সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কিশোর-কিশোরীরা, যারা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করে

কিশোর-কিশোরীরা, যারা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করে

কিশোর-কিশোরীরা, যারা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করে

এই অধ্যয়ন প্রবন্ধগুলো বিশেষত যিহোবার সাক্ষিদের মধ্যে যে-কিশোর-কিশোরীরা রয়েছে, তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তাই, আমরা অল্পবয়স্কদের এই বিষয়বস্তু মন দিয়ে পড়তে এবং মণ্ডলীর প্রহরীদুর্গ অধ্যয়নে যখন এটি আলোচনা করা হয়, তখন স্বচ্ছন্দে মন্তব্য করতে উৎসাহিত করছি।

“বৎস, জ্ঞানবান হও; আমার চিত্তকে আনন্দিত কর; তাহাতে যে আমাকে টিট্‌কারি দেয়, তাহাকে উত্তর দিতে পারিব।” —হিতোপদেশ ২৭:১১.

১, ২. (ক) ব্যাখ্যা কর যে, শুধু জগতের বিষবয়স্তুর প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার অর্থ এই নয় যে, তুমি একজন খ্রিস্টান হওয়ার যোগ্য নও। (রোমীয় ৭:২১) (খ) আসফের উদাহরণ থেকে তুমি কী শিখেছ? (১৩ পৃষ্ঠার বাক্স দেখ।)

 মনে কর, তুমি জামাকাপড় কিনছ। চারিদিকে চোখ বোলানোর সময় একটা পোশাক তোমার চোখে পড়ল, যেটা দেখার সঙ্গে সঙ্গে তোমার দারুণ পছন্দ হল। এটার রং ও স্টাইল পুরোপুরি তোমার জন্য মানানসই বলে মনে হচ্ছে এবং এতে যে-দামের লেবেল আছে, সেটাও একেবারে সঠিক। কিন্তু, এরপর তুমি আরেকটু ভাল করে দেখলে। তুমি বেশ অবাক হয়ে লক্ষ করলে যে, কাপড়ের কিনারাগুলো ঘষা লেগে ক্ষয় হয়ে গেছে এবং সেলাইগুলো একেবারে বাজে। পোশাকটা যদিও আকর্ষণীয় কিন্তু এটার গুণগত মান অত্যন্ত খারাপ। এইরকম এক নিকৃষ্টমানের পোশাকের জন্য তুমি কি তোমার টাকাগুলো খরচ করবে?

এটাকে সেই পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা কর, যা একজন খ্রিস্টান কিশোর বা কিশোরী হিসেবে তোমাকে মোকাবিলা করতে হতে পারে। প্রথম দেখায় এই জগতের বিষয়বস্তু—অনেকটা সেই পোশাকের মতো—অনেক আকর্ষণীয় বলে মনে হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তোমার সহপাঠীরা হয়তো উদ্দাম পার্টিতে যায়, মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে, মদপান করে, যখন-তখন ডেটিং করে এবং বিয়ের আগেই যৌনসম্পর্কে লিপ্ত হয়। মাঝে মাঝে তুমিও কি এই ধরনের জীবনধারার প্রতি আকৃষ্ট হও? তুমি কি তাদের তথাকথিত স্বাধীনতার একটু স্বাদ নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা কর? যদি তাই হয়, তা হলে সঙ্গে সঙ্গে এই সিদ্ধান্তে আসবে না যে, তুমি আসলে খারাপ এবং একজন খ্রিস্টান হওয়ার জন্য একেবারেই যোগ্য নও। তবে, বাইবেল স্বীকার করে যে, জগৎ অত্যন্ত জোরালোভাবে প্রলোভিত করতে পারে—এমনকি সেই ব্যক্তিকেও, যিনি ঈশ্বরকে খুশি করতে চান।—২ তীমথিয় ৪:১০.

৩. (ক) জগতের বিষয়বস্তুর অনুধাবন করা কেন অর্থহীন? (খ) একজন খ্রিস্টান কীভাবে জাগতিক অনুধাবনগুলোর অসারতাকে বর্ণনা করেছে?

এখন দয়া করে আরেকটু ভাল করে লক্ষ কর, ঠিক যেমন তুমি যে-পোশাকটা কিনতে আগ্রহী ছিলে, সেটার প্রতি করেছিলে। নিজেকে জিজ্ঞেস কর, ‘এই বিধিব্যবস্থার কাঠামো এবং বুননের গুণগত মান কেমন?’ বাইবেল বলে যে, “জগৎ . . . বহিয়া যাইতেছে।” (১ যোহন ২:১৭) এই জগতের যেকোনো আমোদপ্রমোদই প্রকৃতপক্ষে ক্ষণস্থায়ী। এ ছাড়া, ভক্তিহীন আচার-আচরণের জন্য উচ্চমূল্য দিতে হয়। সত্যিকার অর্থে এতে কোনো লাভ নেই। একজন খ্রিস্টানকে যে-পরিণতি ভোগ করতে হয়েছিল, সেটাকে সে “যৌবনকালকে অপব্যবহার করার যন্ত্রণা” বলে অভিহিত করেছে। সে বলে: “জগৎকে অনেক মোহময় এবং আকর্ষণীয় বলে মনে হতে পারে। আর এই জগৎ তোমাকে বিশ্বাস করাতে চায় যে, কোনো কষ্ট ছাড়াই তুমি এর যেকোনো আমোদপ্রমোদ উপভোগ করতে পার। কিন্তু, স্পষ্টতই সেটা সম্ভব নয়। জগৎ তোমাকে ব্যবহার করবে এবং যখন ব্যবহার করা শেষ হয়ে যাবে, তখন এটা তোমাকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে।” * এইরকম নিকৃষ্টমানের জীবনযাত্রায় পিছনে কেন তুমি তোমার যৌবনকালকে নষ্ট করবে?

“পাপাত্মা” থেকে সুরক্ষা

৪, ৫. (ক) যিশু তাঁর মৃত্যুর কিছু সময় আগে যিহোবার কাছে প্রার্থনায় কোন নিবেদন করেছিলেন? (খ) কেন এটা এক উপযুক্ত নিবেদন ছিল?

এই বিধিব্যবস্থার যে দেওয়ার মতো উৎকৃষ্ট কোনো কিছুই নেই, সেটা বুঝতে পেরে যিহোবার সাক্ষিদের মধ্যে অনেক অল্পবয়স্করা জগতের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা এড়িয়ে চলে। (যাকোব ৪:৪) তুমি কি এই বিশ্বস্ত কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে একজন? যদি তাই হয়, তা হলে তুমি প্রশংসার যোগ্য। এটা ঠিক যে, সঙ্গীসাথিদের চাপ মোকাবিলা করা এবং অন্যদের চেয়ে আলাদা হওয়া সহজ নয় কিন্তু তোমাকে সাহায্য করার মতো কেউ একজন আছেন।

যিশু তাঁর মৃত্যুর কিছু সময় আগে প্রার্থনা করেছিলেন যে, যিহোবা যেন “সেই পাপাত্মা হইতে” তাঁর শিষ্যদের “রক্ষা” করেন। (যোহন ১৭:১৫) উত্তম কারণেই যিশু এই নিবেদন করেছিলেন। তিনি জানতেন যে, তাঁর অনুসারীদের পক্ষে নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখা সহজ হবে না, তা তারা যে বয়সেরই হোক না কেন। কেন? একটা কারণ হল, যিশু যেমন স্বীকার করেছিলেন যে, তাঁর শিষ্যরা এক শক্তিশালী, অদৃশ্য শত্রুর অর্থাৎ “সেই পাপাত্মা,” শয়তান দিয়াবলের মুখোমুখি হবে। বাইবেল বলে যে, এই মন্দ আত্মিক প্রাণী “গর্জ্জনকারী সিংহের ন্যায়, কাহাকে গ্রাস করিবে, তাহার অন্বেষণ করিয়া বেড়াইতেছে।”—১ পিতর ৫:৮.

৬. কীভাবে আমরা জানি যে, অল্পবয়স্কদের প্রতি শয়তানের কোনো সমবেদনা নেই?

ইতিহাস জুড়ে মানুষের ওপর অত্যন্ত নির্মম তাড়না নিয়ে এসে শয়তান নিষ্ঠুর আনন্দ পেয়েছে। ইয়োব এবং তার পরিবারের ওপর শয়তান যে-ভয়ংকর দুর্দশা নিয়ে এসেছিল, সেই বিষয়ে চিন্তা কর। (ইয়োব ১:১৩-১৯; ২:৭) হয়তো, তোমার জীবনকালের কোনো ঘটনার কথা তুমি মনে করতে পার, যা শয়তানের হিংস্র আত্মার বৈশিষ্ট্যের ফল প্রকাশ করে। দিয়াবল শিকারের সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং কাউকে গ্রাস করার সময় সে কিশোর-কিশোরীদের প্রতিও কোনো করুণা দেখায় না। উদাহরণস্বরূপ, সা.কা. প্রথম শতাব্দীর শুরুতে হেরোদ বৈৎলেহমের দুই বছর বা এর অল্প বয়সের সমস্ত ছেলেকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেন। (মথি ২:১৬) আর সম্ভবত শয়তানই হেরোদকে পরিচালিত করেছিল—এটা ছিল সেই শিশুকে হত্যা করার এক প্রচেষ্টা, যে একদিন ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাত মশীহ হবে এবং শয়তানের ওপর ঈশ্বরের বিচার নিয়ে আসবে! (আদিপুস্তক ৩:১৫) স্পষ্টতই, অল্পবয়স্কদের প্রতি শয়তানের কোনো দয়ামায়া নেই। তার একমাত্র উদ্দেশ্য হল যত মানুষকে সম্ভব গ্রাস করা। এটা বিশেষ করে আজকে সত্য কারণ শয়তানকে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে ফেলে দেওয়ায় সে “অতিশয় রাগাপন্ন, সে জানে, তাহার কাল সংক্ষিপ্ত।”—প্রকাশিত বাক্য ১২:৯, ১২.

৭. (ক) যিহোবা কীভাবে শয়তানের একেবারে বিপরীত অবস্থানে আছেন? (খ) তোমার জীবন উপভোগ করার বিষয়ে যিহোবা কেমন মনে করেন?

“অতিশয় রাগাপন্ন” শয়তানের একেবারে বিপরীতে যিহোবার ‘কৃপাযুক্ত স্নেহ’ আছে। (লূক ১:৭৮) তিনি হলেন প্রেমের মূর্ত প্রতীক। বস্তুত, আমাদের সৃষ্টিকর্তা এই মহান গুণ এতটাই দেখিয়েছেন যে, বাইবেল বলে: “ঈশ্বর প্রেম।” (১ যোহন ৪:৮) এই যুগের দেব এবং যে-ঈশ্বরের সেবা করার বিশেষ সুযোগ তোমার আছে, তাদের মধ্যে কতই না পার্থক্য! যেখানে শয়তান গ্রাস করার চেষ্টা করে, সেখানে “কতকগুলি লোক যে বিনষ্ট হয়, এমন বাসনা [যিহোবার] নাই।” (২ পিতর ৩:৯) তিনি প্রতিটা মানুষের জীবনকে খুবই মূল্যবানহিসেবেদেখেন—সেইসঙ্গে তোমার জীবনকেও। যিহোবা যখন তোমাকে জগতের অংশ না হওয়ার জন্য তাঁর বাক্যে পরামর্শ দেন, তখন তিনি জীবনের আনন্দ থেকে তোমাকে বঞ্চিত করার বা তোমার স্বাধীনতায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন না। (যোহন ১৫:১৯) বিপরীতে, সেই পাপাত্মা থেকে তোমাকে রক্ষা করছেন। তোমার স্বর্গীয় পিতা চান যেন তুমি এই জগতের ক্ষণস্থায়ী আমোদপ্রমোদের চেয়ে আরও অনেক ভাল কিছু পাও। তাঁর ইচ্ছা হল, তুমি যেন “প্রকৃতরূপে জীবন” অর্থাৎ এক পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তজীবন পাও। (১ তীমথিয় ৬:১৭-১৯) যিহোবা চান যেন তুমি সফল হও এবং তোমাকে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন। (১ তীমথিয় ২:৪) এ ছাড়া, যিহোবা তোমাকে এক বিশেষ আমন্ত্রণ জানান। সেটা কী?

“আমার চিত্তকে আনন্দিত কর”

৮, ৯. (ক) যিহোবাকে তুমি কোন উপহার দিতে পার? (খ) শয়তান কীভাবে যিহোবাকে টিটকারি দেয়, ঠিক যেমন ইয়োবের ক্ষেত্রে দেখানো হয়েছে?

তুমি কি কখনও তোমার কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধুর জন্য একটা উপহার কিনেছ এবং সেটা পেয়ে তোমার বন্ধুর বিস্ময় ও উপলব্ধিপূর্ণ উজ্জ্বল হাসিখুশি মুখ দেখেছ? তুমি হয়তো অনেক ভেবেচিন্তে দেখেছিলে যে, কীধরনের উপহার সেই ব্যক্তির জন্য উপযুক্ত হবে। এখন এই প্রশ্নটি বিবেচনা কর: কোন ধরনের উপহার তুমি তোমার সৃষ্টিকর্তা যিহোবা ঈশ্বরকে দিতে পার? প্রথমে, এইরকম কথা শুনতে হয়তো অদ্ভুত বলে মনে হতে পারে। একজন সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সর্বশক্তিমানের কীইবা দরকার হতে পারে? তাঁর এমন কী নেই, যা তুমি হয়তো তাঁকে দিতে পার? হিতোপদেশ ২৭:১১ পদে বাইবেল উত্তর দেয়: “বৎস জ্ঞানবান হও; আমার চিত্তকে আনন্দিত কর; তাহাতে যে আমাকে টিট্‌কারি দেয়, তাহাকে উত্তর দিতে পারিব।”

সম্ভবত তোমার বাইবেল অধ্যয়ন থেকে তুমি শিখেছ যে, শয়তান দিয়াবলই হল সেই ব্যক্তি যে যিহোবাকে টিটকারি দেয়। সে বলতে চায় যে, যারা যিহোবাকে সেবা করে তারা প্রেমের কারণে নয় বরং স্বার্থপর কারণগুলোর জন্য করে থাকে। শয়তান দাবি করে যে, তাদের কষ্টভোগ করতে দেওয়া হোক, তা হলে তারা সঙ্গে সঙ্গে সত্য উপাসনা ছেড়ে দেবে। উদাহরণ হিসেবে, ধার্মিক ব্যক্তি ইয়োব সম্বন্ধে শয়তান যিহোবাকে যা বলেছিল, সেটা বিবেচনা করে দেখ: “তুমি তাহার চারিদিকে, তাহার বাটীর চারিদিকে ও তাহার সর্ব্বস্বের চারিদিকে কি বেড়া দেও নাই? তুমি তাহার হস্তের কার্য্য আশীর্ব্বাদযুক্ত করিয়াছ, এবং তাহার পশুধন দেশময় ব্যাপিয়াছে। কিন্তু তুমি একবার হস্ত বিস্তার করিয়া তাহার সর্ব্বস্ব স্পর্শ কর, তবে সে অবশ্য তোমার সম্মুখেই তোমাকে জলাঞ্জলি দিবে।”—ইয়োব ১:১০, ১১.

১০. (ক) কীভাবে আমরা জানি যে, শয়তান শুধু ইয়োবের আনুগত্য নিয়েই প্রশ্ন তোলেনি? (খ) সার্বভৌমত্বের এই বিচার্য বিষয়ে তুমি কীভাবে জড়িত?

১০ বাইবেলের বিবরণে যেমন দেখানো হয়েছে, শয়তান শুধু ইয়োবেরই নয় কিন্তু যারা ঈশ্বরের সেবা করে, তাদের সকলের আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে—যাদের মধ্যে তুমিও আছ। বস্তুত, মানবজাতি সম্বন্ধে যিহোবাকে শয়তান বলেছিল: “প্রাণের জন্য লোক [শুধু ইয়োবই নয় কিন্তু যেকেউ] সর্ব্বস্ব দিবে।” (ইয়োব ২:৪) এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিচার্য বিষয়ে তুমি কি তোমার ভূমিকাটি দেখতে পাচ্ছ? হিতোপদেশ ২৭:১১ পদ যেমন ইঙ্গিত দেয়, যিহোবা বলছেন যে, এমন কিছু আছে যা তুমি তাঁকে দিতে পার—তাঁকে যে-টিটকারি দেয় সেই শয়তানকে উত্তর দেওয়ার জন্য তাঁর এক ভিত্তি। কল্পনা কর যে, নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম ব্যক্তি, সর্বকালের সবচেয়ে মহান বিচার্য বিষয়ে অংশ নেওয়ার জন্য তোমাকে আহ্বান করছেন। তোমার জন্য কত দারুণ এক কাজ এবং অদ্বিতীয় সুযোগ! যিহোবা তোমার কাছ থেকে যা চাইছেন, তা কি তুমি পরিপূর্ণ করতে পার? ইয়োব পেরেছিলেন। (ইয়োব ২:৯, ১০) যিশু ও সেইসঙ্গে ইতিহাস জুড়ে অগণিত ব্যক্তি তা-ই করেছে, যাদের মধ্যে অনেক কিশোর-কিশোরীরাও ছিল। (ফিলিপীয় ২:৮; প্রকাশিত বাক্য ৬:৯) তুমিও তা-ই করতে পার। কিন্তু, একটা বিষয়ে নিশ্চিত থাক যে, এই বিষয়ে কোনো নিরপেক্ষ অবস্থান নেই। তোমার কাজের মাধ্যমে তুমি দেখাবে যে, হয় তুমি শয়তানের টিটকারিতে নয়তোবা যিহোবার উত্তরে সমর্থন করছ। তুমি কোনটাকে সমর্থন করা বেছে নেবে?

যিহোবা তোমার জন্য চিন্তা করেন!

১১, ১২. তুমি যিহোবাকে সেবা করা বেছে নাও বা না নাও, সেটা কি তাঁকে প্রভাবিত করে? ব্যাখ্যা কর।

১১ তুমি কোনটা বেছে নেবে, সেটা কি যিহোবার কাছে আসলেই কোনো ব্যাপার? শয়তানকে যাতে তিনি যথেষ্ট উত্তর দিতে পারেন, সেইজন্য ইতিমধ্যেই কি অনেক ব্যক্তি তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকেনি? এটা ঠিক যে, কোনো ব্যক্তি প্রেমের কারণে যিহোবার সেবা করে না, দিয়াবলের এই দাবি ইতিমধ্যেই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তবুও, যিহোবা চান যেন তুমি সার্বভৌমত্বের বিচার্য বিষয়ের ক্ষেত্রে তাঁর পক্ষ নাও কারণ একজন ব্যক্তি হিসেবে তিনি তোমার জন্য চিন্তা করেন। যিশু বলেছিলেন: “এই ক্ষুদ্রগণের মধ্যে এক জনও যে বিনষ্ট হয়, তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার এমন ইচ্ছা নয়।”—মথি ১৮:১৪.

১২ স্পষ্টতই, যিহোবা তোমার বেছে নেওয়ার পথ সম্বন্ধে আগ্রহী। আরও গুরুত্বপূর্ণ হল তিনি এর দ্বারা প্রভাবিত হন। বাইবেল স্পষ্ট করে যে, যিহোবার গভীর অনুভূতি রয়েছে, যা মানুষের ভাল বা খারাপ কাজের দ্বারা উদ্দীপিত হয়ে ওঠে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইস্রায়েলীয়রা যখন বার বার বিদ্রোহ করেছিল, তখন যিহোবা “অসন্তুষ্ট” হয়েছিলেন। (গীতসংহিতা ৭৮:৪০, ৪১) নোহের দিনে জলপ্লাবনের আগে যখন “মনুষ্যের দুষ্টতা বড়” হয়, তখন যিহোবা “মনঃপীড়া পাইলেন।” (আদিপুস্তক ৬:৫, ৬) এর অর্থ কী, তা চিন্তা কর। তুমি যদি কোনো খারাপ পথ বেছে নাও, তা হলে তুমি তোমার সৃষ্টিকর্তাকে দুঃখ দিতে পার। এর অর্থ এই নয় যে, ঈশ্বর দুর্বল বা আবেগের দ্বারা চালিত হন। পরিবর্তে, তিনি তোমাকে ভালবাসেন এবং তোমার মঙ্গলের জন্য চিন্তা করেন। অন্যদিকে, তুমি যখন সঠিক কাজ কর, তখন যিহোবার হৃদয় আনন্দিত হয়। তিনি শুধু শয়তানকে আরও উত্তর দিতে পারেন বলেই নয় কিন্তু তিনি এখন তোমার পুরস্কারদাতা হতে পারেন বলেও সুখী। আর তা তিনি হতেও চান। (ইব্রীয় ১১:৬) যিহোবা ঈশ্বরের মতো কত প্রেমময় একজন পিতাই না তোমার রয়েছে!

এখনই প্রচুর আশীর্বাদ

১৩. যিহোবাকে সেবা করা কীভাবে এখনই অনেক আশীর্বাদ নিয়ে আসে?

১৩ যিহোবাকে সেবা করার ফলে যে-আশীর্বাদগুলো আসে, তা শুধু ভবিষ্যতেই উপভোগ করার জন্য নয়। যিহোবার সাক্ষিদের মধ্যে অনেক কিশোর-কিশোরী এখনই আনন্দ ও পরিতৃপ্তি পায় এবং তা উত্তম কারণে। “সদাপ্রভুর বিধি সকল যথার্থ, চিত্তের আনন্দবর্দ্ধক,” গীতরচক লিখেছিলেন। (গীতসংহিতা ১৯:৮) যেকোনো মানুষের চেয়ে যিহোবা আরও ভাল করে জানেন যে আমাদের জন্য কোনটা ভাল। ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে যিহোবা বলেছিলেন: “আমি সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] তোমার ঈশ্বর, আমি তোমার উপকারজনক শিক্ষা দান করি, ও তোমার গন্তব্য পথে তোমাকে গমন করাই। আহা! তুমি কেন আমার আজ্ঞাতে অবধান কর নাই? করিলে তোমার শান্তি নদীর ন্যায়, তোমার ধার্ম্মিকতা সমুদ্র-তরঙ্গের ন্যায় হইত।”—যিশাইয় ৪৮:১৭, ১৮.

১৪. বাইবেলের নীতিগুলো কীভাবে তোমাকে ঋণের দায়ে পড়ার কষ্ট এড়ানোর জন্য সাহায্য করতে পারে?

১৪ বাইবেলের নীতিগুলো মেনে চলা তোমাকে অনেক কষ্ট এবং দুঃখ এড়াতে সাহায্য করবে। উদাহরণ হিসেবে, বাইবেল বলে যে যারা টাকাপয়সার প্রতি ভালবাসা গড়ে তোলে তারা “অনেক যাতনারূপ কন্টকে আপনারা আপনাদিগকে বিদ্ধ করিয়াছে।” (১ তীমথিয় ৬:৯, ১০) তোমার কোনো সঙ্গীসাথি কি এই শাস্ত্রপদের কঠিন সত্যতা অভিজ্ঞতা করেছে? কিছু যুবক এবং যুবতী বিরাট ঋণের দায়ে জড়িয়ে পড়েছে কারণ তারা শুধু সর্বাধুনিক নামিদামি পোশাকআশাক এবং প্রযুক্তিগত যন্ত্রপাতি পেতে চেয়েছে। জিনিসপত্রের জন্য দীর্ঘমেয়াদী, উচ্চ সুদের দ্বারা ভারগ্রস্ত হয়ে তুমি কখনোই দাসত্বের কষ্টকর পরিণতি থেকে রেহাই পেতে পার না!—হিতোপদেশ ২২:৭.

১৫. কোন কোন উপায়ে বাইবেলের নীতিগুলো তোমাকে যৌন অনৈতিকতার ফলে যে-কষ্ট আসে, তা থেকে রক্ষা করে?

১৫ যৌন অনৈতিকতার বিষয়টাও বিবেচনা কর। প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে অসংখ্য অবিবাহিত কিশোরী গর্ভবতী হয়ে পড়ে। কেউ কেউ সন্তানের জন্ম দেয়, যে-সন্তান নেওয়ার কোনো ইচ্ছা বা তাকে মানুষ করে তোলার ব্যাপারে ক্ষমতা কোনোটাই তাদের নেই। অন্যেরা গর্ভপাত করায় এবং বিবেকের দংশনে ভোগে। এ ছাড়া, এমন যুবক এবং যুবতী রয়েছে, যাদের যৌন বাহিত রোগ হয়, যেমন এইডস। অবশ্য, যারা যিহোবাকে জানে তাদের জন্য সবচেয়ে খারাপ পরিণতি হল, যিহোবার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। * (গালাতীয় ৫:১৯-২১) তাই, উত্তম কারণেই বাইবেল বলে: “ব্যভিচার হইতে পলায়ন কর।”—১ করিন্থীয় ৬:১৮.

“পরম সুখী ঈশ্বরের” সেবা করা

১৬. (ক) কীভাবে আমরা জানি যে, যিহোবা চান যেন তুমি তোমার কিশোর বয়স উপভোগ কর? (খ) কেন যিহোবা মেনে চলার জন্য তোমাকে নির্দেশনা দেন?

১৬ বাইবেল যিহোবাকে ‘পরম ধন্য [“সুখী,” NW] ঈশ্বর’ বলে। (১ তীমথিয় ১:১১) তিনি চান যেন তুমিও সুখী হও। বস্তুত, তাঁর নিজের বাক্য বলে: “তোমার কিশোর বয়স উপভোগ কর। যৌবনকালে আনন্দিত হও।” (উপদেশক ১১:৯, টুডেজ ইংলিশ ভারসন) কিন্তু যিহোবা শুধু বর্তমান অবস্থা থেকে আরও বেশি কিছু দেখেন এবং ভাল ও খারাপ উভয় আচরণের দীর্ঘমেয়াদি পরিণতি আগে থেকেই বুঝতে পারেন। সেই কারণেই তিনি তোমাকে পরামর্শ দেন: “তুমি যৌবনকালে আপন সৃষ্টিকর্ত্তাকে স্মরণ কর, যেহেতু দুঃসময় আসিতেছে, এবং সেই বৎসর সকল সন্নিকট হইতেছে, যখন তুমি বলিবে, ইহাতে আমার প্রীতি নাই।”—উপদেশক ১২:১.

১৭, ১৮. একজন অল্পবয়সী খ্রিস্টান যিহোবাকে সেবা করার ক্ষেত্রে তার আনন্দকে কীভাবে প্রকাশ করেছিল এবং কীভাবে তুমিও একই আনন্দ পেতে পার?

১৭ আজকে অনেক কিশোর-কিশোরী যিহোবাকে সেবা করে অনেক আনন্দিত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১৫ বছর বয়সী লিনা বলে: “আমি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি। আমি ধূমপান এবং মাদকদ্রব্য গ্রহণ করিনি বলে আমার স্বাস্থ্য ভাল। মণ্ডলীর মাধ্যমে আমি অনেক মূল্যবান নির্দেশনা পেয়েছি, যা আমাকে শয়তানের ভয়ংকর চাপের সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করে। আমি সবসময় হাসিখুশি কারণ কিংডম হলে আমি গঠনমূলক মেলামেশা করতে পারি। সর্বোপরি, পৃথিবীতে অনন্তজীবনের নিশ্চিত আশা আমার আছে।”

১৮ লিনার মতো অনেক খ্রিস্টান কিশোর-কিশোরী বিশ্বাসের পক্ষে কঠিন যুদ্ধ করছে এবং এটা তাদের জন্য আনন্দ নিয়ে আসে। তারা বুঝতে পেরেছে যে তাদের জীবনে—যদিও কখনও কখনও কঠিন—প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং ভবিষ্যৎ রয়েছে। তাই, ক্রমাগত সেই ঈশ্বরের সেবা করে চল, যিনি তোমাদের জন্য সত্যিই চিন্তা করেন। তাঁর হৃদয়কে আনন্দিত কর এবং তিনি তোমাকে এখন ও চিরকালের জন্য আনন্দিত করবেন।—গীতসংহিতা ৫:১১.

[পাদটীকাগুলো]

^ ১৯৯৬ সালের ২২শে অক্টোবর সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার “সত্য আমার জীবন ফিরিয়ে দিয়েছে” প্রবন্ধটা দেখ।

^ এটা জানা সান্ত্বনাদায়ক যে, একজন ব্যক্তি যখন অনুতপ্ত হয়, খারাপ কাজ করা বন্ধ করে দেয় এবং তার পাপ স্বীকার করে, তখন যিহোবা “প্রচুররূপে ক্ষমা করিবেন।”—যিশাইয় ৫৫:৭.

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• “সেই পাপাত্মা,” শয়তানের কাছ থেকে তুমি কোন বিপদের মুখোমুখি হও?

• কীভাবে তুমি যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করতে পার?

• বাইবেল কীভাবে দেখায় যে, যিহোবা তোমার জন্য চিন্তা করেন?

• কিছু আশীর্বাদ কী, যেগুলো যিহোবাকে সেবা করার মাধ্যমে আসে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৩ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

একজন ধার্মিক ব্যক্তি প্রায় উছোট খেতে যাচ্ছিলেন

আসফ প্রাচীন ইস্রায়েলে যিহোবার মন্দিরে একজন বিখ্যাত লেবীয় বাদক ছিলেন। তিনি এমনকি অনেক গান রচনা করেছিলেন, যেগুলো উপাসনায় ব্যবহার করা হতো। কিন্তু, তার এই অদ্বিতীয় বিশেষ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কিছু সময়ের জন্য আসফ তার সঙ্গীসাথিদের ভক্তিহীন আচরণের দ্বারা আকৃষ্ট হয়েছিলেন, যাদের দেখে মনে হয়েছিল যে কোনো খারাপ পরিণতি ছাড়াই তারা ঈশ্বরের আইন লঙ্ঘন করছে। “আমার চরণ প্রায় টলিয়াছিল; আমার পাদবিক্ষেপ প্রায় স্খলিত হইয়াছিল,” আসফ পরে স্বীকার করেছিলেন। “যখন দুষ্টদের কল্যাণ দেখিয়াছিলাম, তখন গর্ব্বিতদের প্রতি ঈর্ষা করিয়াছিলাম।”—গীতসংহিতা ৭৩:২, ৩.

পরে আসফ ঈশ্বরের মন্দিরে গিয়েছিলেন এবং সেই বিষয়ে প্রার্থনা করেছিলেন। পুনরুজ্জীবিত আধ্যাত্মিক দর্শনের মাধ্যমে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, যিহোবা মন্দতাকে ঘৃণা করেন এবং একসময় দুষ্ট এবং ধার্মিক ব্যক্তি উভয়েই যা বুনেছে, সেটার ফল কাটবে। (গীতসংহিতা ৭৩:১৭-২০; গালাতীয় ৬:৭, ৮) সত্যিই, দুষ্টরা পিচ্ছিল স্থানে রয়েছে। অবশেষে তারা পতিত হবে, যখন যিহোবা এই অধার্মিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করবেন।—প্রকাশিত বাক্য ২১:৮.

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যিহোবা তোমার জন্য সত্যিই চিন্তা করেন, যেখানে শয়তানের লক্ষ্য হল তোমাকে গ্রাস করা

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

সহ খ্রিস্টানদের সঙ্গে যিহোবাকে সেবা করে অনেক কিশোর-কিশোরী প্রচুর আনন্দ পাচ্ছে