আপনি কি মহান কুম্ভকারের দ্বারা নিজেকে গঠিত হতে দেন?
“দেখ, যেমন কুম্ভকারের হস্তে মৃত্তিকা, তেমনি আমার হস্তে তোমরা।”—যির. ১৮:৬.
১, ২. কেন ঈশ্বর দানিয়েলকে “মহাপ্রীতি-পাত্র” হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন আর আমরা কীভাবে দানিয়েলের মতো বাধ্য হতে পারি?
যিহুদিদের যখন বাবিলে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তখন তারা এমন একটা নগরে প্রবেশ করেছিল, যে-নগরটা দেব-দেবীর প্রতিমায় ছেয়ে ছিল আর সেখানে এমন লোকেরা ছিল, যারা মন্দ আত্মাদের উপাসনা করত। তা সত্ত্বেও, বিশ্বস্ত যিহুদিরা, যেমন দানিয়েল ও তার তিন বন্ধু, বাবিলের লোকেদের দ্বারা গঠিত হতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। (দানি. ১:৬, ৮, ১২; ৩:১৬-১৮) দানিয়েল ও তার বন্ধুরা যিহোবাকে তাদের কুম্ভকার হিসেবে স্বীকার করেছিলেন এবং শুধুমাত্র তাঁরই উপাসনা করেছিলেন। যদিও দানিয়েল জীবনের বেশিরভাগ সময় এক মন্দ পরিবেশে বাস করেছিলেন, কিন্তু ঈশ্বরের দূত এভাবে বলেছিলেন, দানিয়েল হলেন “মহাপ্রীতি-পাত্র।”—দানি. ১০:১১, ১৯.
২ বাইবেলের সময়ে, একজন কুম্ভকার হয়তো একটা নির্দিষ্ট আকার গঠন করার জন্য মাটিকে ছাঁচে ঢেলে চাপ দিতেন। বর্তমানে, সত্য উপাসকরা এটা জানে, যিহোবা হলেন নিখিলবিশ্বের শাসক এবং জাতিগণকে গঠন করার অধিকার তাঁর রয়েছে। (পড়ুন, যিরমিয় ১৮:৬.) এ ছাড়া, আমাদের প্রত্যেককে গঠন করার অধিকারও ঈশ্বরের রয়েছে। কিন্তু, যিহোবা কাউকে পরিবর্তন করার জন্য জোর করেন না। এর পরিবর্তে, তিনি চান যেন আমরা স্বেচ্ছায় তাঁর দ্বারা নিজেদের গঠিত হতে দিই। এই প্রবন্ধ থেকে আমরা শিখতে পারব, কীভাবে আমরা ঈশ্বরের হাতে নরম মাটির মতো থাকতে পারি। আমরা এই তিনটে প্রশ্নের উত্তর আলোচনা করব: (১) কীভাবে আমরা এমন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো দেখানো এড়িয়ে চলতে পারি, যেগুলোর কারণে আমরা হয়তো ঈশ্বরের পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করতে পারি এবং শক্ত মাটি হয়ে যেতে পারি? (২) কীভাবে আমরা এমন গুণাবলি গড়ে তুলতে পারি, যা আমাদেরকে বাধ্য থাকতে এবং নরম মাটির মতো থাকতে সাহায্য করে? (৩) কীভাবে খ্রিস্টান বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের গঠন করার সময় ঈশ্বরের সঙ্গে কাজ করতে পারেন?
এমন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো এড়িয়ে চলুন, যেগুলো হৃদয়কে কঠিন করে ফেলতে পারে
৩. কোন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো আমাদের হৃদয়কে কঠিন করে ফেলতে পারে? উদাহরণ দিন।
৩ হিতোপদেশ ৪:২৩ পদ বলে, “সমস্ত রক্ষণীয় অপেক্ষা তোমার হৃদয় রক্ষা কর কেননা তাহা হইতে জীবনের উদ্গম হয়।” আমাদের হৃদয় যাতে কঠিন হয়ে না যায়, সেইজন্য আমাদের অবশ্যই বিভিন্ন নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য, যেমন অহংকার, পাপপূর্ণ অভ্যাস ও বিশ্বাসের অভাব দেখানো এড়িয়ে চলতে হবে। আমরা যদি সতর্ক না থাকি, তা হলে এই ধরনের বৈশিষ্ট্যের কারণে আমরা অবাধ্য ও বিদ্রোহী হয়ে উঠতে পারি। ( দানি. ৫:১, ২০; ইব্রীয় ৩:১৩, ১৮, ১৯) যিহূদার রাজা উষিয়ের ক্ষেত্রে এটাই ঘটেছিল। (পড়ুন, ২ বংশাবলি ২৬:৩-৫, ১৬-২১.) প্রথমে, উষিয় বাধ্য ছিলেন এবং ঈশ্বরের সঙ্গে তার উত্তম সম্পর্ক ছিল। তাই ঈশ্বর তাকে শক্তি বা ক্ষমতা দিয়েছিলেন। কিন্তু “শক্তিমান্ হইলে পর তাঁহার মন উদ্ধত হইল।” তিনি এতটাই অহংকারী হয়ে উঠেছিলেন যে, তিনি এমনকী মন্দিরে ধূপ জ্বালানোর চেষ্টা করেছিলেন, যে-কাজটা শুধুমাত্র যাজকদের করার কথা ছিল। যাজকরা যখন তাকে বলেছিলেন, তিনি ভুল করছেন, তখন উষিয় অত্যন্ত রেগে গিয়েছিলেন! যিহোবা সেই অহংকারী রাজাকে অবমানিত করেছিলেন আর তিনি মৃত্যুর আগে পর্যন্ত একজন কুষ্ঠ রোগী হিসেবে বেঁচে ছিলেন।—হিতো. ১৬:১৮.
৪, ৫. আমরা যদি অহংকার প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হই, তা হলে কী ঘটতে পারে? একটা উদাহরণ দিন।
৪ আমরা যদি অহংকারী মনোভাব এড়িয়ে না চলি, তা হলে আমরা হয়তো এমন চিন্তা করা শুরু করতে পারি, আমরা অন্যদের চেয়ে আরও ভালো। সেই সময়ে আমরা হয়তো বাইবেল থেকে আমাদের যে-পরামর্শ দেওয়া হয়, তা প্রত্যাখ্যান করতে পারি। (হিতো. ২৯:১; রোমীয় ১২:৩) জিম নামে একজন প্রাচীনের ক্ষেত্রে এটাই ঘটেছিল। তিনি একটা বিষয়ে মণ্ডলীর অন্যান্য প্রাচীনদের সঙ্গে একমত হননি। জিম বলেন: “আমি ভাইদের বলেছিলাম, তারা প্রেমপূর্ণ উপায়ে আচরণ করছেন না আর আমি সেই সভা ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম।” প্রায় ছয় মাস পর তিনি আরেকটা মণ্ডলীতে চলে গিয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে তাকে প্রাচীন হিসেবে নিযুক্ত করা হয়নি। জিম তখন অত্যন্ত হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। তিনিই ঠিক ছিলেন, এই বিশ্বাস তার মনে এতটা দৃঢ়ভাবে গেঁথে গিয়েছিল যে, তিনি যিহোবার সেবা করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন এবং দশ বছর ধরে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। তিনি বলেন, তিনি অহংকারী হয়ে উঠেছিলেন এবং যা ঘটছিল, সেগুলোর জন্য যিহোবাকে দোষ দিতে শুরু করেছিলেন। অনেক বছর ধরে ভাইয়েরা তার সঙ্গে দেখা করে তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু জিম তাদের কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করেননি।
৫ জিম বলেন, “অন্যেরা যে কত ভুল করছে, সেই চিন্তা আমি মাথা থেকে দূর করতে পারিনি।” তার উদাহরণ থেকে আমরা বুঝতে পারি, অহংকারের কারণে আমরা নিজেদের ভুল আচরণকে ন্যায্য বলে মনে করতে পারি। যখন এমনটা মনে হয়, তখন আমরা আর নরম মাটি হিসেবে থাকি না। (যির. ১৭:৯) কোনো ভাই অথবা বোনের কারণে আপনি কি কখনো বিরক্ত হয়েছিলেন? কোনো বিশেষ সুযোগ হারানোর কারণে আপনি কি কখনো দুঃখিত হয়ে পড়েছিলেন? আপনি তখন কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? আপনি কি অহংকারী মনোভাব দেখিয়েছিলেন, না কি এটা বুঝতে পেরেছিলেন, আপনার ভাইয়ের সঙ্গে শান্তিস্থাপন করা এবং যিহোবার প্রতি আনুগত্য বজায় রাখাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়?—পড়ুন, গীতসংহিতা ১১৯:১৬৫; কলসীয় ৩:১৩.
৬. আমরা যদি পাপ করেই চলি, তা হলে কী হতে পারে?
৬ একজন ব্যক্তি যদি পাপ করেই চলেন আর এমনকী তিনি যা করছেন তা লুকিয়ে রাখেন, তা হলে তার পক্ষে ঐশিক পরামর্শ গ্রহণ করা কঠিন হতে পারে। তখন পাপের কাছে নতিস্বীকার করা আরও সহজ হয়ে পড়ে। একজন ভাই বলেছিলেন, একটা সময়ে তার অনুপযুক্ত আচরণ তার বিবেককে খুব-একটা দংশন করত না। (উপ. ৮:১১) আরেকজন ভাই, যার একটা সময়ে পর্নোগ্রাফি দেখার অভ্যাস ছিল, তিনি পরে বলেছিলেন, “আমার মধ্যে প্রাচীনদের সম্বন্ধে সমালোচনাপূর্ণ মনোভাব গড়ে উঠেছিল।” তার সেই অভ্যাসের কারণে যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ক নষ্ট হয়েছিল। তিনি যা করছিলেন, সেই বিষয়টা যখন প্রকাশ হয়ে পড়েছিল, তখন প্রাচীনরা তাকে সাহায্য করেছিলেন। এটা ঠিক, আমরা সবাই অসিদ্ধ। কিন্তু, যারা আমাদের পরামর্শ দেন, তাদের প্রতি আমরা যদি সমালোচনাপূর্ণ মনোভাব গড়ে তুলি অথবা কোনো ভুল কাজ করার পর আমরা যদি ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা ও সাহায্য না চেয়ে বরং সেই ভুল কাজের পিছনে অজুহাত দেখাই, তা হলে আমাদের হৃদয় হয়তো কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
৭, ৮. (ক) কীভাবে প্রাচীন ইস্রায়েলীয়রা দেখিয়েছিল, বিশ্বাসের অভাবের কারণে তাদের হৃদয় কঠিন হয়ে পড়েছে? (খ) এই ঘটনা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
৭ যিহোবা যখন ইস্রায়েলীয়দের মিশরের দাসত্ব থেকে উদ্ধার করেছিলেন, তখন ইস্রায়েলীয়রা তাঁকে অনেক অলৌকিক কাজ করতে দেখেছিল। তা সত্ত্বেও, তারা যখন প্রতিজ্ঞাত দেশের খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিল, তখন তাদের হৃদয় কঠিন হয়ে পড়েছিল। কেন? কারণ ঈশ্বরের প্রতি তাদের বিশ্বাস ছিল না। যিহোবার উপর নির্ভর করার পরিবর্তে তারা ভয় পেয়েছিল এবং মোশির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল। এমনকী তারা মিশরে ফিরে যেতে চেয়েছিল, যেখানে কিনা তারা আগে দাস ছিল! এর ফলে যিহোবা অনেক দুঃখ পেয়েছিলেন এবং এই কথা বলেছিলেন: “এই লোকেরা কত কাল আমাকে অবজ্ঞা করিবে?” (গণনা. ১৪:১-৪, ১১; গীত. ৭৮:৪০, ৪১) সেই ইস্রায়েলীয়রা প্রান্তরেই মারা গিয়েছিল কারণ তারা তাদের হৃদয়কে কঠিন করেছিল এবং বিশ্বাসের অভাব দেখিয়েছিল।
৮ বর্তমানে, আমরা নতুন জগতের খুব কাছাকাছি রয়েছি আর আমাদের বিশ্বাস পরীক্ষিত হচ্ছে। তাই, আমাদের বিশ্বাসের গুণগত মান পরীক্ষা করতে হবে। কীভাবে আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারি, আমাদের দৃঢ়বিশ্বাস রয়েছে? আমরা মথি ৬:৩৩ পদে উল্লেখিত যিশুর কথাগুলো পরীক্ষা করতে পারি। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমার লক্ষ্য ও সিদ্ধান্তগুলো কি প্রকাশ করে, আমি যিশুর কথাগুলো সত্যিই বিশ্বাস করি? আরও বেশি টাকা রোজগার করার জন্য আমি কি সভা অথবা ক্ষেত্রের পরিচর্যা বাদ দেব? কাজের জায়গায় আমাকে যদি আরও বেশি সময় ও শ্রম দিতে হয়, তা হলে আমি কী করব? আমি কি এই জগতের দ্বারা নিজেকে গঠিত হতে দেব আর এমনকী যিহোবার সেবা করা বন্ধ করে দেব?’
৯. আমরা বিশ্বাসে আছি কি না, তা আমাদের কেন সবসময় ‘পরীক্ষা করিয়া দেখা’ উচিত আর কীভাবে আমরা তা করতে পারি?
৯ কুসংসর্গ, সমাজচ্যুত করার ব্যবস্থা অথবা বিনোদন সম্বন্ধে বাইবেল যা বলে, আমরা যদি তা অনুসরণ না করি, তা হলে আমাদের হৃদয় কঠিন হয়ে পড়তে পারে। আপনার মধ্যে যদি এইরকম মনোভাব গড়ে উঠতে শুরু করে, তা হলে আপনাকে কী করতে হবে? আপনাকে অবিলম্বে নিজের বিশ্বাস পরীক্ষা করতে হবে! বাইবেল বলে, সবসময় “আপনাদের পরীক্ষা করিয়া দেখ, তোমরা বিশ্বাসে আছ কি না; প্রমাণার্থে আপনাদেরই পরীক্ষা কর।” (২ করি. ১৩:৫) নিজের প্রতি সৎ হোন এবং নিজের চিন্তাভাবনা সংশোধন করার জন্য নিয়মিতভাবে ঈশ্বরের বাক্য ব্যবহার করুন।
নরম মাটির মতো থাকুন
১০. আমরা যেন যিহোবার হাতে নরম মাটির মতো হতে পারি, সেইজন্য কোন বিষয়টা আমাদের সাহায্য করতে পারে?
১০ আমরা যেন নরম মাটির মতো থাকতে পারি, সেইজন্য ঈশ্বর আমাদেরকে তাঁর বাক্য, খ্রিস্টীয় মণ্ডলী এবং পরিচর্যা করার সুযোগ দিয়েছেন। আমরা যখন প্রতিদিন বাইবেল পড়ি ও তা নিয়ে ধ্যান করি, তখন আমরা যিহোবার হাতে নরম মাটির মতো হই এবং তাঁর দ্বারা নিজেদের গঠিত হতে দিই। যিহোবা ইস্রায়েলের রাজাদের আদেশ দিয়েছিলেন, যেন তারা ঈশ্বরের ব্যবস্থার একটা অনুলিপি লেখেন এবং প্রতিদিন তা পাঠ করেন। (দ্বিতীয়. ১৭:১৮, ১৯) পরবর্তী সময়ে প্রেরিতরা বুঝতে পেরেছিলেন, শাস্ত্র পাঠ করা ও তা নিয়ে ধ্যান করা তাদের পরিচর্যার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের লেখায় তারা শত শত বার ইব্রীয় শাস্ত্র থেকে উদ্ধৃতি করেছিলেন এবং লোকেদের কাছে প্রচার করার সময় তাদেরকেও শাস্ত্র ব্যবহার করতে উৎসাহিত করেছিলেন। (প্রেরিত ১৭:১১) একইভাবে, আমরাও বুঝতে পারি, প্রতিদিন ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করা ও তা নিয়ে ধ্যান করা গুরুত্বপূর্ণ। (১ তীম. ৪:১৫) তা করার মাধ্যমে আমরা নম্র মনোভাব বজায় রাখতে পারি আর এর ফলে যিহোবা আমাদের গঠন করতে পারেন।
১১, ১২. আমাদের প্রত্যেকের প্রয়োজন অনুযায়ী আমাদের গঠন করার জন্য যিহোবা কীভাবে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীকে ব্যবহার করতে পারেন? উদাহরণ দিন।
১১ আমাদের প্রত্যেকের কী প্রয়োজন, তা যিহোবা জানেন আর আমাদের গঠন করার জন্য তিনি খ্রিস্টীয় যিহোবাকে দোষ দেওয়া যায় না” এবং “বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করুন” শিরোনামের প্রবন্ধগুলো পড়ে তিনি উপকৃত হয়েছিলেন, যেগুলো ১৯৯৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছিল।
মণ্ডলীকে ব্যবহার করেন। আগে উল্লেখিত জিমের প্রতি একজন প্রাচীন যখন আগ্রহ দেখিয়েছিলেন, তখন তিনি নিজের মনোভাব পরিবর্তন করতে শুরু করেছিলেন। জিম বলেন: “আমার পরিণতির জন্য তিনি এক বারও আমাকে দায়ী করেননি অথবা আমার সমালোচনা করেননি। এর পরিবর্তে, তিনি ইতিবাচক মনোভাব বজায় রেখেছিলেন এবং সাহায্য করার আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছিলেন।” এর প্রায় তিন মাস পর, সেই প্রাচীন জিমকে একটা সভাতে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। জিম বলেন, মণ্ডলী তাকে সাদর অভ্যর্থনা জানিয়েছিল আর তাদের ভালোবাসা তাকে নিজের চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করতে সাহায্য করেছিল। তিনি বুঝতে শুরু করেছিলেন, নিজের অনুভূতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। জিমের মণ্ডলীর প্রাচীনরা ও জিমের স্ত্রী তাকে উৎসাহিত করেছিলেন আর তিনি ধীরে ধীরে আবারও যিহোবাকে সেবা করতে শুরু করেছিলেন। এ ছাড়া, “১২ পরবর্তী সময়ে, জিম আবারও একজন প্রাচীন হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। তখন থেকে তিনি অন্যান্য ভাইকে একইরকম সমস্যা কাটিয়ে উঠতে ও তাদের বিশ্বাস দৃঢ় করতে সাহায্য করে যাচ্ছেন। জিম বলেন, “আমি মনে করতাম, যিহোবার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, কিন্তু আসলে তা ছিল না! আমি এটা ভেবে আপশোস করি, অহংকারী মনোভাবের কারণে আমি আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি মনোযোগ না দিয়ে বরং অন্যদের ভুলত্রুটি নিয়ে অনবরত চিন্তা করেছিলাম।”—১ করি. ১০:১২.
১৩. ক্ষেত্রের পরিচর্যা আমাদেরকে কোন গুণাবলি গড়ে তুলতে সাহায্য করে আর এর ফল কী হয়?
১৩ এ ছাড়া, ক্ষেত্রের পরিচর্যা আমাদের গঠন করতে পারে এবং আমাদেরকে আরও ভালো ব্যক্তি হয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে। কীভাবে? আমরা যখন সুসমাচার প্রচার করি, তখন আমাদেরকে বিভিন্ন গুণ, যেমন নম্রতা এবং ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার ফলের বিভিন্ন দিক প্রদর্শন করতে হয়। (গালা. ৫:২২, ২৩) ক্ষেত্রের পরিচর্যায় রত হওয়ার মাধ্যমে আপনি যে-উত্তম গুণাবলি গড়ে তুলতে পেরেছেন, সেই বিষয়ে একটু চিন্তা করুন। আমরা যখন খ্রিস্টকে অনুকরণ করি, তখন লোকেরা আমাদের বার্তার প্রতি আকৃষ্ট হয় আর আমাদের প্রতি তাদের মনোভাব হয়তো পরিবর্তন হয়। উদাহরণ স্বরূপ, অস্ট্রেলিয়ায় দু-জন সাক্ষি একজন মহিলার ঘরে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন। এতে সেই মহিলা অত্যন্ত রেগে গিয়েছিলেন এবং তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু সেই সাক্ষিরা সম্মান দেখিয়ে তার কথা শুনেছিলেন। পরবর্তী সময়ে সেই মহিলা নিজের আচরণের জন্য আপশোস করেছিলেন এবং শাখা অফিসের কাছে একটা চিঠি লিখেছিলেন। চিঠিতে তিনি নিজের আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমি খুব বোকা, ঈশ্বরের বাক্য ছড়িয়ে দিচ্ছে এমন দু-জন ব্যক্তির সঙ্গে আমি খুব খারাপ ব্যবহার করেছি।” এই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বুঝতে পারি, প্রচার করার সময় মৃদুশীল হওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এটা ঠিক, আমাদের পরিচর্যা অন্যদের সাহায্য করে, তবে এই পরিচর্যা আমাদের নিজেদের ব্যক্তিত্ব উন্নত করতেও সাহায্য করে।
সন্তানদের গঠন করার সময় ঈশ্বরের সঙ্গে কাজ করুন
১৪. বাবা-মায়েরা যদি তাদের সন্তানদের সত্যিই সঠিকভাবে গঠন করতে চান, তা হলে তাদের কী করতে হবে?
১৪ ছোটো ছেলে-মেয়েরা সাধারণত নম্র ও শিখতে ইচ্ছুক হয়ে থাকে। (মথি ১৮:১-৪) তাই, সন্তানরা ছোটো থাকতেই বাবা-মায়েরা যদি তাদের সত্য শেখানোর জন্য ও সত্যের প্রতি ভালোবাসা গড়ে তোলার জন্য সাহায্য করেন, তা হলে সেটা বিজ্ঞতার কাজ। (২ তীম. ৩:১৪, ১৫) এই ক্ষেত্রে সফল হওয়ার জন্য বাবা-মায়েদের অবশ্যই সত্যকে প্রথমে নিজেদের ভালোবাসতে হবে এবং বাইবেল যা বলে, তা নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করতে হবে। বাবা-মায়েরা যখন তা করেন, তখন তাদের সন্তানদের জন্য সত্যকে ভালোবাসা আরও সহজ হয়ে ওঠে। এ ছাড়া, সন্তানরা বুঝতে পারে, বাবা-মায়ের কাছ থেকে পাওয়া শাসন প্রকাশ করে যে, তাদের বাবা-মা ও সেইসঙ্গে যিহোবা তাদের ভালোবাসেন।
১৫, ১৬. সন্তান যখন সমাজচ্যুত হয়, তখন বাবা-মায়েদের কীভাবে ঈশ্বরের প্রতি নির্ভরতা দেখানো উচিত?
১৫ এমনকী বাবা-মায়েরা সন্তানদের সত্য শেখানোর পরও, তাদের মধ্যে কেউ কেউ যিহোবার কাছ থেকে দূরে সরে যায় অথবা সমাজচ্যুত হয়। এমনটা হলে তাদের পরিবার অনেক কষ্ট পায়। দক্ষিণ আফ্রিকার একজন বোন বলেছিলেন: “আমার ভাই যখন সমাজচ্যুত হয়েছিল, তখন মনে হয়েছিল, যেন সে মারা গিয়েছে। সেটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ছিল!” কিন্তু, সেই বোন ও তার বাবা-মা কী করেছিলেন? তারা বাইবেলের নির্দেশনা পালন করেছিলেন। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৫:১১, ১৩.) তার বাবা-মা জানতেন, তারা যদি ঈশ্বরের পরামর্শের বাধ্য হন, তা হলে সেটা সবার জন্য মঙ্গলজনক হবে। আর সমাজচ্যুত করার ব্যবস্থাকে তারা যিহোবার কাছ থেকে এক প্রেমপূর্ণ শাসন হিসেবে দেখেছিলেন। তাই, তারা শুধুমাত্র সেই সময়ে তাদের ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, যখন কোনো একটা বিষয় পরিবারের জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল।
১৬ তাদের সেই ছেলে কেমন অনুভব করেছিলেন? পরবর্তী সময়ে তিনি বলেছিলেন, “আমি জানতাম, আমার পরিবার আমাকে ঘৃণা করে না, বরং তারা যিহোবা ও তাঁর সংগঠনের প্রতি বাধ্যতা দেখাচ্ছে।” তিনি আরও বলেছিলেন, “আপনাকে যখন যিহোবার কাছে সাহায্য ও ক্ষমা চাওয়ার জন্য বাধ্য করা হয়, তখন আপনি বুঝতে পারেন, যিহোবাকে আপনার কতটা প্রয়োজন।” সেই যুবক যখন যিহোবার কাছে ফিরে এসেছিলেন, তখন তার পরিবার কতটা আনন্দিত হয়েছিল, তা একটু কল্পনা করে দেখুন! হ্যাঁ, আমরা যদি সবসময় ঈশ্বরের বাধ্য থাকি, তা হলে আমরা সুখী ও সফল হতে পারব।—হিতো. ৩:৫, ৬; ২৮:২৬.
১৭. আমাদের জীবনধারায় কেন আমাদের যিহোবার প্রতি বশ্যতা দেখাতে হবে আর তা দেখানোর মাধ্যমে আমরা কীভাবে উপকৃত হব?
১৭ ভাববাদী যিশাইয় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, বাবিলে বন্দি থাকা যিহুদিরা অনুতপ্ত হবে এবং বলবে: “হে সদাপ্রভু, তুমি আমাদের পিতা; আমরা মৃত্তিকা, আর তুমি আমাদের কুম্ভকার; আমরা সকলে তোমার হস্তকৃত বস্তু।” এ ছাড়া, তারা যিহোবার কাছে এই মিনতি করবে: “চিরকাল অপরাধ মনে রাখিও না; বিনতি করি, দেখ, দৃষ্টি কর, আমরা সকলে তোমার প্রজা।” (যিশা. ৬৪:৮, ৯) আমরা যদি নম্র হই এবং সবসময় যিহোবার বাধ্য থাকি, তা হলে আমরা তাঁর কাছে মহাপ্রীতির পাত্র হয়ে উঠতে পারি, যেমনটা দানিয়েল হয়েছিলেন। এ ছাড়া, যিহোবা তাঁর বাক্য, পবিত্র আত্মা এবং সংগঠনের মাধ্যমে আমাদের ক্রমাগত গঠন করবেন, যেন ভবিষ্যতে আমরা সিদ্ধতায় পৌঁছে ‘ঈশ্বরের সন্তান’ হয়ে উঠতে পারি।—রোমীয় ৮:২১.