প্রচ্ছদ বিষয়
সৃষ্টিকর্তা বলে কি কেউ আছেন? উত্তর জানা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
অনেকে মনে করে, সৃষ্টিকর্তা বলে কেউ আছেন কি না, এই প্রশ্নের কোনো সম্ভাব্য উত্তর কারো জানা নেই। আবার অনেকের কাছে এই প্রশ্নের কোনো গুরুত্বই নেই। আর্ভেই, যিনি ফ্রান্সে বড়ো হয়ে উঠেছেন, তিনি বলেন: “আমি নাস্তিক নই বা এমনও মনে করি না যে, ঈশ্বরকে জানা অসম্ভব। তবে আমি কোনো কিছুতে বিশ্বাসও করি না। আমি মনে করি, বেঁচে থাকার সবচেয়ে ভালো উপায় হল, সাধারণ বুদ্ধি ব্যবহার করা। এর জন্য কোনো দেব-দেবীর উপর বিশ্বাস করার প্রয়োজন নেই।”
আবার অনেকে হয়তো জনের মতো মনে করেন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাস করেন। তিনি বলেন: “আমার বাবা-মা ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন না। আমি যখন ছোটো ছিলাম, তখন ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্বন্ধে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। তা সত্ত্বেও, কখনো কখনো আমি এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করতাম।”
আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন যে, সৃষ্টিকর্তা বলে কেউ আছেন কি না আর যদি থেকে থাকেন, তাহলে জীবনের কোনো মহৎ উদ্দেশ্য রয়েছে কি না? আপনি হয়তো এমন অনেক বিষয় জানেন, যেগুলো সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব ছাড়া ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমাদের গ্রহে জীবন টিকিয়ে রাখার জন্য প্রকৃতিতে বিভিন্ন বিষয়ের সঠিক ভারসাম্য সম্বন্ধে বৈজ্ঞানিক তথ্য এবং জীবন যে নির্জীব পদার্থ থেকে উৎপন্ন হতে পারে না, সেটার প্রমাণ।—“ প্রমাণ পরীক্ষা করে দেখুন” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।
উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলোর গুরুত্ব বিবেচনা করুন। এগুলো সেই দিক নির্দেশক চিহ্নের মতো, যেগুলো কোনো গুপ্তধনের ভাণ্ডারের দিকে নির্দেশ করে। আপনি যদি ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্বন্ধে জোরালো প্রমাণ ও সেইসঙ্গে তাঁর সম্বন্ধে নির্ভরযোগ্য তথ্য খুঁজে পান, তাহলে আপনি অনেক উপকার লাভ করবেন। এখানে চারটে উদাহরণ দেওয়া হল।
১. জীবনের উদ্দেশ্য
যদি জীবনের কোনো মহৎ উদ্দেশ্য থেকেই থাকে, তাহলে আমরা সেই উদ্দেশ্য ও সেইসঙ্গে সেটা আমাদের কীভাবে প্রভাবিত করে, তা জানতে চাই। ঈশ্বর যদি থেকেই থাকেন আর আমরা যদি এই বিষয়টা না জানি, তাহলে এই মহাবিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সত্যটাই আমাদের জানা নেই।
বাইবেল জানায়, ঈশ্বর হলেন সমস্ত ধরনের জীবনের উৎস। (প্রকাশিত বাক্য ৪:১১) এটা জানা কীভাবে আমাদের জীবনকে উদ্দেশ্যপূর্ণ করে তোলে? এই বিষয়ে বাইবেল কী শিক্ষা দেয়, তা বিবেচনা করুন।
পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর মধ্যে মানুষ হল অদ্বিতীয়। বাইবেল জানায়, ঈশ্বর আমাদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে আমরা তাঁর মতো হই এবং তাঁর ব্যক্তিত্ব প্রতিফলিত করি। (আদিপুস্তক ১:২৭) এ ছাড়া বাইবেল শিক্ষা দেয় যে, মানুষ ঈশ্বরের বন্ধু হতে পারে। (যাকোব ২:২৩) আমাদের সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে এই ধরনের এক সম্পর্ক গড়ে তোলা ছাড়া আর কোনো কিছুই আমাদের জীবনকে এত উদ্দেশ্যপূর্ণ করে তুলতে পারে না।
ঈশ্বরের বন্ধু হওয়া বলতে কী বোঝায়? ঈশ্বরের বন্ধুরা সরাসরি তাঁর সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারে। আর তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যে, তিনি তাদের কথা শুনবেন এবং তাদের জন্য কাজ করবেন। (গীতসংহিতা ৯১:১৫) ঈশ্বরের বন্ধু হিসেবে আমরা বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর চিন্তাধারা বুঝতে পারব। আর এর ফলে, আমরা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো ভালোভাবে বোঝার জন্য সাহায্য লাভ করব।
ঈশ্বর যদি থেকেই থাকেন আর আমরা যদি এই বিষয়টা না জানি, তাহলে এই মহাবিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সত্যটাই আমাদের জানা নেই
২. মনের শান্তি
উদাহরণ স্বরূপ, সারা পৃথিবীতে ঘটে চলা সমস্ত দুঃখকষ্ট দেখে কেউ কেউ ঈশ্বরে বিশ্বাস করা কঠিন বলে মনে করে। তারা এইরকম প্রশ্ন করে, ‘কেন একজন সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা দুঃখকষ্ট এবং মন্দতা থাকতে দিয়েছেন?’
এই বিষয়ে বাইবেলের সান্ত্বনাদায়ক উত্তর হল, ঈশ্বর কখনো চাননি মানুষ দুঃখকষ্ট ভোগ করুক। মানুষকে যখন সৃষ্টি করা হয়েছিল, তখন তাদের জীবনে কোনো দুঃখকষ্ট ছিল না। এমনকী মৃত্যু মানুষের জন্য ঈশ্বরের আদি উদ্দেশ্যের কোনো অংশ ছিল না। (আদিপুস্তক ২:৭-৯, ১৫-১৭) এটা বিশ্বাস করা কি কঠিন? এটা কি কল্পনা মাত্র? না। যদি একজন সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা থেকে থাকেন এবং সত্যিই যদি তাঁর প্রধান গুণ প্রেম হয়, তাহলে আমরা আশা করতে পারি, তিনি মানুষের জন্য ঠিক এইরকমই একটা জীবন চাইবেন।
তাহলে, মানুষের এই দুঃখজনক পরিস্থিতির জন্য কে দায়ী? বাইবেল জানায়, ঈশ্বর মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছা দিয়ে সৃষ্টি করেছিলেন। আমরা রোবটদের মতো নই, আমাদের ঈশ্বরের বাধ্য হওয়ার জন্য জোর করা হয় না। প্রথম মানব দম্পতি, যাদের কাছ থেকে সমস্ত মানুষ এসেছে, তারা স্বেচ্ছায় ঈশ্বরের নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ঈশ্বরের বাধ্য হওয়ার পরিবর্তে, তারা স্বার্থপরভাবে নিজেদের ইচ্ছেমতো কাজ করেছিলেন। (আদিপুস্তক ৩:১-৬, ২২-২৪) ফল স্বরূপ, বর্তমানে আমরা দুঃখজনক পরিস্থিতি ভোগ করছি।
মানুষের দুঃখকষ্ট ভোগ করা যে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ছিল না, তা জেনে আমরা প্রচুর মনের শান্তি লাভ করতে পারি। কিন্তু, স্বাভাবিকভাবেই আমরা এই দুঃখকষ্ট থেকেও মুক্তি পেতে চাই। ভবিষ্যতের জন্য আমাদের এক আশার প্রয়োজন রয়েছে।
৩. আশা
মানবজাতি বিদ্রোহ করার পর পরই ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, পরিশেষে তিনি পৃথিবীর জন্য তাঁর আদি উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করবেন। যেহেতু তিনি সর্বশক্তিমান, তাই কোনো কিছুই তাঁকে সেটা করা থেকে বিরত করতে পারে না। (যিশাইয় ৫৫:১১) খুব শীঘ্রই, ঈশ্বর তাঁর বিরুদ্ধে করা বিদ্রোহের সমস্ত প্রভাব দূর করে দেবেন এবং পৃথিবী ও মানবজাতির জন্য তাঁর আদি উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হবে।
আপনার জন্য এর অর্থ কী হতে পারে? বাইবেলে ঈশ্বর ভবিষ্যতের জন্য যে-প্রতিজ্ঞাগুলো করেছেন, সেগুলোর মধ্যে থেকে মাত্র দুটো বিবেচনা করুন।
-
পৃথিবীব্যাপী শান্তিস্থাপন করা হবে ও মন্দতা শেষ করা হবে। “আর ক্ষণকাল, পরে দুষ্ট লোক আর নাই, তুমি তাহার স্থান তত্ত্ব করিবে, কিন্তু সে আর নাই। কিন্তু মৃদুশীলেরা দেশের অধিকারী হইবে, এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে।”—গীতসংহিতা ৩৭:১০, ১১.
-
অসুস্থতা এবং মৃত্যু দূর করা হবে। “নগরবাসী কেহ বলিবে না, আমি পীড়িত।” (যিশাইয় ৩৩:২৪) “তিনি মৃত্যুকে অনন্তকালের জন্য বিনষ্ট করিয়াছেন, ও প্রভু সদাপ্রভু সকলের মুখ হইতে চক্ষুর জল মুছিয়া দিবেন।”—যিশাইয় ২৫:৮.
কেন আমরা বাইবেলে উল্লেখিত ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোর উপর বিশ্বাসস্থাপন করতে পারি? কারণ বাইবেলে লিপিবদ্ধ অগণিত ভবিষ্যদ্বাণী ইতিমধ্যেই পরিপূর্ণ হয়েছে এবং সেটার প্রমাণও রয়েছে। তবে, ভবিষ্যতে দুঃখকষ্ট থেকে মুক্ত হওয়ার আশা, বর্তমানে আমাদের জীবনের সমস্ত সমস্যা দূর করে দেয় না। ঈশ্বর আরও কী সাহায্য প্রদান করেন?
৪. সমস্যার সমাধান করার এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সাহায্য
সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করার এবং ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ঈশ্বর আমাদের নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। কখনো কখনো আমাদের ছোটোখাটো সিদ্ধান্ত নিতে হয় আবার কখনো কখনো বড়ো বড়ো সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যেগুলোর সঙ্গে আমাদের পুরো জীবন জড়িত। কোনো মানুষ আমাদেরকে আমাদের সৃষ্টিকর্তার মতো কার্যকরী প্রজ্ঞা দিতে পারে না। ঈশ্বর অতীত এবং ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে সব কিছু জানেন আর তিনি মানুষকে জীবন দিয়েছেন। তাই, তিনি জানেন আমাদের জন্য কোনটা সবচেয়ে ভালো।
বাইবেলে যিহোবা ঈশ্বরের চিন্তাধারাগুলো রয়েছে, যেগুলো লেখার জন্য তিনি বিভিন্ন মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। বাইবেলে আমরা এই উক্তি পাই: “আমি সদাপ্রভু তোমার ঈশ্বর, আমি তোমার উপকারজনক শিক্ষা দান করি, ও তোমার গন্তব্য পথে তোমাকে গমন করাই।”—যিশাইয় ৪৮:১৭, ১৮.
ঈশ্বরের অসীম শক্তি রয়েছে আর তিনি আমাদের জন্য তা ব্যবহার করতে ইচ্ছুক। বাইবেল ঈশ্বরকে এমন একজন প্রেমময় পিতা হিসেবে তুলে ধরে, যিনি আমাদের সাহায্য করতে চান। এটি বলে: “স্বর্গস্থ পিতা, যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে পবিত্র আত্মা দান করিবেন।” (লূক ১১:১৩) ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা এই শক্তি আমাদের নির্দেশনা দিতে ও শক্তিশালী করতে পারে।
কীভাবে আপনি ঈশ্বরের কাছ থেকে এই সাহায্য লাভ করতে পারেন? এই সম্বন্ধে বাইবেল উত্তর দেয়: “যে ব্যক্তি ঈশ্বরের নিকটে উপস্থিত হয়, তাহার ইহা বিশ্বাস করা আবশ্যক যে ঈশ্বর আছেন, এবং যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা।” (ইব্রীয় ১১:৬) ঈশ্বর বলে যে কেউ রয়েছেন, তা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করার জন্য আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে প্রমাণ পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
আপনি কি ঈশ্বর সম্বন্ধে অনুসন্ধান করবেন?
ঈশ্বর সম্বন্ধে সত্য খুঁজে বের করার জন্য সময়ের প্রয়োজন, কিন্তু তা করলে নিশ্চিতভাবেই আপনি উপকার লাভ করবেন। সিউজিন সিয়াউয়ের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করুন, যিনি চীনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং এখন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। তিনি বলেন: “যদিও আমি বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করতাম কিন্তু বাইবেলের প্রতি আমার কৌতূহল ছিল। তাই, আমি যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করি। কলেজে পড়ার শেষ বছরে আমি এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম যে, আমার বাইবেল অধ্যয়নের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার কোনো সুযোগই পাচ্ছিলাম না। এত পড়াশোনা করা সত্ত্বেও বলতে গেলে আমার কোনো আনন্দই ছিল না। আমি যখন আবারও বাইবেল অধ্যয়নের প্রতি মনোযোগ দিতে শুরু করি, তখন আমি মনের আনন্দ খুঁজে পাই।”
আপনি কি আমাদের সৃষ্টিকর্তা যিহোবা ঈশ্বর সম্বন্ধে আরও জানতে চান? অনুসন্ধান করার জন্য সময় খুঁজে বের করুন না কেন? ▪ (g15-E 03)