‘তোমরা দীর্ঘসহিষ্ণুতা পরিধান কর’
‘তোমরা দীর্ঘসহিষ্ণুতা পরিধান কর’
‘তোমরা করুণার চিত্ত, দীর্ঘসহিষ্ণুতা পরিধান কর।’—কলসীয় ৩:১২.
১. দীর্ঘসহিষ্ণুতার এক সুন্দর উদাহরণ দিন।
রেজিস, দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সে থাকেন আর তিনি ১৯৫২ সালে বাপ্তিস্ম নিয়ে যিহোবার সাক্ষি হয়েছিলেন। তিনি যাতে যিহোবাকে সেবা করতে না পারেন সেইজন্য তার স্ত্রী বছরের পর বছর ধরে তাকে বাধা দেওয়ার সমস্ত প্রচেষ্টা করেছিলেন। রেজিসের স্ত্রী তার গাড়ির চাকা ছিদ্র করে দিতেন, যাতে তিনি সভাতে যেতে না পারেন এবং একবার রেজিস যখন ঘরে-ঘরে প্রচারে গিয়েছিলেন, তখন তার স্ত্রীও তার সঙ্গে সঙ্গে গিয়েছিলেন ও গৃহকর্তাদের সামনে রাজ্যের সুসমাচার বলার সময় তাকে নিয়ে উপহাস করেছিলেন। বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা এই বিরোধিতা সত্ত্বেও, রেজিস দীর্ঘসহিষ্ণুতা দেখিয়ে চলেছিলেন। এভাবে, রেজিস সমস্ত খ্রীষ্টানদের জন্য এক সুন্দর উদাহরণ কারণ যিহোবা চান, তাঁর সমস্ত উপাসক যেন অন্যদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে দীর্ঘসহিষ্ণু হয়।
২. ‘দীর্ঘসহিষ্ণুতার’ জন্য যে গ্রিক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তার আক্ষরিক মানে কী এবং এই শব্দ দিয়ে কী বোঝায়?
২ ‘দীর্ঘসহিষ্ণুতার’ জন্য যে গ্রিক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তার আক্ষরিক মানে হল “আত্মার প্রতীক্ষা।” বাংলা বাইবেলে এই শব্দটাকে “দীর্ঘসহিষ্ণুতা” এবং এর সমার্থ শব্দ যেমন “সহিষ্ণুতা,” “চিরসহিষ্ণুতা” ও “সম্পূর্ণ সহিষ্ণুতা” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে। ইব্রীয় ও গ্রিক দুই ভাষায়ই যে শব্দকে “দীর্ঘসহিষ্ণুতা” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, তা ধৈর্য, সহনশীল এবং ক্রোধে ধীর হওয়ার ধারণাকে বোঝায়।
৩. দীর্ঘসহিষ্ণুতা সম্বন্ধে খ্রীষ্টানদের দৃষ্টিভঙ্গি কীভাবে প্রথম শতাব্দীর গ্রিকদের চেয়ে আলাদা?
৩ প্রথম শতাব্দীর গ্রিক লোকেরা দীর্ঘসহিষ্ণুতাকে কোন সদ্গুণ হিসেবে দেখতেন না। স্তোয়ীক দার্শনিকরা কখনও এই শব্দটা ব্যবহার করেননি। বাইবেল পণ্ডিত উইলিয়াম বার্কলের কথা অনুসারে, দীর্ঘসহিষ্ণুতা “গ্রিক সদ্গুণের একেবারে বিপরীত” যেখানে “কোন অপমান বা আঘাত মুখ বুজে সহ্য না করাকে” গর্বের বিষয় বলে মনে করা হতো। তিনি বলেন: “গ্রিকদের কাছে সেই ব্যক্তিই ছিলেন মহাপুরুষ, যিনি যে কোনভাবেই হোক প্রতিশোধ নিতেন। আর খ্রীষ্টানদের কাছে সেই ব্যক্তিই হলেন মহাপুরুষ, যিনি সুযোগ পেলেও প্রতিশোধ নেন না।” গ্রিকরা হয়তো দীর্ঘসহিষ্ণুতাকে দুর্বলতার লক্ষণ বলে মনে করত কিন্তু অন্যান্য বিষয়ের মতো এখানেও “ঈশ্বরের যে মূর্খতা, তাহা মনুষ্যদের অপেক্ষা অধিক জ্ঞানযুক্ত, এবং ঈশ্বরের যে দুর্ব্বলতা, তাহা মনুষ্যদের অপেক্ষা অধিক সবল।”—১ করিন্থীয় ১:২৫.
দীর্ঘসহিষ্ণুতার ক্ষেত্রে খ্রীষ্টের উদাহরণ
৪, ৫. দীর্ঘসহিষ্ণুতার কোন্ চমৎকার উদাহরণ যীশু রেখেছিলেন?
৪ যিহোবার পরে খ্রীষ্ট যীশুই দীর্ঘসহিষ্ণুতার ক্ষেত্রে এক চমৎকার উদাহরণ রেখেছেন। প্রচণ্ড চাপের মধ্যেও যীশু যে সংযম দেখিয়েছেন, তা সত্যিই অবাক হওয়ার মতো। তাঁর সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল: “তিনি উপদ্রুত হইলেন, তবু দুঃখভোগ স্বীকার করিলেন, তিনি মুখ খুলিলেন না; মেষশাবক যেমন হত হইবার জন্য নীত হয়, মেষী যেমন লোমচ্ছেদকদের সম্মুখে নীরব হয়, সেইরূপ তিনি মুখ খুলিলেন না।”—যিশাইয় ৫৩:৭.
৫ পৃথিবীতে প্রচার করার সময় যীশু কত উল্লেখযোগ্য দীর্ঘসহিষ্ণুতাই না দেখিয়েছিলেন! তিনি তাঁর শত্রুদের ধূর্ততাপূর্ণ প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং বিরোধীদের অপমান সহ্য করেছিলেন। (মথি ২২:১৫-৪৬; ১ পিতর ২:২৩) তিনি তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে ধৈর্য বজায় রেখেছিলেন, এমনকি সেই সময়ও যখন তারা, কে শ্রেষ্ঠ এই নিয়ে বারবার ঝগড়া করেছিলেন। (মার্ক ৯:৩৩-৩৭; ১০:৩৫-৪৫; লূক ২২:২৪-২৭) আর তাঁকে ধরিয়ে দেওয়ার রাতে পিতর ও যোহনকে “জাগিয়া থাক” বলা সত্ত্বেও তারা যখন ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, তখন যীশু কত চমৎকার সংযমই না দেখিয়েছিলেন!—মথি ২৬:৩৬-৪১.
৬. যীশুর দীর্ঘসহিষ্ণুতা থেকে পৌল কীভাবে উপকার পেয়েছিলেন এবং এর থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
৬ যীশু তাঁর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের পরেও দীর্ঘসহিষ্ণুতা দেখিয়ে চলেছিলেন। বিশেষ করে প্রেরিত পৌল এই বিষয়টা খুব ভাল করে জানতেন কারণ তিনি অতীতে খ্রীষ্টানদের ওপর তাড়না করেছিলেন। পৌল লিখেছিলেন: “এই কথা বিশ্বসনীয় ও সর্ব্বতোভাবে গ্রহণের যোগ্য যে, খ্রীষ্ট যীশু পাপীদের পরিত্রাণ করিবার জন্য জগতে আসিয়াছেন; তাহাদের মধ্যে আমি অগ্রগণ্য; কিন্তু এই জন্য দয়া পাইয়াছি, যেন যীশু খ্রীষ্ট এই অগ্রগণ্য আমাতে সম্পূর্ণ দীর্ঘসহিষ্ণুতা প্রদর্শন করেন, যাহাতে আমি তাহাদের আদর্শ হইতে পারি, যাহারা অনন্ত জীবনের নিমিত্ত তাঁহাতে বিশ্বাস করিবে।” (১ তীমথিয় ১:১৫, ১৬) অতীতে আমরা যেভাবেই জীবনযাপন করি না কেন, আমরা যদি যীশুর ওপর বিশ্বাস রাখি, তাহলে তিনি আমাদের প্রতি দীর্ঘসহিষ্ণু হবেন—অবশ্য সেইসঙ্গে তিনি আশা করেন যে, আমরা যেন “মনপরিবর্ত্তনের উপযোগী কার্য্য” করি। (প্রেরিত ২৬:২০; রোমীয় ২:৪) এশিয়া মাইনরের সাতটা মণ্ডলীতে খ্রীষ্ট যে বার্তাগুলো পাঠিয়েছিলেন সেগুলো থেকে বোঝা যায় যে, যদিও তিনি দীর্ঘসহিষ্ণু কিন্তু তিনি চান যেন তাদের আচরণে তারা উন্নতি করে চলেন।—প্রকাশিত বাক্য ২ ও ৩ অধ্যায়।
আত্মার একটা ফল
৭. দীর্ঘসহিষ্ণুতা ও পবিত্র আত্মার মধ্যে সম্পর্ক কী?
৭ গালাতীয়দের প্রতি লেখা পৌলের চিঠির ৫ম অধ্যায়ে তিনি মাংসের কাজ ও আত্মার কাজের পার্থক্য তুলে ধরেন। (গালাতীয় ৫:১৯-২৩) যেহেতু দীর্ঘসহিষ্ণুতা যিহোবার একটা গুণ, তাই এই গুণের উৎস তিনি এবং এটা তাঁর আত্মার একটা ফল। (যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬, ৭) আসলে পৌলের লেখা আত্মার ফলগুলোর তালিকার চতুর্থ স্থানে দীর্ঘসহিষ্ণুতা স্থান পেয়েছে আর অন্যগুলো হল “প্রেম, আনন্দ, শান্তি, . . . মাধুর্য্য, মঙ্গলভাব, বিশ্বস্ততা, মৃদুতা, ইন্দ্রিয়দমন।” (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) তাই, ঈশ্বরের দাসেরা যখন তাঁর মতো ধৈর্য বা দীর্ঘসহিষ্ণুতা দেখিয়ে থাকেন, তখন তারা পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায়ই তা করেন।
৮. কোন্ বিষয়টা আমাদেরকে দীর্ঘসহিষ্ণুতা ও সেইসঙ্গে আত্মার অন্যান্য ফল উৎপন্ন করতে সাহায্য করবে?
৮ কিন্তু তার মানে এই নয় যে, যিহোবা কোন ব্যক্তির ওপর জোর করে তাঁর আত্মা চাপিয়ে দেন। আমাদেরকে স্বেচ্ছায় এর বশীভূত হতে হবে। (২ করিন্থীয় ৩:১৭; ইফিষীয় ৪:৩০) আমাদের সমস্ত কাজে এর ফলগুলো উৎপন্ন করার মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনে আত্মাকে কাজ করতে দিই। মাংসের কাজ ও আত্মার ফলগুলোর তালিকা দেওয়ার পর পৌল আরও বলেছিলেন: “আমরা যদি আত্মার বশে জীবন ধারণ করি, তবে আইস আমরা আত্মার বশে চলি। তোমরা ভ্রান্ত হইও না, ঈশ্বরকে পরিহাস করা যায় না; কেননা মনুষ্য যাহা কিছু বুনে তাহাই কাটিবে। ফলতঃ আপন মাংসের উদ্দেশে যে বুনে, সে মাংস হইতে ক্ষয়রূপ শস্য পাইবে; কিন্তু আত্মার উদ্দেশে যে বুনে, সে আত্মা হইতে অনন্ত জীবনরূপ শস্য পাইবে।” (গালাতীয় ৫:২৫; ৬:৭, ৮) দীর্ঘসহিষ্ণুতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমরা যদি সফল হতে চাই, তাহলে আমাদের অবশ্যই পবিত্র আত্মার অন্যান্য ফল উৎপন্ন করতে হবে, যেগুলো পবিত্র আত্মা খ্রীষ্টানদের মধ্যে উৎপন্ন করে।
“প্রেম চিরসহিষ্ণু”
৯. সম্ভবত কেন পৌল করিন্থীয়দেরকে বলেছিলেন যে, “প্রেম চিরসহিষ্ণু”?
৯ পৌল দেখিয়েছিলেন যে, প্রেম ও দীর্ঘসহিষ্ণুতার মধ্যে এক বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে, যখন তিনি বলেছিলেন: “প্রেম চিরসহিষ্ণু।” (১ করিন্থীয় ১৩:৪) আ্যলবার্ট বার্নস্ নামে একজন বাইবেল পণ্ডিত বলেন, করিন্থের খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে তখন যে প্রতিযোগিতা ও বিবাদ ছিল, সেই অবস্থা দেখে পৌল এর ওপর জোর দিয়েছিলেন। (১ করিন্থীয় ১:১১, ১২) বার্নস্ আরও বলেন: “[দীর্ঘসহিষ্ণুতার জন্য] এখানে যে শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তা আসলে তড়িঘড়ি করে কিছু করার বিপরীত: ক্রুদ্ধ কথাবার্তা ও চিন্তাভাবনা এবং বিরক্তির বিপরীত। এটা মনের এমন অবস্থাকে বোঝায় যা অত্যাচার ও জ্বালাতন সত্ত্বেও, অনেক সময় ধরে সহ্য করতে পারে।” আজও প্রেম ও দীর্ঘসহিষ্ণুতা খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর শান্তি রক্ষার ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখে।
১০. (ক) কোন্ উপায়ে প্রেম আমাদেরকে দীর্ঘসহিষ্ণু হতে সাহায্য করে এবং এই বিষয়ে প্রেরিত পৌল কোন্ পরামর্শ দেন? (খ) ঈশ্বরের দীর্ঘসহিষ্ণুতা ও দয়ার বিষয়ে একজন বাইবেল পণ্ডিত কী মন্তব্য করেছিলেন? (পাদটীকা দেখুন।)
১০ “প্রেম চিরসহিষ্ণু, প্রেম মধুর [“দয়া দেখায়,” NW], . . . স্বার্থ চেষ্টা করে না, রাগিয়া উঠে না।” তাই, অনেক দিক দিয়ে প্রেম আমাদেরকে দীর্ঘসহিষ্ণু হতে সাহায্য করে। * (১ করিন্থীয় ১৩:৪, ৫) প্রেম আমাদেরকে ধৈর্য ধরে একে অন্যের সঙ্গে মানিয়ে নিতে এবং মনে রাখতে সাহায্য করে যে, আমরা সবাই অসিদ্ধ ও আমাদের সবার দোষত্রুটি রয়েছে। এটা আমাদেরকে অন্যদের প্রতি বিবেচনা দেখাতে ও ক্ষমা করতে সাহায্য করে। প্রেরিত পৌল আমাদেরকে উৎসাহ দিয়েছিলেন, “সম্পূর্ণ নম্রতা ও মৃদুতা সহকারে, দীর্ঘসহিষ্ণুতা সহকারে চল; প্রেমে পরস্পর ক্ষমাশীল হও, শান্তির যোগবন্ধনে আত্মার ঐক্য রক্ষা করিতে যত্নবান্ হও।”—ইফিষীয় ৪:১-৩.
১১. খ্রীষ্টীয় সমাজগুলোতে দীর্ঘসহিষ্ণু হওয়া কেন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ?
১১ দীর্ঘসহিষ্ণুতা খ্রীষ্টীয় সমাজের সদস্যদের সুখশান্তির ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে, তা হতে পারে মণ্ডলীতে, বেথেলে, মিশনারি হোমে, নির্মাণ দলগুলোতে বা খ্রীষ্টীয় বিদ্যালয়গুলোতে। ব্যক্তিত্ব, রুচি, শিক্ষা, মার্জিত ব্যবহারের আদর্শ ও এমনকি স্বাস্থ্যবিধির বিষয়গুলো ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় সময় সময় এমন অবস্থা আসতে পারে, যে সহ্যশক্তি দরকার। পরিবারগুলোর বেলায়ও এই কথা সত্য। তাই ক্রোধে ধীর হওয়া খুবই জরুরি। (হিতোপদেশ ১৪:২৯; ১৫:১৮; ১৯:১১) দীর্ঘসহিষ্ণুতা—ভাল কিছু হবে এই আশায় ধৈর্য ধরা—সকলের জন্য জরুরি।—রোমীয় ১৫:১-৬.
দীর্ঘসহিষ্ণুতা আমাদেরকে ধৈর্য ধরতে সাহায্য করে
১২. কঠিন অবস্থায় দীর্ঘসহিষ্ণুতা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
১২ আপাতদৃষ্টিতে শেষ হতে চায় না বা দ্রুত সমাধান করা যায় না, এমন কঠিন অবস্থায় ধৈর্য ধরতে দীর্ঘসহিষ্ণুতা আমাদেরকে সাহায্য করে। শুরুতে বলা রেজিসের বেলায় এটা সত্য হয়েছিল। বছরের পর বছর ধরে, তার স্ত্রী যিহোবাকে সেবা করার ক্ষেত্রে তাকে বাধা দিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু, একদিন তিনি কেঁদে কেঁদে বলেছিলেন: “আমি জানি এটা সত্য। আমাকে সাহায্য কর। আমি বাইবেল অধ্যয়ন করতে চাই।” শেষ পর্যন্ত তিনি বাপ্তিস্ম নিয়ে যিহোবার সাক্ষি হয়েছিলেন। রেজিস বলেন: “এটা প্রমাণ করেছিল যে, কষ্ট, সহ্য ও ধৈর্য ধরার ওই বছরগুলোতে যিহোবা আশীর্বাদ করেছিলেন।” রেজিস তার দীর্ঘসহিষ্ণুতার পুরস্কার পেয়েছিলেন।
১৩. কী পৌলকে ধৈর্য ধরতে সাহায্য করেছিল আর তার উদাহরণ কীভাবে আমাদেরকে ধৈর্য ধরতে সাহায্য করে?
১৩ সাধারণ কাল প্রথম শতাব্দীতে প্রেরিত পৌল দীর্ঘসহিষ্ণুতার এক সুন্দর উদাহরণ রেখেছিলেন। (২ করিন্থীয় ৬:৩-১০; ১ তীমথিয় ১:১৬) তার জীবনের শেষ দিকে, তিনি যখন তার যুবক সঙ্গী তীমথিয়কে পরামর্শ দিয়েছিলেন, তখন পৌল তাকে সাবধান করে বলেছিলেন যে, সমস্ত খ্রীষ্টানদের পরীক্ষা সহ্য করতে হবে। পৌল তার নিজের উদাহরণ উল্লেখ করেছিলেন এবং মৌলিক খ্রীষ্টীয় গুণগুলোর বিষয়ে বলেছিলেন, যেগুলো ধৈর্যের জন্য জরুরি। তিনি লিখেছিলেন: “তুমি আমার শিক্ষা, আচার ব্যবহার, সঙ্কল্প, বিশ্বাস, দীর্ঘসহিষ্ণুতা, প্রেম, ধৈর্য্য, নানাবিধ তাড়না, ও দুঃখভোগের অনুসরণ করিয়াছ; আন্তিয়খিয়াতে, ইকনিয়ে, লুস্ত্রায় আমার প্রতি কি কি ঘটিয়াছিল; কত তাড়না সহ্য করিয়াছি। আর সেই সমস্ত হইতে প্রভু আমাকে উদ্ধার করিয়াছেন। আর যত লোক ভক্তিভাবে খ্রীষ্ট যীশুতে জীবন ধারণ করিতে ইচ্ছা করে, সেই সকলের প্রতি তাড়না ঘটিবে।” (২ তীমথিয় ৩:১০-১২; প্রেরিত ১৩:৪৯-৫১; ১৪:১৯-২২) ধৈর্য ধরার জন্য আমাদের সকলের বিশ্বাস, প্রেম এবং দীর্ঘসহিষ্ণুতা দরকার।
দীর্ঘসহিষ্ণুতা পরিধান করুন
১৪. দীর্ঘসহিষ্ণুতার মতো ঈশ্বরীয় গুণগুলোকে পৌল কীসের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন আর কলসীয় খ্রীষ্টানদেরকে তিনি কোন্ পরামর্শ দিয়েছিলেন?
১৪ প্রেরিত পৌল দীর্ঘসহিষ্ণুতা ও ঈশ্বরের অন্যান্য গুণগুলোকে বস্ত্রের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, যা ‘পুরাতন মনুষ্যের’ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো খুলে ফেলার পরই খ্রীষ্টানদের পরিধান করা উচিত। (কলসীয় ৩:৫-১০) তিনি লিখেছিলেন: “তোমরা, ঈশ্বরের মনোনীত লোকদের, পবিত্র ও প্রিয় লোকদের, উপযোগী মতে করুণার চিত্ত, মধুর ভাব, নম্রতা, মৃদুতা, সহিষ্ণুতা পরিধান কর। পরস্পর সহনশীল হও, এবং যদি কাহাকেও দোষ দিবার কারণ থাকে, তবে পরস্পর ক্ষমা কর; প্রভু যেমন তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছেন, তোমরাও তেমনি কর। আর এই সকলের উপরে প্রেম পরিধান কর; তাহাই সিদ্ধির যোগবন্ধন।”—কলসীয় ৩:১২-১৪.
১৫. খ্রীষ্টানরা যখন দীর্ঘসহিষ্ণুতা ও অন্যান্য ঈশ্বরীয় গুণগুলো ‘পরিধান করেন,’ তখন কী ফল হয়?
১৫ মণ্ডলীর সদস্যরা যখন করুণার চিত্ত, মধুর ভাব, নম্রতা, মৃদুতা, সহিষ্ণুতা ও প্রেম ‘পরিধান করেন,’ তখন তারা বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে পারেন এবং যিহোবার পরিচর্যায় একতাবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে পারেন। খ্রীষ্টান অধ্যক্ষদের বিশেষ করে দীর্ঘসহিষ্ণু হওয়া দরকার। কখনও কখনও কোন খ্রীষ্টানকে হয়তো তাদের অনুযোগ করার দরকার হতে পারে কিন্তু তা বিভিন্নভাবে করা যায়। তীমথিয়ের কাছে চিঠি লেখার সময় প্রেরিত পৌল সবচেয়ে ভাল মনোভাবের বিষয় বর্ণনা করেছেন: “সম্পূর্ণ সহিষ্ণুতা ও শিক্ষাদান-পূর্ব্বক অনুযোগ কর, ভর্ৎসনা কর, চেতনা দেও।” (২ তীমথিয় ৪:২) হ্যাঁ, যিহোবার মেষদের সঙ্গে সবসময় দীর্ঘসহিষ্ণুতা, মর্যাদা এবং কোমলভাবে ব্যবহার করতে হবে।—মথি ৭:১২; ১১:২৮; প্রেরিত ২০:২৮, ২৯; রোমীয় ১২:১০.
“সকলের প্রতি দীর্ঘসহিষ্ণু হও”
১৬. আমরা যখন “সকলের প্রতি দীর্ঘসহিষ্ণু” হই, তখন এর ফল কী হতে পারে?
১৬ মানবজাতির প্রতি যিহোবার দীর্ঘসহিষ্ণুতা আমাদেরকে “সকলের প্রতি দীর্ঘসহিষ্ণু” হতে বাধ্য করে। (১ থিষলনীকীয় ৫:১৪) এর মানে, সাক্ষি নন পরিবারের এমন সদস্য, প্রতিবেশী, সহকর্মী ও সহপাঠীদের সঙ্গে ধৈর্য ধরে কাজ করা। সাক্ষিদের সম্বন্ধে অনেক ভুল ধারণা দূর হয়েছে কারণ সাক্ষিরা কখনও কখনও কাজের জায়গায় বা স্কুলের বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে বছরের পর বছর ধরে তীব্র ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য বা সরাসরি বিরোধিতা সত্ত্বেও, সহনশীল থেকেছেন। (কলসীয় ৪:৫, ৬) প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “পরজাতীয়দের মধ্যে আপন আপন আচার ব্যবহার উত্তম করিয়া রাখ; তাহা হইলে তাহারা যে বিষয়ে দুষ্কর্ম্মকারী বলিয়া তোমাদের পরীবাদ করে, স্বচক্ষে তোমাদের সৎক্রিয়া দেখিলে সেই বিষয়ে তত্ত্বাবধানের দিনে ঈশ্বরের গৌরব করিবে।”—১ পিতর ২:১২.
১৭. কীভাবে আমরা যিহোবার প্রেম ও দীর্ঘসহিষ্ণুতাকে অনুকরণ করতে পারি এবং কেন আমাদের তা করা উচিত?
১৭ যিহোবার দীর্ঘসহিষ্ণুতা মানে লক্ষ লক্ষ লোকেদের জন্য পরিত্রাণ। (২ পিতর ৩:৯, ১৫) আমরা যদি যিহোবার প্রেম ও দীর্ঘসহিষ্ণুতাকে অনুকরণ করি, তাহলে আমরা ধৈর্য ধরে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করে চলব এবং অন্যদেরকে খ্রীষ্টের রাজ্য শাসনে বশ্যতা স্বীকার করতে শেখাব। (মথি ২৮:১৮-২০; মার্ক ১৩:১০) আমরা যদি প্রচার করা বন্ধ করে দিই, তাহলে এমন হবে যেন আমরা যিহোবার দীর্ঘসহিষ্ণুতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছি এবং লোকেদের অনুতপ্ত হতে সাহায্য করা যে এর উদ্দেশ্য, তার প্রতি উপলব্ধি দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছি।—রোমীয় ২:৪.
১৮. কলসীয়দের জন্য পৌল কী প্রার্থনা করেছিলেন?
১৮ এশিয়া মাইনরের কলসীর খ্রীষ্টানদেরকে চিঠি লেখার সময় পৌল লিখেছিলেন: “এই কারণ আমরাও, যে দিন সেই সংবাদ শুনিয়াছি, সেই দিন অবধি তোমাদের নিমিত্তে প্রার্থনা ও বিনতি করিতে ক্ষান্ত হই নাই, যেন তোমরা সমস্ত আত্মিক জ্ঞানে ও বুদ্ধিতে তাঁহার ইচ্ছার তত্ত্বজ্ঞানে পূর্ণ হও, আর তদ্দ্বারা প্রভুর যোগ্যরূপে সর্ব্বতোভাবে প্রীতিজনক আচরণ কর, সমস্ত সৎকর্ম্মে ফলবান্ ও ঈশ্বরের তত্ত্বজ্ঞানে বর্দ্ধিষ্ণু হও, আনন্দের সহিত সম্পূর্ণ ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা প্রকাশার্থে তাঁহার প্রতাপের পরাক্রম অনুসারে সমস্ত শক্তিতে শক্তিমান্ হও।”—কলসীয় ১:৯-১১.
১৯, ২০. (ক) যিহোবার ক্রমাগত দীর্ঘসহিষ্ণুতাকে আমরা কীভাবে এক পরীক্ষা হিসেবে দেখা এড়াতে পারি? (খ) দীর্ঘসহিষ্ণু হওয়ার ফলে কোন্ উপকারগুলো আসে?
১৯ আমরা যদি “তাঁহার ইচ্ছার তত্ত্বজ্ঞানে পূর্ণ” হই, তাহলে যিহোবা যে দীর্ঘসহিষ্ণুতা বা ধৈর্য দেখিয়ে চলেছেন তা আমাদের জন্য পরীক্ষার কোন বিষয় হবে না কারণ এর মাধ্যমে “সমুদয় মনুষ্য পরিত্রাণ পায়, ও সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পারে।” (১ তীমথিয় ২:৪) আমরা বিশেষ করে “রাজ্যের এই সুসমাচার” প্রচার করে “সমস্ত সৎকর্ম্মে ফলবান্” হব। (মথি ২৪:১৪) আমরা যদি বিশ্বস্তভাবে এই কাজ করে চলি, তাহলে যিহোবা আমাদেরকে “আনন্দের সহিত সম্পূর্ণ ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা” বজায় রাখতে “সমস্ত শক্তিতে শক্তিমান্” করবেন। আমরা যদি তা করি, তাহলে আমরা “প্রভুর [“যিহোবার,” NW] যোগ্যরূপে” চলব এবং “সর্ব্বতোভাবে প্রীতিজনক আচরণ” করছি জেনে শান্তি লাভ করতে পারব।
২০ যিহোবার দীর্ঘসহিষ্ণুতার পিছনে যে প্রজ্ঞা রয়েছে সেই সম্বন্ধে আমরা যেন পুরোপুরি নিশ্চিত হই। এটা আমাদের নিজেদের পরিত্রাণ এবং যারা আমাদের প্রচার ও শিক্ষার বিষয়ে শোনেন, তাদের পরিত্রাণের জন্য কাজ করে। (১ তীমথিয় ৪:১৬) প্রেম, দয়া, মঙ্গলভাব, মৃদুতা এবং ইন্দ্রিয়দমনের মতো আত্মার ফলগুলো উৎপন্ন করা আমাদেরকে আনন্দের সঙ্গে দীর্ঘসহিষ্ণু হতে সাহায্য করবে। আমরা আমাদের পরিবারের সদস্যদের ও সেইসঙ্গে মণ্ডলীতে আমাদের ভাইবোনদের সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করতে আরও বেশি যোগ্য হতে পারব। দীর্ঘসহিষ্ণুতা আমাদেরকে সহকর্মী ও সহপাঠীদের সঙ্গে ধৈর্য ধরতে সাহায্য করবে। আর আমাদের দীর্ঘসহিষ্ণুতার একটা উদ্দেশ্য থাকবে অর্থাৎ অন্যায়কারীদের রক্ষা করা এবং দীর্ঘসহিষ্ণু ঈশ্বর, যিহোবাকে মহিমান্বিত করা।
[পাদটীকা]
^ “প্রেম চিরসহিষ্ণু, প্রেম দয়া দেখায়,” পৌলের এই কথাগুলোর ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে বাইবেল পণ্ডিত গর্ডন ডি. ফি লেখেন: “পৌলের থিওলজিতে এগুলো [দীর্ঘসহিষ্ণুতা ও দয়া] মানুষের প্রতি ঈশ্বরের আচরণের দুটো দিককে তুলে ধরে। (সিএফ. রোমীয় ২:৪) একদিকে, মানুষের বিদ্রোহ সত্ত্বেও ঈশ্বর তাঁর ক্রোধ আটকে রাখার মাধ্যমে তাঁর প্রেমপূর্ণ সহনশীলতা দেখিয়েছেন; অন্যদিকে, তাঁর করুণার অগণিত প্রকাশের মাধ্যমে তাঁর দয়া দেখা যায়। এভাবে, পৌল প্রেমের বিষয় বর্ণনা করতে গিয়ে ঈশ্বর সম্বন্ধে দুটো বিষয় বলে বর্ণনা শুরু করেন, যিনি খ্রীষ্টের মাধ্যমে সেই লোকেদের প্রতি ধৈর্য ও দয়া দেখিয়েছেন, যারা তাঁর কাছ থেকে প্রতিকুল বিচার পাওয়ার উপযুক্ত।”
আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?
• কোন্ কোন্ উপায়ে খ্রীষ্ট দীর্ঘসহিষ্ণুতার এক চমৎকার উদাহরণ?
• কী আমাদেরকে দীর্ঘসহিষ্ণুতা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে?
• কীভাবে দীর্ঘসহিষ্ণুতা পরিবার, খ্রীষ্টীয় সমাজ ও প্রাচীনদেরকে সাহায্য করতে পারে?
• দীর্ঘসহিষ্ণু হওয়া কীভাবে আমাদের নিজেদের ও অন্যদের জন্য উপকার নিয়ে আসবে?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
এমনকি প্রচণ্ড চাপের মধ্যেও যীশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে ধৈর্য বজায় রেখেছিলেন
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
খ্রীষ্টান অধ্যক্ষদেরকে তাদের ভাইদের সঙ্গে আচারব্যবহারের সময় দীর্ঘসহিষ্ণুতার সুন্দর উদাহরণ রাখতে পরামর্শ দেওয়া হয়
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
আমরা যদি যিহোবার প্রেম ও দীর্ঘসহিষ্ণুতাকে অনুকরণ করি, তাহলে আমরা সুসমাচার প্রচার করে চলব
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
পৌল প্রার্থনা করেছিলেন, যাতে খ্রীষ্টানরা “আনন্দের সহিত . . . সহিষ্ণুতা” দেখান