যিহোবা “প্রচুররূপে” ক্ষমা করেন
যিহোবা “প্রচুররূপে” ক্ষমা করেন
ক্ষমা করা হল, একজন অসন্তুষ্টকারীকে মার্জনা করার জন্য গৃহীত পদক্ষেপ; তার অসন্তোষজনক কাজের দরুণ তার প্রতি ক্ষোভ পোষণ করা থেকে বিরত হওয়া এবং ক্ষতিপূরণের জন্য সমস্ত দাবি ছেড়ে দেওয়া।
ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতিকে যে-আইন দিয়েছিলেন, সেই অনুসারে ঈশ্বর বা সহ মানবের বিরুদ্ধে পাপ করেছেন, এমন কোনো ব্যক্তির পাপের ক্ষমার জন্য তাকে প্রথমে ব্যবস্থার নির্দেশ অনুযায়ী সেই অন্যায়ের প্রতিকার করতে হতো এবং এরপর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যিহোবার কাছে রক্ত উৎসর্গ করতে হতো। (লেবীয় পুস্তক ৫:৫–৬:৭) তাই, পৌল এই নীতি সম্বন্ধে বলেছিলেন: “আর ব্যবস্থানুসারে প্রায় সকলই রক্তে শুচীকৃত হয়, এবং রক্তসেচন ব্যতিরেকে পাপমোচন হয় না।” (ইব্রীয় ৯:২২) কিন্তু, আসলে বলিকৃত পশুর রক্ত পাপ মোচন করতে এবং একজন ব্যক্তিকে সম্পূর্ণ শুদ্ধ বিবেক দিতে পারত না। (ইব্রীয় ১০:১-৪; ৯:৯, ১৩, ১৪) অন্যদিকে, ভবিষ্যদ্বাণীকৃত নতুন চুক্তি খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের ওপর ভিত্তি করে প্রকৃত ক্ষমা পাওয়া সম্ভবপর করেছে। (যিরমিয় ৩১:৩৩, ৩৪; মথি ২৬:২৮, NW; ১ করিন্থীয় ১১:২৫; ইফিষীয় ১:৭) এমনকি পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশু একজন পক্ষাঘাতীকে সুস্থ করার মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন যে, পাপ ক্ষমা করার অধিকার তাঁর আছে।—মথি ৯:২-৭.
যিহোবা “প্রচুররূপে” ক্ষমা করেন, যা যিশুর অপব্যয়ী পুত্র এবং একজন রাজার দৃষ্টান্তের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছিল, যে-রাজা তার একজন দাসের ১০,০০০ তালন্ত (৬,০০,০০,০০০ দিনারি বা প্রায় ৪,০০,০০,০০০ মার্কিন ডলার) ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, যেখানে সেই দাস তার একজন সহ দাসের মাত্র ১০০ দিনারি (প্রায় ৭০ মার্কিন যিশাইয় ৫৫:৭; লূক ১৫:১১-৩২; মথি ১৮:২৩-৩৫) তবে, যিহোবা আবেগপ্রবণ হয়ে ক্ষমা করেন না কারণ তিনি অত্যন্ত খারাপ কাজের জন্য শাস্তি থেকে রেহাই দেন না। (গীতসংহিতা ৯৯:৮) যিহোশূয় ইস্রায়েলকে সাবধান করে দিয়েছিলেন যে, যিহোবা তাদের ধর্মভ্রষ্টতাকে ক্ষমা করবেন না।—যিহোশূয়ের পুস্তক ২৪:১৯, ২০. যিশাইয় ২:৬-৯ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।
ডলার) ক্ষমা করে দিতে চায়নি। (ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা চাওয়ার এবং পাওয়ার জন্য তাঁর চাহিদা অনুযায়ী এক উপায় রয়েছে। একজন ব্যক্তিকে তার পাপ স্বীকার করতে হবে, বুঝতে হবে যে এটা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে একটা অন্যায়, এটা পুরোপুরি স্বীকার করতে হবে, ভুল করার জন্য গভীর আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করতে হবে এবং সেই পথ বা অভ্যাস থেকে ফিরে আসার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। (গীতসংহিতা ৩২:৫; ৫১:৪; ১ যোহন ১:৮, ৯; ২ করিন্থীয় ৭:৮-১১) তিনি যে-ভুল বা ক্ষতি করেছেন, সেটা ঠিক করার জন্য যথাসাধ্য করতে হবে। (মথি ৫:২৩, ২৪) এরপর তাকে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে হবে, খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যের ভিত্তিতে ক্ষমা চাইতে হবে।—ইফিষীয় ১:৭.
সর্বোপরি, যতবারই হোক না কেন, ব্যক্তিগত ত্রুটির জন্য অন্যদের ক্ষমা করে দেওয়া হল এক খ্রিস্টীয় চাহিদা। (লূক ১৭:৩, ৪; ইফিষীয় ৪:৩২; কলসীয় ৩:১৩) ঈশ্বর সেই সমস্ত ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না, যারা অন্যদের ক্ষমা করতে চায় না। (মথি ৬:১৪, ১৫) কিন্তু, এমনকি গুরুতর অন্যায়ের জন্য একজন “দুষ্টকে” খ্রিস্টীয় মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হলেও সেই ব্যক্তি হয়তো নির্দিষ্ট সময়ে ক্ষমা পেতে পারেন, যদি তিনি প্রকৃতই অনুতপ্ত হন। সেই সময় মণ্ডলীর সকলে তার প্রতি প্রেম দেখাতে পারে। (১ করিন্থীয় ৫:১৩; ২ করিন্থীয় ২:৬-১১) কিন্তু, খ্রিস্টানরা সেই সমস্ত ব্যক্তিকে ক্ষমা করতে বাধ্য নয়, যারা বিদ্বেষপরায়ণ এবং অনুতপ্ত না হয়ে স্বেচ্ছায় পাপ করে। তারা ঈশ্বরের শত্রুতে পরিণত হয়।—ইব্রীয় ১০:২৬-৩১; গীতসংহিতা ১৩৯:২১, ২২.
অন্যদের এমনকি পুরো মণ্ডলীর পক্ষ হয়ে ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রার্থনা করা উপযুক্ত। ইস্রায়েল জাতির জন্য মোশি তা-ই করেছিলেন, তাদের সবার পাপ স্বীকার করেছিলেন ও ক্ষমা চেয়েছিলেন এবং যিহোবা তার প্রার্থনা শুনেছিলেন। (গণনাপুস্তক ১৪:১৯, ২০) এ ছাড়া, শলোমন মন্দির উৎসর্গের সময় প্রার্থনা করেছিলেন, যাতে যিহোবা তাঁর দাসদের ক্ষমা করে দেন, যখন তারা পাপ করে তাদের অন্যায় পথ থেকে ফিরে আসে। (১ রাজাবলি ৮:৩০, ৩৩-৪০, ৪৬-৫২) নিজের দেশে ফিরে আসা যিহুদিদের পাপের জন্য ইষ্রা সবার সামনে সকলের হয়ে পাপ স্বীকার করেছিলেন। তার আন্তরিক প্রার্থনা এবং উপদেশের ফলে লোকেরা যিহোবার ক্ষমা পাওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিল। (ইষ্রা ৯:১৩–১০:৪, ১০-১৯, ৪৪) যাকোব আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে অসুস্থ ব্যক্তিকে উৎসাহ দিয়েছিলেন, যাতে তিনি তার হয়ে প্রার্থনা করার জন্য মণ্ডলীর প্রাচীনদের আহ্বান করেন এবং তিনি ‘যদি পাপ করিয়া থাকেন, তবে তাহার মোচন হইবে।’ (যাকোব ৫:১৪-১৬) কিন্তু, এমন পাপ রয়েছে “যাহা মৃত্যুজনক” আর সেটা হল ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে পাপ অর্থাৎ স্বেচ্ছায় করা পাপপূর্ণ অভ্যাস, যেটার কোনো ক্ষমা নেই। সেইধরনের পাপী ব্যক্তির জন্য একজন খ্রিস্টানের প্রার্থনা করা উচিত নয়।—১ যোহন ৫:১৬; মথি ১২:৩১; ইব্রীয় ১০:২৬, ২৭.