সভাগুলো প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে উদ্দীপিত করে তোলে
“আমার কাছে এসো, আমি তোমাদের সতেজ করব”
সভাগুলো প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে উদ্দীপিত করে তোলে
টরেন্টো থেকে টোকিও, মস্কো থেকে মনটিভিডিও পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ যিহোবার সাক্ষি এবং তাদের বন্ধুবান্ধবরা প্রতি সপ্তায় কয়েকবার তাদের উপাসনার জায়গায় স্রোতের মতো যান। এই ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে পরিশ্রমী সাংসারিক পুরুষ, যারা সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত থাকেন; পরিশ্রমী স্ত্রী বা মায়েরা, যারা ছোট্ট বাচ্চাদেরকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন; প্রাণবন্ত যুবক-যুবতীরা, যারা সারাদিন স্কুলে কাটায়; দুর্বল বয়স্ক ব্যক্তিরা, যারা ব্যথা ও যন্ত্রণার জন্য আস্তে আস্তে হাঁটেন; সাহসী বিধবা ও অনাথরা এবং সান্ত্বনার দরকার রয়েছে এমন হতাশ ব্যক্তিরা।
যিহোবার সাক্ষিরা সভাগুলোতে যাতায়াতের জন্য দ্রুতগামী বুলেট ট্রেন থেকে শুরু করে গাধা, পাতাল রেল থেকে শুরু করে ট্রাক পর্যন্ত ব্যবহার করেন। কাউকে কাউকে কুমিরে ভরা নদী পার হতে হয়, আবার কিছুজনকে বড় বড় শহরের বিরক্তিকর যানজট সহ্য করতে হয়। কিন্তু, এই লোকেরা কেন এত চেষ্টা করেন?
মূলত, খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে যোগ দেওয়া ও তাতে অংশ নেওয়া হল যিহোবা ঈশ্বরকে উপাসনা করার এক গুরত্বপূর্ণ উপায়। (ইব্রীয় ১৩:১৫) প্রেরিত পৌল আরেকটা কারণ জানান যখন তিনি লিখেছিলেন: “আইস, আমরা পরস্পর মনোযোগ করি, যেন প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে পরস্পরকে উদ্দীপিত করিয়া তুলিতে পারি; এবং আপনারা সমাজে সভাস্থ হওয়া পরিত্যাগ না করি . . . বরং পরস্পরকে চেতনা দিই; আর তোমরা সেই দিন যত অধিক সন্নিকট হইতে দেখিতেছ, ততই যেন অধিক এ বিষয়ে তৎপর হই।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) এখানে পৌল গীতরচক দায়ূদের অনুভূতিকে প্রতিধ্বনিত করেছিলেন, যিনি গেয়েছিলেন: “আমি আনন্দিত হইলাম, যখন লোকে আমাকে বলিল, চল, আমরা সদাপ্রভুর গৃহে যাই।”—গীতসংহিতা ১২২:১.
খ্রীষ্টানরা তাদের সভাগুলোতে উপস্থিত হতে পেরে কেন আনন্দিত হন? কারণ উপস্থিত ব্যক্তিরা সেখানে কেবল নির্বাক দর্শক নন। বরং সভাগুলো তাদেরকে একে অন্যকে জানার সুযোগ করে দেয়। বিশেষ করে এই সমাবেশগুলো শুধু গ্রহণ করার নয় কিন্তু দান করার এবং প্রেম দেখাতে ও ভাল কাজ করতে একে অন্যকে উদ্দীপিত করে তোলার সুযোগ খুলে দেয়। এই বিষয়গুলো সভাগুলোকে গঠনমূলক উপলক্ষ করে তোলে। এছাড়া খ্রীষ্টীয় সভাগুলো হল একটা উপায়, যার মাধ্যমে যীশু তাঁর প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করেন: “আমার কাছে এসো, আমি তোমাদের সতেজ করব।”—মথি ১১:২৮, NW.
সান্ত্বনা ও চিন্তার এক মরূদ্যান
সভাগুলোকে সতেজতাদায়ক হিসেবে দেখার উপযুক্ত কারণ যিহোবার সাক্ষিদের রয়েছে। একটা কারণ হল, সভাগুলোতে ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস’ উপযুক্ত সময়ে আধ্যাত্মিক খাদ্য সরবরাহ করেন। (মথি ২৪:৪৫) এছাড়া, যিহোবার দাসদের ঈশ্বরের বাক্যের দক্ষ ও উদ্যোগী শিক্ষক করে তোলার জন্য সভাগুলো এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেইসঙ্গে কিংডম হলে এসে একজন ব্যক্তি প্রেমময়, চিন্তাশীল ও যত্নবান বন্ধুবান্ধবদের খুঁজে পেতে পারেন, যারা দুর্দশার সময়ে সাহায্য ও সান্ত্বনা দিতে প্রস্তুত এবং ইচ্ছুক।—২ করিন্থীয় ৭:৫-৭.
বিধবা ফিলিসের এইধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছিল, যিনি তার মেয়েদের যখন পাঁচ ও আট বছর বয়স, তখন তার স্বামীকে হারিয়েছিলেন। খ্রীষ্টীয় সভাগুলো যেভাবে তার নিজের ও তার ছোট মেয়েদের ওপর সতেজতাদায়ক প্রভাব ফেলেছিল সেই সম্বন্ধে বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন: “কিংডম হলে গিয়ে আমরা সান্ত্বনা পেতাম, কারণ সহ বিশ্বাসীরা সবসময়ই আমাদেরকে জড়িয়ে ধরে, শাস্ত্রের কথা বলে, হাতে মৃদু চাপ দিয়ে আমাদের প্রতি প্রেম দেখাতেন ও যত্ন নিতেন। এটা এমন এক জায়গা, যেখানে আমি সবসময়ই থাকতে চেয়েছি।”—১ থিষলনীকীয় ৫:১৪.
ম্যারির একটা বড় রকমের অপারেশন হওয়ার পর ডাক্তার তাকে বলেছিলেন যে, তার সুস্থ হতে প্রায় ছয় সপ্তা লাগবে। সুস্থ হয়ে ওঠার প্রথম কয়েক সপ্তা ম্যারি সভাগুলোতে যোগ দিতে পারেননি। তার ডাক্তার লক্ষ্য করেছিলেন যে, তিনি আগের মতো আর অত হাসিখুশি নন। ডাক্তার যখন জানতে পারেন যে, ম্যারি সভাগুলোতে যোগ দিচ্ছেন না তখন তিনি তাকে সেখানে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিয়েছিলেন। ম্যারি বলেছিলেন যে, তার অবিশ্বাসী স্বামী তার স্বাস্থ্যের কথা ভেবে তাকে সভাগুলোতে যেতে অনুমতি দেবেন না। এইজন্য ডাক্তার ম্যারিকে উৎসাহ ও গঠনমূলক মেলামেশা করার জন্য কিংডম হলে যেতে “আদেশ” দিয়ে একটা প্রেস্ক্রিপশন লিখে দেন। শেষে ম্যারি বলেন: “একটা সভাতে যোগ দেওয়ার পর, আগের চেয়ে আমি খুব ভাল বোধ করি। আমি খাওয়া-দাওয়া শুরু করি, রাতে ঠিকমতো ঘুম হয় ও আমাকে বারবার ওষুধ খেতে হয় না এবং আমার মুখে আবার হাসি ফুটে ওঠে!”—হিতোপদেশ ১৬:২৪.
খ্রীষ্টীয় সভাগুলোর প্রেমময় পরিবেশ বাইরের লোকেদের নজর এড়ায় না। একজন কলেজ ছাত্রী তার নৃতত্ত্ব ক্লাসের জন্য একটা প্রবন্ধ লিখতে যিহোবার সাক্ষিদের আচার-আচরণের ওপর লক্ষ্য করে। সভাগুলোর পরিবেশ সম্বন্ধে তার প্রবন্ধে সে লিখেছিল: “তারা আমাকে যে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন . . . তা আমার ওপর অনেক ছাপ [ফেলেছিল]। . . . যিহোবার সাক্ষিদের লক্ষণীয় গুণ হল, তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব আর আমি মনে করি এটাই সেই পরিবেশের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ।”—১ করিন্থীয় ১৪:২৫.
সংকটে ভরা এই জগতে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী হল এক আধ্যাত্মিক মরূদ্যান। এটা শান্তি ও প্রেমের এক আশ্রয়স্থল। সভাগুলোতে উপস্থিত থেকে আপনি নিজে গীতরচকের বলা কথাগুলোর সত্যতা অভিজ্ঞতা করতে পারেন: “দেখ, ইহা কেমন উত্তম ও কেমন মনোহর যে, ভ্রাতারা একসঙ্গে ঐক্যে বাস করে!”—গীতসংহিতা ১৩৩:১.
[২৫ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]
এক বিশেষ প্রয়োজন মেটানো
যারা শুনতে পান না, তারা কীভাবে খ্রীষ্টীয় সভাগুলো থেকে উপকৃত হতে পারেন? সারা পৃথিবী জুড়ে যিহোবার সাক্ষিরা সাংকেতিক ভাষার বিভিন্ন মণ্ডলী প্রতিষ্ঠা করে চলেছেন। গত ১৩ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে এইরকম ২৭টা মণ্ডলী এবং ৪৩টা দল গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে আরও অন্তত ৪০টা দেশে সাংকেতিক ভাষার প্রায় ১৪০টা মণ্ডলী রয়েছে। এইরকম ১৩টা ভাষায় খ্রীষ্টীয় প্রকাশনাগুলোকে ভিডিওতে প্রকাশ করা হচ্ছে।
খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী বধির ব্যক্তিকে যিহোবার প্রশংসা করার সুযোগ করে দেয়। ফ্রান্সের এক প্রাক্তন ক্যাথলিক অডিল, যিনি প্রায়ই তীব্র হতাশায় ভুগতেন এবং আত্মহত্যা করার কথা ভাবতেন। তিনি খ্রীষ্টীয় সভাগুলো থেকে যে বাইবেলের শিক্ষা পেয়েছেন সেইজন্য অন্তর থেকে কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘আমার স্বাস্থ্য ভাল হয়েছে এবং জীবনের আনন্দ আবার ফিরে পেয়েছি। কিন্তু সবচেয়ে বড় বিষয় হল, আমি সত্য খুঁজে পেয়েছি। এখন আমার জীবনের এক উদ্দেশ্য রয়েছে।’