সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবা আমাদের সহায়

যিহোবা আমাদের সহায়

যিহোবা আমাদের সহায়

“স্বর্গ ও পৃথিবীর নির্মাতা, যিহোবার কাছ থেকে আমার সাহায্য আসে।”গীতসংহিতা ১২১:২, NW.

১, ২. (ক) কেন বলা যেতে পারে যে, আমাদের সকলেরই মাঝে মাঝে সাহায্যের প্রয়োজন হয়? (খ) যিহোবা কী ধরনের সহায়?

 আমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যার কখনও সাহায্যের প্রয়োজন নেই? আসলে, আমাদের সকলেরই মাঝে মাঝে—কোনো গুরুতর সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করার, বিয়োগব্যথা সহ্য করার এবং কঠিন পরীক্ষার মধ্যেও টিকে থাকার জন্য—সাহায্যের প্রয়োজন হয়। সাহায্যের প্রয়োজন হলে, লোকেরা প্রায়ই সদয় কোনো বন্ধুর কাছে যায়। এইরকম এক বন্ধুর সঙ্গে সমস্যাটা নিয়ে কথা বললে, তা সহ্য করা সহজ হতে পারে। কিন্তু, সাহায্য করার জন্য একজন সহমানব যা করতে পারে, সেটার মধ্যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ ছাড়া, সাহায্যের প্রয়োজন হলেই অন্যেরা সবসময় তাতে সাড়া দেওয়ার মতো অবস্থায় থাকে না।

তবে, এমন একজন সহায় আছেন, যাঁর অসীম শক্তি এবং সংগতি রয়েছে। এ ছাড়া, তিনি আশ্বাস দেন যে তিনি কখনও আমাদের পরিত্যাগ করবেন না। তাঁকেই গীতরচক শনাক্ত করেছিলেন এবং পূর্ণ আস্থা নিয়ে ঘোষণা করেছিলেন: “যিহোবার কাছ থেকে আমার সাহায্য আসে।” (গীতসংহিতা ১২১:২) এই গীতরচক কেন এত দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিলেন যে, যিহোবা তাকে সাহায্য করবেন? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য আসুন আমরা গীতসংহিতা ১২১ অধ্যায় পরীক্ষা করে দেখি। তা করা আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে যে, কেন আমরাও আস্থা সহকারে আমাদের সহায় যিহোবার ওপর নির্ভর করতে পারি।

সাহায্যের এক অব্যর্থ উৎস

৩. গীতরচক হয়তো কোন পর্বতের বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন এবং কেন?

যিহোবাই যে সমস্তকিছুর সৃষ্টিকর্তা, সেটাকে আস্থার ভিত্তি হিসেবে নির্দেশ করে গীতরচক শুরু করেছিলেন: ‘আমি পর্ব্বতগণের দিকে চক্ষু তুলিব; কোথা হইতে আমার সাহায্য আসিবে? স্বর্গ ও পৃথিবীর নির্মাতা, যিহোবার কাছ হইতে আমার সাহায্য আইসে।’ (গীতসংহিতা ১২১:১, ২) এখানে গীতরচক যেকোনো পর্বতের বিষয়ে উল্লেখ করেননি। এই কথাগুলো যখন লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল, তখন যিহোবার মন্দির যিরূশালেমে অবস্থিত ছিল। যিহূদার উচ্চ পর্বতে অবস্থিত সেই শহর, যিহোবার রূপক আবাসস্থান ছিল। (গীতসংহিতা ১৩৫:২১) গীতরচক হয়তো যেখানে যিহোবার মন্দির নির্মিত হয়েছিল, সেই যিরূশালেমের পর্বতের বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন, সাহায্যের জন্য আস্থা সহকারে যিহোবার ওপর নির্ভর করেছিলেন। কেন গীতরচক এত নিশ্চিত ছিলেন যে, যিহোবা তাকে সাহায্য করতে পারেন? কারণ তিনি হলেন “স্বর্গ ও পৃথিবীর নির্মাতা।” বস্তুত, গীতরচক বলছিলেন যে, ‘নিশ্চিতভাবেই এমন কিছু নেই, যা আমাকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তাকে বাধা দিতে পারে!’—যিশাইয় ৪০:২৬.

৪. গীতরচক কীভাবে দেখিয়েছিলেন যে, যিহোবা তাঁর দাসদের প্রয়োজনগুলোর বিষয়ে সর্বদা সতর্ক আছেন আর কেন তা সান্ত্বনা জোগায়?

গীতরচক এরপর ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, যিহোবা তাঁর দাসদের প্রয়োজনের বিষয়ে সর্বদা সতর্ক আছেন: “তিনি তোমার চরণ বিচলিত হইতে দিবেন না, তোমার রক্ষক ঢুলিয়া পড়িবেন না। দেখ, যিনি ইস্রায়েলের রক্ষক, তিনি ঢুলিয়া পড়েন না, নিদ্রা যান না।” (গীতসংহিতা ১২১:৩, ৪) যারা তাঁর ওপর নির্ভর করে, তাদেরকে “বিচলিত হইতে” দেওয়া অথবা কাটিয়ে উঠতে পারবে না এমন কোনো পতন ভোগ করতে দেওয়া ঈশ্বরের পক্ষে অসম্ভব। (হিতোপদেশ ২৪:১৬) কেন? কারণ যিহোবা সদাজাগ্রত মেষপালকের ন্যায় তাঁর মেষদের রক্ষা করে চলেছেন। এটা কি সান্ত্বনা জোগায় না? তাঁর লোকেদের প্রয়োজনের প্রতি তিনি এক মুহূর্তের জন্যও তাঁর দৃষ্টি সরাবেন না। দিনরাত সবসময় তারা তাঁর সতর্ক প্রহরার মধ্যে রয়েছে।

৫. কেন বলা হয় যে, যিহোবা “দক্ষিণ পার্শ্বে” রয়েছেন?

যিহোবা তাঁর লোকেদের অনুগত রক্ষক, এই আস্থা নিয়ে গীতরচক লিখেছিলেন: “সদাপ্রভুই তোমার রক্ষক, সদাপ্রভুই তোমার ছায়া, তিনি তোমার দক্ষিণ পার্শ্বে। দিবসে সূর্য্য তোমাকে আঘাত করিবে না, রাত্রিতে চন্দ্রও করিবে না।” (গীতসংহিতা ১২১:৫, ৬) মধ্যপ্রাচ্যে একজন পথিকের জন্য ছায়াঘেরা একটা স্থান তাকে উত্তপ্ত রোদ থেকে সুরক্ষা জোগাতো। যিহোবা তাঁর লোকেদের জন্য ছায়ার মতো, তাদেরকে অমঙ্গলের প্রচণ্ড উত্তাপ থেকে রক্ষা করেন। লক্ষ করুন যে, বলা হয়েছে যিহোবা “দক্ষিণ পার্শ্বে” রয়েছেন। প্রাচীনকালের যুদ্ধে, একজন সৈনিকের দক্ষিণ বা ডান দিকে ঢাল না থাকায় কিছুটা অরক্ষিত ছিল, যে-ঢাল তার বাঁহাতে থাকত। একজন অনুগত বন্ধু সৈনিকের ডান দিকে দাঁড়িয়ে এবং যুদ্ধ করে সুরক্ষা জোগাতে পারত। এইরকম এক বন্ধুর মতো, যিহোবা অনুগতভাবে তাঁর উপাসকদের পাশে থাকেন, তাদেরকে সাহায্য করার জন্য সর্বদা তৈরি থাকেন।

৬, ৭. (ক) কীভাবে গীতরচক আমাদের আশ্বাস দেন যে, যিহোবা কখনও তাঁর লোকেদের সাহায্য করা বন্ধ করবেন না? (খ) কেন আমরা গীতরচকের মতো একই আস্থা রাখতে পারি?

যিহোবা কি কখনও তাঁর লোকেদের সাহায্য করা বন্ধ করে দেবেন? এইরকম কথা ভাবাই যায় না। গীতরচক এই বলে শেষ করেন: “সদাপ্রভু তোমাকে সমস্ত অমঙ্গল হইতে রক্ষা করিবেন; তিনি তোমার প্রাণ রক্ষা করিবেন। সদাপ্রভু তোমার বাহিরে যাওয়া ও তোমার ভিতরে আসা রক্ষা করিবেন, এখন অবধি চিরকাল পর্য্যন্ত।” (গীতসংহিতা ১২১:৭, ৮) লক্ষ করুন যে, লেখক জোর দেওয়ার বিষয়টাকে পরিবর্তন করে বর্তমান থেকে ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে গিয়েছেন। ৫ পদে গীতরচক বলেছিলেন: “সদাপ্রভুই তোমার রক্ষক,” যেটা হল বর্তমান সময়ে। এই পদগুলোতে গীতরচক লিখেছিলেন: “সদাপ্রভু তোমাকে সমস্ত অমঙ্গল হইতে রক্ষা করিবেন,” যেটা হল ভবিষ্যতে। সত্য উপাসকদের এভাবে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, যিহোবা ভবিষ্যতেও সাহায্য করবেন। তারা যেখানেই যাক না কেন, যে-অমঙ্গলের সম্মুখীনই হোক না কেন, তারা কখনও তাঁর সাহায্যের নাগালের বাইরে থাকবে না।—হিতোপদেশ ১২:২১.

বস্তুত, গীতসংহিতা ১২১ অধ্যায়ের লেখকের এই আস্থা ছিল যে, সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা একজন সদয় মেষপালকের কোমলভাব এবং একজন সতর্ক রক্ষকের সদাজাগ্রত মনোভাব সহকারে তাঁর দাসদের ওপর দৃষ্টি রাখেন। আমাদেরও গীতরচকের মতো একই আস্থা রাখার কারণ রয়েছে যেহেতু যিহোবার পরিবর্তন নেই। (মালাখি ৩:৬) এর অর্থ কি এই যে, আমরা সবসময় শারীরিক সুরক্ষা পাব? না, কিন্তু যতদিন পর্যন্ত আমরা আমাদের সহায় হিসেবে তাঁর ওপর নির্ভর করব, ততদিন পর্যন্ত তিনি আমাদের এমন যেকোনো কিছু থেকে রক্ষা করবেন, যা আমাদের আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে ক্ষতি করতে পারে। তাই, এটা জিজ্ঞেস করা খুবই স্বাভাবিক, ‘কীভাবে যিহোবা আমাদের সাহায্য করেন?’ আসুন আমরা চারটে উপায় বিবেচনা করি, যে-উপায়গুলোর মাধ্যমে তিনি আমাদের সাহায্য করেন। এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব যে, কীভাবে তিনি বাইবেলের সময়ে তাঁর দাসদের সাহায্য করেছিলেন। পরের প্রবন্ধে আমরা বিবেচনা করব যে, কীভাবে তিনি আজকে তাঁর লোকেদের সাহায্য করেন।

দূতেদের কাছ থেকে সাহায্য

৮. কেন এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, ঈশ্বরের পার্থিব দাসদের মঙ্গলের প্রতি দূতেদের গভীর আগ্রহ রয়েছে?

অযুত অযুত, লক্ষ লক্ষ দূত যিহোবার আদেশাধীন রয়েছে। (দানিয়েল ৭:৯, ১০) এই আত্মিক পুত্ররা বিশ্বস্তভাবে তাঁর ইচ্ছা পালন করে। (গীতসংহিতা ১০৩:২০) তারা খুব ভাল করে জানে যে, তাঁর মনুষ্য উপাসকদের প্রতি যিহোবার পরম প্রেম রয়েছে আর তাই তিনি তাদের সাহায্য করতে চান। তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, ঈশ্বরের পার্থিব দাসদের মঙ্গলের প্রতি দূতেদের গভীর আগ্রহ রয়েছে। (লূক ১৫:১০) অতএব এটা নিশ্চিত যে, দূতেরা মানুষদের সাহায্য করার জন্য যিহোবার দ্বারা ব্যবহৃত হওয়ায় অতিশয় আনন্দিত হয়। কোন কোন উপায়ে যিহোবা তাঁর প্রাচীনকালের মনুষ্য দাসদের সাহায্য করার জন্য দূতেদের ব্যবহার করেছিলেন?

৯. বিশ্বস্ত মানুষদের রক্ষা করার জন্য দূতেরা কীভাবে যিহোবার কাছ থেকে ক্ষমতা পেয়েছিল, তার একটা উদাহরণ দিন।

বিশ্বস্ত মানুষদের রক্ষা এবং উদ্ধার করার জন্য দূতেরা ঈশ্বরের কাছ থেকে ক্ষমতা পেয়েছিল। দুজন দূত সদোম ও ঘমোরার ধ্বংস থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য লোট এবং তাঁর মেয়েদের সাহায্য করেছিল। (আদিপুস্তক ১৯:১, ১৫-১৭) কেবল একজন দূত ১,৮৫,০০০ অশূরীয় সৈন্যকে হত্যা করেছিল, যারা যিরূশালেমকে হুমকি দিচ্ছিল। (২ রাজাবলি ১৯:৩৫) দানিয়েলকে যখন সিংহের গর্তে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, তখন যিহোবা “আপন দূত পাঠাইয়া সিংহগণের মুখ বদ্ধ করিয়াছেন।” (দানিয়েল ৬:২১, ২২) একজন দূত প্রেরিত পিতরকে কারাগার থেকে মুক্ত করেছিলেন। (প্রেরিত ১২:৬-১১) দূতেদের দ্বারা সুরক্ষার বিষয়ে বাইবেল আরও অনেক উদাহরণ উল্লেখ করে, যা গীতসংহিতা ৩৪:৭ পদের কথাগুলোকে সমর্থন করে: “সদাপ্রভুর দূত, যাহারা তাঁহাকে ভয় করে, তাহাদের চারিদিকে শিবির স্থাপন করেন, আর তাহাদিগকে উদ্ধার করেন।”—গীতসংহিতা ৩৪:৭.

১০. ভাববাদী দানিয়েলকে উৎসাহিত করার জন্য যিহোবা কীভাবে একজন দূতকে ব্যবহার করেছিলেন?

১০ কখনও কখনও, বিশ্বস্ত মানুষদের উৎসাহিত এবং শক্তিশালী করার জন্য যিহোবা তাঁর দূতেদের ব্যবহার করেছিলেন। দানিয়েল ১০ অধ্যায়ে একটা মর্মস্পর্শী উদাহরণ পাওয়া যায়। সেই সময় দানিয়েলের বয়স ছিল প্রায় একশো বছর। স্পষ্টতই, যিরূশালেমের জনশূন্য অবস্থা এবং মন্দির পুনর্নিমাণের কাজ দেরি হওয়ার কারণে ভাববাদী একেবারে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিলেন। এ ছাড়া, তিনি এক ভয়ংকর দর্শন দেখার পর ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। (দানিয়েল ১০:২, ৩, ৮) তাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য ঈশ্বর প্রেমের সঙ্গে একজন দূতকে পাঠিয়েছিলেন। বেশ কয়েক বার দূত দানিয়েলকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে, ঈশ্বরের চোখে তিনি “মহা-প্রীতিপাত্র” ছিলেন। এর ফল কী হয়েছিল? বয়স্ক ভাববাদী দূতকে বলেছিলেন: “আপনি আমাকে সবল করিয়াছেন।”—দানিয়েল ১০:১১, ১৯.

১১. সুসমাচার প্রচারের কাজে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য দূতেরা যেভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল, তার একটা উদাহরণ কী?

১১ এ ছাড়া, সুসমাচার প্রচার কাজে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য যিহোবা দূতেদের ব্যবহার করেছিলেন। একজন দূত ফিলিপকে ইথিওপীয় এক নপুংসকের কাছে খ্রিস্টের বিষয়ে প্রচার করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন, যিনি এরপর বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। (প্রেরিত ৮:২৬, ২৭, ৩৬, ৩৮) কিছু সময় পর, ঈশ্বরের ইচ্ছা ছিল যেন অছিন্নত্বক্‌ পরজাতীয়দের কাছে সুসমাচার প্রচার করা হয়। একটা দর্শনে একজন দূত ঈশ্বর-ভয়শীল পরজাতি ব্যক্তি কর্ণীলিয়ের কাছে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং প্রেরিত পিতরকে ডেকে আনার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কর্ণীলিয়ের বার্তাবাহকরা যখন পিতরকে খুঁজে পেয়েছিল, তখন তারা বলেছিল: “কর্ণীলিয় . . . পবিত্র দূতের দ্বারা এমন আদেশ পাইয়াছেন, যেন আপনাকে ডাকাইয়া নিজ গৃহে আনিয়া আপনার মুখে কথা শুনেন।” পিতর সাড়া দিয়েছিলেন এবং এভাবে প্রথম অছিন্নত্বক্‌ পরজাতি ব্যক্তি খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর অংশ হয়ে উঠেছিলেন। (প্রেরিত ১০:২২, ৪৪-৪৮) কল্পনা করে দেখুন, আপনি কেমন বোধ করবেন যখন জানতে পারবেন যে, সঠিক প্রবণতাসম্পন্ন একজন ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য একজন দূত আপনাকে সাহায্য করেছেন!

পবিত্র আত্মার মাধ্যমে সাহায্য

১২, ১৩. (ক) কেন যিশুর প্রেরিতদের এটা বিশ্বাস করার উপযুক্ত কারণ ছিল যে, পবিত্র আত্মা তাদের সাহায্য করতে পারত? (খ) কোন উপায়ে পবিত্র আত্মা প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের শক্তিশালী করেছিল?

১২ যিশু মারা যাওয়ার কিছু দিন আগে, তাঁর প্রেরিতদের আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তাদেরকে কোনো সাহায্য ছাড়াই ছেড়ে দেওয়া হবে না। পিতা তাদেরকে এক “সহায়, পবিত্র আত্মা” দেবেন। (যোহন ১৪:২৬) প্রেরিতদের এটা বিশ্বাস করার উপযুক্ত কারণ ছিল যে, পবিত্র আত্মা তাদেরকে সাহায্য করতে পারে। কারণ, অনুপ্রাণিত শাস্ত্র সেই সমস্ত উদাহরণে পরিপূর্ণ, যেগুলো দেখায় যে, যিহোবা তাঁর লোকেদের সাহায্য করার জন্য কীভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী শক্তি পবিত্র আত্মা ব্যবহার করেছিলেন।

১৩ অনেক ক্ষেত্রে, যিহোবার ইচ্ছা পালন করার জন্য মানুষদের শক্তিশালী করতে পবিত্র আত্মাকে ব্যবহার করা হয়েছিল। পবিত্র আত্মা ইস্রায়েলকে উদ্ধার করার জন্য বিচারকদের শক্তিশালী করেছিল। (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ৩:৯, ১০; ৬:৩৪) সেই একই আত্মা প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের সমস্ত ধরনের বিরোধিতা সত্ত্বেও সাহসের সঙ্গে প্রচার কাজ চালিয়ে যেতে শক্তিশালী করেছিল। (প্রেরিত ১:৮; ৪:৩১) তাদের পরিচর্যা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তাদের সাফল্য এই জোরালো প্রমাণ দিয়েছিল যে, পবিত্র আত্মা কার্যরত। “অশিক্ষিত সামান্য” লোকেরা সেই সময়কার জগতে কীভাবে রাজ্যের বার্তা ছড়িয়ে দিতে পেরেছিল, সেই সম্বন্ধে এ ছাড়া আর কোন ব্যাখ্যাই বা দেওয়া যেতে পারে?—প্রেরিত ৪:১৩; কলসীয় ১:২৩.

১৪. ঈশ্বর তাঁর লোকেদের জ্ঞানালোক প্রদান করার জন্য কীভাবে তাঁর পবিত্র আত্মাকে ব্যবহার করেছেন?

১৪ এ ছাড়া, যিহোবা তাঁর লোকেদের জ্ঞানালোক প্রদান করার জন্য পবিত্র আত্মাকে ব্যবহার করেছিলেন। যোফেষ ঈশ্বরের আত্মার সাহায্যে ফরৌণের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে পেরেছিলেন। (আদিপুস্তক ৪১:১৬, ৩৮, ৩৯) তাঁর আত্মার মাধ্যমে যিহোবা নম্র লোকেদের কাছে তাঁর উদ্দেশ্য প্রকাশ করেছিলেন কিন্তু গর্বিত লোকেদের কাছে তা গুপ্ত রেখেছিলেন। (মথি ১১:২৫) এভাবে “যাহারা তাঁহাকে প্রেম করে,” তাদেরকে যিহোবা যে-বিষয়গুলো দিয়ে থাকেন, সেই বিষয়ে প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “আমাদের কাছে ঈশ্বর তাঁহার আত্মা দ্বারা তাহা প্রকাশ করিয়াছেন।” (১ করিন্থীয় ২:৭-১০) একমাত্র পবিত্র আত্মার সাহায্যেই একজন ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের ইচ্ছা বুঝতে পারত।

ঈশ্বরের বাক্য থেকে সাহায্য

১৫, ১৬. বিজ্ঞতার সঙ্গে কাজ করার জন্য যিহোশূয়কে কী করতে বলা হয়েছিল?

১৫ ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য ‘শিক্ষার নিমিত্ত উপকারী’ এবং এটি ঈশ্বরের দাসদের “পরিপক্ব, সমস্ত সৎকর্ম্মের জন্য সুসজ্জীভূত” করে। (২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭) প্রাচীনকালে ঈশ্বরের লোকেরা কীভাবে তাঁর বাক্যের কিছু অংশ, যেগুলো ইতিমধ্যেই লেখা হয়ে গিয়েছিল, সেগুলো থেকে সাহায্য পেয়েছে, সেই বিষয়ে বাইবেলে অনেক উদাহরণ রয়েছে।

১৬ শাস্ত্র ঈশ্বরের উপাসকদের উপযুক্ত নির্দেশনা জোগানোর জন্য সাহায্য করেছিল। যিহোশূয়ের ওপর যখন আস্থা সহকারে ইস্রায়েলীয়দের নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল, তখন তাকে বলা হয়েছিল: “তোমার মুখ হইতে এই ব্যবস্থাপুস্তক [যা মোশি লিপিবদ্ধ করেছিলেন] বিচলিত না হউক; তম্মধ্যে যাহা যাহা লিখিত আছে, যত্নপূর্ব্বক সেই সকলের অনুযায়ী কর্ম্ম করণার্থে তুমি দিবারাত্র তাহা ধ্যান কর; কেননা তাহা করিলে তোমার শুভগতি হইবে ও তুমি বুদ্ধিপূর্ব্বক চলিবে।” লক্ষ করুন যে, ঈশ্বর যিহোশূয়কে কোনো অলৌকিক প্রজ্ঞা প্রদানের বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করেননি। এর পরিবর্তে যিহোশূয় যদি “ব্যবস্থাপুস্তক” পড়েন এবং ধ্যান করেন, তা হলে তিনি বুদ্ধিপূর্ব্বক বা বিজ্ঞতার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন।—যিহোশূয়ের পুস্তক ১:৮; গীতসংহিতা ১:১-৩.

১৭. কীভাবে দানিয়েল এবং রাজা যোশিয় উভয়েই তাদের কাছে শাস্ত্রের যে-অংশটুকু ছিল, সেটার মাধ্যমে সাহায্য পেয়েছিল?

১৭ এ ছাড়া, ঈশ্বরের লিখিত বাক্য তাঁর ইচ্ছা এবং উদ্দেশ্য প্রকাশ করতেও সাহায্য করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, যিরমিয়ের লেখাগুলো থেকে দানিয়েল বুঝতে পেরেছিলেন যে, কত সময় পর্যন্ত যিরূশালেম জনশূন্য অবস্থায় পড়ে থাকবে। (যিরমিয় ২৫:১১; দানিয়েল ৯:২) এ ছাড়া, যিহূদার রাজা যোশিয়ের রাজত্বের সময়ে কী ঘটেছিল, সেটাও বিবেচনা করুন। সেই সময়ের মধ্যে, সেই জাতি যিহোবার কাছ থেকে সরে গিয়েছিল এবং রাজারা স্পষ্টতই ব্যবস্থার এক ব্যক্তিগত অনুলিপি তৈরি করতে এবং তা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৭:১৮-২০) কিন্তু, মন্দির মেরামতের সময় সেই “ব্যবস্থাপুস্তক” পাওয়া গিয়েছিল, যা সম্ভবত মোশির দ্বারা লিখিত হয়েছিল। সম্ভবত এটা ছিল সেই মূল পাঠ্যাংশ, যা প্রায় ৮০০ বছর আগে লেখা সম্পন্ন হয়েছিল। এর বিষয়বস্তু পাঠ করা হলে তা শোনার পর যোশিয় বুঝতে পেরেছিলেন যে, সেই জাতি যিহোবার ইচ্ছা থেকে কত দূরে সরে গিয়েছিল এবং রাজা সেই পুস্তকে যা লেখা ছিল, তা পালন করতে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। (২ রাজাবলি ২২:৮; ২৩:১-৭) এটা কি স্পষ্ট নয় যে, প্রাচীনকালে ঈশ্বরের লোকেরা পবিত্র শাস্ত্রের কিছু অংশের মাধ্যমে সাহায্য পেয়েছিল, যেগুলো তাদের কাছে ছিল?

সহবিশ্বাসীদের মাধ্যমে সাহায্য

১৮. কেন বলা যেতে পারে যে, একজন সত্য উপাসক যখন আরেকজন উপাসককে সাহায্য করেন, তখন এর উৎস হলেন যিহোবা?

১৮ যিহোবা যে-সাহায্য জোগান, তা প্রায়ই সহবিশ্বাসীদের মাধ্যমে আসে। প্রকৃতপক্ষে, একজন সত্য উপাসক যখন আরেকজন সত্য উপাসককে সাহায্য করেন, তখন ঈশ্বরই এর উৎস। কেন আমরা তা বলতে পারি? দুটো কারণে। প্রথমত, এর সঙ্গে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা জড়িত। এই আত্মা সেই ব্যক্তিদের মধ্যে প্রেম ও মঙ্গলভাবসহ অন্যান্য ফল উৎপন্ন করে, যারা এর প্রভাব লাভ করতে চায়। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) তাই, ঈশ্বরের একজন দাস যখন আরেকজন দাসকে সাহায্য করতে পরিচালিত হয়, তখন এটা প্রমাণ দেয় যে, ঈশ্বরের আত্মা কার্যরত। দ্বিতীয়ত, আমাদেরকে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করা হয়েছে। (আদিপুস্তক ১:২৬) এর অর্থ হল যে, তাঁর গুণগুলো প্রতিফলিত করার ক্ষমতা আমাদের রয়েছে, যেগুলোর অন্তর্ভুক্ত তাঁর দয়া এবং সমবেদনা। তাই, যিহোবার একজন দাস যখন আরেকজন দাসের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, তখন এই ধরনের সাহায্যের প্রকৃত উৎস হলেন সেই ব্যক্তি যাঁর গুণগুলোকে প্রতিফলিত করা হচ্ছে।

১৯. বাইবেলের বিবরণ অনুসারে কীভাবে যিহোবা সহবিশ্বাসীদের মাধ্যমে সাহায্য জুগিয়েছিলেন?

১৯ বাইবেলের সময়ে সহবিশ্বাসীদের মাধ্যমে যিহোবা কীভাবে সাহায্য জোগাতেন? যিহোবা প্রায়ই তাঁর একজন দাসকে ব্যবহার করতেন অন্য আরেকজন দাসকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য, যেমন বারূককে যিরমিয় জীবনরক্ষাকারী পরামর্শ দিয়েছিলেন। (যিরমিয় ৪৫:১-৫) মাঝে মাঝে সত্য উপাসকরা সহবিশ্বাসীদের বস্তুগত সাহায্য জোগাতে পরিচালিত হয়েছিল, যেমন মাকিদনিয়া এবং আখায়ার খ্রিস্টানরা যিরূশালেমে তাদের অভাবী ভাইবোনদের সাহায্য জোগাতে উৎসুক ছিলেন। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন যে, এই ধরনের উদারতা উপযুক্তভাবেই “ঈশ্বরের প্রতি ধন্যবাদ” সম্পন্ন করেছিল।—২ করিন্থীয় ৯:১১.

২০, ২১. কোন পরিস্থিতিগুলোতে প্রেরিত পৌল রোমের ভাইদের দ্বারা শক্তি পেয়েছিলেন?

২০ একে অপরকে শক্তিশালী এবং উৎসাহিত করার জন্য যিহোবার দাসদের প্রচেষ্টার বিবরণগুলো বিশেষভাবে মর্মস্পর্শী। প্রেরিত পৌলের একটা উদাহরণ বিবেচনা করুন। একজন বন্দি হিসেবে রোমে যাওয়ার পথে পৌল এপিয়ান ওয়ে হিসেবে পরিচিত রোমীয় মহাসড়ক দিয়ে ভ্রমণ করেছিলেন। ভ্রমণের শেষ পথটুকু বিশেষভাবে বিরক্তিকর ছিল কারণ ভ্রমণকারীদের এক জলাময় নিম্নভূমির মধ্যে দিয়ে যেতে হতো। * রোম মণ্ডলীর ভাইবোনেরা জানত যে, পৌল আসছেন। তারা কী করবে? পৌল না আসা পর্যন্ত তারা কি শহরে তাদের বাড়িতে শান্তিতে অপেক্ষা করবে ও তারপর তাকে অভ্যর্থনা জানাতে যাবে?

২১ বাইবেল লেখক লূক, যিনি সেই ভ্রমণে পৌলের সহযোগী ছিলেন, তিনি আমাদের জানান যে কী ঘটেছিল: “তথা [রোম] হইতে ভ্রাতৃগণও আমাদের সংবাদ পাইয়া অপ্পিয়ের হাট ও তিন সরাই পর্য্যন্ত আমাদের সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিয়াছিলেন।” আপনি কি সেই দৃশ্যটা কল্পনা করতে পারেন? পৌল আসছেন জেনে ভাইদের এক প্রতিনিধি দল তার সঙ্গে দেখা করার জন্য রোম থেকে এসেছিল। সেই প্রতিনিধি দলের এক অংশ এপিয়ার হাটে অপেক্ষা করছিল, যা রোম থেকে প্রায় ৭৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সুপরিচিত বিশ্রামস্থান ছিল। বাকি ভাইয়েরা তিন সরাইয়ে অপেক্ষা করছিল, যা শহর থেকে প্রায় ৫৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বিশ্রাম স্থান। পৌল কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? লূক জানান: “তাহাদিগকে দেখিয়া পৌল ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিয়া সাহস প্রাপ্ত হইলেন।” (প্রেরিত ২৮:১৫) একটু কল্পনা করুন—যারা এতটা পথ ভ্রমণ করে এসেছিল, তাদেরকে কেবল চোখের দেখাই পৌলের জন্য শক্তি এবং সান্ত্বনার উৎস হয়েছিল! আর এই সাহায্যকারী সমর্থনের জন্য পৌল কাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন? তিনি এর উৎস, যিহোবা ঈশ্বরকেই ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন।

২২. ২০০৫ সালের জন্য আমাদের বার্ষিক শাস্ত্রপদ কী এবং পরের প্রবন্ধে কী আলোচনা করা হবে?

২২ স্পষ্টতই, ঈশ্বরের আচরণ সম্বন্ধে অনুপ্রাণিত বিবরণই স্বয়ং এর সাক্ষ্য দেয়। তিনি একজন অসমকক্ষ সহায়। উপযুক্তভাবেই যিহোবার সাক্ষিদের ২০০৫ সালের বার্ষিক শাস্ত্রপদ হবে গীতিসংহিতা ১২১:২ পদের কথাগুলো: “যিহোবার কাছ থেকে আমার সাহায্য আসে।” কিন্তু, আজকে কীভাবে যিহোবা আমাদের সাহায্য করেন? এটা পরের প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে?

[পাদটীকা]

^ রোমীয় কবি হোরেস (সা.কা.পূ. ৬৫-৮), যিনি একই পথে ভ্রমণ করেছিলেন, তিনি এই ভ্রমণের অস্বাচ্ছন্দ্যের ওপর মন্তব্য করেছিলেন। হোরেস এপিয়ার (অপ্পিয়) হাটকে “মাঝি এবং কঞ্জুস সরাই মালিকদের দিয়ে ঠাসা” বলে বর্ণনা করেছিলেন। তিনি “ছোট ছোট মারাত্মক মশা এবং ব্যাঙের” বিষয়ে এবং “দূষিত” জলের বিষয়ে অভিযোগ করেছিলেন।

আপনি কি স্মরণ করতে পারেন?

কোন কোন উপায়ে যিহোবা সাহায্য জুগিয়েছিলেন—

• দূতেদের মাধ্যমে?

• পবিত্র আত্মার মাধ্যমে?

• তাঁর অনুপ্রাণিত বাক্যের মাধ্যমে?

• সহবিশ্বাসীদের মাধ্যমে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৫ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

২০০৫ সালের বার্ষিক শাস্ত্রপদ হবে: “যিহোবার কাছ থেকে আমার সাহায্য আসে।” —গীতসংহিতা ১২১:২, NW.

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

পৌল রোমের ভাইদের কাছ থেকে যে-সাহায্য পেয়েছিলেন, তার জন্য যিহোবাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন