আপনার কিশোর বয়সি সন্তানের জন্য যেভাবে নিয়ম স্থির করবেন
পরিবারের জন্য সাহায্য | সন্তান লালন-পালন
আপনার কিশোর বয়সি সন্তানের জন্য যেভাবে নিয়ম স্থির করবেন
প্রতিদ্বন্দ্বিতা
আপনার কিশোর বয়সি সন্তান বলে, আপনি খুবই কড়া। কিন্তু আপনার মন অন্য কথা বলে। আপনি ভাবেন, ‘আজ যদি আমি তাকে ছাড় দিই, পরে সে ঠিক সমস্যায় পড়বে!’
আপনি আপনার কিশোর বয়সি সন্তানের জন্য যুক্তিযুক্ত নিয়ম স্থির করতে পারেন। তবুও, প্রথমে হয়তো আপনাকে বুঝতে হবে যে, প্রাথমিকভাবে কোনো নিয়ম দিলে কেন সে বিরক্ত হয়।
যে-কারণে এটা হয়ে থাকে
প্রচলিত ধারণা: সমস্ত কিশোর বয়সি সন্তানই নিয়মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে; এটা বয়ঃসন্ধিকালের এক সমস্যা, যেটাকে এড়ানো যায় না।
প্রকৃত সত্য: যখন বাবা-মা সন্তানদের জন্য যুক্তিযুক্ত নিয়ম স্থির করে এবং তা নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করে, তখন সন্তানরা তুলনামূলকভাবে কম বিদ্রোহ করে।
যদিও বিদ্রোহ করার পিছনে অনেক কারণ থাকে, তবুও বাবা-মারা হয়তো তাদের অজান্তেই তা উসকে দিতে পারে, যদি তারা এমন কিছু নিয়ম স্থির করে, যা হয়তো সন্তানদের জন্য কঠোর বা তাদের বয়সের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। নীচের বিষয়গুলো বিবেচনা করুন:
কঠোর। যখন বাবা-মারা সন্তানদের সাথে আলোচনা না করেই নিয়ম স্থির করে, তখন সেই নিয়ম সুরক্ষা প্রদানকারী সিট-বেল্টের মতো না হয়ে, শ্বাসরুদ্ধ করা আঁটোসাঁটো পোশাকের মতো হয়। এর ফলে, সে হয়তো গোপনে ঠিক সেই কাজে জড়িয়ে পড়ে, যেটা তার মা-বাবা তাকে করতে বারণ করে।
বয়সের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। একটা ছোটো বাচ্চার জন্য এটা বলাই যথেষ্ট যে, “আমি যা বলেছি তাই করতে হবে”, কিন্তু কিশোর-কিশোরীদের জন্য আরও বেশি কিছু প্রয়োজন হয়ে পড়ে, তারা কারণ জানতে চায়। সবচেয়ে বড়ো কথা হল, ভবিষ্যতে তাকে হয়তো নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিতে হবে। সবচেয়ে ভালো হবে, সে যদি এখনই যুক্তি করতে ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে শেখে, কারণ সে এখনও আপনার অধীনে রয়েছে।
কিন্তু আপনার কিশোর বয়সি সন্তান যদি আপনার দেওয়া নিয়মের প্রতি সবসময় বিরক্তি প্রকাশ করে বলে মনে হয়, তবে আপনি কী করতে পারেন?
আপনি যা করতে পারেন
প্রথমে এটা মনে রাখুন, কিশোর বয়সিদের ওপর সীমা আরোপ করা প্রয়োজন, এমনকী তারা মনে মনে এটা চায়। তাই নিয়ম স্থির করুন এবং খেয়াল রাখুন যেন তারা তা বোঝে। প্রেম ও আস্থার সাথে অনুমতি দেওয়া (ইংরেজি) নামক বইটি বলে, “যখন কিশোর-কিশোরীদের নির্দিষ্ট সীমা আরোপ করে দেওয়া হয় আর তারা বাবা-মার কাছ থেকে যথাযথ নির্দেশনা পাওয়ার আশা করে, তখন তারা তুলনামূলকভাবে কম সমস্যায় পড়ে।” এর বিপরীতে, যে বাবা-মারা কোনো নিয়ম স্থির করে দেয় না, তারা এই ধারণা দেয় যে, তারা সন্তানদের ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী নয়। আর এটাই বিদ্রোহের দিকে নিয়ে যায়।—বাইবেলের নীতি: হিতোপদেশ ২৯:১৫.
তাহলে, কীভাবে আপনি ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন? পরিবারে যে-নিয়ম স্থির করা হয়েছে, সেই ব্যাপারে আপনার সন্তান যা মনে করে, তা তাকে বলতে দিন। উদাহরণস্বরূপ, তার ওপর যে-বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে, সেই ব্যাপারে সে যদি কিছু ছাড় চায়, তাহলে তার বক্তব্য শুনুন। একজন কিশোর বা কিশোরী যদি বুঝতে পারে যে, তার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা হচ্ছে, তবে একমত না হলেও সে আপনার সিদ্ধান্তকে সম্মান করবে ও মেনে নেবে। —বাইবেলের নীতি: যাকোব ১:১৯.
অবশ্য, কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এটা মনে রাখুন: একদিকে সন্তানদের যতটা স্বাধীনতা থাকা উচিত, তারা তার চেয়ে বেশি চায় আবার অন্যদিকে বাবা-মারা যতটা স্বাধীনতা দিতে পারে তার চেয়ে তাদের কম স্বাধীনতা দেয়। তাই, তারা যা অনুরোধ করে তা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করুন। সে কি এটা দেখিয়েছে যে, সে দায়িত্ব নিতে পারবে? পরিস্থিতি কি দেখায় যে, সে ছাড় পেতে পারে? উপযুক্ত হলে মেনে নিতে ইচ্ছুক হোন।—বাইবেলের নীতি: আদিপুস্তক ১৯:১৭-২২.
আপনার কিশোর বয়সি সন্তানের মনের কথা শোনার সাথে সাথে, আপনিও যে তার জন্য চিন্তা করেন, তা তাকে বুঝতে দিন। এটা করলে আপনি তাকে, শুধু তার নিজের বিষয়গুলোকেই নয়, সেইসঙ্গে অন্যদের অনুভুতিকেও গুরুত্ব দিতে শেখাতে পারবেন।—বাইবেলের নীতি: ১ করিন্থীয় ১০:২৪.
পরিশেষে, কোনো একটা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিন আর কেন তা নিয়েছেন সেটা তাকে ব্যাখ্যা করে বলুন। সেই সিদ্ধান্ত শুনে খুব আনন্দিত না হলেও সে অন্তত এটা জেনে খুশি হবে যে, সে এমন বাবা-মা পেয়েছে, যারা তার কথায় মনোযোগ দেবে। এটা মনে রাখবেন, একজন কিশোর বয়সি সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। যুক্তিযুক্ত নিয়ম স্থির করার পর, তা নিয়ে আপনার কিশোর বয়সি সন্তানের সাথে আলোচনা করলে, আপনি তাদের একজন বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করতে পারবেন।—বাইবেলের নীতি: হিতোপদেশ ২২:৬. (g১৩-E ০৩)
[১৩ পৃষ্ঠার বাক্স]
মূল শাস্ত্রপদগুলো
“তোমাদের শান্ত ভাব মনুষ্যমাত্রের বিদিত হউক।” —ফিলিপীয় ৪:৫.
“তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, পাছে তাহাদের মনোভঙ্গ হয়।” —কলসীয় ৩:২১.
[১৩ পৃষ্ঠার বাক্স]
কিশোর-কিশোরীদের জন্য
“মনে করো, একজন ব্যক্তি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছেন। তিনি যদি সময়ে সময়ে তার ঋণ শোধ করেন, তবে তিনি ব্যাঙ্কের আস্থা অর্জন করবেন আর এমনকী ব্যাঙ্ক হয়তো ভবিষ্যতে আরও বেশি ঋণ দেবে। তোমার ঘরেও একই বিষয় ঘটে থাকে। বাবা-মার প্রতি তোমাকে অবশ্যই বাধ্যতা দেখাতে হবে। তুমি যদি এমনকী ছোটো ছোটো বিষয়ে বিশ্বস্ত বলে প্রমাণিত হও, তবে তোমার বাবা-মা ভবিষ্যতে তোমাকে আরও বেশি বিশ্বাস করবে। আবার, তুমি যদি বার বার তোমার বাবা-মাকে হতাশ করো আর তারা যদি তখন তোমাকে কম বিশ্বাস করে বা একেবারে বিশ্বাসই না করে, তাতে আশ্চর্য হয়ো না।”—যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য—যে-উত্তরগুলো কাজ করে, খণ্ড ২ (ইংরেজি) বই থেকে।
[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]