ঈশ্বরের নাম কী?
আমরা যখন কাউকে জানার চেষ্টা করি, তখন প্রথমে আমরা সাধারণত তাকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করি, “আপনার নাম কী?” আপনি যদি এই প্রশ্নটাই ঈশ্বরকে জিজ্ঞেস করেন, তা হলে তিনি কী উত্তর দেবেন?
“আমার নাম যিহোবা।”—যিশাইয় ৪২:৮, ইজি-টু-রিড ভারশন।
আপনি কি এই নাম প্রথম বার শুনছেন? হতে পারে আপনি তা প্রথম বার শুনছেন। কারণ বাইবেলের অনুবাদকরা বহু বাইবেলে ঈশ্বরের নাম খুব কম বার ব্যবহার করেছেন এবং কিছু বাইবেলে তো এই নাম একেবারেই ব্যবহার করেননি। তারা এই নামের পরিবর্তে “সদাপ্রভু” উপাধি ব্যবহার করেছেন। তা সত্ত্বেও, ঈশ্বরের নাম আসলে বাইবেলের মূল ভাষার পাঠ্যাংশে প্রায় ৭,০০০ বার পাওয়া যায়। এই নাম চারটে ইব্রীয় ব্যঞ্জনবর্ণ দ্বারা গঠিত, যা ইংরেজিতে YHWH অথবা JHVH আর প্রাচীন কাল থেকে “যিহোবা” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে।
ঈশ্বরের নাম সমগ্র ইব্রীয় পাঠ্যাংশে ও অন্যান্য অনেক অনুবাদে পাওয়া যায়
যে-কারণে ঈশ্বরের নাম জানার প্রয়োজন রয়েছে
ঈশ্বরের নিজের কাছে এই নাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেউই ঈশ্বরের নাম দেয়নি; তিনি নিজেই নিজেকে এই নাম দিয়েছেন। যিহোবা বলেছিলেন: “আমার এই নাম অনন্তকালস্থায়ী, এবং এতদ্দ্বারা আমি পুরুষে পুরুষে স্মরণীয়।” (যাত্রাপুস্তক ৩:১৫) যদিও বাইবেলে ঈশ্বরকে সর্ব্বশক্তিমান্, পিতা, সদাপ্রভু বা ঈশ্বর উপাধি দেওয়া হয়েছে, তবে এই উপাধিগুলোর চেয়ে তাঁর নাম বেশি বার ব্যবহার করা হয়েছে। আর অন্যান্য যেকোনো ব্যক্তির নাম যেমন অব্রাহাম, মোশি, দায়ূদ, বা যিশুর চেয়েও ঈশ্বরের নাম বাইবেলে বেশি বার ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া, যিহোবা চান যে, তাঁর নাম সবাই জানুক। বাইবেল জানায়: “লোকেরা যেন জানতে পারে যে তুমি, যাঁর নাম যিহোবা, একা তুমিই সমস্ত পৃথিবীর ওপর পরাৎপর।”—গীতসংহিতা ৮৩:১৮, NW.
যিশুর কাছে এই নাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যিশু তাঁর শিষ্যদের একটা প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন, যেটাকে আমাদের পিতা অথবা প্রভুর প্রার্থনা বলা হয়। তিনি তাঁর শিষ্যদের ঈশ্বরের কাছে এই বলে বিনতি করতে বলেছিলেন: “তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক।” (মথি ৬:৯) যিশু নিজে প্রার্থনায় ঈশ্বরকে বলেছিলেন: “পিতঃ, তোমার নাম মহিমান্বিত কর।” (যোহন ১২:২৮) যিশু ঈশ্বরের নামের গৌরব করাকে জীবনের প্রথম স্থানে রেখেছিলেন আর সেইজন্য তিনি প্রার্থনায় যিহোবাকে এই কথা বলতে পেরেছিলেন: “আর আমি ইহাদিগকে তোমার নাম জানাইয়াছি, ও জানাইব।”—যোহন ১৭:২৬.
ঈশ্বরের লোকেদের কাছে এই নাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে ঈশ্বরের লোকেরা বুঝতে পেরেছিল যে, তাদের সুরক্ষা ও পরিত্রাণ ঈশ্বরের অদ্বিতীয় নামের সঙ্গে জড়িত ছিল। “সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] নাম দৃঢ় দুর্গ; ধার্ম্মিক তাহারই মধ্যে পলাইয়া রক্ষা হিতোপদেশ ১৮:১০) “যে কেহ সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] নামে ডাকিবে, সেই রক্ষা পাইবে।” (যোয়েল ২:৩২) বাইবেল দেখায় যে, ঈশ্বরের নাম তাঁর লোকেদের অন্যদের থেকে পৃথক রাখে। “কারণ জাতিমাত্র প্রত্যেকে আপন আপন দেবের নামে চলে; আর আমরা যুগে যুগে চিরকাল আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] নামে চলিব।”—মীখা ৪:৫; প্রেরিত ১৫:১৪.
পায়।” (ঈশ্বরের নাম যা প্রকাশ করে
ঈশ্বরের নাম তাঁকে অদ্বিতীয়ভাবে শনাক্ত করে। বাইবেল নিয়ে যারা গবেষণা করে তাদের মধ্যে অনেকে এই উপসংহারে এসেছে যে, যিহোবা নামের অর্থ হল “তিনি অস্তিত্বে আনেন।” যিহোবা ঈশ্বর, মোশিকে তাঁর নামের প্রসঙ্গে বলা এই কথার মাধ্যমে তাঁর নামের অর্থ প্রকাশ করেছিলেন: “আমি যা হতে চাই, তা-ই হব।” (যাত্রাপুস্তক ৩:১৪, NW) তাই ঈশ্বরের নাম শুধুমাত্র সৃষ্টিকর্তা হিসেবে তাঁর ভূমিকাকেই প্রকাশ করে না, একই সঙ্গে এটাও প্রকাশ করে যে, তাঁর নিজে কোনো কিছু হওয়ার এবং তাঁর উদ্দেশ্য সফল করার জন্য তাঁর সৃষ্টিকে যেমন প্রয়োজন তেমন পরিবর্তন করার ক্ষমতাও তাঁর রয়েছে। উপাধি ঈশ্বরের পদমর্যাদা, অধিকার বা ক্ষমতা প্রকাশ করলেও তিনি কে ও তিনি কী হওয়ার ক্ষমতা রাখেন, সেই সম্বন্ধে সমস্ত কিছু শুধুমাত্র তাঁর নামই প্রকাশ করে, যা হল যিহোবা।
ঈশ্বরের নাম দেখায়, তাঁর আমাদের প্রতি আগ্রহ রয়েছে। ঈশ্বরের নামের অর্থ প্রকাশ করে, তিনি তাঁর সৃষ্টির প্রতি সবসময় যত্ন নেন, যেটার মধ্যে আমরাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছি। এ ছাড়া ঈশ্বর চান, আমরা যেন তাঁকে জানি আর সেই জন্যই তিনি আমাদের এই নাম জানিয়েছেন। সবচেয়ে বড়ো বিষয় হল, আমাদের জিজ্ঞেস করার আগেই ঈশ্বর নিজে তাঁর নাম জানিয়েছেন। স্পষ্টতই, ঈশ্বর চান না যেন আমরা তাঁকে একজন অচেনা ও দূরে থাকা কোনো ব্যক্তি হিসেবে দেখি বরং একজন বাস্তব ব্যক্তি হিসেবে দেখি আর আমরা তাঁর নিকটবর্তী হতে পারি।—গীতসংহিতা ৭৩:২৮.
ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করা দেখায়, আমাদের তাঁর প্রতি আগ্রহ রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি যদি কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চান, তা হলে আপনি চাইবেন যেন সেই ব্যক্তি আপনাকে আপনার ব্যক্তিগত নাম ধরে ডাকেন। কিন্তু যদি সে আপনার নাম ধরে ডাকতে না চায়, তা হলে আপনার কেমন লাগবে? সম্ভবত আপনার মনে হতে পারে, সে আপনার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চায় না। ঈশ্বরের ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য। যিহোবা মানবজাতিকে তাঁর নাম জানিয়েছেন আর তিনি চান আমরা যেন তাঁর নাম ধরে ডাকি। আমরা যখন তা করি, তখন আমরা যিহোবাকে দেখাই, আমরা তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাই। ঈশ্বর লক্ষ রাখেন যে, কারা “তাঁহার নাম ধ্যান” করে।—মালাখি ৩:১৬.
ঈশ্বরের নাম জানা হল তাঁর সম্বন্ধে জানার প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কিন্তু আমাদের শুধু সেই নাম জানার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেই চলবে না। আমাদের সেই নাম জানার পাশাপাশি তাঁকে একজন ব্যক্তি হিসেবেও জানতে হবে। আমাদের জানতে হবে তাঁর কোন গুণাবলি রয়েছে।
ঈশ্বরের নাম কী ঈশ্বরের নাম যিহোবা। এই নাম তাঁকে অদ্বিতীয়ভাবে একজন ব্যক্তি হিসেবে শনাক্ত করে, যিনি তাঁর উদ্দেশ্য সম্পাদন করতে পারেন