সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পুলিশ বাহিনী তাদের ভবিষ্যৎ কী?

পুলিশ বাহিনী তাদের ভবিষ্যৎ কী?

পুলিশ বাহিনী তাদের ভবিষ্যৎ কী?

পুলিশ বাহিনী না থাকলে আমাদের সম্ভবত অরাজকতার মধ্যে বাস করতে হতো। কিন্তু, এমনকি পুলিশরা থাকা সত্ত্বেও আমাদের জগৎ কি নিরাপদ? আজকে বেশির ভাগ শহরে ও একই সময়ে অনেক গ্রাম্য অঞ্চলগুলোতে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সংকটপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। সংগঠিত অপরাধ এবং অভ্যাসগত অপরাধীদের থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমরা কি পুলিশদের দিকে তাকাতে পারি? আমরা কি আশা করতে পারি যে, পুলিশরা আমাদের রাস্তাগুলো নিরাপদ করে তুলবে? অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কি তারা জয়ী হবে?

ডেভিড বেইলি তার ভবিষ্যৎ পুলিশ (ইংরেজি) বইয়ে এক মতামত প্রদান করেন: “পুলিশরা অপরাধ দমন করে না,” তিনি বলেন। “আসলে পুলিশরা মূলত ক্যানসারের ওপর একটা পট্টির মতো। . . . আমরা পুলিশদের ওপর নির্ভর করতে পারি না, এমনকি তারা যখন অপরাধ দমনের, সমাজকে অপরাধ থেকে রক্ষা করার জন্য নিজেদের পুরোপুরি বিলিয়েও দেন।” গবেষণা দেখিয়েছে যে, পুলিশের তিনটে প্রধান কাজ—রাস্তায় টহল দেওয়া, জরুরি পরিস্থিতির সময় সাড়া দেওয়া এবং অপরাধের তদন্ত করা—অপরাধ দমন করে না। কেন এইরকম?

পুলিশের সংখ্যা বাড়িয়ে অপরাধ দমনের চেষ্টা করা প্রচুর ব্যয়বহুল হবে। পুলিশদের টহল দেওয়া বৃদ্ধি করা সম্ভব হলেও, অপরাধীরা তা পাত্তা দেয় অথবা ভয় পায় বলে মনে হয় না। পুলিশরা দ্রুত সাড়া দিলেও অপরাধ ততটা দমন করা যায় না। পুলিশরা রিপোর্ট করেছে যে, যদি তারা কোন অপরাধ ঘটিত জায়গায় আসতে এক মিনিটও দেরি করে, তা হলে তারা হয়তো অপরাধীকে ধরতে পারবে না। অপরাধীরা খুব ভালভাবেই জানে যে, কেউই এত তাড়াতাড়ি সেখানে এসে পৌঁছাতে পারে না। কিংবা অপরাধ তদন্তও তেমন সাহায্য করতে পারে না। এমনকি গোয়েন্দারা অপরাধীদের ধরতে ও জেলে ভরতে সক্ষম হলেও, তা আসলে অপরাধ দমন করতে পারে না। অন্যান্য যেকোন দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র বেশি অপরাধীদের জেলে ভরে কিন্তু এখনও সেই দেশে অপরাধের হার অনেক বেশি; অথচ জাপান যেখানে অনেক কম সংখ্যক ব্যক্তি জেলে রয়েছে, সেখানে অপরাধের হার একেবারে কম। এমনকি প্রতিবেশী এলাকাতে পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থাও স্থায়ী সমাধান হিসেবে প্রমাণিত হয়নি, বিশেষ করে যে-এলাকাগুলোতে অপরাধের হার অত্যন্ত বেশি। নির্দিষ্ট অপরাধগুলো যেমন মাদকদ্রব্যের ব্যাবসা বা ডাকাতির বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া কিছু সময়ের জন্য বিরাট প্রভাব ফেললেও এর প্রভাবগুলো বজায় রাখা কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

“পুলিশরা অপরাধ দমন করতে সক্ষম নন, এই বিষয়টা চিন্তাশীল ব্যক্তিদের ততটা অবাক করে না,” ভবিষ্যৎ পুলিশ বইটা বলে। “এটা সাধারণত বোঝা যায় যে, পুলিশের নিয়ন্ত্রণের ও সেইসঙ্গে অপরাধীর বিচার ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণের বাইরে সমাজের অবস্থা সামগ্রিকভাবে সমাজগুলোতে থাকা অপরাধের অবস্থাকে নির্ধারণ করে।”

পুলিশদের ছাড়া কী হবে?

কোন পুলিশ যদি পাহারা না দেয়, তা হলে আপনি কীভাবে কাজ করেন? আইন ভঙ্গ করার জন্য কি আপনি তাদের অনুপস্থিতির সুযোগ নেন? এটা অবাক হওয়ার বিষয় যে, আরও কত সম্মানীয় মধ্যবিত্ত ও উঁচু শ্রেণীর লোকেরা অফিসে অপরাধ করে অনিশ্চিত উপকারগুলো পাওয়ার জন্য তাদের সুখ্যাতি ও ভবিষ্যৎকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস সম্প্রতি রিপোর্ট করেছে যে, ‘১১২ জন ব্যক্তিকে জুয়াচুরির দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যারা অটো বীমা কোম্পানিগুলো থেকে টাকা চুরি করায় জড়িত ছিল। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ছিল উকিল, ডাক্তার, কিরোপ্র্যাক্টারস, একজন ফিজিকেল থেরাপিস্ট, একজন আকুপাংচারিস্ট এবং পুলিশ বিভাগের একজন প্রশাসনিক সহকারী।’

সম্প্রতি, ব্যাপক আকারে জুয়াচুরির আরেকটা ঘটনা শিল্প জগতের ধনী সমর্থকদের হতভম্ব করে দিয়েছিল, যখন নিউ ইয়র্কের সাথেবেস এবং লন্ডনের ক্রিস্টিস নিলাম কেন্দ্রগুলোর প্রাক্তন প্রধান প্রশাসকদের কৃত্রিম মূল্য নির্ধারণের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। তাদের ও তাদের নিলাম কেন্দ্রগুলোকে কোটি কোটি ডলার জরিমানা ও ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে! তাই টাকার প্রতি অতৃপ্তিকর লোভ সমাজের প্রতিটা স্তরের লোকেদেরই জর্জরিত করে।

১৯৯৭ সালে পুলিশরা যখন ব্রাজিলের রেসিফায় ধর্মঘট ডেকেছিল, তখন যা হয়েছিল তা দেখায় যে, যখন কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না, তখন অনেকেই খুব তাড়াতাড়ি অপরাধের দিকে ঝুঁকে পড়ে। যেধরনেরই ধর্মীয় বিশ্বাস তাদের থাকুক না কেন, তা তাদের আচরণকে একটুও প্রভাবিত করে না। তারা নৈতিক মূল্যবোধ ও নীতিগুলোকে খুব সহজেই হালকা করতে পারে বা পরিত্যাগ করে। তাই অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই যে, অধিকাংশ দেশের পুলিশরা এক নীতিহীন জগতের সঙ্গে এমন এক যুদ্ধে রত আছে, তা সে ছোট হোক বা বড়, যেটাতে তারা জয়ী হবে না।

অন্যদিকে, কিছু লোকেরা আইন মেনে চলে কারণ তারা কর্তৃপক্ষকে সম্মান করে। প্রেরিত পৌল রোমের খ্রীষ্টানদের বলেছিলেন যে, ঈশ্বর যে-কর্তৃপক্ষদের থাকতে অনুমতি দিয়েছেন, তাদের প্রতি খ্রীষ্টানদের বাধ্য হওয়া উচিত কারণ তারা অন্তত কিছুটা হলেও সমাজের শৃঙ্খলা বজায় রাখে। এই কর্তৃপক্ষের বিষয়ে তিনি লিখেছিলেন: “তিনি ঈশ্বরের পরিচারক, যে মন্দ আচরণ করে, ক্রোধ সাধনের জন্য তাহার প্রতিশোধদাতা। অতএব কেবল ক্রোধের ভয়ে নয়, কিন্তু সংবেদেরও নিমিত্ত বশীভূত হওয়া আবশ্যক।”—রোমীয় ১৩:৪, ৫.

সমাজের অবস্থাকে বদলাচ্ছে

সমাজের অবস্থা উন্নত হওয়ার পিছনে পুলিশদের কাজের নিশ্চয়ই কিছু না কিছু প্রভাব রয়েছে। রাস্তাগুলো থেকে যখন মাদক দ্রব্য ও হিংস্রতা সরিয়ে ফেলা হয়, তখন লোকেরা এলাকার উন্নত ভাবমূর্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করে। কিন্তু, আসলে সমাজের সংস্কার-সাধন যেকোন পুলিশ বাহিনীর সাধ্যের বাইরে।

আপনি কি এমন এক সমাজের কথা কল্পনা করতে পারেন, যেখানকার লোকেদের আইনের প্রতি এইধরনেরই সম্মান থাকবে যে, তাদের পুলিশদের দরকার হবে না? আপনি কি এমন এক জগতের কথা কল্পনা করতে পারেন, যেখানে লোকেদের একে অন্যের জন্য এতটা চিন্তা রয়েছে যে, প্রতিবেশীরা সবসময় সাহায্য করতে ইচ্ছুক এবং কারওরই সাহায্যের জন্য পুলিশদের ডাকার দরকার হয় না? সেটা হয়তো কিছুটা কাল্পনিক শোনায়। কিন্তু অন্য প্রসঙ্গে বলা যীশুর এই কথাগুলো এই ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রযোজ্য। তিনি বলেছিলেন: “তাহা মনুষ্যের অসাধ্য বটে, কিন্তু ঈশ্বরের সকলই সাধ্য।”—মথি ১৯:২৬.

বাইবেল ভবিষ্যতের এমন এক সময়ের কথা বলে যখন সমস্ত মানবজাতি যিহোবা ঈশ্বরের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এক সরকারের প্রজা হবে। “স্বর্গের ঈশ্বর এক রাজ্য স্থাপন করিবেন, . . . তাহা ঐ সকল রাজ্য চূর্ণ ও বিনষ্ট করিয়া আপনি চিরস্থায়ী হইবে।” (দানিয়েল ২:৪৪) ঈশ্বরের প্রেমের পথে সমস্ত আন্তরিক লোকেদের শিক্ষা দিয়ে এই নতুন সরকার সমাজের সেই অবস্থাগুলোকে পালটে দেবে, যা অপরাধের জন্ম দেয়। “সমুদ্র যেমন জলে আচ্ছন্ন, তেমনি পৃথিবী সদাপ্রভু-বিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে।” (যিশাইয় ১১:৯) যিহোবার রাজা, যীশু খ্রীষ্ট সমস্ত অপরাধ দমন করতে সক্ষম হবেন। “তিনি চক্ষুর দৃষ্টি অনুসারে বিচার করিবেন না, কর্ণের শ্রবণানুসারে নিষ্পত্তি করিবেন না; কিন্তু ধর্ম্মশীলতায় দীনহীনদের বিচার করিবেন, সরলতায় পৃথিবীস্থ নম্রদের জন্য নিষ্পত্তি করিবেন।—যিশাইয় ১১:৩, ৪.

কোন অপরাধী বা অপরাধ থাকবে না। পুলিশদের আর দরকার হবে না। প্রত্যেকে “আপন আপন দ্রাক্ষালতার ও আপন আপন ডুমুরবৃক্ষের তলে বসিবে; কেহ তাহাদিগকে ভয় দেখাইবে না।” (মীখা ৪:৪) আপনি যদি বাইবেলে বর্ণিত “নূতন পৃথিবীর” অংশ হতে চান, তা হলে ঈশ্বর তাঁর বাক্যে যা প্রতিজ্ঞা করেছেন, তা পরীক্ষা করে দেখার সময় এখনই।—২ পিতর ৩:১৩.(g০২ ৭/৮)

[১২ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

আপনি কি এমন এক সমাজের কথা কল্পনা করতে পারেন যেখানে লোকেদের আইনের প্রতি এইধরনের সম্মান থাকবে যে, তাদের পুলিশদের দরকার হবে না?

[১২ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

কোন অপরাধী বা অপরাধ থাকবে না

[১১ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

পুলিশ বনাম সন্ত্রাসী

নিউ ইয়র্ক এবং ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরে ঘটা ঘটনাগুলো স্পষ্টভাবে দেখায় যে, বিমান ছিনতাইকারী, জিম্মি করে রাখে এমন ব্যক্তি এবং সন্ত্রাসীদের জন্য জনগণকে রক্ষা করা পুলিশদের জন্য রীতিমতো এক কঠিন সমস্যা হয়ে উঠেছে। বিশ্রামরত বিমানগুলোতে দ্রুত ঢুকে, নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ সৈন্যদলগুলোকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, তারা হঠাৎ করে অট্টালিকায় ঢোকার দক্ষতা শিখেছে যেমন, ছাদ থেকে দড়ি বেয়ে নেমে আসা, জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়া এবং হাত বোমা ও টিয়ার গ্যাসের বাক্স নিক্ষেপ করা। এভাবে প্রশিক্ষিত অফিসাররা প্রায়ই জিম্মি রাখা ব্যক্তিদের যতটা সম্ভব বিপদে না ফেলে সন্ত্রাসীদের অবাক করে দিতে এবং দমন করতে সফল হয়েছে।

[সৌজন্যে]

James R. Tourtellotte/U.S. Customs Service

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বরের নতুন জগতে যে-জিনিসগুলোর আর দরকার হবে না