢ় হয়। (২ পিতর ২:৯; ৩:৯) এ ছাড়া, এই শিক্ষাগুলোর মাধ্যমে আমাদেরকে বর্তমান সময়ে প্রচার কাজের গুরুত্ব সম্বন্ধেও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। শেষ আসার আগে সকলের কানে সতর্কবাণী পৌঁছে দিতে হবে!—মথি ২৪:১৪.
^ অনু. 6 বিভিন্ন ব্যক্তি কপালে দৃশ্যত চিহ্ন লাভ না করেও রক্ষা পেয়েছিল, যেমন বারূক (যিরমিয়ের সচিব), কূশীয় এবদ-মেলক এবং রেখবীয়রা। (যির. ৩৫:১-১৯; ৩৯:১৫-১৮; ৪৫:১-৫) রক্ষা পাওয়ার জন্য তারা রূপক চিহ্ন লাভ করেছিল।
^ অনু. 12 রক্ষা লাভের এই চিহ্ন বিশ্বস্ত অভিষিক্ত ব্যক্তিদের প্রয়োজন নেই। এর পরিবর্তে, তারা মারা যাওয়ার আগে অথবা মহাক্লেশ শুরু হওয়ার আগে তাদের চূড়ান্ত মুদ্রাঙ্কন লাভ করবেন।—প্রকা. ৭:১, ৩.