প্রভুর সান্ধ্যভোজ কেন উদ্যাপন করবেন?
প্রভুর সান্ধ্যভোজ কেন উদ্যাপন করবেন?
“আমি প্রভু হইতে এই শিক্ষা পাইয়াছি এবং তোমাদিগকে সমর্পণও করিয়াছি।”—১ করিন্থীয় ১১:২৩.
১, ২. সাধারণ কাল ৩৩ সালের নিস্তারপর্বের রাতে যিশু কী করেছিলেন?
যিহোবার একজাত পুত্র সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সেইসঙ্গে সেই ১১ জন ব্যক্তিও, যারা ‘তাঁহার সকল পরীক্ষার মধ্যে তাঁহার সঙ্গে সঙ্গে বরাবর রহিয়াছিল।’ (লূক ২২:২৮) সময়টা ছিল সা.কা. ৩৩ সালের ৩১শে মার্চ, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা এবং খুব সম্ভবত পূর্ণিমার চাঁদ যিরূশালেমের আকাশকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছিল। যিশু খ্রিস্ট ও তাঁর প্রেরিতরা সবেমাত্র নিস্তারপর্ব উদ্যাপন শেষ করেন। বিশ্বাসঘাতক ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদাকে সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে কিন্তু অন্যদের জন্য সেখান থেকে চলে যাওয়ার সময় সেটা ছিল না। কেন? কারণ যিশু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু করতে যাচ্ছিলেন। সেটা কী ছিল?
২ যেহেতু সুসমাচার লেখক মথি সেখানে ছিলেন, তাই তাকেই ঘটনাটি বলতে দিন। তিনি লিখেছিলেন: “যীশু রুটী লইয়া আশীর্ব্বাদপূর্ব্বক ভাঙ্গিলেন, এবং শিষ্যদিগকে দিলেন, আর কহিলেন, লও, ভোজন কর, ইহা আমার শরীর। পরে তিনি পানপাত্র লইয়া ধন্যবাদপূর্ব্বক তাঁহাদিগকে দিয়া কহিলেন, তোমরা সকলে ইহা হইতে পান কর; কারণ ইহা আমার রক্ত, নূতন নিয়মের রক্ত, যাহা অনেকের জন্য, পাপমোচনের নিমিত্ত, পাতিত হয়।” (মথি ২৬:২৬-২৮) এই ঘটনাটি কি কেবলমাত্র একবারই ঘটেছিল? এর তাৎপর্য কী ছিল? আজকে আমাদের জন্য এটির কি কোনো অর্থ আছে?
“আমার স্মরণার্থে ইহা করিও”
৩. সাধারণ কাল ৩৩ সালের ১৪ই নিশান রাতে যিশু যা করেছিলেন, তা কেন তাৎপর্যপূর্ণ ছিল?
৩ সাধারণ কাল ৩৩ সালের ১৪ই নিশান রাতে যিশু খ্রিস্ট যে-পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, সেটি তাঁর জীবনের কেবল আকস্মিক কোনো ঘটনার চেয়ে আরও বেশি কিছু ছিল। করিন্থের অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের উদ্দেশে লেখার সময় প্রেরিত পৌল এই বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন, যেখানে ২০ বছরের বেশি সময় পরেও তখনও তা উদ্যাপন করা চলছিল। যদিও পৌল সা.কা. ৩৩ সালে যিশু ও তাঁর ১১ জন প্রেরিতের সঙ্গে ছিলেন না কিন্তু এটা নিশ্চিত যে, সেই সময় কী হয়েছিল, তা তিনি প্রেরিতদের কারও কারও কাছ থেকে শুনেছিলেন। এ ছাড়া, স্পষ্টতই বলা যায় যে পৌল অনুপ্রাণিত প্রকাশপ্রাপ্তির মাধ্যমে সেই ঘটনার বিভিন্ন দিক সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়েছিলেন। পৌল বলেছিলেন: “আমি প্রভু হইতে এই শিক্ষা পাইয়াছি এবং তোমাদিগকে সমর্পণও করিয়াছি যে, প্রভু যীশু যে রাত্রিতে সমর্পিত হন, সেই রাত্রিতে তিনি রুটী লইলেন, এবং ধন্যবাদপূর্ব্বক ভাঙ্গিলেন, ও কহিলেন, ‘ইহা আমার শরীর, ইহা তোমাদের জন্য; আমার স্মরণার্থে ইহা করিও’। সেই প্রকারে তিনি ভোজনের পর পানপাত্রও লইয়া কহিলেন, ‘এই পানপাত্র আমার রক্তে নূতন নিয়ম; তোমরা যত বার পান করিবে, আমার স্মরণার্থে ইহা করিও’।”—১ করিন্থীয় ১১:২৩-২৫.
৪. কেন খ্রিস্টানদের প্রভুর সান্ধ্যভোজ উদ্যাপন করা উচিত?
৪ সুসমাচার লেখক লূক যিশুর এই আদেশকে নিশ্চিত করেন: “ইহা আমার স্মরণার্থে করিও।” (লূক ২২:১৯) এই কথাগুলোকে এভাবেও অনুবাদ করা হয়েছে: “আমার স্মরণে এটি কর।” (টুডেজ ইংলিশ ভারসন) বাস্তবিকই, এই উদ্যাপনকে প্রায়ই খ্রিস্টের মৃত্যুর স্মরণার্থ বলা হয়ে থাকে। এ ছাড়া, পৌল এটিকে বলেন প্রভুর সান্ধ্যভোজ—এক উপযুক্ত আখ্যা কারণ এটি রাতে প্রবর্তন করা হয়েছিল। (১ করিন্থীয় ১১:২০, NW) প্রভুর সান্ধ্যভোজ উদ্যাপন করার জন্য খ্রিস্টানদের আদেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন এই উদ্যাপন প্রবর্তন করা হয়েছিল?
যেজন্য এটি প্রবর্তন করা হয়েছিল
৫, ৬. (ক) যিশুর স্মরণার্থ প্রবর্তন করার পিছনে একটা কারণ কী ছিল? (খ) প্রভুর সান্ধ্যভোজ প্রবর্তন করার আরেকটা কারণ বলুন।
৫ যেজন্য স্মরণার্থ প্রবর্তন করা হয়েছিল সেটার একটা কারণ যিশুর মৃত্যুর দ্বারা সাধিত এক উদ্দেশ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিল। তিনি তাঁর স্বর্গীয় পিতার সার্বভৌমত্বের সমর্থক হিসেবে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। খ্রিস্ট এভাবে শয়তান দিয়াবলকে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করেছিলেন, যে মিথ্যাভাবে অভিযোগ করেছিল, মানুষ কেবল স্বার্থপর উদ্দেশ্যের জন্য ঈশ্বরকে সেবা করে। (ইয়োব ২:১-৫) বিশ্বস্তভাবে যিশুর মৃত্যুবরণ এই অভিযোগকে মিথ্যা প্রমাণ করেছিল এবং যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করেছিল।—হিতোপদেশ ২৭:১১.
৬ প্রভুর সান্ধ্যভোজ প্রবর্তন করার আরেকটা কারণ ছিল আমাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া যে, একজন সিদ্ধ, নিষ্পাপ মানুষ হিসেবে যিশু মৃত্যুবরণ করে ‘অনেকের পরিবর্ত্তে আপন প্রাণ মুক্তির মূল্যরূপে দিয়াছিলেন।’ (মথি ২০:২৮) প্রথম মানুষ যখন ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করেছিল, তখন সে সিদ্ধ মানব জীবন এবং এর সমস্ত প্রত্যাশা হারিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু, যিশু বলেছিলেন: “ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্ত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।” (যোহন ৩:১৬) বাস্তবিকই, “পাপের বেতন মৃত্যু; কিন্তু ঈশ্বরের অনুগ্রহ-দান আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টেতে অনন্ত জীবন।” (রোমীয় ৬:২৩) প্রভুর সান্ধ্যভোজ উদ্যাপন, যিশুর বলিদানমূলক মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত যিহোবা এবং তাঁর পুত্র উভয়ের মহৎ প্রেমের বিষয়ে আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। সেই প্রেম আমাদের কতই না উপলব্ধি করা উচিত!
কখন এটি উদ্যাপন করবেন?
৭. কীভাবে অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা “যত বার” স্মরণার্থের প্রতীক গ্রহণে অংশ নিয়ে থাকে?
৭ প্রভুর সান্ধ্যভোজ সম্বন্ধে পৌল বলেছিলেন: “যত বার তোমরা এই রুটী ভোজন কর, এবং এই পানপাত্রে পান কর, তত বার প্রভুর মৃত্যু প্রচার করিয়া থাক, যে পর্য্যন্ত তিনি না আইসেন।” (১ করিন্থীয় ১১:২৬) প্রত্যেক অভিষিক্ত খ্রিস্টান তাদের মৃত্যু পর্যন্ত স্মরণার্থের প্রতীকগুলো গ্রহণ করে যাবে। এভাবে তারা যিহোবা ঈশ্বর ও জগতের সামনে, যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের যে-ব্যবস্থা ঈশ্বর করেছেন, সেটির প্রতি তাদের বার বার বিশ্বাস ঘোষণা করে যাবে।
৮. অভিষিক্ত ব্যক্তিদের দল কতদিন পর্যন্ত প্রভুর সান্ধ্যভোজ উদ্যাপন করে যাবে?
৮ অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের দল কতদিন খ্রিস্টের মৃত্যুর স্মরণার্থ উদ্যাপন করে যাবে? “যে পর্য্যন্ত তিনি না আইসেন,” পৌল বলেছিলেন, স্পষ্টতই এর অর্থ হল যে এই উদ্যাপন ততদিন পর্যন্ত চলবে যতদিন না যিশুর ‘আগমনের [“উপস্থিতির,” NW]’ সময়ে তাঁর অভিষিক্ত অনুসারীদের পুনরুত্থানের মাধ্যমে স্বর্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি আসেন। (১ থিষলনীকীয় ৪:১৪-১৭) এটা ১১ জন অনুগত প্রেরিতকে বলা যিশুর এই কথাগুলোর সঙ্গে মিল রাখে: “আমি যখন যাই ও তোমাদের জন্য স্থান প্রস্তুত করি, তখন পুনর্ব্বার আসিব, এবং আমার নিকটে তোমাদিগকে লইয়া যাইব; যেন, আমি যেখানে থাকি, তোমরাও সেইখানে থাক।”—যোহন ১৪:৩.
৯. মার্ক ১৪:২৫ পদে লিপিবদ্ধ যিশুর কথাগুলোর অর্থ কী?
৯ যখন যিশু স্মরণার্থ প্রবর্তন করেছিলেন, তখন তিনি দ্রাক্ষারসের পানপাত্রের বিষয় ইঙ্গিত করে তাঁর বিশ্বস্ত প্রেরিতদের বলেছিলেন: “যে দিন আমি ঈশ্বরের রাজ্যে ইহা নূতন পান করিব, সেই দিন পর্য্যন্ত আমি দ্রাক্ষাফলের রস আর কখনও পান করিব না।” (মার্ক ১৪:২৫) যেহেতু যিশু স্বর্গে গিয়ে আক্ষরিক দ্রাক্ষারস আর পান করবেন না, তাই এটা স্পষ্ট যে তাঁর মনে সেই আনন্দের বিষয়টা ছিল, যা কখনও কখনও দ্রাক্ষারসের মাধ্যমে প্রতীকস্বরূপ প্রকাশ করা হয়। (গীতসংহিতা ১০৪:১৫; উপদেশক ১০:১৯) রাজ্যে একত্র হওয়া এক আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা হবে, যেটার জন্য তিনি এবং তাঁর পদচিহ্ন অনুসরণকারীরা অনেক দিন ধরে সানন্দে অপেক্ষা করে ছিলেন।—রোমীয় ৮:২৩: ২ করিন্থীয় ৫:২.
১০. কতবার স্মরণার্থ উদ্যাপন করা উচিত?
১০ যিশুর মৃত্যু কি মাসে একবার, সপ্তাহে একবার অথবা এমনকি প্রতিদিন পালন করা উচিত? না। যিশু, প্রভুর সান্ধ্যভোজ প্রবর্তন করেছিলেন এবং নিস্তারপর্বের দিন তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল, যে-পর্বটা সা.কা.পূ. ১৫১৩ সালে মিশরীয়দের দাসত্ব থেকে ইস্রায়েলের মুক্তির ‘স্মরণে’ উদ্যাপন করা হতো। (যাত্রাপুস্তক ১২:১৪) নিস্তারপর্ব শুধু বছরে একবার, যিহুদি নিশান মাসের ১৪ তারিখে পালন করা হতো। (যাত্রাপুস্তক ১২:১-৬; লেবীয়পুস্তক ২৩:৫) এটা ইঙ্গিত করে যে, যিশুর মৃত্যু কেবল নিস্তারপর্ব যত বার হতো তত বার অর্থাৎ বছরে একবার উদ্যাপন করা উচিত—মাসে একবার, সপ্তাহে একবার বা প্রতিদিন নয়।
১১, ১২. স্মরণার্থের প্রাথমিক উদ্যাপনগুলো সম্বন্ধে ইতিহাস কী প্রকাশ করে?
১১ তাই, স্মরণার্থ বছরে একবার অর্থাৎ ১৪ই নিশান উদ্যাপন করা উপযুক্ত। একটি তথ্যগ্রন্থ বলে: “এশিয়া মাইনরের খ্রিস্টানরা রীতি অনুযায়ী নিয়মিতভাবে নিশান মাসের ১৪ তারিখ পাস্কা [প্রভুর সান্ধ্যভোজ] উদ্যাপন করত বলে তাদের কোয়ারটোডেসিমান্ [চতুর্দশ-তারিখ পালনকারী] বলা হতো . . . সেই তারিখ হয়তো শুক্রবার বা সপ্তাহের অন্য যেকোনো দিনে পড়ত।”—দ্যা নিউ শেফ-হার্টসোক এনসাইক্লোপিডিয়া অফ রিলিজিয়াস নলেজ, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৪৪.
১২ সাধারণ কাল দ্বিতীয় শতাব্দীতে যে-অভ্যাস প্রচলিত ছিল, সেই সম্বন্ধে মন্তব্য করতে গিয়ে ইতিহাসবেত্তা জে. এল. ফন মোসহাইম বলেন যে, কোয়ারটোডেসিমান্রা ১৪ই নিশান স্মরণার্থ উদ্যাপন করত কারণ “যেমন তারা নিয়ম অনুসরণ করত ঠিক তেমনই খ্রীষ্টের উদাহরণ অনুসরণ করতে তারা বাধ্য মনে করত।” আরেকজন ইতিহাসবেত্তা বলেন: “পাস্কা [প্রভুর সান্ধ্য ভোজ] পালন করার দিন সম্বন্ধে, এশিয়ার কোয়ার্টোডেসিমান্ গির্জাগুলির প্রথা যেরুসালেমের প্রথার সঙ্গে এক ছিল। এই গির্জাগুলিতে, ২য় শতাব্দীতে ১৪ই নিশানের পাস্কার সময়ে, খ্রীষ্টের মৃত্যুর মাধ্যমে মুক্তিলাভকে স্মরণ করা হত।”—স্টাডিয়া পাট্রিস্টিকা, খণ্ড ৫, ১৯৬২, পৃষ্ঠা ৮.
রুটির তাৎপর্য
১৩. প্রভুর সান্ধ্যভোজ প্রবর্তনের সময় যিশু কীধরনের রুটি ব্যবহার করেছিলেন?
১৩ যিশু যখন স্মরণার্থ প্রবর্তন করেছিলেন, তখন “তিনি রুটী লইয়া আশীর্ব্বাদপূর্ব্বক ভাঙ্গিলেন এবং [প্রেরিতদের] দিলেন।” (মার্ক ১৪:২২) সাধারণত নিস্তারপর্বের সময় যে-রুটি ব্যবহৃত হতো, সেখানে সেই রুটিই ছিল। (যাত্রাপুস্তক ১৩:৬-১০) যেহেতু তাড়ি ছাড়াই তা সেঁকা হয়েছিল, তাই এটা চ্যাপটা ও মচমচে ছিল এবং বিতরণ করার জন্য ভাঙতে হতো। যিশু যখন হাজার হাজার লোককে খাওয়ানোর জন্য অলৌকিকভাবে রুটির সংখ্যা বৃদ্ধি করেছিলেন, সেটাও মচমচে ছিল কারণ তিনি সেটাকে ভেঙেছিলেন, যাতে বিতরণ করা যেতে পারে। (মথি ১৪:১৯; ১৫:৩৬) তাই এটা স্পষ্ট যে, স্মরণার্থের রুটি ভাঙার মধ্যে কোনো ধর্মীয় তাৎপর্য নেই।
১৪. (ক) স্মরণার্থের রুটি তাড়িশূন্য হওয়া কেন উপযুক্ত? (খ) প্রভুর সান্ধ্যভোজে ব্যবহারের জন্য কীধরনের রুটি তৈরি করা বা সেঁকা যেতে পারে?
১৪ স্মরণার্থ প্রবর্তনের সময় যে-রুটি ব্যবহার করা হয়েছিল সেই সম্বন্ধে যিশু বলেছিলেন: “ইহা আমার শরীর, ইহা তোমাদের জন্য।” (১ করিন্থীয় ১১:২৪; মার্ক ১৪:২২) এটা উপযুক্ত যে, রুটিটি তাড়িশূন্য ছিল। কেন? কারণ তাড়ি মন্দতা, দুষ্টতা বা পাপকে নির্দেশ করতে পারে। (১ করিন্থীয় ৫:৬-৮) রুটি চিত্রিত করেছিল যিশুর সিদ্ধ, নিষ্পাপ মানব দেহকে, যেটা উপযুক্তভাবেই মুক্তির মূল্য হিসেবে উৎসর্গ করা হয়েছিল। (ইব্রীয় ৭:২৬; ১০:৫-১০) যিহোবার সাক্ষিরা এই কথা মনে রাখে এবং স্মরণার্থ উদ্যাপনে তাড়িশূন্য রুটি ব্যবহার করে যিশুর স্থাপিত দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, তারা মসলাহীন যিহুদি মাটজোস ব্যবহার করে, যেখানে অতিরিক্ত কোনো উপাদান যেমন পেঁয়াজ বা ডিম মেশানো হয় না। এ ছাড়া, অল্প পরিমাণ পূর্ণ শস্যের ময়দা (যেখানে সম্ভব, আটা) সামান্য জলের সঙ্গে মিশিয়ে তাড়িশূন্য রুটি তৈরি করা যেতে পারে। মাখা ময়দার তালকে পাতলা করে গড়তে হবে এবং এরপর সামান্য তেল মাখানো তাওয়ার মধ্যে সেঁকা যেতে পারে যতক্ষণ না রুটিটি শুকনো ও মচমচে হয়।
দ্রাক্ষারসের তাৎপর্য
১৫. খ্রিস্ট যখন তাঁর মৃত্যুর স্মরণার্থ প্রবর্তন করেছিলেন, তখন সেই পানপাত্রে কী ব্যবহার করা হয়েছিল?
১৫ তাড়িশূন্য রুটি ঘুরানোর পর, যিশু একটা পানপাত্র হাতে নেন ও “ধন্যবাদপূর্ব্বক [প্রেরিতদের] দিলেন, এবং তাঁহারা সকলেই তাহা হইতে পান করিলেন।” যিশু ব্যাখ্যা করেছিলেন: “ইহা আমার রক্ত, নূতন নিয়মের রক্ত, যাহা অনেকের জন্য পাতিত হয়।” (মার্ক ১৪:২৩, ২৪) সেই পানপাত্রে কী ছিল? গাঁজানো দ্রাক্ষারস ছিল, আঙুরের অগাঁজানো রস নয়। শাস্ত্র যখন দ্রাক্ষারসের কথা বলে, তখন আঙুরের অগাঁজানো রসকে বোঝায় না। উদাহরণ হিসেবে, যিশু যেমন বলেছিলেন যে আঙুরের রস নয় বরং গাঁজানো দ্রাক্ষারসই “পুরাতন কুপায়” রাখলে তা ফেটে যাবে। আর যিশু যখন এক বিবাহ ভোজে জলকে অলৌকিকভাবে দ্রাক্ষারসে পরিণত করেছিলেন, তখন ভোজাধ্যক্ষ বলেছিলেন, “সকল লোকেই প্রথমে উত্তম দ্রাক্ষারস পরিবেষণ করে, এবং যথেষ্ট পান করা হইলে পর তাহা অপেক্ষা কিছু মন্দ পরিবেষণ করে; তুমি উত্তম দ্রাক্ষারস এখন পর্য্যন্ত রাখিয়াছ।” (মথি ৯:১৭; যোহন ২:১০) নিস্তারপর্ব উদ্যাপনের সময় দ্রাক্ষারস পান করা হতো এবং খ্রিস্ট তাঁর মৃত্যুর স্মরণার্থ প্রবর্তন করার সময় এটা ব্যবহার করেছিলেন।
১৬, ১৭. স্মরণার্থ উদ্যাপনের জন্য কীধরনের দ্রাক্ষারস উপযুক্ত এবং কেন?
১৬ একমাত্র লাল দ্রাক্ষারসই পানপাত্রের তরল অর্থাৎ যিশুর পাতিত রক্তকে প্রতিনিধিত্ব করার একমাত্র উপযুক্ত প্রতীক। তিনি নিজে বলেছিলেন: “ইহা আমার রক্ত, নূতন নিয়মের রক্ত, যাহা অনেকের জন্য পাতিত হয়।” আর প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “তোমরা [অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা] . . . জান, তোমাদের পিতৃপুরুষগণের সমর্পিত অলীক আচার ব্যবহার হইতে তোমরা ক্ষয়ণীয় বস্তু দ্বারা, রৌপ্য বা স্বর্ণ দ্বারা, মুক্ত হও নাই, কিন্তু নির্দ্দোষ ও নিষ্কলঙ্ক মেষশাবকস্বরূপ খ্রীষ্টের বহুমূল্য রক্ত দ্বারা মুক্ত হইয়াছ।”—১ পিতর ১:১৮, ১৯.
১৭ নিঃসন্দেহে আঙুরের লাল দ্রাক্ষারস সেই ধরনেরই ছিল, যা যিশু স্মরণার্থ প্রবর্তন করার সময় ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু, বর্তমান দিনের কিছু লাল দ্রাক্ষারস গ্রহণযোগ্য নয় কারণ সেগুলোতে স্পিরিট বা ব্র্যান্ডি দিয়ে এর উৎকর্ষ বৃদ্ধি করা হয় অথবা সেগুলোতে ঔষধি ও মসলা যুক্ত করা হয়। যিশুর রক্ত পুরোপুরি উপযুক্ত ছিল, এর সঙ্গে কোনো কিছু যুক্ত করার দরকার নেই। তাই, উৎকর্ষ বৃদ্ধি করা হয়েছে এমন দ্রাক্ষারস ব্যবহার করা উপযুক্ত হবে না। স্মরণার্থ পানপাত্রে মিষ্টিহীন এবং উৎকর্ষহীন লাল দ্রাক্ষারস থাকা উচিত। ঘরে বানানো, মিষ্টিহীন লাল আঙুরের রস ব্যবহার করা যেতে পারে ও সেইসঙ্গে এইধরনের মদগুলোও যেমন লাল বারগানডি এবং ক্ল্যারেট।
১৮. স্মরণার্থের রুটি ও দ্রাক্ষারস নিয়ে কেন যিশু কোনো অলৌকিক কাজ সম্পন্ন করেননি?
১৮ এই ভোজ প্রবর্তনের সময় যিশু কোনো অলৌকিক কাজ সম্পাদন করেননি অর্থাৎ প্রতীকগুলোকে তাঁর আক্ষরিক শরীর ও রক্তে পরিণত করেননি। মানুষের মাংস ভোজন ও রক্ত পান করা মানে নরখাদকে পরিণত হওয়া, অর্থাৎ ঈশ্বরের আইনকে লঙ্ঘন করা। (আদিপুস্তক ৯:৩, ৪; লেবীয় পুস্তক ১৭:১০) যিশুর তখনও পুরোপুরি মাংসিক দেহ এবং রক্ত ছিল। তাঁর দেহ এক সিদ্ধ বলি হিসেবে উৎসর্গ করা হয়েছিল এবং যিহুদিদের সেই একই দিনে অর্থাৎ পরের দিন দুপুরবেলা, ১৪ই নিশান তাঁর রক্ত সেচন করা হয়েছিল। অতএব, স্মরণার্থের রুটি ও দ্রাক্ষারসের প্রকৃতি হল রূপক, যা খ্রিস্টের দেহ ও রক্তকে প্রতিনিধিত্ব করে। *
স্মরণার্থ—এক মঙ্গলার্থক ভোজ
১৯. প্রভুর সান্ধ্যভোজে কেন একটার বেশি প্লেট বা পানপাত্র ব্যবহার করা যেতে পারে?
১৯ যিশু যখন স্মরণার্থ প্রবর্তন করেছিলেন, তখন তিনি তাঁর বিশ্বস্ত প্রেরিতদের একই পানপাত্র থেকে পান করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। মথির সুসমাচার বলে: “[যিশু] [“একটা,” NW] পানপাত্র লইয়া ধন্যবাদপূর্ব্বক তাঁহাদিগকে দিয়া কহিলেন, তোমরা সকলে ইহা হইতে পান কর।” (মথি ২৬:২৭) কয়েকটি পানপাত্র ব্যবহার না করে শুধুমাত্র “একটা পানপাত্র” ব্যবহার করা কোনো সমস্যাই সৃষ্টি করেনি কারণ সেখানে স্পষ্টতই একটা টেবিলে মাত্র ১১ জন অংশগ্রহণকারী ছিল এবং সহজেই একজনের কাছ থেকে অন্যজনের কাছে ঘুরানো যেত। এই বছর, সারা পৃথিবীতে যিহোবার সাক্ষিদের ৯৪,০০০রেরও বেশি মণ্ডলীতে প্রভুর সান্ধ্যভোজ উদ্যাপন করার জন্য লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি সমবেত হবে। এই উদ্যাপনের জন্য সেই রাতে অনেকগুলো সভা হবে আর সবগুলোর জন্য কেবল একটা পানপাত্র ব্যবহার করা সম্ভব নয়। কিন্তু, বড় বড় মণ্ডলীতে কয়েকটা পানপাত্র ব্যবহার করে এই নীতিটি বজায় রাখা হয়, যাতে করে এগুলো নির্দিষ্ট সময়ে শ্রোতাদের মধ্যে দিয়ে ঘোরানো যায়। একইভাবে, রুটির জন্যও একটার বেশি প্লেট ব্যবহার করা যেতে পারে। শাস্ত্রে কোথাও ইঙ্গিত নেই যে, পানপাত্র বা গ্লাস কোনো নির্দিষ্ট নকশার হতে হবে। কিন্তু, পানপাত্র ও প্লেট অবশ্যই সেই ঘটনার যে-মর্যাদা রয়েছে সেটাকে প্রতিফলিত করা উচিত। একটা পানপাত্রে এমনভাবে দ্রাক্ষারস না ভরা বিজ্ঞের কাজ হবে, যেখানে ঘুরানোর সময় পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে।
২০, ২১. কেন আমরা বলতে পারি যে, স্মরণার্থ হল এক মঙ্গলার্থক ভোজ?
২০ যদিও একটার বেশি প্লেটে রুটি ও একটার বেশি পানপাত্রে দ্রাক্ষারস ব্যবহার করা যেতে পারে কিন্তু স্মরণার্থ হল এক মঙ্গলার্থক ভোজ। প্রাচীন ইস্রায়েলে, একজন লোক ঈশ্বরের পবিত্র স্থানে একটা পশু নিয়ে এসে মঙ্গলার্থক ভোজের আয়োজন করতে পারতেন, যেখানে এটাকে বলি দেওয়া হতো। পশুর কিছু অংশ যজ্ঞবেদিতে পোড়ানো হতো, একটা অংশ যে-যাজক উৎসর্গের কাজ সম্পন্ন করতেন তাকে দেওয়া হতো এবং আরেকটা অংশ হারোণের যাজক পুত্রদের কাছে যেত ও বাকি অংশটুকু উৎসর্গকারী এবং তার পরিবার যারা সেই ভোজে অংশ নেবে, তাদের কাছে যেত। (লেবীয় পুস্তক ৩:১-১৬; ৭:২৮-৩৬) স্মরণার্থও একটা মঙ্গলার্থক ভোজ কারণ এর সঙ্গে সকলের সহভাগিতা জড়িত।
২১ এই মঙ্গলার্থক ভোজ ব্যবস্থার উদ্যোক্তা স্বয়ং যিহোবা এর সঙ্গে জড়িত। যিশু হলেন সেই বলি এবং অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা সহযোগী অংশগ্রহণকারী হিসেবে সেই প্রতীক গ্রহণ করে। যিহোবার টেবিলে ভোজন করা চিত্রিত করে যে, অংশগ্রহণকারীরা তাঁর সঙ্গে শান্তিতে রয়েছে। সেইজন্য পৌল লিখেছিলেন: “আমরা ধন্যবাদের যে পানপাত্র লইয়া ধন্যবাদ করি, তাহা কি খ্রীষ্টের রক্তের সহভাগিতা নয়? আমরা যে রুটী ভাঙ্গি, তাহা কি খ্রীষ্টের শরীরের সহভাগিতা নয়? কারণ অনেকে যে আমরা, আমরা এক রুটী, এক শরীর; কেননা আমরা সকলে সেই এক রুটীর অংশী।”—১ করিন্থীয় ১০:১৬, ১৭.
২২. স্মরণার্থ সম্বন্ধে কোন প্রশ্নগুলো আমাদের বিবেচনার জন্য এখনও বাকি রয়েছে?
২২ প্রভুর সান্ধ্যভোজ হল যিহোবার সাক্ষিদের মধ্যে একমাত্র বার্ষিক ধর্মীয় উদ্যাপন। আর এটা উপযুক্ত কারণ যিশু তাঁর অনুসারীদের আদেশ দিয়েছিলেন: “আমার স্মরণার্থে ইহা করিও।” স্মরণার্থের মাধ্যমে আমরা যিশুর মৃত্যু স্মরণ করে থাকি, যে-মৃত্যু যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করেছিল। আমরা যেমন লক্ষ করেছি যে, এই মঙ্গলার্থক ভোজে রুটি চিত্রিত করে খ্রিস্টের বলিকৃত মানব দেহকে এবং দ্রাক্ষারস তাঁর পাতিত রক্তকে। কিন্তু, খুব অল্প লোকই এই প্রতীক রুটি ও দ্রাক্ষারস গ্রহণ করে থাকে। কেন? যে-লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি ভোজনে অংশ নেয় না, তাদের জন্য স্মরণার্থের কি কোনো প্রকৃত অর্থ আছে? বাস্তবিকই আছে, প্রভুর সান্ধ্যভোজ আপনার জন্য কী অর্থ রাখে?
[পাদটীকা]
^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি (ইংরেজি) বইয়ের ২য় খণ্ডের ২৭১ পৃষ্ঠা দেখুন।
আপনার উত্তর কী?
• যিশু কেন প্রভুর সান্ধ্যভোজ প্রবর্তন করেছিলেন?
• স্মরণার্থ কতবার উদ্যাপন করা উচিত?
• স্মরণার্থের তাড়িশূন্য রুটির তাৎপর্য কী?
• স্মরণার্থের দ্রাক্ষারস কী প্রতিনিধিত্ব করে?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিশু, প্রভুর সান্ধ্যভোজ প্রবর্তন করেছিলেন