যিহোবার আশীর্বাদ কি আপনাকে ঢেকে দেবে?
যিহোবার আশীর্বাদ কি আপনাকে ঢেকে দেবে?
“তোমার ঈশ্বর যিহোবার কথা তুমি শুনে চল বলে এই সমস্ত আশীর্বাদ তোমার ওপর নেমে আসবে ও তোমাকে ঢেকে দেবে।”—দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:২, NW.
১. ইস্রায়েলীয়রা আশীর্বাদ না অভিশাপ পাবে, তা কীসের ওপর নির্ভর করেছিল?
প্রান্তরে ৪০ বছর সুদীর্ঘ পথ ভ্রমণ করার শেষের দিকে ইস্রায়েলীয়রা মোয়াব তলভূমিতে তাঁবু স্থাপন করেছিল। তাদের সামনে ছিল প্রতিজ্ঞাত দেশ। এই সময়ে মোশি দ্বিতীয় বিবরণ বইটা লিখেছিলেন, যেটাতে একের পর এক যে আশীর্বাদ ও অভিশাপগুলো এসেছিল সেগুলোর বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। ইস্রায়েলের লোকেরা যদি তাঁর বাধ্য হয়ে ‘যিহোবার কথা শুনে চলত,’ তাহলে তাদেরকে আশীর্বাদ “ঢেকে” দিতে পারত। যিহোবা তাদেরকে তাঁর “নিজস্ব প্রজা” হিসেবে ভালবেসেছিলেন ও তাদের পক্ষে তাঁর শক্তি দেখাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তারা যদি তাঁর কথা সবসময় শুনে না চলত, তাহলে অবশ্যই অভিশাপগুলো তাদেরকে ঢেকে দিত।—দ্বিতীয় বিবরণ ৮:১০-১৪; ২৬:১৮; ২৮:২, ১৫.
২. দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:২ পদে যে ইব্রীয় ক্রিয়াপদগুলোকে “শুনে চল” ও “ঢেকে দেবে” বলে অনুবাদ করা হয়েছে তার মানে কী?
২ দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:২ পদে যে ইব্রীয় ক্রিয়াপদকে “শুনে চল” বলে অনুবাদ করা হয়েছে, তা সবসময় করে চলাকে বোঝায়। যিহোবার লোকেদের শুধু মাঝেমধ্যে তাঁর কথা শোনা উচিত নয়; তাদের সবসময় তা শুনে চলা দরকার। একমাত্র তাহলেই ঈশ্বরের আশীর্বাদ তাদেরকে ঢেকে দেবে। যে ইব্রীয় ক্রিয়াপদকে “ঢেকে দেবে” বলে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটার অর্থ শিকারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, প্রায়ই যেটার মানে “নাগাল পাওয়া” অথবা “পৌঁছানো।”
৩. কীভাবে আমরা যিহোশূয়ের মতো হতে পারি এবং তা কেন খুবই জরুরি?
৩ ইস্রায়েলীয় নেতা যিহোশূয় যিহোবার কথা শোনা বেছে নিয়েছিলেন আর তাই আশীর্বাদ পেয়েছিলেন। যিহোশূয় বলেছিলেন: “যাহার সেবা করিবে, তাহাকে অদ্য মনোনীত কর . . . আমি ও আমার পরিজন আমরা সদাপ্রভুর সেবা করিব।” এই কথা শুনে লোকেরা উত্তর দিয়েছিল: “আমরা যে সদাপ্রভুকে ত্যাগ করিয়া অন্য দেবগণের সেবা করিব, তাহা দূরে থাকুক।” (যিহোশূয়ের পুস্তক ২৪:১৫, ১৬) যিহোশূয়ের এই চমৎকার মনোভাবের জন্য, প্রতিজ্ঞাত দেশে ঢোকার যে বিশেষ সুযোগ তার বংশের কিছুজনকে দেওয়া হয়েছিল তার মধ্যে তিনিও একজন ছিলেন। আজ, আমরা এক উৎকৃষ্ট প্রতিজ্ঞাত দেশ অর্থাৎ এক পরমদেশ পৃথিবীর দোর গোড়ায় দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে ঈশ্বরের অনুমোদন আছে এমন ব্যক্তিদের জন্য যিহোশূয়ের দিনের চেয়েও আরও অনেক আশীর্বাদ অপেক্ষা করছে। এই আশীর্বাদগুলো কি আপনাকে ঢেকে দেবে? যদি আপনি যিহোবার কথা শুনে চলেন, তাহলে সেগুলো তা ঢেকে দিতে পারে। তা করার জন্য আপনার সংকল্পকে আরও মজবুত করতে প্রাচীন ইস্রায়েল জাতির ইতিহাস ও সেইসঙ্গে কিছু ব্যক্তিদের শিক্ষণীয় উদাহরণ চিন্তা করে দেখুন।—রোমীয় ১৫:৪.
আশীর্বাদ না অভিশাপ?
৪. শলোমনের প্রার্থনার উত্তরে ঈশ্বর তাকে কী দিয়েছিলেন আর এইধরনের আশীর্বাদগুলোর বিষয়ে আমাদের কেমন মনে করা উচিত?
৪ রাজা শলোমনের রাজত্বের বেশির ভাগ সময়ে ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার কাছ থেকে বিশেষ বিশেষ আশীর্বাদ লাভ করেছিল। তাদের নিরাপত্তা এবং অনেক ভাল ভাল জিনিস ছিল। (১ রাজাবলি ৪:২৫) শলোমন বিপুল ধনসম্পদের জন্য বিখ্যাত হয়েছিলেন কিন্তু তিনি ঈশ্বরের কাছে কোন ধনসম্পদ চাননি। বরং তখনও যুবক ও অনভিজ্ঞ থাকায় তিনি বোঝার চিত্ত চেয়ে প্রার্থনা করেছিলেন—যে অনুরোধে যিহোবা তাকে প্রজ্ঞা ও বোঝার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। এগুলো শলোমনকে সঠিকভাবে প্রজাদের বিচার করতে, ভালমন্দের পার্থক্য করতে সাহায্য করেছিল। যদিও ঈশ্বর তাকে ধন ও মহিমা দিয়েছিলেন কিন্তু একজন যুবক হিসেবে শলোমন আধ্যাত্মিক ধনের মহত্বকে শ্রেষ্ঠ মূল্য দিয়েছিলেন। (১ রাজাবলি ৩:৯-১৩) বস্তুগত দিক দিয়ে আমরা ধনী হই বা না হই, আমরা যদি যিহোবার আশীর্বাদ লাভ করি এবং আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে ধনী হই, তাহলে আমরা কত কৃতজ্ঞই না হতে পারি!
৫. ইস্রায়েল ও যিহূদার লোকেরা যখন যিহোবার কথা শুনে চলেনি, তখন কী হয়েছিল?
৫ যিহোবার আশীর্বাদগুলোর প্রতি ইস্রায়েলীয়রা উপলব্ধি দেখাতে পারেনি। যেহেতু তারা তাঁর কথা শুনে চলেনি, তাই যে অভিশাপগুলোর কথা আগে বলা হয়েছিল সেগুলো তাদেরকে ঢেকে দিয়েছিল। এর ফলে তাদের শত্রুরা তাদের ওপর জয়ী হয়েছিল এবং ইস্রায়েল ও যিহূদার লোকেরা নির্বাসনে গিয়েছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:৩৬; ২ রাজাবলি ১৭:২২, ২৩; ২ বংশাবলি ৩৬:১৭-২০) এইরকম শাস্তি ভোগ করে ঈশ্বরের লোকেরা কি শিখেছিল যে, যারা ঈশ্বরের কথা শুনে চলে কেবল তাদেরকেই ঈশ্বরের আশীর্বাদগুলো ঢেকে দেয়? সা.কা.পূ. ৫৩৭ সালে যে যিহুদি অবশিষ্টাংশরা নিজেদের দেশে ফিরে গিয়েছিল তারা “প্রজ্ঞার চিত্ত” লাভ করেছিল কি না এবং সেই সময় ঈশ্বরের কথা শুনে চলার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছিল কি না, সেটা দেখানোর সুযোগ তারা পেয়েছিল।—গীতসংহিতা ৯০:১২.
৬. (ক) কেন যিহোবা ভবিষ্যদ্বাণী বলার জন্য তাঁর লোকেদের কাছে হগয় ও সখরিয়কে পাঠিয়েছিলেন? (খ) হগয়ের মাধ্যমে ঈশ্বর যে বার্তা পাঠিয়েছিলেন তাতে কোন্ নীতি প্রকাশ পেয়েছিল?
৬ নিজেদের দেশে ফিরে আসা যিহুদিরা একটা যজ্ঞবেদি বানিয়েছিল এবং যিরূশালেমে মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু করেছিল। কিন্তু, যখন চরম বিরোধিতা আসে, তখন তাদের উদ্যোগে ভাটা পড়ে এবং নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। (ইষ্রা ৩:১-৩, ১০; ৪:১-৪, ২৩, ২৪) এছাড়াও তারা ব্যক্তিগত আরাম-আয়েশকে প্রাধান্য দিতে শুরু করেছিল। তাই, ঈশ্বর সত্য উপাসনার জন্য তাঁর লোকেদের উদ্যোগকে আবারও উদ্দীপিত করে তুলতে ভাববাদী হগয় ও সখরিয়কে পাঠিয়েছিলেন। হগয়ের মাধ্যমে যিহোবা বলেছিলেন: “এই কি তোমাদের আপন আপন ছাদ আঁটা গৃহে বাস করিবার সময়? [উপাসনার] এই গৃহ ত উৎসন্ন রহিয়াছে। . . . তোমরা আপন আপন পথ আলোচনা কর। তোমরা অনেক বীজ বপন করিয়াও অল্প সঞ্চয় করিতেছ, আহার করিয়াও তৃপ্ত হইতেছ না, . . . এবং বেতনজীবী লোক ছেঁড়া থলিতে বেতন রাখে।” (হগয় ১:৪-৬) বস্তুগত সুবিধাগুলোর পিছনে ছুটে আধ্যাত্মিক কাজগুলোকে অবহেলা করলে যিহোবার আশীর্বাদ পাওয়া যায় না।—লূক ১২:১৫-২১.
৭. কেন যিহুদিদেরকে যিহোবা বলেছিলেন: “তোমরা আপন আপন পথ আলোচনা কর”?
৭ রোজকার চিন্তায় যিহুদিরা এত বেশি মত্ত ছিল যে তারা ভুলে গিয়েছিল শত বিরোধিতার মধ্যেও তারা যদি ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য থাকে, একমাত্র তাহলেই ঈশ্বর তাদেরকে বৃষ্টি ও ফলোৎপাদক ঋতু দিয়ে আশীর্বাদ করবেন। (হগয় ১:৯-১১) অতএব, এই পরামর্শটা কতই না উপযুক্ত: “তোমরা আপন আপন পথ আলোচনা কর।” (হগয় ১:৭) আসলে যিহোবা তাদেরকে বলছিলেন: ‘ক্ষেত্রে তোমাদের বৃথা শ্রম ও আমার উপাসনা গৃহের উৎসন্ন অবস্থার মধ্যে কী সম্পর্ক রয়েছে, তা তোমরা ভেবে দেখ!’ যিহোবার ভাববাদীদের অনুপ্রাণিত বাক্য শেষ পর্যন্ত তাদের শ্রোতাদের হৃদয়ে পৌঁছেছিল কারণ লোকেরা মন্দির নির্মাণের কাজ আবার শুরু করেছিল এবং সা.কা.পূ. ৫১৫ সালে তা শেষ করেছিল।
৮. মালাখির দিনের যিহুদিদেরকে যিহোবা কোন্ পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং কেন?
৮ পরে, ভাববাদী মালাখির দিনে যিহুদিরা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে আবারও নড়বড়ে হয়ে পড়েছিল, এমনকি ঈশ্বরের কাছে এমন বলি উৎসর্গ করছিল, যা গ্রহণ যোগ্য ছিল না। (মালাখি ১:৬-৮) তাই, যিহোবা তাদের উৎপাদিত দ্রব্যের দশমাংশ তাঁর ভাণ্ডারে আনতে বলেছিলেন ও তাঁকে পরীক্ষা করে দেখতে বলেছিলেন যে, তিনি আকাশের দ্বার সকল মুক্ত করে তাদের প্রতি অপরিমেয় আশীর্বাদ বর্ষণ করেন কি না। (মালাখি ৩:১০) একমাত্র ঈশ্বরের কথা শুনে চললে যে জিনিসগুলো তিনি নিজেই তাদেরকে দিতেন, সেগুলোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করে যিহুদিরা কত বোকামির পরিচয়ই না দিয়েছিল!—২ বংশাবলি ৩১:১০.
৯. বাইবেলে লেখা আছে এমন কোন্ তিনজন ব্যক্তির সম্বন্ধে আমরা পরীক্ষা করে দেখব?
৯ ইস্রায়েল জাতির ইতিহাস ছাড়াও বাইবেলে এমন অনেক ব্যক্তিদের সম্বন্ধে লেখা আছে, যারা যিহোবার কথা শোনায় আশীর্বাদ এবং তাঁর কথা না শোনায় অভিশাপ পেয়েছিলেন। আসুন আমরা দেখি, এমন তিন জন ব্যক্তির কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি। সেই তিন জন হলেন বোয়স, নাবল এবং হান্না। এই বিষয়ে জানার জন্য আপনি হয়তো রূতের বিবরণ, ১ শমূয়েল ১:১-২:২১ ও ১ শমূয়েল ২৫:২-৪২ পদগুলো পড়তে চাইবেন।
বোয়স ঈশ্বরের কথা শুনেছিলেন
১০. কোন্ কোন্ বিষয়ে বোয়স ও নাবলের মধ্যে মিল ছিল?
১০ যদিও বোয়স ও নাবল একই সময়ে বাস করতেন না কিন্তু কয়েকটা বিষয়ে তাদের মধ্যে মিল ছিল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তারা দুজনেই যিহূদায় থাকতেন। তারা দুজনেই ধনী ও প্রচুর জমির মালিক ছিলেন এবং দুজনেরই অভাবী ব্যক্তির প্রতি দয়া দেখানোর বিশেষ সুযোগ ছিল। কিন্তু দুজনের মধ্যে শুধু এটুকুই মিল ছিল।
১১. কীভাবে বোয়স দেখিয়েছিলেন যে, তিনি যিহোবার কথা শুনে চলেছিলেন?
১১ বোয়স ইস্রায়েলের বিচারকদের সময়ে বাস করতেন। তিনি অন্যদেরকে সম্মান করতেন এবং তার শস্যক্ষেত্রের ছেদকরা তাকে খুবই শ্রদ্ধা করত। (রূতের বিবরণ ২:৪) ব্যবস্থার কথামতো, বোয়স খেয়াল রাখতেন যে তার জমিতে দুঃখী ও গরিবদের জন্য কুড়াবার মতো শস্য ফেলে রাখা হয়েছে কি না। (লেবীয় পুস্তক ১৯:৯, ১০) বোয়স যখন রূৎ ও নয়মীর কথা শুনেছিলেন এবং রূৎ তার বয়স্কা শাশুড়ীর জন্য কত কঠোর পরিশ্রম করেন তা নিজের চোখে দেখেছিলেন, তখন তিনি কী করেছিলেন? তিনি রূৎকে বিশেষ অনুগ্রহ দেখিয়েছিলেন এবং তার লোকেদেরকে জমিতে কিছু শস্য ফেলে রেখে যেতে আদেশ দিয়েছিলেন। বোয়স তার কথা ও প্রেমপূর্ণ কাজের মাধ্যমে প্রকাশ করেছিলেন যে, তিনি একজন আধ্যাত্মিক-মনা ব্যক্তি ছিলেন, যিনি যিহোবার কথা শুনতেন। তাই তিনি ঈশ্বরের অনুগ্রহ ও আশীর্বাদ পেয়েছিলেন।—লেবীয় পুস্তক ১৯:১৮; রূতের বিবরণ ২:৫-১৬.
১২, ১৩. (ক) বোয়স কীভাবে মুক্ত করার ব্যাপারে যিহোবার ব্যবস্থার প্রতি গভীর সম্মান দেখিয়েছিলেন? (খ) ঈশ্বরের কোন্ কোন্ আশীর্বাদ বোয়সকে ঢেকে দিয়েছিল?
১২ বোয়স যে যিহোবার কথা শুনে চলেছিলেন এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ ছিল, তিনি মুক্ত করার ব্যাপারে ঈশ্বরের ব্যবস্থা নিঃস্বার্থভাবে মেনে চলেছিলেন। বোয়স তার আত্মীয় অর্থাৎ নয়মীর প্রয়াত স্বামী ইলীমেলকের উত্তরাধিকার যাতে ইলীমেলকের পরিবারেই থাকে, সেইজন্য যা কিছু করতে পারেন সমস্ত কিছুই তিনি করেছিলেন। ‘দেবরকে বিয়ে’ করার ব্যবস্থা মেনে একজন বিধবা তার প্রয়াত স্বামীর সবচেয়ে নিকট আত্মীয়কে বিয়ে করতে পারতেন, যাতে তাদের কোন ছেলে জন্মালে সে বংশ রক্ষা করতে পারে। (দ্বিতীয় বিবরণ ২৫:৫-১০; লেবীয় পুস্তক ২৫:৪৭-৪৯) নয়মীর বদলে রূৎ বিয়ে করেছিলেন কারণ নয়মীর সন্তান জন্ম দেওয়ার মতো বয়স পেরিয়ে গিয়েছিল। ইলীমেলকের একজন নিকট আত্মীয় যখন নয়মীকে সাহায্য করতে চাননি, তখন বোয়স তার স্ত্রী হিসেবে রূৎকে গ্রহণ করেছিলেন। তাদের ছেলে ওবেদকে নয়মীর সন্তান ও ইলীমেলকের বৈধ উত্তরাধিরকার হিসেবে দেখা হয়েছিল।—রূতের বিবরণ ২:১৯, ২০; ৪:১, ৬, ৯, ১৩-১৬.
১৩ প্রচুর আশীর্বাদ বোয়সকে ঢেকে দিয়েছিল কারণ তিনি কোন স্বার্থ ছাড়াই ঈশ্বরের ব্যবস্থা মেনে নিয়েছিলেন। তাদের ছেলে ওবেদের মাধ্যমে তিনি ও রূৎ যীশু খ্রীষ্টের পূর্বপুরুষ হওয়ার বিশেষ সুযোগ লাভ করেছিলেন। (রূতের বিবরণ ২:১২; ৪:১৩, ২১, ২২; মথি ১:১, ৫, ৬) বোয়সের নিঃস্বার্থ কাজগুলো থেকে আমরা শিখি যে, যারা অন্যদের জন্য ভালবাসা দেখান ও ঈশ্বর যা চান তার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করেন, ঈশ্বরের আশীর্বাদ তাদেরকে ঢেকে দেয়।
নাবল শোনেননি
১৪. নাবল কীধরনের ব্যক্তি ছিলেন?
১৪ নাবল ছিলেন বোয়সের বিপরীত, তিনি যিহোবার কথা শোনেননি। “তুমি . . . আপন প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে,” ঈশ্বরের এই ব্যবস্থাকে তিনি লঙ্ঘন করেছিলেন। (লেবীয় পুস্তক ১৯:১৮) নাবল আধ্যাত্মিক-মনা ছিলেন না; বরং তিনি “কঠিন ও দুর্বৃত্ত” ছিলেন। এমনকি তার নিজের লোকেরা পর্যন্ত তাকে “পাষণ্ড” বলে ডাকত। অতএব, তার নামের অর্থ “মূর্খ” অথবা “বোকা” একেবারে উপযুক্ত ছিল। (১ শমূয়েল ২৫:৩, ১৭, ২৫) তাই, অভাবে আছেন এমন কারও প্রতি অর্থাৎ যিহোবার অভিষিক্ত ব্যক্তি দায়ূদের প্রতি দয়া দেখানোর সুযোগ পেয়ে তিনি কী করেছিলেন?—১ শমূয়েল ১৬:১৩.
১৫. দায়ূদের সঙ্গে নাবল কেমন ব্যবহার করেছিলেন আর এই ব্যাপারে তার স্ত্রী অবীগল কীভাবে ভিন্ন ছিলেন?
১৫ দায়ূদ ও তার লোকেরা যখন নাবলের পশুপাল যেখানে ছিল তার কাছাকাছি তাঁবু বানিয়ে থাকছিলেন, সেই সময় কোন মজুরি না চেয়ে তারা লুটকারীদের হাত থেকে তার পশুপালকে রক্ষা করেছিলেন। নাবলের একজন মেষপালক বলেছিল, “তাহারা দিবারাত্র আমাদের চারিদিকে প্রাচীরস্বরূপ ছিল।” কিন্তু দায়ূদের লোকেরা যখন কিছু খাবার চেয়েছিল, তখন নাবল তাদেরকে “লাঞ্ছনা করিলেন” আর তাদেরকে খালিহাতে বিদায় করেছিলেন। (১ শমূয়েল ২৫:২-১৬) নাবলের স্ত্রী অবীগল সঙ্গে সঙ্গে দায়ূদের জন্য খাবার নিয়ে গিয়েছিলেন। নাবলের ওপর প্রচণ্ড রেগে গিয়ে দায়ূদ সবেমাত্র নাবল ও তার লোকেদেরকে হত্যা করার জন্য যাচ্ছিলেন। অবীগল নিজে থেকে এগিয়ে গিয়েছিলেন বলেই অনেক লোকের জীবন বেঁচে গিয়েছিল এবং তিনি দায়ূদকে রক্তপাতের দোষ থেকে রক্ষা করেছিলেন। কিন্তু, নাবল আরও বেশি লোভী ও নিষ্ঠুর হয়েছিলেন। প্রায় দশদিন পর, “সদাপ্রভু নাবলকে আঘাত করাতে সে মরিয়া গেল।”—১ শমূয়েল ২৫:১৮-৩৮.
১৬. কীভাবে আমরা বোয়সকে অনুকরণ করতে পারি এবং নাবলের মতো হওয়া এড়িয়ে চলতে পারি?
১৬ বোয়স ও নাবলের মধ্যে কত পার্থক্যই না ছিল! নাবলের মতো নিষ্ঠুর ও স্বার্থপর না হয়ে আসুন আমরা বোয়সের মতো দয়া ও নিঃস্বার্থ মনোভাব দেখাই। (ইব্রীয় ১৩:১৬) প্রেরিত পৌলের পরামর্শ কাজে লাগিয়ে আমরা তা করতে পারি: “আইস, আমরা যেমন সুযোগ পাই, তেমনি সকলের প্রতি, বিশেষতঃ যাহারা বিশ্বাস-বাটীর পরিজন, তাহাদের প্রতি সৎকর্ম্ম করি।” (গালাতীয় ৬:১০) আজকে, যিহোবার অভিষিক্ত ১,৪৪,০০০ জনের অবশিষ্টাংশরা, যারা স্বর্গে অমরতা লাভ করবেন তাদের প্রতি যীশুর “অপর মেষ” অর্থাৎ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আশা আছে এমন খ্রীষ্টানদের সৎকর্ম করার বিরাট সুযোগ আছে। (যোহন ১০:১৬, NW; ১ করিন্থীয় ১৫:৫০-৫৩; প্রকাশিত বাক্য ১৪:১, ৪) যীশু মনে করেন যে এইধরনের প্রেমপূর্ণ কাজগুলো তাঁর নিজের প্রতিই করা হচ্ছে আর এইরকম ভাল কাজ করলে যিহোবার কাছ থেকে প্রচুর আশীর্বাদ আসে।—মথি ২৫:৩৪-৪০; ১ যোহন ৩:১৮.
হান্নার কষ্ট ও আশীর্বাদগুলো
১৭. হান্নার সামনে কোন্ কষ্টগুলো এসেছিল আর তিনি কেমন মনোভাব দেখিয়েছিলেন?
১৭ ধার্মিক মহিলা হান্নাকেও যিহোবার আশীর্বাদ ঢেকে দিয়েছিল। তার স্বামী ইলকানা লেবীয় বংশের ছিলেন আর হান্না তার সঙ্গে ইফ্রয়িমের পার্বত্য অঞ্চলে থাকতেন। ব্যবস্থার সঙ্গে মিল রেখে তার আরেকজন স্ত্রী ছিল আর তার নাম ছিল পনিন্না। হান্না বন্ধ্যা ছিলেন, যা একজন ইস্রায়েলীয় স্ত্রীর জন্য খুবই কলঙ্কজনক ছিল কিন্তু পনিন্নার বেশ কয়েকজন সন্তান ছিল। (১ শমূয়েল ১:১-৩; ১ বংশাবলি ৬:১৬, ৩৩, ৩৪) কিন্তু, হান্নাকে সান্ত্বনা না দিয়ে পনিন্না তার সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করেছিলেন, যে জন্য হান্না খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে শুধু চোখের জল ফেলতেন। প্রতি বছর এই পরিবার যখন শীলোতে যিহোবার গৃহে যেত, পনিন্নার আচরণ “বৎসর বৎসর” আরও খারাপ হতে থাকে। (১ শমূয়েল ১:৪-৮) পনিন্না কতই না নির্দয় ছিলেন আর হান্নার জন্য কত কষ্টকরই না ছিল! কিন্তু তবুও হান্না কখনও যিহোবাকে দোষ দেননি; কিংবা তার স্বামী যখন শীলোতে যেতেন, তখন তিনি ঘরে থেকে যাননি। তাই, শেষ পর্যন্ত প্রচুর আশীর্বাদ তাকে ঢেকে দিয়েছিল।
১৮. হান্না কেমন উদাহরণ রেখেছিলেন?
১৮ আজকে যিহোবার লোকেদের জন্য হান্না খুব সুন্দর উদাহরণ রেখেছেন, বিশেষ করে সেই ব্যক্তিদের জন্য যারা হয়তো অন্যদের রূঢ় মন্তব্যের জন্য দুঃখ পেয়েছেন। এইরকম পরিস্থিতিতে নিজেকে আলাদা করে রাখা কোন সমাধান নয়। (হিতোপদেশ ১৮:১) কষ্ট পাচ্ছিলেন বলে হান্না কখনও যেখানে ঈশ্বরের বাক্য শেখানো হতো ও তাঁর লোকেরা উপাসনার জন্য মিলিত হতো, সেখানে যাওয়ার ইচ্ছাকে কমে যেতে দেননি। তাই তিনি আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে শক্তিশালী ছিলেন। তার আধ্যাত্মিক জ্ঞান যে কতটা গভীর ছিল, তা ১ শমূয়েল ২:১-১০ পদে লিপিবদ্ধ করা তার সুন্দর প্রার্থনা থেকে বোঝা যায়। *
১৯. আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর জন্য আমরা কীভাবে আমাদের উপলব্ধি দেখাতে পারি?
১৯ আমরা যিহোবার বর্তমান দিনের দাসেরা সমাগম তাম্বুতে উপাসনা করি না। কিন্তু তবুও, আমরা হান্নার মতো আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর প্রতি আমাদের উপলব্ধি দেখাতে পারি। উদাহরণ হিসেবে, খ্রীষ্টীয় সভা, অধিবেশন ও সম্মেলনগুলোতে নিয়মিত উপস্থিত থেকে আধ্যাত্মিক ধনের প্রতি আমাদের গভীর উপলব্ধি দেখাতে পারি। আসুন আমরা এই উপলক্ষগুলোকে যিহোবার সত্য উপাসনায় একে অন্যকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য কাজে লাগাই, যিনি “নির্ভয়ে সাধুতায় ও ধার্ম্মিকতায় তাঁহার আরাধনা করিতে” “এই বর” দিয়েছেন।—লূক ১:৭৪, ৭৫; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.
২০, ২১. ঈশ্বরীয় ভক্তি দেখানোর জন্য হান্না কীভাবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন?
২০ হান্নার ঈশ্বরীয় ভক্তিকে যিহোবা লক্ষ্য করেছিলেন ও তাকে প্রচুর পুরস্কার দিয়েছিলেন। হান্নার পরিবার বছরে একবার শীলোতে যেত আর এমনই এক যাত্রায় শীলোতে গিয়ে হান্না কেঁদে কেঁদে ঈশ্বরের কাছে অন্তর থেকে প্রার্থনা ও মানত করেছিলেন: “হে বাহিনীগণের সদাপ্রভু, যদি তুমি তোমার এই দাসীর দুঃখের প্রতি দৃষ্টিপাত কর, আমাকে স্মরণ কর, ও আপন দাসীকে ভুলিয়া না গিয়া আপন দাসীকে পুত্ত্রসন্তান দেও, তবে আমি চিরদিনের জন্য তাহাকে সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিবেদন করিব।” (১ শমূয়েল ১:৯-১১) হান্নার আবেদন ঈশ্বর শুনেছিলেন এবং তাকে একটা ছেলে দিয়েছিলেন, যার নাম তিনি শমূয়েল রেখেছিলেন। শমূয়েল দুধ খাওয়া ছাড়তেই হান্না তাকে শীলোতে নিয়ে গিয়েছিলেন, যাতে সে সমাগম তাম্বুতে সেবা করতে পারে।—১ শমূয়েল ১:২০, ২৪-২৮.
২১ হান্না ঈশ্বরের জন্য ভালবাসা দেখিয়েছিলেন এবং শমূয়েলকে নিয়ে তিনি যে মানত করেছিলেন, তা রেখেছিলেন। আর হান্না ও ইলকানার প্রিয় ছেলে যিহোবার সমাগম তাম্বুতে সেবা করায় তারা কত আশীর্বাদ পেয়েছিলেন, তা একটু ভেবে দেখুন! অনেক খ্রীষ্টান বাবামায়েরাও একইরকম আনন্দ ও আশীর্বাদগুলো উপভোগ করেন, কারণ তাদের ছেলেমেয়েরা পূর্ণ-সময়ের অগ্রগামী, বেথেল পরিবারের সদস্য হিসেবে বা যিহোবার সম্মান আনে এমন আরও অন্যান্য সেবা করছে।
যিহোবার কথা শুনে চলুন!
২২, ২৩. (ক) আমরা যদি যিহোবার কথা শুনে চলি, তাহলে আমরা কোন্ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারি? (খ) পরের প্রবন্ধে কোন্ বিষয় আলোচনা করা হবে?
২২ আমরা যদি যিহোবার কথা শুনে চলি, তাহলে আমরা কোন্ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারি? যদি আমরা ঈশ্বরের প্রতি মনপ্রাণ দিয়ে ভালবাসা দেখাই ও তাঁর প্রতি আমাদের উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে চলি, তাহলে আমরা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে ধনী হব। এমনকি এইধরনের পথে চলা মানে আমাদের চরম কষ্ট সহ্য করতে হবে কিন্তু যিহোবার আশীর্বাদ আমাদেরকে ঢেকে দেবে—হয়তো এমন বড় বড় উপায়ে, যা আমরা কখনও কল্পনাও করিনি।—গীতসংহিতা ৩৭:৪; ইব্রীয় ৬:১০.
২৩ ভবিষ্যতে ঈশ্বরের লোকেদের ওপর আরও অনেক আশীর্বাদ আসবে। যিহোবার কথার বাধ্য হওয়ায় “মহাক্লেশের” মধ্যে থেকে এক “বিস্তর লোক” রক্ষা পাবে এবং ঈশ্বরের নতুন জগতে আনন্দদায়ক জীবন উপভোগ করবে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯-১৪; ২ পিতর ৩:১৩) যিহোবা সেখানে পূর্ণরূপে তাঁর সমস্ত লোকেদের ন্যায্য আকাঙ্ক্ষাগুলো পূর্ণ করবেন। (গীতসংহিতা ১৪৫:১৬) কিন্তু পরের প্রবন্ধ যেমন দেখাবে, যারা যিহোবার কথা শুনে চলে তারা যে ‘উত্তম দান ও সিদ্ধ বর উপর হইতে আইসে’ তা এমনকি এখনই লাভ করবেন।—যাকোব ১:১৭.
[পাদটীকা]
^ হান্নার কথাগুলোর সঙ্গে কুমারী মরিয়মের কথাগুলোর কিছু মিল রয়েছে, যা মরিয়ম মশীহের মা হতে যাচ্ছেন শোনার কিছু পরেই বলেছিলেন।—লূক ১:৪৬-৫৫.
আপনি কি মনে করতে পারেন?
• ঈশ্বরের আশীর্বাদগুলো সম্বন্ধে ইস্রায়েলের ইতিহাস থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
• বোয়স ও নাবল কীভাবে আলাদা ছিলেন?
• আমরা কীভাবে হান্নাকে অনুকরণ করতে পারি?
• আমাদের কেন যিহোবার কথা শুনে চলা উচিত?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
রাজা শলোমন বোঝার চিত্ত চেয়ে প্রার্থনা করেছিলেন এবং যিহোবা তাকে প্রজ্ঞা দিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন
[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]
বোয়স অন্যদের প্রতি সম্মান ও দয়া দেখিয়েছিলেন
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবার ওপর নির্ভর করায় হান্না প্রচুর আশীর্বাদ পেয়েছিলেন