“দানশীল ব্যক্তি আশীর্ব্বাদযুক্ত হইবে”
বলিদান করার বিষয়টা দীর্ঘসময় ধরে সত্য উপাসনার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে এসেছে। ইস্রায়েলীয়রা পশুবলি উৎসর্গ করত এবং খ্রিস্টানরা সবসময়ই তাদের ‘স্তব-বলির’ জন্য সুপরিচিত হয়ে এসেছে। তবে, এমন আরও বলিদান রয়েছে, যেগুলো ঈশ্বরকে অনেক খুশি করে। (ইব্রীয় ১৩:১৫, ১৬) এই বলিদানগুলো আনন্দ ও সেইসঙ্গে আশীর্বাদ নিয়ে আসে, ঠিক যেমনটা পরবর্তী উদাহরণগুলোতে দেখানো হয়েছে।
হান্না নামে প্রাচীন কালের একজন বিশ্বস্ত দাসী একটা পুত্র সন্তান লাভ করার জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষী ছিলেন কিন্তু তিনি সন্তানধারণে অক্ষম ছিলেন। তিনি প্রার্থনায় যিহোবার কাছে এই মানত করেছিলেন যে, তিনি যদি একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন, তা হলে তিনি ‘চিরদিনের জন্য তাহাকে সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিবেদন করিবেন।’ (১ শমূ. ১:১০, ১১) একসময়, হান্না গর্ভবতী হয়েছিলেন এবং তিনি একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন ও তার নাম রেখেছিলেন শমূয়েল। শমূয়েল স্তন্যপান ত্যাগ করার পর, হান্না তার মানত অনুযায়ী শমূয়েলকে আবাসে নিয়ে গিয়েছিলেন। যিহোবা হান্নাকে তার আত্মত্যাগমূলক মনোভাবের জন্য আশীর্বাদ করেছিলেন। তিনি আরও পাঁচটা সন্তানের জন্ম দেওয়ার আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন এবং শমূয়েল একজন ভাববাদী ও বাইবেল লেখক হয়ে উঠেছিলেন।—১ শমূ. ২:২১.
হান্না ও শমূয়েলের মতো, বর্তমানেও খ্রিস্টানদের তাদের জীবনকে সৃষ্টিকর্তার প্রতি উৎসর্গীকৃত সেবায় ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। যিশু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যিহোবার উপাসনা করার জন্য আমাদের করা যেকোনো বলিদান অর্থাৎ ত্যাগস্বীকারের জন্য আমরা প্রচুর আশীর্বাদ লাভ করব।—মার্ক ১০:২৮-৩০.
প্রথম শতাব্দীতে, দর্কা নামে একজন খ্রিস্টান বোন তার ‘নানা সৎক্রিয়া ও দানকার্য্যের’ অর্থাৎ তিনি অন্যদের সাহায্য করার জন্য যে-সমস্ত ত্যাগস্বীকার করতেন, সেগুলোর জন্য সুপরিচিত ছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, ‘তিনি পীড়িত হইয়া মারা পড়িয়াছিলেন,’ যার ফলে পুরো মণ্ডলী দুঃখিত হয়েছিল। শিষ্যরা যখন শুনেছিল যে, পিতর সেই এলাকায় রয়েছেন, তখন তারা তাকে সঙ্গেসঙ্গে সেখানে আসার জন্য অনুরোধ করেছিল। কল্পনা করুন, পিতর যখন এসে দর্কাকে পুনরুত্থিত করেছিলেন, তখন তারা কতই-না আনন্দিত হয়েছিল! সেটা ছিল শাস্ত্রে লিপিবদ্ধ একজন প্রেরিতের মাধ্যমে করা প্রথম পুনরুত্থানের বিবরণ। (প্রেরিত ৯:৩৬-৪১) ঈশ্বর দর্কার বিভিন্ন ত্যাগস্বীকার ভুলে যাননি। (ইব্রীয় ৬:১০) তার দানশীল মনোভাব বা উদারতার নথি ঈশ্বরের বাক্যে সংরক্ষিত করা হয়েছে, যেন আমরা তার উত্তম উদাহরণ অনুকরণ করি।
প্রেরিত পৌলও উদারভাবে অন্যদের জন্য তার সময় ব্যয় করার ও তাদের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে এক চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন। করিন্থের খ্রিস্টান ভাইদের কাছে চিঠি লেখার সময় পৌল বলেছিলেন: “আমি অতিশয় আনন্দের সহিত তোমাদের প্রাণের নিমিত্ত ব্যয় করিব, এবং ব্যয়িতও হইব।” (২ করি. ১২:১৫) পৌল তার অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছিলেন যে, অন্যদের জন্য ত্যাগস্বীকার করা কেবল ব্যক্তিগত পরিতৃপ্তিই এনে দেয় না কিন্তু সেইসঙ্গে এটার মাধ্যমে যিহোবার আশীর্বাদ ও অনুমোদন লাভ করা যায়, যেটা হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।—প্রেরিত ২০:২৪, ৩৫.
স্পষ্টতই, আমরা যখন রাজ্যের বিষয়গুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এবং সহউপাসকদের সাহায্য করার জন্য আমাদের সময় ও শক্তি ব্যবহার করি, তখন যিহোবা খুশি হন। কিন্তু, আরও এমন উপায় কি রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা রাজ্যের প্রচার কাজকে সমর্থন করতে পারি? হ্যাঁ, রয়েছে! আমাদের সময় ও শক্তি ব্যবহার করার পাশাপাশি আমরা আর্থিক দানের মাধ্যমেও ঈশ্বরকে সম্মান করতে পারি। এই দানগুলো বিশ্বব্যাপী প্রচার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়, যেটার অন্তর্ভুক্ত হল মিশনারি ও অন্যান্য বিশেষ পূর্ণসময়ের দাসদের সমর্থন করা। এর পাশাপাশি, সাহিত্যাদি ও ভিডিও তৈরি করার এবং অনুবাদ করার কাজ, দুর্যোগের সময় ত্রাণ কাজে সহযোগিতা করার কাজ এবং নতুন কিংডম হল নির্মাণ করার কাজ, সমস্তই আমাদের স্বেচ্ছাকৃত দানের সাহায্যে করা হয়। আমরা এই বিষয়ে আশ্বস্ত হতে পারি যে, “সুনয়ন [“দানশীল,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন] ব্যক্তি আশীর্ব্বাদযুক্ত হইবে।” এ ছাড়া, আমরা যখন যিহোবার উদ্দেশে আমাদের ধন বা মূল্যবান বিষয়গুলো উৎসর্গ করি, তখন আমরা তাঁকে সম্মান করি।—হিতো. ৩:৯; ২২:৯.
^ অনু. 10 ভারতে এটা “Jehovah’s Witnesses of India”-র প্রতি প্রদানযোগ্য হিসেবে পাঠানো উচিত।
^ অনু. 12 যে-সমস্ত ব্যক্তির ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে, তারা www.jwindiagift.org এই ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পারেন।
^ অনু. 14 চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, দয়া করে স্থানীয় শাখা অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
^ অনু. 21 ভারতে, “তুমি সদাপ্রভুর সম্মান কর আপনার ধনে” নামক নথিটা ইংরেজি, হিন্দি, কান্নাড়া, মালায়ালাম, তামিল এবং তেলুগু ভাষায় পাওয়া যাচ্ছে।