অল্পবয়সিরা, তোমাদের মনোযোগ কি যিহোবার সেবায় তোমাদের লক্ষ্যগুলোর উপর কেন্দ্রীভূত?
“তুমি যা-ই কর না কেন তার ভার সদাপ্রভুর উপর ফেলে দাও; তাতে তোমার পরিকল্পনা সফল হবে।”—হিতো. ১৬:৩.
১-৩. (ক) সমস্ত অল্পবয়সি কোন পরিস্থিতিতে রয়েছে আর আমরা তাদের পরিস্থিতিকে কীসের সঙ্গে তুলনা করতে পারি? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখো।) (খ) কী এই পরিস্থিতিতে থাকা অল্পবয়সি খ্রিস্টানদের সাহায্য করবে?
কল্পনা করো, তুমি অনেক দূরে একটা শহরে কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে যাওয়ার পরিকল্পনা করছ। সেখানে যাওয়ার জন্য তোমাকে একটা বাস ধরতে হবে। বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে তুমি প্রথমে একটু ঘাবড়ে যাও কারণ সেখানে প্রচুর লোক রয়েছে এবং অনেক বাস দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু ভালো যে, তুমি একেবারে সঠিকভাবে জানো, তুমি কোথায় যেতে চাও এবং কোন বাসটা তোমাকে ধরতে হবে। তুমি সেই বাস ছাড়া অন্য কোনো বাস ধরবে না কারণ তুমি জানো, সেগুলো তোমাকে ভুল দিকে নিয়ে যাবে।
২ জীবন হল একটা যাত্রার মতো এবং অল্পবয়সিরা, তোমরা হলে সেই বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা লোকেদের মতো। কখনো কখনো, জীবনে এত বাছাই ও সুযোগের মুখোমুখি হতে হয় যে, তোমরা ঘাবড়ে যেতে পার। কিন্তু, তোমরা যদি একেবারে সঠিকভাবে জানো, তোমরা কোথায় যেতে চাও, তা হলে তোমাদের পক্ষে সঠিক বাছাইগুলো করা আরও সহজ হবে। তোমাদের কোন দিকে যাওয়া উচিত?
৩ এই প্রবন্ধ এই প্রশ্নের উত্তর দেবে এবং তোমাদের উৎসাহিত করবে যেন তোমরা যিহোবাকে খুশি করার উপর তোমাদের জীবনকে কেন্দ্রীভূত করতে পার। তা করার অর্থ হল, জীবনে তোমাদের যে-সমস্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যেমন তোমরা কোন শিক্ষা অথবা হিতোপদেশ ১৬:৩. *
চাকরি গ্রহণ করবে কিংবা তোমরা বিয়ে করা অথবা সন্তান নেওয়া বেছে নেবে কি না, সেগুলোর ক্ষেত্রে যিহোবার পরামর্শ অনুসরণ করা। আর তা করার অর্থ হল, যিহোবার সেবায় তোমাদের লক্ষ্যগুলোর অর্থাৎ যে-লক্ষ্যগুলো তোমাদের যিহোবার আরও নিকটবর্তী করবে, সেগুলোতে পৌঁছানোর জন্য কাজ করা। তোমরা যদি যিহোবার সেবা করার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখো, তা হলে তোমরা নিশ্চিত থাকতে পার যে, তিনি তোমাদের আশীর্বাদ করবেন এবং সফল হতে সাহায্য করবেন।—পড়ুন,কেন যিহোবার সেবায় বিভিন্ন লক্ষ্য স্থাপন করবে?
৪. আমরা এই প্রবন্ধে কী পরীক্ষা করব?
৪ যিহোবার সেবায় বিভিন্ন লক্ষ্য স্থাপন করা এক ভালো বিষয়। কেন? আমরা এই বিষয়ে তিনটে কারণ পরীক্ষা করব। প্রথম ও দ্বিতীয় কারণটা তোমাকে বুঝতে সাহায্য করবে যে, যিহোবার সেবায় বিভিন্ন লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কাজ করা তোমাকে তাঁর আরও ভালো বন্ধু করে তুলবে। তৃতীয় কারণটা তোমাকে বুঝতে সাহায্য করবে যে, অল্পবয়সেই এই লক্ষ্যগুলো স্থাপন করা কেন ভালো।
৫. যিহোবার সেবায় বিভিন্ন লক্ষ্য স্থাপন করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ কী?
৫ যিহোবার সেবায় বিভিন্ন লক্ষ্য স্থাপন করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল যিহোবার প্রেম আর সেইসঙ্গে তিনি আমাদের জন্য যা-কিছু করেছেন, সেগুলোর জন্য তাঁকে ধন্যবাদ দেওয়া। গীতসংহিতার একজন রচয়িতা বলেছিলেন: “সদাপ্রভুর স্তব করা [“ধন্যবাদ দেওয়া,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন] . . . উত্তম; কেননা, হে সদাপ্রভু, তুমি আপন কার্য্য দ্বারা আমাকে আহ্লাদিত করিয়াছ; আমি তোমার হস্তকৃত কার্য্য সকলে জয়ধ্বনি করিব।” (গীত. ৯২:১, ৪) যিহোবা তোমাকে যা-কিছু দিয়েছেন, সেগুলো নিয়ে চিন্তা করো: তোমার জীবন, যিহোবা ও তাঁর সম্বন্ধে সত্য জানার সুযোগ, বাইবেল, মণ্ডলী এবং পরমদেশে চিরকাল বেঁচে থাকার আশা। তুমি যিহোবার সেবায় বিভিন্ন লক্ষ্য স্থাপন করার মাধ্যমে এই সমস্ত বিষয়ের জন্য তাঁকে ধন্যবাদ দিয়ে থাকো আর এটা তোমাকে তাঁর আরও নিকটবর্তী করে তোলে।
৬. (ক) কীভাবে যিহোবার সেবায় তোমার লক্ষ্যগুলো তাঁর সঙ্গে তোমার সম্পর্ককে প্রভাবিত করে? (খ) এমন কিছু লক্ষ্য কী, যেগুলো তুমি অল্পবয়সেই স্থাপন করতে পার?
৬ যিহোবার সেবায় বিভিন্ন লক্ষ্য স্থাপন করার দ্বিতীয় কারণটা হল তুমি যখন সেগুলোতে পৌঁছানোর জন্য কাজ করো, তখন তুমি আসলে যিহোবার জন্য ভালো কাজগুলো করো। এটা তোমাকে তাঁর আরও নিকটবর্তী করে তুলবে। প্রেরিত পৌল প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “ঈশ্বর অন্যায়কারী নহেন; তোমাদের কার্য্য, এবং . . . তাঁহার নামের প্রতি প্রদর্শিত তোমাদের প্রেম, এই সকল তিনি ভুলিয়া যাইবেন না।” (ইব্রীয় ৬:১০) লক্ষ্য স্থাপন করার জন্য তোমার বয়স কখনোই অল্প নয়। উদাহরণ স্বরূপ, ক্রিসটিনা যখন নিয়মিতভাবে বিশ্বস্ত সাক্ষিদের জীবনকাহিনি পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তখন তার বয়স ছিল ১০ বছর। টোবি যখন বাপ্তিস্ম নেওয়ার আগে পুরো বাইবেল পড়ে শেষ করার লক্ষ্য স্থাপন করেছিল, তখন তার বয়স ছিল ১২ বছর। মাক্সিম ও তার বোন নয়েমি যখন বাপ্তিস্ম নিয়েছিল, তখন তাদের বয়স ছিল ১১ ও ১০ বছর। তারা দু-জনেই বেথেলে সেবা করার লক্ষ্য স্থাপন করেছিল। সেই লক্ষ্যের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখার জন্য তারা তাদের বাড়ির একটা দেওয়ালে বেথেলে যাওয়ার আবেদনপত্র লাগিয়ে রেখেছিল। তোমার বিষয়ে কী বলা যায়? তুমি কি এমন কিছু লক্ষ্যের বিষয়ে চিন্তা করতে পার, যেগুলো তুমি নিজের লক্ষ্য হিসেবে স্থাপন করতে পার এবং সেগুলোতে পৌঁছানোর জন্য কাজ করতে পার?—পড়ুন, ফিলিপীয় ১:১০, ১১.
৭, ৮. (ক) কীভাবে লক্ষ্য স্থাপন করা সিদ্ধান্ত নেওয়াকে আরও সহজ করে তোলে? (খ) কেন একজন কিশোরী বিশ্ববিদ্যালয়ে না যাওয়া বেছে নিয়েছিলেন?
৭ তৃতীয় কোন কারণে অল্পবয়সেই লক্ষ্য স্থাপন করা ভালো? একজন অল্পবয়সি হিসেবে তোমাকে অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তোমাকে শিক্ষা, চাকরি ও অন্যান্য অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জীবনের এই সিদ্ধান্তগুলো হল একাধিক রাস্তার সংযোগস্থলের মতো, যেগুলোর সম্মুখীন তুমি কোথাও যাওয়ার সময় হয়ে থাকো। তুমি যদি জানো, তুমি কোথায় যাচ্ছ, তা হলে কোন রাস্তায় তোমার যাওয়া উচিত, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে। একইভাবে তুমি যদি জানো, তোমার লক্ষ্যগুলো কী কী, তা হলে তোমার পক্ষে বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে। হিতোপদেশ ২১:৫ পদ বলে: “পরিশ্রমীর চিন্তা” বা পরিকল্পনা “হইতে কেবল ধনলাভ [“সাফল্যলাভ,” NW] হয়।” তুমি যত শীঘ্র ভালো লক্ষ্য স্থাপন করার মাধ্যমে পরিকল্পনা করবে, তত শীঘ্র সাফল্য লাভ করবে। বোন ডামারিসকে যখন কিশোর বয়সে একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল, তখন তিনি এই বিষয়টার সত্যতার প্রমাণ পেয়েছিলেন।
৮ বোন ডামারিস খুব ভালো রেজাল্ট নিয়ে উচ্চবিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করেছিলেন এবং তিনি চাইলে বিনা খরচে আইন নিয়ে পড়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারতেন। এর পরিবর্তে, তিনি একটা পার্ট-টাইম চাকরি করা বেছে নিয়েছিলেন। কেন? কারণ তিনি অনেক অল্পবয়সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, তিনি অগ্রগামী হিসেবে সেবা করবেন। তিনি বলেন: “সেটার অর্থ ছিল আমাকে কোনো পার্ট-টাইম চাকরি করতে হবে। আইনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি পেলে আমি প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারতাম ঠিকই কিন্তু আমার পক্ষে পার্ট-টাইম চাকরি খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ত।” বোন ডামারিস বিগত ২০ বছর ধরে অগ্রগামী হিসেবে সেবা করছেন। তিনি কি মনে করেন যে, কিশোর বয়সে তিনি সঠিক লক্ষ্য স্থাপন করেছিলেন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? হ্যাঁ। তিনি যেখানে কাজ করেন, সেখানে তার এমন অনেক উকিলের সঙ্গে দেখা হয়, যারা সেই কাজ করে, যেটা তিনি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতেন, তা হলে তিনিও করতেন। তিনি বলেন যে, তাদের মধ্যে অনেকে তাদের কাজ নিয়ে অখুশি। বোন ডামারিস মনে করেন যে, এত বছর ধরে অগ্রগামী হিসেবে সেবা করা তাকে অনেক আনন্দ এনে দিয়েছে এবং তাকে তাদের মতো অখুশি হওয়া এড়িয়ে চলতে সাহায্য করেছে।
৯. কেন আমরা আমাদের অল্পবয়সিদের নিয়ে গর্বিত?
৯ বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন মণ্ডলীতে হাজার হাজার অল্পবয়সি খুব ভালো কাজ করছে আর তারা আমাদের প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। তারা যিহোবার সঙ্গে তাদের বন্ধুত্বকে এবং তাঁর সেবায় তাদের লক্ষ্যগুলোকে জীবনের কেন্দ্রে রেখেছে। এই অল্পবয়সিরা জীবনকে সত্যিই উপভোগ করে এবং একইসময়ে সমস্ত বিষয়ে যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ করতে শেখে, যার অন্তর্ভুক্ত হল শিক্ষা, চাকরি ও পারিবারিক জীবন। শলোমন বলেছিলেন: “তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর।” তারপর তিনি আরও বলেছিলেন: “তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন।” (হিতো. ৩:৫, ৬) অল্পবয়সিরা, যিহোবা তোমাদের খুব ভালোবাসেন! তোমরা তাঁর কাছে খুবই মূল্যবান আর তিনি তোমাদের সুরক্ষিত রাখবেন, নির্দেশনা দেবেন এবং আশীর্বাদ করবেন।
অন্যদের যিহোবা সম্বন্ধে বলার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নাও
১০. (ক) কেন প্রচার কাজ অবশ্যই আমাদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ হবে? (খ) কীভাবে তুমি তোমার বিশ্বাস সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে আরও দক্ষ হয়ে উঠতে পার?
১০ তুমি যখন যিহোবাকে খুশি করার উপর তোমার জীবন কেন্দ্রীভূত করবে, তখন তুমি অন্যদেরও তাঁর সম্বন্ধে বলতে চাইবে। যিশু খ্রিস্ট বলেছিলেন, “অগ্রে . . . সুসমাচার প্রচারিত হওয়া আবশ্যক।” (মার্ক ১৩:১০) তাই, প্রচার কাজ করা খুবই জরুরি এবং এটা আমাদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ হওয়া উচিত। তুমি কি প্রচারে আরও বেশি করে অংশ নেওয়ার লক্ষ্য স্থাপন করতে পার? তুমি কি অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে পার? কিন্তু, তোমার যদি প্রচার করতে খুব-একটা ভালো না লাগে, তা হলে? আর কীভাবে তুমি তোমার বিশ্বাস সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে আরও দক্ষ হয়ে উঠতে পার? দুটো বিষয় তোমাকে সাহায্য করবে: ভালোভাবে প্রস্তুতি নাও এবং যিহোবা সম্বন্ধে তুমি যা জানো, তা অন্যদের বলার বিষয়ে হাল ছেড়ে দিও না। তুমি হয়তো এটা দেখে অবাক হয়ে যাবে যে, এমনটা করলে প্রচার কাজে তুমি কতটা আনন্দ লাভ করছ।
১১, ১২. (ক) অন্যদের যিহোবা সম্বন্ধে বলার উদ্দেশ্যে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য তুমি কি করতে পার? (খ) কীভাবে একজন অল্পবয়সি ভাই তার স্কুলে যিহোবা সম্বন্ধে বলার সুযোগকে কাজে লাগিয়েছিল?
১১ শুরুতে, তুমি এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর প্রস্তুত করতে পার, যেগুলো তোমার সহপাঠীরা হয়তো তোমাকে জিজ্ঞেস করতে পারে যেমন, “কেন তুমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করো?” আমাদের jw.org ওয়েবসাইটে একটা ভিডিও রয়েছে, যেটা তোমাকে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে। তুমি যদি প্রকাশনাদি > ভিডিও-র অধীনে তরুণ-তরুণী দেখো, তা হলে তুমি “তোমার সঙ্গীসাথিরা যা বলে—ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস” শিরোনামের একটা ভিডিও খুঁজে পাবে। এই ভিডিওটা তোমাকে তোমার উত্তর প্রস্তুত করতে সাহায্য করবে। তুমি ভালোভাবে বাছাই করা শাস্ত্রপদগুলো থেকেও সাহায্য লাভ করতে পার। উদাহরণ স্বরূপ, তুমি তোমার বিশ্বাস সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করার জন্য এই শাস্ত্রপদগুলো ব্যবহার করতে পার: ইব্রীয় ৩:৪ পদ, রোমীয় ১:২০ পদ এবং গীতসংহিতা ১৩৯:১৪ পদ। এই ধরনের ভিডিওগুলো ব্যবহার করে তুমি এইরকম অনেক প্রশ্নের উত্তর প্রস্তুত করতে পার।—পড়ুন, ১ পিতর ৩:১৫.
লড়াই না করেই একজন উত্ত্যক্তকারীকে পরাজিত করো শিরোনামের ভিডিওটা দেখার হোমওয়ার্ক দিয়েছিলেন। তুমি কি কল্পনা করতে পার, লুকা তার স্কুলে যিহোবা সম্বন্ধে কথা বলেছিল বলে কতটা আনন্দিত হয়েছিল?
১২ তোমার সহপাঠীদের বলো যে, তারা jw.org-এ নিজেরাই বিভিন্ন বিষয় খুঁজে দেখতে পারে। লুকা নামে একজন অল্পবয়সি ভাই ঠিক তা-ই করেছিল। লুকা লক্ষ করেছিল, তার স্কুলের একটা বইয়ে যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে এমন কথা বলা হয়েছে, যেগুলো আসলে সত্য নয়। যদিও লুকার একটু ভয় লেগেছিল কিন্তু সে তার ক্লাসের সামনে এটা ব্যাখ্যা করার জন্য তার শিক্ষিকার কাছে অনুমতি চেয়েছিল যে, কেন সেই লেখাগুলো ভুল। সেই শিক্ষিকা লুকাকে তার বিশ্বাস সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করার অনুমতি দিয়েছিলেন এবং লুকা পুরো ক্লাসকে আমাদের ওয়েবসাইট দেখাতে পেরেছিল। সেই শিক্ষিকা ক্লাসের প্রত্যেককে১৩. আমরা যদি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হই, তা হলে কেন আমাদের হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়?
১৩ তুমি যদি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হও, তা হলে নিরুৎসাহিত না হয়ে বরং তোমার লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছানোর জন্য কাজ করে যাও। (২ তীম. ৪:২) কাটারিনা নামে একজন বোন ঠিক তা-ই করেছিলেন। তিনি ১৭ বছর বয়সে তার প্রত্যেক সহকর্মীর কাছে প্রচার করার লক্ষ্য স্থাপন করেছিলেন। তাদের মধ্যে একজন বার বার তাকে অপমানিত করেছিলেন। কিন্তু, বোন কাটারিনা তার লক্ষ্য ভুলে যাননি। তার ভালো ব্যবহার হান্স নামে আরেকজন সহকর্মীর মনে ছাপ ফেলেছিল। হান্স আমাদের প্রকাশনাদি পড়তে শুরু করেছিলেন, বাইবেল অধ্যয়ন করেছিলেন এবং বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। বোন কাটারিনা এই বিষয়ে জানতে পারেননি কারণ ততদিনে তিনি অন্য এক জায়গায় চলে গিয়েছিলেন। তাই, ১৩ বছর পর তিনি যখন তার পরিবারের সঙ্গে একটা সভায় যোগ দিচ্ছিলেন, তখন তিনি এটা দেখে খুবই অবাক হয়ে যান যে, সেই দিনের জনসাধারণের উদ্দেশে বক্তৃতার বক্তা ছিলেন ভাই হান্স! তিনি খুবই আনন্দিত হয়েছিলেন যে, তিনি তার সহকর্মীদের কাছে প্রচার করার যে-লক্ষ্য স্থাপন করেছিলেন, সেই বিষয়ে হাল ছেড়ে দেননি।
তোমার লক্ষ্যগুলো ভুলে যেও না
১৪, ১৫. (ক) অন্যেরা যখন তোমাকে তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ দেয়, তখন তোমার কী মনে রাখা উচিত? (খ) অন্যেরা যখন তোমাকে চাপ দেয়, তখন তুমি দৃঢ় থাকার জন্য কী করতে পার?
১৪ এতক্ষণ পর্যন্ত এই প্রবন্ধ তোমাকে যিহোবার সেবায় তোমার জীবনকে কেন্দ্রীভূত করার এবং তাঁর সেবায় বিভিন্ন লক্ষ্য স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছে। কিন্তু, তোমার বয়সি অনেকে শুধু আনন্দফূর্তি করতে চায়। আর তারা হয়তো তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য তোমাকেও আমন্ত্রণ জানাবে। আজ হোক বা কাল, তোমাকে অন্যদের এটা দেখাতে হবে যে, তোমার লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছানো তোমার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদের কারণে তোমার লক্ষ্যগুলো ভুলে যেও না। তুমি যদি প্রবন্ধের শুরুতে উল্লেখিত
সেই বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকতে, তা হলে তুমি কি এই কারণে যেকোনো বাসে উঠে যেতে যে, সেই বাসের লোকেরা অনেক আনন্দফূর্তি করছে? না, অবশ্যই না!১৫ তাই, অন্যেরা যখন তোমাকে তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ দেয়, তখন তুমি দৃঢ় থাকার জন্য কী করতে পার? এমন পরিস্থিতিগুলো এড়িয়ে চলো, যেগুলোতে তোমার পক্ষে চাপের প্রতিরোধ করা কঠিন হবে। (হিতো. ২২:৩) মন্দ বিষয়গুলো করার যন্ত্রণাদায়ক পরিণতিগুলো নিয়ে চিন্তা করো। (গালা. ৬:৭) আর নম্রতার সঙ্গে স্বীকার করো, তোমার উত্তম পরামর্শের প্রয়োজন রয়েছে। তোমার বাবা-মা এবং মণ্ডলীতে অভিজ্ঞ ভাই-বোনেরা তোমাকে যা বলেন, সেগুলো মন দিয়ে শোনো।—পড়ুন, ১ পিতর ৫:৫, ৬.
১৬. কীভাবে ভাই ক্রিস্টফের অভিজ্ঞতা দেখায় যে, নম্র হওয়া গুরুত্বপূর্ণ?
১৬ নম্রতা গুণটা ক্রিস্টফ নামে একজন ভাইকে উত্তম পরামর্শ গ্রহণ করতে সাহায্য করেছিল। বাপ্তিস্ম নেওয়ার পর পরই তিনি নিয়মিতভাবে একটা জিমে যেতে শুরু করেছিলেন। সেখানে, অন্যান্য অল্পবয়সিরা তাকে তাদের খেলার ক্লাবে যোগ দিতে বলেছিল। তিনি সেই বিষয়ে একজন প্রাচীনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং সেই প্রাচীন তাকে কিছু বিপদ সম্বন্ধে যেমন, অতিরিক্ত প্রতিযোগিতাপরায়ণ হয়ে পড়ার বিপদ সম্বন্ধে চিন্তা করতে বলেছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও, ভাই ক্রিস্টফ সেই খেলার ক্লাবে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিছুসময় পর তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, সেই খেলাটা খুব দৌরাত্ম্যপূর্ণ আর এমনকী বেশ বিপদজনক। আবারও, তিনি প্রাচীনদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং তারা তাকে বাইবেল থেকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। ভাই ক্রিস্টফ বলেন, “যিহোবা আমার জন্য উত্তম পরামর্শদাতাদের পাঠিয়েছিলেন আর যদিও আমার কিছুটা সময় লেগেছিল কিন্তু আমি তাঁর কথা শুনেছিলাম।” তোমার মধ্যে কি উত্তম পরামর্শ গ্রহণ করার জন্য যথেষ্ট নম্রতা রয়েছে?
১৭, ১৮. (ক) বর্তমানে, যিহোবা অল্পবয়সিদের জন্য কী চান? (খ) কীভাবে তুমি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তোমার বাছাইগুলোর কারণে আপশোস করা এড়িয়ে চলতে পার? একটা অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে বলো।
১৭ বাইবেল বলে: “হে যুবক [অথবা যুবতী], তুমি তোমার তরুণ বয়সে আনন্দ কর, যৌবনকালে তোমার হৃদয় তোমাকে আহ্লাদিত করুক।” (উপ. ১১:৯) যিহোবা চান যেন তুমি অল্পবয়সে সুখী হও। এই প্রবন্ধে তুমি শিখেছ যে, সুখী হওয়ার একটা উপায় হল যিহোবার সেবায় তোমার লক্ষ্যগুলোর উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখা এবং তোমার সমস্ত পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্তে যিহোবার পরামর্শ অনুসরণ করা। তুমি তোমার জীবনে যত শীঘ্র এমনটা করবে, তত শীঘ্র এটা দেখতে পাবে যে, কীভাবে যিহোবা তোমাকে সুরক্ষিত রাখেন, নির্দেশনা দেন এবং আশীর্বাদ করেন। তাঁর বাক্যের মাধ্যমে তিনি যে-সমস্ত উত্তম পরামর্শ দেন, সেগুলোর বিষয়ে চিন্তা করো এবং এই পরামর্শটা কাজে লাগাও: “তুমি যৌবনকালে আপন সৃষ্টিকর্ত্তাকে স্মরণ কর।”—উপ. ১২:১.
১৮ অল্পবয়সিরা খুব তাড়াতাড়ি বড়ো হয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যায়। দুঃখের বিষয় হল, তাদের মধ্যে অনেকে এই বিষয়ে আপশোস করে যে, অল্পবয়সে তারা ভুল লক্ষ্যগুলো স্থাপন করেছিল অথবা কোনো লক্ষ্যই স্থাপন করেনি। কিন্তু, তুমি যদি যিহোবার সেবায় তোমার লক্ষ্যগুলোর উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখো, তা হলে তুমি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তোমার বাছাইগুলোর কারণে আনন্দিত হবে। বোন মিরিয়ানা ঠিক এমনটাই অনুভব করেন। কিশোর বয়সে তিনি খেলাধূলায় খুব ভালো ছিলেন। তাকে এমনকী শীতকালীন অলিম্পিক গেমস্-এ অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করার পরিবর্তে, তিনি পূর্ণসময় যিহোবার সেবা করা বেছে নিয়েছিলেন। ৩০ বছরেরও বেশি সময় পর, তিনি এখনও তার স্বামীর সঙ্গে পূর্ণসময়ের সেবা করছেন। তিনি বলেন যে, যারা খ্যাতি, সম্মান, ক্ষমতা ও ধন লাভ করতে চায়, তারা কখনোই প্রকৃতরূপে সুখী হয় না। তিনি আরও বলেন যে, সবচেয়ে ভালো লক্ষ্যগুলো হল ঈশ্বরের সেবা করা এবং লোকেদের তাঁর সম্বন্ধে জানতে সাহায্য করা।
১৯. কেন অল্পবয়সে যিহোবার সেবায় তোমার লক্ষ্যগুলোর উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখা ভালো?
১৯ অল্পবয়সিরা, তোমরা সত্যিই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য কারণ তোমরা বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও তোমাদের জীবনকে যিহোবার সেবা করার উপর কেন্দ্রীভূত রাখো। তোমরা যিহোবার সেবায় বিভিন্ন লক্ষ্য স্থাপন করে থাকো এবং তোমরা প্রচার কাজকে তোমাদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ হিসেবে দেখে থাকো। এ ছাড়া, তোমরা জগতের কারণে তোমাদের লক্ষ্যগুলো ভুলে যাও না। তোমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পার যে, তোমাদের কঠোর প্রচেষ্টা বৃথা হবে না। তোমাদের কাছে তোমাদের ভাই ও বোনেরা রয়েছে, যারা তোমাদের ভালোবাসে ও তোমাদের সমর্থন করে। তাই, “তুমি যা-ই কর না কেন তার ভার সদাপ্রভুর উপর ফেলে দাও; তাতে তোমার পরিকল্পনা সফল হবে।”
^ অনু. 3 হিতোপদেশ ১৬:৩ (বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন): “তুমি যা-ই কর না কেন তার ভার সদাপ্রভুর উপর ফেলে দাও; তাতে তোমার পরিকল্পনা সফল হবে।”