সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আলেকজান্ডার ৬ষ্ঠ একজন পোপ যাকে রোম ভুলবে না

আলেকজান্ডার ৬ষ্ঠ একজন পোপ যাকে রোম ভুলবে না

আলেকজান্ডার ৬ষ্ঠ একজন পোপ যাকে রোম ভুলবে না

“ক্যাথলিক দৃষ্টিকোণ থেকে, আলেকজান্ডার ৬ষ্ঠ-কে কঠোরভাবে নিন্দা করার মতো যথেষ্ট ভাষা জানা নেই।” (গেশিখতি দের পাপস্তি জাইত ডেম অউসগাং ডেস মিতেলালতারস্‌ [মধ্য যুগের শেষ দিকের পোপদের ইতিহাস]) “তার ব্যক্তিগত জীবন একেবারেই অমার্জনীয় . . . আমাদের স্বীকার করতেই হবে যে, এই পোপের পদবি গির্জার জন্য কোনো সম্মান নিয়ে আসেনি। বর্জা পরিবারের সমসাময়িক ব্যক্তিরা যদিও এই ধরনের ঘৃণ্য কাজগুলো দেখে অভ্যস্ত ছিল কিন্তু তাদের অপরাধগুলোকে তারা অত্যন্ত আতঙ্কের সঙ্গে দেখত, যেগুলোর প্রভাব চারশ বছরেরও বেশি সময় পর, এখনও পুরোপুরিভাবে শেষ হয়নি।”—ল্যাগলিজ্‌ অ্যা লে রেনেসাঁস্‌ (১৪৪৯-১৫১৭)(গির্জা এবং নবজাগরণ)।

রোমান ক্যাথলিক গির্জা সম্বন্ধে সম্মানীয় ঐতিহাসিক বইগুলো কেন একজন পোপ এবং তার পরিবার সম্বন্ধে এইরকম তীব্র মন্তব্যগুলো করে? তারা এমন কী করেছিল যে, তা এতখানি সমালোচনার যোগ্য? রোমে অনুষ্ঠিত একটা প্রদর্শনী, (২০০২ সালের অক্টোবর-২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি) যেটার শিরোনাম ছিল ই বর্জা—লারতি দেল পোতেরি (বর্জা পরিবার—ক্ষমতার কলাকৌশল), পোপের ক্ষমতাগুলো সম্বন্ধে চিন্তা করার এক সুযোগ দিয়েছিল, বিশেষ করে যেভাবে সেই ক্ষমতাগুলো রডরিগো বর্জা অথবা আলেকজান্ডার ৬ষ্ঠ (পোপ ১৪৯২-১৫০৩) কাজে লাগিয়েছিলেন।

ক্ষমতা লাভ করা

রডরিগো বর্জা ১৪৩১ সালে আরাগন রাজ্যের হাতিভাতে জন্মগ্রহণ করেন, এখন যেটা স্পেনে। তার মামা, ভ্যালেনসিয়ার বিশপ আলফনসো দি বর্জা, তার ভাগনের লেখাপড়ার বিষয়ে দেখাশোনো করেন এবং এটা নিশ্চিত করেন যে, রডরিগোকে যেন কিশোর অবস্থায় পাদরির সুযোগসুবিধাগুলো (আয় সহ পাদরির পদগুলো) প্রদান করা হয়। তাই, আলফনসো যিনি সেই সময়ের মধ্যে একজন কার্ডিনাল হয়ে গিয়েছিলেন, তার রক্ষণাধীনে ১৮ বছর বয়সে রডরিগো ইতালিতে চলে যান, যেখানে তিনি আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন। আলফনসো যখন পোপ ক্যালিক্সটাস ৩য় হন, তখন তিনি রডরিগো ও তার আরেকজন ভাগনেকে কার্ডিনাল করেন। প্যারে লুইস বর্জাকে বিভিন্ন শহরের শাসক করা হয়। শীঘ্রই রডরিগোকে গির্জার ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিযুক্ত করা হয়, যে-পদটিতে তিনি বিভিন্ন পোপের শাসনকালে অধিষ্ঠিত ছিলেন আর এটা তাকে অসংখ্য প্রাচুর্যপূর্ণ সুযোগসুবিধা অর্জন করতে, প্রচুর সম্পদ লাভ করতে, অগাধ ক্ষমতা ব্যবহার করতে এবং এক রাজপুত্রের মতো বিলাসিতাপূর্ণ জীবন যাপন করতে সমর্থ করেছিল।

রডরিগো বুদ্ধিমান, একজন সুবক্তা, কলাবিদ্যার এক পৃষ্ঠপোষক এবং তার লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছাতে সক্ষম ছিলেন। কিন্তু, বেশ কয়েকজনের সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্ক ছিল, ফলে তিনি তার আজীবন রক্ষিতার সঙ্গে চার ছেলেমেয়ের এবং অন্যান্য মহিলাদের সঙ্গে আরও কিছু ছেলেমেয়ের জন্ম দিয়েছিলেন। যদিও “অসংযম” মনোরঞ্জনের প্রতি তার আসক্তি এবং “লাগামহীন ভোগবিলাসের” জন্য পোপ পায়াস ২য় তাকে কঠোরভাবে তিরস্কার করেছিলেন, তবুও রডরিগো তার পথ পরিবর্তন করেননি।

১৪৯২ সালে পোপ ইনোসেন্ট ৮ম এর মৃত্যুর পর, গির্জার কার্ডিনালরা একজন উত্তরাধিকারী নির্বাচন করার জন্য মিলিত হয়। এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে, রডরিগো বর্জা প্রচুর ধনসম্পত্তি ও সুযোগসুবিধার প্রস্তাব দিয়ে সহ কার্ডিনালদের কাছ থেকে যথেষ্ট ভোট কিনেছিলেন, যাতে সেই গোপন সভা থেকে তিনি পোপ আলেকজান্ডার ষষ্ঠ হিসেবে নির্বাচিত হতে পারেন। কার্ডিনালদের ভোটের জন্য তিনি কীভাবে মূল্য দিয়েছিলেন? পাদরি পদ, প্রাসাদ, দুর্গ, শহর, মঠ এবং প্রচুর আয় সহ বিশপের এলাকাগুলো দান করে। আপনি বুঝতে পারছেন যে, কেন একজন গির্জার ইতিহাসবেত্তা আলেকজান্ডার ৬ষ্ঠ-র শাসনকালকে “রোমীয় গির্জার জন্য জঘন্য ও কলঙ্কজনক যুগ” বলেছেন।

রাজপুত্রদের চেয়ে কোনোক্রমে ভাল নয়

গির্জার মস্তক হিসেবে তার আধ্যাত্মিক ক্ষমতার গুণে, আলেকজান্ডার ৬ষ্ঠ আমেরিকায় নব আবিষ্কৃত এলাকা স্পেন ও পর্তুগালের মধ্যে বিভেদ মিটমাট করতে সাহায্য করেছিলেন। তার জাগতিক ক্ষমতা তাকে মধ্য ইতালির এলাকাগুলো সহ পোপের রাজ্যগুলোতে প্রধান করে তুলেছিল আর তাই তিনি অন্যান্য যেকোনো নবজাগরণের শাসকের মতো তার রাজ্য পরিচালনা করেছিলেন। তাই আলেকজান্ডার ৬ষ্ঠ-র শাসনকাল তার আগের ও পরের পোপদের মতোই ঘুসখোর ও স্বজনপ্রীতির দ্বারা চিহ্নিত হয়েছিল আর সেই সময়ে একের অধিক সন্দেহজনক মৃত্যু হয়েছিল।

এই অস্থির সময়ে, প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিগুলো ইতালির এলাকাগুলো দখলের জন্য লড়াই করে এবং আর এতে পোপ সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। তার রাজনৈতিক কৌশল ও মিত্রতা, যা প্রথমে প্রতিষ্ঠা করা ও পরে বাতিল করা হয়েছিল, সেটার উদ্দেশ্য ছিল মূলত তার ক্ষমতা বাড়ানো, ছেলেমেয়েদের ক্যারিয়ারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং বর্জা পরিবারকে অন্য সকলের উর্ধ্বে রাখা। তার ছেলে ওয়ান, কাসটিলের রাজার খুড়তুতো বোনকে বিয়ে করেন এবং স্পেনের গান্ডিয়ার ডিউক হন। আরেক ছেলে জোফরে, নেপলসের রাজার নাতনিকে বিয়ে করেন।

ফ্রান্সের সঙ্গে পোপের সম্পর্ককে শক্তিশালী করার জন্য যখন তার একজন মিত্রের দরকার হয়, তখন তিনি আরাগনের এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে তার ১৩ বছর বয়সী মেয়ে লুক্রেতজিয়ার বিয়ের অঙ্গীকার ভেঙে দেন এবং পরিবর্তে মিলানের ডিউকের এক আত্মীয়র সঙ্গে তার বিয়ে দেন। সেই বিয়ে যখন রাজনৈতিক দিক দিয়ে আর সুবিধাজনক ছিল না, তখন তিনি এটাকে বাতিল করার জন্য একটা অজুহাত খোঁজেন আর লুক্রেতজিয়াকে এক প্রতিদ্বন্দ্বী রাজবংশের একজন সদস্য আরাগনের আলফনসোর সঙ্গে বিয়ে দেন। ইতিমধ্যে লুক্রেতজিয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং নির্দয় ভাই বর্জা চেজারে ফ্রান্সের দ্বাদশ লুইয়ের সঙ্গে এক মিত্রতা গড়ে তোলেন আর তাই আরাগনের একজন ব্যক্তির সঙ্গে সম্প্রতি তার বোনের বিয়ে এক ঝামেলা হয়ে ওঠে। এর সমাধান কী? একটি বই বলে যে, তার অসহায় স্বামী আলফনসো “চার জন লোকের দ্বারা আহত হন, যারা সেন্ট পিটার গির্জার সিড়িতে তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল। সুস্থ হয়ে ওঠার সময়, চেজারের ভৃত্যদের একজন তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে ফেলে।” নতুন রণকৌশলীয় মিত্রতা লাভের আকাঙ্ক্ষায় পোপ এরপর ফারারার ক্ষমতাবান ডিউকের ছেলের সঙ্গে লুক্রেতজিয়ার তৃতীয় বিয়ের ব্যবস্থা করেন। এই সময় তার বয়স ছিল ২১ বছর।

চেজারের ক্যারিয়ারকে “নীতিজ্ঞানবর্জিত, রক্তাক্ত হওয়ার এক ঘটনা” বলে বর্ণনা করা হয়েছে। যদিও চেজারের বাবা তাকে ১৭ বছর বয়সে একজন কার্ডিনাল হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন কিন্তু কৌশলী, উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং অন্যান্য কিছুজনের মতো অসাধু হওয়ায় তিনি গির্জার বিষয়গুলোর চাইতে বরং যুদ্ধের জন্য আরও বেশি উপযুক্ত ছিলেন। পুনরায় পাদরি-সংক্রান্ত পদে সাক্ষর করার পর, তিনি এক ফরাসি রাজকন্যাকে বিয়ে করেন আর এইভাবে তিনি ভালেনটিনোয়েসের ডিউক হন। এরপর, ফরাসি সৈন্যদলের সাহায্যে তিনি অবরোধের অভিযান শুরু করেন এবং ইতালির উত্তরাঞ্চলকে তার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য গুপ্তহত্যা চালান।

চেজারের অন্যান্য লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছানোর জন্য ফরাসি সামরিক বাহিনীর সমর্থন নিশ্চিত করতে দ্বাদশ লুইয়ের এক সুবিধাজনক অথচ অপবাদজনক বিবাহবিচ্ছেদের চেষ্টাকে পোপ অনুমোদন করেন, যা তাকে ব্রিটানির অ্যানকে বিয়ে করার সুযোগ করে দেয় এবং অ্যানের এলাকাটি তার রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়। এর ফলে একটা তথ্যগ্রন্থ বলে, পোপ “তার পরিবারের সদস্যদের জন্য জাগতিক সুবিধাগুলো অর্জন করতে গির্জার খ্যাতি ও সঠিক নীতিগুলোকে বিসর্জন দেন।”

পোপের অসংযত আচরণের সমালোচনা

বর্জা পরিবারের অসংযত আচরণ অনেক শত্রু তৈরি করেছিল এবং সমালোচনার কারণ হয়েছিল। পোপ মূলত তার সমালোচকদের উপেক্ষা করেছিলেন কিন্তু যাকে উপেক্ষা করা যায়নি তিনি ছিলেন গিরোলামো সাভোনারোলা। তিনি ছিলেন একজন ডমিনিকান সন্ন্যাসী, উদ্যোগী প্রচারক এবং ফ্লোরেন্সের রাজনৈতিক নেতা। তিনি পোপ শাসিত আদালতের বিভিন্ন অসততা এবং সেইসঙ্গে স্বয়ং পোপের কর্মকাণ্ড ও রাজনীতির সমালোচনা করেন, তার অপসারণের ও যাজকীয় পদের সংস্কারের দাবি জানান। সাভোনারোলা চিৎকার করে বলেছিলেন: “গির্জার নেতারা, . . . তোমরা রাতে তোমাদের উপপত্নীদের কাছে যাও আর সকালে তোমাদের ধর্মকর্ম কর।” তিনি পরে বলেছিলেন: “[ওই নেতারা] একজন বেশ্যার মতো, তাদের খ্যাতি গির্জার জন্য ক্ষতিকর। আমি তোমাদের বলছি, এরা খ্রিস্টীয় বিশ্বাসে বিশ্বাস করে না।”

সাভোনালোরার মুখ বন্ধ করার চেষ্টায় পোপ তাকে কার্ডিনাল পদের প্রস্তাব দেন, যেটাকে তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তার সর্বনাশের কারণ পোপবিরোধী রাজনীতি অথবা প্রচার যাই হোক না কেন, সাভোনারোলাকে শেষ পর্যন্ত গির্জা থেকে বহিষ্কৃত করা হয়েছিল, গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং অপরাধ স্বীকার করার জন্য নির্যাতন করা হয়েছিল আর এরপর তাকে ফাঁসিতে ঝুলানো ও পোড়ানো হয়েছিল।

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো

এই ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করে। এই ধরনের ষড়যন্ত্রগুলো এবং পোপের আচরণকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে? ইতিহাসবেত্তারা সেগুলোকে কীভাবে ব্যাখ্যা করে? বিভিন্ন যুক্তিতর্ক ব্যবহার করা হয়।

অনেকে মনে করে যে, আলেকজান্ডার ৬ষ্ঠ-কে তিনি যে-সময়ে বাস করতেন সেই দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয়েছে। অনুমান করা হয় যে, তার রাজনৈতিক ও পাদরির কাজকর্মগুলো শান্তি রক্ষা করার, প্রতিদ্বন্দ্বী রাজ্যগুলোর মধ্যে সমতা বজায় রাখার, মিত্রপক্ষদের সঙ্গে, যারা পোপের শাসনকে সমর্থন করবে, বন্ধুত্বের বন্ধন শক্তিশালী করার এবং তুর্কিদের হুমকির বিরুদ্ধে খ্রিস্টীয়জগতের শাসকদের ঐক্যবদ্ধ রাখার ইচ্ছার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল।

কিন্তু তার আচরণ? “গির্জার প্রত্যেকটা যুগ মন্দ খ্রিস্টান এবং অযোগ্য যাজকদের দেখেছে,” একজন পণ্ডিত ব্যক্তি বলেন। “তাই যাতে কেউ-ই শিহরিত না হয়, খ্রিস্ট নিজে এই সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন; এমনকি তিনি তাঁর গির্জাকে তুলনা করেছিলেন এমন একটা ক্ষেতের সঙ্গে যাতে ভাল গম ও আগাছা বেড়ে ওঠে অথবা এমন একটা জালের সঙ্গে যাতে ভাল এবং খারাপ দুধরনের মাছ থাকে, ঠিক যেমন তিনি তাঁর প্রেরিতদের মাঝে যিহূদাকে সহ্য করেছিলেন।” *

সেই একই পণ্ডিত ব্যক্তি আরও বলেন: “ঠিক যেমন খুঁতযুক্ত পাত কোনো রত্নের মূল্যকে কমিয়ে দেয় না, তেমনি একজন যাজকের পাপ, মূলত তিনি যে-মতবাদ শেখান, সেটার কোনো ক্ষতি করে না। . . . সোনা সোনাই থেকে যায়, তা সে প্রস্তুতকারকের হাত খাঁটি অথবা ভেজাল যাই হোক না কেন।” একজন ক্যাথলিক ইতিহাসবেত্তা যুক্তি দেখিয়ে বলেন যে, আলেকজান্ডার ৬ষ্ঠ-র বেলায় আন্তরিক খ্রিস্টানদের যে-মানটি মেনে চলা উচিত ছিল, সেটা হল অধ্যাপক ও ফরীশীদের সম্বন্ধে শিষ্যদের উদ্দেশে দেওয়া যিশুর এই উপদেশ: ‘তাহারা যাহা বলে, তাহা পালন করিও, কিন্তু তাহাদের কর্ম্মের মত কর্ম্ম করিও না।’ (মথি ২৩:২, ৩) কিন্তু এই ধরনের যুক্তি কি সত্যিই আপনার মধ্যে প্রত্যয় জন্মায়?

এটা কি সত্য খ্রিস্টধর্ম?

নামধারী খ্রিস্টানদের গুণগত মানকে পরীক্ষা করার জন্য যিশু একটা সহজ নীতি রেখে গেছেন: “তোমরা তাহাদের ফল দ্বারাই তাহাদিগকে চিনিতে পারিবে। লোকে কি কাঁটাগাছ হইতে দ্রাক্ষাফল, কিম্বা শিয়ালকাঁটা হইতে ডুমুরফল সংগ্রহ করে? সেই প্রকারে প্রত্যেক ভাল গাছে ভাল ফল ধরে, কিন্তু মন্দ গাছে মন্দ ফল ধরে। ভাল গাছে মন্দ ফল ধরিতে পারে না, এবং মন্দ গাছে ভাল ফল ধরিতে পারে না। অতএব তোমরা উহাদের ফল দ্বারাই উহাদিগকে চিনিতে পারিবে।”—মথি ৭:১৬-১৮, ২০.

যিশুর দ্বারা স্থাপিত এবং তাঁর সত্য অনুসারীদের উদাহরণের দ্বারা দেখানো সত্য ধর্মের আদর্শকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ধর্মীয় নেতারা সাধারণত কীভাবে মেনে চলেছিল আর এখনই বা তারা কীভাবে মেনে চলছে? আসুন আমরা শুধু দুটো ক্ষেত্র বিবেচনা করি—রাজনৈতিক ব্যাপারে জড়িত হওয়া এবং জীবনধারা।

যিশু কোনো রাজপুত্র ছিলেন না। তিনি এত সাধারণ জীবনযাপন করেছিলেন যে তিনি স্বীকার করেছিলেন, এমনকি তাঁর “মস্তক রাখিবার” স্থান ছিল না। তাঁর রাজ্য “এ জগতের নয়” এবং তাঁর শিষ্যরা ‘জগতের নয়, যেমন [তিনিও] জগতের ছিলেন না।’ যিশু এইভাবে তাঁর দিনের রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে জড়িত হওয়াকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।—মথি ৮:২০; যোহন ৬:১৫; ১৭:১৬; ১৮:৩৬.

কিন্তু এটা কি সত্য নয় যে, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ধর্মীয় সংগঠনগুলো ক্ষমতা ও বস্তুগত ধনসম্পত্তি অর্জনের জন্য রাজনৈতিক শাসকদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করেছে, যদিও তা সাধারণ লোকেদের জন্য দুঃখকষ্ট নিয়ে এসেছে? এ ছাড়া, এটাও কি সত্য নয় যে, তাদের অনেক পাদরিই বিলাসিতাপূর্ণ জীবনযাপন করে, এমনকি যদিও বহুসংখ্যক লোক যাদেরকে তাদের পরিচর্যা করা উচিত তারা হয়তো একেবারে দরিদ্র?

যিশুর সৎভাই যাকোব বলেছিলেন: “হে ব্যভিচারিণীগণ, তোমরা কি জান না যে, জগতের মিত্রতা ঈশ্বরের সহিত শত্রুতা? সুতরাং যে কেহ জগতের মিত্র হইতে বাসনা করে, সে আপনাকে ঈশ্বরের শত্রু করিয়া তুলে।” (যাকোব ৪:৪) “ঈশ্বরের শত্রু” কেন? প্রথম যোহন ৫:১৯ পদ বলে: “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে।”

আলেকজান্ডার ৬ষ্ঠ-র নৈতিক আচরণ সম্বন্ধে বর্জার দিনের একজন ইতিহাসবেত্তা লিখেছিলেন: “তার জীবনধারা ছিল অসংযত। তিনি না জানতেন লজ্জা, না জানতেন আন্তরিকতা অথবা তার না ছিল বিশ্বাস, না ছিল ধর্ম। তার মধ্যে ছিল তৃপ্তিহীন লোভ, অতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা, বর্বর নিষ্ঠুরতা এবং তার অনেক ছেলেমেয়ের অগ্রগতির জন্য প্রবল আকাঙ্ক্ষা।” অবশ্য, এরকম আচরণের ক্ষেত্রে পাদরি সম্প্রদায়ে বর্জাই একমাত্র সদস্য ছিলেন না।

এই ধরনের আচরণ সম্বন্ধে শাস্ত্র কী বলে? “তোমরা কি জান না যে, অধার্ম্মিকেরা ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাইবে না?” প্রেরিত পৌল জিজ্ঞেস করেছিলেন। “ভ্রান্ত হইও না; যাহারা ব্যভিচারী কি . . . পারদারিক কি . . . লোভী . . . তাহারা ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাইবে না।”—১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০.

বর্জাদের সম্বন্ধে সম্প্রতি রোমের প্রদর্শনীতে ঘোষিত লক্ষ্যগুলোর একটা ছিল, “যে সময়ে এই মহান ব্যক্তিরা বাস করত, সেই সময়ের দৃষ্টিকোণ থেকে তাদেরকে স্থান দেওয়া হয়েছিল . . . , বোঝা হয়েছিল কিন্তু অব্যাহতি দেওয়া কিংবা নিন্দা করা নয়।” বস্তুত, উপসংহারে পৌঁছানোর ভার দর্শকদের ওপরই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তাই আপনি কোন উপসংহারে পৌঁছেছেন?

[পাদটীকা]

^ এই নীতিগল্পগুলোর সঠিক ব্যাখ্যার জন্য, প্রহরীদুর্গ, ফেব্রুয়ারি ১, ১৯৯৫, পৃষ্ঠা ৫-৬ এবং জুন ১৫, ১৯৯২ (ইংরেজি), পৃষ্ঠা ১৭-২২ দেখুন।

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

রডরিগো বর্জা, পোপ আলেকজান্ডার ৬ষ্ঠ

[২৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

লুক্রেতজিয়া বর্জার বাবা তার ক্ষমতাকে বাড়াতে লুক্রেতজিয়াকে ব্যবহার করেছিলেন

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

বর্জা চেজারে উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং অসৎ ছিলেন

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

গিরোলামো সাভোনারোলার মুখ বন্ধ করা যায়নি বলে তাকে ফাঁসিতে ঝুলানো ও পোড়ানো হয়েছিল