জীবিত বস্তু থেকে আমরা যা জানতে পারি
চারপাশে তাকালে আমরা জীবিত বস্তু দেখতে পাই, যেগুলো বৃদ্ধি পায়, চলাফেরা করে এবং সংখ্যায় বাড়তে থাকে। এগুলো আছে বলেই আমাদের পৃথিবী এতটা সুন্দর। আর বর্তমানে মানুষ জীবিত বস্তুর বিষয়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি কিছু জানে। জীবিত বস্তু থেকে আমরা জীবনের শুরু সম্বন্ধে কী জানতে পারি? নীচে দেওয়া বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করুন।
জীবিত বস্তুর জটিলতা দেখায় যে, এগুলো সুপরিকল্পিতভাবে তৈরি। জীবিত বস্তু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ দিয়ে তৈরি, যেগুলোকে কোষ বলা হয়। বেঁচে থাকার জন্য এবং বংশবৃদ্ধি করার জন্য প্রতিটা কোষ যেন একটা ছোট্ট কারখানার মতো কাজ করে, যেখানে অসংখ্য ও অত্যন্ত জটিল কাজ সম্পাদন করা হয়। আর এই জটিল প্রক্রিয়াটা এমনকী খুব সাধারণ জীবের মধ্যেও লক্ষ করা যায়। ইস্ট বা খামিরের কথাই ধরুন, যা পাউরুটি তৈরি করার জন্য ব্যবহার করা হয়। ইস্ট হল একটা এককোষী জীব। মানবদেহের একটা কোষের তুলনায় একটা ইস্টের কোষ খুবই সাধারণ বলে মনে হতে পারে। কিন্তু, আসলে এটা অত্যন্ত জটিল। প্রতিটা ইস্টের কোষের মধ্যে একটা সুগঠিত নিউক্লিয়াস রয়েছে, যেটার ভিতরে ডিএনএ রয়েছে। একটা কারখানার মতোই ইস্টের কোষের ভিতরে নানা ধরনের আণুবীক্ষণিক “মেশিন” রয়েছে, যেগুলো কোষের বিভিন্ন অণুকে, এদের ধরন অনুযায়ী আলাদা করে, পরিবহন করে এবং রূপান্তরিত করে। ইস্টের বেঁচে থাকার জন্য এই প্রক্রিয়াগুলো অত্যাবশ্যক। এ ছাড়া, খাদ্যের অভাব দেখা দিলে এই কোষে একটা অসাধারণ রাসায়নিক প্রক্রিয়া চালু হয়ে যায়, যেটা কোষকে ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় করে দেয় আর মনে হয় যেন এটা ঘুমিয়ে পড়ছে। এই কারণেই ইস্টকে দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ করে রাখা যায় এবং পাউরুটি তৈরি করার সময় এটা আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে।
বিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরে ইস্টের কোষ নিয়ে গবেষণা করছেন, যাতে তারা মানবদেহের কোষ আরও ভালোভাবে বুঝতে পারেন। কিন্তু, এখনও তাদের অনেক কিছু বোঝা বাকি আছে। সুইডেনের চালমর্স ইউনিভার্সিটি অভ্ টেকনোলজি-র একজন প্রফেসর রস্ কিং এই বিষয়ে এভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন: “যথেষ্ট জীববিজ্ঞানী না থাকায় শুধুমাত্র ইস্ট কীভাবে কাজ করে, তা বোঝার জন্য আমরা যে-সমস্ত পরীক্ষা করতে চাই, সেগুলোই করতে পারছি না।”
একটা সামান্য ইস্টই যদি এত জটিল হয়, তা হলে আপনার কী মনে হয়, এটা কি আপনা-আপনি এসেছে, না কি কেউ এটা ভালোভাবে পরিকল্পনা করে তৈরি করেছেন?
নতুন জীবন শুধুমাত্র ইতিমধ্যে অস্তিত্বে থাকা জীবন থেকেই আসতে পারে। সমস্ত জীবিত বস্তুর মধ্যেই ডিএনএ রয়েছে। ডিএনএ যে-অণু দিয়ে তৈরি, সেগুলোকে নিউক্লিওটাইড বলা হয়। মানবদেহের প্রতিটা কোষের মধ্যে ৩২০ কোটি নিউক্লিওটাইড থাকে। এগুলো যে-নির্দিষ্ট নকশায় থাকার কথা ঠিক সেভাবেই সাজানো রয়েছে, যাতে কোষ এনজাইম ও প্রোটিন তৈরি করতে পারে।
এই নিউক্লিওটাইডগুলো কি আপনা-আপনি একটা নির্দিষ্ট নকশায় বিন্যস্ত হতে পারে? বিজ্ঞানীরা হিসাব করে বের করেছেন, এই ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা হল, ১০১৫০ বারে এক বার (একের পর ১৫০টা শূন্য)। এক অর্থে এমনটা ঘটা অসম্ভব।
তাই সত্যি বলতে কী, বিজ্ঞানীদের কাছে পরীক্ষিত এমন কোনো প্রমাণ নেই, যেটা দেখায় যে, একটা জড় পদার্থ থেকে জীবিত বস্তু আপনা-আপনি তৈরি হতে পারে।
মানুষের জীবন অদ্বিতীয়। মানুষ হিসেবে আমাদের মধ্যে এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেগুলোর কারণে আমরা পুরোপুরিভাবে জীবন উপভোগ করতে পারি, যা অন্য কোনো প্রাণী করতে পারে না। শুধুমাত্র মানুষই নতুন নতুন জিনিস তৈরি করতে পারে, নিজেদের সমাজে মিলেমিশে থাকতে পারে এবং চিন্তাভাবনা ও অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে। আমরা বিভিন্ন ধরনের স্বাদ, গন্ধ, শব্দ, রং এবং বিভিন্ন দৃশ্য বুঝতে ও পুরোপুরিভাবে উপভোগ করতে পারি। এ ছাড়া, আমরা ভবিষ্যতের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা করি এবং জীবনের অর্থ কী, তা জানার চেষ্টা করি।
এই বৈশিষ্ট্যগুলো কি আমাদের বেঁচে থাকার জন্য এবং বংশবৃদ্ধি করার জন্য সত্যিই প্রয়োজন? আর এই জন্যই এগুলো কি আমাদের মধ্যে ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়েছে? না কি এগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, একজন প্রেমময় সৃষ্টিকর্তা উপহার হিসেবে আমাদের এই জীবন দিয়েছেন?