মধ্যপ্রাচ্যে আধ্যাত্মিক জ্যোতি আলোকিত হয়
জীবন কাহিনী
মধ্যপ্রাচ্যে আধ্যাত্মিক জ্যোতি আলোকিত হয়
বলেছেন ন্যাজিব সালেম
সাধারণ কাল প্রথম শতাব্দীতে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ঈশ্বরের বাক্যের জ্যোতি আলোকিত হয়েছিল আর সেখান থেকে পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। বিংশ শতাব্দীতে, বিশ্বের এই অংশকে আলোকিত করার জন্য সেই জ্যোতি আবার এখানে ফিরে এসেছে। তা কীভাবে হয়েছে, সেই কথাই আমি আপনাদের বলছি।
উত্তর লেবাননের আমিয়ুন শহরে ১৯১৩ সালে আমার জন্ম। সেই বছরটা বিশ্বে কিছু সময়ের জন্য স্থির ও শান্ত অবস্থার শেষ বছর ছিল কারণ এর পরের বছরই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। ১৯১৮ সালে যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর, একসময়ে মধ্যপ্রাচ্যের মুক্তো বলে পরিচিত লেবানন, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দুদিক দিয়েই একেবারে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিল।
১৯২০ সালে, লেবাননে ডাক ব্যবস্থা যখন আবার চালু হতে শুরু করে তখন লেবাননের যে লোকেরা বিদেশে থাকত তারা চিঠিপত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে শুরু করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন আমার দুই মামা আবদুল্লাহ্ ও জর্জ গানতুস। তারা তাদের বাবা অর্থাৎ আমার দাদু হাবিব গানতুসকে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে জানিয়ে চিঠি লেখেন। (মথি ২৪:১৪) ছেলেরা চিঠিতে তাকে যা লিখেছে, সেই কথা দাদু যখন আশেপাশের লোকেদের কাছে বলেন, তখন সবাই তাকে বিদ্রূপ করে। শহরের লোকেরা এই গুজব ছড়িয়ে দেয় যে, হাবিবের ছেলেরা তাদের বাবাকে জমি বিক্রি করে একটা গাধা কিনে প্রচারে বের হতে বুদ্ধি দিয়েছে।
শুরুর দিকে জ্যোতি ছড়ানো
এর পরের বছর, ১৯২১ সালে, মিশেল আবুদ যিনি এতদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে থাকতেন তিনি লেবাননের ত্রিপলিতে ফিরে আসেন। তিনি একজন বাইবেল ছাত্র হয়ে গিয়েছিলেন, যিহোবার সাক্ষিদেরকে তখন এভাবেই ডাকা হতো। যদিও ভাই আবুদের বেশির ভাগ বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনই
বাইবেলের বার্তা শুনে সাড়া দেননি কিন্তু দুজন সুপরিচিত ব্যক্তি, ইব্রাহিম আতিয়াহ্ নামে একজন অধ্যাপক ও হান্না শামস্ নামে একজন ডেন্টিস্ট এর প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। ডা. শামস্ এমনকি তার বাড়িতে ও ক্লিনিকে খ্রীষ্টীয় সভাগুলো করার ব্যবস্থা করেছিলেন।আমিয়ুনে থাকার সময় ভাই আবুদ ও ভাই শামস্ যখন সেখানে এসেছিলেন তখন আমি বেশ ছোট ছিলাম। তাদের পরিদর্শন আমার ওপর গভীর ছাপ ফেলেছিল এবং আমি ভাই আবুদের সঙ্গে প্রচারে যেতে শুরু করেছিলাম। ১৯৬৩ সালে ভাই আবুদের মৃত্যুর আগে পর্যন্ত, ৪০ বছর ধরে আমরা প্রচারে সবসময় দুজন দুজনের সঙ্গী ছিলাম।
১৯২২ থেকে ১৯২৫ সালের মধ্যে উত্তর লেবাননের অনেক গ্রামে বাইবেলের সত্য ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ২০ থেকে ৩০ জন ব্যক্তি লোকেদের বাড়িতে, যেমন আমিয়ুনে আমাদের বাড়িতে বাইবেলের বিষয় আলোচনা করার জন্য মিলিত হতেন। একজন পাদরি আমাদের সভাগুলোতে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য ছেলেমেয়েদেরকে টিন বাজাতে ও চিৎকার চ্যাঁচামেচি করতে পাঠিয়ে দিতেন। তাই, মাঝেমধ্যে আমরা পাইন গাছের জঙ্গলে গিয়ে মিলিত হতাম।
যুবক বয়সে প্রচার কাজে আমার উদ্যোগ ও প্রতিটা খ্রীষ্টীয় সভাতে উপস্থিত থাকতে দেখে আমাকে সবাই তীমথি নাম দিয়েছিলেন। স্কুলের পরিচালক আমাকে তার ভাষায় “ওই সভাগুলোতে” যেতে নিষেধ করেন। তার কথা না শোনায় আমাকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়।
বাইবেলের দেশগুলোতে সাক্ষ্য দেওয়া
১৯৩৩ সালে বাপ্তিস্ম নেওয়ার পরপরই আমি অগ্রগামীর কাজ শুরু করি। যিহোবার সাক্ষিদের পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যাকে অগ্রগামীর কাজ বলা হয়। সেই সময় যদিও আমরা হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন ছিলাম কিন্তু তাই বলে আমরা শুধু লেবাননের উত্তরাঞ্চলের গ্রামগুলোতেই প্রচার করিনি কিন্তু সেইসঙ্গে বৈরুত ও এর শহরতলিগুলো এবং লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলেও প্রচার করেছিলাম। সেই সময়ে সাধারণত আমরা হেঁটে বা গাধার পিঠে চড়ে যাত্রা করতাম, ঠিক যেমন যীশু খ্রীষ্ট ও তাঁর প্রথম শতাব্দীর অনুসারীরা করতেন।
১৯৩৬ সালে ইউসুফ রাকাল নামে লেবাননের একজন সাক্ষি, যিনি অনেক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকতেন, তিনি লেবাননে বেড়াতে আসেন। তিনি তার সঙ্গে লাউডস্পীকার ও দুটো ফনোগ্রাফ নিয়ে আসেন। আমরা ওই লাউডস্পীকারকে ১৯৩১ সালের ফোর্ড গাড়িতে চড়িয়ে সারা লেবানন ও সিরিয়া জুড়ে ভ্রমণ করেছিলাম এবং দূরদূরান্তে রাজ্যের বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলাম। ওই লাউডস্পীকারের আওয়াজ দশ কিলোমিটারেরও বেশি দূর থেকে শোনা যাচ্ছিল। লোকেরা ওই কথা শোনার জন্য বাড়ির ছাদে উঠে গিয়েছিল এবং সেই কথাগুলোকে স্বর্গ থেকে ভেসে আসা স্বর বলেছিল। যারা সেই সময় মাঠে কাজ করছিল তারা সেটা শোনার জন্য কাজ ফেলে আরও কাছে আসে।
১৯৩৭ সালে শীতের সময়, সিরিয়ার আ্যলেপোতে যাওয়াই ছিল ইউসুফ রাকালের সঙ্গে আমার শেষ ভ্রমণ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার আগে আমরা প্যালেস্টাইনেও গিয়েছিলাম। সেখানে আমরা হাইফা ও যিরূশালেমে এবং সেইসঙ্গে ওই দেশের বিভিন্ন গ্রামেও গিয়েছিলাম। আমাদের দুজনের ইব্রাহিম শিহাদির সঙ্গে একবার দেখা হয়েছিল, যার সঙ্গে আগে থেকেই আমি চিঠিপত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ করায় পরিচিত ছিলাম। ওই সময়ের মধ্যে ইব্রাহিম বাইবেলের জ্ঞানে এতটাই উন্নতি করেছিলেন যে আমরা যখন সেখানে গিয়েছিলাম সেই সময়ে তিনি আমাদের সঙ্গে ঘরে-ঘরে প্রচারে গিয়েছিলেন।—প্রেরিত ২০:২০.
এছাড়া খালিল কোবরোশি নামে একজন গোঁড়া ক্যাথলিক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করার জন্যও আমি খুবই আগ্রহী ছিলাম, যিনি চিঠিপত্রের মাধ্যমে যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করছিলেন। কীভাবে তিনি লেবাননের সাক্ষিদের ঠিকানা পেয়েছিলেন? হাইফার একটা দোকানের দোকানদার খালিলের কয়েকটা জিনিস যিহোবার সাক্ষিদের একটা প্রকাশনা থেকে কাগজ ছিঁড়ে সেটাতে মুড়িয়ে দিয়েছিলেন। ওই কাগজে আমাদের ঠিকানা ছিল। আমরা একসঙ্গে খুব আনন্দেই সময় কাটিয়েছিলাম এবং পরে ১৯৩৯ সালে তিনি বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য ত্রিপলিতে এসেছিলেন।
১৯৩৭ সালে পেট্রস লাগাকস ও তার স্ত্রী ত্রিপলিতে এসে পৌঁছান। পরের কয়েক বছর আমরা তিনজন রাজ্যের বার্তা নিয়ে লোকেদের ঘরে-ঘরে গিয়ে লেবানন ও সিরিয়ার বেশির ভাগ জায়গায় প্রচার করে ফেলি। ভাই লাগাকস ১৯৪৩ সালে যখন মারা যান এর মধ্যে সাক্ষিরা লেবানন, সিরিয়া ও প্যালেস্টাইনের বেশির ভাগ শহর ও গ্রামগুলোতে আধ্যাত্মিক জ্যোতি পৌঁছে দিয়েছিলেন। মাঝেমধ্যে আমরা প্রায় ৩০ জন দূরের এলাকাগুলোতে যাওয়ার জন্য ভোর ৩:০০টের সময় উঠে গাড়ি বা বাসে করে যাত্রা শুরু করতাম।
১৯৪০ এর দশকে ইব্রাহিম আতিয়াহ্ প্রহরীদুর্গ-কে আরবি ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন। এর পরে আমি ওই পত্রিকা দেখে হাতে লিখে চারটে কপি বানাতাম ও প্যালেস্টাইন, সিরিয়া এবং মিশরের সাক্ষিদের কাছে পাঠিয়ে দিতাম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ওই দিনগুলোতে আমাদের প্রচার কাজে অনেক বিরোধিতা এসেছিল কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে যারাই বাইবেলের সত্যকে ভালবাসতেন তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রেখেছিলাম। আমি ব্যক্তিগতভাবে ওখানকার শহর ও আশেপাশের গ্রামগুলোর মানচিত্র এঁকেছিলাম এবং তাদের কাছে আমরা সুসমাচার নিয়ে গিয়েছিলাম।
১৯৪৪ সালে যখন পুরোদমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছিল, তখন আমি আমার অগ্রগামী সঙ্গী মিশেল আবুদের মেয়ে ইভলিনকে বিয়ে করি। আমাদের তিনজন ছেলেমেয়ে হয়, এক মেয়ে ও দুই ছেলে।
মিশনারিদের সঙ্গে কাজ করা
যুদ্ধ শেষ হওয়ার কিছু পরেই, মিশনারিদের জন্য যে গিলিয়েড স্কুল হয়েছিল তার প্রথম গ্র্যাজুয়েটরা লেবাননে এসে পৌঁছান। এর ফলে, লেবাননে প্রথম মণ্ডলী প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ও আমাকে কোম্পানি সারভেন্ট নিযুক্ত করা হয়েছিল। তারপর, ১৯৪৭ সালে নেথেন এইচ. নর এবং তার সচিব মিলটন জি. হেনশেল লেবাননে এসেছিলেন ও এখানকার ভাইদেরকে অনেক উৎসাহ দিয়েছিলেন। শীঘ্রিই এখানে আরও মিশনারিরা আসেন এবং প্রচার কাজকে সংগঠিত করতে ও মণ্ডলীর সভাগুলোকে পরিচালনা করতে তারা আমাদেরকে অনেক সাহায্য করেছিলেন।
সিরিয়ার এক দূরের এলাকায় গিয়ে আমরা স্থানীয় বিশপের কাছ থেকে আসা বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছিলাম। তিনি প্রকাশনাগুলোকে জায়নিস্টিক প্রকাশনা বলে সেগুলোকে বিতরণ করার জন্য আমাদেরকে দোষী করেছিলেন। ১৯৪৮ সালের আগে পাদরিরা প্রায়ই আমাদেরকে উপহাস করে “সাম্যবাদী” বলে ডাকতেন। এই কারণে আমাদেরকে গ্রেপ্তার ও দুঘন্টা ধরে জেরা করা হয়েছিল আর সেই সময়ে আমরা চমৎকার সাক্ষ্য দিতে পেরেছিলাম।
যে বিচারক এই মামলা শুনেছিলেন তিনি ঘোষণা করেছিলেন: “আপনাদের বিরুদ্ধে যে বিশপ অভিযোগ এনেছেন তাকে যদিও আমি নিন্দা করি কিন্তু তবুও তাকে আমি ধন্যবাদ দেব যে তিনি আমাকে আপনাদের সঙ্গে দেখা করতে ও আপনাদের শিক্ষা সম্বন্ধে জানতে এই সুযোগ করে দিয়েছেন।” আমাদেরকে অযথা এই ঝামেলা পোহাতে হয়েছে বলে পরে তিনি আমাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন।
দশ বছর পর একবার বাসে করে বৈরুতে যাবার পথে আমি আমার পাশে বসা একজন কৃষি প্রকৌশলী ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করি। আমাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে অল্প একটু শোনার পর তিনি বলেন যে, সিরিয়াতে একজন বন্ধুর কাছে তিনি এইধরনের কথা শুনেছিলেন। সেই বন্ধু কে ছিলেন? সেই বিচারক, যিনি দশ বছর আগে আমাদের মামলার কথা শুনেছিলেন!
১৯৫০ এর দশকে আমি ইরাকের সাক্ষিদের সঙ্গে দেখা করতে যাই এবং তাদের সঙ্গে ঘরে-ঘরে সাক্ষ্য দেওয়ার কাজে অংশ নিই। আমি অনেকবার জর্ডান ও ওয়েস্ট ব্যাংকেও গিয়েছি। ১৯৫১ সালে, চারজন সাক্ষি বেথলেহেমে যান ও তাদের মধ্যে আমিও ছিলাম। আমরা সেখানে প্রভুর সান্ধ্যভোজ উদ্যাপন করেছিলাম। ওই অনুষ্ঠানের জন্য যারা সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন তারা সেই দিন সকালে বাসে করে জর্ডান নদীর কাছে গিয়েছিলেন, যেখানে ২২ জন ব্যক্তি যিহোবার কাছে তাদের উৎসর্গীকরণের প্রতীকস্বরূপ বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। সেই এলাকায় যখনই আমরা বিরোধিতার মুখোমুখি হতাম, তখনই আমরা বলতাম: “আপনাদের অঞ্চলের একজন ব্যক্তি সারা পৃথিবীর রাজা হবেন, সেই কথা জানাতেই আমরা আপনাদের কাছে এসেছি! আপনারা কেন মনমরা হয়ে আছেন? আপনাদের তো আনন্দ করা উচিত!”
বিভিন্ন অসুবিধার মধ্যেও প্রচার করা
মধ্যপ্রাচ্যের লোকেরা সাধারণত উদার, নম্র এবং অতিথিপরায়ণ। অনেকে আগ্রহ নিয়ে ঈশ্বরের রাজ্যের বার্তা শোনে। সত্যিই, খুব শীঘ্রিই বাইবেলের এই প্রতিজ্ঞাটা পূর্ণ হবে, তা জানার চেয়ে সতেজতাদায়ক আর কিছুই হতে পারে না: “ঈশ্বর আপনি [তাঁহার লোকেদের] সঙ্গে থাকিবেন, . . . আর তিনি তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না।”—প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪.
আমি লক্ষ্য করেছি যে, যারা আমাদের কাজের বিরোধিতা করেন তাদের মধ্যে বেশির ভাগ লোকই আমরা কী কাজ করি বা কোন্ খবর জানাই, আসলে তা বোঝেন না। খ্রীষ্টীয়জগতের পাদরিরা অন্যদের সামনে আমাদের বদনাম করার জন্য অনেক উঠেপড়ে লেগেছিলেন! তাই, ১৯৭৫ সালে যখন লেবাননে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, যা ১৫ বছর ধরে চলেছিল তখন সাক্ষিদেরকে অনেক অসুবিধার মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
এক সময়, আমি এমন এক পরিবারের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করেছিলাম যারা গির্জার খুবই উদ্যোগী ব্যক্তি ছিলেন। বাইবেলের সত্য শিখে তাদের উন্নতি করতে দেখে পাদরিরা খুবই খেপে গিয়েছিলেন। তাই, একদিন রাতের বেলায় সেখানকার একটা ধর্মীয় দল ওই পরিবারের দোকানটাকে পুড়িয়ে ফেলার জন্য তাদের দলের লোকেদেরকে উসকে দিয়েছিল এবং তারা প্রায় ১০,০০০ ডলার মূল্যের জিনিসপত্র পুড়িয়ে ফেলেছিল। ওই রাতে তারা এসে আমাকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, আমি তাদের নেতার সঙ্গে যুক্তি দেখিয়ে কথা বলতে পেরেছিলাম, তাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম যে সত্যিকারের খ্রীষ্টান হয়ে থাকলে তারা কখনোই এরকম নিষ্ঠুর আচরণ করবেন না। এটা শুনে তারা গাড়ি থামিয়ে আমাকে বের হয়ে যেতে বলেছিলেন।
আরেকবার চারজন সৈন্য আমাকে অপহরণ করেছিল। তাদের নেতা আমাকে বেশ কয়েকবার গুলি করে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়েছিল কিন্তু হঠাৎ করে সে তার মন পালটায় এবং আমাকে মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। এদের মধ্যে দুজন লোক এখন খুন ও ডাকাতির দায়ে জেলে আছে ও অন্য দুজনের ফাঁসি হয়েছে।
সাক্ষ্য দেওয়ার অন্যান্য সুযোগগুলো
আমার প্রায়ই প্লেনে করে বিভিন্ন দেশে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। একবার বৈরুত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পথে আমি চার্লস মালেক নামে লেবাননের প্রাক্তন পররাষ্ট্র মন্ত্রীর পাশে বসেছিলাম। তিনি মন দিয়ে আমার কথাগুলো শুনেছিলেন, বাইবেল থেকে আমি যে পদগুলো পড়েছিলাম সেগুলোর প্রতি উপলব্ধি দেখিয়েছিলেন। শেষে তিনি বলেছিলেন যে, ত্রিপলিতে তিনি যে স্কুলে পড়েছেন সেখানে তার শিক্ষক ছিলেন ইব্রাহিম আতিয়াহ্, যাকে আমার শ্বশুর প্রথম বাইবেলের সত্য শিখিয়েছিলেন! মি. মালেক বলেছিলেন যে, ইব্রাহিমই তাকে বাইবেলকে সম্মান করতে শিখিয়েছেন।
আরেকবার প্লেনে করে যাওয়ার সময় আমি যুক্তরাষ্ট্রের পলেস্টীয় প্রতিনিধির পাশে বসেছিলাম। তার কাছে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার বলার সুযোগ আমি পেয়েছিলাম। তিনি এক সময় নিউ ইয়র্কে তার ছোট ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন ও আমি প্রায়ই তাদের বাড়িতে যেতাম। এছাড়া নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রসংঘের অফিসে আমার একজন আত্মীয় কাজ করতেন। একদিন তার অফিসে আমি তিন ঘন্টা ধরে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে তার কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম।
আমার বয়স এখন ৮৮ বছর কিন্তু এখনও আমি মণ্ডলীর দায়িত্বগুলো পালন করার জন্য সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারি। আমার স্ত্রী ইভলিন এখনও আমার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যিহোবাকে সেবা করে যাচ্ছে। আমাদের মেয়ে যিহোবার সাক্ষিদের একজন ভ্রমণ অধ্যক্ষকে বিয়ে করেছে, যে বর্তমানে বৈরুতের একটা মণ্ডলীর প্রাচীন হিসেবে সেবা করছে। তাদের মেয়েও একজন সাক্ষি। আমাদের ছোট ছেলে ও তার স্ত্রী সাক্ষি এবং তাদের মেয়েও সত্যে আছে। আমাদের বড় ছেলের হৃদয়ে আমরা খ্রীষ্টীয় বিশ্বাস গেঁথে দিয়েছিলাম আর আমি আশা করি যে, এক সময় সে-ও সত্যকে নিজের করে নেবে।
১৯৩৩ সালে, মধ্যপ্রাচ্যে আমিই সবচেয়ে প্রথম একজন অগ্রগামী হিসেবে নিযুক্ত হই। গত ৬৮ বছর ধরে আমি অগ্রগামী হিসেবে যিহোবাকে সেবা করে আসছি এর চেয়ে ভাল কোন কাজ আমি আমার জীবনে আর কোথাও পেতাম না। আর তিনি যে আধ্যাত্মিক জ্যোতি দেখিয়ে আসছেন, সেই আলোতে চলার জন্য আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
১৯৩৫ সালে ন্যাজিব
[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
১৯৪০ সালে লেবাননের পাহাড়ে সাউন্ড কার নিয়ে
[২৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
ওপরে ক্লকওয়াইজ একেবার বাম থেকে: ১৯৫২ সালে ন্যাজিব, ইভলিন, তাদের মেয়ে, ভাই আবুদ এবং ন্যাজিবের বড় ছেলে
নিচে (সামনের সারিতে): ১৯৫২ সালে ত্রিপলিতে ন্যাজিবের বাড়িতে ভাই শামস্, নর, আবুদ এবং হেনশেল
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
ন্যাজিব ও তার স্ত্রী ইভলিন