পরিবারের জন্য সাহায্য | সন্তান লালন-পালন
আপনার কিশোর বয়সি সন্তানের সঙ্গে যেভাবে কথা বলবেন
প্রতিদ্বন্দ্বিতা
যখন সে ছোটো ছিল, তখন সে আপনাকে সবকিছু বলত। কিন্তু, কিশোর বয়সে সে আপনাকে কিছুই বলে না। আপনি যখন কথা বলার চেষ্টা করেন, তখন সে হয় দায়সারা উত্তর দেয় নয়তো এমন কথা কাটাকাটি শুরু করে, যা আপনার ঘরকে রণক্ষেত্র করে তোলে।
আপনি আপনার কিশোর বয়সি সন্তানের সঙ্গে কথা বলা শিখতে পারেন। কিন্তু, প্রথমে দুটো দিক বিবেচনা করুন, যে-কারণে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা আসতে পারে।
যেকারণে এটা হয়ে থাকে
স্বাধীন হওয়ার আকাঙ্ক্ষা। রূপকভাবে বললে, একজন দায়িত্ববান প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠার জন্য আপনার কিশোর বয়সি সন্তানকে ধীরে ধীরে যাত্রীর আসন থেকে চালকের আসনে বসতে হবে এবং শিখতে হবে যে, জীবনের প্রতারণাপূর্ণ রাস্তায় কীভাবে চলতে হয়। এটা ঠিক যে, কিছু কিশোর বয়সি সন্তান, তাদের যতটা স্বাধীনতা থাকা উচিত তার চেয়ে বেশি চায়; আবার অন্যদিকে কিছু বাবা-মা, তাদের সন্তানদের কম স্বাধীনতা দিয়ে থাকে। এর ফলে যে লড়াই বাধে, তা বাবা-মা এবং কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি করে। ১৬ বছর বয়সি ব্র্যাড * অভিযোগ করে, ‘আমার বাবা-মা আমার জীবনের প্রত্যেকটা দিক নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। আমার ১৮ বছর হওয়া পর্যন্ত তারা যদি আমাকে আরও বেশি স্বাধীনতা না দেয়, তাহলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাব!’
জটিল চিন্তাভাবনা। অল্পবয়সিরা, কোনোকিছু হয় একেবারে ঠিক অথবা একেবারে ভুল অর্থাৎ একতরফা চিন্তা করে থাকে কিন্তু অনেক কিশোর-কিশোরী বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিষয়গুলো চিন্তা করতে পারে। এটা গভীরভাবে চিন্তা করার একটা গুরুত্বপূর্ণ উপায় আর তা একজন অল্পবয়সিকে সঠিক বিচারবুদ্ধি গড়ে তুলতে সাহায্য করে। একটা উদাহরণ বিবেচনা করুন: একটা বাচ্চার কাছে সুবিচারের ধারণাটা একেবারে সরল: ‘মা একটা বিস্কুট ভেঙে দু-ভাগ করে, অর্ধেক আমাকে আর অর্ধেক ভাইকে দেয়।’ এই ক্ষেত্রে সুবিচার অঙ্কের এক সূত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু, কিশোর-কিশোরীরা বোঝে যে, বিষয়টা এতো সহজ নয়। সুবিচার মানেই সমান বিচার করা নয়, আবার সমান বিচার করা মানেই সুবিচার নয়। জটিল চিন্তাভাবনার জন্য আপনার কিশোর বয়সি সন্তান এই ধরনের দুর্বোধ্য বিষয়গুলো ধরে ফেলে। এর কুফল কী হতে পারে? এর জন্য সে আপনার সঙ্গে এমনকী তর্কও করতে পারে।
আপনি যা করতে পারেন
যখন সম্ভব, তখন সাধারণ গল্পগুজব করুন। সাধারণ মুহূর্তগুলো কাজে দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬, ৭.
লাগান। উদাহরণস্বরূপ, কোনো কোনো বাবা-মা লক্ষ করেছে যে, কিশোর-কিশোরীরা ঘরের কাজ করার বা গাড়িতে একসঙ্গে বসে থাকার সময়, যখন তারা বাবা-মার মুখোমুখি নয় বরং পাশাপাশি বসে থাকে, তখন তারা বেশি খোলামেলাভাবে কথাবার্তা বলতে স্বচ্ছন্দবোধ করে।—বাইবেলের নীতি:কথাবার্তা সংক্ষিপ্ত রাখুন। তিতিবিরক্ত হওয়া পর্যন্ত আপনার প্রতিটা বিষয় নিয়ে তর্ক করার প্রয়োজন নেই। এর পরিবর্তে, আপনার বক্তব্য স্পষ্টভাবে বলুন . . . আর এরপর চুপ হয়ে যান। আপনার কিশোর বয়সি সন্তান আপনার বেশিরভাগ কথা পরে ‘শুনবে,’ যখন সে একা থাকবে এবং আপনি যা বলেছেন তা নিয়ে চিন্তা করতে পারবে। তা করার জন্য তাকে সুযোগ দিন।—বাইবেলের নীতি: হিতোপদেশ ১:১-৪.
কঠোর না হয়ে তাদের কথা শুনুন। মাঝখানে বাধা না দিয়ে তাদের কথা শুনুন, যাতে আপনি সমস্যাটা পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারেন। উত্তর দেওয়ার সময়, যুক্তিবাদী হোন। আপনি যদি নিয়ম মেনে চলার ক্ষেত্রে খুব কঠোর হন, তাহলে আপনার সন্তান সেই নিয়মকে অমান্য করার ফাঁক-ফোকর খোঁজার জন্য প্রলোভিত হতে পারে। আপনার কিশোর বয়সি সন্তানের সঙ্গে সংযোগ রাখা (ইংরেজি) বইটি সাবধান করে, “এই সময়ে, বাচ্চারা দু-ধরনের জীবন যাপন করে। একদিকে তারা তাদের বাবা-মাকে খুশি করে এমন কথা বলে আর অন্যদিকে তারা বাবা-মার চোখের আড়ালে নিজেদের খুশি মতো কাজ করে।”—বাইবেলের নীতি: ফিলিপীয় ৪:৫, NW. *
শান্ত থাকুন। ক্যারি নামে এক কিশোরী বলে, ‘আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য হলে, মা আমার প্রত্যেকটা কথাতেই রেগে যান। এর ফলে আমি হতাশ হয়ে পড়ি আর সেই কথাবার্তা একটা ঝগড়ায় পরিণত হয়।’ রাগ না দেখিয়ে এমন কিছু বলুন যা দেখায় যে, আপনি আপনার সন্তানের অনুভূতি বোঝেন। উদাহরণস্বরূপ, “চিন্তার কিছু নেই!” বলার পরিবর্তে, বলুন “আমি বুঝতে পারছি যে, তুমি এটা নিয়ে খুব চিন্তিত।”—বাইবেলের নীতি: হিতোপদেশ ১০:১৯.
যতটা সম্ভব, তাদেরকে সরাসরি বলে না দিয়ে নির্দেশনা দিন। আপনার কিশোর বয়সি সন্তানের জটিল চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা হল, সেই পেশীগুলোর মতো যেগুলোকে গঠন করা প্রয়োজন। তাই যখন সে কোনো দ্বিধার মুখোমুখি হয়, তখন তার ‘অনুশীলন’ আপনি করে দেবেন না। বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করার সময়, তাকে নিজে থেকে কিছু সমাধান খুঁজে বার করার সুযোগ দিন। এরপর আপনি সেগুলোর মধ্যে থেকে কয়েকটা সমাধান নিয়ে আলোচনা করে তাকে বলতে পারেন: “এগুলো হল কয়েকটা সম্ভাব্য সমাধান। এগুলো নিয়ে আরও দু-একদিন চিন্তা করো আর তারপর আমরা আবারও কথা বলতে পারি যে, কোন সমাধানটা তোমার পছন্দ আর কেন।”—বাইবেলের নীতি: ইব্রীয় ৫:১৪. ◼ (g১৩-E ০১)
^ এই প্রবন্ধে নামগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে।
^ নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি) বাইবেল ফিলিপীয় ৪:৫ পদকে এভাবে অনুবাদ করে: “তোমাদের যুক্তিবাদিতা যেন সকলে দেখতে পায়।”