আধ্যাত্মিক পরমদেশ কী?
আধ্যাত্মিক পরমদেশ কী?
গুসটাভো, ব্রাজিলের এক ছোট্ট শহরে বড় হয়েছিলেন। * ছেলেবেলা থেকেই তাকে শেখানো হয়েছিল যে ভাল লোকেরা মারা যাওয়ার পর স্বর্গে যান। তিনি ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে কিছুই জানতেন না যে বিশ্বস্ত মানুষেরা একসময় পরমদেশ পৃথিবীতে সিদ্ধ জীবন উপভোগ করবে। (প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪) তিনি আরও একটা বিষয় জানতেন না। তিনি কখনও চিন্তাও করেননি যে, এমনকি এখনই তিনি আধ্যাত্মিক পরমদেশে থাকতে পারেন।
আপনি কি কখনও আধ্যাত্মিক পরমদেশের কথা শুনেছেন? আপনি কি জানেন এটা কী এবং এর অংশ হতে গেলে কীসের দরকার? কেউ যদি সত্যিকারভাবে সুখী হতে চান, তাহলে এই পরমদেশ সম্বন্ধে তার জানা দরকার।
আধ্যাত্মিক পরমদেশ কোথায় তা জানা
এখনই একজন ব্যক্তি পরমদেশে বাস করতে পারেন বললে হয়তো অবাস্তব শোনাবে। এই জগৎকে পরমদেশ বলা যেতে পারে না। কারণ আজকে, বেশির ভাগ লোকই প্রাচীন ইব্রীয় রাজার বলা অবস্থায় আছেন: “দেখ, উপদ্রুত লোকদের অশ্রুপাত হইতেছে, কিন্তু তাহাদের সান্ত্বনাকারী কেহ নাই; উপদ্রবী লোকদের হস্তে বল আছে, কিন্তু উপদ্রুত লোকদের সান্ত্বনাকারী কেহ নাই।” (উপদেশক ৪:১) কোটি কোটি লোকেরা কলুষিত রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে থেকে কষ্ট ভোগ করছে আর এগুলো থেকে তারা মুক্তি পাচ্ছে না বা তাদের কোন “সান্ত্বনাকারী” নেই। অনেকে সংসারের বিভিন্ন খরচ মেটাতে, ছেলেমেয়ে মানুষ করতে এবং বেঁচে থাকার জন্য আরও অন্যান্য চাহিদা মেটাতে গিয়ে হিমশিম খান। তারাও হয়তো একজন সান্ত্বনাকারীকে চাইবেন, যিনি তাদের বোঝাকে কিছুটা হালকা করবেন। তাদের সকলের কাছে জীবন, পরমদেশের মতো সুখের নয়।
তাহলে, আধ্যাত্মিক পরমদেশ কোথায়? যে গ্রিক ও ইব্রীয় শব্দকে “পরমদেশ” অনুবাদ করা হয়েছে তা আসলে পার্ক বা বাগান অর্থাৎ এমন এক শান্তিপূর্ণ জায়গাকে বোঝায়, যেখানে বিশ্রাম নেওয়া ও মনকে সতেজ করা যায়। বাইবেল প্রতিজ্ঞা করে যে একসময় এই পৃথিবী সত্যিকারের পরমদেশ অর্থাৎ বাগান বাড়ির মতো হবে, যেখানে পাপহীন মানুষরা থাকবে। (গীতসংহিতা ৩৭:১০, ১১) এই কথা মনে রেখে আমরা বুঝতে পারি যে আধ্যাত্মিক পরমদেশ হল এমন একটা পরিবেশ, যা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়, মনে প্রশান্তি এনে দেয় এবং যেখানে একজন ব্যক্তি অন্য লোকেদের ও ঈশ্বরের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক উপভোগ করতে পারে। আজকে এইরকম একটা পরমদেশ আছে, যেটা গুসটাভো খুঁজে পেয়েছেন আর তারই মতো আরও অসংখ্য লোকেরা এই পরমদেশের অংশ হচ্ছেন।
১২ বছর বয়সে গুসটাভো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে তিনি একজন রোমান ক্যাথলিক পাদরি হবেন। তার বাবামার অনুমতি নিয়ে তিনি ধর্মীয় সেমিনারিতে যোগ দেন। সেখানে তিনি গানবাজনা, নাটক এবং রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। যুবকদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য গির্জাই এগুলোর ব্যবস্থা করেছিল। তিনি জানতেন যে, একজন পাদরির নিজেকে অন্যের সেবায় বিলিয়ে দিতে হবে এবং কখনও বিয়ে করতে পারবেন না। কিন্তু গুসটাভো এমন কিছু পাদরি এবং সেমিনারের ছাত্রদেরকে জানতেন, যারা অনৈতিক কাজ করত। এইরকম এক পরিবেশের মধ্যে পড়ে গুসটাভো প্রচুর মদ খেতে শুরু করেন। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, তখনও তিনি আধ্যাত্মিক পরমদেশ খুঁজে পাননি।
একদিন গুসটাভো একটা বাইবেল ভিত্তিক ট্র্যাক্ট পড়েন যেখানে পরমদেশ পৃথিবীর কথা লেখা ছিল। এটা পড়ার পর তিনি তার জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। তিনি বলেন: “আমি বাইবেল পড়তে শুরু করি কিন্তু আমি তা বুঝতে পারতাম না। এমনকি আমি কখনও দেখিনি যে বাইবেলে ঈশ্বরের একটা নাম আছে।” তিনি সেমিনারি ছেড়ে চলে আসেন
এবং বাইবেল বোঝার জন্য যিহোবার সাক্ষিদের সাহায্য নেন। এরপর তিনি দ্রুত উন্নতি করতে থাকেন এবং খুব শীঘ্রিই ঈশ্বরের কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। গুসটাভো আধ্যাত্মিক পরমদেশ সম্বন্ধে জানতে শুরু করেন।ঈশ্বরের নামের জন্য একদল প্রজা
গুসটাভো শিখেছিলেন যে, বাইবেল ছাত্রদের কাছে যিহোবা ঈশ্বরের নাম জানা শুধু একটা আগ্রহের বিষয় নয়। (যাত্রাপুস্তক ৬:৩) এটা সত্য উপাসনার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যীশু তাঁর অনুগামীদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন: “হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ, তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক।” (মথি ৬:৯) যে পরজাতীয়রা খ্রীষ্টান হয়েছিলেন, তাদের সম্বন্ধে বলতে গিয়ে শিষ্য যাকোব বলেছিলেন: “ঈশ্বর আপন নামের জন্য পরজাতিগণের মধ্য হইতে এক দল প্রজা গ্রহণার্থে . . . তাহাদের তত্ত্ব লইয়াছিলেন।” (প্রেরিত ১৫:১৪) প্রথম শতাব্দীতে ঈশ্বরের “আপন নামের জন্য . . . একদল প্রজা” ছিল খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী। আজকেও কি ঈশ্বরের নামের জন্য একদল প্রজা আছে? হ্যাঁ, গুসটাভো বুঝতে পেরেছিলেন যে যিহোবার সাক্ষিরা হলেন সেই প্রজা।
যিহোবার সাক্ষিরা দেশ এবং দ্বীপ মিলিয়ে ২৩৫টা জায়গায় কাজ করছেন। তাদের সংখ্যা ষাট লক্ষের বেশি এবং আরও আশি লক্ষ আগ্রহী ব্যক্তি তাদের সঙ্গে সভাগুলোতে যোগ দেন। তারা যে লোকেদের কাছে প্রচার করেন, তা সবাই-ই জানে আর এটা করার দ্বারা তারা যীশুর এই কথাগুলো পরিপূর্ণ করছেন: “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে।” (মথি ২৪:১৪) কিন্তু, যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে মেলামেশা করে গুসটাভো কেন বলেছিলেন যে তিনি আধ্যাত্মিক পরমদেশ খুঁজে পেয়েছেন? তিনি বলেন: “যিহোবার সাক্ষিদের মধ্যে আমি যা খুঁজে পেয়েছিলাম তার সঙ্গে আমি এই জগতে, বিশেষ করে সেমিনারিতে যা দেখেছিলাম তার তুলনা করেছিলাম। আর সবচেয়ে বড় যে পার্থক্যটা আমি দেখেছিলাম, তা হল যিহোবার সাক্ষিদের মধ্যে প্রেম আছে।”
অন্যরাও যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে একইরকম মন্তব্য করেছিলেন। মিরিয়াম নামে ব্রাজিলের এক যুবতী বলেছিলেন: “আমি জানতাম না যে কীভাবে সুখী হওয়া যায়, এমনকি পারিবারিক জীবনে কীভাবে সুখী হওয়া যায় তা-ও আমি জানতাম না। একমাত্র যিহোবার সাক্ষিদের মধ্যেই প্রথম আমি প্রেম দেখেছিলাম।” ক্রিস্টিয়ান নামে একজন ব্যক্তি বলেছিলেন: “আমি মাঝে মাঝে শখের বসে প্রেতচর্চা করতাম কিন্তু ধর্ম সম্বন্ধে আমার খুব কমই আগ্রহ ছিল। আমি আমার সামাজিক পদমর্যাদা এবং ইঞ্জিনিয়ারিং পেশাকে বেশি মূল্য দিতাম। কিন্তু, আমার স্ত্রী যখন যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেন, তখন আমি তার মধ্যে কিছু পরিবর্তন দেখতে পাই। এছাড়াও, যে খ্রীষ্টান মহিলারা তার কাছে আসতেন তাদের আনন্দ এবং উদ্যোগও আমার ওপর গভীর ছাপ ফেলেছিল।” যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে লোকেরা কেন এইরকম কথা বলে?
আধ্যাত্মিক পরমদেশ কী?
যে বিষয়টা যিহোবার সাক্ষিদেরকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে তা হল, বাইবেলের জ্ঞানের প্রতি তাদের উপলব্ধি। তারা বিশ্বাস করেন যে বাইবেল হল সত্য এবং ঈশ্বরের বাক্য। তাই, তারা শুধু তাদের ধর্মের মৌলিক বিষয়গুলো জেনেই সন্তুষ্ট থাকেন না। তারা নিয়মিত ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করেন এবং বাইবেল পড়েন। একজন ব্যক্তি যত বেশি যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে মেলামেশা করবেন, ঈশ্বর এবং তাঁর ইচ্ছা সম্বন্ধে বাইবেল যা জানায় সেই বিষয়ে তিনি তত বেশি জানতে পারবেন।
এই জ্ঞান যিহোবার সাক্ষিদেরকে সেই সমস্ত বিষয়গুলো থেকে স্বাধীন করে, যা মানুষের সুখ কেড়ে নেয় যেমন, কুসংস্কার এবং ক্ষতিকর মতবাদগুলো। যীশু বলেছিলেন: “সত্য তোমাদিগকে স্বাধীন করিবে” আর যিহোবার সাক্ষিরা সেই সত্য খুঁজে পেয়ে স্বাধীন হয়েছেন। (যোহন ৮:৩২) ফেরনানডো যিনি আগে প্রেতচর্চা করতেন, তিনি বলেন: “অনন্ত জীবন সম্বন্ধে জানা আমার জন্য ছিল একটা বড় মুক্তি। আমার মধ্যে সবসময় মৃত্যুভয় কাজ করত যে বাবামা বা আমি মারা গেলে কী হবে।” কিন্তু, সত্য ফেরনানডোকে ভূতপ্রেত এবং মারা যাওয়ার পর কী হবে সেই ভয় থেকে স্বাধীন করেছে।
বাইবেলে ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান এবং পরমদেশ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ভাববাদী যিশাইয় বলেছিলেন: “সে সকল আমার পবিত্র পর্ব্বতের কোন স্থানে হিংসা কিম্বা বিনাশ করিবে না; কারণ সমুদ্র যেমন জলে আচ্ছন্ন, তেমনি পৃথিবী সদাপ্রভু-বিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে।”—যিশাইয় ১১:৯.
অবশ্য যিশাইয় যে শান্তি সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, গালাতীয় ৫:২২, ২৩.
তা আনার জন্য শুধু জ্ঞানই যথেষ্ট নয়। একজন ব্যক্তি যা শিখছেন, তা তার নিজের জীবনে কাজে লাগাতে হবে। ফেরনানডো বলেছিলেন: “একজন ব্যক্তি যখন আত্মার ফলগুলো উৎপন্ন করেন, তখন তিনি আধ্যাত্মিক পরমদেশ গড়ে তোলায় অবদান রাখেন।” ফেরনানডো এখানে প্রেরিত পৌলের কথাগুলোর প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করছিলেন। প্রেরিত বলেছিলেন যে একজন খ্রীষ্টানকে ভাল গুণগুলো অর্থাৎ “আত্মার ফল” গড়ে তুলতে হবে। তিনি সেগুলোর একটা তালিকা দিয়েছিলেন যেমন, “প্রেম, আনন্দ, শান্তি, দীর্ঘসহিষ্ণুতা, মাধুর্য্য, মঙ্গলভাব, বিশ্বস্ততা, মৃদুতা, ইন্দ্রিয়দমন।”—আপনি কি বুঝতে পারছেন যে এই গুণগুলো গড়ে তোলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছেন এমন একটা সংঘবদ্ধ দলের লোকেদের সঙ্গে মেলামেশা করা কেন পরমদেশে থাকার মতোই হবে? ভাববাদী সফনিয় যে আধ্যাত্মিক পরমদেশের কথা বলেছিলেন, তা এই লোকেদের মধ্যে আছে। তিনি বলেছিলেন: “[তাহারা] অন্যায় করিবে না, মিথ্যাকথা বলিবে না, এবং তাহাদের মুখে প্রতারক জিহ্বা থাকিবে না; বস্তুতঃ তাহারা চরিবে ও শয়ন করিবে, তাহাদিগকে ভয় দেখাইবার কেহ থাকিবে না।”—সফনিয় ৩:১৩.
প্রেমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
আপনি হয়তো লক্ষ্য করেছেন, আত্মার যে ফলগুলোর কথা পৌল বলেছেন, তার মধ্যে প্রথমটা হল প্রেম। এই গুণটা সম্বন্ধে বাইবেলে অনেক কিছু বলা আছে। যীশু বলেছিলেন: “তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।” (যোহন ১৩:৩৫) এটা ঠিক যে যিহোবার সাক্ষিরা সিদ্ধ নন। যীশুর শিষ্যদের মধ্যে যেমন ছিল, তেমনই তাদের মধ্যেও কখনও কখনও মতভেদ দেখা দেয়। কিন্তু, তারা মন থেকে একে অন্যকে প্রেম করেন এবং এই গুণ গড়ে তোলার জন্য পবিত্র আত্মার সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করেন।
আর এর ফলে তাদের মধ্যে পরস্পরকে সহযোগিতা করার যে মনোভাব রয়েছে, তা আর কোথাও দেখা যায় না। তাদের মধ্যে জাতি বা উপজাতিগত ভেদাভেদ নেই। বিংশ শতাব্দীর শেষের বছরগুলোতে যে সাম্প্রদায়িক বিলোপসাধন এবং একটা জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য যে ব্যাপক হত্যা হয়েছিল, তার মধ্যে অনেক সাক্ষিরা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও একজন আরেকজনকে বাঁচিয়েছিলেন। যদিও তারা “প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার বিস্তর লোক” থেকে আসছেন, তবুও তাদের মধ্যে একতা রয়েছে আর যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি এর অংশ হচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তা উপলব্ধি করতে পারবেন না।—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯.
যারা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করেন তাদের মধ্যে পরমদেশ
আধ্যাত্মিক পরমদেশে লোভ, অনৈতিকতা এবং স্বার্থপরতার কোন জায়গা নেই। খ্রীষ্টানদের বলা হয়েছে: “এই যুগের অনুরূপ হইও না, কিন্তু মনের নূতনীকরণ দ্বারা স্বরূপান্তরিত হও; যেন তোমরা পরীক্ষা করিয়া জানিতে পার, ঈশ্বরের ইচ্ছা কি, যাহা উত্তম ও প্রীতিজনক ও সিদ্ধ।” (রোমীয় ১২:২) আমরা যখন শুদ্ধ ও নৈতিক জীবনযাপন করি এবং সমস্ত ব্যাপারে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করি, তখন আমরা আধ্যাত্মিক পরমদেশ গড়ে তুলতে সাহায্য করি ও নিজেদের জন্য সুখ নিয়ে আসি। কার্লার জীবনে এটা সত্যি হয়েছিল। তিনি বলেন: “আর্থিক দিক দিয়ে স্বচ্ছল হওয়ার জন্য বাবা আমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে শিখিয়েছিলেন। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে আমি আর্থিক নিরাপত্তা পেয়েছি কিন্তু পরিবারের সঙ্গে মেলামেশা করার সুযোগ এবং সেই নিরাপত্তা আমি হারিয়েছিলাম, যা কিনা একমাত্র ঈশ্বরের বাক্যই দিতে পারে।”
অবশ্য, আধ্যাত্মিক পরমদেশে থাকার মানে এই নয় যে আমাদের জীবনের সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে। খ্রীষ্টানরাও অসুস্থ গীতসংহিতা ৫৫:২২; ৮৬:১৬, ১৭) ঈশ্বর ‘মৃত্যুচ্ছায়ার উপত্যকায়’ চলার সময়ও তাঁর দাসদের সঙ্গে থাকবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন। (গীতসংহিতা ২৩:৪) ঈশ্বর আমাদেরকে সাহায্য করার জন্য তৈরি, এই দৃঢ় বিশ্বাস “সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি” তা বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা আধ্যাত্মিক পরমদেশের একটা প্রধান বৈশিষ্ট্য।—ফিলিপীয় ৪:৭.
হন। যে জাতির মধ্যে তারা বাস করেন সেখানে হয়তো তারা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মধ্যে পড়তে পারেন। অনেকের টাকাপয়সার অভাব রয়েছে। তারপরও যিহোবার সঙ্গে কাছের সম্পর্ক থাকায়—যা কিনা আধ্যাত্মিক পরমদেশের এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—আমরা তাঁর কাছে সাহায্য চাইতে পারি। আসলে, তিনি ‘আমাদের ভার তাঁহার ওপর অর্পণ’ করতে আমন্ত্রণ জানান আর এর ফলে অনেকে সাক্ষ্য দিতে পারেন যে, তাদের কঠিন সময়ে তিনি কত অপূর্ব উপায়ে তাদেরকে সাহায্য করেছেন। (আধ্যাত্মিক পরমদেশ গড়ে তোলায় অবদান রাখা
সবাই-ই পার্কে বা বাগানে বেড়াতে ভালবাসে। তারা সেখানে হাঁটতে বা সেখানকার একটা বেঞ্চে বসে চারপাশের পরিবেশ দেখতে ভালবাসে। একইভাবে অনেকেই যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে মেলামেশা করে আনন্দ পান। তারা একে অন্যের সঙ্গে মেলামেশা করে সতেজ হন, শান্তি পান এবং পুনরুজ্জীবিত হন। কিন্তু, সুন্দর একটা বাগানকে পরমদেশের মতো সুন্দর করে রাখতে চাইলে এর যত্ন নিতে হবে। একইভাবে, এই অসুন্দর জগতে আধ্যাত্মিক পরমদেশ শুধুমাত্র যিহোবার সাক্ষিরাই গড়ে তোলেন এবং তাদের এই কাজে ঈশ্বর সাহায্য করেন। তাহলে, কীভাবে একজন ব্যক্তি আধ্যাত্মিক পরমদেশ গড়ে তোলার কাজে অর্থপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন?
প্রথমত, আপনাকে যিহোবার সাক্ষিদের একটা মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা করতে ও তাদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করে বাইবেলের জ্ঞান নিতে হবে, যা হল আধ্যাত্মিক পরমদেশের ভিত্তি। কার্লা বলেছিলেন: “আধ্যাত্মিক খাদ্য ছাড়া আধ্যাত্মিক পরমদেশ হতে পারে না।” এর মধ্যে রয়েছে নিয়মিত ঈশ্বরের বাক্য পড়া এবং যা পড়েছেন, তা নিয়ে ধ্যান করা। আর জ্ঞান নিলে আপনি ঈশ্বরের আরও নিকটবর্তী হতে পারবেন এবং তাঁকে ভালবাসতে পারবেন। এছাড়াও, প্রার্থনার মাধ্যমে আপনি তাঁর সঙ্গে কথা বলতে শিখবেন এবং আপনি যেন তাঁর ইচ্ছা পালন করতে পারেন সেইজন্য প্রার্থনায় তাঁর নির্দেশনা এবং পবিত্র আত্মার সাহায্য চাইতে পারবেন। যীশু আমাদেরকে সবসময় প্রার্থনা করতে বলেছেন। (লূক ১১:৯-১৩) প্রেরিত পৌল বলেছেন: “অবিরত প্রার্থনা কর।” (১ থিষলনীকীয় ৫:১৭) প্রার্থনা হল ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলার একটা বিরাট সুযোগ আর ঈশ্বর আপনার প্রার্থনা শুনছেন এই দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে প্রার্থনা করা আধ্যাত্মিক পরমদেশের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, আপনি যা শিখছেন তা আপনার জীবনকে বদলে দেবে এবং একসময় আপনিও হয়তো অন্যদেরকে এই বিষয়ে জানাতে চাইবেন। তখন যীশুর এই আদেশ আপনি পালন করতে পারবেন: “তোমাদের দীপ্তি মনুষ্যদের সাক্ষাতে উজ্জ্বল হউক, যেন তাহারা তোমাদের সৎক্রিয়া দেখিয়া তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার গৌরব করে।” (মথি ৫:১৬) যিহোবা ঈশ্বর এবং যীশু খ্রীষ্ট সম্বন্ধে অন্যদের জ্ঞান দেওয়া এবং মানবজাতির জন্য তাঁরা যে প্রেম দেখিয়েছেন, তার জন্য তাঁদের প্রশংসা করা আমাদেরকে সুখী করবে।
সেই সময় আসতে যাচ্ছে যখন সমস্ত পৃথিবী সত্যি সত্যিই পরমদেশ অর্থাৎ একটা বাগানের মতো হবে, যেখানে কোন দূষণ থাকবে না এবং বিশ্বস্ত মানুষের বসবাসের জন্য সেটা হবে একটা উপযুক্ত জায়গা। এই ‘বিষম সময়ে’ আধ্যাত্মিক পরমদেশ থাকা হল, ঈশ্বরের ক্ষমতার একটা প্রমাণ এবং তিনি যা করতে পারেন ও ভবিষ্যতে যা করবেন তার একটা নিদর্শন।—২ তীমথিয় ৩:১.
এমনকি এখনই যারা আধ্যাত্মিক পরমদেশে রয়েছেন, তারা যিশাইয় ৪৯:১০ পদে বলা কথাগুলোর পরিপূর্ণতা আধ্যাত্মিক অর্থে উপভোগ করছেন, যেখানে বলা আছে: “তাহারা ক্ষুধিত কি পিপাসিত হইবে না; এবং তপ্ত বালুকা কি রৌদ্র দ্বারা আহত হইবে না; কেননা যিনি তাহাদের প্রতি দয়াকারী, তিনি তাহাদিগকে চরাইবেন, জলের উনুইয়ের নিকটে লইয়া যাইবেন।” এই কথাগুলো যে সত্যি সেই বিষয়ে হোজে তার দৃঢ় বিশ্বাসের কথা বলেন। তিনি একসময় বড় সংগীত শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন কিন্তু খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে ঈশ্বরের সেবা করতে পেরে তিনি আরও বেশি তৃপ্তি পেয়েছেন। তিনি বলেন: “এখন আমি এক অর্থপূর্ণ জীবনযাপন করছি। খ্রীষ্টান ভাইবোনদের সঙ্গে থাকলে আমি নিরাপত্তা বোধ করি এবং যিহোবাকে আমি একজন প্রেমময় পিতা হিসেবে জানি, যাঁর ওপর আমরা ভরসা করতে পারি।” হোজের এবং তার মতো আরও লক্ষ লক্ষ লোকেদের আনন্দের কথা গীতসংহিতা ৬৪:১০ সঠিকভাবে বলা হয়েছে। সেখানে বলা আছে: “ধার্ম্মিক লোক সদাপ্রভুতে আনন্দ করিবে, ও তাঁহার শরণাগত থাকিবে।” আধ্যাত্মিক পরমদেশের কত সুন্দর বর্ণনা!
[পাদটীকা]
^ এখানে যাদের কথা বলা হয়েছে, তারা কাল্পনিক চরিত্র নয় কিন্তু কিছুজনের নাম পালটে দেওয়া হয়েছে।
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
আধ্যাত্মিক পরমদেশ উপভোগ করার সঙ্গে সঙ্গে এটাকে আরও বাড়াতে সাহায্য করুন!