পৃথিবী কি রক্ষা পাবে?
বিশুদ্ধ জল
জল ছাড়া পৃথিবীতে কেউ বেঁচে থাকতে পারে না, বিশেষ করে বিশুদ্ধ জল। আসলে প্রত্যেক জীবিত বস্তুর দেহের বেশিরভাগ অংশই জল দিয়ে গঠিত। পুকুর, নদী, জলাজমি এবং মাটির নীচে থাকা জল মানুষ ও পশুপাখি পানীয় জল হিসেবে ব্যবহার করে আর সেইসঙ্গে চাষবাসের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়।
যে-কারণে বিশুদ্ধ জলের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে
পৃথিবীর বেশিরভাগ অংশই জল দিয়ে পরিপূর্ণ। কিন্তু বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা অনুযায়ী, “পৃথিবীতে যে-পরিমাণ জল রয়েছে, সেটার মধ্যে মাত্র ০.৫ শতাংশ বিশুদ্ধ জল পাওয়া যায়, যেটা ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।” যদিও পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য এই অল্প পরিমাণ জলই যথেষ্ট কিন্তু এর বেশিরভাগ জলই হয় দূষিত হয়ে গিয়েছে নতুবা অতিরিক্ত চাহিদা এবং আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আগামী ৩০ বছরের মধ্যে ৫০০ কোটি লোকের পক্ষে বিশুদ্ধ জল পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।
আমাদের পৃথিবী—বেঁচে থাকার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে
পৃথিবীকে এমনভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে, যাতে এর মধ্যে সবসময় যথেষ্ট পরিমাণ জল থাকে। এ ছাড়া মাটি, জলজ প্রাণী ও গাছপালা এমনকী সূর্যের আলো জলকে বিশুদ্ধ করতে সহযোগিতা করে। আসুন আমরা কিছু প্রমাণ বিবেচনা করি, যেগুলো ইঙ্গিত দেয়, পৃথিবী বেঁচে থাকার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।
-
এমনটা লক্ষ করা গিয়েছে যে, মাটি জলের মধ্যে থাকা বিভিন্ন দূষিত পদার্থকে বিনষ্ট করতে পারে। জলাজমিতে এমন কিছু গাছপালা রয়েছে, যেগুলো জল থেকে নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও কীটনাশকের মতো পদার্থ মুক্ত করতে পারে।
-
বিজ্ঞানীরা কিছু শারীরিক ও জৈবিক প্রক্রিয়া লক্ষ করেছেন, যেগুলোর মাধ্যমে প্রাকৃতিক উপায়ে জল থেকে দূষিত পদার্থ মুক্ত হয়। জল যখন প্রবাহিত হয়, তখন দূষিত পদার্থগুলো এতে মিশে যায় এবং জলে থাকা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া এই দূষিত পদার্থগুলোকে ভেঙে ফেলে ও নষ্ট করে দেয়।
-
পুকুর কিংবা নদীতে থাকা ঝিনুক এবং শামুক-গোত্রীয় প্রাণীরা অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই জলকে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থেকে মুক্ত করতে পারে। তারা এমন উপায়ে তা করে, যেটা যেকোনো জলশোধনকারী কারখানা থেকেও বেশি কার্যকারী।
-
পৃথিবী জলচক্রের মাধ্যমে জলকে সঞ্চয় করে রাখে। এই চক্র আর সেইসঙ্গে অন্যান্য প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া জলকে বায়ুমণ্ডলের মধ্যেই ধরে রাখে, বাইরে বেরিয়ে যেতে দেয় না।
সমস্যা সমাধান করার জন্য মানুষ যা করছে
বিশেষজ্ঞরা সুপারিশ করেন, আমরা যেন জলের অপচয় না করি। জলদূষণ কমানোর জন্য তারা আমাদের কিছু পরামর্শ দেয়। আমাদের যানবাহন থেকে যদি তেল লিক হয়, তা হলে আমরা যেন তা সারিয়ে নিই এবং টয়লেট থেকে কোনো অব্যবহৃত ওষুধ ফ্লাশ না করি কিংবা ড্রেনে কোনো বিষাক্ত পদার্থ না ফেলি।
ইঞ্জিনিয়াররা সমুদ্রের জল থেকে লবণ আলাদা করার নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। এর উদ্দেশ্য হল, যাতে আমরা আরও বেশি করে পানীয় জল পেতে পারি।
কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়, আরও বেশি কিছু করার প্রয়োজন রয়েছে। সমুদ্রের জল থেকে লবণ আলাদা করা খুবই খরচসাপেক্ষ এবং এতে প্রচুর জ্বালানির প্রয়োজন। কীভাবে পানীয় জল সংরক্ষণ করা যায়, সেই বিষয়ে ২০২১ সালের ইউনাইটেড নেশন্স-এর একটা রিপোর্ট জানায়, “বিশ্বব্যাপী এখন যে-হারে এই বিষয়ে কাজ হচ্ছে, তা আরও দুই গুণ বৃদ্ধি করার প্রয়োজন রয়েছে।”
আশার এক আলো—বাইবেল যা বলে
“ঈশ্বর . . . জলকে বাষ্পে পরিণত করে উপরের দিকে টেনে নেন, সেগুলো ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টির মেঘে পরিণত হয়। তারপর, মেঘ সেটাকে ঢেলে দেয় আর সেই বৃষ্টি মানবজাতির উপর নেমে আসে।”—ইয়োব ৩৬:২৬-২৮.
ঈশ্বর জলকে সংরক্ষণ করার জন্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক চক্র তৈরি করেছেন।—উপদেশক ১:৭.
বিবেচনা করুন: পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা যদি জলকে বিশুদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়া সৃষ্টি করেছেন, তা হলে তিনি কি এই অতি প্রয়োজনীয় সম্পদকে মানুষের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য কিছু করবেন না? পৃষ্ঠা ১৫-তে “ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেন আমাদের পৃথিবী রক্ষা পাবে,” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।