বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি
প্রলোভন
বিয়ে ভেঙে যাওয়া, খারাপ স্বাস্থ্য, বিবেকের দংশন—এগুলো প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার করার মাত্র কয়েকটা পরিণতি। কীভাবে আমরা এই ফাঁদ এড়াতে পারি?
প্রলোভন বলতে কী বোঝায়?
আপনি কোনো কিছুর প্রতি আকর্ষিত হন, বিশেষভাবে সেটা যদি খারাপ কিছু হয়ে থাকে, তা হলে এর অর্থ আপনি প্রলোভিত হয়েছেন। ধরুন, কেনাকাটা করার সময় কোনো আকর্ষণীয় জিনিস আপনার চোখে পড়ে গেল। আপনার মাথায় হঠাৎ একটা চিন্তা উঁকি দিল, আপনি সেই জিনিসটা সহজেই চুরি করতে পারেন আর কেউ তা দেখতে পাবে না। কিন্তু আপনার বিবেক বলল, না! তাই, আপনি সেই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললেন আর সেখান থেকে চলে এলেন। এই ক্ষেত্রে আপনি প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার না করে বিজয়ী হলেন।
বাইবেল যা বলে
প্রলোভিত হওয়ার অর্থ এই নয় যে, আপনি একজন খারাপ ব্যক্তি। বাইবেল স্বীকার করে, আমরা সবাই প্রলোভিত হই। (১ করিন্থীয় ১০:১৩) প্রকৃত বিষয়টা হল, প্রলোভনে পড়লে আমরা কী করি। কেউ কেউ অনুপযুক্ত আকাঙ্ক্ষাকে প্রশ্রয় দেয় আর আজ হোক বা কাল হোক, সেই প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার করে ফেলে। আবার অন্যেরা বোঝে, এটা ভুল আর সঙ্গেসঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করে।
“প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কামনা দ্বারা আকর্ষিত ও প্ররোচিত হইয়া পরীক্ষিত হয়।” —যাকোব ১:১৪.
প্রলোভিত হলে কেন দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া বিজ্ঞতার কাজ?
বাইবেল এমন পদক্ষেপগুলো সম্বন্ধে জানায়, যেগুলো ভুল কাজের দিকে নিয়ে যায়। যাকোব ১:১৫ পদ বলে: “কামনা সগর্ভা হইয়া পাপ প্রসব করে।” সহজ কথায়, মন্দ আকাঙ্ক্ষাকে প্রশ্রয় দিলে আমরা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছাই, যখন আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করা এড়াতে পারি না, ঠিক যেমন একজন গর্ভবতী মহিলা সন্তান জন্ম দেওয়া এড়াতে পারে না। কিন্তু, আমরা অনুপযুক্ত আকাঙ্ক্ষার দাস হওয়া এড়াতে পারি। আমরা এটার উপর প্রভুত্ব করতে পারি।
বাইবেল যেভাবে সাহায্য করতে পারে
একদিকে আমাদের মন যেমন অনুপযুক্ত আকাঙ্ক্ষা পোষণ করতে পারে আবার অন্য দিকে সেই আকাঙ্ক্ষা দূর করতেও পারে। কীভাবে? অন্য কিছুর দিকে মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে, যেমন কোনো কাজ, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কথাবার্তা বলা অথবা ভালো কিছু নিয়ে চিন্তা করা। (ফিলিপীয় ৪:৮) কোনো প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার করার পরিণতি স্বরূপ যে-আবেগগত, শারীরিক কিংবা আধ্যাত্মিক ক্ষতি হতে পারে, সেগুলো নিয়ে চিন্তা করাও আমাদের তা এড়াতে সাহায্য করে। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:২৯) এই ক্ষেত্রে প্রার্থনাও একটা বড়ো সাহায্য হতে পারে। যিশু খ্রিস্ট বলেছিলেন: “প্রার্থনা কর যেন প্রলোভনে না পড়।”—মথি ২৬:৪১. ইজি-টু-রিড ভারশন।
“তোমরা ভ্রান্ত হইও না, ঈশ্বরকে পরিহাস করা যায় না; কেননা মনুষ্য যাহা কিছু বুনে তাহাই কাটিবে।”—গালাতীয় ৬:৭.
কীভাবে আপনি প্রলোভনের বিরুদ্ধে নিজেকে সুরক্ষিত করতে পারেন?
বাস্তব চিত্র
প্রলোভনকে বাস্তবের চোখ দিয়ে দেখুন। এটা একটা টোপ অথবা ফাঁদ, যেটা একজন বোকা, অবোধ কিংবা অসতর্ক লোককে বিপদের দিকে পরিচালিত করে। (যাকোব ১:১৪) এটা বিশেষভাবে যৌন অনৈতিকতার সঙ্গে জড়িত প্রলোভনের প্রতি প্রযোজ্য, যেটা ভয়ানক পরিণতি নিয়ে আসতে পারে।—হিতোপদেশ ৭:২২, ২৩.
বাইবেল যেভাবে সাহায্য করতে পারে
যিশু বলেছিলেন, “আর তোমার দক্ষিণ চক্ষু যদি তোমার বিঘ্ন জন্মায়, তবে তাহা উপড়াইয়া দূরে ফেলিয়া দেও।” (মথি ৫:২৯) অবশ্য, যিশু এটা আক্ষরিক অর্থে বলেননি! এর পরিবর্তে, তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, আমরা যদি ঈশ্বরকে খুশি করতে চাই এবং অনন্তজীবন লাভ করতে চাই, তা হলে রূপকভাবে মন্দ কাজ করার ক্ষেত্রে আমাদের শরীরের অঙ্গগুলোকে মৃত্যুসাৎ করতে হবে। (কলসীয় ৩:৫) সেইজন্য আমাদের হয়তো প্রলোভন প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত একজন ব্যক্তি প্রার্থনায় বলেছিলেন, “অলীকতা-দর্শন হইতে আমার চক্ষু ফিরাও।”—গীতসংহিতা ১১৯:৩৭.
এটা ঠিক যে, আত্মসংযম করা কঠিন হতে পারে। আসলে আমাদের “মাংস দুর্ব্বল।” (মথি ২৬:৪১) তাই, আমরা ভুল করব। কিন্তু, আমরা যদি সত্যিই অনুতপ্ত হই আর মন্দ কাজ না করার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করি, তা হলে আমাদের সৃষ্টিকর্তা যিহোবা ঈশ্বর আমাদের প্রতি “স্নেহশীল ও কৃপাময়” হবেন। (গীতসংহিতা ১০৩:৮) এটা জানা কতই-না সান্ত্বনাদায়ক!
“হে সদাপ্রভু, তুমি যদি অপরাধ সকল ধর, তবে, হে প্রভু, কে দাঁড়াইতে পারিবে?”—গীতসংহিতা ১৩০:৩.