সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কি আপনার উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে চলছেন?

আপনি কি আপনার উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে চলছেন?

আপনি কি আপনার উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে চলছেন?

“যাহা কিছু কর, প্রাণের সহিত কার্য্য কর, মনুষ্যের কর্ম্ম নয়, কিন্তু প্রভুরই কর্ম্ম বলিয়া কর।”কলসীয় ৩:২৩.

১. জগতের লোকেরা কীভাবে “উৎসর্গ” শব্দের ব্যাখ্যা দেন?

 কীভাবে ক্রীড়া প্রতিযোগীরা পুরোপুরি দক্ষ হয়ে ওঠে? টেনিস, ফুটবল, বাসকেটবল, বেইসবল, ঘোড়াদৌড়, গল্‌ফ অথবা অন্যান্য যে কোন খেলায় সবচেয়ে সেরা খেলোয়াড়রাই শীর্ষে পৌঁছায় কারণ তারা খেলাধূলার প্রতি নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করে। তবে এর জন্য সবার আগে শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে যোগ্য থাকা দরকার। এই বিষয়টা “উৎসর্গ” শব্দের একটা সংজ্ঞার সঙ্গে মিলে যায়, যা হল “কোন নির্দিষ্ট চিন্তা বা কাজে পুরোপুরি লেগে থাকা।”

২. বাইবেল অনুযায়ী “উৎসর্গ” বলতে কী বোঝায়? বুঝিয়ে বলুন।

কিন্তু, বাইবেল অনুযায়ী “উৎসর্গ” শব্দের মানে কী? “উৎসর্গ” শব্দটা ইব্রীয় ক্রিয়াপদ থেকে অনুবাদ করা হয়েছে, যার অর্থ হচ্ছে “আলাদা থাকা; আলাদা হওয়া; সরে পড়া।” * প্রাচীন ইস্রায়েলের মহাযাজক হারোণ তার পাগড়ির ওপর “পবিত্র মুকুট [“উৎসর্গীকরণের পবিত্র চিহ্ন,” NW]” পরত, যা খাঁটি সোনার পাত দিয়ে তৈরি ছিল আর তার ওপর খোঁদাই করে ইব্রীয় অক্ষরে এই কথা লেখা ছিল “‘সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র’।” এটা মহাযাজককে মনে করিয়ে দিত যে তাকে এমন কিছু করা এড়িয়ে চলতে হবে, যা ধর্মধামকে অপবিত্র করে “কেননা তাহার ঈশ্বরের অভিষেক-তৈলের সংস্কার [“উৎসর্গীকরণের চিহ্ন,” NW] তাহার উপরে [ছিল]।”—যাত্রাপুস্তক ২৯:৬; ৩৯:৩০; লেবীয় পুস্তক ২১:১২.

৩. কীভাবে উৎসর্গীকরণ আমাদের আচরণের ওপর প্রভাব ফেলে?

এই বিবরণ থেকে আমরা দেখতে পাই যে উৎসর্গীকরণ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর অর্থ, স্বেচ্ছায় নিজেকে ঈশ্বরের একজন দাস হিসেবে শনাক্ত করা আর এর জন্য শুদ্ধ আচরণ দরকার। তাই, আমরা বুঝতে পারি যে কেন প্রেরিত পিতর যিহোবার কথাগুলো উদ্ধৃতি করেছিলেন যে, “‘তোমরা পবিত্র হইবে, কারণ আমি পবিত্র’।” (১ পিতর ১:১৫, ১৬) একজন উৎসর্গীকৃত খ্রীষ্টান হিসেবে উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে চলার এক গুরু দায়িত্ব আমাদের রয়েছে, যাতে আমরা শেষ পর্যন্ত বিশ্বস্ত থাকতে পারি। কিন্তু, খ্রীষ্টীয় উৎসর্গীকরণের সঙ্গে কী জড়িত?—লেবীয় পুস্তক ১৯:২; মথি ২৪:১৩.

৪. কীভাবে আমরা নিজেকে উৎসর্গ করার পদক্ষেপ নিয়েছি আর এটাকে কীসের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে?

যিহোবা ঈশ্বর ও তাঁর উদ্দেশ্য এবং যীশু খ্রীষ্ট ও ঈশ্বরের উদ্দেশ্যেগুলোর মধ্যে তাঁর ভূমিকা সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান নেওয়ার পর, ব্যক্তিগতভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমরা সমস্ত হৃদয়, মন, প্রাণ ও শক্তি দিয়ে ঈশ্বরের সেবা করব। (মার্ক ৮:৩৪; ১২:৩০; যোহন ১৭:৩) এটাকে ব্যক্তিগত অঙ্গীকারও বলা যেতে পারে, যা হল ঈশ্বরের কাছে নিজেকে পুরোপুরি উৎসর্গ করা। আবেগের বশে আমরা নিজেদেরকে উৎসর্গ করিনি। আমরা আমাদের যুক্তি করার ক্ষমতাকে ব্যবহার করে ভেবেচিন্তে এবং প্রার্থনা করে এটা করেছিলাম। তাই এটা কোন অস্থায়ী সিদ্ধান্ত ছিল না। আমরা তাদের মতো হতে চাই না, যারা জমি চাষ শুরু করার পর কিছু দূর গিয়ে কাজটা খুব কঠিন বলে বা ফসল কাটার সময় এখনও আসতে অনেক দেরি বা সেই সময় আদৌ আসবে কি না, সেই বিষয়ে কোন নিশ্চয়তা নেই বলে হাল ছেড়ে দেয়। কয়েকজনের উদাহরণ দেখুন, যারা ঈশ্বরের কাজের “লাঙ্গলে হাত দিয়া” শত বাধাবিপত্তির মধ্যেও হাল ছেড়ে দেননি।—লূক ৯:৬২; রোমীয় ১২:১, ২.

তারা তাদের উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে চলেছিলেন

৫. ঈশ্বরের উৎসর্গীকৃত দাস হিসেবে যিরমিয় কীভাবে এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ?

যিরমিয় ৪০ বছরেরও (সা.কা.পূ. ৬৪৭-৬০৭) বেশি সময় ধরে যিরূশালেমে ভাববাদীর কাজ করেছিলেন আর এটা খুব সহজ ছিল না। তিনি তার যোগ্যতা সম্বন্ধে খুব ভাল করে জানতেন। (যিরমিয় ১:২-৬) রোজ যিহূদার একগুঁয়ে লোকেদের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য তার অনেক সাহস ও ধৈর্যের দরকার ছিল। (যিরমিয় ১৮:১৮; ৩৮:৪-৬) যাই হোক, যিহোবা ঈশ্বরের ওপর যিরমিয় আস্থা রেখেছিলেন আর যিহোবা তাকে শক্তি দিয়েছিলেন যেন তিনি প্রমাণ করতে পারেন যে সত্যিই তিনি ঈশ্বরের একজন উৎসর্গীকৃত দাস।—যিরমিয় ১:১৮, ১৯.

৬. প্রেরিত যোহন আমাদের জন্য কোন্‌ উদাহরণ স্থাপন করেছেন?

বিশ্বস্ত প্রেরিত যোহন সম্বন্ধেই বা কী বলা যায়, যাকে বৃদ্ধ বয়সে “ঈশ্বরের বাক্য ও যীশুর সাক্ষ্য প্রযুক্ত” পাটম নামে এক জনমানবহীন দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল? (প্রকাশিত বাক্য ১:৯) তিনি ধৈর্য ধরেছিলেন এবং একজন খ্রীষ্টান হিসেবে প্রায় ৬০ বছর ধরে তার উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে চলেছিলেন। রোমীয় সৈন্যরা যিরূশালেম ধ্বংস করে দেওয়ার পরেও তিনি বেঁচে ছিলেন। তিনি একটা সুসমাচার, ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় তিনটে চিঠি এবং প্রকাশিত বাক্য বই লিখেছিলেন আর প্রকাশিত বাক্য বই লেখার সময় তিনি হর্‌মাগিদোন যুদ্ধের দর্শন দেখতে পেয়েছিলেন। তিনি যখন জানতে পেরেছিলেন যে তিনি জীবিত থাকতে হর্‌মাগিদোন আসবে না তখন তিনি কি সরে পড়েছিলেন? তার মধ্যে কী অনীহা চলে এসেছিল? না, মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত যোহন বিশ্বস্ত ছিলেন এবং জানতেন যে যদিও “কাল সন্নিকট,” তবুও তিনি যে দর্শন দেখেছিলেন, তা পরে পূর্ণ হবে।—প্রকাশিত বাক্য ১:৩; দানিয়েল ১২:৪.

আজকের দিনে উৎসর্গীকরণের উদাহরণ

৭. কীভাবে একজন ভাই খ্রীষ্টীয় উৎসর্গীকরণের এক উত্তম উদাহরণ রেখেছিলেন?

আজকে, আমাদের দিনেও হাজার হাজার বিশ্বস্ত খ্রীষ্টানরা নিজের চোখে হর্‌মাগিদোন দেখার জন্য বেঁচে না থাকলেও, তারা তাদের উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে চলেছেন। এদের মধ্যে একজন হলেন ইংল্যান্ডের আরনেস্ট ই. বিভোর। তিনি ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথম দিকে যিহোবার সাক্ষি হয়েছিলেন এবং পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যা করার জন্য একটা ভাল ছাপাখানার ব্যাবসা ছেড়ে দিয়েছিলেন। খ্রীষ্টীয় নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছিলেন বলে তাকে দুই বছর জেল খাটতে হয়েছিল। এই সময় তার পরিবারের লোকেরা তাকে অনেক সাহায্য করেছিলেন এবং ১৯৫০ সালে তার তিন ছেলেমেয়ে মিশনারি ট্রেনিংয়ের জন্য নিউ ইয়র্কে ওয়াচটাওয়ার বাইবেল স্কুল অফ গিলিয়েডে যোগ দেন। ভাই বিভোর তার প্রচার কাজে এতটাই উদ্যোগী ছিলেন যে তার বন্ধুরা তাকে হর্‌মাগিদোন আরনি বলে ডাকতেন। তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে তার উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে চলেছিলেন এবং ১৯৮৬ সালে মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি ঈশ্বরের আসন্ন হর্‌মাগিদোনের যুদ্ধ সম্বন্ধে ঘোষণা করে গিয়েছেন। তার উৎসর্গীকরণকে তিনি যিহোবার সঙ্গে একটা অস্থায়ী চুক্তির মতো মনে করেননি। *১ করিন্থীয় ১৫:৫৮.

৮, ৯. (ক) ফ্রাঙ্কোর শাসনাধীনে স্পেনের কিছু যুবক কী উদাহরণ দেখিয়েছেন? (খ) কোন্‌ প্রশ্নগুলো করা আমাদের জন্য উপযুক্ত?

স্পেনের একজন ব্যক্তিও এইরকম উদ্যোগ দেখিয়ে উদাহরণ স্থাপন করেছেন। ফ্রাঙ্কোর শাসনাধীনে (১৯৩৯-৭৫) হাজার হাজার উৎসর্গীকৃত যুবক সাক্ষিরা খ্রীষ্টীয় নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকেই দশ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে জেলে ছিলেন। এমনকি কেসুস মার্টিন নামে একজন যিহোবার সাক্ষির ২২ বছরের জেল হয়েছিল। উত্তর আফ্রিকায় একটা জেলে থাকার সময় তাকে প্রচণ্ড মার দেওয়া হয়েছিল। যদিও তা সহ্য করা সহজ ছিল না, তবুও তিনি হার মানেননি।

বেশির ভাগ সময়েই এই যুবকেরা জানতেন না যে কখন তারা ছাড়া পাবেন বা আদৌ পাবেন কি না কারণ তাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আনা হয়েছিল এবং এগুলোর জন্য তাদের একটার পর একটা সাজা দেওয়া হয়েছিল। তারপরও তারা বিশ্বস্ত ছিলেন এবং বন্দিত্বে থেকেও প্রচারের জন্য তাদের উদ্যোগ দেখিয়েছিলেন। ১৯৭৩ সালে পরিস্থিতি যখন একটু ভালর দিকে মোড় নিতে থাকে তখন এই সাক্ষিদের অনেকের বয়স ৩০ এর কোঠায় গিয়ে পৌঁছেছিল আর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তারা সরাসরি পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যা শুরু করেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ বিশেষ অগ্রগামী ও অন্যেরা ভ্রমণ অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ শুরু করেন। জেলে থেকেও তারা তাদের উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে চলেছিলেন এবং ছাড়া পাওয়ার পরও তাদের মধ্যে বেশির ভাগই তা করে চলেছেন। * আজকে আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? এই নিষ্ঠাবান ব্যক্তিদের মতো আমরাও কি বিশ্বস্তভাবে আমাদের উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে চলছি?—ইব্রীয় ১০:৩২-৩৪; ১৩:৩.

আমাদের উৎসর্গীকরণকে সঠিকভাবে দেখা

১০. (ক) আমাদের উৎসর্গীকরণকে কীভাবে দেখা উচিত? (খ) যিহোবার উদ্দেশে করা আমাদের পরিচর্যাকে তিনি কীভাবে দেখেন?

১০ ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার জন্য আমরা যে তার কাছে নিজেদের উৎসর্গ করেছি সেটাকে আমরা কীভাবে দেখি? এটাকে কি আমরা আমাদের জীবনের প্রথমে রাখি? আমরা যুবক বা বৃদ্ধ, বিবাহিত বা অবিবাহিত, সুস্থ বা অসুস্থ যাই হই না কেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে জীবনযাপন করার জন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে। একজন ব্যক্তির পরিস্থিতি হয়তো তাকে অগ্রগামী, ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির শাখা অফিসের স্বেচ্ছাসেবক, একজন মিশনারি অথবা ভ্রমণ অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করার সুযোগ করে দেয়। অন্যদিকে, কিছু বাবামায়েরা হয়তো তাদের পরিবারের লোকেদের শারীরিক এবং আধ্যাত্মিক যত্ন নিতে পুরোপুরি ব্যস্ত থাকেন। পূর্ণ-সময়ের পরিচারকদের মতো প্রতি মাসে বেশি বেশি ঘন্টা প্রচার করতে পারছেন না বলে কি যিহোবা তাদের অল্প সময়ের প্রচারকে নিচু চোখে দেখেন? কখনোই না। আমরা যা করতে পারি তার বেশি ঈশ্বর কখনোই আশা করেন না। এই বিষয়ে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “যদি আগ্রহ থাকে, তবে যাহার যাহা আছে, তদনুসারে তাহা গ্রাহ্য হয়; যাহার যাহা নাই, তদনুসারে নয়।”—২ করিন্থীয় ৮:১২.

১১. আমাদের পরিত্রাণ কীসের ওপর নির্ভর করে?

১১ যাই হোক না কেন, আমরা যা করতে পারি তার ওপর নয় কিন্তু আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশুর মাধ্যমে যিহোবার অযাচিত করুণার ওপর আমাদের পরিত্রাণ নির্ভর করে। পৌল পরিষ্কারভাবে বলেছিলেন: “সকলেই পাপ করিয়াছে এবং ঈশ্বরের গৌরব-বিহীন হইয়াছে—উহারা বিনামূল্যে তাঁহারই অনুগ্রহে, খ্রীষ্ট যীশুতে প্রাপ্য মুক্তি দ্বারা, ধার্ম্মিক গণিত হয়।” কিন্তু ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার ওপর আমাদের বিশ্বাস কতখানি সক্রিয়, তা আমাদের কাজই প্রমাণ দেয়।—রোমীয় ৩:২৩, ২৪; যাকোব ২:১৭, ১৮, ২৪.

১২. কেন আমরা তুলনা করব না?

১২ ঈশ্বরের কাজে আমরা কত সময় দিই, বাইবেলের কয়টা সাহিত্যাদি অর্পণ করি বা কয়টা বাইবেল অধ্যয়ন করাই, তা নিয়ে নিজেকে অন্যদের সঙ্গে তুলনা করার কোন দরকার নেই। (গালাতীয় ৬:৩, ৪) খ্রীষ্টীয় পরিচর্যায় আমরা যা কিছুই করি না কেন, আমাদের সকলের যীশুর বলা এই নম্র কথাগুলো মনে রাখতে হবে: “সেই প্রকারে সমস্ত আজ্ঞা পালন করিলে পর তোমরাও বলিও আমরা অনুপযোগী দাস, যাহা করিতে বাধ্য ছিলাম, তাহাই করিলাম।” (লূক ১৭:১০) সত্যি করে বলতে গেলে, আমরা কত বার বলতে পারি যে আমরা “সমস্ত আজ্ঞা পালন” করেছি? তাই প্রশ্ন আসে যে, আমরা ঈশ্বরকে কী ধরনের সেবা করব?—২ করিন্থীয় ১০:১৭, ১৮.

প্রতিটা দিনকে মূল্যবান মনে করা

১৩. আমরা যদি আমাদের উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে চলতে চাই, তাহলে আমাদের কোন্‌ মনোভাব থাকা দরকার?

১৩ স্ত্রী, স্বামী, ছেলেমেয়ে, বাবামা এবং দাসদের পরামর্শ দেওয়ার পর প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “যাহা কিছু কর, প্রাণের সহিত কার্য্য কর, মনুষ্যের কর্ম্ম নয়, কিন্তু প্রভুরই কর্ম্ম বলিয়া কর; কেননা তোমরা জান, প্রভু হইতে তোমরা দায়াধিকাররূপ প্রতিদান পাইবে। তোমরা প্রভু খ্রীষ্টেরই দাসত্ব করিতেছ।” (কলসীয় ৩:২৩-২৫ক) যিহোবার সেবায় আমরা যা কিছুই করি না কেন, তা মানুষকে মুগ্ধ করার জন্য করি না। যীশু খ্রীষ্টের উদাহরণ অনুকরণ করে আমরা ঈশ্বরের সেবা করার চেষ্টা করি। তিনি তাঁর অল্প সময়ের পরিচর্যার কাজ গুরুত্বের সঙ্গে করেছিলেন।—১ পিতর ২:২১.

১৪. শেষকাল সম্বন্ধে পিতর কোন্‌ সাবধানবাণী দিয়েছিলেন?

১৪ প্রেরিত পিতরও জরুরি বিষয়গুলোকে আগে রেখেছিলেন। তার দ্বিতীয় চিঠিতে তিনি সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, শেষকালে উপহাসকারীরা অর্থাৎ ধর্মভ্রষ্ট এবং সন্দেহবাদীরা থাকবে, যারা তাদের নিজেদের ইচ্ছেমতো খ্রীষ্টের উপস্থিতির বিষয়ে প্রশ্ন তুলবে। কিন্তু পিতর বলেছিলেন: “প্রভু নিজ প্রতিজ্ঞা বিষয়ে দীর্ঘসূত্রী নহেন—যেমন কেহ কেহ দীর্ঘসূত্রিতা জ্ঞান করে—কিন্তু তোমাদের পক্ষে তিনি দীর্ঘসহিষ্ণু; কতকগুলি লোক যে বিনষ্ট হয়, এমন বাসনা তাঁহার নাই; বরং সকলে যেন মনপরিবর্ত্তন পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পায়, এই তাঁহার বাসনা। কিন্তু প্রভুর দিন চোরের ন্যায় আসিবে।” হ্যাঁ, যিহোবার দিন অবশ্যই আসবে। তাই আমাদের রোজ চিন্তা করে দেখতে হবে যে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার ওপর আমাদের বিশ্বাস কতখানি নিশ্চিত এবং দৃঢ়।—২ পিতর ৩:৩, ৪, ৯, ১০.

১৫. রোজ কীভাবে আমাদের নিজেদেরকে পরীক্ষা করা উচিত?

১৫ আমরা যদি সতর্কতার সঙ্গে আমাদের উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে চলতে চাই, তাহলে আমাদের প্রতিদিন যিহোবার প্রশংসা করতে হবে। রোজ দিনের শেষে সারাদিনে যা করেছি, তা নিয়ে কি আমরা ভাবি এবং বিবেচনা করি যে কীভাবে আজকে আমরা যিহোবার নামকে মহিমান্বিত করেছি এবং তাঁর রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করেছি? হতে পারে সেটা আমাদের শুদ্ধ আচরণ, অন্যদের গড়ে তোলে এমন কথাবার্তা এবং আমাদের পরিবার ও বন্ধুদের জন্য প্রেমময় চিন্তা দেখানো। প্রতিটা সুযোগেই কি আমরা অন্যদের কাছে আমাদের খ্রীষ্টীয় বিশ্বাস সম্বন্ধে জানিয়েছি? ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো সম্বন্ধে গভীরভাবে চিন্তা করার জন্য আমরা কি কাউকে সাহায্য করেছি? আসুন আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে রোজ আমরা ভাল কিছু করি এবং রূপকভাবে বলতে গেলে একটা মোটা অঙ্কের আধ্যাত্মিক ব্যাঙ্ক আ্যকাউন্ট গড়ে তুলি।—মথি ৬:২০; ১ পিতর ২:১২; ৩:১৫; যাকোব ৩:১৩.

আপনার দৃষ্টি উজ্জ্বল রাখুন

১৬. ঈশ্বরের কাছে করা আমাদের উৎসর্গীকরণকে শয়তান কীভাবে দুর্বল করে দেওয়ার চেষ্টা করে?

১৬ আমরা এমন একটা সময়ে বাস করছি, যা দিনের পর দিন খ্রীষ্টানদের জন্য আরও বেশি কঠিন হয়ে পড়েছে। কোন্‌টা ভাল বা মন্দ, শুদ্ধ বা অশুদ্ধ, নৈতিক বা অনৈতিক, তা যেন আমরা বুঝতে না পারি তার জন্য শয়তান এবং তার সঙ্গীরা চেষ্টা করে যাচ্ছে। (রোমীয় ১:২৪-২৮; ১৬:১৭-১৯) টিভির বিভিন্ন চ্যানেল এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমাদের হৃদয় এবং মনকে কলুষিত করার জন্য সে খুব সহজেই পথ করে দিচ্ছে। এতে আমাদের আধ্যাত্মিক দৃষ্টি ম্লান বা অন্ধ হয়ে যেতে পারে আর এর ফলে আমরা তার সুনিপুণ চাতুরীগুলোকে ধরতে পারি না। আমরা যদি আমাদের আধ্যাত্মিক গুরুত্বকে উপলব্ধি না করি, তাহলে উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে চলার জন্য আমাদের যে সংকল্প, তা দুর্বল হয়ে পড়তে পারে এবং শক্ত করে আমরা যে “লাঙ্গলে” হাত দিয়েছি তা আলগা হয়ে যেতে পারে।—লূক ৯:৬২; ফিলিপীয় ৪:৮.

১৭. পৌলের পরামর্শ কীভাবে ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে?

১৭ থিষলনীকীর খ্রীষ্টানদের জন্য প্রেরিত পৌল তাই সময়োপযোগী পরামর্শ দিয়েছিলেন: “ঈশ্বরের ইচ্ছা এই, তোমাদের পবিত্রতা;—যেন তোমরা ব্যভিচার হইতে দূরে থাক, তোমাদের প্রত্যেক জন যেন, যাহারা ঈশ্বরকে জানে না, সেই পরজাতীয়দের ন্যায় কামাভিলাষে নয়, কিন্তু পবিত্রতায় ও সমাদরে নিজ নিজ পাত্র লাভ করিতে জানে।” (১ থিষলনীকীয় ৪:৩-৫) ঈশ্বরের কাছে করা উৎসর্গীকরণকে অবহেলা করে যারা অনৈতিক কাজ করেছে তাদেরকে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী থেকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে। তারা ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে দুর্বল হতে দেয় আর তাই যিহোবা তাদের জীবনে আর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে থাকেন না। কিন্তু পৌল বলেছিলেন: “ঈশ্বর আমাদিগকে অশুচিতার নিমিত্ত নয়, কিন্তু পবিত্রতায় আহ্বান করিয়াছেন। এই জন্য যে ব্যক্তি অগ্রাহ্য করে, সে মনুষ্যকে অগ্রাহ্য করে তাহা নয়, বরং ঈশ্বরকেই অগ্রাহ্য করে, যিনি নিজ পবিত্র আত্মা তোমাদিগকে প্রদান করেন।”—১ থিষলনীকীয় ৪:৭, ৮.

আপনার সংকল্প কী?

১৮. আমাদের সংকল্প কী হওয়া উচিত?

১৮ আমরা যদি ঈশ্বরের কাছে করা আমাদের উৎসর্গীকরণের গুরুত্বকে উপলব্ধি করি, তাহলে আমাদেরকে কী করার সংকল্প নিতে হবে? আমাদেরকে দৃঢ় সংকল্প নিতে হবে যেন আমরা আমাদের আচরণ এবং পরিচর্যায় সৎ সংবেদ ধরে রাখতে পারি। পিতর পরামর্শ দিয়েছিলেন: “সৎসংবেদ রক্ষা কর, যেন যাহারা তোমাদের খ্রীষ্টগত সদাচরণের দুর্নাম করে, তাহারা তোমাদের পরীবাদ করণ বিষয়ে লজ্জা পায়।” (১ পিতর ৩:১৫, ১৬) আমাদের খ্রীষ্টীয় আচরণের জন্য আমাদের হয়তো কষ্ট এবং দুর্ব্যবহার সহ্য করতে হতে পারে, ঠিক যেমন যীশু ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস ও নিষ্ঠা বজায় রাখার কারণে সহ্য করেছিলেন। “অতএব” পিতর বলেছিলেন, “খ্রীষ্ট মাংসে দুঃখভোগ করিয়াছেন বলিয়া তোমরাও সেই ভাবে আপনাদিগকে সজ্জীভূত কর—কেননা মাংসে যাহার দুঃখভোগ হইয়াছে, সে পাপ হইতে বিরত হইয়াছে।”—১ পিতর ৪:১.

১৯. আমাদের সম্বন্ধে কী বলা হোক বলে আমরা চাই?

১৯ সত্যিই, আমাদের উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে চলার সংকল্প নেওয়া আমাদেরকে শয়তানের জগৎ যা কিনা আধ্যাত্মিক, নৈতিক এবং শারীরিক দিক দিয়ে অসুস্থ তার ফাঁদ থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু এর চেয়ে আরও বেশি কিছু আমরা পাব অর্থাৎ আমরা আস্থা রাখতে পারব যে আমাদের প্রতি ঈশ্বরের অনুমোদন আছে, যা শয়তান এবং তার সঙ্গীরা আমাদের যে লোভ দেখায় তার চেয়ে অনেক অনেক গুণ ভাল। তাই, কখনও কেউ যেন না বলে যে প্রথম যখন আমরা সত্য শিখেছিলাম তখন আমাদের মধ্যে যে প্রেম ছিল তা এখন আর নেই। বরং প্রথম শতাব্দীর থুয়াতীরা মণ্ডলীর মতো আমাদের সম্বন্ধেও যেন এই কথা বলা হয়: “আমি জানি তোমার কর্ম্ম সকল ও তোমার প্রেম ও বিশ্বাস ও পরিচর্য্যা ও ধৈর্য্য, আর তোমার প্রথম কর্ম্ম অপেক্ষা প্রচুরতর শেষ কর্ম্ম আমি জানি।” (প্রকাশিত বাক্য ২:৪, ১৮, ১৯) হ্যাঁ, আসুন আমরা আমাদের উৎসর্গীকরণের বিষয়ে কদুষ্ণ হয়ে না পড়ি বরং “আত্মায় উত্তপ্ত” হয়ে শেষ পর্যন্ত উদ্যোগ দেখাই কারণ শেষ একেবারে কাছেই।—রোমীয় ১২:১১; প্রকাশিত বাক্য ৩:১৫, ১৬.

[পাদটীকাগুলো]

^ ১৯৮৭ সালের ১৫ই এপ্রিল প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) এর ৩১ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ আরনেস্ট বিভোরের জীবন সম্বন্ধে আরও জানার জন্য ১৯৮০ সালের ১৫ই মার্চ প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) এর ৮-১১ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ ওয়াচটাওয়ার বাইবেল আ্যন্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটির দ্বারা প্রকাশিত যিহোবার সাক্ষিদের বর্ষপুস্তক ১৯৭৮ (ইংরেজি) এর ১৫৬-৮, ২০১-১৮ পৃষ্ঠা দেখুন।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• আমাদের উৎসর্গীকরণের সঙ্গে কী জড়িত?

• প্রাচীন এবং বর্তমান কালের ঈশ্বরের দাসদের কোন্‌ উদাহরণগুলো আমাদের অনুকরণ করার উপযুক্ত?

• ঈশ্বরের প্রতি করা আমাদের পরিচর্যাকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?

• ঈশ্বরের কাছে আমাদের উৎসর্গীকরণের বিষয়ে কোন্‌ সংকল্প নেওয়া উচিত?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

খুব খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে থেকেও যিরমিয় বিশ্বস্ত ছিলেন

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

আরনেস্ট বিভোর উদ্যোগী খ্রীষ্টান হিসেবে তার ছেলেমেয়েদের জন্য উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

শত শত যুবক সাক্ষিরা স্পেনের জেলে থেকেও তাদের বিশ্বস্ততা বজায় রেখেছিলেন

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আসুন আমরা প্রতিদিন আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে ভাল কাজ করি