যে নীতিগুলো আপনি বেছে নেন
যে নীতিগুলো আপনি বেছে নেন
আপনি কি একজন নীতিবান ব্যক্তি? নাকি নিয়মনীতিকে আপনি সেকেলে বলে মনে করেন? আসল বিষয়টা হল প্রত্যেকেই কোন না কোন নিয়মনীতি মেনে চলেন, যেগুলোকে তারা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। নীতিকে “সঠিক কাজ করার এক ব্যক্তিগত আইন” হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায়। এগুলো আমাদের সিদ্ধান্তের ওপর প্রভাব ফেলে এবং আমাদের জীবনধারাকে নিয়ন্ত্রণ করে। নীতিগুলো একটা কমপাসের মতো কাজ করতে পারে।
উদাহরণ হিসেবে যীশু তাঁর অনুসারীদেরকে সুবর্ণ নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছিলেন, যা মথি ৭:১২ পদে পাওয়া যায়: “অতএব সর্ব্ববিষয়ে তোমরা যাহা যাহা ইচ্ছা কর যে, লোকে তোমাদের প্রতি করে, তোমরাও তাহাদের প্রতি সেইরূপ করিও।” কনফুসিয়াসের অনুসারীরা, লি এবং জেন এর ধারণাগুলোর ওপর প্রতিষ্ঠিত নীতিগুলো মেনে চলেন, যেগুলোর মধ্যে সদয়ভাব, নম্রতা, সম্মান এবং নিষ্ঠার মতো গুণগুলো রয়েছে। কোন ধর্ম মানেন না, এমন ব্যক্তিরাও কিছু বিষয়কে অগ্রাধিকার দেন বা কিছু নিয়মকে মেনে চলেন, যেগুলো তাদের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে।
কোন্ ধরনের নীতিগুলো আমরা বেছে নেব?
কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে, নীতিগুলো ভালও হতে পারে বা খারাপও হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এক দশক বা তারও আগে থেকে যেটাকে আমিত্ব মনোভাব বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, অনেকে এই মনোভাবের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। যদিও অনেকে এই শব্দটার সঙ্গে পরিচিত নন বা মনে করেন যে, এটা তাদের বেলায় প্রযোজ্য নয় কিন্তু আমিত্ব মনোভাব হল এমন এক নীতি অর্থাৎ আচরণের প্রচলিত মান, যা অনেকে উচ্চমানগুলো পরিত্যাগ করায় তাদের স্বভাবের মধ্যে এমনি এমনি চলে আসে। এই সংজ্ঞা থেকে স্পষ্ট হোক বা না হোক, আমিত্ব মনোভাব হল স্বার্থপরতার প্রকাশ যার মধ্যে ধ্বংসাত্মক বস্তুবাদী মনোভাব রয়েছে। চিনে একজন টিভি সম্পাদক বলেছিলেন, ‘আমাদের শুধু দুটো নীতি রয়েছে। একটা হল চাহিদা পূরণ করা। আর অন্যটা হল টাকা কামানো।’
আমিত্ব মনোভাব একটা চুম্বকের মতো কাজ করতে পারে। আর একটা চুম্বক কীভাবে একটা কমপাসকে নিয়ন্ত্রণ করে? যখন দুটোকেই পাশাপাশি রাখা হয়, তখন কমপাসের কাঁটা সঠিক দিক নির্দেশ করে না। একইভাবে আমিত্ব মনোভাব একজন ব্যক্তির চাহিদাগুলোর কাছে সমস্ত কিছুকে গৌণ করে দিয়ে তার নৈতিক কমপাস বা সঠিক আচরণের মানকে দ্বিধার মধ্যে ফেলে দিতে পারে।
এই আমিত্ব মনোভাব অতীতেও ছিল জেনে কি আপনি অবাক হবেন? আমিত্ব মনোভাবের দ্বারা পরিচালিত হওয়া সেই এদন বাগানে শুরু হয়েছিল যখন আমাদের প্রথম পিতামাতা সৃষ্টিকর্তার দ্বারা স্থাপিত আচরণের মানকে মেনে চলেনি। এটা তাদের নৈতিক কমপাসকে পরিবর্তিত করে দিয়েছিল। আদম ও হবার বংশধর হিসেবে মানুষও সেই একই মনোভাব দেখিয়ে সমস্যার মুখোমুখি হয়, যেটাকে এখন “আমিত্ব মনোভাব” বলা হয়।—আদিপুস্তক ৩:৬-৮, ১২.
এই মনোভাব বিশেষ করে সেই সময়ে ব্যাপকভাবে দেখা যায়, যেটাকে বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী ‘শেষ কাল’ বলে আর সেটা ‘বিষম সময়ের’ মাধ্যমে বোঝা যায়। অনেকে “আত্মপ্রিয়।” তাই এতে ২ তীমথিয় ৩:১-৫.
অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, আমরাও এই আমিত্ব মনোভাব দেখানোর চাপে পড়ি।—আপনিও হয়তো ওল্ফ নামে এক যুবকের সঙ্গে একমত হবেন, যে যিহোবার সাক্ষিদের ইউরোপ শাখায় লিখে পাঠিয়েছিল: “বিশেষ করে আমাদের মতো যুবক-যুবতীদের পক্ষে নৈতিক দিক দিয়ে শুদ্ধ থাকা অনেক কঠিন। তাই, বাইবেলের নীতিগুলো মেনে চলার জন্য দয়া করে আমাদেরকে মনে করিয়ে চলুন।”
ওল্ফ বিচক্ষণ মনোভাব দেখিয়েছিল। আমরা যুবক বা বৃদ্ধ যা-ই হই না কেন, ঈশ্বরের দেওয়া নীতিগুলো আমাদেরকে আচরণের উচ্চমানগুলো মেনে চলতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়া, এগুলো আমাদেরকে আমিত্ব মনোভাব, তা যেভাবেই বলা হোক না কেন, সেটার সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে। কীভাবে বাইবেলের নীতিগুলো আপনাকে সত্যিই সাহায্য করতে পারে, সেই সম্বন্ধে আপনি যদি আরও জানতে চান, তাহলে দয়া করে পরের প্রবন্ধটা পড়ুন।
[৪ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
আজকে অনেকে অন্যদের প্রয়োজনগুলোর প্রতি কোন মনোযোগই দেয় না