আপনার স্বাধীন ইচ্ছার দানকে মূল্যবান বলে গণ্য করুন
“যেখানে প্রভুর [ঈশ্বরের] আত্মা, সেইখানে স্বাধীনতা।”—২ করি. ৩:১৭.
১, ২. (ক) স্বাধীন ইচ্ছা সম্বন্ধে লোকেদের কোন ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে? (খ) আমাদের স্বাধীন ইচ্ছা সম্বন্ধে বাইবেল কী শিক্ষা দেয় আর আমরা কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?
একজন মহিলা ব্যক্তিগত একটা বাছাই করার সময় তার বান্ধবীকে এই কথা বলেছিলেন: “আমাকে চিন্তা করতে বলবে না; শুধু বলো, আমাকে কী করতে হবে। সেটা আরও সহজ।” সেই মহিলা তার সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে পাওয়া এক মূল্যবান দান অর্থাৎ নিজের স্বাধীন ইচ্ছা ব্যবহার করেননি, বরং তিনি চেয়েছিলেন, তাকে কী করতে হবে তা অন্য কেউ বলে দিক। আপনার বিষয়ে কী বলা যায়? আপনি কি নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পছন্দ করেন, না কি আপনি চান, আপনার হয়ে অন্যেরা সিদ্ধান্ত নিক? স্বাধীন ইচ্ছাকে আপনি কীভাবে দেখে থাকেন?
২ স্বাধীন ইচ্ছা সম্বন্ধে লোকেদের ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। কেউ কেউ বলে, স্বাধীন ইচ্ছা বলতে আসলে কিছু নেই কারণ ঈশ্বর ইতিমধ্যেই আমাদের সমস্ত পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আবার অন্যেরা বলে, স্বাধীন ইচ্ছা লাভ করা তখনই সম্ভব হয়, যখন আমাদের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে। কিন্তু বাইবেল শিক্ষা দেয়, নিজেদের বিষয়ে বিজ্ঞতাপূর্ণ বাছাই করার ক্ষমতা ও স্বাধীনতা দিয়ে আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। (পড়ুন, যিহোশূয়ের পুস্তক ২৪:১৫.) এ ছাড়া, বাইবেলে আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাই: আমাদের স্বাধীন ইচ্ছার কি কোনো সীমা রয়েছে? সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের স্বাধীন ইচ্ছাকে কীভাবে ব্যবহার করা উচিত? আমরা যিহোবাকে আসলে কতটা ভালোবাসি, তা কীভাবে আমাদের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রকাশ পেতে পারে? কীভাবে আমরা অন্যদের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখাতে পারি?
যিহোবা এবং যিশুর কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
৩. কীভাবে যিহোবা তাঁর সম্পূর্ণ স্বাধীনতাকে ব্যবহার করে থাকেন?
৩ শুধুমাত্র যিহোবারই সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে আর তিনি যেভাবে তাঁর স্বাধীনতা ব্যবহার করেন, তা থেকে আমরা শিখতে পারি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যিহোবা ইস্রায়েল জাতিকে তাঁর প্রজা হিসেবে, “আপনার নিজস্ব প্রজা” হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। (দ্বিতীয়. ৭:৬-৮) তাঁর এই বাছাইয়ের পিছনে একটা কারণ ছিল। যিহোবা তাঁর বন্ধু অব্রাহামের কাছে করা প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। (আদি. ২২:১৫-১৮) এ ছাড়া, যিহোবা তাঁর স্বাধীনতাকে সবসময় প্রেমের সঙ্গে ও ন্যায্য উপায়ে ব্যবহার করেন। ইস্রায়েল জাতি যখন তাঁর অবাধ্য হয়েছিল, তখন তিনি যেভাবে তাদের শাসন করেছিলেন, তা থেকে আমরা সেটা বুঝতে পারি। তারা যখন তাদের কাজের জন্য সত্যিই অনুতপ্ত হয়েছিল, তখন যিহোবা তাদের প্রতি প্রেম ও করুণা দেখিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমি তাহাদের বিপথগমনের প্রতীকার করিব, আমি স্বেচ্ছায় তাহাদিগকে প্রেম করিব।” (হোশেয় ১৪:৪) যিহোবা অন্যদের সাহায্য করার জন্য তাঁর স্বাধীনতাকে ব্যবহার করার মাধ্যমে আমাদের জন্য এক চমৎকার উদাহরণস্থাপন করেছেন!
৪, ৫. (ক) কে প্রথমে ঈশ্বরের স্বাধীন ইচ্ছার দান লাভ করেছিলেন আর তিনি কীভাবে তা ব্যবহার করেছিলেন? (খ) আমাদের প্রত্যেককে কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে হবে?
৪ যিহোবা স্বর্গদূতদের ও মানুষদের স্বাধীন ইচ্ছা দিয়ে সৃষ্টি করেছিলেন। যিহোবার প্রথম সৃষ্টি ছিলেন যিশু। তাঁকে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করা হয়েছিল আর তাঁর স্বাধীন ইচ্ছা ছিল। (কল. ১:১৫) যিশু কীভাবে তাঁর স্বাধীন ইচ্ছাকে ব্যবহার করেছিলেন? পৃথিবীতে আসার আগে, যিশু ঈশ্বরের প্রতি অনুগত থাকা এবং শয়তান ও তার বিদ্রোহে যোগ না দেওয়া বেছে নিয়েছিলেন। পৃথিবীতে আসার পর, তিনি শয়তানের প্রলোভন প্রত্যাখ্যান করা বেছে নিয়েছিলেন। (মথি ৪:১০) তারপর, মৃত্যুর আগের রাতে যিশু তাঁর পিতাকে এই নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন, তিনি পিতার ইচ্ছাই পালন করতে চান। যিশু বলেছিলেন: “পিতঃ, যদি তোমার অভিমত হয়, আমা হইতে এই পানপাত্র দূর কর; তথাপি আমার ইচ্ছা নয়, তোমারই ইচ্ছা সিদ্ধ হউক।” (লূক ২২:৪২) আমাদের পক্ষে কি যিশুকে অনুকরণ করা এবং যিহোবাকে সম্মানিত করার ও তাঁর ইচ্ছা পালন করার জন্য আমাদের স্বাধীন ইচ্ছাকে ব্যবহার করা সত্যিই সম্ভব?
৫ হ্যাঁ, আমরা যিশুকে অনুকরণ করতে পারি কারণ আমরাও ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্ট। (আদি. ১:২৬) কিন্তু, যিহোবার মতো আমাদের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা নেই। ঈশ্বরের বাক্য ব্যাখ্যা করে, যিহোবা আমাদের স্বাধীনতার উপর সীমা নির্ধারণ করেছেন আর তিনি চান যেন আমরা সেই সীমা বজায় রাখি। উদাহরণ স্বরূপ, পরিবারের মধ্যে, স্ত্রীকে তার স্বামীর বশীভূত হতে হবে এবং সন্তানদের তাদের বাবা-মায়ের বাধ্য হতে হবে। (ইফি. ৫:২২; ৬:১) এই ধরনের সীমা, আমরা যেভাবে আমাদের স্বাধীন ইচ্ছাকে ব্যবহার করি, সেটাকে কীভাবে প্রভাবিত করে? এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের অনন্ত ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে।
স্বাধীন ইচ্ছার ব্যবহার ও অপব্যবহার
৬. কেন আমাদের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সীমা থাকা গুরুত্বপূর্ণ, তা একটা উদাহরণের সাহায্যে তুলে ধরুন।
৬ যে-স্বাধীনতার সীমা রয়েছে, সেটা কি কখনো প্রকৃত স্বাধীনতা হতে পারে? হ্যাঁ, হতে পারে! কেন? কারণ সীমা থাকা আমাদের সুরক্ষা করে। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা হয়তো গাড়ি চালিয়ে দূরের কোনো শহরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারি। কিন্তু ধরুন, কোনো ট্রাফিক আইন নেই এবং রাস্তায় কত গতিতে ও রাস্তার কোন দিক দিয়ে গাড়ি চালাতে হবে, সেই বিষয়ে সবাই নিজের ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আপনি কি সেই রাস্তায় ভ্রমণ করতে নিরাপদ বোধ করবেন? অবশ্যই না। সকলে যাতে প্রকৃত স্বাধীনতার উপকার উপভোগ করতে পারে, সেইজন্য স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সীমা থাকা প্রয়োজন। আসুন আমরা বাইবেলের কিছু উদাহরণ বিবেচনা করি, যে-উদাহরণগুলো তুলে ধরবে, যিহোবার নির্ধারিত সীমা কীভাবে আমাদের উপকার করে।
৭. (ক) আদম ও পশুপাখির মধ্যে কোন পার্থক্য ছিল? (খ) একটা যে-উপায়ে আদম তার স্বাধীন ইচ্ছাকে ব্যবহার করেছিলেন, তা বর্ণনা করুন।
৭ যিহোবা যখন প্রথম মানুষ আদমকে সৃষ্টি আদি. ২:১৯.
করেছিলেন, তখন তিনি স্বর্গদূতদের মতো তাকেও স্বাধীন ইচ্ছা দান করেছিলেন। কিন্তু, ঈশ্বর পশুপাখিকে স্বাধীন ইচ্ছা দান করেননি। কীভাবে আদম তার স্বাধীন ইচ্ছাকে উত্তম উপায়ে ব্যবহার করেছিলেন? আদম পশুপাখিকে নাম দেওয়ার দায়িত্ব উপভোগ করেছিলেন। “আদম তাহাদের কি কি নাম রাখিবেন, তাহা জানিতে” ঈশ্বর “সেই সকলকে তাঁহার [আদমের] নিকটে আনিলেন।” প্রত্যেকটা পশুপাখিকে দেখার পর, আদম সেটার একটা অর্থপূর্ণ নাম দিয়েছিলেন। আদমের বেছে নেওয়া নামগুলো যিহোবা পরিবর্তন করেননি। এর পরিবর্তে, “আদম যে সজীব প্রাণীর যে নাম রাখিলেন, তাহার সেই নাম হইল।”—৮. কীভাবে আদম তার স্বাধীন ইচ্ছার অপব্যবহার করেছিলেন আর এর ফল কী হয়েছিল?
৮ এই পৃথিবীকে এক পরমদেশে পরিণত করার দায়িত্ব দিয়ে যিহোবা আদমকে বলেছিলেন: “তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ ও বশীভূত কর, আর সমুদ্রের মৎস্যগণের উপরে, আকাশের পক্ষিগণের উপরে, এবং ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় জীবজন্তুর উপরে কর্ত্তৃত্ব কর।” (আদি. ১:২৮) কিন্তু, আদম নিষিদ্ধ ফল খাওয়া বেছে নিয়েছিলেন আর তা করার মাধ্যমে যিহোবা স্বাধীনতার ক্ষেত্রে যে-সীমা নির্ধারণ করেছিলেন, সেটা উপেক্ষা করেছিলেন। আদম যেহেতু তার স্বাধীন ইচ্ছার অপব্যবহার করেছিলেন, তাই মানবজাতি হাজার হাজার বছর ধরে কষ্টভোগ করছে। (রোমীয় ৫:১২) আসুন আমরা আদমের সিদ্ধান্তের গুরুতর ফলাফল সম্বন্ধে মনে রাখি। এটা আমাদের স্বাধীনতাকে উত্তম উপায়ে ব্যবহার করতে এবং যিহোবা আমাদের জন্য যে-সীমা নির্ধারণ করেছেন, তা মেনে নিতে অনুপ্রাণিত করবে।
৯. যিহোবা তাঁর প্রজা ইস্রায়েলের সামনে কোন বাছাই রেখেছিলেন আর তারা কী করবে বলে প্রতিজ্ঞা করেছিল?
৯ আদম ও হবার কাছ থেকে সমস্ত মানুষ উত্তরাধিকার সূত্রে অসিদ্ধতা ও মৃত্যু পেয়েছে। তবে, স্বাধীন ইচ্ছার দান ব্যবহার করার অধিকার আমাদের এখনও রয়েছে। ইস্রায়েল জাতির সঙ্গে ঈশ্বরের আচরণ থেকে আমরা তা বুঝতে পারি। তারা যিহোবার নিজস্ব প্রজা হতে চায় কি না, তা বেছে নেওয়ার সুযোগ যিহোবা তাদের দিয়েছিলেন। (যাত্রা. ১৯:৩-৬) সেই জাতি ঈশ্বরের প্রজা হওয়া বেছে নিয়েছিল এবং ঈশ্বর তাদের জন্য যে-সীমা নির্ধারণ করেছিলেন, তা মেনে নিয়েছিল। তারা বলেছিল: “সদাপ্রভু যাহা কিছু বলিয়াছেন, আমরা সমস্তই করিব।” (যাত্রা. ১৯:৮) দুঃখের বিষয় হল, এই লোকেরা পরে যিহোবার কাছে করা প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করা বেছে নিয়েছিল। আমরা এই উদাহরণ থেকে এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করতে পারি। আসুন আমরা আমাদের স্বাধীন ইচ্ছার দানকে সবসময় মূল্যবান বলে গণ্য করি এবং ক্রমাগত যিহোবার প্রতি আসক্ত থাকি ও তাঁর আইনের বাধ্য হই।—১ করি. ১০:১১.
১০. অসিদ্ধ মানুষেরাও যে ঈশ্বরকে সম্মানিত করার জন্য তাদের স্বাধীন ইচ্ছাকে ব্যবহার করতে পারে, তা ইব্রীয় ১১ অধ্যায়ের কোন উদাহরণগুলো প্রমাণ করে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
১০ ইব্রীয় ১১ অধ্যায়ে আমরা ১৬ জন বিশ্বস্ত পুরুষ ও নারীর নাম পাই, যারা যিহোবার নির্ধারিত সীমার প্রতি সম্মান দেখানো বেছে নিয়েছিলেন। এর ফলে তারা প্রচুর আশীর্বাদ এবং ভবিষ্যতের জন্য চমৎকার আশা লাভ করেছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, নোহের গভীর বিশ্বাস ছিল আর তিনি নিজের পরিবার ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করার জন্য একটা জাহাজ নির্মাণ করার বিষয়ে ঈশ্বরের নির্দেশনার বাধ্য হওয়া বেছে নিয়েছিলেন। (ইব্রীয় ১১:৭) অব্রাহাম ও সারা স্বেচ্ছায় ঈশ্বরের বাধ্য হয়েছিলেন এবং তিনি তাদেরকে যে-দেশ দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, সেখানে চলে গিয়েছিলেন। ঊর নগরে “ফিরিয়া যাইবার সুযোগ” থাকা সত্ত্বেও, তারা ভবিষ্যতের জন্য ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রেখেছিলেন। বাইবেল বলে, তারা ‘আরও উত্তম দেশের আকাঙ্ক্ষা করিতেছিলেন।’ (ইব্রীয় ১১:৮, ১৩, ১৫, ১৬) মোশি মিশরের ধনসম্পদ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং “পাপজাত ক্ষণিক সুখভোগ অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের প্রজাবৃন্দের সঙ্গে দুঃখভোগ” করা বেছে নিয়েছিলেন। (ইব্রীয় ১১:২৪-২৬) আসুন আমরা সেইসমস্ত পুরুষ ও নারীর বিশ্বাস অনুকরণ করি এবং আমাদের স্বাধীন ইচ্ছার দানকে মূল্যবান বলে গণ্য করার মাধ্যমে এই দানকে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার জন্য ব্যবহার করি।
১১. (ক) স্বাধীন ইচ্ছা ব্যবহার করার একটা দারুণ আশীর্বাদ কী? (খ) কী আপনাকে নিজের স্বাধীন ইচ্ছাকে উত্তম উপায়ে ব্যবহার করার জন্য অনুপ্রাণিত করে?
দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৯, ২০ পদে সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা করে। (পড়ুন।) ১৯ পদে আমরা পড়ি, ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের একটা বাছাই করতে দিয়েছিলেন। ২০ পদ থেকে আমরা জানতে পারি, তারা যিহোবাকে কতটা ভালোবাসে সেটা প্রকাশ করার একটা সুযোগ তিনি তাদের দিয়েছিলেন। আমরাও যিহোবাকে উপাসনা করা বেছে নিতে পারি। আর আমাদেরও যিহোবাকে সম্মানিত করার জন্য নিজেদের স্বাধীন ইচ্ছাকে ব্যবহার করার ও আমরা তাঁকে কতটা ভালোবাসি, তা প্রকাশ করার এক অদ্বিতীয় সুযোগ রয়েছে!
১১ কাউকে আমাদের হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দেওয়া হয়তো আরও সহজ বলে মনে হতে পারে, কিন্তু তা করলে আমরা স্বাধীন ইচ্ছার একটা দারুণ আশীর্বাদ উপভোগ করার সুযোগ কখনোই পাব না। সেটা কী? বাইবেলআপনার স্বাধীন ইচ্ছার দানকে অপব্যবহার করবেন না
১২. স্বাধীন ইচ্ছার দানকে আমরা কখনোই কী করব না?
১২ মনে করুন, আপনার কোনো বন্ধুকে আপনি দামি একটা উপহার দিয়েছেন। সেই বন্ধু যদি আপনার দেওয়া উপহারটা আবর্জনার পাত্রে ফেলে দেয় অথবা তার চেয়েও খারাপ কিছু করে যেমন, কারো ক্ষতি করার জন্য সেই উপহারটা ব্যবহার করে, তা হলে আপনার কেমন লাগবে? আপনি নিশ্চয়ই কষ্ট পাবেন। যিহোবা আমাদের উপহার বা দান হিসেবে স্বাধীন ইচ্ছা দিয়েছেন। তাই তিনি যখন দেখেন, লোকেরা তাদের স্বাধীনতাকে অপব্যবহার করে মন্দ বিষয়গুলো বেছে নেয় অথবা অন্যদের ক্ষতি করে, তখন তিনিও নিশ্চয়ই কষ্ট পান। বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল, “শেষ কালে” লোকেরা “অকৃতজ্ঞ” হবে। (২ তীম. ৩:১, ২) তাহলে, কীভাবে আমরা দেখাতে পারি, যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া এই মূল্যবান দানের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ? আর কীভাবে আমরা এই দানের অপব্যবহার করা এড়াতে পারি?
১৩. কোন একটা উপায়ে আমরা আমাদের খ্রিস্টীয় স্বাধীনতার অপব্যবহার করা এড়াতে পারি?
১৩ আমাদের সকলেরই নিজেদের বন্ধুবান্ধব, পোশাক-আশাক ও সাজগোজ এবং আমোদপ্রমোদ বাছাই করার স্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু, আমরা হয়তো আমাদের স্বাধীনতাকে ঈশ্বর পছন্দ করেন না এমন বাছাই করার জন্য অথবা জগতের লোকেদের ধারা অনুসরণ করার জন্য এক অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে ফেলতে পারি। (পড়ুন, ১ পিতর ২:১৬.) আমাদের স্বাধীনতাকে ভুল কিছু করার এক সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করার পরিবর্তে, ‘সকলই ঈশ্বরের গৌরবার্থে করিবার’ জন্য ব্যবহার করা উচিত।—১ করি. ১০:৩১; গালা. ৫:১৩.
১৪. স্বাধীন ইচ্ছাকে ব্যবহার করার সময় কেন আমাদের যিহোবার উপর নির্ভর করতে হবে?
যিশা. ৪৮:১৭) যিহোবার উপর আমাদের নির্ভর করতে হবে এবং আমরা যাতে উত্তম বাছাই করতে পারি, সেইজন্য তিনি যে-সীমা নির্ধারণ করেন তা মেনে নিতে হবে। আমরা নম্রভাবে স্বীকার করি, “মনুষ্যের পথ তাহার বশে নয়, মনুষ্য চলিতে চলিতে আপন পাদবিক্ষেপ স্থির করিতে পারে না।” (যির. ১০:২৩) আদম এবং অবিশ্বস্ত ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করা বেছে নিয়েছিল ও নিজেদের উপর নির্ভর করেছিল। আসুন আমরা তাদের মন্দ উদাহরণ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি। নিজেদের উপর নির্ভর করার পরিবর্তে, আমরা যেন “সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস” বা নির্ভর করি।—হিতো. ৩:৫.
১৪ যিহোবা বলেছিলেন: “আমি সদাপ্রভু তোমার ঈশ্বর, আমি তোমার উপকারজনক শিক্ষা দান করি, ও তোমার গন্তব্য পথে তোমাকে গমন করাই।” (অন্যদের স্বাধীন ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখানো
১৫. গালাতীয় ৬:৫ পদে প্রাপ্ত নীতি থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৫ এ ছাড়া, জীবনের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যদের যে-স্বাধীনতা রয়েছে, সেটার প্রতিও আমাদের সম্মান দেখাতে হবে। কেন? যেহেতু সকলেই স্বাধীন ইচ্ছার দান লাভ করেছে, তাই দু-জন খ্রিস্টান সবসময় ঠিক একইরকম সিদ্ধান্তে আসবে, এমনটা বলা যায় না। আমাদের আচরণ ও উপাসনা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো এর অন্তর্ভুক্ত। গালাতীয় ৬:৫ পদে প্রাপ্ত নীতিটা মনে রাখুন। (পড়ুন।) প্রত্যেক খ্রিস্টান নিজের সিদ্ধান্তের জন্য নিজেই দায়ী থাকবে। এই বিষয়টা আমরা যখন বুঝতে পারব, তখন স্বাধীন ইচ্ছা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অন্যদের স্বাধীনতাকে আমরা সম্মান করব।
১৬, ১৭. (ক) কীভাবে স্বাধীন ইচ্ছা করিন্থ মণ্ডলীতে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছিল? (খ) কীভাবে পৌল সেখানকার খ্রিস্টানদের সাহায্য করেছিলেন আর এই বিবরণ আমাদের কী শিক্ষা দেয়?
১৬ আসুন আমরা বাইবেল থেকে এমন একটা উদাহরণ বিবেচনা করি, যেটা তুলে ধরে, কেন আমাদের ভাই-বোনদের স্বাধীন ইচ্ছার প্রতি আমাদের সম্মান দেখাতে হবে। করিন্থ মণ্ডলীর খ্রিস্টানদের মধ্যে এমন মাংস খাওয়া নিয়ে তর্কবিতর্ক হয়েছিল, যে-মাংস প্রথমে প্রতিমার উদ্দেশে উৎসর্গ করা হয়েছিল, কিন্তু পরে বাজারে বিক্রি করা হয়েছিল। কোনো কোনো খ্রিস্টানের বিবেক সেই মাংস খেতে বাধা দেয়নি কারণ তারা জানত, প্রতিমা আসলে কিছুই নয়। তবে, যারা আগে প্রতিমার উপাসনা করত, তাদের কাছে মনে হয়েছিল, এই ধরনের প্রতিমার কাছে উৎসর্গ করা মাংস খাওয়া উপাসনারই একটা অংশের মতো হবে। (১ করি. ৮:৪, ৭) এটা একটা গুরুতর সমস্যা ছিল, যার ফলে মণ্ডলী বিভক্ত হয়ে পড়তে পারত। কীভাবে পৌল খ্রিস্টানদেরকে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা সমাধান করতে সাহায্য করেছিলেন?
১৭ প্রথমত, পৌল দুটো দলকেই মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্ব দৃঢ় করার ক্ষেত্রে খাদ্যের কোনো ভূমিকা নেই। (১ করি. ৮:৮) এরপর, পৌল তাদের সাবধান করেছিলেন, তাদের নিজ নিজ বাছাই করার “ক্ষমতা” রয়েছে বলে তারা যেন সেই ব্যক্তিদের আঘাত না দেয়, যাদের বিবেক দুর্বল। (১ করি. ৮:৯) তারপর, যাদের বিবেক দুর্বল, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, তারা যেন সেই ব্যক্তিদের বিচার না করে, যারা এই ধরনের মাংস খায়। (১ করি. ১০:২৫, ২৯, ৩০) তাই, উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতিতে প্রত্যেক খ্রিস্টানকে নিজ নিজ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা ছাড়া, অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতেও আমাদের ভাই-বোনদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতাকে আমাদের কি সম্মান করা উচিত নয়?—১ করি. ১০:৩২, ৩৩.
১৮. আপনার স্বাধীন ইচ্ছার দানকে যে আপনি মূল্যবান বলে গণ্য করেন, তা আপনি কীভাবে প্রকাশ করবেন?
১৮ যিহোবা আমাদের স্বাধীন ইচ্ছা দান করেছেন, যা আমাদের প্রকৃত স্বাধীনতা এনে দেয়। (২ করি. ৩:১৭) আমরা এই দানকে মূল্যবান বলে গণ্য করি কারণ এটা আমাদের এমন সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে, যার মাধ্যমে আমরা যিহোবাকে কতটা ভালোবাসি, তা বোঝা যায়। তাই আসুন, আমরা সবসময় এমন বাছাই করি, যা তাঁকে সম্মানিত করে ও সেইসঙ্গে এই মূল্যবান দান ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অন্যদের স্বাধীনতার প্রতি সম্মান দেখাই।