‘কমনীয়া পাহাড়ি ছাগী’
‘কমনীয়া পাহাড়ি ছাগী’
একটা ছাগলের বর্ণনা দিতে গিয়ে আমরা নিশ্চয়ই কমনীয়া শব্দটা ব্যবহার করব না। ছাগলকে বড় জোর আমরা একটা উপকারী পশু বলতে পারি, যেগুলো যা পায় তা-ই খায়। যদিও ছাগলের মাংস খুবই সুস্বাদু ও দুধের পুষ্টিগুণ খুব বেশি, তবুও এগুলোকে আমরা কখনও কমনীয়া বলব না।
কিন্তু, বাইবেলে একজন স্ত্রীকে ‘প্রেমিকা হরিণী ও কমনীয়া বাতপ্রমীর [পাহাড়ি ছাগীর]’ সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। (হিতোপদেশ ৫:১৮, ১৯) হিতোপদেশ বইয়ের লেখক শলোমন, ইস্রায়েলের পশুপাখিদের খুব ভাল করে খেয়াল করতেন আর তাই কোন সন্দেহ নেই যে এই উপমা ব্যবহার করার সঠিক কারণ তার ছিল। (১ রাজাবলি ৪:৩০-৩৩) মনে হয় তার বাবা রাজা দায়ূদের মতো তিনিও পাহাড়ি ছাগলগুলোকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছিলেন। এগুলোকে লবণ সমুদ্রের কাছাকাছি ঐন্-গদীতে দেখা যেত।
পাহাড়ি ছাগলগুলো ছোট্ট ছোট্ট দলে ভাগ হয়ে যিহূদার মরুভূমির আশেপাশের এলাকায় চড়ে বেড়ায় আর ঐন্-গদীর ঝরণা থেকে জল খায়। যেহেতু এই মরুভূমির মধ্যে শুধু ঐন্-গদীর ঝরণায় জল পাওয়া যায় তাই শত শত বছর ধরে পাহাড়ি ছাগলগুলো ওই ঝরণা থেকেই জল খায়। এছাড়াও মনে হয় ঐন্-গদী নামের অর্থ হল “ছাগল ছানাদের ঝরণা” আর তাই বোঝা যায় যে সেখানে সবসময় ছোট্ট ছাগল ছানারা জল খেতে আসে। রাজা শৌল যখন দায়ূদকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন তখন দায়ূদ পালিয়ে “বনচ্ছাগের শৈল সকলের উপরে” আশ্রয় নিয়েছিলেন। (১ শমূয়েল ২৪:১, ২)
ঐন্-গদীতে আপনি এখনও দেখতে পাবেন যে পাহাড়ি ছাগীরা, ছাগলদের পেছনে পেছনে ধীরে ধীরে এবং সাবধানে পাহাড়ি খাতগুলো পার হয়ে ঝরণার কাছে নেমে যাচ্ছে। এবার আপনি হয়তো বুঝতে পারবেন যে কেন একজন বিশ্বস্ত স্ত্রীকে পাহাড়ি ছাগীর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। পাহাড়ি ছাগীর শান্ত ও মার্জিত স্বভাব, মেয়েদের গুণের কথা মনে করিয়ে দেয়। “কমনীয়া” কথাটা আসলে পরোক্ষভাবে পাহাড়ি ছাগীদের সৌন্দর্য এবং বাহ্যিক চেহারা সম্বন্ধে বলা হয়েছে।পাহাড়ি ছাগীরা দেখতে যেমন সুন্দর তেমনই তারা সহজেই হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নয়। যিহোবা ইয়োবকে বলেছিলেন যে পাহাড়ি ছাগীরা দুর্গম পাহাড়ে বাচ্চা জন্ম দেয়, যেখানে সহজে খাবার মেলে না এবং প্রচণ্ড গরম থাকে। (ইয়োব ৩৯:১) এত সব বাধা থাকা সত্ত্বেও সে তার বাচ্চাদের যত্ন নেয় এবং সে যেমন ক্ষিপ্রগতিতে পাহাড়ে চড়ে এবং এক পাথর থেকে আরেক পাথরে লাফ দেয়, তেমনই তার বাচ্চাদেরও তা শেখায়। শুধু তাই নয়, সে তার বাচ্চাকে শিকারির হাত থেকে সাহসের সঙ্গে রক্ষাও করে। একজন লোক দেখেছিলেন যে একটা পাহাড়ি ছাগী তার বাচ্চাকে বাঁচানোর জন্য একটা ঈগলের সঙ্গে আধ ঘন্টা লড়াই করেছিল। লড়াই করার সময় সে বাচ্চাটাকে আড়াল করে রেখেছিল।
একইভাবে খ্রীষ্টান স্ত্রী এবং মায়েদেরও তাদের ছেলেমেয়েদের খারাপ পরিবেশের মধ্যে মানুষ করতে হয়। যিহোবা তাদেরকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, পাহাড়ি ছাগীদের মতো তারাও তা মন দিয়ে ও নিঃস্বার্থভাবে পালন করেন। আর তারা তাদের ছেলেমেয়েদের আধ্যাত্মিক বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য সাহসের সঙ্গে লড়াই করেন। তাই স্ত্রীদের পাহাড়ি ছাগীর সঙ্গে তুলনা করে শলোমন তাদের ছোট করতে চাননি বরং তিনি স্ত্রীদের গুণাবলি ও সৌন্দর্য অর্থাৎ তাদের আধ্যাত্মিক গুণাবলির কথা বলতে চেয়েছিলেন, যা কঠিন সময়ের মধ্যেও দেখা যায়।
[পাদটীকা]
^ দ্যা নিউ ব্রাউন-ড্রাইভার-ব্রিগস্-জেসিনিয়াস হিব্রু আ্যন্ড ইংলিশ লেক্সিকন-এ ইব্রীয় শব্দ চেন-কে “কমনীয়া” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, যার অর্থ হল ‘সৌন্দর্য বা মার্জিত এবং বাইরের চেহারা।’
[৩০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
একজন খ্রীষ্টান স্ত্রী এবং মাকে ঈশ্বর যে দায়িত্বগুলো দিয়েছেন, সেগুলো পূরণ করার সময় তিনি তার আধ্যাত্মিক গুণগুলো দেখান