সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যে-মহিলারা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করেছিল

যে-মহিলারা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করেছিল

যে-মহিলারা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করেছিল

“সদাপ্রভু তোমার কর্ম্মের উপযোগী ফল দিউন; . . . তিনি তোমাকে সম্পূর্ণ পুরস্কার দিউন।” —রূতের বিবরণ ২:১২.

১, ২. যে-মহিলারা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করেছিল, বাইবেলের এমন উদাহরণগুলো গভীরভাবে চিন্তা করে আমরা কীভাবে উপকৃত হতে পারি?

 ঈশ্বরের প্রতি ভয় দুজন মহিলাকে একজন ফরৌণের কথা অগ্রাহ্য করতে চালিত করেছিল। বিশ্বাস একজন বেশ্যাকে তার জীবনের ঝুঁকি নিতে পরিচালিত করেছিল, যাতে দুজন ইস্রায়েলীয় গুপ্তচরকে রক্ষা করা যায়। সুবুদ্ধি ও নম্রতা এক সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে একজন স্ত্রীকে অনেকের জীবন রক্ষা করতে এবং যিহোবার একজন অভিষিক্ত ব্যক্তিকে রক্তপাতের দোষে দোষী হওয়া থেকে নিবৃত্ত করতে সাহায্য করেছিল। যিহোবার প্রতি বিশ্বাস ও সেইসঙ্গে আতিথেয়তার মনোভাব একজন বিধবা মাকে তার শেষ খাবারটুকু ঈশ্বরের একজন ভাববাদীকে দিতে প্রেরণা দিয়েছিল। যে-মহিলারা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করেছিল, এমন অনেক শাস্ত্রীয় উদাহরণের মধ্যে এগুলো মাত্র কয়েকটা।

এই মহিলাদের প্রতি যিহোবার মনোভাব এবং তাদের ওপর যে-আশীর্বাদগুলো তিনি বর্ষণ করেছিলেন তা দেখায় যে, পুরুষ বা মহিলার চেয়ে বরং যে-বিষয়টা তাঁকে সবচেয়ে বেশি খুশি করে তা হল, আধ্যাত্মিক গুণগুলো। আজকের জগৎ পার্থিব বিষয়গুলো নিয়ে এত বেশি আচ্ছন্ন যে, একজনের আধ্যাত্মিকতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা। কিন্তু, সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মোকাবিলা করা যেতে পারে যা লক্ষ লক্ষ ঈশ্বর ভয়শীল মহিলার মাধ্যমে দেখানো হয়েছে, যারা আজকে ঈশ্বরের লোকেদের এক বিরাট অংশ গঠন করেছে। এই ধরনের খ্রিস্টান মহিলারা বাইবেলে উল্লেখিত ঈশ্বর ভয়শীল মহিলাদের দেখানো বিশ্বাস, বিচারবুদ্ধি, আতিথেয়তা এবং অন্যান্য উত্তম গুণগুলো অনুকরণ করে থাকে। অবশ্য, খ্রিস্টান পুরুষরাও প্রাচীনকালের এই উদাহরণযোগ্য মহিলাদের গুণগুলো অনুকরণ করতে চায়। কীভাবে আমরা পূর্ণরূপে তা করতে পারি, সেটা দেখার জন্য আসুন আমরা শুরুতে উল্লেখিত মহিলাদের বিষয়ে বাইবেলের ঘটনাগুলো আরও বিশদভাবে বিবেচনা করে দেখি।—রোমীয় ১৫:৪; যাকোব ৪:৮.

যে-মহিলারা একজন ফরৌণকে অগ্রাহ্য করেছিল

৩, ৪. (ক) কেন শিফ্রা ও পূয়া ফরৌণের বাধ্য হওয়া প্রত্যাখ্যান করেছিল, যখন তিনি প্রত্যেক নবজাত ইস্রায়েলীয় পুত্রসন্তানকে হত্যা করার আদেশ দিয়েছিলেন? (খ) কীভাবে যিহোবা দুজন ধাত্রীকে তাদের সাহস ও ঈশ্বরীয় ভয়ের জন্য পুরস্কৃত করেছিলেন?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানিতে অনুষ্ঠিত নুরেমবার্গ বিচারের সময়, যাদের গণহত্যার অপরাধে অপরাধী বলে রায় দেওয়া হয়েছিল, তারা অনেকে তাদের অপরাধের অজুহাত হিসেবে এই দাবি করেছিল যে, তারা শুধুমাত্র আদেশ পালন করছিল। এখন এই ব্যক্তিদের দুজন ইস্রায়েলীয় ধাত্রী শিফ্রা ও পূয়ার সঙ্গে তুলনা করুন, যারা নাম উল্লেখ করা হয়নি এমন একজন নিষ্ঠুর ফরৌণের রাজত্বকালে প্রাচীন মিশরে বাস করত। ইব্রীয় জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ভয়ে ফরৌণ দুজন ধাত্রীকে আদেশ দিয়েছিলেন, যাতে প্রত্যেক নবজাত ইব্রীয় পুত্রসন্তানকে হত্যা করা হয়। এই ঘৃণ্য আদেশের প্রতি এই মহিলারা কীভাবে সাড়া দিয়েছিল? তারা “মিসর-রাজের আজ্ঞানুসারে না করিয়া পুত্ত্রসন্তানদিগকে জীবিত রাখিত।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) কেন এই মহিলারা মনুষ্যভয়ের কাছে নতি স্বীকার করেনি? কারণ তারা “ঈশ্বরকে ভয় করিত।”—যাত্রাপুস্তক ১:১৫, ১৭; আদিপুস্তক ৯:৬.

হ্যাঁ, ধাত্রীরা যিহোবার কাছে আশ্রয় নিয়েছিল এবং ফলস্বরূপ তিনি তাদের জন্য “ঢাল” প্রমাণিত হয়েছিলেন, ফরৌণের ক্রোধ থেকে তাদের রক্ষা করেছিলেন। (২ শমূয়েল ২২:৩১; যাত্রাপুস্তক ১:১৮-২০) কিন্তু যিহোবার আশীর্বাদ সেখানেই থেমে যায়নি। তিনি শিফ্রা ও পূয়ার বংশবৃদ্ধি করে আশীর্বাদ করেছিলেন। তিনি এমনকি এই নারীদের নাম ও কাজের বিষয় তাঁর অনুপ্রাণিত বাক্যে লিপিবদ্ধ করে তাদের প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তা পড়তে পারে অথচ ফরৌণের নাম সময়ের প্রবাহে হারিয়ে গেছে।—যাত্রাপুস্তক ১:২১; ১ শমূয়েল ২:৩০খ; হিতোপদেশ ১০:৭.

৫. কীভাবে আজকে অনেক খ্রিস্টান মহিলা শিফ্রা ও পূয়ার মতো একই মনোভাব দেখায় এবং কীভাবে যিহোবা তাদের পুরস্কৃত করবেন?

আজকে কি শিফ্রা ও পূয়ার মতো মহিলারা রয়েছে? হ্যাঁ, বাস্তবিকই রয়েছে! প্রতি বছর এই ধরনের হাজার হাজার মহিলা নির্ভীকভাবে বাইবেলের জীবন রক্ষাকারী বার্তা সেই দেশগুলোতে প্রচার করে, যেখানে ‘রাজার আজ্ঞা’ এটিকে নিষিদ্ধ করে আর এভাবে তারা তাদের স্বাধীনতা অথবা এমনকি তাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রাখে। (ইব্রীয় ১১:২৩; প্রেরিত ৫:২৮, ২৯) ঈশ্বর ও প্রতিবেশীর প্রতি প্রেমের দ্বারা চালিত হয়ে, এই সাহসী মহিলারা অন্যদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার জানানোর ব্যাপারে কাউকেই তাদের বাধা হতে দেয় না। ফলে, অনেক খ্রিস্টান মহিলা বিরোধিতা ও তাড়নার সঙ্গে লড়াই করে। (মার্ক ১২:৩০, ৩১; ১৩:৯-১৩) শিফ্রা ও পূয়ার ক্ষেত্রে যেমন ছিলেন, যিহোবা তেমনই এই ধরনের চমৎকার, সাহসী মহিলাদের কাজ সম্বন্ধে পুরোপুরি অবগত আছেন আর যতদিন তারা শেষ পর্যন্ত বিশ্বস্তভাবে স্থির থাকবে, তিনি তাঁর “জীবন-পুস্তকে” তাদের নাম সংরক্ষণ করার দ্বারা তাদের প্রতি তাঁর প্রেম প্রদর্শন করবেন।—ফিলিপীয় ৪:৩; মথি ২৪:১৩.

একজন প্রাক্তন বেশ্যা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করেন

৬, ৭. (ক) যিহোবা ও তাঁর লোকেদের সম্বন্ধে রাহব কী জানতেন এবং এই জ্ঞান তাকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল? (খ) কীভাবে ঈশ্বরের বাক্য রাহবকে সম্মান দেখায়?

সাধারণ কাল পূর্ব ১৪৭৩ সালে, রাহব নামে একজন বেশ্যা কনানীয় শহর যিরীহোতে বাস করতেন। স্পষ্টতই, রাহব বিভিন্ন ঘটনা সম্বন্ধে ভালভাবে অবগত ছিলেন। দুজন ইস্রায়েলীয় গুপ্তচর যখন তার ঘরে আশ্রয় খুঁজেছিল, তখন তিনি তাদের কাছে মিশর থেকে ইস্রায়েলের অলৌকিক যাত্রার বিবরণ পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বর্ণনা করতে পেরেছিলেন, যদিও তা ৪০ বছর আগে ঘটেছিল! এ ছাড়া, তিনি ইমোরীয় রাজা সীহোন এবং ওগের ওপর ইস্রায়েলের অতি সাম্প্রতিক বিজয়গুলো সম্বন্ধেও জানতেন। লক্ষ করুন যে, সেই জ্ঞান তাকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল। গুপ্তচরদের তিনি বলেছিলেন: “আমি জানি, সদাপ্রভু তোমাদিগকে এই দেশ দিয়াছেন, . . . কেননা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু উপরিস্থ স্বর্গে ও নীচস্থ পৃথিবীতে ঈশ্বর।” (যিহোশূয়ের পুস্তক ২:১, ৯-১১) হ্যাঁ, যিহোবার বিষয়ে ও ইস্রায়েলের পক্ষে তাঁর কাজগুলো সম্বন্ধে রাহব যা জেনেছিলেন, তা তার হৃদয়কে এমনভাবে স্পর্শ করেছিল যে তিনি অনুকূল সাড়া দিতে এবং তাঁর ওপর বিশ্বাস রাখতে পরিচালিত হয়েছিলেন।—রোমীয় ১০:১০.

রাহবের বিশ্বাস তাকে কাজ করতে প্রেরণা দিয়েছিল। তিনি ইস্রায়েলীয় গুপ্তচরদের “শান্তির সহিত” অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন এবং ইস্রায়েল যখন যিরীহো আক্রমণ করেছিল, তখন তাদের জীবন রক্ষাকারী নির্দেশনাগুলো মেনে চলেছিলেন। (ইব্রীয় ১১:৩১; যিহোশূয়ের পুস্তক ২:১৮-২১) কোনো সন্দেহ নেই যে, রাহবের বিশ্বাসের কাজগুলো যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করেছিল কারণ তিনি খ্রিস্টান শিষ্য যাকোবকে ঈশ্বরের বন্ধু অব্রাহামের নামের পাশে রাহবের নাম লিখে রাখতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন, যা খ্রিস্টানদের অনুকরণের জন্য এক উদাহরণ। যাকোব লিখেছিলেন: “আবার রাহব বেশ্যাও কি সেই প্রকারে কর্ম্মহেতু ধার্ম্মিক গণিতা হইল না? সে ত দূতগণকে অতিথি করিয়াছিল, এবং অন্য পথ দিয়া বাহিরে পাঠাইয়া দিয়াছিল।”—যাকোব ২:২৫.

৮. কীভাবে যিহোবা রাহবকে তার বিশ্বাস ও বাধ্যতার জন্য আশীর্বাদ করেছিলেন?

যিহোবা রাহবকে বিভিন্ন উপায়ে পুরস্কৃত করেছিলেন। একটা হল, তিনি তার নিজের জীবন এবং যারা তার গৃহে আশ্রয় নিতে চেষ্টা করেছিল, তাদের সকলের মূলত ‘তাহার পিতৃকুল ও তাহার স্বজন সকলের’ জীবন অলৌকিকভাবে রক্ষা করেছিলেন। এরপর তিনি এই লোকেদের “ইস্রায়েলের মধ্যে” বাস করার অনুমতি দিয়েছিলেন, যেখানে তাদের সঙ্গে স্বদেশীয় লোক হিসেবে আচরণ করা হয়েছিল। (যিহোশূয়ের পুস্তক ২:১৩; ৬:২২-২৫; লেবীয় পুস্তক ১৯:৩৩, ৩৪) কিন্তু সেটাই সব নয়। এ ছাড়া, যিহোবা রাহবকে যিশু খ্রিস্টের পূর্বপুরুষ হওয়ার সম্মান দিয়েছিলেন। যে-মহিলা একসময় একজন প্রতিমাপূজক কনানীয় ছিলেন, তার প্রতি প্রেমপূর্ণ-দয়া প্রদর্শনের কী এক বড় নমুনা! *গীতসংহিতা ১৩০:৩, ৪.

৯. কীভাবে রাহব ও প্রথম শতাব্দীর কিছু খ্রিস্টান মহিলার প্রতি যিহোবার মনোভাব আজকের দিনের কিছু মহিলার জন্য উৎসাহজনক?

প্রথম শতাব্দী থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত রাহবের মতো কিছু খ্রিস্টান মহিলা, ঈশ্বরকে খুশি করার জন্য অনৈতিক জীবনধারা পরিত্যাগ করেছে। (১ করিন্থীয় ৬:৯-১১) কোনো সন্দেহ নেই যে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ এমন এক পরিবেশে বড় হয়ে উঠেছে যা প্রাচীন কনানের মতো, যেখানে অনৈতিকতা ব্যাপকভাবে বিরাজ করেছিল ও এমনকি সাধারণ ব্যাপার বলে মনে করা হতো। তা সত্ত্বেও, তারা তাদের জীবনধারা পালটেছিল, শাস্ত্রের সঠিক জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করা বিশ্বাসের দ্বারা চালিত হয়েছিল। (রোমীয় ১০:১৭) তাই, এই ধরনের মহিলাদের বিষয়ে এটাও বলা যেতে পারে যে, “ঈশ্বর তাঁহাদের ঈশ্বর বলিয়া আখ্যাত হইতে, তাঁহাদের বিষয়ে লজ্জিত নহেন।” (ইব্রীয় ১১:১৬) কত বড় এক সম্মান!

তার সুবুদ্ধির জন্য আশীর্বাদপ্রাপ্ত

১০, ১১. নাবল ও দায়ূদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোন পরিস্থিতিগুলো অবীগলকে পদক্ষেপ নিতে পরিচালিত করেছিল?

১০ প্রাচীনকালের অনেক বিশ্বস্ত মহিলা উল্লেখযোগ্য উপায়ে সুবুদ্ধি প্রদর্শন করেছিলেন, যা তাদেরকে যিহোবার লোকেদের কাছে এক মূল্যবান সম্পদ করে তুলেছিল। এইরকম একজন মহিলা ছিলেন অবীগল, যিনি নাবল নামে একজন ধনী ইস্রায়েলীয় জমির মালিকের স্ত্রী ছিলেন। অবীগলের সুবুদ্ধি অনেকের জীবন রক্ষা করতে এবং ইস্রায়েলের ভাবী রাজা দায়ূদকে রক্তপাতের দোষে দোষী হওয়া থেকে নিবৃত্ত করতে অবদান রেখেছিল। আমরা ১ শমূয়েল ২৫ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ বিবরণে অবীগল সম্বন্ধে পড়তে পারি।

১১ গল্পের শুরুতে দেখা যায় যে, দায়ূদ ও তার অনুসারীরা নাবলের পশুপালের কাছাকাছি শিবির স্থাপন করেছিল, যেগুলোকে তারা তাদের ইস্রায়েলীয় ভাই নাবলের প্রতি দয়া দেখিয়ে দিনরাত বিনামূল্যে পাহারা দিয়েছিল। যখন দায়ূদের খাদ্যের সরবরাহ কমতে শুরু করেছিল, তখন তিনি দশ জন যুবককে নাবলের কাছে খাবার চাওয়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন। নাবলের সামনে এখন দায়ূদের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা এবং যিহোবার অভিষিক্ত ব্যক্তি হিসেবে তাকে সম্মান দেখানোর সুযোগ এসেছে। কিন্তু নাবল এর উলটোটা করেন। প্রচণ্ড রেগে গিয়ে তিনি দায়ূদকে অপমান করেন এবং যুবকদের খালি হাতে বিদায় করেন। দায়ূদ এই বিষয় শোনার পর ৪০০ জন সশস্ত্র লোককে সমবেত করেন এবং উপযুক্ত প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য রওনা হন। অবীগল তার স্বামীর রূঢ় প্রতিক্রিয়ার বিষয়টা জানতে পারেন এবং দায়ূদকে সন্তুষ্ট করার জন্য প্রচুর পরিমাণে খাদ্যদ্রব্য পাঠিয়ে দ্রুত এবং দূরদর্শিতার সঙ্গে কাজ করেন। এরপর তিনি নিজে দায়ূদের কাছে যান।—২-২০ পদ।

১২, ১৩. (ক) কীভাবে যিহোবা ও তাঁর অভিষিক্ত ব্যক্তির প্রতি অবীগল সুবুদ্ধিসম্পন্ন ও সেইসঙ্গে অনুগত প্রমাণিত হয়েছিলেন? (খ) অবীগল যখন ঘরে ফিরে এসেছিলেন, তখন তিনি কী করেছিলেন এবং তার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয় কীভাবে ঘটেছিল?

১২ অবীগল যখন দায়ূদের সঙ্গে দেখা করেন, তখন করুণা পাওয়ার জন্য তার নম্র অনুরোধ যিহোবার অভিষিক্ত ব্যক্তির প্রতি তার গভীর সম্মান প্রকাশ করে। “সদাপ্রভু নিশ্চয়ই আমার প্রভুর কুল স্থির করিবেন; কারণ সদাপ্রভুরই জন্য আমার প্রভু যুদ্ধ করিতেছেন,” তিনি বলেন এবং সঙ্গে এই কথাও যুক্ত করেন যে, যিহোবা দায়ূদকে ইস্রায়েলের নেতা হিসেবে নিযুক্ত করবেন। (২৮-৩০ পদ) একই সময়ে অবীগল দায়ূদকে এই কথা বলে যথেষ্ট সাহস দেখান যে, প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টাকে যদি দায়ূদ নিয়ন্ত্রণ না করেন, তা হলে তা রক্তপাতের দিকে পরিচালিত হবে। (২৬, ৩১ পদ) অবীগলের নম্রতা, গভীর সম্মান এবং স্পষ্ট চিন্তাধারার মাধ্যমে দায়ূদ তার চেতনা ফিরে পান। তিনি উত্তরে বলেন: “ধন্য ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু, যিনি অদ্য আমার সহিত সাক্ষাৎ করাইতে তোমাকে প্রেরণ করিলেন। আর ধন্য তোমার সুবিচার, এবং ধন্যা তুমি, কারণ অদ্য তুমি রক্তপাত . . . লইতে আমাকে নিবৃত্ত করিলে।”—৩২, ৩৩ পদ।

১৩ অবীগল ঘরে ফিরে এসে দায়ূদকে তিনি যে-উপহার দিয়েছেন, তা তার স্বামীকে বলার জন্য সাহসের সঙ্গে সুযোগ খুঁজতে থাকেন। কিন্তু, অবীগল যখন তাকে দেখেন, তখন তিনি ‘অতিশয় মত্ত হইয়াছিলেন।’ তাই যতক্ষণ পর্যন্ত না নাবল স্বাভাবিক হন সেই পর্যন্ত অবীগল অপেক্ষা করেন ও এরপর তাকে তা বলেন। নাবল কেমন প্রতিক্রিয়া দেখান? তিনি এত বেশি ম্রিয়মাণ হয়ে পড়েন যে এটাকে হয়তো এক ধরনের পক্ষাঘাত বলা যায়। দশ দিন পরে ঈশ্বরের আঘাতে তিনি মারা যান। দায়ূদ যখন নাবলের মৃত্যুর বিষয়ে শোনেন, তখন তিনি অবীগলকে বিয়ের প্রস্তাব দেন, যাকে তিনি স্পষ্টতই গভীর সম্মান করতেন। অবীগল দায়ূদের প্রস্তাবে রাজি হন।—৩৪-৪২ পদ।

আপনি কি অবীগলের মতো হতে পারেন?

১৪. অবীগলের কোন গুণগুলো হয়তো আমরা আরও বেশি করে গড়ে তুলতে চাই?

১৪ আপনি কি অবীগলের মধ্যে কিছু গুণ দেখতে পান, যা আপনি—পুরুষ বা মহিলা যে-ই হোন না কেন—আরও বেশি করে গড়ে তুলতে চাইবেন? সম্ভবত আপনি সমস্যা দেখা দিলে আরও বেশি সুবুদ্ধির সঙ্গে কাজ করতে চান। অথবা আপনার আশেপাশের লোকেদের মেজাজ যখন অত্যন্ত চড়া হয়ে যায়, তখন আপনি হয়তো শান্ত ও যুক্তিসংগতভাবে কথা বলতে চাইতে পারেন। যদি এইরকম কিছু হয়, তা হলে বিষয়টা নিয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন না কেন? যারা ‘বিশ্বাসপূর্ব্বক যাচ্ঞা করে’ তাদের তিনি প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা এবং চিন্তা করার ক্ষমতা দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেন।—যাকোব ১:৫, ৬; হিতোপদেশ ২:১-৬, ১০, ১১.

১৫. কোন পরিস্থিতিগুলোতে খ্রিস্টান মহিলাদের অবীগলের দ্বারা দেখানো গুণগুলো প্রদর্শন করা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ?

১৫ এই ধরনের উত্তম গুণগুলো সেই মহিলার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যাকে এমন একজন অবিশ্বাসী স্বামীর সঙ্গে বাস করতে হয়, যিনি বাইবেলের নীতিগুলোর প্রতি সামান্য অথবা কোনো মনোযোগই দেন না। তিনি হয়তো অতিরিক্ত মদ খান। আশা করা যায় যে, এই ধরনের ব্যক্তিরা তাদের জীবনধারা পরিবর্তন করবে। অনেকে তেমনটা করেছে—প্রায়ই তাদের স্ত্রীদের মৃদুতা, গভীর সম্মান এবং বিশুদ্ধ আচরণের ফলস্বরূপ।—১ পিতর ৩:১, ২, ৪.

১৬. ঘরে একজন খ্রিস্টান বোনের পরিস্থিতি যাইহোক না কেন, তিনি কীভাবে প্রদর্শন করবেন যে, অন্য সবকিছুর চেয়ে যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ককে তিনি মূল্যবান গণ্য করেন?

১৬ ঘরে আপনাকে যে-সমস্যাগুলোই সহ্য করতে হোক না কেন, মনে রাখবেন যে আপনাকে সমর্থন করার জন্য যিহোবা সবসময় রয়েছেন। (১ পিতর ৩:১২) তাই, নিজেকে আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করুন। প্রজ্ঞা এবং শান্ত হৃদয়ের জন্য প্রার্থনা করুন। হ্যাঁ, নিয়মিত বাইবেল অধ্যয়ন, প্রার্থনা, ধ্যান এবং সহখ্রিস্টানদের সঙ্গে মেলামেশার মাধ্যমে যিহোবার আরও নিকটবর্তী হোন। ঈশ্বরের প্রতি অবীগলের ভালবাসা এবং তাঁর অভিষিক্ত দাসের প্রতি তার মনোভাবের ওপর, তার স্বামীর অনাধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রভাব ফেলেনি। তিনি ধার্মিক নীতিগুলোর ওপর ভিত্তি করে কাজ করেছিলেন। এমনকি যে-পরিবারে স্বামী ঈশ্বরের একজন উদাহরণযোগ্য দাস, সেখানেও একজন খ্রিস্টান স্ত্রী উপলব্ধি করেন যে, তার নিজের আধ্যাত্মিকতা গড়ে তোলার ও তা বজায় রাখার জন্য তাকে ক্রমাগত পরিশ্রম করে যেতে হবে। এটা ঠিক যে, স্ত্রীর আধ্যাত্মিক ও বস্তুগত বিষয়গুলোর যত্ন নিতে স্বামীর শাস্ত্রীয় বাধ্যবাধকতা রয়েছে কিন্তু ‘সভয়ে ও সকম্পে আপন পরিত্রাণের’ জন্য শেষ পর্যন্ত তার নিজেকেই কাজ করতে হবে।—ফিলিপীয় ২:১২; ১ তীমথিয় ৫:৮.

তিনি “ভাববাদীয় পুরস্কার” লাভ করেছিলেন

১৭, ১৮. (ক) সারিফতের বিধবা বিশ্বাসের কোন অস্বাভাবিক পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিলেন? (খ) কীভাবে এই বিধবা এলিয়ের অনুরোধে সাড়া দিয়েছিলেন এবং এইজন্য যিহোবা তাকে কীভাবে পুরস্কৃত করেছিলেন?

১৭ ভাববাদী এলিয়ের দিনে যিহোবা যেভাবে এক দরিদ্র বিধবার যত্ন নিয়েছিলেন তা দেখায় যে, তিনি সেই ব্যক্তিদের গভীরভাবে উপলব্ধি করেন, যারা নিজেদের বিলিয়ে দিয়ে ও তাদের সম্পদগুলো দান করে সত্য উপাসনাকে সমর্থন করে। এলিয়ের দিনে দীর্ঘস্থায়ী খরার কারণে অনেকে অনাহারে ছিল, যাদের মধ্যে সারিফতে বসবাসকারী একজন বিধবা ও তার অল্পবয়সী ছেলেও ছিল। ঠিক যখন তাদের কাছে শেষ খাবারটুকু ছিল, সেই সময় একজন অতিথি আসেন আর তিনি ছিলেন ভাববাদী এলিয়। তিনি অত্যন্ত অস্বাভাবিক এক অনুরোধ করেছিলেন। সেই মহিলার অবস্থা জানা সত্ত্বেও, তিনি তাকে তার কাছে যতটুকু তেল ও ময়দা ছিল সেটুকু দিয়েই তার জন্য “এক খণ্ড রুটী” প্রস্তুত করতে বলেছিলেন। কিন্তু, তিনি আরও বলেছিলেন: “কেননা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা কহেন, যে দিন পর্য্যন্ত সদাপ্রভু ভূতলে বৃষ্টি না দেন, সেই দিন পর্য্যন্ত তোমার ময়দার জালা শূন্য হইবে না, ও তৈলের ভাঁড় শুকাইয়া যাইবে না।”—১ রাজাবলি ১৭:৮-১৪.

১৮ আপনি কীভাবে সেই অসাধারণ অনুরোধের প্রতি সাড়া দিতেন? সারিফতের বিধবা স্পষ্টতই এলিয় যে যিহোবার ভাববাদী ছিলেন তা শনাক্ত করতে পেরে সমস্তই ‘এলিয়ের বাক্যানুসারে করিলেন।’ তার আতিথেয়তার প্রতি যিহোবা কীভাবে সাড়া দিয়েছিলেন? তিনি খরার সময়ে সেই স্ত্রীলোক, তার ছেলে এবং এলিয়ের জন্য অলৌকিকভাবে খাবার জুগিয়েছিলেন। (১ রাজাবলি ১৭:১৫, ১৬) হ্যাঁ, যিহোবা সারিফতের বিধবাকে “ভাববাদীয় পুরস্কার” দিয়েছিলেন, যদিও তিনি একজন ইস্রায়েলীয় ছিলেন না। (মথি ১০:৪১) ঈশ্বরের পুত্রও এই বিধবাকে সম্মান দেখিয়েছিলেন, যখন তিনি তাঁর নিজ দেশ নাসরতের অবিশ্বাসী লোকেদের সামনে উদাহরণ হিসেবে তার কথা উল্লেখ করেছিলেন।—লূক ৪:২৪-২৬.

১৯. কোন কোন উপায়ে আজকে অনেক খ্রিস্টান মহিলা সারিফতের বিধবার মতো মনোভাব প্রতিফলিত করে এবং যিহোবা এই ব্যক্তিদের বিষয়ে কেমন বোধ করেন?

১৯ আজকে, অনেক খ্রিস্টান মহিলা সারিফতের বিধবার মনোভাব প্রতিফলিত করে। উদাহরণস্বরূপ, প্রতি সপ্তাহে নিঃস্বার্থ খ্রিস্টান বোনেরা, যাদের মধ্যে অনেকে দরিদ্র এবং অনেককে পরিবারের যত্ন নিতে হয়, তারা ভ্রমণ অধ্যক্ষ ও তাদের স্ত্রীদের প্রতি আতিথেয়তা প্রদর্শন করে। অন্যেরা পূর্ণ-সময়ের স্থানীয় পরিচারকদের খাবার দিয়ে থাকে, অভাবীদের সাহায্য করে বা অন্য কোনো উপায়ে রাজ্যের কাজকে সমর্থন করার জন্য নিজেদের ও তাদের সম্পদ বিলিয়ে দেয়। (লূক ২১:৪) যিহোবা কি এই ধরনের ত্যাগস্বীকারগুলো লক্ষ করেন? অবশ্যই করেন! “ঈশ্বর অন্যায়কারী নহেন; তোমাদের কার্য্য, এবং তোমরা পবিত্রগণের যে পরিচর্য্যা করিয়াছ ও করিতেছ, তদ্দ্বারা তাঁহার নামের প্রতি প্রদর্শিত তোমাদের প্রেম, এই সকল তিনি ভুলিয়া যাইবেন না।”—ইব্রীয় ৬:১০.

২০. পরের প্রবন্ধে কী বিবেচনা করা হবে?

২০ প্রথম শতাব্দীতে কয়েক জন ঈশ্বর ভয়শীল মহিলার যিশু ও তাঁর প্রেরিতদের পরিচর্যা করার বিশেষ সুযোগ হয়েছিল। পরের প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব যে, কীভাবে এই মহিলারা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করেছিল এবং আমরা আধুনিক দিনের মহিলাদের উদাহরণ বিবেচনা করব, যারা সর্বান্তঃকরণে যিহোবার সেবা করে, এমনকি কঠিন পরিস্থিতিগুলোতেও।

[পাদটীকা]

^ মথির দ্বারা লিপিবদ্ধ যিশুর বংশবৃত্তান্ত চার জন মহিলার নাম উল্লেখ করে—তামর, রাহব, রূৎ এবং মরিয়ম। ঈশ্বরের বাক্যে সকলকেই উচ্চ সম্মান দেওয়া হয়েছে।—মথি ১:৩, ৫, ১৬.

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

পুনরালোচনা

• কীভাবে নিম্নোক্ত মহিলারা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করেছিল?

• শিফ্রা এবং পূয়া

• রাহব

• অবীগল

• সারিফতের বিধবা

• কীভাবে এই মহিলাদের দ্বারা স্থাপিত উদাহরণগুলোর ওপর ধ্যান করা ব্যক্তিগতভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে? ব্যাখ্যা করুন।

[৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

অনেক বিশ্বস্ত মহিলা ‘রাজার আজ্ঞা’ সত্ত্বেও ঈশ্বরের সেবা করেছিল

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

কেন রাহব বিশ্বাসের এক উত্তম উদাহরণ?

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

অবীগলের প্রদর্শিত কোন গুণগুলো আপনি অনুকরণ করতে চান?

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

আজকে অনেক খ্রিস্টান মহিলা সারিফতের বিধবার মনোভাব প্রতিফলিত করে