সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রকৃত ধন লাভ করার চেষ্টা করুন

প্রকৃত ধন লাভ করার চেষ্টা করুন

“আপনাদের জন্যে অধার্ম্মিকতার ধন দ্বারা মিত্র লাভ কর।”—লূক ১৬:৯.

গান সংখ্যা: ৩২, ৫১

১, ২. কেন এই বিধিব্যবস্থায় সবসময় দরিদ্র লোক থাকবে?

বর্তমানের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে নিষ্ঠুরতা ও অন্যায্যতা রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অনেক যুবক-যুবতীর পক্ষে চাকরি খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে গিয়েছে। কোনো কোনো ব্যক্তি ধনী দেশগুলোতে গিয়ে বাস করার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থাকে। আর এমনকী ধনী দেশগুলোতেও অনেক দরিদ্র ব্যক্তি রয়েছে। সারা বিশ্বে ধনী লোকেরা আরও ধনী হচ্ছে এবং দরিদ্র লোকেরা আরও দরিদ্র হচ্ছে। সাম্প্রতিক কিছু পরিসংখ্যান অনুসারে, বিশ্বের ১ শতাংশ ধনী লোকের কাছে এত অর্থ আছে, যা বাকি ৯৯ শতাংশ লোকের কাছে থাকা মোট অর্থের সমান। স্পষ্টতই, কোনো কোনো লোকের কাছে তাদের পরবর্তী কয়েক প্রজন্মের যত্ন নেওয়ার জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ রয়েছে অথচ অন্যদিকে কোটি কোটি লোক খুবই দরিদ্র। যিশু এই বিষয়টা স্বীকার করেছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “দরিদ্রেরা তোমাদের কাছে সর্ব্বদাই আছে।” (মার্ক ১৪:৭) কেন এইরকম অন্যায্যতা রয়েছে?

যিশু জানতেন, একমাত্র ঈশ্বরের রাজ্য এই জগতের বাণিজ্যিক ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতে পারবে। বাইবেল দেখায় যে, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি “বণিকেরা” বা বাণিজ্যিক ব্যবস্থাও শয়তানের জগতের অংশ। (প্রকা. ১৮:৩) এটা ঠিক যে, ঈশ্বরের লোকেরা রাজনীতি ও মিথ্যা ধর্ম থেকে পুরোপুরিভাবে পৃথক হতে সক্ষম হয়েছে। তবে, ঈশ্বরের বেশিরভাগ লোকই সম্পূর্ণরূপে শয়তানের জগতের বাণিজ্যিক অংশ থেকে পৃথক হতে পারে না।

৩. আমরা কোন প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়ে বিবেচনা করব?

খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের এই জগতের বাণিজ্যিক ব্যবস্থার প্রতি নিজেদের মনোভাব পরীক্ষা করে দেখতে হবে। তা করার জন্য আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘কীভাবে আমি আমার বস্তুগত বিষয়কে এমনভাবে ব্যবহার করতে পারি, যা দেখায় আমি ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত? কীভাবে আমি বাণিজ্যিক জগতের সঙ্গে কম জড়িত হতে পারি? কোন অভিজ্ঞতাগুলো দেখায় যে, বর্তমানে ঈশ্বরের লোকেরা তাঁর উপর পুরোপুরি আস্থা রাখে?’

অধার্মিক গৃহাধ্যক্ষের দৃষ্টান্ত

৪, ৫. (ক) যিশুর বলা দৃষ্টান্তের সেই গৃহাধ্যক্ষের প্রতি কী ঘটেছিল? (খ) যিশু তাঁর অনুসারীদের কী করতে বলেছিলেন?

লূক ১৬:১-৯ পদ পড়ুন। অধার্মিক দেওয়ান বা গৃহাধ্যক্ষ সম্বন্ধে বলা যিশুর দৃষ্টান্ত নিয়ে আমাদের সকলেরই থেমে চিন্তা করা উচিত। সেই গৃহাধ্যক্ষের বিষয়ে এই অপবাদ দেওয়া হয়েছিল যে, তিনি তার প্রভুর ধন অপচয় করছেন আর তাই তার প্রভু তাকে কাজ থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। * কিন্তু, সেই গৃহাধ্যক্ষ ‘বুদ্ধি’ বা ব্যাবহারিক প্রজ্ঞা কাজে লাগিয়েছিলেন। কাজ ছাড়ার আগে তিনি এমন লোকেদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছিলেন, যারা তাকে পরবর্তী সময়ে সাহায্য করতে পারবে। এই দৃষ্টান্ত ব্যবহার করার পিছনে যিশুর এমন উদ্দেশ্য ছিল না যে, তাঁর শিষ্যরা টিকে থাকার জন্য অধার্মিক উপায়ে কাজ করবে। এইরকম কাজ আসলে জগতের লোকেরা করে থাকে। এর পরিবর্তে, যিশু খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা শিক্ষা প্রদান করার উদ্দেশ্যে এই দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেছিলেন।

যিশু জানতেন, সেই গৃহাধ্যক্ষ যেমন হঠাৎ একটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন, তেমনই তাঁর বেশিরভাগ অনুসারীর পক্ষে এই অন্যায্য জগতে জীবনযাপন করা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে। তাই, তিনি তাদের বলেছিলেন: “আপনাদের জন্যে অধার্ম্মিকতার ধন দ্বারা মিত্র লাভ কর।” কেন? যাতে সেইরকম ধন শেষ বা ব্যর্থ হলে সেই মিত্র বা বন্ধুরা অর্থাৎ যিহোবা ও যিশু ‘আপনাদিগকে সেই অনন্ত আবাসে গ্রহণ করেন।’ যিশুর এই পরামর্শ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

৬. কীভাবে আমরা জানি যে, বর্তমানের বাণিজ্যিক ব্যবস্থা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের অংশ ছিল না?

যিশু যদিও ব্যাখ্যা করেননি, কেন তিনি বস্তুগত বিষয়কে ‘অধার্ম্মিক’ বলেছিলেন, তবে বাইবেল এই বিষয়টা স্পষ্ট করে যে, বস্তুগত বিষয় ব্যবহার করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করা কখনোই ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের অংশ ছিল না। উদাহরণ স্বরূপ, যিহোবা আদম ও হবাকে এদন বাগানে বিনা মূল্যে তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিষয় প্রদান করেছিলেন। (আদি. ২:১৫, ১৬) পরবর্তী সময়ে ঈশ্বর যখন তাঁর অভিষিক্ত ব্যক্তিদের পবিত্র আত্মা প্রদান করেছিলেন, তখন “তাহাদের এক জনও আপন সম্পত্তির মধ্যে কিছুই নিজের বলিত না; কিন্তু তাহাদের সকল বিষয় সাধারণে থকিত।” (প্রেরিত ৪:৩২) ভাববাদী যিশাইয় বলেছিলেন, এমন এক সময় আসবে, যখন সমস্ত মানুষ পৃথিবীতে উৎপাদিত সব কিছু বিনা মূল্যে উপভোগ করবে। (যিশা. ২৫:৬-৯; ৬৫:২১, ২২) কিন্তু, সেই সময় না আসা পর্যন্ত যিশুর অনুসারীদের ‘বুদ্ধি’ বা ব্যাবহারিক প্রজ্ঞার প্রয়োজন হবে। তাদের এই জগতের অধার্মিক বস্তুগত বিষয় ব্যবহার করে জীবনযাপন করতে হবে এবং একইসঙ্গে ঈশ্বরকে খুশি করার চেষ্টাও করতে হবে।

অধার্মিকতার ধনকে বিজ্ঞতার সঙ্গে ব্যবহার করুন

৭. লূক ১৬:১০-১৩ পদে যিশু কোন পরামর্শ দিয়েছেন?

লূক ১৬:১০-১৩ পদ পড়ুন। যিশুর দৃষ্টান্তের সেই গৃহাধ্যক্ষ নিজের উপকারের জন্য কয়েক জন ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু, যিশু চেয়েছিলেন যেন তাঁর অনুসারীরা কোনোরকম স্বার্থপর উদ্দেশ্য ছাড়াই স্বর্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। তিনি আমাদের এটা বোঝাতে চেয়েছিলেন, আমরা যেভাবে আমাদের অধার্মিকতার ধন ব্যবহার করি, সেটা দেখাতে পারে আমরা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত কি না। কীভাবে আমরা তা করতে পারি?

৮, ৯. কয়েক জন ব্যক্তি কীভাবে অধার্মিকতার ধন ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বিশ্বস্ততা দেখাচ্ছেন, সেই বিষয়ে কিছু উদাহরণ দিন।

বস্তুগত বিষয় ব্যবহার করে আমাদের বিশ্বস্ততা প্রমাণ করার একটা উপায় হল, বিশ্বব্যাপী প্রচার কাজের জন্য দান করা, যে-কাজের বিষয়ে যিশু ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন। (মথি ২৪:১৪) ভারতের একজন অল্পবয়সি মেয়ে একটা ছোট্ট টাকার বাক্স রাখত আর সেটার মধ্যে অল্প অল্প করে টাকা জমাতো। সে এমনকী টাকা জমানোর জন্য খেলনা কেনাও বন্ধ করে দিয়েছিল। সেই বাক্স যখন ভরতি হয়ে গিয়েছিল, তখন সে তার জমানো সমস্ত টাকা প্রচার কাজের জন্য দান করে দিয়েছিল। ভারতের একজন ভাইয়ের নারকেল বাগান রয়েছে। তিনি অনেক নারকেল মালায়ালাম অনুবাদ অফিসে দান করেছিলেন। যেহেতু এই অফিসকে নারকেল কিনতে হয়, তাই তিনি মনে করেছিলেন, অর্থ দেওয়ার চেয়েও তার এই দান আরও বেশি মূল্যবান। এটা হল ‘বুদ্ধি’ বা ব্যাবহারিক প্রজ্ঞা। একইভাবে, গ্রিসের ভাইয়েরা বেথেল পরিবারের জন্য নিয়মিতভাবে অলিভ অয়েল, পনির ও অন্যান্য খাবার দান করে থাকে।

শ্রীলঙ্কার একজন ভাই তার জমি-জায়গায় ও বাড়িতে সভা এবং সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার আর সেইসঙ্গে পূর্ণসময়ের দাসদের বাস করার সুযোগ দিয়েছেন। এটা সেই ভাইয়ের পক্ষে এক আর্থিক ত্যাগস্বীকার। কিন্তু, এটা সেখানকার প্রকাশকদের জন্য এক বিরাট সাহায্য, যাদের কাছে খুব বেশি টাকাপয়সা নেই। একটা দেশে, যেখানে আমাদের কাজের উপর সীমা আরোপ করা হয়েছে, সেখানে ভাইয়েরা তাদের বাড়িগুলোকে কিংডম হল হিসেবে ব্যবহার করে। ফল স্বরূপ অগ্রগামী ও অন্যেরা, যাদের কাছে খুব বেশি টাকাপয়সা নেই, তারা এমন একটা জায়গায় সভা অনুষ্ঠিত করতে পারে, যেটার জন্য তাদের ভাড়া দিতে হয় না।

১০. আমরা যখন উদারভাবে দান করি, তখন আমরা কোন কোন উপকার লাভ করি?

১০ এইরকম উদাহরণগুলো দেখায় যে, ঈশ্বরের লোকেরা “ক্ষুদ্রতম বিষয়ে বিশ্বস্ত।” (লূক ১৬:১০) তারা তাদের বস্তুগত বিষয় অন্যদের উপকারের জন্য ব্যবহার করে। যিহোবার এই বন্ধুরা এইরকম ত্যাগস্বীকার করার বিষয়ে কেমন অনুভব করে? তারা প্রচুর আনন্দ অনুভব করে কারণ তারা জানে, উদার হওয়ার মাধ্যমে তারা স্বর্গে “সত্য” বা প্রকৃত ধন লাভ করে। (লূক ১৬:১১) একজন বোন রাজ্যের কাজে সাহায্য করার জন্য নিয়মিতভাবে দান করেন। তিনি বলেন যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার প্রতি চমৎকার কিছু ঘটেছে। তিনি ব্যাখ্যা করেন: “আমি দেখেছি, বস্তুগতভাবে আমি যত বেশি উদারতা দেখাই, অন্যদের প্রতি আমার মনোভাবের মধ্যেও তত বেশি উদারতা ফুটে ওঠে। আমি ক্ষমাশীল হওয়ার, অন্যদের প্রতি ধৈর্যশীল হওয়ার এবং হতাশা ও পরামর্শ মেনে নেওয়ার বিষয়ে আরও বেশি উদার হয়েছি।” অনেকে দেখেছে যে, উদার হওয়ার মাধ্যমে তারা ব্যক্তিগতভাবে উপকার লাভ করেছে।—গীত. ১১২:৫; হিতো. ২২:৯.

১১. (ক) কীভাবে আমাদের উদারতা ‘বুদ্ধি’ বা ব্যাবহারিক প্রজ্ঞা প্রকাশ করে? (খ) বর্তমানে ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে কী করা হচ্ছে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

১১ এ ছাড়া, আমরা যখন পরিচর্যায় অন্যদের সাহায্য করার জন্য আমাদের বস্তুগত বিষয় ব্যবহার করি, তখন আমরা ‘বুদ্ধি’ বা ব্যাবহারিক প্রজ্ঞা প্রদর্শন করি। ফলে, আমরা যদি এমনকী পূর্ণসময়ের সেবা করতে না পারি অথবা যেখানে বেশি প্রয়োজন সেখানে গিয়ে সেবা করতে না পারি, তবুও আমরা অন্যদের উপকার করতে পারব। (হিতো. ১৯:১৭) উদাহরণ স্বরূপ, আমাদের দান অত্যন্ত দরিদ্র এলাকাগুলোতে সাহিত্যাদি জোগানোর ও সেইসঙ্গে প্রচার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য সাহায্য করে, যেখানে অনেক নতুন ব্যক্তি সত্য গ্রহণ করছে। কঙ্গো, মাদাগাস্কার ও রুয়ান্ডার মতো দেশগুলোতে বাইবেল কেনার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। কখনো কখনো একটা বাইবেল কেনার জন্য এক সপ্তাহ অথবা এক মাসের বেতন ব্যয় করতে হয়। বহু বছর ধরে আমাদের ভাইদের বাছাই করতে হতো যে, তারা তাদের পরিবারের জন্য খাবার কিনবে, না কি সেই অর্থ দিয়ে একটা বাইবেল কিনবে। কিন্তু, এখন অন্যদের দানের ফলে ও সেইসঙ্গে টাকাপয়সার ‘সাম্যভাবের’ ফলে যিহোবার সংগঠন বাইবেল অনুবাদ করে আর বিনা মূল্যে পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের ও একইসঙ্গে বাইবেল ছাত্রদের কাছে বাইবেল বিতরণ করে। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ৮:১৩-১৫.) আর এভাবে, যারা দান করে এবং যারা গ্রহণ করে, উভয়েই যিহোবার বন্ধু হয়ে উঠতে পারে।

কীভাবে আমরা বাণিজ্যিক জগতের সঙ্গে কম জড়িত হতে পারি?

১২. কীভাবে অব্রাহাম দেখিয়েছিলেন যে, ঈশ্বরের উপর তার আস্থা রয়েছে?

১২ এ ছাড়া, আমরা যখন বাণিজ্যিক জগতের সঙ্গে কম জড়িত হই এবং “সত্য” বা প্রকৃত ধন লাভ করার চেষ্টা করি, তখন আমরা যিহোবার বন্ধু হয়ে উঠতে পারি। বিশ্বস্ত ব্যক্তি অব্রাহাম ঠিক এমনটাই করেছিলেন। তিনি যিহোবার বাধ্য হয়েছিলেন এবং ঊর নামে খুবই সমৃদ্ধিশালী এক নগর ত্যাগ করে তাঁবুতে বাস করেছিলেন কারণ তিনি যিহোবার বন্ধু হতে চেয়েছিলেন। (ইব্রীয় ১১:৮-১০) তিনি বস্তুগত বিষয়ের উপর আস্থা রাখার পরিবর্তে সবসময় ঈশ্বরের উপর আস্থা রেখেছিলেন। (আদি. ১৪:২২, ২৩) যিশু এই ধরনের বিশ্বাস অনুকরণ করার জন্য অন্যদের উৎসাহিত করেছিলেন। একবার তিনি একজন ধনী যুবক ব্যক্তিকে বলেছিলেন: “যদি সিদ্ধ হইতে ইচ্ছা কর, তবে চলিয়া যাও, তোমার যাহা যাহা আছে, বিক্রয় কর, এবং দরিদ্রদিগকে দান কর, তাহাতে স্বর্গে ধন পাইবে; আর আইস, আমার পশ্চাদগামী হও।” (মথি ১৯:২১) সেই যুবক ব্যক্তির অব্রাহামের মতো বিশ্বাস ছিল না। কিন্তু, এমন অনেক ব্যক্তি ছিল, যারা ঈশ্বরের উপর আস্থা রেখেছিল।

১৩. (ক) পৌল তীমথিয়কে কোন পরামর্শ দিয়েছিলেন? (খ) কীভাবে আমরা বর্তমানে পৌলের পরামর্শ কাজে লাগাতে পারি?

১৩ তীমথিয় একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি ছিলেন। তীমথিয়কে ‘খ্রীষ্ট যীশুর উত্তম যোদ্ধা’ হিসেবে অভিহিত করার পর পৌল তাকে বলেছিলেন: “কেহ যুদ্ধ করিবার সময়ে আপনাকে সাংসারিক” বা বাণিজ্যিক “ব্যাপাররূপ পাশে বদ্ধ” বা জড়িত “হইতে দেয় না, যেন তাহাকে যে ব্যক্তি যোদ্ধা করিয়া নিযুক্ত করিয়াছে, তাহারই তুষ্টিকর হইতে পারে।” (২ তীম. ২:৩, ৪) আজকে যিশুর অনুসারীরা, যাদের মধ্যে দশ লক্ষেরও বেশি পূর্ণসময়ের পরিচারক রয়েছে, পৌলের পরামর্শ কাজে লাগানোর জন্য যথাসাধ্য করে। তারা এই লোভী জগতের প্রলুব্ধকর বিজ্ঞাপনগুলো প্রত্যাখ্যান করে। তারা এই নীতি মনে রাখে: “ঋণী মহাজনের দাস হয়।” (হিতো. ২২:৭) শয়তান চায় যেন আমরা তার বাণিজ্যিক জগতের জন্য কাজ করার পিছনে আমাদের সমস্ত সময় ও শক্তি ব্যয় করি। কেউ কেউ বাড়ি কিংবা গাড়ি কেনার, পড়াশোনা করার অথবা এমনকী বিয়ের জন্য মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়ে থাকে। আমরা যদি সতর্ক না থাকি, তা হলে আমাদের হয়তো অনেক বছর ধরে ঋণের বোঝা বহন করতে হবে। আমরা যখন আমাদের জীবনকে সাদাসিধে করি, ঋণ নেওয়া এড়িয়ে চলি এবং কম টাকাপয়সা খরচ করি, তখন আমরা ব্যাবহারিক প্রজ্ঞা প্রদর্শন করি। এভাবে আমরা বর্তমানের বাণিজ্যিক ব্যবস্থার দাসত্ব করার পরিবর্তে ঈশ্বরের সেবা করার জন্য স্বাধীন হয়ে উঠি।—১ তীম. ৬:১০.

১৪. আমাদের কী করার জন্য অবশ্যই দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হতে হবে? কিছু উদাহরণ দিন।

১৪ জীবনকে সাদাসিধে রাখার জন্য আমাদের অবশ্যই ঈশ্বরের রাজ্যকে প্রথমে রাখতে হবে। একটা উদাহরণ বিবেচনা করুন। একজন স্বামী ও স্ত্রীর একটা বড়ো লাভজনক ব্যাবসা ছিল। কিন্তু, তারা পুনরায় পূর্ণসময়ের পরিচর্যা শুরু করতে চেয়েছিলেন। তাই, তারা তাদের ব্যাবসা, স্পিডবোট ও অন্যান্য বস্তুগত বিষয় বিক্রি করে দিয়েছিলেন। এরপর, তারা নিউ ইয়র্কের ওয়ারউইকে বিশ্বপ্রধান কার্যালয়ের নির্মাণে সাহায্য করার জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সেবা করেছিলেন। এই সেবা সেই স্বামী ও স্ত্রীর জন্য খুবই বিশেষ ছিল কারণ তারা বেথেলে তাদের মেয়ে-জামাইয়ের সঙ্গে এবং কয়েক সপ্তাহের জন্য সেই স্বামীর বাবা-মায়ের সঙ্গেও কাজ করতে পেরেছিলেন, যারা ওয়ারউইকের প্রকল্পে কাজ করছিলেন। আরেকটা উদাহরণ বিবেচনা করুন। যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর একজন অগ্রগামী বোন একটা ব্যাঙ্কে পার্ট-টাইম কাজ করতে শুরু করেছিলেন। নিয়োগকর্তারা তার কাজ দেখে এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে, তাকে পূর্ণসময়ের কাজের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, যেটার ফলে তিনি আগের চেয়ে তিন গুণ বেশি বেতন পেতে পারতেন। কিন্তু, সেই প্রস্তাব গ্রহণ করলে যেহেতু তিনি তার পরিচর্যার প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারবেন না, তাই তিনি সেই প্রলুব্ধকর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এই উদাহরণগুলো হল যিহোবার দাসদের বিভিন্ন ত্যাগস্বীকারের মধ্যে মাত্র কয়েকটা। আমরা যখন ঈশ্বরের রাজ্যকে প্রথমে রাখার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ থাকি, তখন সেটা দেখায় যে, আমরা বস্তুগত বিষয়ের চেয়ে ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব ও প্রকৃত ধনকে আরও বেশি মূল্যবান বলে মনে করি।

যখন বস্তুগত ধন ব্যর্থ হয়

১৫. কোন ধন সবচেয়ে বেশি পরিতৃপ্তি এনে দেয়?

১৫ বস্তুগত ধন থাকার অর্থ এই নয় যে, আমাদের উপর ঈশ্বরের অনুমোদন রয়েছে। যিহোবা এমন ব্যক্তিদের আশীর্বাদ করেন, যারা “সৎক্রিয়ারূপ ধনে ধনবান্‌।” (পড়ুন, ১ তীমথিয় ৬:১৭-১৯.) উদাহরণ স্বরূপ, লুচিয়া নামে একজন বোন জানতে পেরেছিলেন যে, আলবানিয়ায় পরিচারকদের প্রয়োজন রয়েছে। তাই, ১৯৯৩ সালে তিনি ইতালি থেকে আলবানিয়ায় চলে গিয়েছিলেন। যদিও সেখানে তার কোনো চাকরি ছিল না কিন্তু তার এই আস্থা ছিল যে, যিহোবা তার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়ে দেবেন। তিনি আলবানিয়ান ভাষা শিখেছিলেন এবং ৬০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে উৎসর্গীকৃত হতে সাহায্য করেছিলেন। আমরা সকলেই হয়তো আমাদের এলাকায় প্রচার করে একইরকম ফল লাভ করি না। কিন্তু, অন্যদের যিহোবা সম্বন্ধে জানতে এবং তাঁর বন্ধু হয়ে উঠতে সাহায্য করার জন্য আমরা যা-কিছুই করি না কেন, সেটাকে আমরা চিরকাল মূল্যবান হিসেবে মনে করব।—মথি ৬:২০.

১৬. (ক) বর্তমানের বাণিজ্যিক ব্যবস্থার প্রতি কী ঘটবে? (খ) এই বিষয়টা জানার ফলে বস্তুগত বিষয়ের প্রতি আমাদের মনোভাব কীভাবে প্রভাবিত হওয়া উচিত?

১৬ যিশু এই বিষয়টা স্পষ্ট করেছিলেন যে, বর্তমানের বাণিজ্যিক ব্যবস্থা শেষ বা ব্যর্থ হবে। তিনি বলেননি, ‘যদি বস্তুগত ধন শেষ হয়’ বা ব্যর্থ হয়। বরং তিনি বলেছিলেন: ‘বস্তুগত ধন শেষ হইলে’ বা ব্যর্থ হলে। (লূক ১৬:৯) এই শেষ কালে কিছু কিছু ব্যাঙ্ক ব্যর্থ বা দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে এবং কোনো কোনো দেশ চরম অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, নিকট ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও বাণিজ্যিক ব্যবস্থা, যেগুলো কিনা শয়তানের ব্যবস্থার অংশ, পুরোপুরিভাবে ব্যর্থ বলে প্রমাণিত হবে। ভাববাদী যিহিষ্কেল ও সফনিয় ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন, যে-সোনা ও রুপো বাণিজ্যিক ব্যবস্থায় সবসময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে এসেছে, সেগুলো মূল্যহীন হয়ে যাবে। (যিহি. ৭:১৯; সফ. ১:১৮) আমরা যদি বৃদ্ধবয়সে পৌঁছে বুঝতে পারি যে, আমরা এই জগতে অধার্মিক বস্তুগত বিষয় লাভ করার জন্য প্রকৃত ধন ত্যাগ করেছি, তা হলে আমরা কেমন অনুভব করব? আমরা হয়তো এমন এক ব্যক্তির মতো অনুভব করব, যিনি সারা জীবন কাজ করে প্রচুর টাকাপয়সা উপার্জন করেছেন কিন্তু পরিশেষে বুঝতে পেরেছেন, তার সমস্ত টাকাই আসলে জাল। (হিতো. ১৮:১১) এই জগতের বস্তুগত বিষয় ব্যর্থ হবেই। তাই, আপনার বস্তুগত বিষয় ব্যবহার করে স্বর্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার সুযোগকে হাতছাড়া করবেন না। যিহোবা ও তাঁর রাজ্যের জন্য আমরা যা-কিছু করি, সেগুলো আমাদের প্রকৃতই সুখী করবে।

১৭, ১৮. ঈশ্বরের বন্ধুরা কীসের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে?

১৭ ঈশ্বরের রাজ্য আসার পর কাউকেই আর ভাড়া দিতে হবে না অথবা ঋণ নিতে হবে না। বিনা মূল্যে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য লাভ করা যাবে এবং ডাক্তার অথবা ওষুধের জন্য অর্থ ব্যয় করার প্রয়োজন হবে না। যিহোবার বন্ধুরা পৃথিবীতে উৎপাদিত সর্বোত্তম বিষয়গুলো উপভোগ করবে। সোনা, রুপো ও রত্ন সৌন্দর্যের জন্য ব্যবহার করা হবে, কাউকে ধনী করার জন্য নয়। সুন্দর সুন্দর বাড়ি নির্মাণ করার জন্য বিনা মূল্যে উচ্চমানের কাঠ, পাথর ও ধাতু পাওয়া যাবে। আমাদের বন্ধুরা অর্থের বিনিময়ে নয় বরং স্বেচ্ছায় আমাদের সাহায্য করবে। আমরা পৃথিবীতে উৎপাদিত সমস্ত কিছুই ভাগ করে নেব।

১৮ এটা হল সেই অমূল্য পুরস্কারের কেবল একটা অংশ, যা সেই ব্যক্তিরা লাভ করবে, যারা স্বর্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। যিহোবার পার্থিব উপাসকরা সেই সময় আনন্দে চিৎকার করে উঠবে, যখন তারা যিশুর এই কথাগুলো শুনবে: “আইস, আমার পিতার আশীর্ব্বাদ-পাত্রেরা, জগতের পত্তনাবধি যে রাজ্য তোমাদের জন্য প্রস্তুত করা গিয়াছে, তাহার অধিকারী হও।”—মথি ২৫:৩৪.

^ অনু. 4 এই অপবাদ সঠিক ছিল না কি ভুল ছিল, সেই বিষয়ে যিশু কিছু বলেননি। যিশু সেই গৃহাধ্যক্ষের কাজ হারানোর কারণের উপর মনোযোগ দেওয়ার পরিবর্তে তার প্রতিক্রিয়ার উপর মনোযোগ দিয়েছিলেন।