সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“এক মুখে” ঈশ্বরের গৌরব করুন

“এক মুখে” ঈশ্বরের গৌরব করুন

“এক মুখে” ঈশ্বরের গৌরব করুন

“এক মুখে আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ঈশ্বরের ও পিতার গৌরব কর।”রোমীয় ১৫:৬.

১. ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি সমাধান করার বিষয়ে প্রেরিত পৌল সহবিশ্বাসীদের কোন শিক্ষা দিয়েছিলেন?

 সমস্ত খ্রিস্টানই একরকম বাছাই করে না বা তাদের পছন্দও একইরকম নয়। কিন্তু, জীবনের পথে সমস্ত খ্রিস্টানকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে হবে। এটা কি সম্ভব? হ্যাঁ সম্ভব, যদি আমরা ছোটোখাটো বৈসাদৃশ্যগুলোকে বড় বিষয় করে না তুলি। এই শিক্ষাটাই প্রেরিত পৌল প্রথম শতাব্দীতে সহবিশ্বাসীদের দিয়েছিলেন। কীভাবে তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা ব্যাখ্যা করেছিলেন? আর আজকে, আমরা কীভাবে তার অনুপ্রাণিত পরামর্শ কাজে লাগাতে পারি?

খ্রিস্টীয় একতার গুরুত্ব

২. কীভাবে পৌল একতার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে জোর দিয়েছিলেন?

পৌল জানতেন যে, খ্রিস্টীয় একতা গুরুত্বপূর্ণ আর তাই তিনি পরস্পরের প্রতি প্রেমে সহনশীল হওয়ার বিষয়ে খ্রিস্টানদের সাহায্য করতে উত্তম পরামর্শ দিয়েছিলেন। (ইফিষীয় ৪:১-৩; কলসীয় ৩:১২-১৪) তা সত্ত্বেও, ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অনেক মণ্ডলী প্রতিষ্ঠা এবং অন্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর, তিনি জানতেন যে একতা বজায় রাখা কঠিন হতে পারে। (১ করিন্থীয় ১:১১-১৩; গালাতীয় ২:১১-১৪) তাই, রোমে বসবাসরত সহবিশ্বাসীদের তিনি জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “ধৈর্য্যের ও সান্ত্বনার ঈশ্বর এমন বর দিউন, . . . যেন তোমরা একচিত্তে এক মুখে আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ঈশ্বরের ও পিতার গৌরব কর।” (রোমীয় ১৫:৫, ৬) আজকে, একইভাবে আমাদেরও তাঁর লোকেদের ঐক্যবদ্ধ দল হিসেবে “এক মুখে” যিহোবা ঈশ্বরের গৌরব করতে হবে। এই বিষয়ে আমরা কতটুকু করছি?

৩, ৪. (ক) রোমে খ্রিস্টানদের কোন ভিন্ন পটভূমি ছিল? (খ) কীভাবে রোমের খ্রিস্টানরা “এক মুখে” যিহোবার সেবা করতে সমর্থ হয়েছিল?

রোমে অনেক খ্রিস্টান পৌলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। (রোমীয় ১৬:৩-১৬) যদিও তাদের পটভূমি ভিন্ন ছিল কিন্তু পৌল তার সমস্ত ভাইবোনকে ‘ঈশ্বরের প্রিয় লোক’ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “আমি যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা তোমাদের সকলের জন্য আমার ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিতেছি যে, তোমাদের বিশ্বাস সমস্ত জগতে পরিকীর্ত্তিত হইতেছে।” স্পষ্টতই, রোমীয়রা অনেক দিক দিয়ে উদাহরণযোগ্য ছিল। (রোমীয় ১:৭, ৮; ১৫:১৪) একইসঙ্গে, মণ্ডলীর কয়েক জন সদস্যের কিছু কিছু বিষয়ে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। আজকে যেহেতু খ্রিস্টানরা বিভিন্ন পটভূমি এবং সংস্কৃতি থেকে আসছে, তাই কীভাবে বৈসাদৃশ্যগুলো সমাধান করা যায়, সেই সম্বন্ধে পৌলের অনুপ্রাণিত পরামর্শ নিয়ে অধ্যয়ন করা তাদেরকে “এক মুখে” কথা বলতে সাহায্য করতে পারে।

রোমে যিহুদি এবং পরজাতি উভয় বিশ্বাসীই ছিল। (রোমীয় ৪:১; ১১:১৩) কিছু যিহুদি খ্রিস্টান স্পষ্টতই এমন কিছু রীতিনীতি পালন করা বন্ধ করতে পারেনি, যা তারা মোশির ব্যবস্থার অধীনে পালন করত, যদিও তাদের বোঝা উচিত ছিল যে এই ধরনের রীতিনীতিগুলো পরিত্রাণের জন্য আবশ্যক ছিল না। অন্যদিকে, কয়েক জন যিহুদি খ্রিস্টান এই বিষয়টা মেনে নিয়েছিল যে, খ্রিস্টের বলিদান তাদের সেই বিধিনিষেধগুলো থেকে মুক্ত করেছিল, যা তারা খ্রিস্টান হওয়ার আগে পালন করত। এর ফলে, তারা তাদের ব্যক্তিগত কিছু অভ্যাস এবং রীতিনীতি পরিবর্তন করেছিল। (গালাতীয় ৪:৮-১১) তা সত্ত্বেও, পৌল যেমন উল্লেখ করেছিলেন, সকলে ‘ঈশ্বরের প্রিয় লোক’ ছিল। সকলে “এক মুখে” ঈশ্বরের প্রশংসা করতে পারত, যদি তারা পরস্পরের প্রতি সঠিক মনোভাব বজায় রাখত। আজকে আমাদেরও নির্দিষ্ট বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে, তাই পৌল কীভাবে সেই গুরুত্বপূর্ণ নীতি সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করেছিলেন, তা আমাদের মনোযোগের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।—রোমীয় ১৫:৪.

“এক জন অন্যকে গ্রহণ কর”

৫, ৬. কেন রোম মণ্ডলীতে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ছিল?

রোমীয়দের প্রতি লেখা চিঠিতে পৌল এমন একটা পরিস্থিতির বিষয়ে বলেছিলেন, যে-বিষয়ে বিভিন্ন মতামত ছিল। তিনি লিখেছিলেন: “এক ব্যক্তির বিশ্বাস আছে যে, সর্ব্বপ্রকার দ্রব্যই খাইতে পারে, কিন্তু যে দুর্ব্বল, সে শাক খায়।” কেন এইরকম ছিল? আসলে, মোশির ব্যবস্থার অধীনে, শূকরের মাংস গ্রহণযোগ্য খাবার ছিল না। (রোমীয় ১৪:২; লেবীয় পুস্তক ১১:৭) কিন্তু, যিশুর মৃত্যুর পর সেই ব্যবস্থা আর আবশ্যক ছিল না। (ইফিষীয় ২:১৫) এরপর, যিশুর মৃত্যুর সাড়ে তিন বছর পর, একজন দূত প্রেরিত পিতরকে বলেছিলেন যে, ঈশ্বরের দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো খাবারকেই অপবিত্র হিসেবে দেখা উচিত নয়। (প্রেরিত ১১:৭-১২) এই বিষয়গুলোর কথা মনে রেখে কিছু যিহুদি খ্রিস্টান হয়তো মনে করেছিল যে, তারা শূকরের মাংস—অথবা ব্যবস্থার মধ্যে নিষিদ্ধ ছিল এমন অন্য কোনো খাবার—খেতে পারে।

কিন্তু, অন্যান্য যিহুদি খ্রিস্টানদের কাছে হয়তো আগের অশুচি খাবারগুলো খাওয়ার কথা চিন্তা করাই ঘৃণ্য বিষয় ছিল। এই ধরনের স্পর্শকাতর ব্যক্তিরা হয়তো যিহুদি পটভূমি থেকে আসা সহখ্রিস্টানদের সেই খাবার খেতে দেখে সহজাতভাবে অসন্তুষ্ট হয়েছিল। এ ছাড়া কিছু পরজাতি খ্রিস্টান, যাদের ধর্মীয় পটভূমিতে কখনোই খাদ্যাতালিকার ব্যাপারে বিধিনিষেধ ছিল না, তারা হয়তো খাবারের বিষয় নিয়ে যে কেউ তর্ক করবে, সেই বিষয়টাতেই হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছিল। অবশ্য, কেউ যদি কোনো খাবার পরিহার করে চলে, তা হলে সেটা দোষের কিছু ছিল না, যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি এই বিষয়ে নাছোড়বান্দা ছিলেন না যে, এই ধরনের পরিহার পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য আবশ্যক। তবুও, ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি সহজেই মণ্ডলীর মধ্যে মতবিরোধের সৃষ্টি করতে পারত। রোমের খ্রিস্টানদের সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন হয়েছিল যে, এই ধরনের বৈসাদৃশ্যগুলো যেন তাদেরকে “এক মুখে” ঈশ্বরকে গৌরবান্বিত করতে বাধা না দেয়।

৭. প্রতি সপ্তাহে বিশেষ দিন পালন করার বিষয়ে কোন ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ছিল?

পৌল দ্বিতীয় উদাহরণ দেন: “এক জন এক দিন হইতে অন্য দিন অধিক মান্য করে; আর এক জন সকল দিনকেই সমানরূপে মান্য করে।” (রোমীয় ১৪:৫ক) মোশির ব্যবস্থায়, বিশ্রামবারে কোনো কাজ করা যেত না। এমনকি সেই দিনে ভ্রমণ করাও কড়াকড়িভাবে নিষিদ্ধ ছিল। (যাত্রাপুস্তক ২০:৮-১০; মথি ২৪:২০; প্রেরিত ১:১২) কিন্তু, ব্যবস্থা যখন লোপ পায়, তখন সেই বিধিনিষেধগুলো বাতিল হয়ে যায়। তা সত্ত্বেও, কিছু যিহুদি খ্রিস্টান হয়তো সেই দিনে এমন যেকোনো ধরনের কাজ করতে অথবা বহু দূরের পথ ভ্রমণ করতে অস্বস্তিবোধ করত, যে-দিনকে তারা আগে পবিত্র হিসেবে দেখেছিল। এমনকি খ্রিস্টান হওয়ার পরেও, তারা হয়তো সপ্তম দিনকে আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্যগুলোর জন্য পুরোপুরি আলাদা করে রাখত, যদিও ঈশ্বরের দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্রামবার আর কার্যকর ছিল না। সেগুলো করা কি ভুল ছিল? না, তবে এই শর্তে যে তারা বিশ্রামবার পালনকে ঈশ্বরের একটা চাহিদা বলে জোরাজুরি করেনি। তাই, খ্রিস্টান ভাইবোনদের বিবেকের কথা বিবেচনা করে, পৌল লিখেছিলেন: “প্রত্যেক ব্যক্তি আপন আপন মনে স্থিরনিশ্চয় হউক।”—রোমীয় ১৪:৫খ.

৮. যদিও তারা অন্যদের বিবেকের প্রতি বিবেচনা দেখাতে পারত কিন্তু রোমের খ্রিস্টানদের কী করা উচিত ছিল না?

তবে, যারা বিবেকের সঙ্গে জড়িত বিষয়গুলো নিয়ে সংগ্রাম করছিল, তাদের প্রতি যদিও পৌল ধৈর্যশীল হওয়ার জন্য তার ভাইদের উষ্ণভাবে উৎসাহ দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি জোরালোভাবে সেই ব্যক্তিদের নিন্দা করেছিলেন, যারা পরিত্রাণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে মোশির আইনের বশীভূত হওয়ার জন্য সহবিশ্বাসীদের জোর করার প্রচেষ্টা করছিল। উদাহরণস্বরূপ, সা.কা. প্রায় ৬১ সালে পৌল ইব্রীয় পুস্তকটি লিখেছিলেন, যেটি হল যিহুদি খ্রিস্টানদের প্রতি এক জোরালো চিঠি আর সেখানে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, মোশির ব্যবস্থার বশীভূত হওয়ার কোনো মূল্য নেই কারণ খ্রিস্টানদের যিশুর মুক্তির মূল্যের ভিত্তিতে এক উচ্চ আশা রয়েছে।—গালাতীয় ৫:১-১২; তীত ১:১০, ১১; ইব্রীয় ১০:১-১৭.

৯, ১০. কী করা থেকে খ্রিস্টানদের বিরত থাকা উচিত? ব্যাখ্যা করুন।

আমরা যেমন দেখেছি, পৌল যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে ভিন্ন ভিন্ন বাছাই করা ততক্ষণ পর্যন্ত একতার ক্ষেত্রে হুমকিস্বরূপ হওয়ার প্রয়োজন নেই, যতক্ষণ পর্যন্ত না সেটার সঙ্গে খিস্টীয় নীতিগুলোর কোনো স্পষ্ট লঙ্ঘন জড়িত থাকে। তাই, পৌল দুর্বল বিবেকসম্পন্ন খ্রিস্টানদের জিজ্ঞেস করেন: “তুমি কেন তোমার ভ্রাতার বিচার কর?” আর তিনি তাদের চেয়ে বলবান ব্যক্তিদের (সম্ভবত যাদের বিবেক ব্যবস্থার মধ্যে নিষেধ ছিল এমন কিছু খাবার খেতে অথবা বিশ্রামবারে জাগতিক কোনো কাজ করতে বাধা দিত না) জিজ্ঞেস করেছিলেন: “কেনই বা তুমি তোমার ভ্রাতাকে তুচ্ছ কর?” (রোমীয় ১৪:১০) পৌলের কথা অনুসারে, দুর্বল বিবেকসম্পন্ন খ্রিস্টানদের অবশ্যই সেই ভাইদের নিন্দা করা থেকে বিরত থাকতে হবে, যাদের প্রশস্ত দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। একইসঙ্গে, বলবান খ্রিস্টানরা অবশ্যই সেই ব্যক্তিদের ছোট করে দেখবে না, যাদের বিবেক কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখনও দুর্বল রয়েছে। প্রত্যেকের উচিত অন্যের সঠিক মনোভাবকে সম্মান করা এবং “[আপনাদের] বিষয়ে যেমন বোধ করা উপযুক্ত, . . . তদপেক্ষা বড় বোধ” না করা।—রোমীয় ১২:৩, ১৮.

১০ পৌল এভাবে ভারসাম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করেছিলেন: “যে যাহা ভোজন করে, সে এমন ব্যক্তিকে তুচ্ছ না করুক, যে তাহা ভোজন না করে; এবং যে যাহা ভোজন না করে, সে এমন ব্যক্তির বিচার না করুক, যে তাহা ভোজন করে; কারণ ঈশ্বর তাহাকে গ্রহণ করিয়াছেন।” তিনি আরও বলেছিলেন: ‘ঈশ্বরের গৌরবের জন্য খ্রীষ্ট তোমাদিগকে গ্রহণ করিলেন।’ যেহেতু, দুর্বল এবং বলবান উভয়ই ঈশ্বর এবং খ্রিস্টের কাছে গ্রহণযোগ্য, তাই একইভাবে আমাদেরও বড় হৃদয়ের হওয়া এবং ‘এক জন অন্যকে গ্রহণ করা’ উচিত। (রোমীয় ১৪:৩; ১৫:৭) কেই বা উপযুক্তভাবে এর সঙ্গে অসম্মত হতে পারে?

ভ্রাতৃপ্রেম আজকে একতা উৎপন্ন করে

১১. কোন ব্যতিক্রম পরিস্থিতি পৌলের দিনে বিদ্যমান ছিল?

১১ রোমীয়দের প্রতি লেখা তার চিঠিতে পৌল এক ব্যতিক্রম পরিস্থিতির বিষয়ে বলেছিলেন। সম্প্রতি যিহোবা একটা চুক্তি লোপ করেছিলেন এবং আরেকটা নতুন চুক্তি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। কারও কারও রদবদল করতে অসুবিধা হয়েছিল। সেই নির্দিষ্ট পরিস্থিতি আজকে বিদ্যমান নয় কিন্তু মাঝে মাঝে একই ধরনের বিচার্য বিষয়গুলো দেখা দিতে পারে।

১২, ১৩. কিছু পরিস্থিতি কী, যেখানে আজকে খ্রিস্টানরা তাদের ভাইবোনদের বিবেকের ক্ষেত্রে বিবেচনা দেখাতে পারে?

১২ উদাহরণস্বরূপ, একজন খ্রিস্টান মহিলা হয়তো আগে এমন একটা ধর্মের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, যা পোশাক-আশাক এবং সাজগোজের বিষয়ে সাদামাটা থাকার ওপর জোর দিত। তিনি যখন সত্য গ্রহণ করেন, তখন তিনি হয়তো এই ধারণার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে কঠিন বোধ করতে পারেন যে, উপযুক্ত উপলক্ষগুলোতে মার্জিত ও রঙিন পোশাক পরা এবং রুচিসম্মত মেকআপ করা নিষিদ্ধ নয়। যেহেতু এর সঙ্গে বাইবেলের কোনো নীতি জড়িত নেই, তাই কারও পক্ষে সেই খ্রিস্টান মহিলাকে তার বিবেককে অবমাননা করার জন্য জোর করা উপযুক্ত হবে না। একই সময়ে, তিনি বুঝতে পারেন যে তার সেই সমস্ত খ্রিস্টান মহিলার সমালোচনা করা উচিত নয়, যাদের বিবেক তাদেরকে এই ধরনের বস্তুগুলো ব্যবহার করতে অনুমতি দেয়।

১৩ আরেকটা উদাহরণ বিবেচনা করুন। একজন খ্রিস্টান ব্যক্তি হয়তো এমন একটা পরিবেশের মধ্যে বড় হয়ে উঠেছেন, যেখানে মদের ব্যবহার অনুমোদনযোগ্য নয়। সত্যের জ্ঞান লাভ করার পর তিনি বাইবেলের এই দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে শেখেন যে, দ্রাক্ষারস হল ঈশ্বরের কাছ থেকে একটা উপহার এবং তা পরিমিত মাত্রায় ব্যবহার করা যেতে পারে। (গীতসংহিতা ১০৪:১৫) তিনি সেই দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেন। তবে, তার পটভূমির কারণে তিনি মদ্যজাতীয় পানীয় পুরোপুরিভাবে পরিহার করে চলা বেছে নেন কিন্তু তিনি সেই সমস্ত ব্যক্তির সমালোচনা করেন না, যারা পরিমিত মাত্রায় সেগুলো গ্রহণ করে। এভাবে তিনি পৌলের এই কথাগুলো প্রয়োগ করেন: “যে যে বিষয় শান্তিজনক, ও যে যে বিষয়ের দ্বারা পরস্পরকে গাঁথিয়া তুলিতে পারি, আমরা সেই সকলের অনুধাবন করি।”—রোমীয় ১৪:১৯.

১৪. কোন পরিস্থিতিগুলোতে খ্রিস্টানরা রোমীয়দের প্রতি পৌলের পরামর্শের প্রকৃত অর্থ কাজে লাগাতে পারে?

১৪ অন্যান্য পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে, যেখানে রোমীয়দের প্রতি পৌলের পরামর্শের প্রকৃত অর্থ কাজে লাগানো প্রয়োজন। খ্রিস্টীয় মণ্ডলী অনেক ব্যক্তিবিশেষ নিয়ে গঠিত এবং তাদের বিভিন্ন পছন্দ-অপছন্দ রয়েছে। তাই, তারা ভিন্ন ভিন্ন বাছাই করতে পারে—উদাহরণস্বরূপ, পোশাক-আশাক এবং সাজগোজের ক্ষেত্রে। অবশ্য, বাইবেলে স্পষ্ট নীতিগুলো উল্লেখ করা আছে, যেগুলো সমস্ত আন্তরিক খ্রিস্টান পালন করে। আমাদের কারোরই এমন পোশাক-আশাক পরা অথবা চুলের স্টাইল করা উচিত নয়, যা দেখতে অস্বাভাবিক বা অমার্জিত লাগে অথবা সেটা ইঙ্গিত দেয় যে, আমরা জগতের অবাঞ্ছিত বিষয়বস্তুর সঙ্গে গা ভাসিয়ে দিচ্ছি। (১ যোহন ২:১৫-১৭) খ্রিস্টানরা মনে রাখে যে, সবসময় এমনকি যখন তারা বিশ্রাম নেয়, তখনও তারা সেই পরিচারক যারা নিখিলবিশ্বের সার্বভৌমকে প্রতিনিধিত্ব করে। (যিশাইয় ৪৩:১০; যোহন ১৭:১৬; ১ তীমথিয় ২:৯, ১০) তবে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে খ্রিস্টানদের জন্য গ্রহণযোগ্য বাছাইয়ের পরিধি অনেক ব্যাপক। *

অন্যদের বিঘ্নিত করা এড়িয়ে চলুন

১৫. একজন খ্রিস্টান কখন তার ভাইদের উপকারের জন্য তার অধিকারগুলো খাটানো থেকে বিরত থাকতে পারেন?

১৫ শেষ আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ নীতি রয়েছে, যেটা পৌল রোমের খ্রিস্টানদের প্রতি তার পরামর্শের মাধ্যমে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করিয়েছেন। কখনও কখনও সুশিক্ষিত বিবেকসম্পন্ন একজন খ্রিস্টান হয়তো এমন কোনো বাছাই না করার সিন্ধান্ত নেন, যা তার জন্য অনুমতিযোগ্য। কেন? কারণ তিনি বুঝতে পারেন যে, তার সেই কাজ করা অন্যদের ক্ষতি করতে পারে। সেই ক্ষেত্রে আমাদের কী করা উচিত? পৌল বলেন: “মাংস ভক্ষণ বা দ্রাক্ষারস পান, অথবা যে কিছুতে তোমার ভ্রাতা ব্যাঘাত কি বিঘ্ন পায়, কি দুর্ব্বল হয়, এমন কিছুই না করা ভাল।” (রোমীয় ১৪:১৪, ২০, ২১) তাই, “বলবান্‌ যে আমরা, আমাদের উচিত, যেন দুর্ব্বলদিগের দুর্ব্বলতা বহন করি, আর আপনাদিগকে তুষ্ট না করি। আমাদের প্রত্যেক জন যাহা উত্তম, তাহার জন্য, গাঁথিয়া তুলিবার নিমিত্ত, প্রতিবাসীকে তুষ্ট করুক।” (রোমীয় ১৫:১, ২) একজন সহখ্রিস্টানের বিবেক যখন আমরা যা করি তার দ্বারা অসন্তুষ্ট হতে পারে বলে মনে হয়, তখন ভ্রাতৃপ্রেম আমাদের বিবেচক হতে এবং আমাদের বাছাইগুলোকে সীমাবদ্ধ রাখতে পরিচালিত করে। এর একটা উদাহরণ হতে পারে মদ্যজাতীয় পানীয়ের ব্যবহার। একজন খ্রিস্টান পরিমিত মাত্রায় দ্রাক্ষারস পান করতে পারেন। কিন্তু তা করা যদি তার সঙ্গীর বিঘ্ন জন্মায়, তা হলে তিনি তার অধিকারগুলোর ওপর জোর খাটাবেন না।

১৬. আমাদের এলাকার লোকেদের প্রতি আমরা কীভাবে বিবেচনা দেখাতে পারি?

১৬ এই নীতি খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর বাইরের লোকেদের সঙ্গে আচরণ করার ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা হয়তো এমন একটা এলাকায় বাস করি, যেখানে বিদ্যমান ধর্ম এর অনুসারীদের সপ্তাহের একটা দিনকে বিশ্রাম দিন হিসেবে দেখতে শিক্ষা দেয়। সেই কারণে, আমাদের প্রতিবেশীদের বিঘ্নিত না করার এবং প্রচার কাজে বাধা সৃষ্টি না করার জন্য আমরা সেই দিন যতদূর সম্ভব এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকব, যা আমাদের প্রতিবেশীদের অসন্তুষ্ট করবে। আরেকটা পরিস্থিতিতে, একজন ধনী খ্রিস্টান হয়তো যেখানে বেশি প্রয়োজন সেখানে সেবা করার জন্য স্থান পরিবর্তন করে এমন লোকেদের মাঝে যেতে পারেন, যারা গরিব। সাধাসিধে পোশাক-আশাক পরে অথবা তার আর্থিক সংগতির চেয়ে আরও সংযতভাবে জীবনযাপন করে তিনি তার নতুন প্রতিবেশীদের প্রতি বিবেচনা দেখানো বেছে নিতে পারেন।

১৭. আমরা যে-বাছাইগুলো করি, সেগুলোর ক্ষেত্রে অন্যদের কথা বিবেচনা করা কেন যুক্তিযুক্ত?

১৭ যারা “বলবান্‌” তারা এই ধরনের রদবদলগুলো করবে বলে কি আশা করা যুক্তিযুক্ত? এই দৃষ্টান্তের কথা চিন্তা করুন: বড় রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় আমরা সামনে কিছু ছেলেমেয়েকে রাস্তার একবারে কাছে বিপদজনকভাবে হাঁটতে দেখি। আমরা কি শুধু এই কারণেই উচ্চগতিতে গাড়ি চালিয়ে যাব যে, তা করার বৈধ অধিকার আমাদের রয়েছে? না, আমরা ছেলেমেয়েদের জন্য সম্ভাব্য বিপদ এড়াতে গতি ধীর করব। কখনও কখনও সহবিশ্বাসী বা অন্যদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ধীর অথবা নমনীয় হওয়ার জন্য অনুরূপ ইচ্ছার প্রয়োজন হয়। আমরা হয়তো এমন কিছু করতে পারি, যা করার সম্পূর্ণ অধিকার আমাদের রয়েছে। এক্ষেত্রে বাইবেলের কোনো নীতিও লঙ্ঘন করা হবে না। তবে, যদি অন্যদের অসন্তুষ্ট করার অথবা দুর্বল বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তিদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তা হলে খ্রিস্টীয় প্রেম আমাদের সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে পরিচালিত করবে। (রোমীয় ১৪:১৩, ১৫) একতা বজায় রাখা এবং রাজ্যের বিষয়গুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, আমাদের ব্যক্তিগত অধিকারগুলো খাটানোর চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

১৮, ১৯. (ক) অন্যদের প্রতি বিবেচনা দেখানোর ক্ষেত্রে কীভাবে আমরা যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করতে পারি? (খ) কোন বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে আমরা সকলে সম্পূর্ণ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি আর পরের প্রবন্ধে কী আলোচনা করা হবে?

১৮ আমরা যখন এভাবে কাজ করি, তখন আমরা সবচেয়ে উত্তম উদাহরণ অনুসরণ করি। পৌল বলেন: “খ্রীষ্টও আপনাকে তুষ্ট করিলেন না, বরং যেমন লিখিত আছে, ‘যাহারা তোমাকে তিরস্কার করে, তাহাদের তিরস্কার আমার উপরে পড়িল।’” যিশু আমাদের জন্য তাঁর জীবন বলি দিতে ইচ্ছুক ছিলেন। নিশ্চিতভাবে, আমরা আমাদের কিছু অধিকার ত্যাগ করতে ইচ্ছুক, যদি তা ‘দুর্ব্বলদিগকে’ আমাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে ঈশ্বরের গৌরব করতে সমর্থ করে। সত্যিই, দুর্বল বিবেক রয়েছে এমন খ্রিস্টানদের প্রতি সহনশীল এবং উদার মনোভাব প্রদর্শন করা—অথবা স্বেচ্ছায় আমাদের বাছাইগুলোকে সীমাবদ্ধ করা এবং আমাদের অধিকারগুলোর ক্ষেত্রে নাছোড়বান্দা না থাকা—‘খ্রীষ্ট যীশুর অনুরূপ একমন’ প্রদর্শন করে।—রোমীয় ১৫:১-৫.

১৯ শাস্ত্রীয় নীতিগুলো জড়িত নয়, এমন বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি যদিও কিছুটা ভিন্ন হতে পারে কিন্তু উপাসনার ক্ষেত্রে আমরা সম্পূর্ণ ঐক্যে কাজ করি। (১ করিন্থীয় ১:১০) উদাহরণস্বরূপ, যারা সত্য উপাসনার বিরোধিতা করে তাদের প্রতি আমাদের আচরণে এই ধরনের একতা দেখা যায়। ঈশ্বরের বাক্য এই ধরনের বিরোধীদের অপরিচিত লোক বলে অভিহিত করে এবং আমাদের “অপর লোকেদের [“অপরিচিতদের,” NW] রব” থেকে সাবধান থাকতে বলে। (যোহন ১০:৫) কীভাবে আমরা এই ধরনের অপরিচিত লোকেদের শনাক্ত করতে পারি? তাদের প্রতি আমাদের কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত? এই প্রশ্নগুলো পরের প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে।

[পাদটীকা]

^ অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েরা পোশাক-আশাকের ব্যাপারে তাদের বাবামার ইচ্ছা মেনে চলে।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• ব্যক্তিগত বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থাকা কেন একতার জন্য হুমকিস্বরূপ হবে না?

• খ্রিস্টান হিসেবে কেন আমাদের পরস্পরের প্রতি প্রেমপূর্ণ বিবেচনা দেখানো উচিত?

• কয়েকটা উপায় কী, যেখানে আমরা আজকে একতার ওপর পৌলের পরামর্শ কাজে লাগাতে পারি আর কী আমাদের তা করতে পরিচালিত করবে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

একতার ওপর পৌলের পরামর্শ মণ্ডলীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

খ্রিস্টানরা তাদের বিভিন্ন পটভূমি সত্ত্বেও ঐক্যবদ্ধ

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

এই চালকের এখন কী করা উচিত?