সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পাঠকদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠকদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠকদের থেকে প্রশ্নসকল

 যিশাইয় ৫৩ অধ্যায়ে খ্রীষ্টের বিষয়ে একটা বিশেষ ভবিষ্যদ্বাণী আছে। এই অধ্যায়ের ১০ পদ বলে: “তাঁহাকে চূর্ণ করিতে সদাপ্রভুরই মনোরথ ছিল; তিনি তাঁহাকে যাতনাগ্রস্ত করিলেন।” এই কথাগুলোর মানে কী?

যিশাইয় ৫৩:১০ পদের ওপর কেন এই প্রশ্ন ওঠে তা বোঝা খুবই সহজ। কারণ যিহোবার উপাসকেরা এ কথা ভাবতেই পারেন না যে আমাদের দয়ালু ও প্রেমময় ঈশ্বর কাউকে চূর্ণ করে ও যাতনা দিয়ে খুশি হবেন। এ বিষয়ে বাইবেল আমাদের পরিষ্কার বলে যে যিহোবা কোন নির্দোষীকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পান না। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪; যিরমিয় ৭:৩০, ৩১) পুরো ইতিহাস জুড়ে যিহোবা ঈশ্বর এই পৃথিবীতে কোন কোন সময়ের জন্য দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন কারণ তিনি জানতেন যে এটাই বিজ্ঞতার কাজ। আবার প্রেমের কারণেও যিহোবা কখনও কখনও তা করেছেন। কিন্তু যীশুর বিষয়ে আমরা জানি যে ঈশ্বর তাঁর প্রিয় পুত্রকে এভাবে যাতনা দিতে পারেন না। তাহলে এই কথাগুলোর আসল মানে কী?

পুরো পদটা যদি আমরা পড়ি, তাহলে আমরা এর মানে বুঝতে পারব। আপনি নিশ্চয় দেখেছেন যে এখানে দুবার “মনোরথ” কথাটা বলা হয়েছে। যিশাইয় ৫৩:১০ পদে আমরা পড়ি: “তাঁহাকে চূর্ণ করিতে সদাপ্রভুরই মনোরথ ছিল; তিনি তাঁহাকে যাতনাগ্রস্ত করিলেন, তাঁহার প্রাণ যখন দোষার্থক বলি উৎসর্গ করিবে, তখন তিনি আপন বংশ দেখিবেন, দীর্ঘায়ু হইবেন, এবং তাঁহার হস্তে সদাপ্রভুর মনোরথ সিদ্ধ হইবে।”

আমরা জানি যে বাইবেল বলে ঈশ্বর তাঁর রাজ্যের মাধ্যমে তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করে খুশি হন আর যিশাইয় ৫৩:১০ পদের শেষে বলা “সদাপ্রভুর মনোরথ” কথাগুলো থেকেও তাই বোঝা যায়। এর থেকে প্রমাণ হয় যে সারা পৃথিবীর ওপর শাসন করার অধিকার শুধু যিহোবারই আছে। শুধু তাই নয় আদমের কাছ থেকে আমরা যে পাপ পেয়েছি তাও তিনি সরিয়ে দেবেন। (১ বংশাবলি ২৯:১১; গীতসংহিতা ৮৩:১৮; প্রেরিত ৪:২৪; ইব্রীয় ২:১৪, ১৫; ১ যোহন ৩:৮) আর এই সব কিছুর জন্য ঈশ্বরের পুত্রকে মানুষ হয়ে জন্মাতে হয়েছিল ও আমাদের জন্য মুক্তির মূল্য দিতে হয়েছিল। আমরা সকলেই জানি যে মুক্তির মূল্য দিতে গিয়ে যীশুকে কীরকম কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিল। বাইবেল আমাদের বলে যে তিনি “যে সকল দুঃখভোগ করিয়াছিলেন, তদ্দ্বারা আজ্ঞাবহতা শিক্ষা করিলেন।” তাই কষ্ট ভোগ করে যীশু নিজেও লাভবান হয়েছিলেন।—ইব্রীয় ৫:৭-৯.

যীশু আগে থেকেই জানতেন যে তাঁকে এইরকম কষ্ট সহ্য করতে হবে। আর তা আমরা যোহন ১২:২৩, ২৪ পদে লেখা তাঁরই কথাগুলো থেকে জানতে পারি। সেখানে লেখা আছে: “সময় উপস্থিত, যেন মনুষ্যপুত্ত্র মহিমান্বিত হন। সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, গোমের বীজ যদি মৃত্তিকায় পড়িয়া না মরে, তবে তাহা একটীমাত্র থাকে; কিন্তু যদি মরে, তবে অনেক ফল উৎপন্ন করে।” হ্যাঁ, যীশু জানতেন যে তাঁকে যত দুঃখ কষ্টই ভোগ করতে হোক না কেন, তাঁকে মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বস্ত থাকতে হবে। এর পরের পদগুলো আরও জানায়: “এখন আমার প্রাণ উদ্বিগ্ন হইয়াছে; ইহাতে কি বলিব? পিতঃ এই সময় হইতে আমাকে রক্ষা কর? কিন্তু ইহারই নিমিত্ত আমি এই সময় পর্য্যন্ত আসিয়াছি। পিতঃ, তোমার নাম মহিমান্বিত কর। তখন স্বর্গ হইতে এই বাণী হইল, ‘আমি তাহা মহিমান্বিত করিয়াছি, আবার মহিমান্বিত করিব।’”—যোহন ১২:২৭, ২৮; মথি ২৬:৩৮, ৩৯.

এই সমস্ত বিষয় থেকে আমরা যিশাইয় ৫৩:১০ পদের মানে ভালভাবে বুঝতে পারি। যিহোবা ঈশ্বর ভাল করেই জানতেন যে পৃথিবীতে তাঁর পুত্রকে যে দুঃখ কষ্ট ভোগ করতে হবে তার মানে হবে তাঁকে চূর্ণ করা। কিন্তু যীশুর চূর্ণ হওয়া মানুষ জাতির জন্য লাভের ছিল আর তা যিহোবার নামের মহিমা নিয়ে এসেছিল। এই কথা মনে রেখেই যিহোবা যীশুকে এইরকম কষ্ট ভোগ করতে দিয়েছিলেন। আর এই অর্থে ‘তাঁহাকে চূর্ণ করা যিহোবার মনোরথ ছিল।’ যীশুও এই সবকিছু করতে ও তার থেকে যে ফল পাওয়া যাবে তাতে খুশি ছিলেন। তাই যিশাইয় ৫৩:১০ পদের কথাগুলো কতই না সত্যি যেখানে বলা আছে ‘তাঁহার হস্তে সদাপ্রভুর মনোরথ সিদ্ধ হইয়াছিল।’