যে-পথ প্রকৃত স্বাধীনতার দিকে পরিচালিত করে
“পুত্র যদি তোমাদিগকে স্বাধীন করেন, তবে তোমরা প্রকৃতরূপে স্বাধীন হইবে।”—যোহন ৮:৩৬.
১, ২. (ক) স্বাধীনতা লাভ করার জন্য লোকেরা কী করে থাকে? (খ) তাদের এই প্রচেষ্টার ফল কী হয়েছে?
বর্তমানে, বিশ্বের অনেক জায়গায় লোকেরা সমান অধিকার ও স্বাধীনতার বিষয়ে কথা বলে থাকে। কেউ কেউ অন্যায্য আচরণ, বৈষম্য ও দরিদ্রতা থেকে স্বাধীনতা লাভ করতে চায়। অন্যেরা আবার ইচ্ছামতো কথা বলার, বাছাই করার এবং জীবনযাপন করার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা লাভ করার দাবি করে। সব জায়গায় লোকেরা স্বাধীন হতে চায়।
২ স্বাধীনতা লাভ করার জন্য লোকেরা প্রতিবাদ করে আর এমনকী বিপ্লবের পথ বেছে নেয়। কিন্তু, তারা যা চায়, তা কি সত্যিই পায়? না। বরং, এর ফলে বিভিন্ন দুঃখকষ্ট দেখা দেয় আর লোকেরা এমনকী জীবন হারায়। উপদেশক ৮:৯ পদে বলা রাজা শলোমনের এই কথাগুলো খুবই সত্য: “এক জন অন্যের উপরে তাহার অমঙ্গলার্থে কর্ত্তৃত্ব করে।”
৩. প্রকৃত সুখ ও পরিতৃপ্তি লাভ করার জন্য আমরা কী করতে পারি?
৩ বাইবেল আমাদের বলে যে, প্রকৃত সুখ ও পরিতৃপ্তি লাভ করার জন্য আমাদের কী করতে হবে। শিষ্য যাকোব বলেছিলেন: “যে কেহ হেঁট হইয়া স্বাধীনতার সিদ্ধ ব্যবস্থায় দৃষ্টিপাত করে, ও তাহাতে নিবিষ্ট থাকে, . . . সেই আপন কার্য্যে যাকোব ১:২৫) এই সিদ্ধ বা নিখুঁত ব্যবস্থা যিহোবার কাছ থেকে আসে আর তিনি সবচেয়ে ভালোভাবে জানেন যে, প্রকৃত সুখ ও পরিতৃপ্তি লাভ করার জন্য আমাদের কীসের প্রয়োজন রয়েছে। যিহোবা আদম ও হবাকে প্রকৃত স্বাধীনতা আর সেইসঙ্গে সুখী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু দিয়েছিলেন।
ধন্য” বা সুখী “হইবে।” (যখন মানুষ প্রকৃতই স্বাধীন ছিল
৪. আদম ও হবার কোন ধরনের স্বাধীনতা ছিল? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
৪ আদিপুস্তক ১ ও ২ অধ্যায় পড়ার সময় আমরা জানতে পারি, আদম ও হবার এমন ধরনের স্বাধীনতা ছিল, যেটার বিষয়ে বর্তমানে লোকেরা কেবল কল্পনাই করতে পারে। তাদের কাছে প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু ছিল, তাদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ ছিল না আর কেউ তাদের সঙ্গে অন্যায্য আচরণ করত না। তাদের খাবার, চাকরি, অসুস্থতা অথবা মৃত্যুর বিষয়ে দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ ছিল না। (আদি. ১:২৭-২৯; ২:৮, ৯, ১৫) কিন্তু, তাদের স্বাধীনতা কি সীমাহীন ছিল? আসুন, আমরা তা বিবেচনা করি।
৫. অনেকে যা মনে করে, সেটার বিপরীতে লোকেদের স্বাধীনতা উপভোগ করার জন্য কীসের প্রয়োজন রয়েছে?
৫ অনেকে মনে করে, প্রকৃত স্বাধীনতা থাকার অর্থ হল তারা পরিণতির বিষয়ে চিন্তা না করেই তাদের যা ইচ্ছা, তা-ই করতে পারে। দ্যা ওয়ার্ল্ড বুক এনসাইক্লোপিডিয়া বলে, স্বাধীনতা হল “বাছাই করার ও সেই বাছাই অনুযায়ী কাজ করার ক্ষমতা।” কিন্তু এটা আরও বলে, লোকেরা তখনই স্বাধীন হয়, যখন সরকার তাদের উপর অন্যায্য, অপ্রয়োজনীয় অথবা অযৌক্তিক উপায়ে সীমা নিরূপণ করে না। এর অর্থ হল, কিছু সীমার প্রয়োজন রয়েছে, যাতে সকলে স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারে। কিন্তু, কার এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে যে, নির্দিষ্ট কোনো সীমা ন্যায্য, প্রয়োজনীয় ও যুক্তিসংগত কি না?
৬. (ক) কেন যিহোবাই সেই একমাত্র ব্যক্তি, যাঁর সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে? (খ) মানুষ কোন ধরনের স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারে এবং কেন?
৬ আমাদের জন্য এই বিষয়টা স্মরণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, একমাত্র যিহোবা ঈশ্বরেরই সম্পূর্ণ বা সীমাহীন স্বাধীনতা রয়েছে। কেন? কারণ তিনিই সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই নিখিলবিশ্বের সর্বশক্তিমান শাসক। (১ তীম. ১:১৭; প্রকা. ৪:১১) রাজা দায়ূদ যিহোবার এই পদমর্যাদা সম্বন্ধে বর্ণনা করতে গিয়ে সুন্দর শব্দ ব্যবহার করেছেন। (পড়ুন, ১ বংশাবলি ২৯:১১, ১২.) এর বিপরীতে, স্বর্গ ও পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর স্বাধীনতারই কিছু সীমা রয়েছে। এটা হল আপেক্ষিক স্বাধীনতা। যিহোবা ঈশ্বর চান যেন আমরা এটা বুঝি, একমাত্র তাঁর এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে যে, কোন সীমাগুলো ন্যায্য, প্রয়োজনীয় ও যুক্তিসংগত। একেবারে শুরু থেকেই যিহোবা তাঁর সৃষ্টির জন্য সীমা নিরূপণ করে এসেছেন।
৭. কিছু অপরিহার্য বিষয় কী, যেগুলো আমাদের আনন্দ দেয়?
৭ যদিও আদম ও হবার প্রচুর স্বাধীনতা ছিল কিন্তু তা সত্ত্বেও, তাদের স্বাধীনতার কিছু সীমা ছিল। কিছু কিছু সীমা তাদের কাছে স্বাভাবিক বলেই মনে হয়েছিল। উদাহরণ স্বরূপ, বেঁচে থাকার জন্য তাদের শ্বাস নিতে, খাবার খেতে ও ঘুমাতে হতো। এর অর্থ কি এই যে, তারা স্বাধীন ছিলেন না? না। সত্যি বলতে কী, যিহোবা এই বিষয়টা নিশ্চিত করেছিলেন যেন তারা সেই বিষয়গুলো করার মাধ্যমে সুখ ও পরিতৃপ্তি লাভ করেন। (গীত. ১০৪:১৪, ১৫; উপ. ৩:১২, ১৩) আমরা সবাই বিশুদ্ধ বাতাসে শ্বাস নিতে, আমাদের প্রিয় খাবারগুলো খেতে এবং রাতে ভালোভাবে ঘুমাতে পছন্দ করি। আমরা এই বিষয়গুলোকে আমাদের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে দেখি না। আদম ও হবাও নিশ্চয়ই আমাদের মতোই অনুভব করেছিলেন।
৮. ঈশ্বর আদম ও হবাকে কোন নির্দিষ্ট আজ্ঞা দিয়েছিলেন এবং কেন?
৮ যিহোবা আদম ও হবাকে একটা নির্দিষ্ট আজ্ঞা দিয়েছিলেন। তিনি তাদের সন্তানের জন্ম দিতে, পৃথিবী পরিপূর্ণ করতে এবং পৃথিবীর যত্ন নিতে বলেছিলেন। আদি. ১:২৮) এই আজ্ঞা কি তাদের স্বাধীনতাকে কেড়ে নিয়েছিল? একেবারেই না! এটা তাদের পুরো পৃথিবীকে পরমদেশে পরিণত করার অর্থাৎ এটাকে এমন একটা গৃহে পরিণত করার সুযোগ দিয়েছিল, যেখানে তারা তাদের সিদ্ধ সন্তানদের সঙ্গে চিরকাল বেঁচে থাকতে পারত। এটাই ছিল ঈশ্বরের উদ্দেশ্য। (যিশা. ৪৫:১৮) বর্তমানে, লোকেরা যদি বিয়ে না করা অথবা সন্তান না নেওয়া বেছে নেয়, তা হলে তারা যে ঈশ্বরের অবাধ্য হয়, এমন নয়। তারপরও লোকেরা বিয়ে করে ও সন্তান নিয়ে থাকে, যদিও এটা কিছু সমস্যা নিয়ে আসে। (১ করি. ৭:৩৬-৩৮) কেন? কারণ তারা সুখ ও পরিতৃপ্তি লাভ করার আশা করে। (গীত. ১২৭:৩) আদম ও হবা যদি যিহোবার বাধ্য থাকতেন, তা হলে তারা চিরকাল ধরে তাদের বৈবাহিক ও পারিবারিক জীবন উপভোগ করতে পারতেন।
(কীভাবে প্রকৃত স্বাধীনতা হারিয়ে গিয়েছিল?
৯. কেন আদিপুস্তক ২:১৭ পদে পাওয়া ঈশ্বরের আজ্ঞাটা অন্যায্য, অপ্রয়োজনীয় অথবা অযৌক্তিক ছিল না?
৯ যিহোবা আদম ও হবাকে আরেকটা আজ্ঞা দিয়েছিলেন এবং স্পষ্টভাবে তাদের বলেছিলেন যে, তারা যদি সেই আজ্ঞার অবাধ্য হয়, তা হলে কী হবে। তিনি বলেছিলেন: “সদসদ্-জ্ঞানদায়ক যে বৃক্ষ, তাহার ফল ভোজন করিও না, কেননা যে দিন তাহার ফল খাইবে, সেই দিন মরিবেই মরিবে।” (আদি. ২:১৭) সেই আজ্ঞা কি অন্যায্য, অপ্রয়োজনীয় অথবা অযৌক্তিক ছিল? সেটা কি আদম ও হবার স্বাধীনতাকে কেড়ে নিয়েছিল? একেবারেই না। আসলে, অনেক বাইবেল পণ্ডিত মনে করেন যে, ঈশ্বরের সেই আজ্ঞা খুবই বিজ্ঞ ও অর্থপূর্ণ ছিল। তাদের মধ্যে একজন বলেন, সেই আজ্ঞা আমাদের শেখায় যে, “একমাত্র ঈশ্বর জানেন, মানবজাতির জন্য কোনটা ভালো . . . আর একমাত্র ঈশ্বর জানেন, তাদের জন্য কোনটা ভালো নয় . . .। ‘ভালো’ বিষয়টা উপভোগ করার জন্য মানবজাতিকে অবশ্যই ঈশ্বরের উপর আস্থা রাখতে হবে ও তাঁর বাধ্য হতে হবে। তারা যদি তাঁর অবাধ্য হয়, তা হলে তাদের নিজেদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, কোনটা ভালো . . . আর কোনটা ভালো নয়।” এটা এমন এক কাজ, যেটা মানুষের পক্ষে কোনো সাহায্য ছাড়া করা খুবই কঠিন।
১০. কেন স্বাধীন ইচ্ছা এবং কোনটা ভালো ও কোনটা মন্দ, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার এক বিষয় নয়?
১০ অনেকে মনে করতে পারে, যিহোবা আদমকে তার ইচ্ছামতো কাজ করার স্বাধীনতা দেননি। তবে, তারা এটা বোঝে না যে, স্বাধীন ইচ্ছা অর্থাৎ একজন ব্যক্তি কী করবেন, সেই বিষয়ে বাছাই করার অধিকার এবং কোনটা ভালো ও কোনটা মন্দ, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার এক বিষয় নয়। আদম ও হবার এটা বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা ছিল যে, তারা ঈশ্বরের বাধ্য হবে কি না। কিন্তু, একমাত্র যিহোবার এটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে যে, কোনটা ভালো ও কোনটা মন্দ। “সদসদ্-জ্ঞানদায়ক বৃক্ষ” ছিল আদম ও হবার কাছে এই সত্যতার একটা প্রমাণ। (আদি. ২:৯) আমরা সবসময় জানতে পারি না, আমাদের বাছাইগুলোর ফলাফল কী হবে এবং আমরা কখনো নিশ্চিতভাবে জানতে পারি না, সেগুলোর ফলাফল সবসময় ভালো হবে। এই কারণেই আমরা প্রায় দেখি যে, লোকেরা ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে বিভিন্ন বাছাই করে অথবা সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু সেগুলোর ফলে দুঃখকষ্ট, বিপর্যয় অথবা মর্মান্তিক ঘটনা দেখা দেয়। (হিতো. ১৪:১২) হ্যাঁ, মানুষের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যিহোবা আদম ও হবাকে সেই গাছের ফল না খাওয়ার আজ্ঞা দেওয়ার মাধ্যমে তাদের শিখিয়েছিলেন যে, প্রকৃত স্বাধীনতা লাভ করার জন্য তাদের অবশ্যই তাঁর বাধ্য হতে হবে। আদম ও হবা কী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?
১১, ১২. কেন আদম ও হবার বাছাই বিপর্যয়ের দিকে পরিচালিত করেছিল? একটা উদাহরণ দিন।
১১ দুঃখের বিষয় হল, আদম ও হবা যিহোবার অবাধ্য হওয়া বেছে নিয়েছিলেন। হবা সেইসময় শয়তানের কথা শোনা বেছে নিয়েছিলেন, যখন সে প্রতিজ্ঞা করেছিল: “তোমাদের চক্ষু খুলিয়া যাইবে, তাহাতে তোমরা ঈশ্বরের সদৃশ হইয়া সদসদ্-জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে।” (আদি. ৩:৫) আদম ও হবার বাছাই কি আরও বেশি স্বাধীনতার দিকে পরিচালিত করেছিল, যেমনটা শয়তান বলেছিল? না, সেটা করেনি। সত্যি বলতে কী, তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে, যিহোবার নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করা বিপর্যয়ের দিকে পরিচালিত করে। (আদি. ৩:১৬-১৯) কেন? কারণ যিহোবা মানুষকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা দেননি যে, তাদের জন্য কোনটা ভালো ও কোনটা মন্দ হবে।—পড়ুন, হিতোপদেশ ২০:২৪; যিরমিয় ১০:২৩.
১২ এটা অনেকটা এমন একজন পাইলটের মতো, যিনি এরোপ্লেন চালাচ্ছেন। নিরাপদে তার গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য সাধারণত তিনি প্লেনে থাকা দিকনির্ণয়কারী যন্ত্র ব্যবহার করে একটা অনুমোদিত পথ অনুসরণ করেন। এ ছাড়া, তিনি এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন, যাদের কাজ হল তাকে নির্দেশনা দেওয়া, যাতে তার প্লেনের সঙ্গে অন্য প্লেনের ধাক্কা না লাগে। কিন্তু, পাইলট যদি নির্দেশনা অনুসরণ না করেন এবং নিজের ইচ্ছামতো ভিন্ন পথ অনুসরণ করেন, তা হলে সেটা বিপর্যয়ের দিকে পরিচালিত করতে পারে। সেই পাইলটের মতোই আদম ও হবা নিজেদের ইচ্ছামতো কাজ করতে চেয়েছিলেন। তারা ঈশ্বরের নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এর ফলাফল কী হয়েছিল? বিপর্যয়! তাদের সিদ্ধান্ত তাদের নিজেদের ও পরে তাদের সন্তানদের পাপ ও মৃত্যুর দিকে পরিচালিত করেছিল। (রোমীয় ৫:১২) আদম ও হবা তাদের জন্য কোনটা ভালো ও কোনটা মন্দ, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করার মাধ্যমে আরও বেশি স্বাধীনতা লাভ করেননি। এর পরিবর্তে, তারা যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া প্রকৃত স্বাধীনতা হারিয়েছিলেন।
যেভাবে প্রকৃত স্বাধীনতা লাভ করা যায়
১৩, ১৪. কীভাবে আমরা প্রকৃত স্বাধীনতা লাভ করতে পারি?
১৩ কেউ কেউ মনে করে, তাদের কাছে যদি সীমাহীন স্বাধীনতা থাকে, তা হলে সেটা সর্বোত্তম হবে। কিন্তু, এটা কি সত্যিই সর্বোত্তম হবে? যদিও স্বাধীনতা থাকার অনেক উপকারিতা রয়েছে কিন্তু আপনি কি কল্পনা করতে পারেন যে, একেবারে কোনো সীমাই যদি না থাকত, তা হলে এই বিশ্বের অবস্থা কেমন হতো? দ্যা ওয়ার্ল্ড বুক এনসাইক্লোপিডিয়া বলে যে, প্রতিটা সংগঠিত সমাজের আইনগুলো জটিল হয়ে থাকে কারণ সেগুলোর উদ্দেশ্য হল লোকেদের স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত রাখা এবং একইসঙ্গে তাদের স্বাধীনতাকে সীমার মধ্যে রাখা। এটা সবসময় সহজ নয়। এই কারণেই আমরা দেখি যে, এত বেশি আইন তৈরি করা হয় এবং এত বেশি উকিল ও বিচারক সেগুলো ব্যাখ্যা করার ও প্রয়োগ করার চেষ্টা করেন।
১৪ যিশু খ্রিস্ট ব্যাখ্যা করেছিলেন, কীভাবে আমরা প্রকৃত স্বাধীনতা লাভ করতে পারি। তিনি বলেছিলেন: “তোমরা যদি আমার বাক্যে স্থির থাক, তাহা যোহন ৮:৩১, ৩২) তাই, প্রকৃত স্বাধীনতা লাভ করার জন্য আমাদের দুটো বিষয় করতে হবে। প্রথমত, আমাদের যিশুর শেখানো সত্য গ্রহণ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, আমাদের তাঁর শিষ্য হতে হবে। এই বিষয়গুলো করা আমাদের প্রকৃত স্বাধীনতা প্রদান করবে। কিন্তু, এটা আমাদের কোন বিষয়টা থেকে স্বাধীন করবে? যিশু বলেছিলেন: “যে কেহ পাপাচরণ করে, সে পাপের দাস।” তিনি আরও বলেছিলেন: “পুত্র যদি তোমাদিগকে স্বাধীন করেন, তবে তোমরা প্রকৃতরূপে স্বাধীন হইবে।”—যোহন ৮:৩৪, ৩৬.
হইলে সত্যই তোমরা আমার শিষ্য; আর তোমরা সেই সত্য জানিবে, এবং সেই সত্য তোমাদিগকে স্বাধীন করিবে।” (১৫. যিশু যে-স্বাধীনতা দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, কেন সেটা আমাদের “প্রকৃতরূপে স্বাধীন” করতে পারে?
১৫ যিশু তাঁর শিষ্যদের যে-স্বাধীনতা দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, সেটা বর্তমানে বেশিরভাগ লোক যে-ধরনের স্বাধীনতা পেতে চায়, সেটার চেয়ে হাজার গুণ শ্রেষ্ঠ। যিশু যখন বলেছিলেন, “পুত্র যদি তোমাদিগকে স্বাধীন করেন, তবে তোমরা প্রকৃতরূপে স্বাধীন হইবে,” তখন তিনি পাপের দাসত্ব থেকে স্বাধীনতা লাভ করার বিষয়ে বলছিলেন, যেটা হল এযাবৎ মানুষের ভোগ করা সমস্ত দাসত্বের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ধরনের দাসত্ব। কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা পাপের দাস? পাপ আমাদের মন্দ কাজ করতে প্ররোচিত করে। এ ছাড়া, এটা আমাদের যে-কাজকে আমরা ভালো বলে জানি, সেটা করার ক্ষেত্রে অথবা নিজেদের সর্বোত্তমটা করার ক্ষেত্রে বাধা দেয়। এর ফলে বিরক্তি, যন্ত্রণা, দুঃখকষ্ট আর পরিশেষে মৃত্যু দেখা দেয়। (রোমীয় ৬:২৩) প্রেরিত পৌল এটা অনুভব করেছিলেন যে, পাপের দাস হওয়া কতটা যন্ত্রণাদায়ক। (পড়ুন, রোমীয় ৭:২১-২৫.) একমাত্র যখন পাপকে সম্পূর্ণরূপে সরিয়ে দেওয়া হবে, তখনই আমরা সেই প্রকৃত স্বাধীনতা লাভ করতে পারব, যেটা একসময় আদম ও হবার কাছে ছিল।
১৬. কীভাবে আমরা প্রকৃতই স্বাধীন হতে পারি?
১৬ যিশু যখন বলেছিলেন, “তোমরা যদি আমার বাক্যে স্থির থাক,” তখন সেটা দেখিয়েছিল, আমরা যদি চাই যে, যিশু আমাদের স্বাধীন করুক, তা হলে আমাদের নির্দিষ্ট কিছু বিষয় করতে হবে। কোন বিষয়গুলো? উৎসর্গীকৃত খ্রিস্টান হিসেবে আমরা নিজেদের অস্বীকার করেছি এবং যিশু তাঁর শিষ্যদের জন্য যে-সীমাগুলো নিরূপণ করেছেন, সেগুলো মেনে নেওয়া বেছে নিয়েছি। (মথি ১৬:২৪) ভবিষ্যতে আমরা যখন মুক্তির মূল্যের সমস্ত উপকার লাভ করব, তখন আমরা প্রকৃতই স্বাধীন হব, ঠিক যেমনটা যিশু প্রতিজ্ঞা করেছেন।
১৭. (ক) কীভাবে আমরা প্রকৃত সুখ ও পরিতৃপ্তি লাভ করতে পারি? (খ) পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা কী শিখব?
১৭ প্রকৃত সুখ ও পরিতৃপ্তি লাভ করার জন্য আমাদের যিশুর শিষ্য হিসেবে তাঁর শিক্ষাগুলোর বাধ্য হতে হবে। আমরা যদি এটা করি, তা হলে একসময় আমরা পাপ ও মৃত্যুর দাসত্ব থেকে সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন হতে পারব। (পড়ুন, রোমীয় ৮:১, ২, ২০, ২১.) পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা শিখব, কীভাবে আমরা বর্তমানে আমাদের কাছে থাকা স্বাধীনতাকে বিজ্ঞতার সঙ্গে ব্যবহার করতে পারি। একমাত্র তখনই আমরা প্রকৃত স্বাধীনতার ঈশ্বর যিহোবাকে সম্মানিত করতে পারব আর তা চিরকাল ধরে।