সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ইজিয়ান সাগর থেকে মানুষ মাছেদের ধরা

ইজিয়ান সাগর থেকে মানুষ মাছেদের ধরা

ইজিয়ান সাগর থেকে মানুষ মাছেদের ধরা

 ভুমধ্যসাগরের পূর্ব দিকে রয়েছে ইজিয়ান সাগর। আর ইজিয়ান সাগরের উত্তর ও পশ্চিম দিকে গ্রিস, দক্ষিণে ক্রীট দ্বীপ এবং পূর্ব দিকে রয়েছে তুরস্ক। বেশ কিছু প্রাচীন সভ্যতা এখানে গড়ে উঠেছিল আর পুরো সাগর জুড়ে বেশ কিছু ছোটবড় দ্বীপ ও উপদ্বীপ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এবড়ো খেবড়ো দ্বীপের ছোট ছোট, সাদা ঘরগুলো সূর্যের আলোয় জ্বলজ্বল করে। একজন কবি বলেছিলেন যে এগুলো যেন “কেশরওয়ালা পাথরের ঘোড়া।”

তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে এই দ্বীপগুলো পর্যটকদের এক প্রিয় জায়গা হয়ে উঠেছে! দ্বীপগুলো এমনিতেই খুব সুন্দর কিন্তু সেখানকার অধিবাসীদের গুণ ও ব্যবহারের জন্য এই দ্বীপগুলোর সৌন্দর্য আরও বেড়ে যায়। এই লোকেরা খুবই বাস্তববাদী ও অতিথিপরায়ণ এবং কিছুটা স্বাধীনচেতা আর সেইজন্য এই এলাকার বিশেষত্ব ও সৌন্দর্য আরও বেড়ে যায়।

দ্বীপের অনেকেই ইজিয়ান সাগর থেকে মাছ ধরে তাদের রুজিরোজগার চালায়। কিন্তু, আরেক ধরনের ‘জাল ফেলার’ কাজও এখানে চলছে আর তাতে খুব ভাল ফলও পাওয়া যাচ্ছে। “মনুষ্যধারী” প্রচারকেরা ইজিয়ান দ্বীপের সব জায়গায় ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করছেন ও লোকেদের খ্রীষ্টের শিষ্য করছেন।—মথি ৪:১৮-২০; লূক ৫:১০.

প্রায় উনিশশো বছর আগে, খ্রীষ্টান সুসমাচার প্রচারকেরা ইজিয়ান দ্বীপে গিয়েছিলেন। প্রায় সা.কা. ৫৬ সালে প্রেরিত পৌল তার তৃতীয় মিশনারি যাত্রা থেকে ফেরার পথে অল্প সময়ের জন্য লেসভস, খীয়, সামঃ, কোঃ এবং রোডস্‌ দ্বীপে গিয়েছিলেন। পৌল খুবই উৎসাহী প্রচারক ছিলেন, তাই এই দ্বীপের লোকেদের কাছে তিনি নিশ্চয়ই প্রচার করেছিলেন। (প্রেরিত ২০:১৪, ১৫, ২৪; ২১:১, ২) দুবছর রোমে বন্দি থাকার পর তিনি বোধ হয় ক্রীট দ্বীপে এসেছিলেন আর সেখানে প্রচার করেছিলেন। প্রথম শতাব্দীর শেষ দিকে প্রেরিত যোহনকে “ঈশ্বরের বাক্য ও যীশুর সাক্ষ্য প্রযুক্ত” পাট্‌ম দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল। (প্রকাশিত বাক্য ১:৯) আজকের দিনের সুসমাচার প্রচারকেরা কীভাবে এই দ্বীপগুলোতে সুসমাচার পৌঁছে দিচ্ছেন?

প্রচার করে ভাল ফল পাওয়া যায়

এই দ্বীপগুলোতে প্রচার করা বেশ কঠিন ও কষ্টে। এর জন্য অনেক চেষ্টা ও ত্যাগস্বীকার করার দরকার হয়। কয়েকটা দ্বীপ অনেক দূরে দূরে। জাহাজ বা বিমানে করে সেখানে যাওয়ার কোন ভাল ব্যবস্থা নেই, কিছু দ্বীপে জাহাজ বা বিমান একেবারেই যায় না, বিশেষ করে শীতকালে। সমুদ্রে কখনও কখনও ঝড়ও ওঠে, বিশেষ করে মেলটিমিয়ার সময়ে যখন উত্তরের ঝড়ো মৌসুমী হাওয়া সাগরের ওপর দিয়ে বয়ে যায়। এছাড়াও, অনেক দ্বীপে গ্রামগুলো বেশ দূরে দূরে আর তাই সেই পর্যন্ত পৌঁছানো খুবই মুশকিল হয়ে পড়ে, কারণ সেখানে যাওয়ার রাস্তাগুলো ধূলোয় ভরা ও কাঁচা, যার ওপর দিয়ে যাওয়া আসা করা বেশ কষ্টকর। আর এমন কয়েকটা গ্রাম আছে, যেখানে যেতে হলে ছোট নৌকা ছাড়া আর কোন গতি নেই।

যেমন ইকারিয়া দ্বীপের কথাই ধরুন। এখানে একটা ছোট মণ্ডলী আছে আর এই মণ্ডলীতে ১১ জন প্রকাশক আছেন। আর এই প্রকাশকেরা তাদের দ্বীপ ও আশেপাশের সব দ্বীপের সমস্ত লোকেদের কাছে প্রচার করে উঠতে পারেননি। তাই ইকারিয়া, ফোরনোই, পাট্‌ম ও লিপসস দ্বীপের লোকেদের কাছে প্রচার করার জন্য সামঃ দ্বীপ থেকে ভাইবোনেরা আসেন। এইরকমই কিছুদিন আগে সেখানে দুদিন ধরে প্রচার করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল আর ভাইবোনেরা ৬৫০টা পত্রিকা, ৯৯টা ব্রোশার এবং ২৫টা বই লোকেদেরকে দিয়েছিলেন! তারা বেশ অবাক হয়ে গিয়েছিলেন, যখন তারা এমন লোকেদের পেয়েছিলেন যারা জানেই না যে যিহোবা কে আর এই লোকেরা সাক্ষিদেরকে সেখানেই থাকার জন্য ও বাইবেল থেকে আরও অনেক কিছু শেখানোর জন্য বার বার অনুরোধ করেছিলেন। একজন মহিলা এক বোনকে বলেছিলেন: “আপনি তো চলে যাচ্ছেন। কিন্তু বাইবেল সম্বন্ধে এখনও যে আমার অনেক প্রশ্ন আছে, সেগুলোর উত্তর আমি কার কাছ থেকে পাব?” বোন তার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করবেন বলে কথা দিয়েছিলেন আর এভাবে তিনি বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেছিলেন।

একবার যখন ইকারিয়া দ্বীপে ভ্রমণ অধ্যক্ষ এসেছিলেন তখন তিনি শনি-রবিবারে পুরো দ্বীপটা প্রচার করে শেষ করার ব্যবস্থা করেছিলেন। সামঃ দ্বীপ থেকে প্রায় ৩০ জন প্রকাশক তাকে সাহায্য করেছিলেন। অতিথি ভাইদের টাকা দিয়ে দুরাত হোটেলে থাকতে হয়েছিল এবং গাড়ি ভাড়া করতে হয়েছিল। দুদিন ধরে সেখানে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছিল আর আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল যে শনি-রবিবারেও আবহাওয়া খারাপ থাকবে। কিন্তু তাই বলে ভাইয়েরা পিছিয়ে যাননি, তারা উপদেশক ১১:৪ পদের কথা মনে করেছিলেন যেখানে বলা আছে: “যে জন বায়ু মানে, সে বীজ বপন করিবে না; এবং যে জন মেঘ দেখে, সে শস্য কাটিবে না।” শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া একটু ভাল হয়েছিল, পুরো দ্বীপে ভাইবোনেরা এই জরুরি খবর শুনিয়েছিলেন আর আনন্দ করতে করতে তারা ঘরে ফিরে এসেছিলেন।

আন্দ্রস দ্বীপের ১৬ জন প্রকাশক তাদের পুরো দ্বীপে প্রচার করার জন্য খুব পরিশ্রম করেছিলেন। দুজন ভাই অনেক দূরের এক গ্রামে গিয়ে সেখানকার সবার কাছে প্রচার করবেন বলে ঠিক করেছিলেন। তাই তারা ঘরে-ঘরে, রাস্তায়, মাঠে সব জায়গায় লোকেদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এমনকি তারা পুলিশ স্টেশনে গিয়েও বই-পত্রিকা দিয়ে এসেছিলেন। যখন তাদের মনে হয়েছিল যে তারা বোধ হয় গ্রামের সবার সঙ্গে প্রচার করে ফেলেছেন তখন ভাইয়েরা সেখান থেকে ফিরে আসছিলেন। কিন্তু, চৌরাস্তার কাছে তারা একজন গ্রিক অর্থোডক্স পাদ্রিকে দেখতে পান। তাদের মনে হয় যে এই ব্যক্তির কাছে তারা প্রচার করেননি আর তাই তারা তাকে একটা ট্র্যাক্ট দেন। তিনি খুশি হয়ে তা নিয়েছিলেন। এখন এই ভাইয়েরা পুরোপুরি নিশ্চিত যে তারা এখানকার সবার কাছেই প্রচার করতে পেরেছেন!

গ্যাভডসে (বা কৌদায়) হল ক্রীট দ্বীপের একটা ছোট উপদ্বীপ, যেখানে মাত্র ৩৮ জন লোক বাস করে। আর এই উপদ্বীপটা ইউরোপের একেবারে দক্ষিণে বলে মনে করা হয়। (প্রেরিত ২৭:১৬) একজন ভ্রমণ অধ্যক্ষ, তার স্ত্রী ও আরেক দম্পতি সেখানে তিন দিন প্রচার করেছিলেন। খরচ বাঁচানোর জন্য তারা তাঁবুতে থেকেছিলেন। দ্বীপের সবার কাছে সুসমাচার প্রচার করা হয়েছিল আর কেউ খারাপ ব্যবহার করেননি বলে ভাইয়েরা খুবই খুশি হয়েছিলেন। এই দ্বীপের লোকেরা যিহোবার সাক্ষিদের বিষয়ে কিছুই জানত না। তাই সেখানকার পাদ্রি ও অন্য লোকেরা মিলে ১৯টা বই ও ১৩টা ব্রোশার নিয়েছিলেন। ভাইয়েরা যখন একটা ছোট নৌকায় করে ফিরে আসছিলেন তখন সমুদ্র উত্তাল হয়ে ওঠে আর তারা বিপদের মধ্যে পড়েন। কিন্তু ভাইরা বলেছিলেন, “যিহোবার দয়ায় আমরা জীবন নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলাম। আমরা যিহোবাকে ধন্যবাদ দিয়েছিলাম আর আমরা তাঁর নামের মহিমাও করেছিলাম কারণ তিনি আমাদেরকে ইউরোপের একেবারে দক্ষিণ দিকের দ্বীপে তাঁর নামকে সম্মানিত করার সুযোগ দিয়েছিলেন।”

এখানকার পাট্‌ম দ্বীপে বসেই প্রেরিত যোহন বাইবেলের শেষ বই প্রকাশিত বাক্য লিখেছিলেন। কিছুদিন আগেও পাট্‌ম দ্বীপে কোন যিহোবার সাক্ষি ছিল না। সামঃ দ্বীপের ভাইয়েরা এই দ্বীপে প্রচার করার ব্যবস্থা করেছিলেন। এই দ্বীপে গ্রিক অর্থোডক্স গির্জার খুব বেশি প্রভাব ছিল। আর তাই তারা জানতেন যে সেখানকার লোকেরা হয়তো খুব বিরোধিতা করবে। ভাইবোনেরা যখন সেখানে সুসমাচার প্রচার করছিলেন তখন দুজন বোনকে একজন মহিলা তার ঘরে ডেকেছিলেন। ওই মহিলার স্বামী বার বার বোনদেরকে জিজ্ঞেস করছিলেন যে কে তাদেরকে তাদের বাড়িতে পাঠিয়েছে। যখন তারা বলেছিলেন যে তারা সবার ঘরেই যাচ্ছেন তখন তিনি আবারও এই একই প্রশ্ন করেছিলেন: “সত্যিই কোন প্রতিবেশী আপনাদেরকে আমাদের এখানে পাঠায়নি?” পরে সেই মহিলা বলেছিলেন যে কেন তার স্বামী বারবার এই একই প্রশ্ন করছেন। যখন এই মহিলা জাইরে থাকতেন তখন থেকেই তিনি যিহোবার সাক্ষিদের জানতেন। পরে তিনি বোনদের বলেছিলেন যে ওইদিন সকালে আসলে কী হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন: “অন্য দিনের মতো আজও সকালে আমি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলাম যেন তিনি তাঁর কয়েকজন সাক্ষিকে এই দ্বীপে পাঠিয়ে দেন। এই কথা শুনে আমার স্বামী হেসেছিল। তাই আপনাদেরকে আমাদের ঘরে আসতে দেখে আমি খুবই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমার স্বামীরও যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না। সেই জন্য সে বারে বারে আপনাদের জিজ্ঞেস করছিল যে কে আপনাদেরকে এখানে পাঠিয়েছে।” সঙ্গে সঙ্গে ওই মহিলার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করা হয়েছিল। দশ মাস ধরে টেলিফোনে বাইবেল অধ্যয়ন করা হয়েছিল, এর জন্য যদিও ওই বোন ও আগ্রহী মহিলাকে অনেক টাকা বিল দিতে হয়েছিল। তিনি বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন এবং এখন ওই দ্বীপে তিনি একা যিহোবার সাক্ষি, যে দ্বীপে ১,৯০০ বছর আগে প্রেরিত যোহনকে নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল।

বন্দরে বন্দরে ‘জাল ফেলা’

প্রতি বছর গরমের সময় ইজিয়ান দ্বীপের বিভিন্ন বন্দরে অনেক জাহাজ এসে ভেড়ে আর এতে করে অনেক পর্যটকেরা এখানে ছুটি কাটাতে আসেন। তাই যিহোবার সাক্ষিরা বিভিন্ন জাতি ও ভাষার লোকেদের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার খুব ভাল সুযোগ পান। এখানকার মণ্ডলীগুলো বিভিন্ন ভাষার বই-পত্রিকা মজুত রাখেন আর তাই তারা পর্যটকদের কাছে তাদের নিজেদের ভাষায় হাজার হাজার পত্রিকা অর্পণ করেন। কিছু জাহাজ প্রত্যেক সপ্তায় একই বন্দরে আসে, ফলে ভাইরা জাহাজের নাবিক ও যারা জাহাজে কাজ করেন তাদের কাছে ফিরে যেতে ও এমনকি বাইবেল অধ্যয়নও শুরু করতে পারেন।

রোডস্‌ দ্বীপে একজন অগ্রগামী বোন আছেন। ১৯৯৬ সালের গরমের সময় তিনি জ্যামাইকার একজন ভদ্রলোকের কাছে প্রচার করেছিলেন, যিনি একটা জাহাজে কাজ করতেন। আর ওই জাহাজ প্রতি শুক্রবারে এই বন্দরে আসত। বোন পরের শুক্রবারে জেলা সম্মেলনে আসার জন্য ওই ভদ্রলোককে বলেছিলেন। বোনের কাছে ইংরেজি বাইবেল ছিল আর সেটা থেকে তিনি এই ভদ্রলোককে বাইবেলের কিছু সত্য বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যার ওপর বক্তৃতা দেওয়া হবে। ওই সম্মেলনে সাক্ষিদের প্রেম ও ভালবাসা দেখে তিনি খুবই খুশি হয়েছিলেন। পরের শুক্রবারে তিনি দুজন অগ্রগামী ভাইকে তার জাহাজে আসতে বলেছিলেন। এই ভাইয়েরা ইংরেজি ও স্প্যানিশ ভাষার কিছু বইপত্র নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। এক ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে তাদের প্রচারের ব্যাগ একেবারে খালি হয়ে গিয়েছিল! জ্যামাইকার ওই ভদ্রলোক গরমকাল শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত প্রতি শুক্রবারে বাইবেল অধ্যয়ন করেছিলেন। পরের গরমে তিনি আবারও ফিরে এসেছিলেন এবং আবারও অধ্যয়ন শুরু করেছিলেন। তবে, এবারে আধ্যাত্মিক উন্নতি করার জন্য তিনি তার চাকরি ছেড়ে দেবেন বলে ঠিক করেছিলেন। এরপর তিনি দেশে ফিরে গিয়েছিলেন। রোডস্‌ দ্বীপের ভাইয়েরা পরে শুনেছিলেন যে এই ভদ্রলোক ১৯৯৮ সালের প্রথম দিকে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। এই কথা শুনে ভাইরা কতই না খুশি হয়েছিলেন!

বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা “মৎস” ধরা

ইজিয়ান সাগরে প্রচুর সার্ডিন ও সার্ডফিশ রয়েছে যেগুলো বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে আসে আর জেলেদের জালে ধরা পড়ে। এইরকমই, ইজিয়ান দ্বীপে এমন অনেক লোকেরা আছেন, যারা পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে গ্রিসে চলে এসেছেন। আর এদের মধ্যে রাজ্যের প্রকাশকেরা এমন লোকেদেরও খুঁজে পান যারা ঈশ্বরের দিকে ফেরেন।

রেজি যখন প্রহরীদুর্গ এবং সচেতন থাক! পত্রিকা থেকে যিহোবা ও তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে প্রথম পড়েছিল তখন তার বয়স ছিল মাত্র দশ বছর। সে আলবেনিয়াতে থাকত। তিন বছর পর সে ও তার পরিবার রোডস্‌ দ্বীপে চলে আসে। একদিন রেজি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করে যাতে তার এই নতুন বাড়িতেও যিহোবার লোকেরা তার কাছে আসে। পরের দিন রেজির বাবা প্রহরীদুর্গ এবং সচেতন থাক! পত্রিকা নিয়ে আসেন আর সেগুলো দেখে রেজি খুশি হয়। রেজির বাবাকে যে বোন ওই পত্রিকাগুলো দিয়েছিলেন তার সঙ্গে রেজি দেখা করে এবং জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে বইটা দিয়ে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করে। মাঝে মাঝে, ওই বোনকে সে একদিনেই তিন বার বাইবেল অধ্যয়ন করাতে বলত! দুমাস পর সে অবাপ্তাইজিত প্রকাশক হয় এবং ১৯৯৮ সালের মার্চ মাসে ১৪ বছর বয়সে বাপ্তিস্ম নেয়। বাপ্তিস্মের দিন থেকেই সে সহায়ক অগ্রগামীর কাজ শুরু করে এবং ছয় মাস পর সে নিয়মিত অগ্রগামী বা পূর্ণ-সময়ের প্রচারিকা হয়।

কোঃ দ্বীপের একজন ভাই রাশিয়ার কয়েকজন লোকের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতেন। যখন তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে তাদের কোন বন্ধু বাইবেল অধ্যয়ন করতে চান কিনা, তখন তারা লিওনিডাস ও ওফেলিয়া নামে আমেরিকার এক দম্পতির ঠিকানা দিয়েছিলেন। তারা সেখান থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে এক গ্রামে থাকত। এই ভাইরা যখন তাদের ঘরে গিয়েছিলেন তখন তারা ওই দম্পতিকে ওয়াচটাওয়ার বাইবেল আ্যন্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটির বইপত্রে ভরা একটা ব্যাগ বের করতে দেখে একেবারে চমকে গিয়েছিলেন! এই বইপত্রগুলো ছিল আর্মেনিয় ও রুশ ভাষার। লিওনিডাস ও ওফেলিয়া বলেন যে তারা যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিলেন আর অবাপ্তাইজিত প্রকাশক হওয়ার মুখে ছিলেন। কিন্তু, রাজনৈতিক ও আর্থিক সমস্যার জন্য তাদেরকে নিজেদের দেশ ছেড়ে চলে আসতে হয়। আর তারা কোঃ দ্বীপে আসেন যেখানে লিওনিডাসের মা ও ছোট বোন আগে থেকেই থাকতেন। এই ভাই তাদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেন। আর এইভাবে এই ভাই একবারেই তিন-তিনটে নতুন বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করে দেন—ওফেলিয়া, লিওনিডাস আর লিওনিডাসের মা ও বোনের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে অধ্যয়ন করার জন্য তাকে সপ্তায় তিন দিন মোটর সাইকেলে চড়ে ৩০ কিলোমিটার পথ যেতে হতো, আবার এতটা পথ ফিরে আসতে হতো। কয়েক মাস পর লিওনিডাস ও তার স্ত্রী বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। এখানকার ভাইরা আত্মত্যাগ করেছিলেন আর তাই তারা কত ভাল ফল পেয়েছিলেন!

যিহোবা বৃদ্ধি দেন

ইজিয়ান সাগরের এই দ্বীপগুলোতে ২,০০০ জনেরও বেশি যিহেবার সাক্ষি আছেন। আর এটা বেশ দেখা যায় যে তাদের অক্লান্ত চেষ্টাকে যিহোবা আশীর্বাদ করেছেন। এখন সেখানে ৪৪টা মণ্ডলী এবং ২৫টা ছোট ছোট দল রয়েছে। এই ছোট দলগুলোর মধ্যে ১৭টা হল বিদেশি ভাষার দল কারণ যিহোবা চান “যেন সমুদয় [সব ধরনের] মনুষ্য পরিত্রাণ পায়, ও সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পারে।” (১ তীমথিয় ২:৪) এছাড়াও ১৩ জন বিশেষ অগ্রগামী দূরের এলাকাগুলোতে গিয়ে আরও বেশি লোকেদের কাছে প্রচার করার জন্য বিশেষ চেষ্টা করে চলেছেন।

শত শত বছর ধরে ইজিয়ান সাগর সংস্কৃতি ও বাণিজ্যের এক প্রধান কেন্দ্র। আজকাল আবার এটা লাখ লাখ পর্যটকদের এক প্রিয় জায়গাও হয়ে উঠেছে। কিন্তু, তার চেয়ে বেশি জরুরি বিষয় হল যে “মনুষ্যধারী” রাজ্য প্রকাশকেরা এই এলাকায় অনেক ভাল ও নম্র লোকেদের খুঁজে পাচ্ছেন, যারা যিহোবার গৌরব করতে চান। তারা সবাই মিলে এই ডাকে সাড়া দিয়েছেন, যে সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল: “তাহারা সদাপ্রভুর গৌরব স্বীকার করুক, উপকূল [দ্বীপ] সমূহের মধ্যে তাঁহার প্রশংসা প্রচার করুক।”—যিশাইয় ৪২:১২.

[২২ পৃষ্ঠার মানচিত্র]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

ইজিয়ান সাগর

গ্রিস

লেসভস

খীয়

সামঃ

ইকারিয়া

ফোরনোই

পাট্‌ম

কোঃ

রোডস্‌

ক্রীট

তুরস্ক

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

লেসভস দ্বীপ

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

পাট্‌ম দ্বীপ

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

ক্রীট দ্বীপ