আমাদের মূল্যবান উত্তরাধিকার—আপনার কাছে কী অর্থ রাখে?
আমাদের মূল্যবান উত্তরাধিকার—আপনার কাছে কী অর্থ রাখে?
“আইস, আমার পিতার আশীর্ব্বাদ-পাত্রেরা, জগতের পত্তনাবধি যে রাজ্য তোমাদের জন্য প্রস্তুত করা গিয়াছে, তাহার অধিকারী হও।”—মথি ২৫:৩৪.
১. সমস্ত মানুষ উত্তরাধিকারসূত্রে কী পেয়েছে?
সব মানুষই উত্তরাধিকার হিসেবে কিছু না কিছু পায়। কেউ কেউ হয়তো উত্তরাধিকারসূত্রে বিপুল ধনসম্পত্তি পায়, যা দিয়ে সে সুখস্বাচ্ছন্দ্যে জীবন কাটায়। আবার কেউ কেউ উত্তরাধিকারসূত্রে গরিবই থেকে যায়। অনেক সময় দেখা যায় যে আগের প্রজন্ম অন্য একটা জাতিকে প্রচণ্ড ঘৃণা করত বলে পরের প্রজন্মও সেই জাতিকে ঘৃণা করে। কিন্তু, একটা জিনিস উত্তরাধিকারসূত্রে আমরা সবাই-ই পেয়েছি। প্রথম মানুষ আদমের কাছ থেকে আমরা উত্তরাধিকার হিসেবে পাপ পেয়েছি। আর সেই উত্তরাধিকার আমাদেরকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।—উপদেশক ৯:২, ১০; রোমীয় ৫:১২.
২, ৩. আদম ও হবাকে ঈশ্বর প্রথমে কোন্ উত্তরাধিকার দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু তারা কেন সেটা পায়নি?
২ যিহোবা আমাদের প্রেমময় পিতা। উত্তরাধিকার হিসেবে প্রথমে মানুষকে তিনি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা জিনিস দিতে চেয়েছিলেন আর তা হল, পরমদেশ পৃথিবীতে সিদ্ধ শরীর নিয়ে চিরকাল বেঁচে থাকা। আমাদের প্রথম বাবামা আদম ও হবার কোন পাপ ছিল না আর তারা সিদ্ধভাবেই তাদের জীবন শুরু করেছিল। যিহোবা ঈশ্বর উপহার হিসেবে মানুষদের পৃথিবীতে থাকতে দিয়েছিলেন। (গীতসংহিতা ১১৫:১৬) তিনি এদন উদ্যানকে নমুনা হিসেবে তৈরি করেছিলেন, যাতে সারা পৃথিবী একসময় এরকম হয় আর সেখানে তিনি আমাদের প্রথম বাবামাকে এক দারুণ ও চমৎকার কাজ দিয়েছিলেন। তাদেরকে সন্তান জন্ম দেওয়ার, ওই বাগানের দেখাশোনা করার, সমস্ত গাছপালা ও পশুপাখিদের যত্ন নেওয়ার এবং পরমদেশের সীমানা বাড়ানোর কাজ দেওয়া হয়েছিল। (আদিপুস্তক ১:২৮; ২:৮, ৯, ১৫) তাদের সন্তানরাও এই কাজ করতে পারত। আদম ও হবা তাদের সন্তানদেরকে কী এক অপূর্ব উত্তরাধিকারই না দিতে পারত!
৩ কিন্তু, এই চমৎকার কাজগুলো করার জন্য আদম-হবা ও তাদের সন্তানদের ঈশ্বরের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রাখার দরকার ছিল। যিহোবাকে ভালবাসতে ও তাঁর কথা শুনতে আদম-হবা বাধ্য ছিল কিন্তু যিহোবা তাদেরকে যে উত্তরাধিকার দিয়েছিলেন তার জন্য তারা উপলব্ধি দেখায়নি আর তাঁর কথারও বাধ্য থাকেনি। এইজন্য ঈশ্বর তাদেরকে পরমদেশ থেকে বের করে দিয়েছিলেন ও তাদের জন্য যে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রেখেছিলেন তা তারা হারিয়েছিল। তাই, তাদের সন্তানদের জন্য উত্তরাধিকার হিসেবে তারা সুন্দর ভবিষ্যৎ রেখে যেতে পারেনি।—আদিপুস্তক ২:১৬, ১৭; ৩:১-২৪.
৪. আদম যে উত্তরাধিকার হারিয়েছিল, তা আমরা কীভাবে পেতে পারি?
৪ আদম ও হবা নিজের ভুলের জন্য যে উত্তরাধিকার হারিয়েছিল তা যাতে তাদের সন্তানরা পেতে পারে এইজন্য ঈশ্বর করুণা দেখিয়ে ব্যবস্থা করেছিলেন। কীভাবে? ঈশ্বরের নিরূপিত সময়ে তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্ট, আদমের সন্তানদের জন্য তাঁর নিজের সিদ্ধ জীবন দিয়েছিলেন। এর মাধ্যমে খ্রীষ্ট তাদের সবাইকে কিনে নিয়েছিলেন। কিন্তু, তাই বলে তারা এমনি এমনি সেই উত্তরাধিকার পেয়ে যাবে না। এর জন্য তাদেরকেও ঈশ্বরের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। আর মানুষের পাপের প্রায়শ্চিত্তের জন্য যীশু যে তাঁর সিদ্ধ জীবন দিয়েছিলেন, সেই বলিদানে বিশ্বাস করে এবং ঈশ্বরের বাধ্য হয়ে তারা তাঁর সঙ্গে ভাল সম্পর্ক করতে পারে। (যোহন ৩:১৬, ৩৬; ১ তীমথিয় ২:৫, ৬; ইব্রীয় ২:৯; ৫:৯) আপনার রোজকার জীবনযাপন দেখে কি বোঝা যায় যে এই ব্যবস্থার জন্য আপনার উপলব্ধি আছে?
অব্রাহামের মাধ্যমে এক উত্তরাধিকার
৫. অব্রাহাম কীভাবে দেখিয়েছিলেন যে যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্কের প্রতি তার উপলব্ধি আছে?
৫ যিহোবা পৃথিবীর জন্য যে উদ্দেশ্য রেখেছিলেন, তা পূর্ণ করার জন্য তিনি অব্রাহামের সঙ্গে এক বিশেষ চুক্তি করেছিলেন। যিহোবা বিশ্বস্ত অব্রাহামকে তার নিজের দেশ ছেড়ে তিনি তাকে যে দেশ দেখাবেন সেখানে যেতে বলেছিলেন। অব্রাহাম ঈশ্বরের কথা শুনেছিলেন। সেখানে পৌঁছাবার পর, যিহোবা তাকে বলেছিলেন যে সে নয় কিন্তু তার বংশ উত্তরাধিকার হিসেবে সেই দেশ পাবে। (আদিপুস্তক ১২:১, ২, ৭) এই কথা শুনে অব্রাহাম কী করেছিলেন? তার বংশধরেরা যাতে উত্তরাধিকার হিসেবে সেই দেশ পেতে পারে তার জন্য অব্রাহাম যিহোবার কথা মতো কাজ করতে তৈরি ছিলেন। অব্রাহাম শুধু ১০০ বছর ধরে যিহোবাকে সেবা করেননি কিন্তু তার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত যিহোবার সেবা করেছিলেন। (আদিপুস্তক ১২:৪; ২৫:৮-১০) আপনি যদি তার জায়গায় থাকতেন, তাহলে আপনিও কি তা-ই করতেন? যিহোবা অব্রাহামকে তাঁর “বন্ধু” বলেছিলেন।—যিশাইয় ৪১:৮.
৬. (ক) অব্রাহাম তার পুত্রকে বলি দিতে চেয়ে কী দেখিয়েছিলেন? (খ) অব্রাহাম তার সন্তানদের জন্য কোন্ মূল্যবান উত্তরাধিকার রেখে গিয়েছিলেন?
৬ অব্রাহাম অনেক বছর ধরে একটা ছেলের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন আর তার সেই ছেলে ইস্হাককে তিনি অনেক ভালবাসতেন। ইস্হাক যখন যুবক তখন অব্রাহামকে যিহোবা বলেছিলেন, তিনি যেন তার ছেলেকে যিহোবার উদ্দেশে বলি দেন। অব্রাহাম জানতেন না যে যিহোবা নিজের প্রিয় পুত্রকে ভবিষ্যতে মুক্তির মূল্য হিসেবে দান করবেন আর তাকে এখন সেটাই দেখাতে বলা হচ্ছে। কিন্তু, তারপরও তিনি ঈশ্বরের বাধ্য হয়ে ইস্হাককে বলি দেওয়ার জন্য ছুরি তুলেছিলেন আর তখনই যিহোবার দূত তাকে থামিয়ে দিয়েছিলেন। (আদিপুস্তক ২২:৯-১৪) যিহোবা আগেই অব্রাহামকে বলেছিলেন যে তিনি ইস্হাকের মাধ্যমে তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পূর্ণ করবেন। তাই, অব্রাহামের পুরো বিশ্বাস ছিল যে দরকার হলে যিহোবা ইস্হাককে আবার জীবন দিতে পারেন, যদিও তখন পর্যন্ত যিহোবা কোন মৃত ব্যক্তিকে জীবন দেননি। (আদিপুস্তক ১৭:১৫-১৮; ইব্রীয় ১১:১৭-১৯) অব্রাহাম তার পুত্রকে বলি দিতেও পিছপা হননি বলে যিহোবা বলেছিলেন: “তোমার বংশে পৃথিবীর সকল জাতি আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইবে।” (আদিপুস্তক ২২:১৫-১৮) এই কথা থেকে বোঝা গিয়েছিল যে আদিপুস্তক ৩:১৫ পদে যে বংশের কথা বলা হয়েছে, সেই ত্রাণকর্তা মশীহ অব্রাহামের বংশেই আসবেন। রেখে যাওয়ার মতো কত মূল্যবান উত্তরাধিকারই না তা ছিল!
৭. অব্রাহাম, ইস্হাক ও যাকোব কীভাবে তাদের উত্তরাধিকারের জন্য উপলব্ধি দেখিয়েছিলেন?
৭ যিহোবা তখন যা করেছিলেন তার অর্থ অব্রাহাম বুঝতে পারেননি; তার ছেলে ইস্হাক বা নাতি যাকোব, যারা “সেই প্রতিজ্ঞার সহাধিকারী” তারাও কিছু বুঝতে পারেননি। কিন্তু তারা সবাই যিহোবার ওপর ভরসা রেখেছিলেন। তারা অন্য কোন বড় নগরে চলে যাননি কারণ তারা এর চেয়েও ভাল কিছু অর্থাৎ “ভিত্তিমূলবিশিষ্ট সেই নগরের . . . যাহার স্থাপনকর্ত্তা ও নির্ম্মাতা ঈশ্বর” তার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। (ইব্রীয় ১১:৮-১০, ১৩-১৬) কিন্তু, অব্রাহামের বংশের সবাই-ই অব্রাহামের মাধ্যমে ঈশ্বর যে উত্তরাধিকার দিয়েছিলেন তার প্রতি উপলব্ধি দেখায়নি।
যারা উত্তরাধিকারকে তুচ্ছ করেছিল
৮. এষৌ কী করে দেখিয়েছিল যে উত্তরাধিকারের জন্য তার কোন উপলব্ধি নেই?
৮ ইস্হাকের বড় ছেলে এষৌ তার জন্মের অধিকারকে তুচ্ছ করেছিল। ঈশ্বরের দেওয়া পবিত্র সুযোগগুলোর জন্য সে কোন উপলব্ধি দেখায়নি। তাই, একদিন এষৌর যখন খুব খিদে পেয়েছিল তখন তার ভাই যাকোবের কাছে বড় ছেলে হিসেবে তার জন্মের অধিকারকে সে বিক্রি করে দিয়েছিল। কীসের বিনিময়ে? কয়েকটা রুটি ও সামান্য একটু ডালের জন্য! (আদিপুস্তক ২৫:২৯-৩৪; ইব্রীয় ১২:১৪-১৭) অব্রাহামের কাছে ঈশ্বর যে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তা যাকোবের থেকে আসা জাতির মাধ্যমে পূর্ণ হওয়ার ছিল। আর ঈশ্বর যাকোবের নাম বদলে ইস্রায়েল রেখেছিলেন। এই বিশেষ উত্তরাধিকার তাদের জন্য কোন্ সুযোগগুলো খুলে দিয়েছিল?
৯. যাকোব বা ইস্রায়েলের বংশের লোকেদের যিহোবা যে উত্তরাধিকার দেওয়ার কথা বলেছিলেন সেই প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী তিনি তাদেরকে কীসের থেকে উদ্ধার করেছিলেন?
৯ দুর্ভিক্ষের সময় যাকোব ও তার পরিবার মিশরে চলে গিয়েছিল। সেখানে তাদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছিল আর পরে তারা মিশরে দাস হয়েছিল। কিন্তু, অব্রাহামের সঙ্গে যিহোবা যে চুক্তি করেছিলেন, তা তিনি ভুলে যাননি। ঈশ্বর তাঁর নিরূপিত সময়ে ইস্রায়েল জাতিকে বন্দিত্ব থেকে মুক্ত করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে তিনি অব্রাহামকে যে দেশ দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, ইস্রায়েল জাতিকে সেই ‘দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশ’ দেবেন।—যাত্রাপুস্তক ৩:৭, ৮; আদিপুস্তক ১৫:১৮-২১.
১০. সীনয় পর্বতে কী ঘটেছিল?
১০ প্রতিজ্ঞাত দেশে যাবার পথে ইস্রায়েল জাতিকে যিহোবা সীনয় পর্বতে একত্র করেছিলেন। সেখানে তিনি তাদেরকে বলেছিলেন: “যদি তোমরা আমার রবে অবধান কর ও আমার নিয়ম পালন কর, তবে তোমরা সকল জাতি অপেক্ষা আমার নিজস্ব অধিকার হইবে, কেননা সমস্ত পৃথিবী আমার; আর আমার নিমিত্তে তোমরাই যাজকদের এক রাজ্য ও পবিত্র এক জাতি হইবে।” (যাত্রাপুস্তক ১৯:৫, ৬) যখন লোকেরা নিজের থেকে ও কোনরকম দ্বিধা না করে যিহোবার এই কথা মেনে নিয়েছিল তখন যিহোবা তাদেরকে তাঁর ব্যবস্থা দিয়েছিলেন, যা তিনি অন্য আর কোন জাতিকে দেননি।—গীতসংহিতা ১৪৭:১৯, ২০.
১১. ইস্রায়েল জাতিকে ঈশ্বর যে উত্তরাধিকার দিয়েছিলেন তার মধ্যে কিছু মূল্যবান জিনিস কী ছিল?
১১ এই নতুন জাতিকে ঈশ্বর কত বড় এক উত্তরাধিকারই না দিয়েছিলেন! তারা একমাত্র সত্য ঈশ্বরকে উপাসনা করত। যিহোবা তাদেরকে মিশর থেকে মুক্ত করেছিলেন এবং সীনয় পর্বতে যখন তাদেরকে ব্যবস্থা দিয়েছিলেন তখন তারা কিছু অলৌকিক ঘটনা দেখেছিল। তাদের উত্তরাধিকার আরও বেড়ে গিয়েছিল যখন তারা ভাববাদীদের মাধ্যমে “ঈশ্বরের বচনকলাপ” শুনেছিল। (রোমীয় ৩:১, ২) যিহোবা তাদেরকে তাঁর সাক্ষি হিসেবে মনোনীত করেছিলেন। (যিশাইয় ৪৩:১০-১২) তাদের বংশেই মশীহের আসার কথা ছিল। ওই ব্যবস্থায় মশীহের কথা বলা হয়েছিল, যাতে তারা মশীহকে চিনতে পারে এবং মশীহকে যে তাদের সত্যিই দরকার তা বুঝতে পারে। (গালাতীয় ৩:১৯, ২৪) এছাড়াও, তাদেরকে মশীহের সঙ্গে যাজকদের এক রাজ্য ও পবিত্র জাতি হিসেবে সেবা করার সুযোগ দেওয়া হবে।—রোমীয় ৯:৪, ৫.
১২. যদিও ইস্রায়েলীয়রা প্রতিজ্ঞাত দেশে যেতে পেরেছিল কিন্তু তারা কোথায় যেতে পারেনি? কেন?
১২ যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞা রেখেছিলেন ও ইস্রায়েলীয়দের প্রতিজ্ঞাত দেশে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু, প্রেরিত পৌল পরে বলেছিলেন যে তাদের বিশ্বাসের অভাব ছিল বলে ওই দেশ তাদের জন্য ‘বিশ্রাম স্থান’ ছিল না। জাতি হিসেবে তারা ‘ঈশ্বরের বিশ্রামে’ প্রবেশ করতে পারেনি কারণ তারা ঈশ্বরের বিশ্রাম দিনের উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে কাজ করতে পারেনি। আদম ও হবাকে সৃষ্টি করার পর থেকে ঈশ্বরের বিশ্রাম দিন শুরু হয়েছিল।—ইব্রীয় ৪:৩-১০.
১৩. ইস্রায়েল জাতি তাদের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারের প্রতি উপলব্ধি দেখায়নি বলে কোন্ সুযোগ হারিয়েছিল?
১৩ শুধু ইস্রায়েল জাতিই যাজকদের এক রাজ্য ও পবিত্র এক জাতি হিসেবে মশীহের সঙ্গে স্বর্গীয় রাজ্যে রাজত্ব করতে পারত। কিন্তু তারা তাদের মূল্যবান উত্তরাধিকারের প্রতি উপলব্ধি দেখায়নি। মশীহ যখন পৃথিবীতে এসেছিলেন তখন ইস্রায়েল জাতির অল্প কিছু লোক মশীহকে মেনে নিয়েছিলেন। আর এর ফলে, অল্প কিছু ইস্রায়েলীয় স্বর্গীয় রাজ্যের যাজক হতে পেরেছিলেন। ইস্রায়েলের কাছ থেকে ওই রাজ্য কেড়ে নেওয়া হয়েছিল আর ‘এমন এক জাতিকে দেওয়া হয়েছিল, যে জাতি তাহার ফল দিবে।’ (মথি ২১:৪৩) কারা সেই জাতি?
স্বর্গে উত্তরাধিকার
১৪, ১৫. (ক) যীশু মারা যাবার পর, কী করে অন্যান্য জাতিগুলো অব্রাহামের ‘বংশের’ মাধ্যমে আশীর্বাদ পেয়েছিলেন? (খ) “ঈশ্বরের ইস্রায়েলের” সদস্যরা উত্তরাধিকার হিসেবে কী লাভ করেন?
১৪ ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েল’ বা আত্মিক ইস্রায়েলকে ওই রাজ্য দেওয়া হয়েছিল, যাদের সংখ্যা ১,৪৪,০০০ জন। তারা সবাই যীশু খ্রীষ্টের আত্মায় জাত শিষ্য। (গালাতীয় ৬:১৬; প্রকাশিত বাক্য ৫:৯, ১০; ১৪:১-৩) এই ১,৪৪,০০০ জনের মধ্যে কেউ কেউ যিহুদি ছিলেন কিন্তু বেশির ভাগই অন্যান্য জাতি থেকে এসেছিলেন। এভাবেই অব্রাহামের কাছে করা যিহোবার এই প্রতিজ্ঞা পূর্ণ হয়েছিল যে অব্রাহামের ‘বংশে’ পৃথিবীর সমস্ত জাতি আশীর্বাদ পাবে। (প্রেরিত ৩:২৫, ২৬; গালাতীয় ৩:৮, ৯) এটা যখন প্রথম পূর্ণ হয়েছিল তখন বিভিন্ন জাতির লোকেদেরকে পবিত্র আত্মার মাধ্যমে অভিষিক্ত করা হয়েছিল এবং যিহোবা ঈশ্বর তাদেরকে আত্মিক পুত্র অর্থাৎ যীশু খ্রীষ্টের ভাই হিসেবে দত্তক নিয়েছিলেন। এভাবে তারাও ওই ‘বংশের’ গৌণ অংশ হয়েছিলেন।—গালাতীয় ৩:২৮, ২৯.
১৫ যীশু তাঁর মৃত্যুর আগে, নতুন জাতির ভাবী যিহুদি সদস্যদেরকে এক নতুন চুক্তির কথা বলেছিলেন যে এই নতুন চুক্তি তাঁর নিজ রক্তের গুণে কার্যকর হবে। খ্রীষ্টের বলিদানের ওপর তাদের বিশ্বাস আছে কিনা তার ওপর ভিত্তি করেই নতুন চুক্তির ব্যক্তিদেরকে “চিরকালের জন্য সিদ্ধ” করা হবে। (ইব্রীয় ১০:১৪-১৮) তাদেরকে “ধার্ম্মিক” বলা হবে এবং তাদের পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (১ করিন্থীয় ৬:১১) আর এই অর্থেই পাপ করার আগে আদম যেমন ছিলেন তারা তেমনই সিদ্ধ। কিন্তু, তারা পরমদেশ পৃথিবীতে থাকবেন না। যীশু বলেছিলেন যে তিনি তাদের জন্য স্বর্গে জায়গা তৈরি করতে যাচ্ছেন। (যোহন ১৪:২, ৩) ‘স্বর্গে তাদের নিমিত্ত যে দায়াধিকার [উত্তরাধিকার] সঞ্চিত রহিয়াছে,’ তা পাওয়ার জন্য তারা পৃথিবীর আশাকে ছেড়ে দেন। (১ পিতর ১:৪) তারা সেখানে কী করবেন? যীশু বলেছিলেন: ‘আমি . . . তোমাদের জন্য এক রাজ্য নিরূপণ করিতেছি।’—লূক ২২:২৯.
১৬. অভিষিক্ত খ্রীষ্টানরা ভবিষ্যতে কী কী কাজ করবেন?
১৬ স্বর্গে থেকে যারা খ্রীষ্টের সঙ্গে রাজত্ব করবেন তারা অনেক কাজ করবেন আর তার মধ্যে একটা হল, যিহোবার সার্বভৌমত্বকে যারা মেনে নিতে চায় না তাদেরকে ধ্বংস করে দিতে তারা যীশুকে সাহায্য করবেন। (প্রকাশিত বাক্য ২:২৬, ২৭) এছাড়া অব্রাহামের আত্মিক বংশের গৌণ অংশ হিসেবে, তারা সমস্ত জাতির লোকেদেরকে সিদ্ধ জীবন ফিরিয়ে দিতে যীশুর সঙ্গে কাজ করবেন। (রোমীয় ৮:১৭-২১) কত মূল্যবান এক উত্তরাধিকারই না তাদের রয়েছে!—ইফিষীয় ১:১৬-১৮.
১৭. পৃথিবীতে থাকা অবস্থায় অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা কোন্ উত্তরাধিকার লাভ করেন?
১৭ কিন্তু, যীশুর অভিষিক্ত শিষ্যরা এই পৃথিবীতেও কিছু উত্তরাধিকার পাবেন। যীশু যেভাবে তাদেরকে একমাত্র সত্য ঈশ্বর যিহোবার সম্বন্ধে জানিয়েছিলেন আর কেউ সেভাবে জানাতে পারতেন না। (মথি ১১:২৭; যোহন ১৭:৩, ২৬) তিনি মুখে বলে ও কাজের মাধ্যমে তাদেরকে শিখিয়েছিলেন যে ‘যিহোবার শরণাপন্ন থাকার’ ও তাঁর বাধ্য থাকার মানে কী। (ইব্রীয় ২:১৩; ৫:৭-৯) যীশু তাদেরকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে জানিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে তাদের ওপর পবিত্র আত্মা আসার পর তারা সেগুলো পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারবেন। (যোহন ১৪:২৪-২৬) ঈশ্বরের রাজ্য যে কতখানি জরুরি, তা তিনি তাদের মন ও হৃদয়ে গেঁথে দিয়েছিলেন। (মথি ৬:১০, ৩৩) এছাড়াও যীশু তাদেরকে যিরূশালেম, যিহুদিয়া, শমরীয়া এবং পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত প্রচার করার ও শিষ্য তৈরি করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন।—মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০; প্রেরিত ১:৮.
বিরাট জনতার জন্য এক মূল্যবান উত্তরাধিকার
১৮. অব্রাহামের ‘বংশে’ সমস্ত জাতি আশীর্বাদ পাবে, যিহোবার এই প্রতিজ্ঞা আজকে কী করে পূর্ণ হচ্ছে?
১৮ এটা স্পষ্ট যে রাজ্যের সহদায়াদ অর্থাৎ আত্মিক ইস্রায়েল বা ‘ক্ষুদ্র মেষপালের’ সকলকে নিয়ে নেওয়া হয়েছে। (লূক ১২:৩২) এরপর যিহোবা বিরাট জনতার দিকে মন দিয়েছেন। বেশ কিছু বছর ধরে সমস্ত জাতি থেকে তাদেরকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর ফলে অব্রাহামের কাছে করা যিহোবার প্রতিজ্ঞা আরও বড় আকারে পূর্ণ হচ্ছে যে তার ‘বংশে’ পৃথিবীর সমস্ত জাতি আশীর্বাদ পাবে। আনন্দের বিষয় হল, এই বিরাট জনতার লোকেরাও একমাত্র যিহোবাকে উপাসনা করেন এবং স্বীকার করেন যে ঈশ্বরের মেষশাবক যীশু খ্রীষ্টে বিশ্বাস করার ওপরই তাদের পরিত্রাণ নির্ভর করে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১০) যিহোবার ডাকে সাড়া দিয়ে আপনি কি এই সুখী লোকেদের একজন হয়েছেন?
১৯. বিরাট জনতা কোন্ উত্তরাধিকারের জন্য অপেক্ষা করে আছে?
১৯ যারা ক্ষুদ্র মেষের অংশ নন, তাদেরকে যিহোবা কোন্ মূল্যবান উত্তরাধিকার দেন? না, এটা স্বর্গে যাওয়ার সুযোগ নয়। এটা হল সেই উত্তরাধিকার, যা আদম তার সন্তানদের দিতে পারত আর তা হল পাপহীন জীবন নিয়ে পরমদেশ পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার ও ধীরে ধীরে পুরো পৃথিবীকে পরমদেশ বানানোর সুযোগ। পরমদেশ পৃথিবীতে “মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না।” (প্রকাশিত বাক্য ২১:৪) অতএব, ঈশ্বরের বাক্য যা বলে তা করা না করা আপনার ওপর: “সদাপ্রভুতে নির্ভর রাখ, সদাচরণ কর, দেশে বাস কর, বিশ্বস্ততাক্ষেত্রে চর। আর সদাপ্রভুতে আমোদ কর, তিনি তোমার মনোবাঞ্ছা সকল পূর্ণ করিবেন। আর ক্ষণকাল, পরে দুষ্ট লোক আর নাই . . . কিন্তু মৃদুশীলেরা দেশের অধিকারী হইবে, এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে। ধার্ম্মিকেরা দেশের অধিকারী হইবে, তাহারা নিয়ত তথায় বাস করিবে।”—গীতসংহিতা ৩৭:৩, ৪, ১০, ১১, ২৯.
২০. অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের বেশির ভাগ উত্তরাধিকার কী করে ‘অপর মেষেরাও’ পান?
২০ যীশুর “অপর মেষ”-রা স্বর্গীয় রাজ্যের অধীনে পৃথিবীতে এক উত্তরাধিরকার পাবেন। (যোহন ১০:১৬ক, NW) যদিও তারা স্বর্গে থাকবেন না কিন্তু অভিষিক্ত ব্যক্তিরা যে আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার পান তার বেশির ভাগই তাদেরকে দেওয়া হয়। অভিষিক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস”-দের মাধ্যমেই অপর মেষেরা, ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলে ঈশ্বরের যে মূল্যবান প্রতিজ্ঞাগুলো আছে সেগুলোকে পুরোপুরি বোঝার সুযোগ পাচ্ছেন। (মথি ২৪:৪৫-৪৭; ২৫:৩৪) অভিষিক্ত শ্রেণী ও অপর মেষেরা একসঙ্গে একমাত্র সত্য ঈশ্বর যিহোবাকে জানেন ও তাঁকে উপাসনা করেন। (যোহন ১৭:২০, ২১) পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে যীশু যে বলিদান দিয়েছেন তার জন্য তারা একসঙ্গে যিহোবাকে ধন্যবাদ জানান। একজন মেষপালক যীশু খ্রীষ্টের অধীনে তারা সেবা করেন। (যোহন ১০:১৬খ) তারা সবাই সারা পৃথিবীতে একই প্রেমময় ভ্রাতৃসমাজের অংশ। দুদলই যিহোবার সাক্ষি হওয়ার ও তাঁর রাজ্যের বিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। আপনি যদি যিহোবার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করে ও বাপ্তিস্ম নিয়ে তাঁর একজন সাক্ষি হয়ে থাকেন, তাহলে আপনিও এই সমস্ত উত্তরাধিকারের ভাগিদার।
২১, ২২. আমরা সবাই কী করে দেখাতে পারি যে আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারকে আমরা মূল্যবান মনে করি?
২১ আপনার কাছে এই আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার কতখানি মূল্যবান? আপনি কি ঈশ্বরের ইচ্ছা মেনে চলাকে আপনার জীবনে প্রথম স্থানে রেখে এটাকে মূল্যবান বলে দেখেন? ঈশ্বরের ইচ্ছাকে প্রথমে রেখে আপনি কি তাঁর বাক্য ও তাঁর সংগঠনের পরামর্শ শুনে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর মিটিংগুলোতে নিয়মিত আসেন? (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) সেই উত্তরাধিকার কি আপনার কাছে এতটাই মূল্যবান যে শত কষ্টের মধ্যেও আপনি ঈশ্বরকে সেবা করে যাবেন? এটার প্রতি আপনার কি গভীর উপলব্ধি আছে যে আপনি সমস্ত প্রলোভনকে মোকাবিলা করতে পারবেন, যাতে এই উত্তরাধিকার হারিয়ে না যায়?
২২ ঈশ্বর আমাদেরকে যে আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার দিয়েছেন সেটাকে আমরা সবাই যেন মূল্যবান মনে করি। আসুন আমরা পরমদেশের ওপর আমাদের চোখকে স্থির রাখি ও যিহোবা এখন আমাদেরকে যে আধ্যাত্মিক সুযোগগুলো দিচ্ছেন সেগুলো কাজে লাগাই। যিহোবার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলে আমরা দেখাই যে ঈশ্বর আমাদেরকে যে আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার দিয়েছেন, তা আমাদের কাছে অনেক মূল্যবান। আমরা যেন তাদের একজন হই, যারা বলেন: “আমি তোমার প্রতিষ্ঠা করিব, হে আমার ঈশ্বর, হে রাজন্, আমি অনন্তকাল তোমার নামের ধন্যবাদ করিব।”—গীতসংহিতা ১৪৫:১.
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• আদম যদি ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকত, তাহলে সে আমাদেরকে কোন্ উত্তরাধিকার দিতে পারত?
• অব্রাহামের সন্তানরা তাদের উত্তরাধিকারকে কীভাবে দেখেছিল?
• খ্রীষ্টের অভিষিক্ত শিষ্যদের উত্তরাধিকারের মধ্যে কী কী রয়েছে?
• বিরাট জনতার কোন্ উত্তরাধিকার রয়েছে এবং তারা কী করে দেখাতে পারে যে তারা এটাকে সত্যিই উপলব্ধি করে?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
অব্রাহামের সন্তানেরা এক মূল্যবান উত্তরাধিকার পেয়েছিল
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
আপনার আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারকে কি আপনি উপলব্ধি করেন?