রাজ্যের সত্যের বীজ বোনা
রাজ্যের সত্যের বীজ বোনা
“তুমি প্রাতঃকালে আপন বীজ বপন কর, এবং সায়ংকালেও হস্ত নিবৃত্ত করিও না।”—উপদেশক ১১:৬.
১. আজকের দিনে আমরা খ্রীষ্টানেরা কোন্ বীজ বোনার কাজ করি?
পুরনো ইব্রীয় সমাজে চাষবাস ছিল লোকেদের প্রধান কাজ। তাই যীশু যাঁর সারাটা জীবন প্রতিজ্ঞাত দেশে কেটেছিল, লোকেদের বোঝাবার জন্য তাঁর দৃষ্টান্তে বেশিরভাগ সময়ই চাষবাসের কথা বলতেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তিনি ঈশ্বরের রাজ্যের সত্যকে প্রচার করার ব্যাপারটাকে একজন চাষীর বীজ বোনার সঙ্গে তুলনা করেছেন। (মথি ১৩:১-৯, ১৮-২৩; লূক ৮:৫-১৫) আজকের দিনেও আমরা গ্রামে থাকি বা শহুরে জীবন কাটাই, আমরা খ্রীষ্টানেরা বীজ বোনার কাজ করি। আমরা রাজ্যের সত্যের বীজ বুনি অর্থাৎ প্রচার করি আর আমাদের জন্য এটা খুবই জরুরি কাজ।
২. আমাদের প্রচার কাজ কতটা জরুরি আর এটা করার জন্য আজকে কী কী করা হচ্ছে?
২ বিশেষ করে এই শেষের সময়ে রাজ্যের সত্যের বীজ বোনার কাজ একটা বড় সুযোগ। এই কাজ অর্থাৎ আমাদের প্রচার কাজ যে কতটা জরুরি তা রোমীয় ১০:১৪, ১৫ পদে লেখা আছে। সেখানে বলা আছে: “আর প্রচারক না থাকিলে কেমন করিয়া শুনিবে? আর প্রেরিত না হইলে কেমন করিয়া প্রচার করিবে? যেমন লিখিত আছে, ‘যাহারা মঙ্গলের সুসমাচার প্রচার করে, তাহাদের চরণ কেমন শোভা পায়।’” এর আগে কখনও এতখানি জোর কদমে প্রচার করার দরকার পড়েনি যতখানি কিনা আজকে দরকার। তাই যিহোবার সাক্ষিরা খুবই তোড়জোড় নিয়ে প্রায় ৩৪০ ভাষায় বাইবেল ও বাইবেলের বইপত্র ছাপান ও লোকেদের হাতে তুলে দেন। এই কাজ করার জন্য বিভিন্ন দেশে যিহোবা সাক্ষিদের প্রধান কার্যালয় ও শাখা অফিসগুলোতে ১৮,০০০ জনেরও বেশি ভাইবোনেরা স্বেচ্ছায় কাজ করেন। সারা পৃথিবীতে প্রায় ৬০ লক্ষ যিহোবার সাক্ষিরা এই বইপত্রগুলোকে লোকেদের হাতে তুলে দেন।
৩. প্রচার কাজের ফলে কোন্ বড় কাজ হচ্ছে?
৩ ভাইবোনেদের এই কাজের ফল কী হয়েছে? প্রথম শতাব্দীর মতো আজকেও অনেক লোকেরা সত্য শিখে যিহোবার সাক্ষি হচ্ছেন। (প্রেরিত ২:৪১, ৪৬, ৪৭) এই প্রচার কাজের ফলে প্রকাশকেরা বেড়ে চলেছেন। কিন্তু এতে একটা বড় কাজ হচ্ছে। প্রচার কাজ যিহোবার নামে আসা দোষকে মুছে দেয় আর তাঁর নামকে পবিত্র করে। প্রচার কাজ প্রমাণ করে যে যিহোবাই একমাত্র সত্য ঈশ্বর। (মথি ৬:৯) শুধু তাই-ই নয় বাইবেল থেকে জ্ঞান নিয়ে লোকেদের জীবন ভাল পথে আসে আর তারা নতুন জগতে বেঁচে থাকার জন্য তৈরি হন।—প্রেরিত ১৩:৪৭.
৪. প্রেরিতেরা যাদের সুসমাচার শোনাতেন তাদের কতখানি ভালবাসতেন?
৪ প্রেরিতরা ভাল করে জানতেন যে সুসমাচার লোকেদের জীবন দেয়। যে লোকেদের কাছে তারা প্রচার করতেন তাদের তারা অন্তর দিয়ে ভালবাসতেন। এই ভালবাসা থিষলনীকীর ভাইদেরকে লেখা প্রেরিত পৌলের এই কথাগুলোয় ফুটে ওঠে: “সেইরূপে আমরা তোমাদিগকে স্নেহ করাতে কেবল ঈশ্বরের সুসমাচার নয়, আপন আপন প্রাণও তোমাদিগকে দিতে সন্তুষ্ট ছিলাম, যেহেতুক তোমরা আমাদের প্রিয়পাত্র হইয়াছিলে।” (১ থিষলনীকীয় ২:৮) প্রেরিত পৌল ও অন্য প্রেরিতেরা যীশু ও অন্য স্বর্গদূতদের মতো লোকেদেরকে স্নেহ করতেন ও তাদেরকে সুসমাচার শোনানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন। আসুন আমরা এখন দেখি যে রাজ্যের সত্যের বীজ বোনার ব্যাপারে তাদের উদাহরণ কী করে আমাদেরকে উৎসাহ দেয়।
যীশু—রাজ্যের সত্যের বীজ বোনেন
৫. যীশুর চোখে কোন্ কাজ সবচেয়ে জরুরি ছিল?
৫ যীশু একজন সিদ্ধ মানুষ ছিলেন। তাঁর সময়ের লোকেদের সাহায্য করার শক্তি তাঁর ছিল। যেমন তিনি তাঁর দিনে অসুখবিশুখের ব্যাপারে লোকেদের অনেক ভুল ধারণাকে দূর করতে পারতেন। এছাড়া তিনি লোকেদের বিজ্ঞান সম্বন্ধে শেখাতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। বরং তিনি দেখিয়েছিলেন যে সুসমাচার প্রচার করাই তাঁর জন্য সবচেয়ে জরুরি কাজ। (লূক ৪:১৭-২১) আর মারা যাওয়ার কিছু সময় আগে তিনি তাঁর প্রচার কাজ সম্বন্ধে বলেছিলেন: “আমি এই জন্যই জন্মগ্রহণ করিয়াছি ও এই জন্য জগতে আসিয়াছি, যেন সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিই।” (যোহন ১৮:৩৭) তাই তিনি সবসময়ই রাজ্যের সত্যের বীজ বোনায় ব্যস্ত ছিলেন। তাঁর চোখে ঈশ্বর ও তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে লোকেদের বলাই সবচেয়ে জরুরি কাজ ছিল। আর এরচেয়ে ভাল শিক্ষা আর কী হতে পারে?—রোমীয় ১১:৩৩-৩৬.
৬, ৭. (ক) স্বর্গে যাওয়ার আগে যীশু কোন্ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন আর তিনি কীভাবে তা করে চলেছেন? (খ) প্রচার কাজের ব্যাপারে আপনি যীশুর কাছ থেকে কী শিখতে পারেন?
৬ যীশু বলেছিলেন যে তিনি নিজে রাজ্যের বীজ বুনছেন। (যোহন ৪:৩৫-৩৮) তিনি সব সুযোগে রাজ্যের বীজ বুনেছিলেন। এমনকি মারা যাওয়ার আগের মুহূর্তেও তিনি নতুন জগতের সুসমাচার শুনিয়েছিলেন। (লূক ২৩:৪৩) যীশুর সুসমাচার শোনানোর ইচ্ছা তাঁর মারা যাওয়ার পরেও শেষ হয়ে যায়নি। কারণ জীবিত হয়ে ওঠার পর ও স্বর্গে যাওয়ার আগে তিনি শিষ্যদের রাজ্যের বীজ বুনে চলার আজ্ঞা দিয়েছিলেন। শুধু তাই-ই নয় তিনি তাদের কাছে এই প্রতিজ্ঞাও করেছিলেন: “আর দেখ, আমিই যুগান্ত পর্য্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।”—মথি ২৮:১৯, ২০.
৭ এই প্রতিজ্ঞায় যীশু বলেছিলেন যে তিনি ‘যুগান্ত পর্য্যন্ত প্রতিদিন তাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকবেন।’ সুসমাচার প্রচার কাজে তাদের সাহায্য করবেন, তাদের নির্দেশ দেবেন আর তাদের রক্ষা করবেন। আজ পর্যন্ত যীশু প্রচার কাজে আগ্রহ দেখিয়ে চলেছেন। রাজ্যের সত্যের বীজ বোনার ব্যাপারে তিনি আমাদের আগে আগে চলেছেন। (মথি ২৩:১০) খ্রীষ্টান মণ্ডলীর মস্তক হিসেবে সারা পৃথিবীর প্রচার কাজের দায়িত্ব যিহোবা তাঁকে দিয়েছেন।—ইফিষীয় ১:২২, ২৩; কলসীয় ১:১৮.
স্বর্গদূতেরা সুসমাচার শোনান
৮, ৯. (ক) স্বর্গদূতেরা কীভাবে মানুষের ব্যাপারে আগ্রহ দেখান? (খ) আমরা কেন বলতে পারি যে স্বর্গদূতেরা আমাদের দর্শক?
৮ যিহোবা ঈশ্বর যখন পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন তখন স্বর্গদূতেরা “একসঙ্গে আনন্দরব করিল, . . . জয়ধ্বনি করিল।” (ইয়োব ৩৮:৪-৭) তখন থেকেই এই স্বর্গদূতেরা মানুষের ব্যাপারে খুব আগ্রহী। আর যিহোবা তাদের মানুষকে সুসমাচার শোনানোর কাজ দিয়েছেন। (গীতসংহিতা ১০৩:২০) বিশেষ করে আমাদের সময়ে সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তারা কাজ করছেন। প্রেরিত যোহন দর্শনে দেখেছিলেন যে এক স্বর্গদূত “আকাশের মধ্যপথে উড়িতেছেন,” যার কাছে “অনন্তকালীন সুসমাচার আছে, যেন তিনি পৃথিবী-নিবাসীদিগকে, প্রত্যক জাতি ও বংশ ও ভাষা ও প্রজাবৃন্দকে, সুসমাচার জানান; তিনি উচ্চ রবে এই কথা কহিলেন, ঈশ্বরকে ভয় কর ও তাঁহাকে গৌরব প্রদান কর, কেননা তাঁহার বিচার-সময় উপস্থিত।”—প্রকাশিত বাক্য ১৪:৬, ৭.
৯ বাইবেল এই স্বর্গদূতদের “সেবাকারী আত্মা” বলেছে যারা ‘পরিত্রাণের অধিকারী হইবে, তাহাদের পরিচর্য্যার জন্য প্রেরিত।’ (ইব্রীয় ১:১৪) আর এই স্বর্গদূতেরা খুশি মনে তাদের কাজ করেন। এছাড়া তারা আমাদের ও আমাদের কাজের ওপর নজর রাখেন। তাই প্রচার কাজ করার সময় আমরা যেন একটা মঞ্চে আছি আর স্বর্গদূতেরা আমাদের দর্শক। (১ করিন্থীয় ৪:৯) আমরা মনে কতই না জোর পাই যখন আমরা জানতে পারি যে আমাদের একা একা প্রচার কাজ করতে হচ্ছে না!
আমরা জোর কদমে প্রচার করি
১০. উপদেশক ১১:৬ পদের কথাগুলো কীভাবে আমাদের কাজের জন্য খাটে?
১০ আমাদের প্রচার কাজে যীশু ও স্বর্গদূতেরা কেন এত বেশি আগ্রহ দেখান? একটা কারণ যীশু বলেছিলেন যা আমরা লূক ১৫:১০ পদে পাই। তিনি বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, এক জন পাপী মন ফিরাইলে ঈশ্বরের দূতগণের সাক্ষাতে আনন্দ হয়।” আমাদেরও লোকেদের জন্য সমান আগ্রহ আছে তাই আমরা সব জায়গায় প্রচার করা, রাজ্যের বীজ বোনার জন্য যতটা পারা যায় ততটা করার চেষ্টা করি। বাইবেলের উপদেশক ১১:৬ পদের কথাগুলো আমাদের কাজের জন্য খাটে। সেখানে আমাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে: “তুমি প্রাতঃকালে আপন বীজ বপন কর, এবং সায়ংকালেও হস্ত নিবৃত্ত করিও না। কেননা ইহা কিম্বা উহা, কোন্টা সফল হইবে, কিম্বা উভয় সমভাবে উৎকৃষ্ট হইবে, তাহা তুমি জান না।” এটা ঠিক যে হয়তো একশ বা হাজার জনে একজন আমাদের কথা শোনে। কিন্তু দূতেদের মতো যখন মাত্র “একজন পাপী” সত্যে আসে, আমরা আনন্দ করি।
১১. বাইবেলের বইপত্রগুলো লোকেদের দেওয়া কতটা দরকারি?
১১ সুসমাচার প্রচার করার সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত। একটা জিনিস যা এই কাজকে সাহায্য করে তা হল যিহোবার সাক্ষিদের ছাপানো বাইবেলের বইপত্রগুলো। এই বইপত্রগুলো বীজের কাজ করে যা সব জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আমরা জানি না যে কোথায় সেগুলো অঙ্কুরিত হবে। কখনও কখনও এমন হয় যে আমরা বই কোন একজনকে দিয়েছি আর সেটা পড়েছেন অন্য কেউ। ভাল লোকেদের কাছে যাতে বই পৌঁছায় তারজন্য যীশু আর স্বর্গদূতেরা কখনও কখনও পরিস্থিতিকে পালটে দেন। এখন আসুন আমরা এমন কতগুলো উদাহরণ দেখি যেখানে দেখা যাবে যে যিহোবা কীভাবে লোকেদের পরিস্থিতি পালটে দেন যাতে তারা এই বইগুলো পড়ে সত্যে আসতে পারেন।
সত্য ঈশ্বরের কাজ
১২. কীভাবে একটা পুরনো পত্রিকা থেকে একটা পুরো পরিবার সত্য শিখেছেন?
১২ ১৯৫৩ সালে রোবার্ট ও লায়লা তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে একটা বড় শহর ছেড়ে আমেরিকা পেনসিলভেনিয়ার একটা ছোট্ট গ্রামে একটা ভাঙাচোরা খামারবাড়িতে এসে থাকতে শুরু করেন। কিছুদিন পরে রোবার্ট সিড়ির নিচে একটা বাথরুম বানানোর কথা ভাবেন। জায়গাটা পরিষ্কার করতে গিয়ে দেওয়ালের পিছন দিকে তিনি পুরনো ভাঙাচোড়া জিনিসপাতি, ইঁদুরে কাটা কাগজ ও আখরোটের খোলা দেখতে পান। সেগুলো সরাতে গিয়ে তিনি একটা গোল্ডেন এজ পত্রিকা কুড়িয়ে পান। ছেলেমেয়েদের মানুষ করে তোলার বিষয়ে পত্রিকায় যে প্রবন্ধটা ছিল সেটা রোবার্টের খুব ভাল লেগেছিল। সেখানে বাইবেল থেকে কিছু পরামর্শ দেওয়া ছিল আর রবার্টের সেগুলো এত ভাল লেগেছিল যে সে লায়লাকে বলে, “আমরা গোল্ডেন এজ পত্রিকার লোকেদের ধর্ম নেব।” মাত্র কিছু সপ্তার মধ্যে যিহোবার সাক্ষিরা তাদের ঘরে আসেন। কিন্তু রোবার্ট তাদের বলেন যে আমরা শুধু “গোল্ডেন এজ পত্রিকার লোকেদের ধর্ম” নিতে চাই। সাক্ষিরা বলেন যে এখন এই পত্রিকার নাম পালটে হয়েছে সচেতন থাক! রোবার্ট ও লায়লা যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল স্টাডি শুরু করেন ও বাপ্তিস্ম নেন। পরে তারা তাদের ছেলেমেয়েদের মধ্যেও রাজ্যের সত্যের বীজ বোনেন। আজকে রোবার্ট ও লায়লার ৭ ছেলেমেয়ে ও আরও আত্মীয়স্বজন মিলিয়ে মোট ২০ জন সত্য শিখেছেন ও যিহোবার সেবা করছেন।
১৩. পুয়ের্টো রিকোতে কেন এক দম্পতি বাইবেল স্টাডি শুরু করেন?
১৩ চল্লিশ বছর আগেকার কথা। উইলিয়াম আর এডা পুয়ের্টো রিকোয় থাকেন। বাইবেল অধ্যয়ন করার ইচ্ছা এই দম্পতির একেবারেই নেই। যখনই যিহোবার সাক্ষিরা তাদের দরজায় কড়া নাড়ত তারা ঘরের মধ্যে এমনভাবে চুপচাপ বসে থাকতেন যেন ঘরে কেউ নেই। একদিন উইলিয়াম ঘরের কিছু মেরামত করার জিনিস কেনার জন্য দোকানে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে ময়লার গাদায় তিনি একটা হলদেটে সবুজ রঙের বই পড়ে থাকেত দেখেন। বইটার নাম ছিল রিলিজিয়ন যেটা যিহোবার সাক্ষিরা ১৯৪০ সালে ছাপিয়েছিলেন। উইলিয়াম বইটা ঘরে নিয়ে আসেন ও পড়তে শুরু করেন। যখন তিনি সত্য ও মিথ্যা ধর্মের মধ্যে পাথর্ক্য বুঝতে পারেন তিনি খুব খুশি হন। আর পরের বার যখন যিহোবার সাক্ষিরা তাদের ঘরে আসেন তখন তারা খুব খুশি হয়ে তাদের কথা শোনেন আর বাইবেল স্টাডি শুরু করেন। কিছু মাস পরে ১৯৫৮ সালের ঈশ্বরের ইচ্ছা আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তারা দুজনে বাপ্তিস্ম নেন। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত ৫০ জনেরও বেশি লোককে তারা সত্যে এনেছেন।
১৪. এই উদাহরণ থেকে আমরা কীভাবে দেখতে পাই যে বাইবেলের বইপত্রগুলো কতখানি কাজ করতে পারে?
১৪ এগারো বছরের কার্ল খুবই দুষ্টু আর দুরন্ত ছিল। সবসময়ই সে কিছু না কিছু দুষ্টুমি করছেই। তার বাবা জার্মান মেথডিস্ট গির্জার প্রচারক ছিলেন আর তিনি কার্লকে শিখিয়েছিলেন যে মারা যাওয়ার পর দুষ্টু লোকেদের নরকে পোড়ান হয় আর তাদের যন্ত্রণা দেওয়া হয়। তাই কার্লের মনে নরকের ভয় ঢুকে গিয়েছিল। ১৯১৭ সালে একদিন কার্ল রাস্তায় একটা কাগজ পড়ে থাকতে দেখে সেটা কুড়িয়ে নেয়। কাগজটা পড়তে পড়তে তার চোখ একটা জায়গায় এসে আটকে যায়। যেখানে লেখা ছিল: “নরক কী?” আসলে এটাতে নরকের বিষয়ে এক বক্তৃতার কথা লেখা ছিল যেটা বাইবেলের ছাত্র এখন যাদের নাম যিহোবার সাক্ষি তারা দেবেন। কার্ল স্টাডি শুরু করে আর প্রায় এক বছর পরে বাপ্তিস্ম নিয়ে বাইবেলের ছাত্র হয়। ১৯২৫ সালে তাকে যিহোবার সাক্ষিদের প্রধান কার্যালয়ে কাজ করার জন্য ডাকা হয় আর আজ পর্যন্ত প্রায় ৪০ বছর ধরে তিনি সেখানে কাজ করছেন।
১৫. কোন কোন সময় যিহোবা ঈশ্বর কী করেন?
১৫ এটা ঠিক যে এই ঘটনাগুলোয় স্বর্গদূতেরা কতখানি সাহায্য করেছেন তা বোঝা মানুষের সাধ্যের বাইরে। কিন্তু আমাদের সন্দেহ করার কোন কারণই নেই যে যীশু ও স্বর্গদূতেরা খুবই আগ্রহ নিয়ে প্রচার কাজ করছেন। আর কোন কোন সময় যিহোবা ঈশ্বর সরাসরি তাদের পথ দেখান। এই ঘটনাগুলো দেখায় যে আমাদের বইপত্রগুলো লোকেদের জীবনে কত বড় কাজ করে।
আমাদের এক ধন দেওয়া হয়েছে
১৬. ২ করিন্থীয় ৪:৭ পদ থেকে আমরা কী জানতে পারি?
১৬ প্রেরিত পৌল ‘মাটির পাত্রে রাখা’ এক ‘ধনের’ কথা বলেছিলেন। এই ধন হল প্রচার কাজ যা যিহোবা ঈশ্বর আমাদের দিয়েছেন। আর আমরা হচ্ছি মাটির পাত্র। যেহেতু আমরা অসিদ্ধ আর পাপী তাই এই কাজ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বর আমাদের “অসাধারণ মহাশক্তি” দেন যা “আমাদের নিজেদের কাছ থেকে আসেনি বরং ঈশ্বরের কাছ থেকেই এসেছে।” (২ করিন্থীয় ৪:৭, প্রে.বা.) হ্যাঁ, আমরা যাতে আমাদের কাজ শেষ করতে পারি তারজন্য যিহোবা আমাদের নিশ্চয়ই সাহায্য করবেন।
১৭. প্রচার করতে গিয়ে আমাদের অনেক সময়ই কী করতে হয় আর তবুও আমাদের কেন প্রচার করে চলা উচিত?
১৭ প্রচার করতে গিয়ে আমাদের অনেক সময়ই বেশ ত্যাগস্বীকার করতে হয়। কোন কোন জায়গায় প্রচার করতে হয়তো খুবই অসুবিধা হয়। লোকেরা বিরোধিতা করে। কোন কোন জায়গায় লোকেরা একেবারে শুনতেই চায় না, অনেক খাটাখাটনি করেও কোন ভাল ফল পাওয়া যায় না। কিন্তু তবুও আমাদের প্রচার করে চলা উচিত। কারণ যখন আমরা বুঝি যে প্রচার করার সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত আছে তখন আমাদের পিছিয়ে পড়ার কথা মনে আসা উচিত নয়। ভেবে দেখুন, যে সত্যের বীজ আপনি লোকেদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছেন তা তাদের আজকে সুখী করবে আর ভবিষ্যতেও তাদের চিরকালীন জীবন দেবে। তাই গীতসংহিতা ১২৬:৬ পদের কথাগুলো অনেক সময় সত্যি হয়েছে যেখানে লেখা আছে: “যে ব্যক্তি রোদন করিতে করিতে বপনীয় বীজ লইয়া বাহিরে যায়, সে আনন্দগান-সহ আপন আটি লইয়া আসিবেই আসিবে।”
১৮. প্রচার কাজ করার সময় আমরা কোন্ বিষয়গুলো বেশি করে খেয়াল রাখব ও কেন?
১৮ তাই আসুন আমরা প্রত্যেকটা সুযোগে রাজ্যের সত্যের বীজ বুনি। আমরা যেন ভুলে না যাই যে বীজ যদিও আমরা বুনছি, জল যদিও আমরা দিচ্ছি, যিহোবা সেটাকে বাড়াবেন। (১ করিন্থীয় ৩:৬, ৭) যেমন যীশু ও স্বর্গদূতেরা তাদের কাজ করে চলেছেন সেইরকমই যিহোবা ঈশ্বর আপনার কাছ থেকেও চান যে আপনিও আপনার কাজ করুন। (২ তীমথিয় ৪:৫) সেইজন্য আসুন প্রচার কাজ করার সময় আমরা কীভাবে অন্যদের শেখাচ্ছি, তাদের ব্যাপারে আমরা কী মনে করি ও আমরা জোর কদমে প্রচার করছি কিনা এই বিষয়গুলো বেশি করে খেয়াল রাখি। কিন্তু কেন? প্রেরিত পৌল আমাদের উত্তর দেন: “তাহা করিলে তুমি আপনাকে ও যাহারা তোমার কথা শুনে, তাহাদিগকেও পরিত্রাণ করিবে।”—১ তীমথিয় ৪:১৬.
আমরা কী শিখেছি?
• কীভাবে আমাদের বীজ বোনা ভাল ফল নিয়ে আসছে?
• আজকে যীশু ও স্বর্গদূতেরা কীভাবে প্রচার কাজ করছেন?
• আমরা কেন সবসময় ও সব জায়গায় রাজ্যের সত্যের বীজ বুনব?
• প্রচারে গিয়ে যখন লোকেরা শুনতে চায় না বা বিরোধিতা করে তখন কী আমাদের প্রচার করে চলতে সাহায্য করে?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
পুরনো দিনের ইস্রায়েল চাষীদের মতো আজকে খ্রীষ্টানেরা সবসময় ও সব জায়গায় রাজ্যের সত্যের বীজ বোনেন
[১৫, ১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবার সাক্ষিরা ৩৪০ ভাষায় বাইবেলের নানারকম বইপত্র ছাপায় ও লোকেদের হাতে দেন