যিহোবার যোগ্যরূপে চলতে অন্যদের সাহায্য করুন
যিহোবার যোগ্যরূপে চলতে অন্যদের সাহায্য করুন
‘আমরা, . . . তোমাদের নিমিত্তে প্রার্থনা ও বিনতি করিতে ক্ষান্ত হই নাই, যেন তোমরা . . . প্রভুর [“যিহোবার,” NW] যোগ্যরূপে সর্ব্বতোভাবে প্রীতিজনক আচরণ কর, সমস্ত সৎকর্ম্মে ফলবান্ . . . হও।’—কলসীয় ১:৯, ১০.
১, ২. বিশেষ করে কোন্ বিষয়টা একজনকে আনন্দ এবং মনের শান্তি এনে দিতে পারে?
“আমরা এক খামারের ভিতরে একটা ট্রেইলারে থাকি। জীবনকে সাদাসিধে রাখায় আমরা অনেক লোকের কাছে সুসমাচার প্রচার করতে পারি। আর যিহোবা আমাদেরকে অপরিমেয় আশীর্বাদ করেছেন বলেই আমরা অনেককে তাদের জীবন যিহোবার কাছে উৎসর্গ করতে সাহায্য করার সুযোগ পেয়েছি।”—এক বিবাহিত দম্পতি, যারা দক্ষিণ আফ্রিকায় পূর্ণ-সময়ের পরিচারক হিসেবে কাজ করছেন।
২ অন্যদের সাহায্য করে আনন্দ পাওয়া যায়, এই কথার সঙ্গে কি আপনি একমত নন? অসুস্থ, গরিব অথবা অসহায় লোকেদের সাহায্য করে কেউ কেউ মনের শান্তি পান। সত্য খ্রীষ্টানরা জানেন, যিহোবা ঈশ্বর ও যীশু খ্রীষ্টের কথা অন্যদের কাছে জানানোর চেয়ে বড় আর কোনও সাহায্য নেই। একমাত্র সুসমাচার শুনেই অন্যরা যীশুর মুক্তির মূল্যে বিশ্বাস করতে, ঈশ্বরের সঙ্গে এক কাছের সম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং অনন্ত জীবনের পথে চলতে শুরু করতে পারে।—প্রেরিত ৩:১৯-২১; ১৩:৪৮.
৩. আমরা কোন্ ধরনের সাহায্য করতে চাই?
৩ কিন্তু, যারা ঈশ্বরকে সেবা করছেন ও ‘সেই পথে’ চলছেন তাদেরকে সাহায্য করার বিষয়ে কী বলা যায়? (প্রেরিত ১৯:৯) কোন সন্দেহ নেই যে, তাদের প্রতি আপনার আগ্রহ আছে কিন্তু আপনি হয়তো বুঝতে পারছেন না যে কীভাবে আপনি তাদেরকে আরেকটু বেশি অথবা সবসময় সাহায্য করে যেতে পারেন। কিংবা তাদেরকে সাহায্য করার মতো অবস্থা হয়তো আপনার নেই আর তাই আপনি মনে শান্তি পান না। (প্রেরিত ২০:৩৫) এই দুটো ব্যাপারেই আমরা কলসীয় বই থেকে শিখতে পারি।
৪. (ক) পৌল কী অবস্থায় কলসীর খ্রীষ্টানদের কাছে চিঠি লিখেছিলেন? (খ) ইপাফ্রা কীভাবে এই বিষয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন?
৪ কলসীর খ্রীষ্টানদের কাছে প্রেরিত পৌল যখন চিঠি লিখেছিলেন, তখন তিনি রোমে গৃহবন্দি ছিলেন কিন্তু অন্য লোকেরা তার সঙ্গে দেখা করতে পারত। পৌল তার এই সীমিত স্বাধীনতাকেও ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার জন্য কাজে লাগিয়েছিলেন। (প্রেরিত ২৮:১৬-৩০) খ্রীষ্টান ভাইবোনেরা পৌলের সঙ্গে দেখা করতে পারতেন, হয়তো কেউ কেউ তার সঙ্গে বন্দিও ছিলেন। (কলসীয় ১:৭, ৮; ৪:১০) এদের মধ্যে ইপাফ্রা ছিলেন একজন, যিনি উদ্যোগী সুসমাচার প্রচারক ছিলেন। তিনি ফরুগিয়ার কলসী শহর থেকে এসেছিলেন, যেটা ছিল এশিয়া মাইনরের (আধুনিক দিনের তুরস্ক) ইফিষ শহরের পূর্ব পাশে অবস্থিত একটা মালভূমি। ইপাফ্রা কলসীতে মণ্ডলী গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিলেন এবং কলসীর কাছাকাছি অবস্থিত লায়দিকেয়া ও হিয়রাপলির মণ্ডলীর জন্যও অনেক কাজ করেছিলেন। (কলসীয় ৪:১২, ১৩) কিন্তু, ইপাফ্রা কেন পৌলের সঙ্গে দেখা করতে রোমে গিয়েছিলেন আর তার সঙ্গে পৌলের কথা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
কলসীর খ্রীষ্টানদের জন্য উপযুক্ত সাহায্য
৫. কলসীর খ্রীষ্টানদের কাছে পৌল কেন চিঠি লিখেছিলেন?
৫ কলসীয় মণ্ডলীর অবস্থা নিয়ে পৌলের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য ইপাফ্রাকে অনেক কষ্টকর যাত্রা করে রোমে যেতে হয়েছিল। বিশ্বাস, ভালবাসা ও সুসমাচার প্রচার করার বিষয়ে ওখানকার খ্রীষ্টানদের যে চেষ্টা ছিল সেই কথা তিনি পৌলকে জানিয়েছিলেন। (কলসীয় ১:৪-৮) সেইসঙ্গে তিনি হয়তো সেই সমস্ত ক্ষতিকর প্রভাবগুলোর কথাও পৌলকে জানিয়েছিলেন, যেগুলো কলসীর খ্রীষ্টানদের আধ্যাত্মিক জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ইপাফ্রা সেই বিষয়ে খুবই চিন্তিত ছিলেন। আর তাই ঈশ্বরের আত্মার অনুপ্রেরণায় পৌল একটা চিঠি লিখে মিথ্যা শিক্ষকদের ভুল শিক্ষাগুলোর বিরুদ্ধে তাদেরকে সাবধান করে দিয়েছিলেন। বিশেষ করে যীশু খ্রীষ্টের মুখ্য ভূমিকার ওপর তিনি জোর দিয়েছিলেন। * কিন্তু, তিনি কি শুধু বাইবেলের মৌলিক সত্যের ওপরই জোর দিয়েছিলেন? আর কীভাবেই বা তিনি কলসীর খ্রীষ্টানদের সাহায্য করেছিলেন এবং অন্যদের সাহায্য করার ব্যাপারে আমরা তার কাছ থেকে কী শিখতে পারি?
৬. কলসীর খ্রীষ্টানদের কাছে লেখা চিঠিতে পৌল কোন্ বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছিলেন?
৬ চিঠির শুরুতেই পৌল এমন এক ধরনের সাহায্যের বিষয়ে বলেছিলেন, যা হয়তো আমরা পড়ার সময় খেয়াল নাও করতে পারি। পৌল ও ইপাফ্রা দুজনেই কলসী থেকে দূরে ছিলেন আর তাই তাদের এই চিঠি দূরে থেকেও এক উপযুক্ত সাহায্য ছিল। পৌল নিশ্চিত করে বলেছিলেন: “আমরা সর্ব্বদা তোমাদের নিমিত্তে প্রার্থনাকালে আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের পিতা ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিতেছি।” হ্যাঁ, এই প্রার্থনা নির্দিষ্ট করে শুধু কলসীর খ্রীষ্টানদের জন্যই করা হয়েছিল। পৌল আরও বলেছিলেন: “এই কারণ আমরাও, যে দিন সেই সংবাদ শুনিয়াছি, সেই দিন অবধি তোমাদের নিমিত্তে প্রার্থনা ও বিনতি করিতে ক্ষান্ত হই নাই, যেন তোমরা সমস্ত আত্মিক জ্ঞানে ও বুদ্ধিতে তাঁহার ইচ্ছার তত্ত্বজ্ঞানে পূর্ণ হও।”—কলসীয় ১:৩, ৯.
৭, ৮. ব্যক্তিগত ও মণ্ডলীর প্রার্থনাগুলোতে প্রায়ই কোন্ বিষয় থাকে?
৭ আমরা জানি যিহোবা “প্রার্থনা-শ্রবণকারী” আর তাই আমরা এই আস্থা রাখতে পারি যে, তাঁর ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে প্রার্থনা করলে তিনি আমাদের প্রার্থনা শুনবেনই শুনবেন। (গীতসংহিতা ৬৫:২; ৮৬:৬; হিতোপদেশ ১৫:৮, ২৯; ১ যোহন ৫:১৪) কিন্তু, আমরা যখন অন্যদের জন্য প্রার্থনা করি তখন আমরা কীভাবে তা করি?
৮ আমরা হয়তো ‘জগতে অবস্থিত আমাদের ভ্রাতৃবর্গের’ জন্য প্রায়ই চিন্তা করি ও প্রার্থনা করি। (১ পিতর ৫:৯) অথবা কোন জায়গার ভাইবোনেরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হলে বা তাদের জীবনে দুঃখজনক কিছু ঘটলে আমরা হয়তো তাদের জন্য যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি। প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানরা যখন কোনভাবে যিহূদিয়ার দুর্ভিক্ষের কথা জেনেছিলেন তখন সাহায্য পাঠানোর আগে তারা নিশ্চয়ই অনেক বার তাদের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। (প্রেরিত ১১:২৭-৩০) আমাদের দিনে, খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে সারা পৃথিবীর ভ্রাতৃসমাজের জন্য অথবা কোন একটা দেশের ভাইদের জন্য প্রার্থনা করতে শোনা যায়। আর সেই প্রার্থনাগুলো সবার বুঝে তবেই “আমেন” বলা দরকার।—১ করিন্থীয় ১৪:১৬.
প্রার্থনা করার সময় নির্দিষ্ট করে বলুন
৯, ১০. (ক) কোন্ উদাহরণগুলো থেকে বোঝা যায় যে, নির্দিষ্ট বিষয় উল্লেখ করে প্রার্থনা করা উপযুক্ত? (খ) কেন পৌলের জন্যও নির্দিষ্ট করে প্রার্থনা করা হয়েছিল?
৯ বাইবেলে এমন অনেক উদাহরণ পাওয়া যায় যেখানে একেবারে নির্দিষ্টভাবে, এমনকি নাম উল্লেখ করে প্রার্থনা করা হয়েছে। লূক ২২:৩১, ৩২ পদে যীশুর কথাগুলো নিয়ে একটু চিন্তা করুন। তাঁর সঙ্গে তখন ১১ জন শিষ্য ছিলেন। সামনে যে কঠিন সময় আসতে যাচ্ছিল তার জন্য তাদের সবার ঈশ্বরের সাহায্য দরকার ছিল আর তাই যীশু তাদের সবার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। (যোহন ১৭:৯-১৪) কিন্তু, একবার যীশু শুধু পিতরের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। এইরকম আরও অনেক উদাহরণ আছে। যেমন ইলীশায় নির্দিষ্ট করে তার পরিচারকের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন যাতে ঈশ্বর তাকে সাহায্য করেন। (২ রাজাবলি ৬:১৫-১৭) প্রেরিত যোহন প্রার্থনা করেছিলেন যেন গায় শারীরিক ও আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে সুস্থ থাকেন। (৩ যোহন ১, ২) আবার কিছু কিছু প্রার্থনা নির্দিষ্ট কিছু লোকেদের জন্য করা হয়েছিল।—ইয়োব ৪২:৭, ৮; লূক ৬:২৮; প্রেরিত ৭;৬০; ১ তীমথিয় ২:১, ২.
১০ পৌলের লেখা চিঠিগুলোতে একেবারে নির্দিষ্ট বিষয় উল্লেখ করে প্রার্থনা করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। তিনি নিজের এবং তার সঙ্গীদের জন্য অন্যদেরকে প্রার্থনা করতে বলেছিলেন। কলসীয় ৪:২, ৩ পদে লেখা আছে: “তোমরা প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাক, ধন্যবাদ সহকারে এ বিষয়ে জাগিয়া থাক। আর তৎসঙ্গে আমাদের জন্যও প্রার্থনা কর, যেন ঈশ্বর আমাদের জন্য বাক্যের দ্বার খুলিয়া দেন, যেন খ্রীষ্টের সেই নিগূঢ়তত্ত্ব জ্ঞাত করিতে পারি, যাহার জন্য আমি বন্ধনযুক্তও আছি।” সেইসঙ্গে এই উদাহরণগুলোও দেখুন: রোমীয় ১৫:৩০; ১ থিষলনীকীয় ৫:২৫; ২ থিষলনীকীয় ৩:১; ইব্রীয় ১৩:১৮.
১১. রোমে থাকতে ইপাফ্রা কাদের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন?
১১ রোমে পৌলের সঙ্গীও ঠিক তাই-ই করেছিলেন। “ইপাফ্রা তোমাদিগকে মঙ্গলবাদ করিতেছেন, তিনি ত তোমাদেরই এক জন, . . . তিনি সতত প্রার্থনায় তোমাদের পক্ষে মল্লযুদ্ধ করিতেছেন।” (কলসীয় ৪:১২) এখানে যে শব্দকে “মল্লযুদ্ধ” অনুবাদ করা হয়েছে তার মানে হতে পারে “সংগ্রাম করা,” প্রাচীনকালের একজন মল্লযোদ্ধা যেভাবে করতেন। ইপাফ্রা কি সারা পৃথিবীর ভ্রাতৃসমাজের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন নাকি শুধু এশিয়া মাইনরের সত্য উপাসকদের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন? পৌল বলেছিলেন যে, ইপাফ্রা মূলত কলসীর খ্রীষ্টানদের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। ইপাফ্রা তাদের অবস্থা সম্বন্ধে জানতেন। আমরা তাদের সবার নাম জানি না কিংবা তারা কীধরনের সমস্যায় পড়েছিলেন তা-ও আমরা জানি না কিন্তু কয়েকটা সমস্যা হয়তো এইরকম ছিল। যুবক লীন হয়তো দর্শনবিদ্যার প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য লড়াই করছিলেন এবং রূফের হয়তো যিহুদিদের রীতিরেওয়াজগুলো থেকে মুক্ত থাকার জন্য শক্তির দরকার ছিল। পর্ষীর অবিশ্বাসী স্বামী ছিল বলে তার সন্তানদের প্রভুতে মানুষ করে তোলার জন্য কি তার ধৈর্য ও প্রজ্ঞার দরকার ছিল এবং মারাত্মক অসুখ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য কি অসুঙ্কিতে
র সান্ত্বনার দরকার ছিল? হ্যাঁ, ইপাফ্রা তার নিজের মণ্ডলীর ভাইবোনদের চিনতেন এবং তিনি তাদের জন্য মন থেকে প্রার্থনা করেছিলেন কারণ তিনি ও পৌল দুজনেই চেয়েছিলেন, এই উৎসর্গীকৃত ব্যক্তিরা যেন যিহোবার যোগ্যরূপে চলতে পারেন।
১২. ব্যক্তিগত প্রার্থনায় আমরা কীভাবে আরেকটু নির্দিষ্ট করে প্রার্থনা করতে পারি?
১২ কীভাবে অন্যদের সাহায্য করা যায়, এই উদাহরণগুলো থেকে আপনি কি কিছু শিখেছেন? আগেই যেমন বলা হয়েছে যে, খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে সাধারণত এতটা নির্দিষ্ট করে প্রার্থনা করা হয় না কারণ সেখানে অনেক বাইরের লোকেরাও থাকেন। কিন্তু, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত প্রার্থনায় আমরা নির্দিষ্ট করে প্রার্থনা করতে পারি। আমরা হয়তো মাঝে মাঝে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি ভ্রমণ অধ্যক্ষদের অথবা আধ্যাত্মিক পালকদেরকে নির্দেশনা দেন ও আশীর্বাদ করেন। কিন্তু আমরা কি আরেকটু স্পষ্টভাবে তা করতে পারি না? যেমন, আপনার মণ্ডলীর সীমা অধ্যক্ষ অথবা মণ্ডলীর বই অধ্যয়ন পরিচালকের নাম উল্লেখ করে প্রার্থনা করুন না কেন? ফিলিপীয় ২:২৫-২৮ এবং ১ তীমথিয় ৫:২৩ পদগুলোতে দেখা যায় যে, তীমথিয় এবং ইপাফ্রদীতের স্বাস্থ্য নিয়ে পৌল চিন্তিত ছিলেন। অসুস্থ ভাইবোনদের নাম যদি আমাদের জানা থাকে, তাহলে কি আমরা তাদের প্রতি এভাবে আগ্রহ দেখাতে পারি?
১৩. ব্যক্তিগত প্রার্থনায় আমরা কীধরনের বিষয় উল্লেখ করতে পারি?
১৩ এটা ঠিক যে, কারও ব্যক্তিগত ব্যাপারে আমাদের নাক গলানো উচিত না কিন্তু আমরা যাদেরকে চিনি ও যাদের জন্য চিন্তা করি তাদের জন্য সত্যিকারের আগ্রহ দেখিয়ে প্রার্থনা করা ভুল কিছু নয়। (১ তীমথিয় ৫:১৩; ১ পিতর ৪:১৫) একজন ভাইয়ের হয়তো চাকরি চলে গেছে আর তাকে আরেকটা চাকরি দেওয়ার মতো সামর্থ্য আমাদের নেই। কিন্তু, আমরা তার নাম ধরে প্রার্থনা করতে এবং ব্যক্তিগত প্রার্থনায় তার সমস্যাটার কথা বলতে পারি। (গীতসংহিতা ৩৭:২৫; হিতোপদেশ ১০:৩) আমরা কি এমন কোন অবিবাহিত বোনের সম্বন্ধে চিন্তা করি, যিনি “কেবল প্রভুতেই” বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এখনও একা আছেন এবং তার বয়স হয়ে গেছে? (১ করিন্থীয় ৭:৩৯) যিহোবা যেন তাকে আশীর্বাদ করেন এবং তিনি যেন বিশ্বস্তভাবে যিহোবাকে সেবা করে যেতে পারেন সেই জন্য যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন না কেন? আবার এমনও হতে পারে যে, দুজন প্রাচীন হয়তো এমন কোন ভাইকে পরামর্শ দিয়েছেন যিনি ভুল করেছেন। এই দুজন প্রাচীনই কি তাদের ব্যক্তিগত প্রার্থনায় ওই ভাইয়ের নাম উল্লেখ করে তার জন্য প্রার্থনা করতে পারেন না?
১৪. কারও জন্য নির্দিষ্টভাবে প্রার্থনা করে কীভাবে তাকে সাহায্য করা যায়?
১৪ ব্যক্তিগত প্রার্থনায় আপনি সেই ব্যক্তিদের জন্য প্রার্থনা করতে পারেন যাদের যিহোবার সাহায্যের, সান্ত্বনার, প্রজ্ঞার, পবিত্র আত্মার অথবা আত্মার কোন ফলের দরকার আছে বলে আপনি জানেন। তার কাছ থেকে দূরে থাকেন বলে বা অন্য কোন কারণে আপনি হয়তো তাকে কিছু দিয়ে বা তার কাছে গিয়ে তাকে সাহায্য করতে পারেন না। কিন্তু, খ্রীষ্টান ভাইবোনদের জন্য প্রার্থনা করতে কখনও ভুলে যাবেন না। আপনি জানেন যে তারা যিহোবার যোগ্যরূপে চলতে চান কিন্তু তা সবসময় করে চলার জন্য তাদের হয়তো সাহায্য দরকার। তাদেরকে সাহায্য করার একটা মূল উপায় হল, তাদের জন্য প্রার্থনা করা।—গীতসংহিতা ১৮:২; ২০:১, ২; ৩৪:১৫; ৪৬:১; ১২১:১-৩.
অন্যদের শক্তিশালী করে তোলার জন্য কাজ করুন
১৫. কলসীয় বইয়ের শেষ অংশের প্রতি আমরা কেন আগ্রহ দেখাব?
১৫ অবশ্য, যারা আপনার অনেক ঘনিষ্ঠ তাদের জন্য শুধু মন থেকে ও নির্দিষ্টভাবে প্রার্থনা করাই তাদেরকে সাহায্য করার একমাত্র উপায় নয়। কলসীয় বইয়ে এই বিষয়টা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। অনেক পণ্ডিত ব্যক্তিরা বলেন যে, পৌল তার চিঠিতে বিভিন্ন মতবাদ সম্বন্ধে নির্দেশনা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়ার পরই অভিবাদন বা ব্যক্তিগত শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। (কলসীয় ৪:৭-১৮) অথচ আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি যে, এই বইয়ের শেষ অংশে উল্লেখযোগ্য কিছু পরামর্শ আছে ও এখান থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।
১৬, ১৭. কলসীয় ৪:১০, ১১ পদে যে ভাইদের কথা বলা হয়েছে তাদের সম্বন্ধে আমরা কী বলতে পারি?
১৬ পৌল লিখেছিলেন: “আমার সহবন্দি আরিষ্টার্খ, এবং বার্ণবার কুটুম্ব, মার্ক—যাঁহার বিষয়ে তোমরা আজ্ঞা পাইয়াছ; তিনি যদি তোমাদের কাছে উপস্থিত হন, তবে তাঁহাকে গ্রহণ করিও—ও যুষ্ট নামে আখ্যাত যীশু, ইহাঁরা তোমাদিগকে মঙ্গলবাদ করিতেছেন; ছিন্নত্বক্ লোকদের মধ্যে কেবল এই কয়েক জন ঈশ্বরের রাজ্যের পক্ষে আমার সহকারী; ইহাঁরা আমার সান্ত্বনাজনক ইইয়াছেন [“আমাকে শক্তি জুগিয়েছেন,” NW]।”—কলসীয় ৪:১০, ১১.
১৭ পৌল এখানে কয়েকজন ভাইয়ের কথা বলেছেন যারা বিশেষ মনোযোগ পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে তারা যিহুদি ধর্ম থেকে এসেছিলেন ও ছিন্নত্বক ছিলেন। রোমে অনেক ছিন্নত্বক যিহুদিরাই তখন খ্রীষ্টান হয়েছিলেন। কিন্তু পৌল যাদের কথা বলেছিলেন শুধু তারাই তাকে অনেক সাহায্য করেছিলেন। তারা সম্ভবত পরজাতিদের মধ্যে থেকে যারা খ্রীষ্টান হয়েছিলেন তাদের সঙ্গে মেলামেশা করতে সংকোচ বোধ করতেন না এবং মনে আনন্দ নিয়ে পৌলের সঙ্গে পরজাতিদের কাছে প্রচার করতেন।—রোমীয় ১১:১৩; গালাতীয় ১:১৬; ২:১১-১৪.
১৮. পৌল কীভাবে তার সঙ্গে ছিলেন এমন কয়েকজন ভাইয়ের প্রশংসা করেছিলেন?
১৮ পৌলের কথাটা শুনুন: “ইহাঁরা আমাকে শক্তি জুগিয়েছেন।” শক্তির জন্য এখানে যে গ্রিক শব্দটা তিনি ব্যবহার করেছেন সেটা বাইবেলে মাত্র একবার পাওয়া যায়। অনেক অনুবাদকরা এই শব্দকে “সান্ত্বনা” হিসেবে অনুবাদ করেন। কিন্তু আরেকটা গ্রিক শব্দ (প্যারাকেলিও) আছে যেটাকেও সব জায়গায় “সান্ত্বনা” হিসেবেই অনুবাদ করা হয়েছে। পৌল তার চিঠিতে কোথাও কোথাও এই শব্দটা ব্যবহার করলেও কলসীয় ৪:১১ পদে তিনি তা ব্যবহার করেননি।—মথি ৫:৪; প্রেরিত ৪:৩৬; ৯:৩১; ২ করিন্থীয় ১:৪; কলসীয় ২:২; ৪:৮.
১৯, ২০. (ক) রোমে যে ভাইয়েরা তাকে সাহায্য করেছিলেন তাদের জন্য তিনি যে শব্দটা ব্যবহার করেছিলেন তার মানে কী? (খ) এই ভাইয়েরা পৌলকে কীভাবে সাহায্য করেছিলেন?
১৯ পৌল যাদের নাম বলেছেন তারা নিশ্চয়ই শুধু মুখে মুখে পৌলকে সান্ত্বনা দেননি। কলসীয় ৪:১১ পদে ‘শক্তির’ জন্য যে গ্রিক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, সেটাকে বাইরের বইপত্রে মাঝে মাঝে অস্বস্তি উপশম করার একটা ওষুধ হিসেবেও অনুবাদ করা হয়েছে। নিউ লাইফ ভারসন-এ এভাবে পড়া হয়: “তারা আমাকে কত সাহায্যই না করেছেন!” টুডেজ ইংলিশ ভারসন বলে: “তারা আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন।” যে খ্রীষ্টান ভাইয়েরা পৌলের কাছাকাছি থাকতেন তাকে সাহায্য করার জন্য তারা আসলে কী করেছিলেন?
২০ পৌলের সঙ্গে বাইরের লোকেদের দেখা করার অনুমতি ছিল কিন্তু এমন অনেক কিছু ছিল যা তিনি করতে পারতেন না, যেমন মৌলিক বিষয়গুলো অর্থাৎ খাবার বা শীতের জামা তিনি কিনে আনতে পারতেন না। অধ্যয়নের জন্য তিনি কোথা থেকে গোটানো পুস্তক বা লেখার জিনিসপত্র পেতেন? (২ তীমথিয় ৪:১৩) আপনার কি মনে হয় না যে ওই ভাইয়েরা পৌলকে বিভিন্ন জিনিস দিয়ে সাহায্য করেছিলেন, তাকে হয়তো বাজার করে দিতেন অথবা তার বিভিন্ন খবর অন্য জায়গায় পৌঁছে দিতেন? তিনি হয়তো কোন মণ্ডলীর সম্বন্ধে জানতে চাইতেন অথবা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে মণ্ডলীকে গেঁথে তুলতে চাইতেন। কিন্তু বন্দি থাকাতে তা তিনি করতে পারতেন না আর তাই ওই ভাইয়েরা হয়তো পৌলের হয়ে খবর বয়ে নিয়ে যেতেন ও ফিরে এসে তাকে আবার খবর জানাতেন। সত্যিই, কত শক্তিই না তারা জুগিয়েছিলেন!
২১, ২২. (ক) কলসীয় ৪:১১ পদের কথাগুলো কেন আমাদের আগ্রহ জাগিয়ে তোলে? (খ) কোন্ কোন্ উপায়ে আমরা পৌলের সঙ্গীদের মতো মনোভাব দেখাতে পারি?
২১ পৌল তার চিঠিতে যে জন্য “শক্তি” শব্দটা ব্যবহার করেছিলেন, তা আমাদেরকে গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করে যে আমরা অন্যদেরকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি। তারা হয়তো নৈতিক মানগুলো মেনে চলে, নিয়মিত খ্রীষ্টীয় সভাতে এসে এবং প্রচারে অংশ নিয়ে যিহোবার যোগ্যরূপে চলছেন। সেইজন্য তারা আমাদের প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। তাই, পৌলকে যারা “শক্তি” জুগিয়েছিলেন তাদের মতো হওয়ার জন্য আমরা কি আরেকটু চেষ্টা করতে পারি?
২২ এমন কোন বোনকে যদি আপনি চেনেন যিনি ১ করিন্থীয় ৭:৩৭ (NW) পদের কথাগুলো খুব বুদ্ধিপূর্বক কাজে লাগিয়েছেন আর এখন তার পরিবার তার কাছে নেই, তাহলে আপনি কি আপনার পরিবারের কোন বিষয়ে, সেটা হতে পারে খাবারের জন্য অথবা বন্ধু বা আত্মীয়দের নিয়ে ছোটখাটো অনুষ্ঠানে তাকে নিমন্ত্রণ করতে পারেন? সম্মেলনে বা ছুটি কাটানোর জন্য বেড়াতে যাওয়ার সময় তাকে আপনাদের সঙ্গে নিলে কেমন হয়? অথবা আপনি যখন বাজারে যান তখন তাকেও আপনার সঙ্গে আসতে বলুন। বিধবা বা যাদের স্ত্রী নেই এমন ব্যক্তিদের কিংবা যারা এখন আর গাড়ি চালাতে পারেন না তাদেরকেও আমরা এভাবে আমন্ত্রণ জানাতে পারি। ছোটখাটো বিষয়গুলো, যেমন ভাল ফলমূল কীভাবে কেনা যায় বা বাচ্চাদের জন্য কেমন জামা কিনবেন সেই বিষয়ে তাদের কাছ থেকে আপনি হয়তো বুদ্ধি বা পরামর্শ নিতে পারবেন। (লেবীয় পুস্তক ১৯:৩২; হিতোপদেশ ১৬:৩১) এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই আপনাদের মধ্যে বন্ধুত্ব আরও অটল হবে। আর তারাও হয়তো তাদের কোন কিছুর দরকার হলে যেমন কোন ওষুধ কিনতে বা অন্য কিছুর জন্য নির্দ্বিধায় আপনার কাছে সাহায্য চাইবেন। রোমে পৌলের সঙ্গে যে ভাইয়েরা ছিলেন তারা নিশ্চয়ই প্রয়োজনীয় শক্তি জুগিয়েছিলেন, আপনিও তা করতে পারেন। আর এর ফলে তখন ও এখন দুসময়ই অনেক আশীর্বাদ পাওয়া গেছে এবং যাচ্ছে। প্রেমের বন্ধন আরও মজবুত হয়ে চলেছে এবং আমরা বিশ্বস্তভাবে যিহোবাকে সেবা করার জন্য অটল সংকল্প নিয়েছি।
২৩. কোন্ কাজে সময় দেওয়া আমাদের প্রত্যেকের জন্য ভাল হবে?
২৩ এই প্রবন্ধে যে পরিস্থিতিগুলোর কথা বলা হয়েছে আমরা প্রত্যেকে সেগুলো নিয়ে চিন্তা করতে পারি। সেগুলো শুধুই উদাহরণ কিন্তু তা আমাদেরকে সেই পরিস্থিতিগুলোর কথা মনে করিয়ে দিতে পারে, যার মাধ্যমে আমরা আমাদের ভাইবোনদের জন্য “শক্তি” হয়ে উঠতে পারি। এই কথা বলার উদ্দেশ্য নয় যে আমাদেরকে মানবতাবোধ গড়ে তুলতে হবে। কলসীয় ৪:১০, ১১ পদে যে ভাইদের কথা বলা হয়েছে তাদের উদ্দেশ্য এটা ছিল না। তারা “ঈশ্বরের রাজ্যের পক্ষে . . . সহকারী” ছিলেন। অন্যদেরকে শক্তিশালী করা এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। আমাদের বেলায়ও যেন এই কথাই সত্য হয়।
২৪. অন্যদের জন্য প্রার্থনা করা ও তাদেরকে শক্তি জোগানোর মূল কারণ কী?
২৪ ব্যক্তিগত প্রার্থনায় আমরা অন্যদের নাম উল্লেখ করে প্রার্থনা করি এবং তাদেরকে শক্তি জোগাতে চেষ্টা করি কারণ আমরা বিশ্বাস করি যে, আমাদের ভাইবোনেরা ‘যিহোবার যোগ্যরূপে সর্ব্বতোভাবে প্রীতিজনক আচরণ করতে’ চান। (কলসীয় ১:১০) এই কথাটা অন্য আরেকটা বিষয়ের সঙ্গে জড়িত যেটা পৌল পরে উল্লেখ করেছিলেন যখন তিনি ইপাফ্রার কথা লিখেছিলেন। ইপাফ্রা কলসীর খ্রীষ্টান ভাইবোনদের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন যাতে তারা ‘পূর্ণতা লাভ করেন এবং ঈশ্বরের সমস্ত ইচ্ছাতে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে দাঁড়াতে পারেন।’ (কলসীয় ৪:১২, NW) ব্যক্তিগতভাবে আমরা তা কীভাবে করতে পারি? আসুন দেখা যাক।
[পাদটীকা]
^ ওয়াচটাওয়ার বাইবেল আ্যন্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটির শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি (ইংরেজি) ১ম খণ্ডের ৪৯০-১ এবং ‘ঈশ্বর-নিশ্বসিত প্রত্যেক শাস্ত্রলিপি উপকারী’ (ইংরেজি) বইয়ের ২২৬-৮ পৃষ্ঠা দেখুন।
আপনি কি লক্ষ্য করেছেন?
• ব্যক্তিগত প্রার্থনার সময় আমরা কীভাবে অন্যদেরকে আরেকটু বেশি সাহায্য করতে পারি?
• কোন্ অর্থে কিছু খ্রীষ্টানরা পৌলকে “শক্তি” জুগিয়েছিলেন?
• কোন্ পরিস্থিতিগুলোতে আমরা অন্যদেরকে “শক্তি” জোগাতে পারি?
• ভাইবোনদের জন্য প্রার্থনা করা এবং তাদেরকে শক্তি জোগানোর পিছনে আমাদের মূল লক্ষ্য কী?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
পরিবারের সবাই মিলে বেড়াতে যাবার সময় আপনি কি আরেকজন খ্রীষ্টানকেও আমন্ত্রণ জানাতে পারেন?
[সৌজন্যে]
Courtesy of Green Chimney’s Farm