তারা স্বেচ্ছায় নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছেন—মিয়ানমারে
“শস্য প্রচুর বটে, কিন্তু কার্য্যকারী লোক অল্প; অতএব শস্যক্ষেত্রের স্বামীর নিকটে প্রার্থনা কর, যেন তিনি নিজ শস্যক্ষেত্রে কার্য্যকারী লোক পাঠাইয়া দেন।” (লূক ১০:২) প্রায় ২,০০০ বছর আগে বলা যিশুর এই কথাগুলো বর্তমানে মিয়ানমারের পরিস্থিতির বিষয়ে ভালোভাবে বর্ণনা করে। কেন? কারণ মিয়ানমারে প্রায় ৪,২০০ জন প্রকাশক ৫ কোটি ৫০ লক্ষ লোকের কাছে সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছে।
তবে, ‘শস্যক্ষেত্রের স্বামী’ অর্থাৎ যিহোবা বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার ভাই ও বোনের হৃদয় স্পর্শ করেছেন আর তারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশে এসেছে, যাতে তারা আধ্যাত্মিক শস্যচ্ছেদনের কাজে সাহায্য করতে পারে। কী তাদের নিজেদের দেশ ছেড়ে এখানে আসতে অনুপ্রাণিত করেছে? কীভাবে তাদের এখানে চলে আসার জন্য সাহায্য করা হয়েছে? আর তারা কোন কোন আশীর্বাদ উপভোগ করছে? আসুন, আমরা দেখি।
“আসুন, আমাদের আরও অগ্রগামীর প্রয়োজন রয়েছে!”
কয়েক বছর আগে, কাজুহিরো নামে জাপানের একজন অগ্রগামী ভাই হঠাৎই মৃগিরোগের দ্বারা আক্রান্ত হন এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন আর তাই, তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার ডাক্তার তাকে দু-বছর পর্যন্ত গাড়ি চালাতে বারণ করেন। এটা শুনে, ভাই কাজুহিরো খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি ভাবেন, ‘আমি তো অগ্রগামীর কাজ অনেক ভালোবাসি কিন্তু এখন কীভাবে তা চালিয়ে যাব?’ তিনি মন থেকে প্রার্থনা করে যিহোবার কাছে মিনতি করেন যেন তিনি তার সামনে অগ্রগামীর কাজ চালিয়ে যাওয়ার পথ খুলে দেন।
ভাই বলেন: “এর এক মাস পর, আমার একজন বন্ধু আমার সমস্যার বিষয়ে জানতে পারেন, যিনি সেইসময় মিয়ানমারে সেবা করছিলেন। তিনি ফোন করে আমাকে বলেন: ‘মিয়ানমারে লোকেরা মূলত বাসে করেই যাতায়াত করে। তুমি যদি এখানে আসো, তা হলে তুমি গাড়ি না চালিয়েই প্রচার করে যেতে পারবে!’ আমি আমার ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করি যে, আমার স্বাস্থ্যগত সমস্যা সত্ত্বেও আমি মিয়ানমারে গিয়ে থাকতে পারি কি না। আশ্চর্যের বিষয় হল, ডাক্তার আমাকে বলেন: ‘মিয়ানমার থেকে একজন মস্তিষ্কের বিশেষজ্ঞ এই মুহূর্তে জাপানে এসেছেন। আমি আপনার সঙ্গে ওনার পরিচয় করিয়ে দেব। আপনি যদি আবার কখনো মৃগিরোগের দ্বারা আক্রান্ত হন, তা হলে তিনি আপনার যত্ন নিতে পারবেন।’ আমি আমার ডাক্তারের এই কথাগুলোকে যিহোবার কাছে করা প্রার্থনার উত্তর হিসেবে দেখেছিলাম।”
ভাই কাজুহিরো সঙ্গেসঙ্গে মিয়ানমারের শাখা অফিসে ই-মেল পাঠিয়ে বলেন যে, তিনি ও তার স্ত্রী সেই দেশে অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে চান। মাত্র পাঁচ দিন পরই, শাখা অফিস তাদের জানায়, “আসুন, আমাদের আরও অগ্রগামীর প্রয়োজন রয়েছে!” কাজুহিরো ও তার স্ত্রী মারি তাদের দুটো গাড়ি বিক্রি করে দেন, ভিসা নেন আর প্লেনের টিকিট কাটেন। বর্তমানে, তারা আনন্দের সঙ্গে ম্যান্ডেলে শহরে একটা সাংকেতিক ভাষার দলের সঙ্গে সেবা করছেন। কাজুহিরো বলেন: “এই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আমরা অনুভব করি যে, গীতসংহিতা ৩৭:৫ পদে বলা ঈশ্বরের এই প্রতিজ্ঞার উপর আমাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়েছে: ‘তোমার গতি সদাপ্রভুতে অর্পণ কর, তাঁহাতে নির্ভর কর, তিনিই কার্য্য সাধন করিবেন।’”
যিহোবা পথ খুলে দেন
২০১৪ সালে মিয়ানমারের যিহোবার সাক্ষিদের একটা বিশেষ সম্মেলনের আয়োজন করার সুযোগ হয়েছিল। বিভিন্ন দেশ থেকে অভ্যাগতরা সেই সম্মেলনে এসেছিল। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন মোনিক নামে ৩৪ বছর বয়সি যুক্তরাষ্ট্রের একজন বোন। তিনি বলেন: “সম্মেলন থেকে ফিরে আসার পর, আমি যিহোবার কাছে এই নিয়ে প্রার্থনা করি যে, এরপর আমার কী করা উচিত। এ ছাড়া, আমি যিহোবার সেবায় আমার লক্ষ্যগুলো নিয়ে আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলি। আমাদের সবারই মনে হয়েছিল যে, আমার মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া উচিত। তবে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কিছুটা সময় ও অনেক প্রার্থনার প্রয়োজন হয়।” কেন? আসুন, আমরা বোন মোনিকের কাছ থেকে তা শুনি।
“যিশু তাঁর অনুসারীদের ‘ব্যয় হিসাব করিয়া দেখিতে’ উৎসাহিত করেছিলেন। তাই আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করি: ‘আমার কি সেই দেশে চলে যাওয়ার মতো সামর্থ্য রয়েছে? আমি কি সেই দেশে যাওয়ার পর চাকরির পিছনে বেশি সময় ব্যয় না করেই নিজের ভরণ-পোষণ জোগাতে পারব?’” তিনি স্বীকার করেন: “আমি খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে পারি যে, পৃথিবীর অন্য প্রান্তে থাকা সেই দেশে যাওয়ার জন্য আমার কাছে যথেষ্ট অর্থ নেই।” তা হলে, কীভাবে তিনি সেই দেশে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন?—লূক ১৪:২৮.
বোন বলেন: “একদিন, আমার কর্মকর্তা আমাকে ডেকে পাঠান। আমি খুব ঘাবড়ে যাই কারণ আমি ভেবেছিলাম, আমাকে বোধহয় চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হবে। কিন্তু এর পরিবর্তে, আমার কর্মকর্তা আমার ভালো কাজের জন্য আমাকে ধন্যবাদ জানান। এরপর তিনি বলেন যে, তিনি আমার জন্য বোনাসের ব্যবস্থা করেছেন আর সেই বোনাসের মাধ্যমে আমি ঠিক ততটাই অর্থ লাভ করেছিলাম, যতটা আমার ঋণ শোধ করার জন্য প্রয়োজন ছিল!”
বোন মোনিক ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে মিয়ানমারে সেবা করছেন। যেখানে বেশি প্রয়োজন, সেখানে গিয়ে পরিচর্যায় সেবা করার বিষয়ে তিনি কেমন অনুভব করেন? তিনি বলেন, ‘আমি এখানে সেবা করতে পেরে খুবই আনন্দিত। এখন আমি তিনটে বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করছি। তাদের মধ্যে একজন ছাত্রীর বয়স ৬৭ বছর। প্রতি বার দেখা হলেই, তিনি মিষ্টিভাবে হাসেন আর আমাকে জড়িয়ে ধরেন। তিনি যখন জানতে পেরেছিলেন যে, ঈশ্বরের নাম যিহোবা, তখন তিনি আর চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। তিনি বলেছিলেন: “জীবনে এই প্রথম বার আমি জানতে পেরেছি যে, ঈশ্বরের নাম যিহোবা। তুমি আমার চেয়ে বয়সে অনেক ছোটো, তারপরও তুমি আমাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা শিখিয়েছ।” বুঝতেই পারছেন, তার কথা শুনে আমারও চোখে জল এসে গিয়েছিল। এইরকম অভিজ্ঞতাগুলোর ফলে, যেখানে বেশি প্রয়োজন, সেখানে গিয়ে সেবা করা জীবনকে সত্যিই পরিতৃপ্তিদায়ক করে তোলে।’ সম্প্রতি, বোন মোনিকের রাজ্যের সুসমাচার প্রচারকদের জন্য স্কুল-এ যোগ দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল।
আরেকটা যে-বিষয় কাউকে কাউকে মিয়ানমারে আসার জন্য অনুপ্রাণিত করেছে, তা হল যিহোবার সাক্ষিদের বর্ষপুস্তক ২০১৩ (ইংরেজি) বইয়ে দেওয়া এই দেশের বিবরণ। লি নামে একজন বোন, যার বয়স ৩০-এর কোঠার প্রথম দিকে, ইতিমধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাস করতেন। তিনি একটা পূর্ণসময়ের চাকরি করতেন কিন্তু বর্ষপুস্তক-এর সেই বিবরণটা তাকে মিয়ানমারে গিয়ে সেবা করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল। তিনি বলেন, “২০১৪ সালে আমি যখন ইয়ানগনে বিশেষ সম্মেলনে যোগ দিই, তখন আমার এক বিবাহিত দম্পতির সঙ্গে দেখা হয়, যারা যেখানে বেশি প্রয়োজন, সেখানে গিয়ে সেবা করার জন্য মিয়ানমারের এমন একটা এলাকায় সেবা করছিলেন, যেখানে চাইনিজ লোকেরা থাকে। যেহেতু আমি চাইনিজ ভাষায় কথা বলতে পারি, তাই আমি মিয়ানমারে গিয়ে সেখানকার চাইনিজভাষী দলকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিই। আমি বোন মোনিকের সঙ্গে কথা বলি আর আমরা ম্যান্ডেলে শহরে চলে যাই। যিহোবার আশীর্বাদে আমরা একই স্কুলে শিক্ষিকা হিসেবে কাজ করার পার্ট-টাইম চাকরি পাই আর থাকার জন্য সেই স্কুলের কাছেই একটা আ্যপার্টমেন্ট খুঁজে পাই। এখানকার গরম আবহাওয়া ও কিছু অসুবিধা সত্ত্বেও, এখানে পরিচর্যায় কাজ করতে আমার খুব ভালো লাগে। মিয়ানমারের লোকেরা সাদাসিধে জীবনযাপন করে। তবে, তারা ভদ্র আচরণ করে আর সুসমাচার শোনার জন্য সময় বের করে নিতে ইচ্ছুক হয়। যিহোবা তাঁর কাজকে কীভাবে দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি করছেন, তা দেখা খুবই রোমাঞ্চকর। আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, আমি যে ম্যান্ডেলে শহরে এসে সেবা করছি, এটা যিহোবারই ইচ্ছা!”
যিহোবা প্রার্থনা শোনেন
যেখানে বেশি প্রয়োজন, সেখানে গিয়ে সেবা করছে, এমন ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই প্রার্থনার শক্তি অনুভব করেছে। উদাহরণ স্বরূপ, ভাই জুমপে ও তার স্ত্রী নায়োর কথা বিবেচনা করুন, যাদের দু-জনেরই বয়স ৩০-এর কোঠার মাঝের দিকে। তারা ইতিমধ্যেই জাপানের একটা সাংকেতিক ভাষার মণ্ডলীতে সেবা করছিলেন। কেন তারা
মিয়ানমারে চলে এসেছেন? ভাই জুমপে বলেন: “আমার ও আমার স্ত্রীর প্রথম থেকেই এই লক্ষ্য ছিল যেন আমরা বিদেশে গিয়ে যেখানে বেশি প্রয়োজন, সেখানে সেবা করি। জাপানে আমাদের সাংকেতিক ভাষার মণ্ডলীর একজন ভাই মিয়ানমারে সেবা করার জন্য চলে গিয়েছিলেন। যদিও আমাদের কাছে খুব অল্প অর্থ জমানো ছিল, তা সত্ত্বেও ২০১০ সালের মে মাসে আমরাও সেখানে চলে যাই। মিয়ানমারের ভাই-বোনেরা আন্তরিকভাবে আমাদের স্বাগত জানিয়েছিল!” মিয়ানমারে সাংকেতিক ভাষার ক্ষেত্রের বিষয়ে তিনি কেমন অনুভব করেন? “লোকেরা প্রচুর আগ্রহ দেখায়। আমরা যখন বধির গৃহকর্তাদের সাংকেতিক ভাষার ভিডিওগুলো দেখাই, তখন তারা খুবই রোমাঞ্চিত হয়। আমরা যে এখানে এসে যিহোবার সেবা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সেটার জন্য আমরা খুবই আনন্দিত!”কীভাবে এই দম্পতি তাদের আর্থিক সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন? “এখানে আসার তিন বছর পর আমাদের জমানো অর্থের বেশিরভাগটাই শেষ হয়ে এসেছিল আর আমাদের কাছে পরের বছরের জন্য বাড়িভাড়া দেওয়ার মতো যথেষ্ট অর্থ ছিল না। আমরা অনেক বার আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করেছিলাম। একদিন, খুবই অপ্রত্যাশিতভাবে শাখা অফিসের কাছ থেকে একটা চিঠি আসে, যেটাতে আমাদের সাময়িক বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে সেবা করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়! আমরা যিহোবার উপর আস্থা রেখেছিলাম আর বুঝেছিলাম যে, তিনি আমাদের পরিত্যাগ করেননি। তিনি প্রতিটা ক্ষেত্রে আমাদের যত্ন নিয়েছেন।” সম্প্রতি, এই দম্পতির রাজ্যের সুসমাচার প্রচারকদের জন্য স্কুল-এ যোগ দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল।
যিহোবা অনেক ব্যক্তিকে অনুপ্রাণিত করেন
ভাই সিমোনের জন্ম হয়েছিল ইতালিতে আর এখন তার বয়স ৪৩ বছর। তার স্ত্রী আ্যনার জন্ম হয়েছিল নিউজিল্যান্ডে আর এখন তার বয়স ৩৭ বছর। তারা মিয়ানমারে সেবা করার জন্য চলে এসেছেন। কী তাদের অনুপ্রাণিত করেছিল? বোন আ্যনা বলেন: “আমরা বর্ষপুস্তক ২০১৩ বইয়ে দেওয়া মিয়ানমারের বিবরণ পড়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম!” ভাই সিমোনে বলেন: “মিয়ানমারে সেবা করা সত্যিই এক মহৎ সুযোগ। এখানে জীবন খুবই সাদাসিধে আর তাই, আমি যিহোবার কাজে আরও বেশি সময় দিতে পারি। আমরা যখন যেখানে বেশি প্রয়োজন, সেখানে গিয়ে সেবা করি, তখন যিহোবা আমাদের যে-যত্ন প্রদান করেন, সেটা অনুভব করা সত্যিই রোমাঞ্চকর।” (গীত. ১২১:৫) বোন আ্যনা বলেন: “আমি এখানে সবচেয়ে বেশি সুখ খুঁজে পেয়েছি। আমরা সাদাসিধে জীবনযাপন করি। আমি আমার স্বামীর সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটাই আর এর ফলে, আমরা আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। এ ছাড়া, আমরা অনেকের সঙ্গে মূল্যবান বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পেরেছি। লোকেদের মনে সাক্ষিদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ নেই আর ক্ষেত্রের পরিচর্যায় তারা যে-আগ্রহ দেখিয়ে থাকে, সেটা সত্যিই অসাধারণ!” কেন তিনি এমনটা মনে করেন?
বোন আ্যনা বলেন: “একদিন, বাজারে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীর কাছে সাক্ষ্য দিই আর তার সঙ্গে আবারও দেখা করার ব্যবস্থা করি। আমি যখন পরের বার তার কাছে যাই, তখন দেখি, সে তার এক বান্ধবীকে নিয়ে এসেছে। এর পরের বার, সে আরও কয়েক জন বান্ধবীকে নিয়ে আসে। পরে, সে আগের চেয়ে বেশি বান্ধবীকে নিয়ে আসে। বর্তমানে, আমি তাদের মধ্যে পাঁচ জনের সঙ্গে অধ্যয়ন করছি।” ভাই সিমোনে বলেন: “ক্ষেত্রের পরিচর্যায় যাদের সঙ্গে দেখা হয়, তারা বন্ধুত্বপরায়ণ ও কৌতূহলী স্বভাবের। অনেকেই আগ্রহ দেখিয়ে থাকে। সত্যি বলতে কী, এত আগ্রহী ব্যক্তির যত্ন নেওয়ার জন্য আমাদের হাতে যথেষ্ট সময়ই থাকে না।”
কিন্তু, মিয়ানমারে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ব্যাবহারিক পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে কী বলা যায়? মিজুহো নামে জাপানের একজন বোন বলেন: “আমার ও আমার স্বামী সাচিওর প্রথম থেকেই এই ইচ্ছা ছিল যেন আমরা এমন একটা দেশে গিয়ে সেবা করি, যেখানে সুসমাচার প্রচারকদের বেশি প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন ছিল, কোথায়? বর্ষপুস্তক ২০১৩ বইয়ে দেওয়া মিয়ানমারের বিবরণ পড়ার সময়ে
আমরা সেখানে উল্লেখিত হৃদয়গ্রাহী অভিজ্ঞতাগুলোর দ্বারা এতটাই অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম যে, আমরা বিবেচনা করতে শুরু করেছিলাম, মিয়ানমারে গিয়ে সেবা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে কি না।” ভাই সাচিও আরও বলেন: “আমরা এক সপ্তাহের জন্য মিয়ানমারের প্রধান শহর ইয়ানগনে গিয়ে জায়গাটা ঘুরে দেখার সিদ্ধান্ত নিই। আমরা বিভিন্ন তথ্য লাভ করার উদ্দেশ্যে অল্পসময়ের জন্য সেখানে যে-পরিদর্শন করি, সেটা আমাদের এই উপসংহারে পৌঁছাতে সাহায্য করে যে, আমাদের সেখানে চলে যাওয়া উচিত।”আপনি কি আমন্ত্রণে সাড়া দিতে পারেন?
ভাই রাডনি ও তার স্ত্রী জেন, যাদের দু-জনেরই বয়স ৫০-এর কোঠায় এবং তাদের ছেলে জর্ডান ও মেয়ে ড্যানিকা ২০১০ সালে যেখানে বেশি প্রয়োজন, সেখানে গিয়ে সেবা করার জন্য অস্ট্রেলিয়া থেকে মিয়ানমারে চলে এসেছেন। ভাই রাডনি বলেন: “আমরা এটা দেখে খুবই অভিভূত হয়েছিলাম যে, লোকেরা ঈশ্বর সম্বন্ধে জানতে কতটা আগ্রহী। আমি অন্য পরিবারগুলোকেও উৎসাহিত করতে চাই যেন তারা মিয়ানামারের মতো কোনো জায়গায় গিয়ে সেবা করার চেষ্টা করে।” কেন? “এই অভিজ্ঞতা যেভাবে আমাদের যিহোবার নিকটবর্তী করে তুলেছে, তা দেখা সত্যিই দারুণ! বর্তমানে, অনেক অল্পবয়সি তাদের ফোন, গাড়ি, চাকরি ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত ব্যস্ত। কিন্তু, আমাদের সন্তানেরা এমন নতুন নতুন শব্দ শিখতে ব্যস্ত, যেগুলো তারা পরিচর্যায় ব্যবহার করতে পারবে। তারা এটা শেখার চেষ্টা করে যে, কীভাবে তারা এমন কারো সঙ্গে যুক্তি করতে পারে, যিনি বাইবেলের সঙ্গে পরিচিত নন আর কীভাবে স্থানীয় মণ্ডলীর সভাগুলোর সময়ে তারা উত্তর দিতে পারে। এ ছাড়া, তারা আমাদের উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য আগ্রহজনক বিষয় নিয়েও ব্যস্ত থাকে।”
আলাভার নামে ৩৭ বছর বয়সি যুক্তরাষ্ট্রের একজন ভাই ব্যাখ্যা করেন যে, কেন তিনি এই ধরনের সেবাকে খুব ভালো এক বিষয় বলে মনে করেন: “নিজের পরিচিত জায়গা ও লোকেদের ছেড়ে অন্য জায়গায় গিয়ে সেবা করার ফলে আমি অনেক উপকার লাভ করেছি। বাড়ি থেকে দূরে এক জায়গায় সেবা করার ফলে আমি যিহোবার উপর আমার আস্থা ও নির্ভরতা বৃদ্ধি করতে পেরেছি, তা আমাকে যে-পরিস্থিতিরই মুখোমুখি হতে হয় না কেন। আমি এমন ভাইদের সঙ্গে সেবা করছি, যাদের আমি আগে চিনতাম না, তবে আমরা আমাদের বিশ্বাসের কারণে একতাবদ্ধ। একমাত্র ঈশ্বরের রাজ্যই এমনটা করতে পারে!” বর্তমানে, ভাই আলাভার ও তার স্ত্রী আ্যনা উদ্যোগের সঙ্গে চাইনিজভাষী ক্ষেত্রে সেবা করে যাচ্ছেন।
ট্রেজেল নামে ৫২ বছর বয়সি অস্ট্রেলিয়ার একজন বোন ২০০৪ সাল থেকে মিয়ানমারে সেবা করছেন। তিনি বলেন: “যাদের পরিস্থিতি অন্য কোথাও গিয়ে সেবা করার অনুমতি দেয়, আমি তাদের জোরালোভাবে উৎসাহিত করি যেন তারা যেখানে বেশি প্রয়োজন, সেখানে গিয়ে সেবা করে। আমি দেখেছি যে, একজন ব্যক্তির মনে যদি সেবা করার ইচ্ছা থাকে, তা হলে যিহোবা তার প্রচেষ্টায় আশীর্বাদ করেন। আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি যে, আমি এখানে এসে এভাবে সেবা করতে পারব। এটা হল সবচেয়ে পরিতৃপ্তিদায়ক জীবন, যেটার মাধ্যমে আমি প্রচুর আশীর্বাদ লাভ করছি।”
যেখানে বেশি প্রয়োজন, সেখানে গিয়ে সেবা করার জন্য যারা মিয়ানমারে সেবা করছেন, তাদের এই আন্তরিক মন্তব্যগুলো যেন আপনাকেও উৎসাহিত করে, যাতে আপনি এমন এলাকাগুলোতে গিয়ে সৎহৃদয়বান ব্যক্তিদের সাহায্য করার বিষয়টা বিবেচনা করেন, যেখানে আগে কখনো প্রচার করা হয়নি। সত্যিই, যেখানে বেশি প্রয়োজন, সেখানে গিয়ে সেবা করার জন্য যারা মিয়ানমারে সেবা করছেন, তারা জোরগলায় বলছেন: “দয়া করে পার হয়ে মিয়ানমারে এসে আমাদের উপকার করুন!”