পরিবারের জন্য সাহায্য | বিবাহ
যেভাবে একজন উত্তম শ্রোতা হওয়া যায়
প্রতিদ্বন্দ্বিতা
আপনার সাথি বলেন, “তুমি আমার কথা শুনছো না।” আপনি মনে মনে বলেন, ‘আমি তো শুনছিলাম।’ তবে আপনার সাথি যা বলেছেন আর আপনি যা শুনেছেন, সেটার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ফলে আবার ঝগড়া শুরু হয়ে যায়।
আপনি এই ধরনের তর্কবিতর্ক এড়িয়ে চলতে পারেন। তবে প্রথমে আপনাকে বুঝতে হবে যে, আপনার সাথি যা বলেন, সেটার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হয়তো কেন বাদ পড়ে যায়, যদিও আপনি মনে করেন যে, আপনি তা শুনেছেন।
যে-কারণে এটা হয়ে থাকে
আপনি হয় অন্য কিছু চিন্তা করছেন কিংবা ক্লান্ত হয়ে গেছেন অথবা দুটোই। ঘরের মধ্যে বাচ্চারা চ্যাঁচামেচি করছে, জোরে জোরে টিভি চলছে আর আপনি আপনার কাজের জায়গার কোনো সমস্যা নিয়ে চিন্তা করছেন। এখন আপনার সাথি আপনাকে কিছু বলতে শুরু করেন, হয়তো আজ রাতেই আপনার বাড়িতে কেউ খেতে আসবে। আপনি মাথা নেড়ে বললেন, “ঠিক আছে,” কিন্তু যা বলা হল, তা কি আপনি শুনলেন? সম্ভবত না।
আপনি আগে থেকেই অনুমান করে নেন। এটাকে বলা হয় “মনের ভাব বুঝতে চেষ্টা করার” একটা ক্ষতিকর দিক। আপনার অনুমান যে আপনার সাথির কথার মধ্যে কোন লুকানো বার্তা রয়েছে, কিন্তু আসলে আপনি বিষয়টা নিয়ে অতিরিক্ত কিছু ভেবে নিয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ধরুন আপনার সাথি বললেন: “এই সপ্তাহে তোমাকে অনেক কাজ করতে হয়েছে।” তিনি আপনার সমালোচনা করছেন এই মনে করে আপনি বললেন: “এটা কি আমার দোষ? তুমি এত টাকা খরচা করছ বলেই আমাকে এত কাজ করতে হচ্ছে।” “আমি কি তোমাকে দোষ দিচ্ছি!” আপনার সাথি চিৎকার করে ওঠেন—যার আসল উদ্দেশ্য ছিল, সপ্তাহের শেষে ছুটির দিনগুলো একসঙ্গে কাটানো।
আপনি আগেই সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেন। মারিয়া * বলেন, ‘কখনো কখনো আমি শুধু আমার অনুভূতি বলে বোঝাতে চাই, কিন্তু মার্ক আমাকে সমাধানের রাস্তা দেখায়। আমি সমাধান জানতে চাই না। আমি চাই যেন সে আমার অনুভূতি বোঝে।’ এখানে সমস্যাটা কোথায়? মার্ক মনে মনে সমস্যার সমাধান খোঁজেন। এর ফলে, মারিয়া তাকে যা বলেন, সেটার কিছুটা অথবা পুরোটাই তিনি শুনতে ব্যর্থ হন।
সমস্যার কারণ যা-ই হোক না কেন, কীভাবে আপনি একজন উত্তম শ্রোতা হয়ে উঠতে পারেন?
আপনি যা করতে পারেন
আপনার পূর্ণ মনোযোগ দিন। আপনার সাথি আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলতে চান, কিন্তু আপনি কি শোনার জন্য প্রস্তুত? হয়তো না। এই মুহূর্তে আপনি হয়তো অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা করছেন। যদি তা-ই হয়, তাহলে শোনার ভান করবেন না। যদি সম্ভব হয়, তাহলে আপনি যা করছেন, তা থামিয়ে আপনার সাথির প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিন কিংবা আপনি হয়তো আপনার সাথিকে সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলতে পারেন, যতক্ষণ না আপনার কাজ শেষ হয়।—বাইবেলের নীতি: যাকোব ১:১৯.
একজন যখন কথা বলছে, তখন তাকে তা বলতে দিন। যখন আপনার শোনার পালা আসে, তখন মাঝখানে বাধা দেওয়ার কিংবা অসম্মত হওয়ার ইচ্ছাকে দমন করুন। আপনি কথা বলার সুযোগ পাবেন। এখন শুধু শুনুন।—বাইবেলের নীতি: হিতোপদেশ ১৮:১৩.
প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন। এভাবে আপনি ভালোভাবে বুঝতে পারবেন যে, আপনার সাথি আপনাকে কী বলতে চাইছেন। পূর্বে উল্লেখিত মারিয়া বলেন: “মার্ক যখন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে, তখন আমার ভালো লাগে। এটা দেখায় যে, আমি যা বলছি, তার প্রতি সে আগ্রহী।”
কী বলছে শুধু তাই নয় কিন্তু কী বলতে চাইছে, তা শুনুন। আপনার সাথির ভাবভঙ্গি, চোখের ভাষা ও গলার স্বর কী বোঝাতে চাইছে, তা উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন। মুখে “ঠিক আছে” বললেও, কথা বলার ধরন থেকে হয়তো বোঝা যেতে পারে যে, সবকিছু “ঠিক নেই।” “তুমি কখনোই আমাকে সাহায্য করো না” হয়তো বোঝাতে পারে, “আমার মনে হয় আমি তোমার কাছে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নই।” কী বলতে চাওয়া হয়েছে, তা বোঝার চেষ্টা করুন, এমনকী যদি তা মুখে না-ও বলা হয়। তা না হলে, কী বলতে চাওয়া হয়েছে তার ওপর মনোযোগ না দিয়ে, কী বলা হয়েছে তা নিয়ে আপনারা হয়তো ঝগড়া করতে পারেন।
পুরো কথা শুনুন। আপনার সাথি আপনাকে যা বলছেন, তা যদি আপনার পছন্দ না-ও হয়, তবুও কথা থামিয়ে দেবেন না অথবা চলে যাবেন না। উদাহরণ স্বরূপ, আপনার সাথি যদি আপনার সমালোচনা করেন, তাহলে কী? “পুরো কথা শুনুন,” জর্জ পরামর্শ দেন, যিনি ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিবাহিত। “আপনার সাথি যা বলছেন, তা মন দিয়ে শুনুন। এটার জন্য কিছুটা পরিপক্বতার প্রয়োজন, কিন্তু এটা আপনার উপকার নিয়ে আসবে।”—বাইবেলের নীতি: হিতোপদেশ ১৮:১৫.
আপনার সাথির প্রতি আন্তরিক আগ্রহ দেখান। মন দিয়ে শোনা শুধুমাত্র কোনো কৌশল নয়, বরং এটা হল প্রেমের এক কাজ। আপনার সাথি যা বলছেন, সেটার প্রতি যদি আপনার সত্যিই আগ্রহ থাকে, তাহলে তা শোনা আপনার জন্য আরও সহজ হয়ে উঠবে। তা করার দ্বারা আপনি বাইবেলের এই পরামর্শ অনুসরণ করবেন: “প্রত্যেক জন আপনার বিষয়ে নয়, কিন্তু পরের বিষয়েও লক্ষ্য রাখ।”—ফিলিপীয় ২:৪. ▪ (g13-E 12)
^ অনু. 9 এই প্রবন্ধে নামগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে।